অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৮
যখন অনুগত থাকা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন সচেতন থাকুন
“তুমি সমস্ত বিষয়ে সচেতন থাকো।”—২ তীম. ৪:৫.
গান ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!
সারাংশ a
১. সচেতন থাকার মানে কী? (২ তীমথিয় ৪:৫)
অনেকসময়, আমাদের উপর যখন সমস্যা আসে, তখন যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এইরকম সময়ে আমরা কী করতে পারি? বাইবেলে লেখা আছে, সেই সময়ে আমরা যেন সচেতন থাকি, জেগে থাকি এবং বিশ্বাসে দৃঢ় থাকি। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৪:৫.) সচেতন থাকার মানে হল শান্ত থাকা, কোনো বিষয় নিয়ে একটু থেমে চিন্তা করা আর সেটাকে যিহোবার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করা। আমরা যখন তা করব, তখন আমরা আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না বরং ভেবে-চিন্তে কাজ করব।
২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২ আগের প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম, যেগুলো শয়তানের জগৎ আমাদের উপর নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু, অনেকসময় মণ্ডলী কিংবা যিহোবার সংগঠনেও এমন কিছু পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, যেগুলোর কারণে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা এইরকমই তিনটে পরিস্থিতির উপর মনোযোগ দেব। সেগুলো হল: (১) যখন আমাদের মনে হয়, কোনো ভাই কিংবা বোন আমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করেছেন, (২) যখন আমাদের শাসন করা হয় আর (৩) যখন সংগঠনে কিছু পরিবর্তন করা হয়। আসুন দেখি, যখন এইরকম কিছু ঘটে, তখন কীভাবে আমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করতে পারি আর যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকতে পারি।
যখন আমাদের মনে হয়, কোনো ভাই কিংবা বোন আমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করেছেন
৩. আমাদের যদি মনে হয়, কোনো ভাই কিংবা বোন আমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করেছেন, তা হলে আমরা কী চিন্তা করতে পারি?
৩ কোনো ভাই কিংবা বোন অথবা কোনো প্রাচীন কি এমন কিছু করেছেন বা এমন কিছু বলেছেন, যেটা আপনার ভালো লাগেনি? আপনার মনে হতে পারে, আপনার প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করা হয়েছে। তারা হয়তো আপনাকে আঘাত দিতে চায়নি, কিন্তু আপনার তাদের কথায় খারাপ লেগেছে। (রোমীয় ৩:২৩; যাকোব ৩:২) এই কারণে আপনি হয়তো রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেননি। অথবা আপনার মনে এইরকমও চিন্তা আসতে পারে, ‘তিনি কি সত্যিই যিহোবার লোক? এই সংগঠনকে কি সত্যিই যিহোবা পরিচালনা করছেন?’ কিন্তু, আপনি যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতেই থাকেন, তা হলে আপনি ধীরে ধীরে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের কাছ থেকে দূরে চলে যেতে পারেন। আর শয়তান তো এটাই চায়, তাই না? (২ করি. ২:১১) সেইজন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা যেন এভাবে চিন্তা না করি বরং সচেতন থাকি এবং ভেবে-চিন্তে কাজ করি। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
৪. (ক) যোষেফের দাদারা যখন তার প্রতি খারাপ আচরণ করেছিল, তখন কীভাবে যোষেফ ভেবে-চিন্তে কাজ করেছিলেন? (খ) আমরা যোষেফের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (আদিপুস্তক ৫০:১৯-২১)
