সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৭

কোনো কিছুই যেন আপনাকে যিহোবার কাছ থেকে আলাদা না করে!

কোনো কিছুই যেন আপনাকে যিহোবার কাছ থেকে আলাদা না করে!

“সদাপ্রভু, আমি তোমার উপরে নির্ভর করিলাম।”—গীত. ৩১:১৪.

গান ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!

সারাংশ a

১. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা আমাদের নিকটবর্তী হতে চান?

 যিহোবা আমাদের তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। (যাকোব ৪:৮) তিনি আমাদের ঈশ্বর, পিতা এবং বন্ধু হতে চান। আমরা যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন। আমরা যখন সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন তিনি আমাদের সাহায্য করেন। যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের শেখান এবং আমাদের সুরক্ষা জোগান। কিন্তু, তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

২. কীভাবে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারি?

যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমাদের তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, বাইবেল পড়তে হবে এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা যখন এগুলো করব, তখন আমরা জানতে পারব, যিহোবা কতটা প্রেমময় এবং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে। এরপর, আমাদের তাঁর আজ্ঞা পালন করতে এবং তাঁর গৌরব করতে ইচ্ছে করবে। (প্রকা. ৪:১১) আমরা যতবেশি যিহোবাকে জানতে পারব, ততবেশি তাঁর উপর আমাদের আস্থা বাড়বে। এ ছাড়া, আমরা তাঁর সংগঠনের উপর আরও বেশি করে আস্থা রাখতে পারব, যেটার মাধ্যমে তিনি আমাদের সাহায্য করেন।

৩. (ক) কীভাবে শয়তান আমাদের যিহোবার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে? (খ) কিন্তু, কীভাবে আমরা শয়তানের ছলচাতুরী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি? (গীতসংহিতা ৩১:১৩, ১৪)

কিন্তু, শয়তান চায় না, আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হই। সে চেষ্টা করে চলে যেন আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে চলে যাই এবং তাঁর সেবা করা বন্ধ করে দিই। কীভাবে সে তা করে? প্রায়ই আমরা যখন কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাই, তখন সে এমন কিছু করে, যাতে আমরা ধীরে ধীরে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর আস্থা রাখা বন্ধ করে দিই। কিন্তু, আমরা শয়তানের ছলচাতুরী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। আমরা যদি যিহোবার উপর দৃঢ়বিশ্বাস রাখি এবং সম্পূর্ণ নির্ভর করি, তা হলে জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনকে কখনো ছেড়ে দেব না।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩১:১৩, ১৪.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

শয়তানের এই জগতে আমাদের অনেকসময় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই প্রবন্ধে আমরা এমন তিনটে পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে পারব, যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে শয়তান চেষ্টা করে যেন যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর থেকে আমাদের আস্থা উঠে যায়। আমরা এও জানতে পারব, কেন এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে পারি আর কীভাবে আমরা শয়তানের বিভিন্ন চেষ্টাকে ব্যর্থ করতে পারি।

যখন আমরা সমস্যার মুখোমুখি হই

৫. আমরা যখন সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন কীভাবে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর থেকে আমাদের আস্থা উঠে যেতে পারে?

