সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনকাহিনি

আমি জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে শিখতে থাকি

আমি জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে শিখতে থাকি

আমি যিহোবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমার মহান ‘শিক্ষক।’ (যিশা. ৩০:২০) তিনি তাঁর লোকদের তাঁর বাক্য বাইবেল, তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি আর তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে শেখান। এ ছাড়া, তিনি ভাই-বোনদের মাধ্যমেও আমাদের অনেক কিছু শেখান। আমার বয়স ১০০ হতে চলেছে, কিন্তু আমি এখনও এই মাধ্যমগুলো থেকে শিখছি। কীভাবে? চলুন, আপনাদের আমার কাহিনি বলি।

১৯৪৮ সালে পরিবারের সঙ্গে

আমার জন্ম ১৯২৭ সালে শিকাগোর কাছাকাছি একটা ছোটো শহরে হয়। এটা আমেরিকার ইলিনোয় রাজ্যে অবস্থিত। আমরা পাঁচ ভাই-বোন। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো বোন হল জেথা। তারপর বড়ো ভাই ডন, তারপর আমি এবং আমার পরে আমার ছোটো ভাই কার্ল এবং আমার সবচেয়ে ছোটো বোন জয়। আমরা সবাই মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করতে চেয়েছিলাম। জেথা ১৯৪৩ সালে গিলিয়েড স্কুলের দ্বিতীয় ক্লাসে যোগ দিয়েছিল। এরপর ১৯৪৪ সালে ডন বেথেলে যায়। এরপর ১৯৪৭ সালে কার্ল এবং ১৯৫১ সালে জয়ও বেথেলে চলে যায়। আমার বাবা-মা ও ভাই-বোনেরা আমার জন্য সবসময় এক উত্তম উদাহরণ রেখেছে। আর তাই আমি আরও বেশি করে যিহোবার সেবা করার জন্য উৎসাহিত হয়েছি।

আমার পরিবার সত্য শেখে

আমার বাবা-মা বাইবেল পড়তেন এবং ঈশ্বরকে খুব ভালোবাসতেন এবং তারা আমাদেরও ঈশ্বরকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। কিন্তু, আমার বাবা যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ইউরোপে যান, তখন গির্জার প্রতি তার আস্থা উঠে যায়। বাবা যখন সুরক্ষিতভাবে ফিরে আসেন, তখন মা অনেক খুশি হন আর বাবাকে বলেন যে, “চলো, আমরা আগের মতো গির্জায় যাই।” বাবা বলেন, “আমি তোমাকে গির্জায় ছেড়ে আসব, কিন্তু আমি গির্জার ভিতরে ঢুকব না।” মা যখন জিজ্ঞেস করেন, “কেন?” তখন বাবা বলেন, “যুদ্ধে উভয় পক্ষের পাদরিরা নিজেদের সেনাবাহিনী এবং তাদের অস্ত্রগুলোকে আশীর্বাদ করছিল, যদিও তারা একই ধর্মের ছিল। তা হলে, ঈশ্বর কোন পক্ষকে সমর্থন করছিলেন?”

পরে, আমার মা যখন গির্জায় ছিলেন, তখন দু-জন যিহোবার সাক্ষি আমাদের বাড়িতে আসে। তারা বাবাকে প্রকাশ শিরোনামের দুটো বই দেখায়, যেটাতে প্রকাশিত বাক্য বইয়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। বাবার সেই বইগুলো ভালো লাগে আর তিনি সেই বইগুলো নিয়ে নেন। মা যখন সেই বইগুলো দেখেন, তখন তিনি সেগুলো পড়তে শুরু করেন। একদিন মা খবরের কাগজে একটা খবর দেখেন, যেখানে লেখা ছিল কেউ যদি প্রকাশ শিরোনামের বইগুলো থেকে বাইবেল অধ্যয়ন করতে চান, তা হলে এই ঠিকানায় আসতে পারেন। মা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যখন তিনি সেই ঠিকানায় পৌঁছান, তখন একজন বয়স্ক মহিলা দরজা খোলেন। মা বইটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “এই বইটা নিয়ে কি এখানেই আলোচনা করা হয়?” সেই মহিলা বলেন, “হ্যাঁ মামনি, ভিতরে চলে এসো।” পরের সপ্তাহে মা আমাদেরও সেখানে নিয়ে যান। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে আমরা সেখানে যেতে শুরু করি।

