সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৮

গান ৯৭ জীবন ঈশ্বরের বাক্যের উপর নির্ভর করে

রুটির অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখি?

রুটির অলৌকিক কাজ থেকে আমরা কী শিখি?

“আমিই সেই জীবনদায়ী খাবার। যে আমার কাছে আসে, সে আর কখনোই ক্ষুধার্ত হবে না।”—যোহন ৬:৩৫.

আমরা কী শিখব?

আমরা যোহন ৬ অধ্যায়ে লেখা সেই বিবরণ নিয়ে আলোচনা করব, যেখানে যিশু অলৌকিকভাবে মাত্র পাঁচটা রুটি ও দুটো মাছ দিয়ে হাজার হাজার লোককে খাইয়েছিলেন এবং আমরা জানতে পারব, সেই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

১. ইজরায়েলীয়দের কাছে রুটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

 ইজরায়েলীয়দের খাবারের তালিকায় রুটি ছিল একটা প্রধান খাবার। (আদি. ১৪:১৮; লূক ৪:৪) সেইসময়ে রুটি খাওয়া এতটাই সাধারণ বিষয় ছিল যে, বাইবেলে অনেক বার খাবারের বিষয়ে উল্লেখ করার সময় “রুটি” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। (মথি ৬:১১) যিশু দু-বার অলৌকিকভাবে লোকদের রুটি খাইয়েছিলেন। (মথি ১৬:৯, ১০) এর মধ্যে একটা অলৌকিক কাজ সম্বন্ধে যোহন ৬ অধ্যায়ে লেখা রয়েছে। আসুন, সেই অলৌকিক কাজ নিয়ে আলোচনা করি এবং দেখি আমরা এর থেকে বর্তমানে কী শিখতে পারি।

২. কেন প্রেরিতদের হাজার হাজার লোককে খাওয়ানোর বিষয়ে চিন্তা করতে হয়েছিল?

একবার যিশুর প্রেরিতেরা যখন প্রচার করে ফিরেছিল, তখন যিশু তাদের একটা নৌকায় চড়ে গালীল সাগরের বিপরীত দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে তারা একটু বিশ্রাম নিতে পারে। (মার্ক ৬:৭, ৩০-৩২; লূক ৯:১০) তারা বৈৎসৈদার কাছাকাছি একটা নির্জন স্থানে পৌঁছায়, কিন্তু খুব শীঘ্রই সেখানে হাজার হাজার লোক এসে যায় এবং তাদের কাছে গিয়ে একত্রিত হয়। যিশু তাদের উপেক্ষা না করে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে শুরু করেন এবং অসুস্থদের সুস্থ করেন। যখন বেলা প্রায় শেষ হচ্ছিল, তখন শিষ্যেরা চিন্তা করতে শুরু করে যে, এত লোকের খাবার তারা কোথায় পাবে? কিছু লোকের কাছে হয়তো অল্প খাবার ছিল, কিন্তু বেশিরভাগ লোককে গ্রামে গিয়ে খাবার কিনতে হত। (মথি ১৪:১৫; যোহন ৬:৪, ৫) এমন পরিস্থিতিতে যিশু কী করেছিলেন?

যিশু অলৌকিক কাজ করে রুটি খাইয়েছিলেন

৩. লোকদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখে যিশু প্রেরিতদের কী বলেছিলেন? ( ছবিও দেখুন।)

যিশু প্রেরিতদের বলেছিলেন, “ওদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই; তোমরাই ওদের কিছু খেতে দাও।” (মথি ১৪:১৬) কিন্তু, এটা কীভাবে সম্ভব? কারণ সেখানে প্রায় ৫,০০০ জন পুরুষ ছিল এবং স্ত্রী ও সন্তানদের মিলিয়ে তাদের হয়তো ১৫,০০০ লোককে খাওয়াতে হত। (মথি ১৪:২১) সেইসময় আন্দ্রিয় বলেছিলেন, “এখানে একটি ছোটো ছেলে আছে, তার কাছে পাঁচটা যবের রুটি এবং দুটো ছোটো মাছ রয়েছে। কিন্তু, এত লোকের জন্য এতে আর কীই-বা হবে?” (যোহন ৬:৯) সেই সময় সাধারণ লোকেরা যবের রুটি খেত। আর সেই ছেলের কাছে যে-ছোটো মাছগুলো ছিল, সেগুলো সম্ভবত নুন মাখিয়ে শুকানো হয়েছিল। কিন্তু, এতটুকু খাবারে হাজার হাজার লোকের পেট কীভাবে ভরত?

