সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৮

সামনের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখুন

সামনের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখুন

“আমি নিজের বেলায় এইরকম মনে করি না যে, আমি ইতিমধ্যে সেই পুরস্কার লাভ করেছি; কিন্তু আমি এই কাজটা করছি: আমি পিছনের বিষয়গুলো ভুলে গিয়ে প্রাণপণ এগিয়ে চলেছি, যেন সামনের বিষয়গুলো লাভ করতে পারি।”—ফিলি. ৩:১৩.

গান সংখ্যা ৪৭ সুসমাচার ঘোষণা করো

সারাংশ *

১-২. কীভাবে আমরা ফিলিপীয় ৩:১৩ পদে পাওয়া পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি? একটা উদাহরণ দিন।

তিন জন ভাই ও বোনের উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করুন। একজন বয়স্কা বোন তার অতীতের উত্তম স্মৃতিগুলো নিয়ে চিন্তা করেন। বর্তমানে আগের চেয়ে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি ক্রমাগত যিহোবার জন্য তার সর্বোত্তমটা করার চেষ্টা করেন। (১ করি. ১৫:৫৮) প্রতিদিন তিনি নিজেকে তার প্রিয়জনদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে থাকার বিষয়ে কল্পনা করেন। আরেকজন বোন তার সহবিশ্বাসীর কাছ থেকে পাওয়া আঘাতের কথা ভুলে যাননি, তবে তিনি তার সহবিশ্বাসীর প্রতি বিরক্তির মনোভাব পুষে রাখেন না। (কল. ৩:১৩) একজন ভাই তার অতীতের ভুলগুলো স্মরণ করেন কিন্তু তিনি বর্তমানে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখেন।—গীত. ৫১:১০.

এই তিন জন ভাই ও বোনের মধ্যে কী মিল রয়েছে? তারা প্রত্যেকে তাদের অতীতের ঘটনাগুলো স্মরণ করেন ঠিকই কিন্তু তারা সেগুলো ধরে রাখেন না। এর পরিবর্তে, তারা ‘প্রাণপণে এগিয়ে চলেছে, যেন সামনের বিষয়গুলো লাভ করতে পারে।’—পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:১৩.

৩. কেন ‘প্রাণপণে এগিয়ে চলা’ গুরুত্বপূর্ণ?

কেন ‘প্রাণপণে এগিয়ে চলা’ গুরুত্বপূর্ণ? একজন ব্যক্তি ক্রমাগত পিছনের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে সোজাভাবে হাঁটতে পারেন না। একইভাবে, আমরা যদি ক্রমাগত অতীতের ঘটনাগুলো নিয়ে চিন্তা করি, তা হলে আমরা যিহোবার সেবায় এগিয়ে যেতে পারব না।—লূক ৯:৬২.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে ফাঁদ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের অতীতকে ধরে রাখার জন্য পরিচালিত করতে পারে। * সেগুলো হল: (১) নস্টালজিয়া (হারানো দিন ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা), (২) বিরক্তির মনোভাব পুষে রাখা এবং (৩) নিজেকে অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করা। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা দেখব যে, কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো আমাদের ‘পিছনের বিষয়গুলোর’ উপর নয় বরং ‘সামনের বিষয়গুলোর’ উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে।—ফিলি. ৩:১৩.

নস্টালজিয়ার ফাঁদ

কী আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রাখার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে? (৫, ৯, ১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৫. উপদেশক ৭:১০ পদ আমাদের কোন ফাঁদের বিষয় সতর্ক করে?

উপদেশক ৭:১০ পদ পড়ুন। লক্ষ করুন, এই শাস্ত্রপদ এটা জিজ্ঞেস করাকে ভুল বলে না: “পূর্ব্বকাল কেন ভাল ছিল?” উত্তম স্মৃতিগুলো হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া উপহার। এর পরিবর্তে, এই শাস্ত্রপদ বলে: “তুমি বলিও না, বর্ত্তমান কাল অপেক্ষা পূর্ব্বকাল কেন ভাল ছিল?” অন্যভাবে বললে, ফাঁদটা হল অতীতের পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করা এবং এই উপসংহারে আসা যে, বর্তমানে সমস্ত কিছু খুবই খারাপ। আরেকটা বাইবেল অনুবাদ এই শাস্ত্রপদকে এভাবে উল্লেখ করে: “একথা বলা উচিৎ নয়, ‘এখনকার থেকে আগের সময় কেন বেশী ভাল ছিল।’”

