সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৯

গান ১৪৭ অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা

আপনি অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন—কিন্তু কীভাবে?

আপনি অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন—কিন্তু কীভাবে?

‘যে-কেউ পুত্রকে স্বীকার করে এবং তাঁর উপর বিশ্বাস করে, সে অনন্তজীবন পাবে।’যোহন ৬:৪০.

আমরা কী শিখব?

অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা এবং আরও মেষেরা যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে কোন কোন উপকার লাভ করে?

১. কেন অনেক লোক চিরকাল বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করে না?

 অনেক লোক নিজেদের সুস্থসবল রাখার জন্য খাবারদাবারের উপর বিশেষ মনোযোগ দেয় এবং ব্যায়াম করে। কিন্তু, তারা কখনো এইরকমটা চিন্তা করে না যে, তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে কারণ তারা মনে করে এটা অসম্ভব, আমরা সবাই একদিন-না-একদিন মারা যাব। আর বয়স হয়ে গেলে যে-কষ্ট হয়, সেই কারণে অনেকেই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চায় না। কিন্তু, যেমনটা যোহন ৩:১৬ এবং ৫:২৪ পদ থেকে জানা যায়, যিশু বলেছিলেন, মানুষের পক্ষে চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব আর এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক আশীর্বাদ।

২. যোহন ৬ অধ্যায়ে অনন্তজীবনের বিষয়ে কী বলা হয়েছে? (যোহন ৬:৩৯, ৪০)

একবার যিশু অলৌকিক কাজ করে হাজার হাজার লোককে রুটি ও মাছ খাইয়েছিলেন। a এটা সত্যিই এক অসাধারণ অলৌকিক কাজ ছিল! কিন্তু, পরের দিন যখন অনেক লোক তাঁর পিছন পিছন গালীল উপকূলের কাছাকাছি কফরনাহূমে এসেছিল, তখন যিশু তাদের যা বলেছিলেন, সেটা আরও চমৎকার ছিল। তিনি তাদের বলেছিলেন, যারা মারা গিয়েছে, তাদের তিনি পুনরুত্থিত করতে পারেন এবং তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে। (পড়ুন, যোহন ৬:৩৯, ৪০.) যিশুর কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, হয়তো অনেক লোককে পুনরুত্থিত করা হবে। কল্পনা করুন, যে-প্রিয়জনদের আপনি মৃত্যুতে হারিয়েছেন, তাদের আপনি আবারও দেখতে পাবেন আর আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবেন! কিন্তু, যিশু যোহন ৬ অধ্যায়ে আরও যে-কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো বোঝা অনেক লোকের জন্য কঠিন হয়। আসুন, সেই কথাগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখি।

৩. যোহন ৬:৫১ পদ অনুযায়ী যিশু নিজের বিষয়ে কী বলেছিলেন?

যিশু যখন অলৌকিক কাজ করে লোকদের রুটি খাইয়েছিলেন, তখন সেই লোকদের হয়তো মান্নার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল, যে-মান্না যিহোবা প্রান্তরে ইজরায়েলীয়দের খাইয়েছিলেন। বাইবেলে মান্নাকে “স্বর্গ থেকে” পাওয়া “রুটি” বলা হয়েছে। (গীত. ১০৫:৪০, NW; যোহন ৬:৩১) তাই, যিশু মান্নার কথা উল্লেখ করে লোকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখিয়েছিলেন। যিশু নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, তিনি ‘স্বর্গ থেকে প্রকৃত খাবার [রুটি],’ ‘ঈশ্বরের দেওয়া সেই খাবার [রুটি]’ এবং ‘জীবনদায়ী খাবার [রুটি]।’ (যোহন ৬:৩২, ৩৩, ৩৫) এরপর যিশু মান্না ও নিজের মধ্যে একটা বড়ো পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন। যদিও মান্না ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটা দান ছিল, কিন্তু যারা এটা খেয়েছিল, তারা একদিন-না-একদিন মারা গিয়েছিল। (যোহন ৬:৪৯) কিন্তু, যিশু নিজের বিষয়ে বলেছিলেন: “আমিই সেই জীবনদায়ী খাবার, যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। কেউ যদি এই খাবার খায়, তা হলে সে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে।” (পড়ুন, যোহন ৬:৫১.) এটা শুনে যিহুদি লোকেরা এই ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ে: ‘যিশু নিজেকে স্বর্গ থেকে নেমে আসা “খাবার” বা রুটি কীভাবে বলতে পারেন? আর তিনি সেই মান্নার থেকে আরও ভালো কীভাবে হতে পারেন, যেটা ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন?’ এরপর যিশু এমন কিছু বলেছিলেন, যেটার মধ্যে সেই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে ছিল। তিনি বলেছিলেন, “আমি যে-খাবার দেব, তা আমার মাংস।” তিনি আসলে কী বলতে চেয়েছিলেন? এটা বোঝা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে আমরা এবং আমাদের প্রিয়জনেরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারি। আসুন আমরা দেখি, যিশু আসলে কী বলতে চেয়েছিলেন।

