সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৫

একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়ে চলুন

একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়ে চলুন

“একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম ও করুণা দেখিয়ে আচরণ করো।”—সখ. ৭:৯, NW.

গান ৫০ ঈশ্বরীয় প্রেমের উদাহরণ

সারাংশ *

১-২. কেন আমাদের একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখানো উচিত?

একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখানোর অনেক কারণ আমাদের কাছে রয়েছে। কিছু কারণ হিতোপদেশ বইয়ে লেখা রয়েছে। এগুলো হল: “দয়া ও সত্য তোমাকে ত্যাগ না করুক; . . . তাহা করিলে অনুগ্রহ ও সুবুদ্ধি পাইবে, ঈশ্বরের ও মনুষ্যের দৃষ্টিতে পাইবে।” “দয়ালু আপন প্রাণের উপকার করে।” “যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, . . . পায়।”—হিতো. ৩:৩, ৪; ১১:১৭; ২১:২১.

এই শাস্ত্রপদগুলোতে তিনটে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেন আমাদের অটল প্রেম দেখানো উচিত। প্রথমত, এটা দেখানোর ফলে আমরা যিহোবার দৃষ্টিতে মূল্যবান হয়ে উঠি। দ্বিতীয়ত, এটা থেকে আমরা নিজেরা উপকৃত হই। যেমন, আমরা ভালো বন্ধু তৈরি করতে পারি। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে আমরা বিভিন্ন আশীর্বাদ পাব এবং অনন্তজীবন লাভ করব। তাই আসুন, আমরা যিহোবার এই কথা সবসময় মেনে চলি: “একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম ও করুণা দেখিয়ে আচরণ করো।”—সখ. ৭:৯.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা চারটে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব। কাদের প্রতি আমাদের অটল প্রেম দেখানো উচিত? রূতের বিবরণ বই থেকে আমরা অটল প্রেম দেখানোর ব্যাপারে কী শিখতে পারি? কীভাবে আমরা অটল প্রেম দেখাতে পারি? আর তা দেখানোর মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?

কাদের প্রতি আমাদের অটল প্রেম দেখানো উচিত?

৪. কীভাবে আমরা যিহোবার মতো অটল প্রেম দেখাতে পারি? (মার্ক ১০:২৯, ৩০)

আগের প্রবন্ধে আমরা শিখেছিলাম, যিহোবা শুধুমাত্র সেই লোকদের প্রতি অটল প্রেম দেখান, যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর উপাসনা করে। (দানি. ৯:৪) তিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদের পাশে থাকেন। আমরা ‘প্রিয় সন্তান হিসেবে ঈশ্বরের অনুকারী’ হতে চাই। (ইফি. ৫:১) তাই, আমাদেরও ভাই-বোনদের প্রতি অটল প্রেম দেখানো উচিত এবং কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে থাকা উচিত।—পড়ুন, মার্ক ১০:২৯৩০.

৫-৬. একটা উদাহরণের সাহায্য বলুন যে, “অনুগত” ব্যক্তি কাকে বলা যেতে পারে।

আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি তখনই অটল প্রেম দেখাতে পারব, যখন আমরা এই গুণ সম্বন্ধে ভালোভাবে জানব। অনেক লোক মনে করে, একজন ব্যক্তি যদি অনুগত হন, তা হলে তিনি অটল প্রেম দেখাচ্ছেন। কিন্তু, অটল প্রেম ও আনুগত্য, এই দুটো গুণ কি সত্যিই এক? এটা বোঝার জন্য আসুন, একটা উদাহরণ লক্ষ করি।

যদি কোনো ব্যক্তি অনেক বছর ধরে একই কোম্পানিতে কাজ করেন, তা হলে তাকে একজন অনুগত কর্মচারী বলা যেতে পারে। কিন্তু, এত বছরে তিনি হয়তো এক বারও কোম্পানির মালিকের সঙ্গে দেখা করেননি। এমনকী, অনেক বার তিনি হয়তো মালিকের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তে একমতও হননি। তা হলে, কেন তিনি সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন? এর কারণ এই নয় যে, কোম্পানির প্রতি তার ভালোবাসা রয়েছে বরং এর কারণ হল, তিনি নিজের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারছেন। তিনি যদি অন্য কোথাও এর চেয়ে মোটা বেতনের চাকরি পেয়ে যান, তা হলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি হয়তো এই কোম্পানি ছেড়ে দেবেন।

৭-৮. (ক) কেন ঈশ্বরের লোকেরা একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখায়? (খ) রূতের বিবরণ বই থেকে আমরা কী শিখব?

এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, অনেক সময় একজন ব্যক্তি বাধ্য হয়ে অনুগত থাকেন। তবে, অটল প্রেম হৃদয় থেকে আসে। বাইবেলে লেখা রয়েছে, ঈশ্বরের লোকেরা একে অন্যের প্রতি বাধ্য হয়ে অটল প্রেম দেখায়নি। এর পরিবর্তে, তারা হৃদয় থেকে তা দেখিয়েছিল। দায়ূদের উদাহরণ লক্ষ করুন। যদিও যোনাথনের বাবা দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন, তারপরও দায়ূদ তার প্রিয় বন্ধু যোনাথনের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়েছিলেন। দায়ূদ বাধ্য হয়ে যোনাথনের প্রতি অটল প্রেম দেখাননি। এর পরিবর্তে, তার হৃদয় তাকে তা দেখাতে পরিচালিত করেছিল। যোনাথনের মৃত্যুর অনেক বছর পরও, দায়ূদ যোনাথনের ছেলে মফীবোশতের প্রতি ক্রমাগত অটল প্রেম দেখিয়েছিলেন।—১ শমূ. ২০:৯, ১৪, ১৫; ২ শমূ. ৪:৪; ৮:১৫; ৯:১, ৬, ৭.

এখন আমরা বাইবেল থেকে রূতের বিবরণ বই নিয়ে আলোচনা করব। আমরা শিখব যে, এতে উল্লেখিত ব্যক্তিরা কীভাবে অটল প্রেম দেখিয়েছিলেন আর কীভাবে আমরা মণ্ডলীতে অন্যদের প্রতি এই প্রেম দেখাতে পারি। *

রূতের বিবরণ বই থেকে আমরা অটল প্রেম দেখানোর ব্যাপারে কী শিখতে পারি?

৯. কেন নয়মীর মনে হয়েছিল, যিহোবা তার উপর রেগে আছেন?

রূতের বিবরণ বইয়ে আমরা নয়মী, রূৎ ও বোয়স সম্বন্ধে জানতে পারি। বোয়স নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের একজন আত্মীয় ছিলেন, যিনি যিহোবাকে খুব ভালোবাসতেন। যখন ইজরায়েলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন নয়মী তার স্বামী ও দুই ছেলের সঙ্গে মোয়াবে চলে আসেন। সেখানে তার স্বামী মারা যান। তারপর, তার দুই ছেলের বিয়ে হয়, কিন্তু কিছুসময় পর ছেলেরাও মারা যায়। (রূৎ. ১:৩-৫; ২:১) একের-পর-এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার কারণে নয়মী একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। তার মনে হয়েছিল, যিহোবা তার উপর রেগে আছেন। নয়মী বলেছিলেন: “যিহোবা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন।” তিনি এও বলেছিলেন: ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই আমার জীবন দুঃখে ভরিয়ে দিয়েছেন। যিহোবাই আমার বিপক্ষে গিয়েছেন আর সর্বশক্তিমানই আমার উপর এত বিপদ এনেছেন।’—রূৎ. ১:১৩, ২০, ২১.

১০. নয়মীর কথা শুনে যিহোবা কী করেছিলেন?