৪ তিক্ত মনোভাব গড়ে তুলবেন না। যোষেফের উদাহরণ নিয়ে একটু চিন্তা করুন। যখন তিনি কিশোরবয়সি ছিলেন, তখন তার দাদারা তার প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করত, তাকে ঘৃণা করত আর এমনকী তাদের মধ্যে কিছু জন তাকে মেরে ফেলতেও চেয়েছিল। (আদি. ৩৭:৪, ১৮-২২) আর একদিন তার দাদারা যোষেফকে এক দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। পরবর্তী ১৩ বছর ধরে, যোষেফের জীবনে একটার পর একটা সমস্যা এসেছিল। সেই সময় যোষেফের মনে হয়তো এইরকম চিন্তা এসেছিল, ‘যিহোবা কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?’ তিনি হয়তো এও চিন্তা করেছিলেন, ‘যিহোবা আমাকে একা ছেড়ে দেননি তো? আমার এখনই তো তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’ কিন্তু, যোষেফ তিক্ত মনোভাব গড়ে তোলেননি। তিনি সচেতন ছিলেন এবং শান্ত ছিলেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ একবার যখন তার দাদাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ এসেছিল, তখন তিনি প্রতিশোধ নেননি। যোষেফ তার দাদাদের খুব ভালোবাসতেন, তাই তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে খুব ভালোভাবে আচরণ করেছিলেন। (আদি. ৪৫:৪, ৫) যোষেফ ভেবে-চিন্তে কাজ করতে পেরেছিলেন কারণ তিনি শুধু নিজের সমস্যার বিষয়ে চিন্তা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি এই বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, যিহোবার ইচ্ছা কী। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৫০:১৯-২১.) আমরা যোষেফের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? কেউ যদি আপনার প্রতি খারাপ আচরণ করে, তা হলে যিহোবার উপর রেগে থাকবেন না আর এইরকম চিন্তা করবেন না, তিনি আপনাকে একা ছেড়ে দিয়েছেন। এর পরিবর্তে চিন্তা করুন, কীভাবে তিনি সেই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আপনাকে সাহায্য করছেন। তাই, কেউ যদি আপনার প্রতি খারাপ আচরণ করে, তা হলে তাকে ক্ষমা করে দিন। মনে রাখবেন, “ভালোবাসা অসংখ্য পাপ ঢেকে দেয়।”—১ পিতর ৪:৮.
৫. ভাই মিকেয়াসের যখন মনে হয়েছিল, তার প্রতি খারাপ আচরণ করা হয়েছে, তখন তিনি কীভাবে ভেবে-চিন্তে কাজ করেছিলেন?
৫ দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত মিকেয়াস নামের একজন প্রাচীনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। b একসময় তার মনে হয়েছিল, কিছু প্রাচীন তার প্রতি ভালো আচরণ করেননি। মিকেয়াস বলেন, “আমি সবসময় এই বিষয়ে চিন্তা করতাম। রাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারতাম না। আমি কাঁদতাম কারণ এই বিষয়ে আমার কিছুই করার ছিল না। এর আগে আমি কখনো এতটা দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম না।” কিন্তু, ভাই নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভেবে-চিন্তে কাজ করেন। তিনি বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, তাঁর কাছ থেকে পবিত্র শক্তি এবং সাহস চাইতে থাকেন। তিনি এমন প্রবন্ধগুলোও পড়েন, যেখানে কিছু ভালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আমরা ভাই মিকেয়াসের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? আপনার যদি কখনো মনে হয়, কোনো ভাই কিংবা বোন আপনার প্রতি খারাপ আচরণ করেছেন, তা হলে শান্ত থাকুন এবং তার বিষয়ে খারাপ চিন্তা করবেন না। আপনি হয়তো জানেন না, যখন সেই ভাই কিংবা বোন এমনটা বলেছিলেন বা করেছিলেন, তখন তার মনে কী চলছিল। যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন যেন আপনি বিষয়টা তাঁর দৃষ্টিতে দেখতে পারেন। হতে পারে, তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, সেই বিষয়ে আপনার কাছে সম্পূর্ণ তথ্য নেই আর আপনাকে আঘাত দেওয়ার সেই ভাই কিংবা বোনের উদ্দেশ্য ছিল না। এরপর, আপনি তার ভুলগুলো উপেক্ষা করতে পারবেন এবং তাকে ক্ষমা করতে পারবেন। (হিতো. ১৯:১১) মনে রাখবেন, যিহোবা জানেন যে, আপনার প্রতি কী ঘটেছে এবং আপনার মনের অবস্থা কেমন। তিনি আপনাকে সমস্ত কিছু সহ্য করার জন্য সাহস জোগাবেন ও শক্তি দেবেন।—২ বংশা. ১৬:৯; উপ. ৫:৮.