জীবনদায়ী রুটি এবং তাঁর মাংসের অর্থ

৪. যিশুর কথা শুনে কিছু যিহুদি কেন অবাক হয়ে গিয়েছিল?

যিশু যখন বলেছিলেন, ‘আমার মাংস, আমি দান করব, যেন এই জগৎ জীবন লাভ করে,’ তখন কিছু যিহুদি অবাক হয়ে গিয়েছিল। তারা হয়তো মনে করেছিল, যিশু সত্যি সত্যিই তাঁর নিজের মাংস তাদের খেতে দেবেন। (যোহন ৬:৫২) কিন্তু, এরপর যিশু যা বলেছিলেন, তা শুনে যিহুদিরা হয়তো আরও অবাক হয়ে গিয়েছিল। যিশু বলেছিলেন, “আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংসরক্ত না খাও, তা হলে তোমরা জীবন লাভ করবে না।”—যোহন ৬:৫৩.

৫. কেন আমরা বলতে পারি, যিশু সত্যি সত্যিই লোকদের তাঁর রক্ত খেতে বলেননি?

নোহের দিনে যিহোবা লোকদের রক্ত খেতে বারণ করেছিলেন। (আদি. ৯:৩, ৪) এরপর পরবর্তী সময়ে এই একই আইন যিহোবা ইজরায়েল জাতিকেও দিয়েছিলেন। যদি কেউ রক্ত খেত, তা হলে তার মৃত্যুদণ্ড হত। (লেবীয়. ৭:২৭) যিশু ঈশ্বরের আইন মেনে চলতেন এবং অন্যদেরও তা মেনে চলতে উৎসাহিত করতেন। (মথি ৫:১৭-১৯) তাই, এটা হতেই পারে না যে, যিশু সত্যি সত্যিই সেই যিহুদিদের নিজের মাংসরক্ত খেতে বলেছিলেন। কিন্তু, যিশু এই কথা বলার দ্বারা লোকদের এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তারা কীভাবে “অনন্তজীবন” পেতে পারে।—যোহন ৬:৫৪.

৬. কেন আমরা বলতে পারি, যিশু যোহন ৬:৫৩ পদে শুধুমাত্র দৃষ্টান্ত দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখাচ্ছিলেন?

যিশু আসলে দৃষ্টান্ত দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝাতে চেয়েছিলেন। এমনটা তিনি আগেও একজন শমরীয় মহিলার সঙ্গে কথা বলার সময় করেছিলেন। যিশু বলেছিলেন, “আমি যে-জল দেব, তা যে খাবে, তার আর কখনো পিপাসা পাবে না, বরং আমি যে-জল দেব, তা তার মধ্যে এমন এক জলের উৎস হয়ে উঠবে, যা তাকে অনন্তজীবন দেবে।” (যোহন ৪:৭, ১৪) b যিশু সেই মহিলাকে এটা বলছিলেন না যে, তিনি সত্যি সত্যিই জল খেয়ে অনন্তজীবন পেতে পারেন। একইভাবে, যিশু কফরনাহূমে লোকদের এটা বলছিলেন না যে, অনন্তজীবন পেতে হলে তাদের সত্যি সত্যিই তাঁর মাংস বা রক্ত খেতে হবে।

দুটো ঘটনার মধ্যে পার্থক্য

৭. যোহন ৬:৫৩ পদে যিশু যে-কথাগুলো বলেছিলেন, সেই বিষয়ে কিছু লোক কী বিশ্বাস করে?