১০ নয়মীর কথা শুনে যিহোবা রেগে যাননি কিংবা তাকে পরিত্যাগও করেননি। এর পরিবর্তে, যিহোবা তার প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন। যিহোবা ভালোভাবে জানেন, কষ্ট অথবা “উপদ্রব জ্ঞানবানকে ক্ষিপ্ত করে।” (উপ. ৭:৭) কীভাবে যিহোবা নয়মীকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তিনি তাকে পরিত্যাগ করেননি? (১ শমূ. ২:৮) যিহোবা রূৎকে নয়মীর প্রতি অটল প্রেম দেখাতে পরিচালিত করেছিলেন। রূৎ নয়মীকে নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন আর তাকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, যিহোবা এখনও তাকে ভালোবাসেন। আমরা রূতের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১১. কেন অনেক খ্রিস্টান এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করে, যারা দুঃখের কিংবা হতাশার মধ্যে রয়েছে?

১১ অটল প্রেম আমাদের এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পরিচালিত করে, যারা দুঃখের কিংবা হতাশার মধ্যে রয়েছে। কঠিন পরিস্থিতিতে রূৎ যেমন নয়মীর পাশে ছিলেন, ঠিক তেমনই আজ অনেক খ্রিস্টান এমন ভাই-বোনদের পাশে থাকে এবং তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, যারা দুঃখের কিংবা হতাশার মধ্যে রয়েছে। তারা সেই ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসে আর তাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা করে থাকে। (হিতো. ১২:২৫; ২৪:১০) এভাবে তারা প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শ মেনে চলে: “হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দাও, দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করো, সকলের প্রতি ধৈর্যশীল হও।”—১ থিষল. ৫:১৪.

হতাশার মধ্যে রয়েছে এমন ভাই-বোনদের কথা মন দিয়ে শোনার মাধ্যমে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. হতাশার মধ্যে রয়েছে এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় কী?

১২ যে-সমস্ত ভাই-বোন হতাশার মধ্যে রয়েছে, তাদের সাহায্য করার একটা কার্যকরী উপায় হল, তাদের কথা মন দিয়ে শোনা এবং তাদের আশ্বাস দেওয়া যে, আপনি তাদের ভালোবাসেন। এই সমস্ত ভাই-বোন যিহোবার কাছে মূল্যবান। তাই, আপনি যখন তাদের প্রতি চিন্তা দেখান, তখন যিহোবা তা লক্ষ করেন। (গীত. ৪১:১) হিতোপদেশ ১৯:১৭ পদে লেখা আছে: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।”

অর্পা নয়মীকে ছেড়ে মোয়াবে ফিরে যাচ্ছেন, কিন্তু রূৎ তার শাশুড়ি নয়মীর সঙ্গে রয়েছেন। রূৎ নয়মীকে বলছেন: “তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাব” (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. (ক) কীভাবে রূতের সিদ্ধান্ত অর্পার সিদ্ধান্তের চেয়ে আলাদা ছিল? (খ) কেন রূৎ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৩ অটল প্রেমের কারণে আমরা আরও কিছু করতে পারি। সেগুলো কী, তা জানার জন্য আসুন লক্ষ করি, নয়মীর স্বামী ও তার দুই ছেলে মারা যাওয়ার পর তার প্রতি কী ঘটেছিল। যখন নয়মী জানতে পারেন, “যিহোবা আবারও ইজরায়েলের লোকদের উপর আশীর্বাদ করছেন এবং তাদের খাবার জোগাচ্ছেন,” তখন তিনি নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। (রূৎ. ১:৬) তার দুই বউমাও তার সঙ্গে যাত্রা করতে শুরু করেন। রাস্তায় নয়মী তিন বার তার বউমাদের বলেন, তারা যেন নিজেদের দেশে ফিরে যায়। পরে, “অর্পা নয়মীকে চুম্বন করল এবং সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু, রূৎ তার শাশুড়িকে ছেড়ে গেল না।” (রূৎ. ১:৭-১৪) অর্পা ঠিক সেটাই করেন, যেটা নয়মী তাকে করতে বলেন; তিনি নিজের দেশে ফিরে যান। কিন্তু, রূৎ ফিরে যাননি; তিনি আরও বেশি কিছু করেন। তিনি চাইলে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারতেন। কিন্তু, নয়মীর প্রতি রূতের অটল প্রেম থাকায় রূৎ তার সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। (রূৎ. ১:১৬, ১৭) তিনি বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেননি বরং তিনি হৃদয় থেকে নয়মীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। এভাবে, রূৎ নয়মীর প্রতি অটল প্রেম দেখিয়েছিলেন। এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৪. (ক) বর্তমানে অনেক খ্রিস্টান কী করে? (খ) ইব্রীয় ১৩:১৬ পদ অনুযায়ী কোন ধরনের বলিদানে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন?

