সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৫

যিহোবার সাহায্যে আমরা ভালোভাবে প্রচার করতে পারি!

যিহোবার সাহায্যে আমরা ভালোভাবে প্রচার করতে পারি!

‘তাহারা জানিতে পাইবে, তাহাদের মধ্যে এক জন ভাববাদী উপস্থিত হইল।’—যিহি. ২:৫.

গান ৪৭ “সুসমাচার ঘোষণা করো”

সারাংশ a

১. (ক) আমরা যখন লোকদের কাছে প্রচার করি, তখন কী হতে পারে? (খ) কিন্তু আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

 আমরা যখন লোকদের কাছে প্রচার করি, তখন অনেকসময় তারা আমাদের বিরোধিতা করে। এটা দেখে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় কারণ ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের আরও বিরোধিতা করা হবে। (দানি. ১১:৪৪; ২ তীম. ৩:১২; প্রকা. ১৬:২১) কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, এইরকম সময়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। তিনি যখনই তাঁর উপাসকদের কোনো দায়িত্ব দেন, তখন সেটা পালন করার জন্য তাদের সাহায্যও করেন। অতীত কালে, অনেকসময় যিহোবার উপাসকদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে কঠিন বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু যিহোবার সাহায্যে তারা তা পালন করতে পেরেছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ভাববাদী যিহিষ্কেল। তাকে সেই যিহুদিদের কাছে প্রচার করতে হত, যাদের ব্যাবিলনে বন্দি করে নিয়ে আসা হয়েছিল। আসুন দেখি, কীভাবে যিহোবা যিহিষ্কেলকে সাহায্য করেছিলেন।

২. (ক) যিহিষ্কেলকে যে-লোকদের কাছে প্রচার করতে হত, তাদের বিষয়ে যিহোবা কী বলেছিলেন? (যিহিষ্কেল ২:৩-৬) (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

যিহিষ্কেলকে যে-লোকদের কাছে প্রচার করতে হত, তারা কেমন লোক ছিল? তাদের বিষয়ে যিহোবা বলেছিলেন, তারা “দৃঢ়মুখ” বা একগুঁয়ে ও “কঠিনচিত্ত” এবং “বিদ্রোহী” ছিল। তারা কাঁটার মতো যন্ত্রণাদায়ক এবং কাঁকড়াবিছের মতো বিপদজনক ছিল। তাই, যিহোবা যিহিষ্কেলকে অনেক বার বলেছিলেন, তুমি “তাহাদের মুখ দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইও না” বা ভয় পেয়ো না। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ২:৩-৬.) এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, যিহিষ্কেল লোকদের কাছে ভালোভাবে প্রচার করতে পেরেছিলেন কারণ (১) তাকে যিহোবা পাঠিয়েছিলেন, (২) যিহোবা তাকে তাঁর পবিত্র শক্তি দিয়েছিলেন এবং (৩) যিহোবা তাঁর কথার দ্বারা যিহিষ্কেলের বিশ্বাসকে বাড়িয়ে ছিলেন। আমরা এও জানতে পারব, আজ আমরা এগুলো মাথায় রেখে কীভাবে আরও ভালোভাবে প্রচার করতে পারি।

যিহোবা যিহিষ্কেলকে পাঠিয়েছিলেন

৩. কীভাবে যিহোবা যিহিষ্কেলের সাহস বৃদ্ধি করেছিলেন এবং তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাকে সমর্থন করবেন?