কেউ কেউ বলে থাকে, যোহন ৬:৫৩ পদে যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কীভাবে প্রভুর সান্ধ্যভোজ পালন করা উচিত কারণ পরবর্তী সময়ে তা পালন করার সময় যিশু একইরকম শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। (মথি ২৬:২৬-২৮) তাই তারা বিশ্বাস করে যে, প্রভুর সান্ধ্যভোজে আসা প্রত্যেক ব্যক্তির রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করা উচিত। তাদের এই বিশ্বাস কি সঠিক? এই প্রশ্নের উত্তর জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ লোক প্রভুর সান্ধ্যভোজের জন্য একত্রিত হয়। আমরা এটা দেখব যে, যিশু যোহন ৬:৫৩ পদে যা বলেছিলেন এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজের সময় যা বলেছিলেন, সেটার মধ্যে কোন কোন পার্থক্য রয়েছে।

৮. দুটো ঘটনার মধ্যে কোন কোন পার্থক্য রয়েছে? (ছবিও দেখুন।)

আসুন, আমরা এই দুটো ঘটনার মধ্যে দুটো পার্থক্য লক্ষ করি। প্রথমত, যোহন ৬:৫৩-৫৬ পদে লেখা কথাগুলো যিশু কখন ও কোথায় বলেছিলেন? তিনি ৩২ সালে গালীলে যিহুদিদের এক জনতার সামনে এই কথাগুলো বলেছিলেন। কিন্তু, প্রভুর সান্ধ্যভোজ যিশু এক বছর পর জেরুসালেমে প্রবর্তন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি এই কথা কাদের বলেছিলেন? গালীলে তিনি যে-লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তারা যিহোবা এবং তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে শেখার উপর মনোযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের খাবারের চাহিদা মেটানোর উপর মনোযোগ দিয়েছিল। (যোহন ৬:২৬) আসলে, যিশু যখন তাদের এমন একটা কথা বলেছিলেন, যেটা বোঝা তাদের জন্য কঠিন ছিল, তখন যিশুর প্রতি তাদের বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। এমনকী যিশুর কিছু শিষ্যও তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। (যোহন ৬:১৪, ৩৬, ৪২, ৬০, ৬৪, ৬৬) কিন্তু লক্ষ করুন, এর এক বছর পর ৩৩ সালে কী ঘটেছিল। সেইসময় প্রভুর সান্ধ্যভোজে যিশুর ১১জন বিশ্বস্ত প্রেরিত তাঁর সঙ্গে ছিল। যদিও তারাও যিশুর কিছু কথা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেনি, কিন্তু তারপরও তারা যিশুকে ছেড়ে চলে যায়নি। শিষ্যেরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত ছিল যে, যিশুই হলেন ঈশ্বরের পুত্র, যিনি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন। (মথি ১৬:১৬) যিশু তাদের প্রশংসা করে বলেছিলেন, “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার সময়ে আমার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছ।” (লূক ২২:২৮) তাই, আমরা যে-দুটো পার্থক্য লক্ষ করলাম, সেখান থেকে কী বুঝতে পারি? আমরা বুঝতে পারি, যোহন ৬:৫৩ পদে যিশু এটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেননি যে, প্রভুর সান্ধ্যভোজ কীভাবে পালন করা উচিত। এই দুটো ঘটনার মধ্যে আরও পার্থক্য রয়েছে। আসুন, কিছু প্রমাণ লক্ষ করি।

যোহন ৬ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, যিশু গালীলে যিহুদিদের এক জনতাকে কী বলেছিলেন (বাঁ দিকে)। এক বছর পর তিনি জেরুসালেমে একটা ছোটো দলের সঙ্গে অর্থাৎ তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের কথা বলেছিলেন (ডান দিকে) (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)


যিশুর বলা কথা থেকে আপনি কীভাবে উপকৃত হতে পারেন?

৯. প্রভুর সান্ধ্যভোজে যিশু যে-কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো কাদের জন্য ছিল?

প্রভুর সান্ধ্যভোজে যিশু তাঁর প্রেরিতদের খামিরবিহীন রুটি দিয়েছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন, এটা তাঁর দেহকে চিত্রিত করে। এরপর তিনি তাদের দ্রাক্ষারসে ভরা পেয়ালা দিলেন এবং তাদের বললেন, এটা ‘চুক্তির রক্তকে’ চিত্রিত করে। (মার্ক ১৪:২২-২৫; লূক ২২:২০; ১ করি. ১১:২৪) এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ নতুন চুক্তি সমস্ত লোকের সঙ্গে নয় বরং কেবলমাত্র “ইজরায়েলের সঙ্গে” করা হয়েছে অর্থাৎ তাদের সঙ্গে যারা “ঈশ্বরের রাজ্যে” যিশুর সঙ্গে থাকবে। (ইব্রীয় ৮:৬, ১০; ৯:১৫) সেই সময় প্রেরিতেরা এই কথাটা বুঝতে পারেনি। শীঘ্রই তাদের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষেক করা হয় এবং তারা সেই নতুন চুক্তির অংশ হয়। এরপর তাদের স্বর্গে যিশুর সঙ্গে শাসন করার সুযোগ খুলে যায়।—যোহন ১৪:২, ৩.