যখন আমাদের শাসন করা হয়
৬. কেন আমাদের মনে রাখা উচিত, যিহোবা যাকে ভালোবাসেন, তাকেই শাসন করেন? (ইব্রীয় ১২:৫, ৬, ১১)
৬ আমাদের যখন শাসন করা হয়, তখন আমাদের ভালো লাগে না। কিন্তু, পরামর্শের উপর মনোযোগ না দিয়ে, আমরা যদি শুধু চিন্তা করে চলি যে, কেন আমাদের শাসন করা হয়েছে, তা হলে মনে হতে পারে, আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। অথবা আমরা এইরকম চিন্তা করতে পারি, ‘আমি এতটাও বড়ো ভুল করিনি যে, ভাইদের আমাকে শাসন করতে হল।’ কিন্তু, আমরা যদি এভাবে চিন্তা করি, তা হলে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যেতে পারি। সেটা হল, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন আর এই কারণেই আমাদের শাসন করেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:৫, ৬, ১১.) আমরা যদি অতিরিক্ত চিন্তা করে দুঃখ পাই যে, আমাদের শাসন করা হয়েছে, তা হলে আমরা হয়তো পরামর্শ কাজে লাগাব না এবং ধীরে ধীরে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের কাছ থেকে দূরে চলে যাব। মনে রাখবেন, শয়তান এটাই চায়। তাই, আপনাকে যদি কখনো শাসন করা হয়, তা হলে কীভাবে আপনি সচেতন থাকতে পারেন এবং ভেবে-চিন্তে কাজ করতে পারেন?
৭. (ক) ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, যখন পিতর পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিলেন, তখন কীভাবে তিনি যিহোবার জন্য আরও কাজ করতে পেরেছিলেন? (খ) আমরা পিতরের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
৭ পরামর্শ কাজে লাগান এবং নিজেকে পরিবর্তন করুন। যিশু অনেক বার অন্য প্রেরিতদের সামনে পিতরকে সংশোধন করেছিলেন। (মার্ক ৮:৩৩; লূক ২২:৩১-৩৪) সেই সময় পিতরের নিশ্চয়ই অনেক খারাপ লেগেছিল। কিন্তু তারপরও, তিনি যিশুর প্রতি অনুগত ছিলেন। তিনি পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিলেন এবং চেষ্টা করেছিলেন, যাতে সেই ভুল আর দ্বিতীয় বার না করেন। এই কারণে যিহোবা তাকে প্রচুর আশীর্বাদ করেছিলেন এবং অনেক বড়ো বড়ো দায়িত্বও দিয়েছিলেন। (যোহন ২১:১৫-১৭; প্রেরিত ১০:২৪-৩৩; ১ পিতর ১:১) আমরা পিতরের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? আমাদের যদি সংশোধন করা হয়, তা হলে সেই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের পরামর্শ কাজে লাগানো উচিত এবং নিজেদের পরিবর্তন করা উচিত। আমরা যদি তা করি, তা হলে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের জন্য আমরা আরও বেশি কাজ করতে পারব।
৮-৯. (ক) ভাই বার্নার্ডোকে যখন শাসন করা হয়েছিল, তখন শুরুতে তার কেমন লেগেছিল? (খ) ভাই কীভাবে নিজের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করেন?