শয়তানের এই জগতে আমরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই। যেমন, আমাদের যদি চাকরি চলে যায় কিংবা আমাদের পরিবারের সদস্যেরা আমাদের বিরোধিতা করে, তা হলে যিহোবার সংগঠনের উপর থেকে আস্থা উঠে যেতে পারে আর এমনকী আমরা যিহোবার কাছ থেকেও দূরে চলে যেতে পারি। কীভাবে? কোনো সমস্যা দীর্ঘসময় ধরে চলতে পারে। এইরকম সময় আমরা হতাশ হয়ে পড়তে পারি এবং চিন্তা করতে পারি, ‘আমার সমস্যা কখনো শেষই হবে না।’ সেইসময় শয়তান চেষ্টা করে যেন আমরা সন্দেহ করতে শুরু করি, যিহোবা আদৌ আমাদের ভালোবাসেন কি না। আর আমরা এইরকম চিন্তা করতে পারি, ‘আমাদের জীবনে যে-ঝড়ঝাপটা আসছে, এর পিছনে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনই দায়ী।’ অতীতে, শয়তান ইজরায়েলীয়দের প্রতি এইরকমই কিছু করার চেষ্টা করেছিল। এটা সেই সময়কার কথা, যখন ইজরায়েলীয়েরা মিশরে দাস হিসেবে বন্দি ছিল। যিহোবা যখন মোশি ও হারোণকে তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তখন শুরু শুরুতে তারা নিশ্চিত ছিল যে, যিহোবা এই দু-জনের মাধ্যমেই তাদের উদ্ধার করবেন। (যাত্রা. ৪:২৯-৩১) কিন্তু, পরে যখন ফরৌণ ইজরায়েলীয়দের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতে শুরু করেন, তখন তারা মোশি ও হারোণকে দোষ দিতে শুরু করে আর বলে, “তোমরা ফরৌণের দৃষ্টিতে ও তাঁহার দাসগণের দৃষ্টিতে আমাদিগকে দুর্গন্ধস্বরূপ করিয়া আমাদের প্রাণনাশার্থে তাহাদের হস্তে খড়গ দিয়াছ।” (যাত্রা. ৫:১৯-২১) দুঃখের বিষয় হল, যাদের উপর ইজরায়েলীয়দের আস্থা রাখা উচিত ছিল, তাদেরই তারা দোষ দিতে শুরু করে। যদি এমনটা হয়, আপনি দীর্ঘসময় ধরে কোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন, তা হলে কীভাবে আপনি যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর আস্থা বজায় রাখতে পারেন?

৬. যখন সমস্যা এসেছিল, তখন হবক্‌কূক কী করেছিলেন আর আমরা তার কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (হবক্‌কূক ৩:১৭-১৯)

যিহোবাকে নিজের মনের অবস্থা খুলে বলুন এবং তাঁর উপর আস্থা রাখুন। অতীতে ভাববাদী হবক্‌কূককে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। একসময়, তিনি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন আর এইরকমও ভাবতে শুরু করেছিলেন, ‘কী জানি, যিহোবা সত্যিই আমার জন্য চিন্তা করেন কি না!’ সেইসময় তার মনে যা-কিছু চলছিল, সেই সমস্ত কিছু তিনি যিহোবাকে খুলে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু কত কাল আমি আর্ত্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না? কেন দুষ্কার্য্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ?” (হবক্‌. ১:২, ৩) যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। (হবক্‌. ২:২, ৩) আর তিনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা অতীতে তাঁর লোকদের রক্ষা করেছিলেন, তখন তিনি তার আনন্দ ফিরে পেয়েছিলেন। তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন, যিহোবা তার জন্য চিন্তা করেন আর তাঁর সাহায্যে তিনি যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন। (পড়ুন, হবক্‌কূক ৩:১৭-১৯.) আমরা হবক্‌কূকের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? সমস্যা এলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, তাঁকে নিজের মনের অবস্থা খুলে বলুন এবং তাঁর উপর আস্থা রাখুন। আর এও চিন্তা করুন, কীভাবে যিহোবা আপনাকে আগে সাহায্য করেছিলেন। তখন আপনি নিশ্চিত হবেন, যিহোবা নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করবেন এবং সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আপনাকে সাহস জোগাবেন। এরপর, আপনি যখন দেখবেন, কীভাবে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করছেন, তখন তাঁর উপর আপনার বিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে।

৭. (ক) বোন শার্লির এক আত্মীয় কী করার চেষ্টা করেন? (খ) বোন শার্লি কী করেন, যাতে যিহোবার উপর থেকে তার আস্থা উঠে না যায়?