মিশর ছেড়ে চলে আসার পর ইজরায়েলীয়রা কী ভুল করেছিল? (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. কেন এটা ক্রমাগত চিন্তা করা মূর্খতাপূর্ণ যে, অতীতের জীবনটাই বেশি ভালো ছিল? একটা উদাহরণ দিন।

কেন এটা ক্রমাগত চিন্তা করা মূর্খতাপূর্ণ যে, অতীতের জীবনটাই বেশি ভালো ছিল? নস্টালজিয়া আমাদের অতীতের কঠিন পরিস্থিতিগুলোকে ভুলে গিয়ে কেবল ভালো বিষয়গুলো স্মরণ করার জন্য পরিচালিত করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, প্রাচীন ইজরায়েলীয়দের কথা বিবেচনা করুন। মিশর ছেড়ে চলে আসার পর তারা দ্রুত ভুলে গিয়েছিল যে, সেখানে তাদের জীবন কতটা কঠিন ছিল। এর পরিবর্তে, তারা যে-সুস্বাদু খাবার উপভোগ করত, সেটার উপর মনোযোগ দিয়েছিল। তারা বলেছিল: “আমরা মিসর দেশে বিনামূল্যে যে যে মাছ খাইতাম, তাহা এবং সশা, খরবুজ, পরু, পলাণ্ডু ও লশুন মনে পড়িতেছে।” (গণনা. ১১:৫) কিন্তু, তারা কি আসলেই “বিনামূল্যে” সেই খাবার খেত? না। এরজন্য ইজরায়েলীয়দের অনেক মূল্য দিতে হত। সেই সময়ে তাদের মিশরে দাস হিসেবে চরম তাড়না ভোগ করতে হয়েছিল। (যাত্রা. ১:১৩, ১৪; ৩:৬-৯) তবে, তারা পরবর্তী সময়ে সেই কঠিন পরিস্থিতি সম্বন্ধে ভুলে গিয়েছিল এবং অতীতে ফিরে যেতে চেয়েছিল। যিহোবা সবেমাত্র তাদের জন্য যে-ভালো কাজগুলো করেছিলেন, সেটার উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে তারা সেই ‘হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনের’ উপর মনোযোগ দিয়েছিল। যিহোবা তাদের মনোভাবের প্রতি খুশি হননি।—গণনা. ১১:১০.

৭. কী একজন বোনকে নস্টালজিয়ার ফাঁদ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করেছিল?

কীভাবে আমরা নস্টালজিয়ার ফাঁদ এড়িয়ে চলতে পারি? একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি ১৯৪৫ সালে ব্রুকলিন বেথেলে সেবা করতে শুরু করেন। কয়েক বছর পর, তিনি একজন সহবেথেলকর্মীকে বিয়ে করেন এবং সেখানে একসঙ্গে বহু বছর ধরে সেবা করেন। তবে, ১৯৭৬ সালে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে যান। সেই বোনের স্বামী যখন বুঝতে পেরেছিলেন, তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে, তখন তিনি বোনকে কিছু উত্তম পরামর্শ দেন, যাতে বোন সবসময় অতীতের কথা মনে করে দুঃখিত না হন। তিনি বোনকে বলেন: “আমরা এক সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করেছি, যে-সুখ অনেকে পায় না।” কিন্তু, তিনি এই জোরালো পরামর্শও দেন: “অতীতকে ধরে রেখ না—যদিও তোমার উত্তম স্মৃতিগুলো থেকেই যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তোমার দুঃখ কমতে থাকবে। তিক্ততার মনোভাব পুষে রাখবে না এবং নিজেকে ছোটো বল মনে করবে না। আমরা যে একসঙ্গে যিহোবার সেবায় ভালো দিনগুলো কাটিয়েছি, সেটার জন্য খুশি হও। . . . উত্তম স্মৃতিগুলো হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া উপহার।” আপনি কি এই বিষয়ে একমত হবেন না যে, এটা উত্তম পরামর্শ ছিল?

৮. কীভাবে সেই বোন অতীতকে ধরে না রাখার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিলেন?

সেই বোন তার স্বামীর পরামর্শ অনুসরণ করেন। তিনি ৯২ বছর বয়সে মারা যান এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সেবা করেন। তিনি মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে বলেন: “আমি বিগত ৬৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণসময়ের সেবা করেছি এবং তা নিয়ে যখন চিন্তা করি, তখন এটা উপলব্ধি করি যে, আমি সত্যিই এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করেছি।” কেন? তিনি ব্যাখ্যা করেন: “যে-বিষয়গুলো সত্যিই আমাদের জীবনকে পরিতৃপ্তিদায়ক করে তোলে, সেগুলো হল আমাদের চমৎকার ভ্রাতৃসমাজ আর পরমদেশে চিরকাল ধরে ভাই-বোনদের সঙ্গে বেঁচে থাকার আশা এবং আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবার সেবা করা।” * সামনের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখার ক্ষেত্রে এই বোন কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন!