যিহোবা যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে প্রেরণ করিতেছি।’ (যিহি. ২:৩, ৪) এই কথা শুনে যিহিষ্কেল নিশ্চয়ই অনেক সাহস লাভ করেছিলেন। তার হয়তো মনে পড়ে গিয়েছিল, যখন যিহোবা মোশি ও যিশাইয়কে তাঁর ভাববাদী হিসেবে কার্যভার দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদেরও ঠিক এইরকম কিছু বলেছিলেন। (যাত্রা. ৩:১০; যিশা. ৬:৮) তিনি এও জানতেন, তাদের যে-কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, সেটা সহজ ছিল না। তবে, যিহোবার সাহায্যে তারা সেটা সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। সেইজন্য, যিহোবা যখন দু-বার যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে প্রেরণ করিতেছি,’ তখন তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছিলেন, যিহোবা তাকে সমর্থন করবেন এবং তাকে সাহায্য করবেন। যিহিষ্কেলের বইয়েও এই কথাগুলো অনেক বার লেখা আছে, “সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল।” (যিহি. ৩:১৬; ৬:১) এখান থেকে বোঝা যায় যে, যিহিষ্কেল পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবাই তাকে এই কাজ করার জন্য পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া, আমরা জানি, যিহিষ্কেলের বাবা একজন যাজক ছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, যিহোবা সবসময়ই তাঁর ভাববাদীদের আশ্বাস দেন যে, তিনি তাদের সমর্থন করবেন। যেমন, যিহোবা ইস্‌হাক, যাকোব ও যিরমিয়কে বলেছিলেন, তিনি তাদের সঙ্গে আছেন।—আদি. ২৬:২৪; ২৮:১৫; যির. ১:৮.

৪. যিহিষ্কেল কোন কথা শুনে অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলেন?

যিহোবা যিহিষ্কেলকে এও বলেছিলেন, যখন তিনি লোকদের কাছে প্রচার করবেন, তখন বেশিরভাগ লোক কী করবে। যিহোবা বলেছিলেন, “ইস্রায়েল-কুল তোমার কথা শুনিতে সম্মত হইবে না, যেহেতু তাহারা আমার কথা শুনিতে সম্মত নয়।” (যিহি. ৩:৭) এই কথাগুলো শুনে যিহিষ্কেল বুঝতে পেরেছিলেন, লোকেরা যখন তার কথার উপর মনোযোগ দেবে না, তখন তারা আসলে যিহোবার কথা শুনতে চাইছে না। কিন্তু, এর মানে এই নয় যে, তিনি তার কাজ ভালোভাবে করতে পারবেন না। যিহোবা যিহিষ্কেলকে এও বলেছিলেন, পরবর্তী সময়ে যখন তিনি লোকদের শাস্তি দেবেন, তখন তারা স্মরণ করবে “তাহাদের মধ্যে এক জন ভাববাদী উপস্থিত” ছিলেন। (যিহি. ২:৫; ৩৩:৩৩) এই কথা শুনে যিহিষ্কেল নিশ্চয়ই অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলেন আর যিহোবা তাকে যে-কাজ দিয়েছিলেন, সেটা সম্পন্ন করার জন্য সাহস লাভ করেছিলেন।

যিহোবা আমাদেরও পাঠিয়েছেন

যিহিষ্কেলের মতো হয়তো লোকেরা আমাদের বার্তা শুনতে চায় না কিংবা আমাদের বিরোধিতা করে, কিন্তু আমরা মনে রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের সঙ্গে আছেন (৫-৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. যিশাইয় ৪৪:৮ পদ অনুযায়ী কোন কথাগুলো থেকে আমরা সাহস লাভ করতে পারি?

যিহিষ্কেলের মতো আমাদেরও যিহোবাই প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছেন। এটা চিন্তা করে আমরা কতই-না সাহস লাভ করি! আর একটু চিন্তা করুন এটা কত বড়ো বিষয় যে, তিনি আমাদের তাঁর “সাক্ষী” বলেছেন। (যিশা. ৪৩:১০) কিন্তু, আমরা যখন লোকদের কাছে প্রচার করি, তখন কখনো কখনো তারা আমাদের বিরোধিতা করে। এইরকম সময়ে আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমাদের মনে রাখা উচিত, যিহোবাই আমাদের পাঠিয়েছেন এবং তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। ঠিক যেমনটা যিহোবা যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, তুমি তাদের “ভয় করিও না,” একইভাবে তিনি আমাদেরও বলেছেন, “তোমরা কম্পান্বিত হইও না, ভয় করিও না।”—পড়ুন, যিশাইয় ৪৪:৮.