যিশু লোকদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক খাবার জোগাচ্ছেন (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৪. যোহন ৬:১১-১৩ পদে দেওয়া বিবরণ থেকে আমরা কী কী শিখতে পারি? (ছবিগুলোও দেখুন।)

যিশু অনেক উদার ছিলেন, তিনি লোকদের জন্য কিছু করতে চাইতেন। তাই তিনি তাদের বলেছিলেন, তারা যেন সবুজ ঘাসের উপর দলে দলে বসে যায়। (মার্ক ৬:৩৯, ৪০; পড়ুন, যোহন ৬:১১-১৩.) এরপর যিশু সেই রুটি ও মাছের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। আর এমনটা একেবারে সঠিক ছিল কারণ যিহোবাই সেই খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এটা থেকে আমাদের জন্যও এক ভালো শিক্ষা রয়েছে। আমাদেরও খাবার খাওয়ার আগে যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, তা আমরা একা থাকি অথবা অন্যদের সঙ্গে। যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর যিশু প্রেরিতদের খাবার বিতরণ করার জন্য বলেন এবং সকলে সেই খাবার খেয়ে অনেক পরিতৃপ্ত হয়েছিল। এমনকী কিছু খাবার বেঁচেও গিয়েছিল। যিশু চাননি সেই খাবারগুলো নষ্ট হোক। তিনি শিষ্যদের বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো তুলে নিতে বলেন, যাতে সেটা পরে কাজে লাগতে পারে। এখান থেকে আমরা আরেকটা বিষয় শিখি। আমাদের কাছে যা-কিছুই থাকুক না কেন, আমাদের সেগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং সেগুলো নষ্ট করা উচিত নয়। যদি আপনার সন্তান থাকে, তা হলে এই বিবরণ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। আপনি তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন যে, আমরা এই বিবরণ থেকে প্রার্থনা করার, আতিথেয়তা ও সেইসঙ্গে উদারতা দেখানোর ব্যাপারে কী শিখতে পারি।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি খাবার খাওয়ার আগে প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিশুকে অনুসরণ করি?’ (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন))


৫. (ক) যিশুর কাজ দেখে লোকেরা কী করেছিল? (খ) কিন্তু, যিশু কী করেছিলেন?

যিশু যেভাবে শিক্ষা দিতেন এবং যে-অলৌকিক কাজ করেছিলেন, তা দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গিয়েছিল। তারা জানত যে, মোশি বলেছিলেন, ঈশ্বর একজন বিশেষ ভাববাদীকে উৎপন্ন করবেন। তাই তারা হয়তো চিন্তা করেছিল, ‘যিশুই সেই ভাববাদী নয় তো?’ (দ্বিতীয়. ১৮:১৫-১৮) যদি তা-ই হয়, তা হলে তারা হয়তো এটা ভেবেছিল যে, যিশু একজন ভালো রাজা হতে পারেন কারণ তিনি পুরো দেশকে রুটি খাওয়াতে পারবেন। তাই, লোকেরা “তাঁকে জোর করে রাজা” করতে চেয়েছিল। (যোহন ৬:১৪, ১৫) যদি যিশু তাদের রাজা হয়ে যেতেন, তা হলে এর মানে হত যে, তিনি যিহুদিদের রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন, যেটা সেই সময় রোমীয় শাসনের অধীনে ছিল। কিন্তু, যিশু এমনটা করেননি। বাইবেল বলে, তিনি “পর্বতে চলে গেলেন।” যিশু আমাদের জন্য কতই-না ভালো এক উদাহরণ রেখেছেন! অন্যেরা এত চাপ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজনীতিতে অংশ নেননি।

৬. আমরা কীভাবে যিশুর মতো হতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

এটা স্বাভাবিক বিষয় যে, বর্তমানে লোকেরা আমাদের অলৌকিকভাবে খাবার খাওয়ানোর বিষয়ে অথবা অলৌকিকভাবে সুস্থ করার বিষয়ে বলবে না অথবা আমাদের রাজা করারও চেষ্টা করবে না। কিন্তু, তারা হয়তো আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য অথবা এমন ব্যক্তিকে সমর্থন করার জন্য চাপ দিতে পারে, যিনি তাদের মতে একজন ভালো শাসক হতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের যিশুর উদাহরণ মনে রাখতে হবে। যিশু রাজনীতিতে অংশ নেননি এবং পরে একবার তিনি বলেছিলেন, “আমার রাজ্য এই জগতের অংশ নয়।” (যোহন ১৭:১৪; ১৮:৩৬) বর্তমানেও খ্রিস্টানেরা যিশুর মতো একই মনোভাব বজায় রাখে এবং তাঁর মতোই কাজ করে থাকে। আমরা শুধুমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করি, সেই বিষয়ে প্রচার করি এবং সেটার জন্য প্রার্থনা করি। (মথি ৬:১০) এখন আসুন আমরা আবারও রুটি খাওয়ানোর অলৌকিক কাজের উপর মনোযোগ দিই এবং দেখি এখান থেকে আমরা আর কী শিখতে পারি।