১০. যিশু গালীলে যা বলেছিলেন এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজে যা বলেছিলেন, এর মধ্যে আরেকটা পার্থক্য কী? (ছবিও দেখুন।)

১০ এটাও লক্ষ করুন, প্রভুর সান্ধ্যভোজের সময় যিশু ‘ছোটো মেষপালকে’ মাথায় রেখে কথা বলেছিলেন। এই ছোটো দলের প্রথম সদস্যেরা হল, যিশুর সেই ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিত, যারা সেইসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। (লূক ১২:৩২) কেবলমাত্র সেই প্রেরিতেরা এবং যারা পরে এই দলের অংশ হত, তারাই রুটিদ্রাক্ষারস গ্রহণ করতে পারত। শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিরাই যিশুর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করার সুযোগ লাভ করবে। কিন্তু, গালীলে যিশু জনতাকে যা বলেছিলেন, তা এমন একটা দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাদের কেউ গণনা করতে পারে না। এটা হল সেই দুটো ঘটনার মধ্যে আরেকটা পার্থক্য।

রুটি ও দ্রাক্ষারস শুধুমাত্র অল্প কিছু লোকই গ্রহণ করে, কিন্তু যিশুর উপর যে-কেউ বিশ্বাস করতে পারে এবং অনন্তজীবন লাভ করতে পারে (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১১. যিশু গালীলে এমন কী বলেছিলেন, যেটা থেকে বোঝা যায়, তিনি কেবলমাত্র কিছু মনোনীত লোকের বিষয়ে বলছিলেন না?

১১ বত্রিশ সালে যিশু যখন গালীলে ছিলেন, তখন তিনি যে-লোকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই খাবার পাওয়ার আশায় তাঁর কাছে এসেছিল। কিন্তু, যিশু তাদের এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, এমন কিছু রয়েছে, যেটা খাবারের চেয়েও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাদের এমন এক ব্যবস্থার বিষয়ে বলেছিলেন, যেটা থেকে তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারত। যিশু এও বলেছিলেন, যে-লোকেরা মারা গিয়েছে, তাদের শেষ দিনে পুনরুত্থিত করা হতে পারে এবং তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে। আসলে যিশু এমন এক আশীর্বাদের কথা বলছিলেন, যেটা কেবলমাত্র কিছু মনোনীত লোকের জন্য নয়, যেমনটা তিনি প্রভুর সান্ধ্যভোজে বলেছিলেন বরং এই আশীর্বাদ সমস্ত লোক পেতে পারে। যিশু বলেছিলেন,“কেউ যদি এই খাবার খায়, তা হলে সে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে . . . আমি যে-খাবার দেব, তা আমার মাংস, যা আমি দান করব, যেন এই জগৎ জীবন লাভ করে।”—যোহন ৬:৫১. c

১২. অনন্তজীবন পেতে হলে একজন ব্যক্তিকে কী করতে হবে?

১২ যিশু গালীলে যিহুদিদের এটা বলেননি যে, পৃথিবীতে থাকা সমস্ত মানুষ অনন্তজীবন পাবে। এর পরিবর্তে, তিনি বলেছিলেন যে, এই আশীর্বাদ তারা পাবে, যারা ‘এই খাবার [রুটি] খায়’ অর্থাৎ যারা তাঁর উপর ‘বিশ্বাস করে।’ (যোহন ৬:২৯) বর্তমানে, খ্রিস্টীয় জগতের অনেক লোক মনে করে, তারা যদি যিশু খ্রিস্টকে ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে, তা হলে তারা রক্ষা পাবে। (যোহন ৬:২৯) কিন্তু, এটাই যথেষ্ট নয়। আমরা যদি লক্ষ করি, তা হলে দেখব, প্রথম দিকে গালীলের সেই জনতার মধ্যেও কিছু লোক যিশুকে বিশ্বাস করেছিল কিন্তু পরে তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তারা কেন এমনটা করেছিল?

১৩. একজন ব্যক্তি যদি প্রকৃতই যিশুর শিষ্য হতে চায়, তা হলে তাকে কী করতে হবে?