৬. (ক) যিহোবা আমাদের কাছে কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন? (খ) কোন কথাগুলো থেকে আমরা সাহস ও সান্ত্বনা লাভ করতে পারি?

যিহোবা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি আমাদের সমর্থন করবেন। তিনি শুধু আমাদের তাঁর সাক্ষিই বলেননি, কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবা আমাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞাও করেছেন, “তুমি যখন জলের মধ্য দিয়া গমন করিবে, আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকিব; যখন নদনদীর মধ্য দিয়া গমন করিবে, সে সকল তোমাকে মগ্ন করিবে না; যখন অগ্নির মধ্য দিয়া চলিবে, তুমি পুড়িবে না, তাহার শিখা তোমার উপরে জ্বলিবে না।” (যিশা. ৪৩:২) আমরা যখন লোকদের কাছে প্রচার করি, তখন অনেকসময় আমাদের সামনে নদীর মতো বাধা আসে কিংবা আমাদের আগুনের মতো পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। (যিশা. ৪১:১৩) তবে, যিহোবার সাহায্যে আমরা এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি এবং প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আর কখনো কখনো এমনও দেখা গিয়েছে যে, লোকেরা আমাদের কথা শুনতে চায় না, ঠিক যেমনটা যিহিষ্কেলের কথা তারা শোনেনি। কিন্তু, এর অর্থ এই নয়, আমরা আমাদের কাজ ভালোভাবে করিনি। আমরা মনে রাখতে পারি, যিহোবা এটা দেখে খুশি হন যে, বিভিন্ন সমস্যা আসা সত্ত্বেও আমরা প্রচার কাজ করে চলার জন্য কতটা প্রচেষ্টা করছি। পৌলও বলেছিলেন, “প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ অনুযায়ী পুরস্কার পাবে।” (১ করি. ৩:৮; ৪:১, ২) এই কথাগুলো থেকে আমরা কতই-না সান্ত্বনা ও সাহস লাভ করি! একজন বোন, যিনি দীর্ঘসময় ধরে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন, তিনিও বলেন, “আমি এটা চিন্তা করে অনেক খুশি হই যে, যিহোবা আমাদের কাজের উপর মনোযোগ দেন আর এই কাজ দেখে তিনি আমাদের পুরস্কার দেন।”

যিহোবা যিহিষ্কেলকে পবিত্র শক্তি দিয়েছিলেন

যিহিষ্কেল যখন একটা দর্শনে যিহোবার স্বর্গীয় রথ দেখেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, যিহোবা তাকে প্রচার করার জন্য সাহায্য করবেন (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. যিহিষ্কেল যখনই যিহোবার স্বর্গীয় রথের দর্শনের বিষয়ে চিন্তা করতেন, তখন তার কেমন লাগত? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহিষ্কেল একটা দর্শনে দেখেছিলেন, যিহোবার পবিত্র শক্তি কত কিছু করতে পারে। সেই দর্শনে তিনি দেখেছিলেন, স্বর্গদূত যা-কিছু করছিলেন, সেগুলো পবিত্র শক্তির সাহায্যেই করছিলেন। আর স্বর্গীয় রথের বড়ো বড়ো চাকা পবিত্র শক্তির সাহায্যে এগিয়ে চলছিল। (যিহি. ১:২০, ২১) এই দর্শন এত আশ্চর্যজনক ছিল যে, এটা দেখে যিহিষ্কেল ‘উপুড় হইয়া পড়িলেন।’ (যিহি. ১:২৮) যিহিষ্কেল যখনই এই দর্শনের বিষয়ে চিন্তা করতেন, তখনই তার সাহস বৃদ্ধি পেত। তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যেতেন, পবিত্র শক্তির সাহায্যে তিনি তার কাজও সম্পন্ন করতে পারবেন।

৮-৯. (ক) যিহোবা যখন যিহিষ্কেলকে দাঁড়াতে বলেছিলেন, তখন কী হয়েছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা যিহিষ্কেলকে সাহায্য করেছিলেন, যাতে তিনি একগুঁয়ে লোকদের কাছে প্রচার করতে পারেন?