১৪ অটল প্রেম ভাই-বোনদের আরও বেশি সাহায্য করতে আমাদের পরিচালিত করে। অতীতের মতো বর্তমান সময়েও, অনেক খ্রিস্টান ভাই-বোনদের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়ে থাকে, এমনকী তাদের প্রতিও, যাদের তারা চেনে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন তারা জানতে পারে, কোথাও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে, তখন তারা দ্রুত সেখানকার ভাই-বোনদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। কিংবা যখন তারা জানতে পারে যে, মণ্ডলীতে কেউ আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তখন তারা দ্রুত তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রাচীন ম্যাসিডোনিয়ার খ্রিস্টানদের মতো তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী, “এমনকী তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত দান” করে। (২ করি. ৮:৩) অভাবের মধ্যে রয়েছে এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করার জন্য তারা ত্যাগস্বীকার করে অর্থাৎ নিজেদের সময় ও নিজেদের বস্তুগত বিষয় দান করে। এই সমস্ত কিছু দেখে যিহোবা কতই-না আনন্দিত হন!—পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৬.

কীভাবে আমরা অটল প্রেম দেখাতে পারি?

১৫-১৬. কীভাবে রূৎ প্রচেষ্টা করে চলেছিলেন?

১৫ রূৎ ও নয়মীর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আসুন, কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই।

১৬ প্রচেষ্টা করে চলুন। রূৎ যখন নয়মীকে বলেছিলেন, তিনি যিহূদায় যাবেন, তখন নয়মী প্রথমে তাকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি হননি। কিন্তু, রূৎ হাল ছেড়ে দেননি, তিনি তার সিদ্ধান্তে স্থির ছিলেন। “নয়মী যখন বুঝতে পারল, রূৎ তার সিদ্ধান্তে অটল, তখন সে তাকে আর কিছুই বলল না।”—রূৎ. ১:১৫-১৮.

১৭. কোন বিষয়টা আমাদের প্রচেষ্টা করে চলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে?

১৭ শিক্ষা: যারা হতাশার মধ্যে থাকে, তাদের ক্রমাগত সাহায্যের প্রয়োজন হয়। তাই, আমাদের বার বার প্রচেষ্টা করা উচিত এবং ধৈর্য ধরা উচিত। শুরুতে তারা আমাদের কাছ থেকে সাহায্য না-ও নিতে পারে। তারপরও, আমরা হাল ছেড়ে দেব না। তাদের পাশে থাকব এবং সাহায্য করার প্রচেষ্টা করে যাব কারণ তাদের প্রতি আমাদের অটল প্রেম রয়েছে। (গালা. ৬:২) আজ নয় তো কাল, তারা আমাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে রাজি হবে।

১৮. কোন বিষয়টা হয়তো রূতের খারাপ লেগেছিল?