একটা সভায় ভাই আমাকে গীতসংহিতা ১৪৪:১৫ পদ পড়ার জন্য বলেন। যেখানে বলা হয়েছিল, যে-লোকেরা যিহোবার উপাসনা করে, তারা সুখী। এই পদ আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এ ছাড়া, এইরকম আরও দুটো পদ রয়েছে, যেগুলো আমি কখনো ভুলিনি। এর মধ্যে একটা হল, ১ তীমথিয় ১:১১ পদ, যেখানে লেখা আছে, যিহোবা ‘সুখী ঈশ্বর’ আর দ্বিতীয়টা হল ইফিষীয় ৫:১ পদ, যেখানে উৎসাহিত করা হয়েছে আমরা যেন “ঈশ্বরের অনুকারী” হই। আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে, আমাকে আনন্দের সঙ্গে আমাদের ঈশ্বরের সেবা করতে হবে আর তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে হবে, কারণ তিনি আমাদের এটা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা করেছি যেন আমি এই দুটো বিষয় অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারি।

আমাদের ঘর থেকে সবচেয়ে কাছে যে-মণ্ডলী ছিল, সেটা ৩২ কিলোমিটার দূরে শিকাগোতে ছিল। কিন্তু, তা সত্ত্বেও আমরা সভায় যেতাম আর এভাবে আমি বাইবেল সম্বন্ধে আরও শিখে চলি। আমার মনে আছে, একবার জেথা সভায় মন্তব্য করছিল আর তার মন্তব্য শুনে, আমি চিন্তা করি, ‘এটা তো আমিও জানতাম। আমারও হাত তোলা উচিত ছিল।’ এরপর থেকে আমি আরও প্রস্তুতি নিতে এবং নিজের ভাষায় মন্তব্য করতে শুরু করি। কিন্তু, সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, যিহোবার সঙ্গে আমার এবং আমার ভাই-বোনদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে শুরু করেছিল। এরপর ১৯৪১ সালে আমি বাপ্তিস্ম নিই।

সম্মেলন থেকে যিহোবা অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন

১৯৪২ সালে ক্লিভল্যাণ্ড শহরে যে-সম্মেলন হয়েছিল, সেটার কথা আমার আজও ভালোভাবে মনে আছে। আমেরিকার ৫০-টা আলাদা আলাদা শহরের ভাই-বোনেরা ফোনের মাধ্যমে সেই সম্মেলনের কার্যক্রম শুনছিল। আমাদের পরিবার এবং অন্য আরও পরিবার সম্মেলন স্থলের কাছেই তাঁবুতে ছিল। সন্ধ্যার সময় আমি দেখি, কিছু ভাই নিজেদের গাড়িগুলো এমনভাবে রাখছিল, যেন সেগুলোর হেডলাইটের আলো ক্যাম্প থেকে দূরে পড়ে। আসলে, সেইসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক আকার নিয়েছিল আর যিহোবার সাক্ষিদের অনেক বিরোধিতা করা হচ্ছিল। তাই ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য প্রতিটা গাড়িতে কেউ-না-কেউ থাকবে। আর যদি লোকেরা আক্রমণ করতে আসে, তা হলে ভাইয়েরা গাড়ির হেডলাইট জালাবে, যাতে লোকেরা দেখতে না পায় এবং জোরে জোরে হর্ণ বাজাবে। এরপর অন্য ভাই-বোনেরা তাদের সাহায্য করার জন্য সেখানে চলে আসবে। আমি চিন্তা করি, ‘বাহঃ কী দারুণ! যিহোবার লোকেরা তো সমস্ত কিছুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’ সেই রাতে আমার একটুও ভয় লাগেনি এবং আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলাম আর কোনো বিপদও ঘটেনি।

আজও অনেক বছর পর যখন আমি সেই সম্মেলনের কথা স্মরণ করি, তখন আমি বুঝতে পারি, আমার মায়ের কোনো ভয় বা উদ্‌বিগ্নতা ছিল না। তার যিহোবার এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ছিল। তার চমৎকার উদাহরণ আমি কখনো ভুলতে পারব না!