যিহোবার সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। পাপুয়া নিউ গিনিতে বসবাসরত বোন শার্লির জীবনে যখন কিছু সমস্যা এসেছিল, তখন তিনি এমনই কিছু করেছিলেন। b তার পরিবার খুব গরিব ছিল এবং দু-মুঠো খাবার জোগাড় করাও তার জন্য অনেক কঠিন ছিল। এমন সময় তার এক আত্মীয় তাকে বলেছিলেন, “খুব তো বলতে, ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি তোমার উপর রয়েছে, কিন্তু এখন কোথায় সেই পবিত্র শক্তি? তুমি গরিব ছিলে আর গরিবই থাকবে। জীবনে করার মতো অনেক কাজ রয়েছে, তা না করে তুমি লোকদের ঘরে ঘরে গিয়ে দরজার কড়া নাড়িয়ে সময় নষ্ট করছ।” এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে তিনি বোন শার্লির বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বোন শার্লি বলেন, “এক মুহূর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিল, সত্যিই কি যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন?” কিন্তু, তিনি যিহোবার উপর ক্রমাগত আস্থা রাখেন। বোন বলেন, “আমি সঙ্গেসঙ্গে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি আর মনে যা-কিছু চলছিল, সব কিছু তাঁকে বলি। আমি বাইবেল এবং অন্যান্য প্রকাশনা পড়ি, ক্রমাগত সভায় যাই এবং প্রচারে অংশ নিই।” এমন একটাও দিন যায়নি, যখন বোন শার্লির পরিবারকে খালি পেটে থাকতে হয়েছিল। তারা খুব আনন্দে থাকত। এই সমস্ত কিছু দেখে বোন বুঝতে পারেন, যিহোবা তার পরিবারের যত্ন নিচ্ছেন আর তিনি বলেন, “যিহোবা আমার প্রার্থনা শুনেছেন।” (১ তীম. ৬:৬-৮) আপনার জীবনেও সমস্যা এলে যিহোবার সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। তখন কোনো কিছুই আপনাকে তাঁর কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।

যখন নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের প্রতি খারাপ আচরণ করা হয়

৮. সংগঠনে নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের প্রতি কী ঘটতে পারে?

যে-লোকেরা আমাদের কাজের বিরোধিতা করে, তারা অনেকসময় টিভি, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যিহোবার সংগঠনে নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে থাকে। (গীত. ৩১:১৩) কিছু ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রথম শতাব্দীতে পৌলের প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। তার উপর মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেইসময় অন্য ভাই-বোনেরা কী করেছিল?

৯. পৌলকে যখন বন্দি করা হয়েছিল, তখন কিছু খ্রিস্টান কী করেছিল?

পৌল যখন রোমে বন্দি ছিলেন, তখন কিছু ভাই-বোন তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে শুরু করেছিল। (২ তীম. ১:৮, ১৫) পৌলকে একজন অপরাধীর মতো রাখা হয়েছিল। তাই, তারা হয়তো ভেবেছিল, যদি তারা পৌলের সঙ্গে দেখা করে, তা হলে লোকেরা কী বলবে; এই কারণে তাদের যেন লজ্জায় পড়তে না হয়। (২ তীম. ২:৮, ৯) কিংবা তারা হয়তো এই ভেবে ভয় পাচ্ছিল, ‘আমাদের উপরও অত্যাচার করা হবে না তো?’ আমরা এটা জানি না, তাদের মনে কী চলছিল। কিন্তু চিন্তা করুন, সেইসময় পৌলের কেমন লেগেছিল। তিনি তাদের জন্য কত কষ্ট সহ্য করেছিলেন আর এমনকী নিজের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। (প্রেরিত ২০:১৮-২১; ২ করি. ১:৮) কিন্তু, পৌলের যখন তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, তখনই তারা পৌলকে একা ছেড়ে দিয়েছিল। আমরা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো হতে চাই না। তাই, নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের উপর যখন অত্যাচার করা হয়, তখন আমরা কী করতে পারি?

১০. নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের প্রতি যখন তাড়না করা হয়, তখন আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১০ মনে রাখবেন, কেন আমাদের তাড়না করা হয় এবং এর পিছনে কার হাত রয়েছে। বাইবেলে আগে থেকেই বলা ছিল, “যত লোক খ্রিস্ট যিশুর শিষ্য হিসেবে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি সহকারে জীবনযাপন করতে চায়, তাদের সকলের প্রতিও তাড়না ঘটবে।” (২ তীম. ৩:১২) আমরা যখন দেখি, শয়তান নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের টার্গেট করে রেখেছে, তখন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। শয়তান এমনটা এইজন্য করে, যাতে সেই ভাইয়েরা যিহোবার প্রতি অনুগত না থাকে আর আমরা যখন দেখি, তাদের প্রতি কেমন আচরণ করা হচ্ছে, তখন আমরাও যেন ভয় পেয়ে যাই।—১ পিতর ৫:৮.