বিরক্তির মনোভাব পুষে রাখার ফাঁদ

৯. লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদ অনুযায়ী কখন হয়তো আমরা বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে ওঠাকে খুবই কঠিন বলে মনে করতে পারি?

লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদ পড়ুন। আমরা সাধারণত সেই সময়ে বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে ওঠাকে কঠিন বলে মনে করি, যখন কোনো সহবিশ্বাসী, কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিংবা কোনো আত্মীয় আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। উদাহরণ স্বরূপ, একজন সহবিশ্বাসী একজন বোনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন যে, সেই বোন তার টাকা চুরি করেছেন। পরবর্তী সময়ে, সেই সহবিশ্বাসী নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন কিন্তু সেই বোন ক্রমাগত ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা করে গিয়েছিলেন। আপনিও কি কখনো একইরকম অনুভব করেছেন? যদিও আমরা হয়তো একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি, তারপরও আমাদের মধ্যে অনেকেই সেই ব্যক্তির প্রতি বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে ওঠাকে কঠিন বলে মনে করতে পারি, যিনি আমাদের দুঃখ দিয়েছেন।

১০. কী আমাদের বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১০ কী আমাদের বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে? আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যিহোবা সমস্ত কিছু লক্ষ করেন। আমরা যে-পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হই, এমনকী যে-অবিচার ভোগ করি, সেই বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন। (ইব্রীয় ৪:১৩) তিনি আমাদের দুঃখে দুঃখিত হন। (যিশা. ৬৩:৯) আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, এক সময়ে তিনি আমাদের সেই সমস্ত ক্ষত পূরণ করবেন, যেগুলো আমরা অবিচারের কারণে পেয়েছি।—প্রকা. ২১:৩, ৪.

১১. আমরা যখন বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে উঠি, তখন কীভাবে নিজেরাই উপকৃত হই?

১১ এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যখন বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে উঠি, তখন নিজেরাই উপকৃত হই। এই বিষয়টাই পূর্বে উল্লেখিত সেই বোন উপলব্ধি করেছিলেন। এক সময়ে, তিনি তার বিরক্তির মনোভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি, তখন যিহোবাও আমাদের ক্ষমা করেন। (মথি ৬:১৪) তিনি জানতেন যে, সেই সহবিশ্বাসী তার প্রতি যা করেছিলেন, সেটা ভুল ছিল কিন্তু তিনি বিরক্তির মনোভাব পুষে রাখেননি। এর ফলে, সেই বোন আরও আনন্দিত হতে এবং যিহোবার সেবায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পেরেছিলেন।

নিজেকে অতিরিক্ত দোষী মনে করার ফাঁদ

১২. প্রথম যোহন ৩:১৯, ২০ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ প্রথম যোহন ৩:১৯, ২০ পদ পড়ুন। আমরা সবাই কখনো কখনো নিজেদের দোষী বলে মনে করি। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ কেউ সত্য শেখার আগে যা করেছিল, সেটার কারণে নিজেদের দোষী বলে মনে করে। অন্যেরা আবার বাপ্তিস্মের পরে যে-ভুলগুলো করেছিল, সেটার কারণে নিজেদের দোষী বলে মনে করে। এইরকম অনুভূতি খুবই সাধারণ। (রোমীয় ৩:২৩) অবশ্য, আমরা সবাই সঠিক কাজ করতে চাই। কিন্তু, “আমরা সকলে বিভিন্ন সময় হোঁচট খাই।” (যাকোব ৩:২, পাদটীকা; রোমীয় ৭:২১-২৩) আমরা যখন নিজেদের দোষী বলে মনে করি, তখন আমরা দুঃখিত হই। কিন্তু, এর উপকারিতাও রয়েছে। আমাদের দোষী মনোভাব নিজেদের জীবনে পরিবর্তন করার জন্য এবং পুনরায় একই ভুল না করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।—ইব্রীয় ১২:১২, ১৩.

১৩. কেন আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা নিজেদের অতিরিক্ত দোষী বলে মনে না করি?