সেই সম্মেলনের কিছু সময় আগেই মা অগ্রগামী সেবা শুরু করেছিলেন। সেইজন্য সম্মেলনের সময় যে-বক্তৃতাগুলোতে পূর্ণসময়ের সেবার বিষয়ে বলা হচ্ছিল, সেগুলো মা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। যখন আমরা ঘরে ফিরে আসছিলাম, তখন তিনি বলেন, ‘আমি অগ্রগামী সেবা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু, এর পাশাপাশি ঘর সামলানো আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।’ এরপর মা আমাদের জিজ্ঞেস করেন, আমরা তাকে সাহায্য করতে পারি কি না। আমরা রাজি হয়ে যাই। এরপর মা আমাদের কাজ ভাগ করে দিতেন এবং সকালের খাবারের আগে আমাদের প্রত্যেককে একটা অথবা দুটো ঘর পরিষ্কার করার জন্য বলতেন। আমরা স্কুলে যাওয়ার পর মা দেখতেন যে, ঘর ঠিক করে গোছানো আছে কি না আর এরপর তিনি প্রচারে যেতেন। যদিও মাকে অনেক কাজ করতে হত, তা সত্ত্বেও তিনি আমাদের ভালোভাবে যত্ন নিতেন। যখন আমরা দুপুরের খাবারের সময় অথবা স্কুলের পর বাড়ি ফিরতাম, তখন মা সবসময় ঘরেই থাকতেন। কখনো কখনো আমরাও স্কুলের পর মায়ের সঙ্গে প্রচারে যেতাম। এভাবে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, অগ্রগামী সেবা কেমন হয়।

পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করা

আমি ১৬ বছর বয়সে অগ্রগামী সেবা শুরু করি। আমার বাবা তখনও পর্যন্ত একজন যিহোবার সাক্ষি হননি। কিন্তু, তিনি সবসময় এটা জিজ্ঞেস করতেন যে, আমার প্রচার কাজ কেমন চলছে। একদিন সন্ধ্যায় আমি তাকে বলি, আমি অনেক প্রচেষ্টা করছি, কিন্তু আমি এখনও পর্যন্ত এমন কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাইনি, যে বাইবেল অধ্যয়ন করতে চায়। এরপর আমি একটু থেমে তাকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি কি আমার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করবে?” তিনি একটু চিন্তা করে বলেন, “ঠিক আছে, আসলে আমার কাছে না বলার কোনো কারণও নেই।” আমার বাবাই ছিল আমার প্রথম বাইবেল ছাত্র। এটা আমার জন্য অনেক বড়ো এক সম্মানের বিষয় ছিল!

আমি বাবার সঙ্গে “যে সত্য আপনাকে স্বাধীন করবে” (ইংরেজি) বই থেকে অধ্যয়ন করতে শুরু করি। অধ্যয়ন যত এগিয়ে যেতে থাকে, আমি দেখতে পাই যে, বাবা আমাকে একজন ভালো ছাত্র এবং শিক্ষক হতে সাহায্য করছেন। যেমন, একদিন সন্ধ্যায় আমরা যখন অধ্যয়ন করছিলাম, তখন অনুচ্ছেদ পড়ার পর তিনি বলেন, “এখানে যা লেখা আছে, আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু, তুমি কীভাবে বলতে পারো, এই বইতে যা লেখা আছে, তা সঠিক?” আমি এর উত্তর জানতাম না, তাই আমি তাকে বলি, “এখন আমি বলতে পারব না, তবে পরের বার যখন আমরা অধ্যয়ন করব, তখন এর উত্তর আমি অবশ্যই তোমাকে দেব।” তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি গবেষণা করি আর কিছু শাস্ত্রপদ খুঁজি। এরপর থেকে আমি অধ্যয়নের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি এবং গবেষণা করতে শিখি। এভাবে আমি ও বাবা বাইবেলের ভালো ছাত্র হতে পেরেছিলাম। বাবা যা-কিছু শিখতেন, সেই অনুযায়ী চলতেনও। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।