পৌল যখন জেলে ছিলেন, তখন অনীষিফর সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং তাকে সমর্থন করেছিলেন। আজও যখন যিহোবার উপাসকদের গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ভাই-বোনেরা তাদের সমর্থন করে (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. আমরা অনীষিফরের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (২ তীমথিয় ১:১৬-১৮)

১১ নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের একা ছেড়ে দেবেন না বরং তাদের সাহায্য করে চলুন। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ১:১৬-১৮.) পৌল যখন বন্দি ছিলেন, তখন একজন ভাই পৌলকে সাহায্য করার জন্য পিছিয়ে পড়েননি। সেই ভাইয়ের নাম ছিল অনীষিফর। বাইবেলে লেখা আছে, পৌল ‘বন্দি হয়েছিলেন বলে তিনি লজ্জিত হননি।’ অনীষিফর যখন রোমে ছিলেন, তখন তিনি পৌলকে খোঁজার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করেছিলেন। আর যখন তিনি পৌলকে খুঁজে পান, তখন পৌলের যা যা প্রয়োজন ছিল, সেই সমস্ত কিছু তিনি এনে দিয়েছিলেন। পৌলকে সাহায্য করার জন্য তিনি এমনকী নিজের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। আমরা অনীষিফরের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? ভাইদের প্রতি যখন তাড়না করা হয়, তখন আমাদের ভয়ে পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, তাদের সমর্থন করা উচিত। আমাদের পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, আমরা যেন সেই সমস্ত কিছু করি। (হিতো. ১৭:১৭) এইরকম সময়ে আমাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়।

১২. রাশিয়ার ভাই-বোনদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ রাশিয়ায় যখন আমাদের ভাই-বোনদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তখন অন্য ভাই-বোনেরা তাদের সাহায্য করার জন্য পিছিয়ে পড়েনি। আর যখন তাদের মধ্যে কিছু জনের উপর মামলা করা হয়েছিল, তখন অনেক ভাই-বোন তাদের সমর্থন করার জন্য আদালত পর্যন্ত গিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের যখন বদনাম করা হয়, তাদের গ্রেপ্তার করা হয় কিংবা তাদের উপর অত্যাচার করা হয়, তখন ভয় পাবেন না। এর পরিবর্তে, তাদের সাহায্য ও সমর্থন করুন। এ ছাড়া, তাদের জন্য প্রার্থনা করুন, তাদের পরিবারের সদস্যদের উৎসাহিত করুন এবং আপনার পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, তা করুন।—প্রেরিত ১২:৫; ২ করি. ১:১০, ১১.

যখন লোকেরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে

১৩. আমাদের নিয়ে যখন ঠাট্টা করা হয়, তখন যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর থেকে কীভাবে আমাদের আস্থা উঠে যেতে পারে?

১৩ আমরা প্রচার করি এবং যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। তাই, আমাদের আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এবং সহপাঠীরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতে পারে। (১ পিতর ৪:৪) তারা বলতে পারে, “তুমি তো ভালো, কিন্তু তোমাদের ধর্মে অনেক আইনকানুন রয়েছে। আজ এগুলো কে মেনে চলে!” যে-ব্যক্তিদের সমাজচ্যুত করা হয়, তাদের সঙ্গে আমরা কোনো সম্পর্ক রাখি না। তাই, কিছু লোক বলতে পারে, “তুমি তো খুব বলতে, তোমরা সবাইকে ভালোবাস। এটা তোমাদের ভালোবাসা?” এই সব কথা শুনে আমাদের হয়তো যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর থেকে আস্থা উঠে যেতে পারে আর আমাদের মনে হয়তো বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন, আমরা হয়তো ভাবতে পারি, ‘যিহোবা কি একটু বেশিই নিয়মকানুন তৈরি করে দেননি? তাঁর সংগঠনে তো স্বাধীনভাবে কিছু করাই যায় না। আজ কে এত কিছু মেনে চলতে পারে!’ লোকেরা যদি আপনাকে নিয়েও ঠাট্টা করে কিংবা আপনাকে টিটকারি দেয়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন, যাতে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের কাছ থেকে দূরে চলে না যান?