যিহোবা এই দর্শন দেখানোর পর যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, “হে মনুষ্য-সন্তান তুমি পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াও; আমি তোমার সহিত আলাপ করিব” অর্থাৎ তোমাকে কিছু বলব। এরপর কী হয়? যিহিষ্কেল লিখেছিলেন, ‘[পবিত্র শক্তি] আমাতে প্রবেশ করিল’ আর তাকে এতটাই ক্ষমতা দিল যে, তিনি ‘পায়ে ভর দিয়ে’ দাঁড়াতে পারলেন। (যিহি. ২:১, ২) এরপরও, যিহোবা যিহিষ্কেলকে তাঁর পবিত্র শক্তি দিয়েছিলেন এবং তাকে কী করতে হবে, সেটাও বলেছিলেন। এই কারণেই যিহিষ্কেল অনেক বার লিখেছিলেন, যিহোবার ‘হস্ত’ তার উপর এল। (যিহি. ৩:২২; ৮:১; ৩৩:২২; ৩৭:১; ৪০:১) পবিত্র শক্তি তাকে এত সাহসও জুগিয়েছিল যে, তিনি “কঠিনচিত্ত” বা একগুঁয়ে লোকদের কাছে প্রচার করতে পেরেছিলেন। (যিহি. ৩:৭) যিহোবা যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, ‘আমি তাহাদের মুখের প্রতিকূলে তোমার মুখ, এবং তাহাদের কপালের প্রতিকূলে তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম। যে হীরক চক্মকি পাথর হইতেও দৃঢ়, তাহার ন্যায় আমি তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম; তাহাদিগকে ভয় করিও না, ও তাহাদের মুখ দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইও না।’ (যিহি. ৩:৮, ৯) যিহোবা যেন তাকে বলছিলেন, ‘এই একগুঁয়ে লোকদের কথা শুনে তুমি নিরুৎসাহিত হয়ে পোড়ো না। আমি তো আছি তোমার সঙ্গে, আমি তোমাকে সাহস জোগাব!’

এরপর, যিহোবার শক্তি যিহিষ্কেলকে সেই এলাকায় নিয়ে যায়, যেখানে তাকে প্রচার করতে হত। তিনি বলেন, “সদাপ্রভুর হস্ত আমার উপরে বলবৎ ছিল।” এর মানে হল, যিহোবার পবিত্র শক্তি যিহিষ্কেলকে সাহায্য করছিল, যাতে তিনি লোকদের কাছে ঈশ্বরের বার্তা শোনানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। তাকে নিজেকেও সেই বার্তা ভালোভাবে বুঝতে হত, তা হলেই তিনি লোকদের কাছে ভালোভাবে প্রচার করতে পারতেন। তাই, তিনি সাত দিন ধরে সেই জায়গাতেই থাকলেন। (যিহি. ৩:১৪, ১৫) তারপর, যিহোবা তাকে এক উপত্যকায় যাওয়ার জন্য বলেন, যেখানে ‘[পবিত্র শক্তি] তার মধ্যে প্রবেশ’ করল। (যিহি. ৩:২৩, ২৪) এখন যিহিষ্কেল লোকদের কাছে প্রচার করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

যিহোবা আমাদেরও পবিত্র শক্তি দেন

যিহিষ্কেলের মতো আজ আমাদের ভালোভাবে প্রচার করার জন্য কীসের প্রয়োজন? (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. প্রচার করার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন আর কেন?