বেথেলেও শেখা বন্ধ করিনি

আমি ১৭ বছর বয়সে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে শুরু করি। আমার বড়ো বোন জেথা a মিশনারি সেবা শুরু করে আর বড়ো ভাই ডন বেথেলে চলে যায়। তারা দু-জনে অনেক খুশি ছিল। তাদের দেখে আমিও বেথেল সেবা এবং গিলিয়েড স্কুলের জন্য ফর্ম পূরণ করি। এরপর আমি কোথায় সেবা করব, সেই বিষয়টা যিহোবার উপর ছেড়ে দিই। এরপর ১৯৪৬ সালে আমাকে বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

গত ৭৫ বছর ধরে আমি বেথেলে অনেক আলাদা আলাদা বিভাগে কাজ করেছি আর নতুন নতুন কাজ শিখেছি। যেমন, আমি বই ছাপানো এবং হিসেব-নিকেশের কাজ, বেথেলের জন্য কেনাকাটা করা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্য জায়গায় পাঠানোর কাজও শিখেছি। কিন্তু, বেথেলে যে-সকালের উপাসনা হয় এবং বক্তৃতা দেওয়া হয়, সেটা আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি। এটার মাধ্যমে আমি বাইবেলের বিষয়ে আরও বেশি শিখতে পেরেছি।

প্রাচীনদের স্কুলে শেখানোর সময়

আমি আমার ছোটো ভাই কার্লের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। কার্ল ১৯৪৭ সালে বেথেলে এসেছিল। সে খুব ভালোভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করত এবং অন্যদেরও খুব ভালোভাবে শেখাত। একবার আমাকে একটা বক্তৃতা দিতে বলা হয়েছিল আর আমি তখন কার্লের কাছে সাহায্য চাই। আমি তাকে বলি, আমি অনেক তথ্য জোগাড় করেছি, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, এরপর আমি কী করব? সে আমাকে কেবল একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, “জোয়েল তোমার বক্তৃতার বিষয় কী?” সে কী বলতে চাইছে, আমি বুঝতে পারি। আমার কেবলমাত্র বক্তৃতার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে হত আর বাকি বিষয়গুলোর উপর নয়। আমি তার এই কথা সবসময় মনে রেখেছি।

আপনি যদি আনন্দের সঙ্গে বেথেল সেবা করতে চান, তা হলে আপনাকে উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করতে হবে। আর এটা করার মাধ্যমে আপনি অনেক ভালো অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। আমার মনে আছে, একদিন বিকেলে আমি আর একজন ভাই নিউইয়র্ক শহরে প্রচার করছিলাম। আমরা এমন একজন মহিলার সঙ্গে দেখা করতে যাই, যিনি আগে প্রহরীদুর্গসচেতন থাক পত্রিকা নিয়েছিলেন। আমরা যখন সেখানে যাই, তখন আমরা বলি, “আজকে আমরা লোকদের সঙ্গে দেখা করে বাইবেল থেকে ভালো বিষয় জানাচ্ছিলাম।” তিনি বলেন “যদি বাইবেল থেকে কিছু বলেন, তা হলে ভিতরে আসুন।” আমরা ঈশ্বরের রাজ্য ও নতুন জগতের বিষয়ে অনেক শাস্ত্রপদ পড়ি আর সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করি এবং সেগুলো সেই মহিলার খুব ভালো লাগে। তাই, পরের সপ্তাহে তিনি তার বেশ কিছু বন্ধুকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়, যাতে তারাও আমাদের কথা শোনে। পরে তিনি এবং তার স্বামী যিহোবার সাক্ষি হয়।

আমি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে শিখেছিলাম

আমি একজন জীবনসঙ্গীও খুঁজছিলাম এবং ১০ বছর পরে আমি তাকে খুঁজে পাই। এক ভালো জীবনসঙ্গী বাছাই করতে কোন বিষয়টা আমাকে সাহায্য করেছিল? আমি যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা করি এবং এই বিষয়ে চিন্তা করি, “আমি কোন লক্ষ্য স্থাপন করব এবং বিয়ের পর আমরা একসঙ্গে কী করব?”