ইয়োবের বন্ধুরা তাকে টিটকারি দিয়েছিল, কিন্তু তিনি তাদের কথায় কান দেননি। তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. লোকেরা যখন আমাদের টিটকারি দেয়, তখন আমাদের কী করা উচিত? (গীতসংহিতা ১১৯:৫০-৫২)

১৪ যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। ইয়োব যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতেন। এই কারণে লোকেরা তাকে বিভিন্নভাবে টিটকারি দিত। একবার, ইয়োবের একজন বন্ধু ইয়োবকে বলেছিলেন, তিনি যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করুন বা না-ই করুন, এতে যিহোবার কিছু যায়-আসে না। (ইয়োব ৪:১৭, ১৮; ২২:৩) কিন্তু, ইয়োব তার বন্ধুর কথায় কান দেননি। তিনি জানতেন, যিহোবা সঠিক ও ভুলের মধ্যে যে-মান স্থির করেছেন, সেটা একেবারে নিখুঁত। আর ইয়োব যেকোনো পরিস্থিতিতে সেটা মেনে চলতে চেয়েছিলেন। লোকেরা ইয়োবকে অনেক কিছু বলেছিল, কিন্তু তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। (ইয়োব ২৭:৫, ৬) আমরা ইয়োবের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? লোকেরা যখন আমাদের টিটকারি দেয়, তখন এইরকম চিন্তা করবেন না যে, ‘কী জানি, যিহোবার মান সঠিক কি না!’ কিংবা ‘তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করলে কোনো উপকার পাব কি না!’ এর পরিবর্তে চিন্তা করুন, এখনও পর্যন্ত যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার ফলে আপনি কোন কোন উপকার পেয়েছেন। জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবার সংগঠন থেকে কখনো দূরে সরে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। তখন লোকেরা আপনাকে নিয়ে যতই ঠাট্টা করুক না কেন, আপনি যিহোবার কাছ থেকে দূরে চলে যাবেন না।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৫০-৫২.

১৫. কেন বোন ব্রিজিটের পরিবারের সদস্যেরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত?

১৫ ভারতে বসবাসরত বোন ব্রিজিট যখন একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন, তখন তার পরিবারের লোকেরা তাকে বিভিন্নভাবে টিটকারি দিত এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত। ১৯৯৭ সালে বোন বাপ্তিস্ম নেন এবং এর কিছুসময় পর তার স্বামীর চাকরি চলে যায়। বোনের স্বামী একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন না। চাকরি চলে যাওয়ার পর স্বামী সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তার স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে নিয়ে অন্য একটা শহরে গিয়ে থাকবেন। কিন্তু, সেখানে গিয়েও বোনকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এখন বোনকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে থাকতে হত এবং ঘর সামলানোর পাশাপাশি একটা চাকরিও করতে হত, যাতে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারেন। কিংডম হলও তাদের বাড়ি থেকে ৩৫০ কিলোমিটার (২২০ মাইল) দূরে ছিল। শুধু তা-ই নয়, বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে এতটাই বিরোধিতা করে যে, তাদের সেই বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে হয়। এরপর এমন কিছু হয়, যেটা বোন একদমই আশা করেননি। তার স্বামী মারা যান। এর কিছুসময় পর, তার এক মেয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং ১২ বছর বয়সে সেও মারা যায়। এই ঘটনাগুলোর জন্য বোন এমনিতেই খুব দুঃখের মধ্যে রয়েছেন, তার মধ্যে আত্মীয়েরা এসে বোনকেই দোষ দিতে শুরু করে যে, তিনি যদি একজন যিহোবার সাক্ষি না হতেন, তা হলে এই সমস্ত কিছু ঘটত না। কিন্তু তারপরও, বোন ক্রমাগত যিহোবার উপর আস্থা রাখেন এবং সংগঠনের সঙ্গে জুড়ে থাকেন।

১৬. যিহোবার এবং তাঁর সংগঠনের উপর আস্থা রাখার ফলে বোন ব্রিজিট কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছিলেন?