১৩ অন্যদিকে, আমরা হয়তো নিজেদের অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করতে পারি অর্থাৎ অনুতপ্ত হওয়ার এবং যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করার পরও ক্রমাগত নিজেদের দোষী বলে মনে করতে পারি। এই ধরনের দোষী মনোভাব ক্ষতিকর হতে পারে। (গীত. ৩১:১০; ৩৮:৩, ৪) কীভাবে? একজন বোনের উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করুন, যিনি অতীতের ভুলগুলোর কারণে নিজেকে ক্রমাগত দোষারোপ করছিলেন। তিনি বলেন: “আমি মনে করেছিলাম যে, যিহোবার সেবায় কঠোর পরিশ্রম করার কোনো মূল্য নেই কারণ আমি হয়তো রক্ষা পাব না।” আমাদের মধ্যে অনেকে হয়তো এইরকম মনে করতে পারে। তাই, আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা নিজেদের অতিরিক্ত দোষী বলে মনে না করি। কেন? কারণ যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করার পরও আমরা তাঁর সেবা বন্ধ করে দিতে পারি আর এতে শয়তান খুবই আনন্দিত হবে।—তুলনা করুন, ২ করিন্থীয় ২:৫-৭, ১১.

১৪. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন?

১৪ তারপরও, আমরা হয়তো ভাবতে পারি, ‘কীভাবে আমি নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন?’ এক অর্থে, আপনি যখন নিজেকে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেন, তখন এটা দেখায় যে, যিহোবা আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কয়েক দশক আগে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “আমরা [হয়ত] নিজেদের বিঘ্নকারী মনে করি এবং বহুবার কোন মন্দ অভ্যাসে পতিত হই যা আমাদের পূর্বের জীবনধারাকে আমরা যা ভেবেছিলাম তার চাইতে আরও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। . . . হতাশ হবেন না। এই পরিসমাপ্তিতে আসবেন না যে আপনি ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেছেন। শয়তান চায় এইভাবে আপনি যেন যুক্তি করেন। আসল বিষয় হল আপনি যে দুঃখিত ও নিজের উপর রাগান্বিত, সেটাই প্রমাণ করে যে আপনি বেশি দূর যাননি। তাঁর ক্ষমা ও শুদ্ধতা এবং সাহায্য প্রার্থনা করে নম্র ও আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের প্রতি ফিরতে কখনও ক্লান্ত হবেন না। বিপদে পড়ে শিশু যেমন তার পিতার কাছে যায় তেমনি তাঁর কাছে যান, যতবারই আপনি সেই একই দুর্বলতা দেখিয়ে থাকুন না কেন আর যিহোবা তাঁর অযাচিত করুণার জন্য উদারতার সাথে আপনাকে সাহায্য যোগাবেন।” *

১৫-১৬. কিছু ভাই-বোনেরা যখন এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন তারা কেমন অনুভব করেছিলেন?

১৫ যিহোবার লোকেদের মধ্যে অনেকে এটা উপলব্ধি করতে পেরে সান্ত্বনা লাভ করেছে যে, যিহোবা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, কয়েক বছর আগে একজন ভাই “বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোর মধ্যে একটা প্রবন্ধ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সেই প্রবন্ধে একজন বোন স্বীকার করেন যে, অতীতের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে তার পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসতে পারেন। বাপ্তিস্ম নেওয়ার অনেক বছর পরও তিনি এইরকম অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তবে, তিনি যখন মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন, তখন সেটা তাকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করেছিল যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন। *

১৬ কীভাবে সেই বোনের অভিজ্ঞতা ভাইকে প্রভাবিত করেছিল? ভাই লেখেন: “যুবক বয়সে আমি পর্নোগ্রাফি দেখতাম। তবে, আমি সেই আসক্তি কাটিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু, সম্প্রতি আবারও এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। আমি প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চাই এবং সেই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে উন্নতি করি। তারা আমাকে এটা বিশ্বাস করতে সাহায্য করেন যে, ঈশ্বর আমাকে ভালোবাসেন এবং ক্ষমা করতে চান। তারপরও, কখনো কখনো আমি নিজেকে ক্ষমা লাভের অযোগ্য বলে মনে করি আর ভাবি, যিহোবা হয়তো আমাকে কখনো ভালোবাসবেন না। এই [বোনের] অভিজ্ঞতা পড়ে সত্যিই আমি সাহায্য লাভ করেছি। এখন আমি এটা বুঝতে পারি, আমি যখন বলি, যিহোবা আমাকে ক্ষমা করবেন না, তখন এক অর্থে আমি বলি যে, তাঁর পুত্রের বলিদান আমার পাপ ঢাকার জন্য যথেষ্ট নয়। আমি এই প্রবন্ধের অংশটা কেটে রেখেছি, যাতে আমার মধ্যে অযোগ্যতার অনুভূতি এসে থাকলে আমি সেই অভিজ্ঞতা পড়তে পারি এবং তা নিয়ে ধ্যান করতে পারি।”

১৭. কীভাবে প্রেরিত পৌল নিজেকে অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করার ফাঁদ এড়িয়ে চলেছিলেন?