সীমার কাজ করার সময় মেরির সঙ্গে

১৯৫৩ সালে ইয়াংকি স্টেডিয়ামে একটা সম্মেলন হয়েছিল। এরপর মেরি অ্যানয়োল নামে একজন বোনের সঙ্গে আমার দেখা হয়। সে আর জেথা একসঙ্গে গিলিয়েডের দ্বিতীয় ক্লাস করেছিল এবং তারা একসঙ্গে মিশনারি সেবা করছিল। মেরি আমাকে বলে যে, ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোতে মিশনারি সেবা করার সময় সে কী কী করেছিল। সে যে-ব্যক্তিদের বাইবেল অধ্যয়ন করিয়েছিল, সেই সম্বন্ধে কিছু ভালো অভিজ্ঞতা আমাকে বলেছিল। এই কথাগুলো আমাকে বলার সময় তার চোখে-মুখে যে-আনন্দ ফুটে উঠেছিল, তা দেখার মতো ছিল। আমরা যত বেশি একে অপরকে ভালোভাবে জানতে শুরু করি, ততই আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা দু-জনেই পূর্ণসময়ের সেবা চালিয়ে যেতে চাই। আমরা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি এবং ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে আমরা বিয়ে করি। মেরি যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক উপহারের মতো ছিল। সে সবসময় আমার জন্য উত্তম উদাহরণ রেখেছিল। তাকে যে-কাজই দেওয়া হত, সে আনন্দের সঙ্গে তা করত। সে অনেক পরিশ্রমী ছিল, লোকদের জন্য হৃদয় থেকে চিন্তা করত এবং রাজ্যের কাজকে সবসময় নিজের জীবনে প্রথম স্থানে রাখত। (মথি ৬:৩৩) আমরা তিন বছর সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করি। এরপর ১৯৫৮ সালে আমাদের বেথেলে ডাকা হয়।

আমি মেরির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যেমন, আমাদের বিয়ের পর আমরা একসঙ্গে বাইবেল পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা প্রতি দিন প্রায় ১৫টা পদ পড়তাম। কয়েকটা পদ পড়ার পর আমরা একে অন্যকে বলতাম যে, সেখান থেকে আমরা কী শিখেছি আর যা-শিখেছি, তা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি। মেরি প্রায়ই আমাকে বলত, সে গিলিয়েড স্কুলে এবং মিশনারি সেবা করার সময় কী কী শিখেছে। এই ধরনের আলোচনা আমাকে অনেক উপকৃত করেছে। আমি ভালোভাবে বক্তৃতা দিতে পারি এবং বোনদের আরও ভালোভাবে উৎসাহিত করতে পেরেছি।—হিতো. ২৫:১১.

২০১৩ সালে আমি আমার প্রিয় স্ত্রী মেরিকে মৃত্যুতে হারাই। আমি সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন আমি নতুন জগতে আবারও তাকে দেখতে পাব! কিন্তু সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমি ঠিক করেছি যে, আমি যিহোবার কাছ থেকে শিখতে থাকব এবং সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে তাঁর উপর আস্থা রাখব। (হিতো. ৩:৫, ৬) আমি যখন চিন্তা করি, যিহোবার লোকেরা নতুন জগতে কী কী করবে, তখন আমি অনেক সান্ত্বনা পাই এবং আনন্দিত হই। সেই সময় আমরা আমাদের মহান শিক্ষকের কাছ থেকে নতুন নতুন বিষয় শিখব এবং তাঁর সম্বন্ধে আরও জানব। এই পর্যন্ত যিহোবা আমাকে যা-কিছু শিখিয়েছেন এবং আমার প্রতি যে-মহাদয়া দেখিয়েছেন, সেটার জন্য আমি তাঁর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।

a ২০০৩ সালের ১ মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৩-২৯ পৃষ্ঠায় দেওয়া জেথা সুনালের জীবনকাহিনি দেখুন।