১০ যিহিষ্কেলের প্রচার করার জন্য যিহোবার পবিত্র শক্তির প্রয়োজন ছিল। আজ আমরাও যিহোবার পবিত্র শক্তির সাহায্যে লোকদের কাছে প্রচার করতে পারি। কেন? কারণ শয়তান প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে “যুদ্ধ” করছে। (প্রকা. ১২:১৭) সত্যি বলতে কী, শয়তান মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে, প্রচার করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা শয়তানকে ভয় পাই না। তাই, যখনই আমরা প্রচার করি, তখন শয়তান পরাজিত হয় এবং আমরা জয়ী হই। (প্রকা. ১২:৯-১১) একটু চিন্তা করুন, আজ আমাদের কত বিরোধিতা করা হচ্ছে, তারপরও আমরা প্রচার কাজ করে চলেছি। এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবা আমাদের পবিত্র শক্তি দিচ্ছেন এবং তিনি আমাদের দেখে খুব খুশি হচ্ছেন।—মথি ৫:১০-১২; ১ পিতর ৪:১৪.

১১. পবিত্র শক্তির সাহায্যে আমরা কী করতে পারি আর এটা পাওয়ার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

১১ মনে করে দেখুন, সেই একগুঁয়ে লোকদের কাছে প্রচার করার জন্য যিহোবা যিহিষ্কেলকে “দৃঢ়” ও মজবুত করে দিয়েছিলেন। একইভাবে, যিহোবা পবিত্র শক্তি দিয়ে আমাদেরও মজবুত করতে পারেন, যাতে প্রচার করার সময়ে আমরা যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। (২ করি. ৪:৭-৯) তাহলে, পবিত্র শক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কী করা উচিত? আমাদের ক্রমাগত যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত আর নিশ্চিত থাকা উচিত যে, তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন। যিশুও তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, ‘চাইতে থাকো, অন্বেষণ করতে থাকো, দরজায় আঘাত করতে থাকো, তা হলে স্বর্গস্থ পিতা, তাঁর কাছে যারা চায়, তাদের পবিত্র শক্তি দিতে তিনি আরও কতই-না ইচ্ছুক হবেন!’—লূক ১১:৯, ১৩; প্রেরিত ১:১৪; ২:৪.

যিহোবার কথাগুলোর দ্বারা যিহিষ্কেলের বিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল

১২. যিহিষ্কেলকে যে-গোটানো পুস্তক দেওয়া হয়েছিল, সেটা কোথা থেকে এসেছিল আর সেটাতে কী লেখা ছিল? (যিহিষ্কেল ২:৯–৩:৩)

১২ যিহোবা যিহিষ্কেলকে পবিত্র শক্তি দিয়েছিলেন, যাতে তিনি সাহসের সঙ্গে লোকদের কাছে প্রচার করতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, যিহোবা তাঁর কথাগুলোর দ্বারা যিহিষ্কেলের বিশ্বাসকেও বাড়িয়ে ছিলেন। যিহোবা তাকে একটা দর্শন দেখিয়েছিলেন, যেখানে তাকে একটা গোটানো পুস্তক দেওয়া হয়েছিল। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ২:৯–৩:৩.) সেই গোটানো পুস্তক কোথা থেকে এসেছিল? সেটাতে কী লেখা ছিল? আর সেটাতে লেখা কথাগুলো থেকে যিহিষ্কেলের বিশ্বাস কীভাবে বেড়ে গিয়েছিল? আসুন এক এক করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানি। সেই গোটানো পুস্তক যিহোবার সিংহাসন থেকে এসেছিল। এর আগে, যিহিষ্কেল একটা দর্শনে যে-চার জন স্বর্গদূতকে দেখেছিলেন, হয়তো তাদের মধ্য থেকে একজন স্বর্গদূত তাকে এই গোটানো পুস্তকটা দিয়েছিলেন। (যিহি. ১:৮; ১০:৭, ২০) সেই গোটানো পুস্তকে যিহোবা বিচারের বার্তা লিখিয়েছিলেন, যেটা যিহিষ্কেলকে সেই বিদ্রোহী ইজরায়েলীদের শোনাতে হত, যাদের বন্দি করে নিয়ে আসা হয়েছিল। (যিহি. ২:৭) এই বার্তা গোটানো পুস্তকের দুই দিকেই লেখা ছিল।

১৩. যিহিষ্কেলকে গোটানো পুস্তকটা দেওয়ার পর যিহোবা তাকে কী বলেছিলেন আর কেন সেই গোটানো পুস্তকটা যিহিষ্কেলের মিষ্টি লেগেছিল?