যিশু রাজনৈতিক বিষয়ে অংশ নেননি আর আমাদেরও তাঁর মতো হওয়া উচিত (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)


রুটির “অর্থ”

৭. যিশু কোন অলৌকিক কাজ করেছিলেন আর এটা দেখে প্রেরিতদের কেমন লেগেছিল? (যোহন ৬:১৬-২০)

সেই লোকদের খাবার খাওয়ানোর পর যিশু প্রেরিতদের বলেন যে, তারা যেন সেই এলাকা ছেড়ে দিয়ে নৌকায় করে কফরনাহূমে চলে যায়। আর যিশু নিজে পর্বতে চলে যান, যাতে লোকেরা তাঁকে রাজা করতে না পারে। (পড়ুন, যোহন ৬:১৬-২০.) যখন প্রেরিতেরা নৌকায় চড়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ করে একটা ঝড় ওঠে আর বড়ো বড়ো ঢেউ আসতে শুরু করে। এরপর যিশু জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে আসেন এবং পিতরকেও একই বিষয়ে করতে বলেন। (মথি ১৪:২২-৩১) যিশু নৌকায় ওঠার সঙ্গেসঙ্গে ঝড় থেমে যায়। প্রেরিতেরা এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় এবং বলে, “আপনি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র।” a (মথি ১৪:৩৩) আসলে রুটি নিয়ে করা অলৌকিক কাজ দেখেই প্রেরিতদের বুঝে যাওয়া উচিত ছিল যে, যিহোবা যিশুকে অলৌকিক কাজ করার কত অসাধারণ শক্তি দিয়েছেন। কিন্তু প্রেরিতেরা এটা বুঝতে পারেনি। তারা এই বিষয়টা তখন বুঝতে পেরেছিল, যখন তারা যিশুকে জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখেছিল। মার্ক লিখেছিলেন, “এতে তারা খুবই অবাক হয়ে গেলেন, কারণ রুটি জোগানোর অলৌকিক কাজের মাধ্যমে যে-শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, সেটার অর্থ তারা বুঝতে পারেননি। তাদের হৃদয়ে বিষয়টা তখনও স্পষ্ট ছিল না।” (মার্ক ৬:৫০-৫২) কিছু সময় পর, যিশু নিজে রুটি নিয়ে করা অলৌকিক কাজের বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন এবং একটা চমৎকার শিক্ষা দিয়েছিলেন।

৮-৯. লোকেরা যিশুকে কেন খুঁজছিল? (যোহন ৬:২৬, ২৭)

পরের দিন লোকেরা সেই একই জায়গায় এসে উপস্থিত হয়, যেখানে যিশু তাদের খাবার খাইয়েছিলেন। কিন্তু, তারা দেখে যিশু এবং তাঁর প্রেরিতেরা সেখানে নেই। তখন তারা তিবিরিয়া থেকে আসা কিছু নৌকায় উঠে যিশুর খোঁজে কফরনাহূমে চলে গেল। (যোহন ৬:২২-২৪) তারা কি এই জন্য যিশুকে খুঁজছিল, যাতে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে আরও বেশি করে জানতে পারে? না। তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল খাবারের চাহিদা মেটানো। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি?

লক্ষ করুন, যখন লোকেরা যিশুকে কফরনাহূমের কাছে দেখেছিল, তখন কী হয়েছিল। যিশু তাদের বলেছিলেন যে, তারা রুটি খেতে চায় বলে তারা তাঁকে খোঁজার জন্য এখানে এসেছে। তারা রুটি খেয়ে ‘পরিতৃপ্ত হয়েছিল’ আর তারা এতেই সন্তুষ্ট ছিল, অর্থাৎ সেটা এমন খাবার ছিল, “যে-খাবার নষ্ট হয়ে যায়।” কিন্তু, যিশু তাদের উৎসাহিত করেছিলেন, “যে-খাবার নষ্ট না হয়ে বরং অনন্তজীবন দান করে” তারা যেন ‘সেটার জন্য কাজ করে।’ (পড়ুন, যোহন ৬:২৬, ২৭.) তিনি বলেছিলেন, তাঁর পিতা যিহোবা তাদের এমন খাবার দিতে পারেন। এই খাবারের কথা শুনে হয়তো লোকেরা অবাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, এই খাবার কী? আর লোকেরা কীভাবে এই খাবার পেতে পারত?

