সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৬

সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা যিহোবার সাহায্যে আনন্দে থাকতে পারি!

সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা যিহোবার সাহায্যে আনন্দে থাকতে পারি!

“সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিবার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করিবেন, আর সেই জন্য তোমাদের প্রতি করুণা করিবার আকাঙ্ক্ষায় ঊর্দ্ধ্বে থাকিবেন।”—যিশা. ৩০:১৮.

গান ২৩ যিহোবা, মোদের বল

সারাংশ a

১-২. (ক) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানব? (খ) কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে চান?

 আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা আসে। কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে আমরা সেগুলো সহ্য করতে পারি এবং আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা চালিয়ে যেতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা জানব, কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে। কিন্তু, তার আগে আসুন দেখি, যিহোবা সত্যিই আমাদের সাহায্য করতে চান কি না।

প্রেরিত পৌল ইব্রীয়দের প্রতি যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেটা থেকে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারি। পৌল লিখেছিলেন, “যিহোবা আমার সাহায্যকারী; আমি ভয় করব না। মানুষ আমার কীই-বা করতে পারে?” (ইব্রীয় ১৩:৬) একটা বইয়ে বলা হয়েছে, এই পদে যে-শব্দকে “সাহায্যকারী” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি কারো ডাক শুনে দৌড়ে তাকে সাহায্য করার জন্য চলে আসেন। আপনার কি মনে হয় না, যিহোবাও আমাদের এভাবে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকেন? আমরা যখন কোনো সমস্যার মধ্যে থাকি এবং তাঁকে ডাকি, তখন তিনি যেন আমাদের সাহায্য করার জন্য দৌড়ে আসেন। সত্যিই, যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য উৎসুক হয়ে থাকেন। তাঁর সাহায্যে আমরা যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি এবং আনন্দে থাকতে পারি।

৩. যিহোবা কোন তিনটে উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন, যাতে সমস্যা এলেও আমরা আনন্দে থাকি?

যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা সমস্যাগুলো সহ্য করতে এবং আনন্দে থাকতে পারি? আমরা যিশাইয়ের বই থেকে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারি। এর কারণ হল এই বইয়ে এমন অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী লেখা রয়েছে, যেগুলো আজ আমাদের সময়ে পরিপূর্ণ হচ্ছে। এ ছাড়া, যিশাইয় তার বইয়ে যিহোবার বিষয়ে যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তা থেকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি যে, যিহোবা কেমন ঈশ্বর। যেমন, যিশাইয় ৩০ অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারি, তিনি কীভাবে তাঁর লোকদের সাহায্য করেন: (১) তিনি আমাদের প্রার্থনা মন দিয়ে শোনেন এবং সেটার উত্তর দেন, (২) তিনি আমাদের সঠিক পথ দেখান এবং (৩) তিনি আমাদের বর্তমানে আশীর্বাদ করছেন এবং ভবিষ্যতেও আশীর্বাদ করবেন। আসুন, এক এক করে এই তিনটে বিষয় সম্বন্ধে জানি।

যিহোবা আমাদের কথা শোনেন

৪. (ক) যিহোবা যিহুদিদের বিষয়ে কী বলেছিলেন আর তিনি তাদের প্রতি কী ঘটতে দিয়েছিলেন? (খ) কিন্তু, যে-যিহুদিরা যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল, তাদের তিনি কোন প্রত্যাশা দিয়েছিলেন? (যিশাইয় ৩০:১৮, ১৯)

যিশাইয় ৩০ অধ্যায়ের শুরুতে যিহোবা যিহুদিদের ‘বিদ্রোহী সন্তান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন আর বলেছিলেন তারা ‘পাপের উপরে পাপ করে’ যাচ্ছে। এরপর তিনি বলেছিলেন, “উহারা বিদ্রোহী জাতি ও . . . উহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা শুনিতে অসম্মত সন্তান।” (যিশা. ৩০:১, ৯) সেই যিহুদিরা যিহোবার কথা শোনেনি, তাই যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যিহোবা তাদের শাস্তি দেবেন। (যিশা. ৩০:৫, ১৭; যির. ২৫:৮-১১) আর ঠিক এমনটাই হয়, ব্যাবিলনের লোকেরা তাদের বন্দি করে নিয়ে যায়। কিন্তু, কিছু যিহুদি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল। যিশাইয় সেই যিহুদিদের বলেছিলেন, তারা যেন প্রত্যাশা রাখে যে, একদিন যিহোবা তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৩০:১৮, ১৯.) তবে, যিশাইয় এও বলেছিলেন, “সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিবার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা” করে আছেন। এখান থেকে বোঝা যায়, যিহুদিরা সঙ্গেসঙ্গে মুক্ত হতে পারবে না, তাদের অপেক্ষা করতে হবে। আর সেটাই হয়। যিহুদিরা ৭০ বছর ধরে ব্যাবিলনে বন্দি ছিল, কিন্তু এরপর তাদের মধ্যে কিছু জন জেরুসালেমে ফিরে আসে। (যিশা. ১০:২১; যির. ২৯:১০) তারা এতদিন দুঃখে চোখের জল ফেলত, কিন্তু এখন আনন্দে তাদের চোখে জল চলে আসে!