১৩ সেই জনতার মধ্যে বেশিরভাগ লোক ততক্ষণ পর্যন্তই যিশুর সঙ্গে ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের চাহিদাগুলো মেটানো হচ্ছিল। তারা চেয়েছিল, যিশু অলৌকিক কাজ করে তাদের সুস্থ করেন এবং তাদের বিনা মূল্যে খাবার খাওয়ান এবং তারা যেটা শুনতে চায়, সেই বিষয়গুলো তাদের শেখান। কিন্তু, যিশু তাদের স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, তিনি পৃথিবীতে তাদের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আসেননি। এর পরিবর্তে তিনি এই শিক্ষা দিতে এসেছিলেন, তারা যদি সত্যিই তাঁর শিষ্য হতে চায়, তা হলে তাদের কী করতে হবে। তাদের যিশুর কাছে “আসতে” হত অর্থাৎ তিনি যা-কিছু শেখাচ্ছিলেন, সেগুলো বিশ্বাস করতে হত।—যোহন ৫:৪০; ৬:৪৪.

১৪. যিশুর বলিদানের ফলে যে-আশীর্বাদ পাওয়া যাবে, তা পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৪ যিশু লোকদের বলেছিলেন, তাদের বিশ্বাস করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, কীসের উপর? তাদের এই বিষয়টার উপর বিশ্বাস করতে হত যে, যিশু যে-রক্তমাংস বলি হিসেবে দিতে যাচ্ছিলেন, সেটার মাধ্যমেই তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে। বর্তমানে, আমাদেরও এটা বিশ্বাস করতে হবে। (যোহন ৬:৪০) তাই, যোহন ৬:৫৩ পদে যিশু যা বলেছিলেন, সেটার মানে হল, অনন্তজীবন পাওয়ার জন্য লোকদের মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করতে হবে। আর এই আশীর্বাদ পাওয়ার সুযোগ অল্প কিছু লোকের জন্য নয় বরং সবার জন্য রয়েছে।—ইফি. ১:৭.

১৫-১৬. যোহন ৬ অধ্যায় থেকে আমরা কী কী শিখেছি?

১৫ যোহন ৬ অধ্যায়ে যে-কথাগুলো বলা হয়েছে, তা থেকে আমরা এবং আমাদের প্রিয়জনেরা অনেক উপকার লাভ করতে পারি! আমরা শিখেছি, যিশু লোকদের জন্য অনেক চিন্তা করেন। গালীলে তিনি অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং তাদের খাবার জুগিয়েছিলেন। (লূক ৯:১১; যোহন ৬:২, ১১, ১২) কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-বিষয়টা তিনি শিখিয়েছিলেন, সেটা হল তিনিই হলেন, ‘সেই জীবনদায়ী খাবার [রুটি]।’—যোহন ৬:৩৫, ৪৮.

১৬ যিশু যে-লোকদের “আরও মেষ” বলেছেন, তারা প্রভুর সান্ধ্যভোজে রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে না আর এমনটা করা তাদের উচিতও নয়। (যোহন ১০:১৬) তারপরও তারা যিশু খ্রিস্টের মাংস ও রক্ত থেকে উপকার লাভ করে। কারণ তারা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপর বিশ্বাস করে এবং এটাও বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমেই সমস্ত লোক প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করবে। (যোহন ৬:৫৩) এর বিপরীতে, যারা রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করে, তারা দেখায় যে, তারা নতুন চুক্তির অংশ এবং তাদের কাছে স্বর্গে রাজা হিসেবে শাসন করার আশা রয়েছে। তাই, আমরা অভিষিক্ত খ্রিস্টান অথবা “আরও মেষ,” যা-ই হই না কেন, আমরা প্রত্যেকে যোহন ৬ অধ্যায় থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। বিশেষ করে আমরা শিখি, আমাদের মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করতে হবে আর তা হলেই আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারব।

গান ১৫০ পরিত্রাণ পেতে ঈশ্বরের খোঁজ করেই চলো

a আগের প্রবন্ধে যোহন ৬:৫-৩৫ পদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

b যিশু যে-জলের কথা বলেছেন, সেটা যিহোবার সেই ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেটার ফলে আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারি।

c যোহন ৬ অধ্যায়ে যেখানে যেখানে সেই লোকদের কথা বলা হয়েছে, যারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে, সেখানে এমন গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যেটার অনুবাদ “যে-কেউ,” “যে” অথবা “প্রত্যেকে” হতে পারে।