১০. অনন্তজীবন পাওয়ার জন্য লোকদের কী করতে হত?

১০ সেই যিহুদিরা জানতে চেয়েছিল যে, সেই খাবার পেতে গেলে তাদের কী করতে হবে? তারা হয়তো মনে করেছিল, তাদের মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন, তাদের ‘ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য সেই ব্যক্তির উপর বিশ্বাস করতে হবে, যাঁকে তিনি [ঈশ্বর] পাঠিয়েছেন।’ (যোহন ৬:২৮, ২৯) ঈশ্বর যিশুকেই পাঠিয়েছিলেন আর তাঁর উপর বিশ্বাস করলেই তারা “অনন্তজীবন” লাভ করতে পারত। (যোহন ৩:১৬-১৮) আর পরবর্তী সময়েও তিনি এই বিষয়ে আরও বলেছেন যে, কীভাবে আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারি।—যোহন ১৭:৩.

১১. কেন আমরা বলতে পারি, যিহুদিদের সম্পূর্ণ মনোযোগ তখনও খাবারের চাহিদা মেটানোর উপর ছিল? (গীতসংহিতা ৭৮:২৪, ২৫)

১১ সেই যিহুদিরা এটা মেনে নিতে চায়নি যে, তাদের যিশুর উপর বিশ্বাস করতে হবে। তাই, তারা তাঁকে বলেছিল, “আপনি এমন কোন অলৌকিক কাজ করতে যাচ্ছেন, যা দেখে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব?” (যোহন ৬:৩০) তারা বলেছিল, মোশির সময়ে তাদের পূর্বপুরুষদের স্বর্গ থেকে মান্না দেওয়া হত, যা তাদের প্রতিদিনের রুটির মতো ছিল। (নহি. ৯:১৫; পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৮:২৪, ২৫.) তাদের কথা শুনে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ সত্যিকারের রুটির উপর ছিল। পরে, যিশু তাদের “স্বর্গ থেকে” পাওয়া “প্রকৃত খাবার” বা রুটির বিষয়ে বলেছিলেন, যেটা মান্নার চেয়েও আরও ভালো ছিল কারণ এটা তাদের অনন্তজীবন দিতে পারত। (যোহন ৬:৩২) কিন্তু, তারা যিশুর কাছ থেকে এটা জানার চেষ্টা করেনি যে, এই রুটির মানে কী? তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ খাবারের চাহিদা মেটানোর উপর ছিল, ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখার উপর নয়। এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

আমাদের জন্য কোন বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত?

১২. (ক) যিশু কীভাবে বুঝিয়েছিলেন যে, আমাদের কাছে কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত?

১২ যোহন ৬ অধ্যায় থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখি। ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখা এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাটা যিশু সেইসময়েও বলেছিলেন, যখন শয়তান যিশুকে প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেছিল। (মথি ৪:৩, ৪) আর তাঁর পর্বতে দেওয়া উপদেশেও যিশু এই বিষয়টার উপর জোর দিয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ঈশ্বরের নির্দেশনা লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে হবে। (মথি ৫:৩) তাই আমাদের চিন্তা করা উচিত, ‘আমি যেভাবে জীবনযাপন করছি, তা কি দেখায় যে, যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আমার নিজের ইচ্ছা পূরণ করার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’

১৩. (ক) খাবারদাবার উপভোগ করা কেন ভুল নয়? (খ) আমাদের কোন সাবধানবাণীর উপর মনোযোগ দিতে হবে? (১ করিন্থীয় ১০:৬, ৭, ১১)