১৮ খারাপ মনে করবেন না। যখন নয়মী ও রূৎ বেথলেহেমে পৌঁছান, তখন নয়মী তার পুরোনো প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাদের বলেন: “আমি যখন এখান থেকে গিয়েছিলাম, তখন আমার কাছে সব কিছু ছিল। কিন্তু এখন, যিহোবা আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে এনেছেন।” (রূৎ. ১:২১) একটু চিন্তা করুন, এই কথা শুনে রূতের কেমন লেগেছিল। তিনি নয়মীর জন্য কত কিছু করেছিলেন। তিনি তার সঙ্গে কেঁদেছিলেন, তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন আর অনেক দিন ধরে তার সঙ্গে হেঁটে এসেছিলেন। তা সত্ত্বেও, নয়মী বলেছিলেন: “যিহোবা আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে এনেছেন।” এটা শুনে রূতের হয়তো খুব খারাপ লেগেছিল। তারপরও, তিনি নয়মীকে একা ছেড়ে দেননি।

১৯. হতাশার মধ্যে রয়েছে এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করার সময় আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

১৯ শিক্ষা: আমরা হয়তো এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করার প্রচেষ্টা করছি, যারা হতাশার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু হতে পারে, তারা আমাদের এমন কিছু বলে ফেলে, যেটার কারণে আমরা খুব আঘাত পাই। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের খারাপ মনে করা উচিত নয় কিংবা তাদের একা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের যিহোবার কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত, যাতে আমরা তাদের সান্ত্বনা দিতে পারি।—হিতো. ১৭:১৭.

কীভাবে মণ্ডলীর প্রাচীনেরা বোয়সের মতো হতে পারেন? (২০-২১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

২০. কীভাবে রূৎ উৎসাহ লাভ করেছিলেন?

২০ প্রয়োজনের সময় উৎসাহিত করুন। রূৎ নয়মীর প্রতি অটল প্রেম দেখাতেন আর তাকে ক্রমাগত সাহায্য করতেন। কিন্তু, এখন রূতের নিজেরই সাহায্যের প্রয়োজন। তাই, যিহোবা রূৎকে উৎসাহিত করার জন্য বোয়সকে পরিচালিত করেন। বোয়স রূৎকে বলেন: “যিহোবা যেন তোমাকে আশীর্বাদ করেন। তুমি ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার পক্ষের নীচে আশ্রয় নিয়েছ, তিনি যেন তোমাকে সম্পূর্ণ পুরস্কার দেন।” এই কথা শুনে রূতের খুব ভালো লাগে। তিনি বোয়সকে বলেন: “আপনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং আপনার কথার মাধ্যমে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।” (রূৎ. ২:১২, ১৩) এভাবে, প্রয়োজনের সময় রূৎ বোয়সের কাছ থেকে উৎসাহ লাভ করেছিলেন আর এটা তাকে নয়মীকে সাহায্য করে চলার ক্ষেত্রে শক্তি জুগিয়েছিল।

২১. যিশাইয় ৩২:১, ২ পদ অনুযায়ী প্রাচীনদের কী করা উচিত?

২১ শিক্ষা: যে-ব্যক্তিরা অন্যদের প্রতি অটল প্রেম দেখায়, তাদের নিজেদেরই কখনো কখনো উৎসাহের প্রয়োজন হয়। বোয়স লক্ষ করেছিলেন, রূৎ কীভাবে তার শাশুড়িকে সাহায্য করছেন আর এরপর তিনি রূতের প্রশংসা করেছিলেন। একইভাবে, আজ প্রাচীনদেরও লক্ষ রাখা উচিত যে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কীভাবে অন্যদের সাহায্য করছে। পরে, প্রাচীনদের নিয়মিতভাবে সেই ভাই-বোনদের প্রশংসা করা উচিত। এভাবে, সেই ভাই-বোনেরা উৎসাহ লাভ করবে আর এটা তাদের অন্যদের সাহায্য করে চলার ক্ষেত্রে শক্তি জোগাবে।—পড়ুন, যিশাইয় ৩২:১.

অটল প্রেম দেখানোর ফলে আমরা কোন কোন উপকার লাভ করি?