৮ এখন আসুন দেখি, মোজাম্বিকে বসবাসরত ভাই বার্নার্ডোর প্রতি কী ঘটেছিল। আগে তিনি একজন প্রাচীন ছিলেন, কিন্তু পরে তার কাছ থেকে সেই দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়। যখন এমনটা হয়েছিল, তখন শুরুতে ভাইয়ের কেমন লেগেছিল? তিনি বলেন, “যখন আমাকে শাসন করা হয়েছিল, তখন আমার একদম ভালো লাগেনি। আমি সেই ভাইদের উপর রেগে ছিলাম।” বার্নার্ডো এই বিষয়ে খুব চিন্তা করতেন যে, তার মণ্ডলীর অন্য ভাই-বোনেরা তার বিষয়ে কী ভাববে। ভাই বলেন, “আমার যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর আস্থা রাখতে আর এটা মানতে অনেক মাস সময় লেগেছিল যে, সেই ভাইয়েরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।” ভাই বার্নার্ডো কীভাবে নিজের মনোভাব পালটাতে পেরেছিলেন?
৯ সবচেয়ে প্রথমে ভাই বার্নার্ডোর নিজের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, “আমি যখন একজন প্রাচীন ছিলাম, তখন প্রায়ই আমি ইব্রীয় ১২:৭ পদ পড়ে ভাই-বোনদের বলতাম, যিহোবা যখন আমাদের শাসন করেন, তখন এতে আমাদেরই মঙ্গল হয়। কিন্তু, এখন আমাকেই এই পদের পরামর্শ মেনে চলতে হত।” এরপর, যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর আবারও আস্থা রাখার জন্য ভাই আরও কিছু করেছিলেন। তিনি বাইবেল পড়া এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার পিছনে আরও বেশি সময় দিতে লাগলেন। কিন্তু তারপরও, তিনি এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন যে, অন্য ভাই-বোনেরা তার বিষয়ে কী ভাবছে। তবে, এই কারণে তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে প্রচার করা এবং সভায় গিয়ে উত্তর দেওয়া বাদ দেননি। কিছুসময় পর, ভাইকে আবারও একজন প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ভাই বার্নার্ডোর মতো আপনাকেও যদি শাসন করা হয়, তা হলে সেই বিষয়ে অতিরিক্ত লজ্জাবোধ করার পরিবর্তে সেই পরামর্শ কাজে লাগান এবং নিজেকে পরিবর্তন করুন। c (হিতো. ৮:৩৩; ২২:৪) এভাবে, আপনি যখন যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকবেন, তখন যিহোবা নিশ্চয়ই আপনাকে অনেক আশীর্বাদ করবেন।
যখন সংগঠনে কিছু পরিবর্তন করা হয়
১০. ইজরায়েলীয়দের সময় এমন কোন পরিবর্তন হয়েছিল, যেটার কারণে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকা তাদের জন্য হয়তো কঠিন হয়ে পড়েছিল?
১০ যখন সংগঠনে কিছু পরিবর্তন করা হয়, তখনও আমাদের জন্য যিহোবার প্রতি অনুগত থাকা কঠিন হতে পারে। আমরা যদি সেটা মেনে না নিই, তা হলে আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে পারি। অতীতেও এমনই কিছু পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। মোশির ব্যবস্থা পাওয়ার আগে প্রত্যেক পরিবারের মস্তক বেদি তৈরি করত এবং নিজের পরিবারের হয়ে যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করত। (আদি. ৮:২০, ২১; ১২:৭; ২৬:২৫; ৩৫:১, ৬, ৭; ইয়োব ১:৫) এরপর, যিহোবা তাঁর লোকদের ব্যবস্থা দেন যে, এখন থেকে পরিবারের মস্তকেরা নয় বরং যাজকেরাই বলি উৎসর্গ করবে। আর যিহোবা হারোণের পরিবারকে যাজক হিসেবে নিযুক্ত করেন। কোনো পরিবার যদি হারোণের বংশধর না হত এবং বলি উৎসর্গ করত, তা হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। d (লেবীয়. ১৭:৩-৬, ৮, ৯) আমরা নিশ্চিতভাবে তো বলতে পারি না, তবে হতে পারে এই পরিবর্তনের কারণে কোরহ, দাথন, অবীরাম এবং ২৫০ জন অধ্যক্ষ মোশি এবং হারোণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। (গণনা. ১৬:১-৩) তারা যে-কারণেই এমনটা করে থাকুক না কেন, তারা যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল না। তাই, সংগঠনে যদি এমন কোনো পরিবর্তন করা হয়, যেটা আপনার জন্য মেনে নেওয়া কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?