১৭ এইরকম অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের প্রেরিত পৌলের কথা মনে করিয়ে দেয়। একজন খ্রিস্টান হওয়ার আগে তিনি বেশ কয়েক বার গুরুতর পাপ করেছিলেন। পৌল তার কাজগুলো মনে রেখেছিলেন, কিন্তু তিনি ক্রমাগত সেগুলো নিয়ে চিন্তা করেননি। (১ তীম. ১:১২-১৫) তিনি মুক্তির মূল্যকে এক ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে দেখেছিলেন। (গালা. ২:২০) এভাবে পৌল নিজেকে অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করার ফাঁদ এড়িয়ে চলেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে যিহোবাকে তার সর্বোত্তমটা দেওয়ার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন।

নতুন জগতের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখুন

আমরা যেন ভবিষ্যতের বিষয়গুলো পাওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই (১৮-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৮. এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি?

১৮ এই প্রবন্ধে উল্লেখিত ফাঁদগুলো নিয়ে পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা কী শিখেছি? (১) উত্তম স্মৃতিগুলো হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া উপহার। তবে, অতীতের জীবন ভালো হলেও ভবিষ্যতে নতুন জগতে আমাদের জীবন আরও ভালো হবে। (২) অন্যেরা হয়তো আমাদের দুঃখ দিতে পারে কিন্তু আমরা যখন তাদের ক্ষমা করে দিই, তখন আমরা জীবনে এগিয়ে যেতে পারব। (৩) নিজেকে অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করা আমাদের আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে। তাই, পৌলের মতো আমাদেরও এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।

১৯. কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, নতুন জগতে আমরা অতীতের জন্য আপশোস করব না?

১৯ আমাদের চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে। আর ঈশ্বরের নতুন জগতে আমরা অতীতের জন্য আপশোস করব না। সেই সময় সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না।” (যিশা. ৬৫:১৭) কল্পনা করুন: আমাদের মধ্যে কোনো কোনো ভাই-বোন অনেক বছর ধরে যিহোবার সেবা করছে এবং এখন তারা বয়স্ক হয়ে গিয়েছে, কিন্তু নতুন জগতে তারা আবারও তাদের যৌবনকাল ফিরে পাবে। (ইয়োব ৩৩:২৫) তাই, আসুন আমরা যেন অতীতকে ধরে না রাখার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। আমরা যেন ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রাখি এবং সামনে যে-বিষয়গুলো অপেক্ষা করে রয়েছে, সেগুলো পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য করি।

গান সংখ্যা ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন

^ অনু. 5 কখনো কখনো অতীতের কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করা ভালো। কিন্তু, অতিরিক্ত চিন্তা করলে আমরা হয়তো বর্তমানে যিহোবার সেবায় নিজেদের সর্বোত্তমটা করতে পারব না অথবা পরমদেশ সম্বন্ধে যিহোবার অপূর্ব প্রতিজ্ঞার বিষয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে দেব। এই প্রবন্ধে তিনটে ফাঁদ নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো হয়তো আমাদের অতীতকে ধরে রাখতে পরিচালিত করতে পারে। আমরা বাইবেলের বিভিন্ন নীতি এবং আধুনিক দিনের কিছু উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করব, যেগুলো আমাদের এই ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে।

^ অনু. 4 এই অভিব্যক্তির অর্থ: এই প্রবন্ধে “অতীতকে ধরে রাখার” অর্থ হল অতীতের কথাগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করা অথবা শুধু সেগুলো নিয়েই কথা বলা এবং কল্পনা করা কিংবা এটা চিন্তা করা যে, অতীতের জীবনটাই বেশি ভালো ছিল।

^ অনু. 14 ১৯৫৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: নস্টালজিয়া, বিরক্তির মনোভাব এবং নিজেদের অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করা হল ভারী বোঝার মতো, যেগুলো আমরা বহন করে থাকি এবং আমাদের জীবনের পথে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাধা দেয়।

^ অনু. 66 ছবি সম্বন্ধে: আমরা যখন এই ভারী বোঝার মতো অনুভূতিগুলো নিজের মধ্যে থেকে বের করে দিই, তখন স্বস্তি বোধ করি এবং খুশি হই আর সেইসঙ্গে পুনরায় শক্তি লাভ করি। এর ফলে, আমরা সামনের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখতে পারব।