২২-২৩. (ক) কীভাবে বোঝা যায় যে, নয়মীর চিন্তাধারা পালটে গিয়েছিল? (খ) কেন তার চিন্তাধারা পালটে গিয়েছিল? (গীতসংহিতা ১৩৬:২৩, ২৬)

২২ কিছুসময় পর, বোয়স রূৎ ও নয়মীকে অনেক শস্য দেন। (রূৎ. ২:১৪-১৮) তার উদারতা দেখে নয়মী বলেন: “যিহোবা যেন তাকে আশীর্বাদ করেন। সত্যিই, তিনি জীবিত ও মৃতদের প্রতি তাঁর অটল প্রেম দেখানো কখনো বন্ধ করেন না।” (রূৎ. ২:২০ক) আপনি কি লক্ষ করেছেন, নয়মীর চিন্তাধারা কতটা পালটে গিয়েছে? প্রথমে তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন: “যিহোবাই . . . আমার বিপক্ষে গিয়েছেন।” কিন্তু, এখন তিনি আনন্দের সঙ্গে বলছেন: “যিহোবা . . . তাঁর অটল প্রেম দেখানো কখনো বন্ধ করেন না।” কেন নয়মীর চিন্তাধারা পালটে গিয়েছিল?

২৩ নয়মী বুঝতে শুরু করেন যে, যিহোবাই তাকে সাহায্য করছিলেন। তিনি যখন যিহূদায় ফিরে আসছিলেন, তখন যিহোবা রূৎকে তার সঙ্গে আসতে পরিচালিত করেছিলেন। (রূৎ. ১:১৬) যিহোবাই তাদের “মুক্তিকর্তাদের” মধ্যে একজনকে অর্থাৎ বোয়সকে পরিচালিত করেছিলেন, যেন তিনি তাদের অনেক শস্য দেন। * (রূৎ. ২:১৯, ২০খ) এভাবে নয়মী বুঝতে পারেন, যিহোবা তাকে কখনো পরিত্যাগ করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি সবসময় তার সঙ্গে ছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৬:২৩, ২৬.) নয়মী নিশ্চয়ই রূৎ ও বোয়সের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন কারণ তারাও কখনো তাকে সাহায্য করা বন্ধ করে দেননি। আর রূৎ ও বোয়সও এটা দেখে কতই-না আনন্দিত হয়েছিলেন যে, নয়মী আবারও আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করছেন!

২৪. কেন আমরা ভাই-বোনদের প্রতি অটল প্রেম দেখাই?

২৪ রূতের বিবরণ বই থেকে আমরা অটল প্রেম দেখানোর বিষয়ে কী শিখেছি? হতাশার মধ্যে রয়েছে এমন ভাই-বোনদের প্রতি আমরা যদি অটল প্রেম দেখাই, তা হলে আমরা তাদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেব না। এর পরিবর্তে, আমরা আরও বেশি পরিশ্রম করব। প্রাচীনদের এমন ভাই-বোনদের নিয়মিতভাবে উৎসাহিত করা উচিত, যারা অন্যদের সাহায্য করে। হতাশার মধ্যে রয়েছে এমন ভাই-বোনেরা যখন আবারও আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করতে শুরু করে, তখন এটা দেখে আমরা অনেক আনন্দিত হই। (প্রেরিত ২০:৩৫) কিন্তু, ভাই-বোনদের প্রতি অটল প্রেম দেখানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ কী? আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে চাই আর তাঁকে খুশি করতে চাই, যিনি ‘দয়াতে মহান্‌।’—যাত্রা. ৩৪:৬; গীত. ৩৩:২২.

গান ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা

^ অনু. 5 যিহোবা চান, আমরা যেন মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি অটল প্রেম দেখাই। কীভাবে আমরা তা দেখাতে পারি? এই বিষয়ে আমরা অতীতের ঈশ্বরের দাসদের কাছ থেকে শিখতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা বিশেষ করে রূৎ, নয়মী ও বোয়সের কাছ থেকে শিখব।

^ অনু. 8 এই প্রবন্ধটা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আপনি চাইলে রূতের বিবরণ ১ ও অধ্যায় পড়তে পারেন।

^ অনু. 23 বোয়স সম্বন্ধে আরও জানার জন্য তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন বইয়ের ৫ অধ্যায় দেখুন, যেটার শিরোনাম হল “এক চমৎকার মহিলা।”