১১. আমরা কহাতীয় গোষ্ঠীর কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
১১ সংগঠনে যে-পরিবর্তন করা হয়, সেটা মেনে নিন। ইজরায়েলীয়েরা যখন প্রান্তরে ভ্রমণ করছিল, তখন কহাতীয় গোষ্ঠী খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করত। প্রতি বার যখন ইজরায়েলীয়েরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত, তখন কহাতীয়েরা চুক্তির সিন্দুক বয়ে নিয়ে যেত এবং লোকদের আগে আগে যেত। (গণনা. ৩:২৯, ৩১; ১০:৩৩; যিহো. ৩:২-৪) এটা তাদের জন্য কতই-না বড়ো এক সম্মানের বিষয় ছিল! কিন্তু, যখন ইজরায়েলীয়েরা প্রতিজ্ঞাত দেশে থাকতে শুরু করে, তখন কিছু পরিবর্তন হয়। এখন আগের মতো চুক্তির সিন্দুক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বার বার নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। তাই, কহাতীয়দের অন্য কাজ দেওয়া হয়। শলোমন যখন শাসন করছিলেন, তখন কিছু কহাতীয়কে গান গাওয়ার, কিছু কহাতীয়কে পাহারা দেওয়ার এবং কিছু কহাতীয়কে ভাণ্ডারের কক্ষগুলো দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। (১ বংশা. ৬:৩১-৩৩; ২৬:১, ২৪) কিন্তু, বাইবেলে কোথাও এমনটা লেখা নেই যে, কহাতীয়েরা অভিযোগ করেছিল কিংবা বলেছিল, ‘আগে আমরা কত বড়ো কাজ করতাম। আমাদের এখনও কোনো বড়ো দায়িত্বই দেওয়া উচিত।’ আমরা কহাতীয়দের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? যিহোবার সংগঠনে যদি কিছু পরিবর্তন করা হয়, তা হলে সেগুলো মেনে নিন। হতে পারে, আপনি কোনো দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু পরে আপনার কাছ থেকে সেই দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আপনাকে কোনো অন্য কাজ দেওয়া হয়েছে। এইরকম সময়ে সেই কাজ আনন্দের সঙ্গে করুন। মনে রাখবেন, আপনি যিহোবার সংগঠনে যে-কাজ করছেন, সেটা আপনাকে তাঁর চোখে মূল্যবান করে তোলে না। এর পরিবর্তে, আপনি তাঁর বাধ্য থাকেন বলে তিনি আপনাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন!—১ শমূ. ১৫:২২.
১২. বোন জোয়ানাকে যখন বেথেল থেকে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল, তখন তার কেমন লেগেছিল?
১২ লক্ষ করুন, বোন জোয়ানার প্রতি কী ঘটেছিল, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের একটা দেশে বাস করেন। তিনি ২৩ বছর ধরে বেথেলে সেবা করেছিলেন, কিন্তু পরে সংগঠন তাকে একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করে। বোন বেথেলে যে-কাজ করতেন, সেটা তার খুব ভালো লাগত। কিন্তু, এই পরিবর্তন মেনে নেওয়া বোনের জন্য সহজ ছিল না। বোন বলেন, “যখন আমাকে বেথেল থেকে যাওয়ার জন্য বলা হয়, তখন আমার খুব বড়ো ধাক্কা লাগে। আমার এমনটা মনে হয়েছিল, আমি কোনো কাজের নই। আমি বার বার এই বিষয়ে চিন্তা করতাম যে, আমি এমন কী ভুল করেছি?” শুধু তা-ই নয়, বোনের মণ্ডলীর ভাই-বোনেরাও এমন কিছু বলেছিল, যে-কথাগুলো শুনে বোনের খুব খারাপ লেগেছিল। তারা বোনকে বলেছিল, “তুমি নিশ্চয়ই তোমার কাজ ভালোভাবে করনি। নাহলে, কেন তারা বেথেল থেকে তোমাকে বের করে দেবে।” কিছুসময় ধরে বোন জোয়ানা প্রতিদিন রাতে খুব কাঁদতেন। কিন্তু বোন বলেন, “আমি কখনো এমনটা চিন্তা করিনি, যিহোবার সংগঠন যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা সঠিক ছিল না। আর সেইসঙ্গে এমনও চিন্তা করিনি, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন না।” বোন জোয়ানার প্রতি যখন এই সমস্ত কিছু ঘটছিল, তখন কীভাবে তিনি ভেবে-চিন্তে কাজ করতে পেরেছিলেন?