১৬ বোন ব্রিজিটের ঘর থেকে কিংডম হল অনেক দূরে ছিল। তাই, একজন সীমা অধ্যক্ষ তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, বোন যেন নিজের এলাকাতেই প্রচার করেন এবং নিজের বাড়িতেই সভা পরিচালনা করেন। প্রথমে বোনের মনে হয়েছিল, তার দ্বারা এটা সম্ভব নয়। কিন্তু পরে, বোন সেই ভাইয়ের কথা শোনেন। তিনি নিজের এলাকাতেই প্রচার করতে শুরু করেন এবং নিজের বাড়িতেই সভা পরিচালনা করেন। বোন এই বিষয়েও খেয়াল রাখেন যেন তিনি ক্রমাগত তার মেয়েদের সঙ্গে পারিবারিক উপাসনা করতে পারেন। কিছুসময় পর, বোন অনেক জনকে বাইবেল অধ্যয়ন করান এবং তাদের মধ্যে কয়েক জন বাপ্তিস্ম নেয়। এরপর, ২০০৫ সালে বোন নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ শুরু করেন। বোন যে-এলাকায় প্রচার করতেন, সেখানে আজ দুটো মণ্ডলী রয়েছে এবং তার মেয়েরাও যিহোবার সেবা করে চলেছে। বোন ক্রমাগত যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর আস্থা রাখেন, তাই যিহোবা বোনকে অনেক আশীর্বাদ দেন। তাকে তার পরিবারের লোকদের কাছ থেকে অনেক টিটকারি শুনতে হয়েছিল আর তার জীবনেও একের-পর-এক সমস্যা এসেছিল। কিন্তু বোন বলেন, যিহোবা তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন, সেইজন্যই তিনি সমস্ত কিছু সহ্য করতে পেরেছিলেন।

যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনকে পুরোপুরি সমর্থন করুন

১৭. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৭ আমাদের উপর যখন সমস্যা আসে, তখন শয়তান চায় যেন আমরা এভাবে চিন্তা করি, যিহোবা আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন এবং আমরা যদি তাঁর সংগঠনের সঙ্গে জুড়ে থাকি, তা হলে আমাদের সমস্যাগুলো বাড়তেই থাকবে। নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের যখন বদনাম করা হয়, তাদের উপর তাড়না করা হয় এবং তাদের জেলে বন্দি করা হয়, তখন শয়তান চায় যেন আমরা এই সব দেখে ভয় পেয়ে যাই। শয়তান এও চায়, লোকদের টিটকারি শুনে যিহোবার সংগঠনের উপর থেকে আমাদের আস্থা উঠে যাক আর আমরা চিন্তা করতে শুরু করি যে, যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে কোনো লাভ নেই। কিন্তু, আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, এগুলো শয়তানের ছলচাতুরী। (২ করি. ২:১১) তাই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন, আপনি কখনোই শয়তানের ছলচাতুরীর দ্বারা প্রতারিত কিংবা বোকা হবেন না আর যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনকে পুরোপুরি সমর্থন করবেন। সবসময় মনে রাখবেন, যিহোবা আপনাকে একা ছেড়ে দেবেন না। (গীত. ২৮:৭) তখন কোনো কিছুই আপনাকে তাঁর কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না!—রোমীয় ৮:৩৫-৩৯.

১৮. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৮ এই প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলো আমরা শয়তানের এই জগতে মুখোমুখি হই। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, যখন মণ্ডলীতেও এমন কিছু হয়, যেটার কারণে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর থেকে আমাদের আস্থা উঠে যেতে পারে, তখন আমরা কী করতে পারি।

গান ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন

a এই শেষকালে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য আমাদের যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, শয়তান এমনটা চায় না। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, সে কোন তিনটে উপায় ব্যবহার করে, যাতে আমরা যিহোবার উপর আস্থা রাখা বন্ধ করে দিই। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে আমরা শয়তানের ছলচাতুরী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি আর যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর আস্থা বজায় রাখতে পারি।

b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।