১৩ যিহোবা যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, তিনি যেন সেই গোটানো পুস্তকটা খেয়ে নিজের “উদর পরিপূর্ণ” করেন। যিহিষ্কেল যিহোবার কথা শুনেছিলেন এবং সেই গোটানো পুস্তকটা খেয়েছিলেন। এই দর্শনের অর্থ ছিল, যিহিষ্কেলকে সেই বার্তা শোনানোর আগে তাকে নিজেকে সেটা ভালোভাবে বুঝতে হত। তা হলেই, তিনি সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে সেই বিষয়ে বলতে পারতেন। যিহিষ্কেল যখন সেই গোটানো পুস্তকটা খেতে শুরু করলেন, তখন সেটা তার কাছে “মধুর ন্যায় মিষ্ট লাগিল।” (যিহি. ৩:৩) এর মানে কী ছিল? যিহিষ্কেলের সেই গোটানো পুস্তকটা মিষ্টি লেগেছিল কারণ তিনি খুব খুশি ছিলেন যে, যিহোবা তাকে তাঁর বার্তা শোনানোর জন্য বাছাই করেছেন।—গীত. ১৯:৮-১১.

১৪. লোকদের কাছে যিহোবার বার্তা শোনানোর আগে যিহিষ্কেলকে কী করতে হত?

১৪ এরপর যিহোবা যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন, “আমি তোমাকে যাহা যাহা বলি, সেই সমস্ত বাক্য তুমি অন্তঃকরণে গ্রহণ কর, কর্ণ দিয়া শুন।” (যিহি. ৩:১০) যিহোবা চেয়েছিলেন, যিহিষ্কেল যেন সেই গোটানো পুস্তকে লেখা কথাগুলো মনে রাখেন এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। যিহিষ্কেল যখন তা করেছিলেন, তখন তার বিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল এবং তিনি সেই কড়া বার্তা বুঝতে পেরেছিলেন, যেটা তাকে লোকদের কাছে শোনাতে হত। (যিহি. ৩:১১) যিহিষ্কেল যিহোবার বার্তাকে তার মনে ও হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছিলেন আর এখন তিনি সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে লোকদের কাছে সেই বার্তা শোনানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

যিহোবার কথাগুলোর দ্বারা আমাদেরও বিশ্বাস বেড়ে যায়

১৫. সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রচার করে যাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৫ যিহিষ্কেলের মতো আমাদেরও যিহোবার কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিতে হবে এবং সেগুলো নিজেদের “অন্তঃকরণে” গেঁথে নিতে হবে। তা হলেই, আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যাবে এবং সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রচার কাজ করে যেতে পারব। আজ আমরা যিহোবার কথাগুলো তাঁর বাক্য বাইবেল পড়ে জানতে পারি। কিন্তু, আমরা যদি চাই আমাদের চিন্তাভাবনা, আমাদের অনুভূতি এবং আমরা যে-মনোভাব নিয়ে কোনো কাজ করি, সেটা বাইবেল অনুযায়ী হয়, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

১৬. (ক) গোটানো পুস্তকের দর্শন থেকে আমরা কী শিখি? (খ) আমরা বাইবেলে লেখা কথাগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য কী করতে পারি?