১৩. যদিও একেবারে শুরুতে বোন জোয়ানার খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু পরে তিনি কী করেছিলেন?
১৩ যদিও একেবারে শুরুতে বোনের খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু কিছুসময় পর তিনি আবারও আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতে শুরু করেন। বোন জোয়ানা কী করেছিলেন? তিনি কিছু প্রবন্ধ পড়েছিলেন, যেখানে এমন লোকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, যারা এইরকমই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিল। সেই প্রবন্ধে অনেক ভালো পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। যেমন ২০০১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ এসেছিল, যেটার শিরোনাম ছিল, “উৎসাহ হারিয়ে ফেললে আপনি তা কাটিয়ে উঠতে পারেন।” সেই প্রবন্ধে বলা হয়েছিল, যখন বাইবেল লেখক মার্কের কাছ থেকে একটা দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তখন তার জন্যও সেই সময়টা অনেক কঠিন ছিল। বোন জোয়ানা বলেন, “মার্কের বিষয়ে সেই প্রবন্ধটা আমার জন্য ওষুধের মতো কাজ করেছিল।” বোন অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করতে থাকেন এবং তাদের সঙ্গে প্রচারও করে চলেন। তিনি এমনটা মনে করেননি, এখন তিনি আর বেথেলে সেবা করছেন না বলে তিনি কোনো কাজের নন। তিনি এও মনে রেখেছিলেন, যিহোবার সংগঠনে ভাইয়েরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পবিত্র শক্তি তাদের নির্দেশনা দেয় আর যে-ভাইয়েরা নেতৃত্ব নেয়, তারা বোনকে খুবই ভালোবাসে। বোন এই বিষয়টাও বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবার সংগঠনে পরিবর্তন হতে থাকে। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, যিহোবার কাজ যেন চলতে থাকে।
১৪. ভাই ভ্লাদোর কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন বলে মনে হয়েছিল, তবে তিনি কোন বিষয়টা মনে রেখেছিলেন?
১৪ স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত ৭৩ বছর বয়সি ভ্লাদো নামে একজন প্রাচীনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তার মণ্ডলীকে অন্য একটা মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয় এবং তিনি যে-কিংডম হলে যেতেন, সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেইসময় ভাইয়ের কেমন লেগেছিল, সেই বিষয়ে তিনি বলেন: “আমাদের কিংডম হল খুবই সুন্দর ছিল। আমি বুঝতেই পারছিলাম না, কেন সেটা বন্ধ করে দেওয়া হল। সম্প্রতি সেই কিংডম হল মেরামত করা হয়েছিল এবং সেটার জন্য অনেক নতুন নতুন জিনিস কেনা হয়েছিল। আমিও সেখানে বিভিন্ন কাঠের জিনিস তৈরি করেছিলাম। তাই, আমার খুব দুঃখ লেগেছিল। কিংডম হল পালটে যাওয়ার কারণে ভাই-বোনদের অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছিল। আমাদের মতো বয়স্ক ভাই-বোনদের এই সমস্ত কিছু করা সহজ ছিল না।” কিন্তু, ভাই ভ্লাদো সংগঠনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা যখন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলি, তখন আমরা সবসময় আশীর্বাদ লাভ করি। ভবিষ্যতে আরও অনেক পরিবর্তন হবে। তাই, আমরা যদি আজ নির্দেশনা মেনে চলি, তা হলে ভবিষ্যতেও তা মেনে নেওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে।” আপনার মণ্ডলীকেও কি অন্য মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে? কিংবা সংগঠনে আগে আপনি যে-কাজ করতেন, এখন কি আপনাকে অন্য কোনো কাজ করতে বলা হয়েছে? যদি এমনটা হয়, তা হলে নিশ্চিত থাকুন, যিহোবা আপনার অনুভূতি বোঝেন। যখন এইরকম কোনো পরিবর্তন হয় এবং আপনি সেটা মেনে নেন আর যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকেন, তখন আস্থা রাখতে পারেন, যিহোবা আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।—গীত. ১৮:২৫.