১৩ খাবারদাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করা এবং খাবার উপভোগ করা ভুল কিছু নয়। (লূক ১১:৩) আমরা পরিশ্রম করে যা-কিছু ‘খাওয়া-দাওয়া’ করি না কেন, সেটা থেকে আমরা “আনন্দ” পাই এবং এটা “ঈশ্বরই দেন।” (উপ. ২:২৪; ৮:১৫; যাকোব ১:১৭) কিন্তু, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে ওঠে। প্রেরিত পৌলও খ্রিস্টানদের এই একই কথা বলেছিলেন। তিনি তাদের ইজরায়েলীয়দের একটা ঘটনা সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, যেটা সীনয় পর্বতের কাছে ঘটেছিল। তিনি তাদের একটা সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, তারা যেন ‘মন্দ বিষয়গুলোর আকাঙ্ক্ষা না করে, যেমনটা [ইজরায়েলীয়েরা] আকাঙ্ক্ষা করেছিল।’ (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৬, ৭, ১১.) যিহোবা অলৌকিকভাবে ইজরায়েলীয়দের জন্য খাবার জুগিয়েছিলেন। কিন্তু, খাবারের প্রতি লোভের কারণে এই খাবার তাদের জন্য ‘মন্দ বিষয়ে’ বা ফাঁদে পরিণত হয়েছিল। (গণনা. ১১:৪-৬, ৩১-৩৪) আর যখন তারা সোনার বাছুর তৈরি করেছিল, তখন তারা খাওয়া-দাওয়া করা এবং আনন্দ-ফূর্তি করার পিছনেই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল। (যাত্রা. ৩২:৪-৬) পৌল ইজরায়েলীয়দের উদাহরণ ব্যবহার করে খ্রিস্টানদের সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। তারা এমন একটা সময়ে বাস করছিল, যখন খুব শীঘ্রই (৭০ সালে) জেরুসালেম এবং এর মন্দির ধ্বংস হতে যাচ্ছিল। বর্তমানেও আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন এই জগতের শেষ খুবই কাছে। তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমরাও যেন পৌলের বলা সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিই।

১৪. বাইবেলে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে কোন প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে?

১৪ যিশু যখন আমাদের এই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, “আমাদের আজকের খাবার আজ আমাদের দাও,” তখন তিনি এটাও বলেছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা “যেমন স্বর্গে, তেমনই পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।” (মথি ৬:৯-১১) সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে আপনার মনে কোন ছবি ভেসে ওঠে? বাইবেল থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা যখন পূর্ণ হবে, তখন সেখানে অনেক ভালো ও সুস্বাদু খাবার থাকবে। যিশাইয় ২৫:৬-৮ পদে বলা হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্যে প্রত্যেকের কাছেই প্রচুর খাবার থাকবে আর গীতসংহিতা ৭২:১৬ পদে বলা হয়েছে, “পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে শস্য হবে, পর্বতের চূড়ায় শস্য উপচে পড়বে।” আপনি কি সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছেন, যখন আপনি নতুন জগতে আলাদা আলাদা শস্য দিয়ে রুটি তৈরি করবেন অথবা এমন কোনো খাবার তৈরি করবেন, যা কখনো করেননি? সেই সময় আপনি আপনার নিজের আঙুরের বাগান তৈরি করতে এবং সেই ফল উপভোগ করতে পারবেন। (যিশা. ৬৫:২১, ২২) পৃথিবীর প্রত্যেকে এই ভালো বিষয়গুলো উপভোগ করতে পারবে।

১৫. যাদের নতুন জগতে পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের কোন বিষয় শেখানো হবে? (যোহন ৬:৩৫)

১৫ যোহন ৬:৩৫ পদ পড়ুন। আরও একবার সেই লোকদের কথা চিন্তা করুন, যাদের যিশু অলৌকিকভাবে রুটি ও মাছ খাইয়েছিলেন। সেইসময় যদিও লোকেরা যিশুকে বিশ্বাস করেনি, কিন্তু হতে পারে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নতুন জগতে পুনরুত্থিত হবে এবং আপনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। (যোহন ৫:২৮, ২৯) সেই লোকদের যিশুর বলা এই কথাগুলোর অর্থ জানতে হবে, “আমিই সেই জীবনদায়ী খাবার” বা রুটি “যে আমার কাছে আসে, সে আর কখনোই ক্ষুধার্ত হবে না।” তাদের অবশ্যই যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপর বিশ্বাস করতে হবে এবং এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, যিশু তাদের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন। আসলে যারা নতুন জগতে পুনরুত্থিত হবে তাদের এবং সেখানে যদি কোনো সন্তানের জন্ম হয়, তাকেও ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার এক ব্যবস্থা করা হবে। সেইসময় লোকদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শিখিয়ে আমরা অনেক আনন্দ লাভ করব, এত আনন্দ যা অনেক সুস্বাদু খাবার খেয়েও পাওয়া যায় না!

১৬. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৬ এই প্রবন্ধে আমরা যোহন ৬ অধ্যায়ের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে, যিশু “অনন্তজীবন” সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। সেইসময় যিহুদিদের সেই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে হত আর বর্তমানে আমাদেরও দিতে হবে। পরের প্রবন্ধে আমরা যোহন ৬ অধ্যায় থেকে আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

গান ২০ তোমার প্রিয় পুত্রকে দিলে