১৬ আমরা যখন খাবার খাই এবং তা হজম করি, তখন আমরা পুষ্টি পাই এবং শক্তিশালী হয়ে উঠি। একইভাবে, আমরা যখন বাইবেল পড়ি এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হয়। গোটানো পুস্তকের সেই দর্শন থেকে আমরা এটাই শিখি। ঠিক যেমন, যিহিষ্কেল সেই গোটানো পুস্তক খেয়ে নিজের “উদর পরিপূর্ণ” করেছিলেন, একইভাবে যিহোবা চান আমরাও যেন তাঁর বাক্য ভালোভাবে বুঝি, বলতে গেলে আমরা যেন সেটা খাই এবং তা হজম করি। এমনটা করার জন্য আমাদের তিনটে বিষয় করতে হবে। সবচেয়ে প্রথমে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে, যাতে ঈশ্বরের কথাগুলো বোঝার জন্য আমরা নিজেদের মনকে প্রস্তুত করতে পারি। এরপর, আমাদের মনোযোগ সহকারে বাইবেল পড়তে হবে। তারপর, মাঝে মাঝে আমাদের একটু থামতে হবে এবং যে-বিষয়টা পড়েছি, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা যত বেশি গভীরভাবে চিন্তা করব, তত আমরা বাইবেলে লেখা কথাগুলো বুঝতে পারব এবং আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে।

১৭. বাইবেলে লেখা কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৭ বাইবেল পড়া এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? তা করার মাধ্যমে আমরা বর্তমানে সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে পারব আর ভবিষ্যতে আমাদের যদি লোকদের কাছে বিচারের কড়া বার্তা শোনাতে হয়, তা হলে আমরা সেটাও শোনাতে পারব। বাইবেল নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা এও জানতে পারি, যিহোবার মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে এবং তিনি কেমন ঈশ্বর। এমনটা করার ফলে, আমরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারব এবং আমরা মনের শান্তি ও সন্তুষ্টি লাভ করব। আমাদের জীবন যেন মধুর মতো মিষ্টি হয়ে উঠবে!—গীত. ১১৯:১০৩.

সমস্যা এলেও আমরা যিহোবার সাহায্যে প্রচার করে চলব

১৮. লোকদের যখন বিচার করা হবে, তখন সবাইকে কী স্বীকার করতে হবে আর কেন?

১৮ আমরা যিহিষ্কেলের মতো ভাববাদী নই। তবে, যিহোবা আমাদেরও সেইরকমই কিছু কাজ দিয়েছেন। আমরা লোকদের কাছে যিহোবার বার্তা শোনাই এবং আমাদের এই কাজ ততক্ষণ পর্যন্ত করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না যিহোবার দৃষ্টিতে তা শেষ হচ্ছে। আর যখন লোকদের কাছে প্রচার করা শেষ হয়ে যাবে, তখন যিহোবা লোকদের বিচার করবেন। তাই, সেইসময় কোনো লোকই এটা বলতে পারবে না যে, কেউ তাদের সতর্ক করেনি কিংবা ঈশ্বর তাদের ভুলে গিয়েছেন। (যিহি. ৩:১৯; ১৮:২৩) সবাইকে এটা স্বীকার করতে হবে, তাদের যে-বার্তা শোনানো হয়েছিল, সেটা ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছিল।

১৯. কোন বিষয়গুলো মনে রাখলে আমরা সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে পারব?

১৯ যিহিষ্কেল যে-তিনটে বিষয় থেকে সাহস লাভ করেছিলেন, সেগুলো মনে রাখলে বর্তমানে আমরাও সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে পারব। আমরা মনে রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের পাঠিয়েছেন, তিনি আমাদের তাঁর পবিত্র শক্তি দেন এবং বাইবেলে লেখা তাঁর কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিলে, আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। সমস্যা তো আসবেই, কিন্তু মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁর সাহায্যে আমরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করে চলব আর “শেষ পর্যন্ত” ধৈর্য ধরতে পারব।—মথি ২৪:১৩.

গান ৪৫ এগিয়ে চলো!

a এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, ভাববাদী যিহিষ্কেল কীভাবে যিহোবার সাহায্যে ভালোভাবে প্রচার করতে পেরেছিলেন। আমরা এমন তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দেব, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন। এর ফলে, আমাদের বিশ্বাস বাড়বে যে, যিহোবা আমাদেরও সাহায্য করবেন আর আমরা ভালোভাবে লোকদের কাছে প্রচার করতে পারব।