সমস্ত বিষয়ে সচেতন থাকুন
১৫. মণ্ডলীতে যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন কীভাবে আমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করতে পারি?
১৫ আমরা ধীরে ধীরে এই বিধিব্যবস্থার শেষের দিকে যত এগিয়ে চলেছি, মণ্ডলীতে এমন কোনো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, যেটার কারণে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাই, এটা খুবই জরুরি যেন আপনি সচেতন থাকেন এবং ভেবে-চিন্তে কাজ করেন। আপনার যদি মনে হয়, কোনো ভাই কিংবা বোন আপনার প্রতি খারাপ আচরণ করেছেন, তা হলে তার উপর রেগে থাকবেন না এবং তিক্ত মনোভাব গড়ে তুলবেন না। আপনাকে যদি শাসন করা হয়, তা হলে আপনার লজ্জাবোধ হতে পারে। তবে, সেই বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না। এর পরিবর্তে, পরামর্শ মেনে নিন এবং নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। সংগঠনে যদি কিছু পরিবর্তন করা হয় এবং সেগুলো মেনে নেওয়া আপনার জন্য কঠিন বলে মনে হয়, তা হলেও সেগুলো মেনে নিন।
১৬. কীভাবে আপনি যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর ক্রমাগত আস্থা রাখতে পারেন?
১৬ যখন সমস্যা আসে, তখনও আপনি যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকতে পারেন আর যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেন। কিন্তু, তা করার জন্য আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। আপনাকে শান্ত থাকতে হবে, ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে এবং বিষয়টা যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করতে হবে। বাইবেল থেকে যিহোবার সেই উপাসকদের বিষয়ে পড়ুন, যাদের পরিস্থিতি আপনার মতো ছিল আর চিন্তা করুন, তাদের কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন। যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন যেন তিনি আপনাকে সাহায্য করেন। ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করবেন না। এরপর, যা-ই ঘটুক না কেন, শয়তান আপনাকে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না!—যাকোব ৪:৭.
গান ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও
a অনেকসময় মণ্ডলী কিংবা সংগঠনে এমন কিছু পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, যেটার কারণে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এই প্রবন্ধে আমরা এমনই তিনটে পরিস্থিতির উপর মনোযোগ দেব আর জানতে পারব যে, এইরকম সময়ে আমরা যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি কীভাবে অনুগত থাকতে পারি।
b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
c ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় দেওয়া প্রবন্ধে আপনি কিছু ভালো পরামর্শ পেতে পারেন, যেটার শিরোনাম হল “আপনি কি একসময়ে সেবা করতেন? আপনি কি আবারও সেবা করতে পারেন?”
d মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী যদি পরিবারের মস্তক কোনো পশুর মাংস খাওয়ার জন্য সেটাকে মারত, তা হলে তাকে সেই পশুকে পবিত্র স্থানে নিয়ে যেতে হত। কিন্তু, যদি কারো বাড়ি পবিত্র স্থান থেকে অনেক দূরে হত, তা হলে সেই পশুকে পবিত্র স্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না।—দ্বিতীয়. ১২:২১.