৫. কীভাবে যিশাইয় ৩০:১৯ পদ থেকে আমরা সান্ত্বনা লাভ করি?

যিশাইয় ৩০:১৯ পদে লেখা কথাগুলো থেকে আজ আমরাও অনেক সান্ত্বনা লাভ করি। সেখানে লেখা আছে, “তোমার ক্রন্দনের রবে তিনি অবশ্য তোমাকে কৃপা করিবেন।” (যিশাইয় ৩০:১৯) এখান থেকে বোঝা যায়, আমরা যখন কোনো সমস্যায় পড়ি এবং যিহোবাকে ডাকি, তখন তিনি মন দিয়ে আমাদের প্রার্থনা শোনেন আর সঙ্গেসঙ্গে আমাদের সাহায্য করেন। যিশাইয় এও লিখেছিলেন, তিনি “শুনিবামাত্রই তোমাকে উত্তর দিবেন।” এর অর্থ হল, যারা যিহোবাকে ডাকে, তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি উৎসুক হয়ে থাকেন এবং দেরি না করে তাদের সাহায্য করেন। এই বিষয়টা মনে রাখলে সমস্যা এলেও আমরা হতাশ হয়ে পড়ব না বরং ধৈর্য ধরতে পারব।

৬. যিশাইয় ৩০:১৯ পদ থেকে কীভাবে বোঝা যায়, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসের প্রার্থনা শোনেন?

যিশাইয় ৩০:১৯ পদ থেকে আমরা এও বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের প্রার্থনার উপর মনোযোগ দেন। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? লক্ষ করুন, ৩০ অধ্যায়ের শুরুতে যিহোবা ইজরায়েলীয়দের “তোমরা” বলে ডাকেন। এর কারণ হল, সেখানে তিনি সমস্ত ইজরায়েলীয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিন্তু, ১৯ পদে প্রত্যেক ইজরায়েলীয়কে বলা হয়েছিল, “তুমি আর রোদন করিবে না,” তিনি “অবশ্য তোমাকে কৃপা করিবেন” আর তিনি “তোমাকে উত্তর দিবেন।” এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য চিন্তা করেন। তিনি জানেন, প্রত্যেকের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে এবং তারা কোন কোন সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। তাই, তিনি আমাদের প্রত্যেকের প্রার্থনা মন দিয়ে শোনেন। তিনি কখনো কারো সঙ্গে আমাদের তুলনা করেন না। তিনি কখনো এমনটা চিন্তা করেন না, আমরা কেন ওই ভাই কিংবা ওই বোনের মতো সাহসী হতে পারি না।—গীত. ১১৬:১; যিশা. ৫৭:১৫.

যিশাইয় যখন যিহোবার বিষয়ে লিখেছিলেন, ‘তাঁকে বিশ্রাম নিতে দিয়ো না,’ তখন এর অর্থ কী ছিল? (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. ভাববাদী যিশাইয় এবং যিশু কী বলেছিলেন, যেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের প্রার্থনা করে চলা উচিত?

আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তার বিষয় বলি, তখন তিনি হয়তো সেটা সঙ্গেসঙ্গে দূর করেন না, কিন্তু সেটার সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদের শক্তি দেন। আর কখনো কখনো কোনো দুশ্চিন্তা দীর্ঘসময় ধরে থাকতে পারে। সেইসময় আমাদের বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত, যাতে আমরা সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। যিহোবাও চান আমরা যেন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে চলি। ভাববাদী যিশাইয় লিখেছিলেন, “সদাপ্রভুকে স্মরণ” করে চল। (যিশা. ৬২:৭) এই পদকে এভাবেও অনুবাদ করা যেতে পারে: “তাঁকে বিশ্রাম নিতে দিয়ো না।” এর অর্থ হল, আমাদের যিহোবার কাছে বার বার প্রার্থনা করা উচিত, এত বার যেন তিনি বিশ্রামই না নিতে পারেন। একবার, যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করার বিষয়ে বলছিলেন, তখন তিনিও দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে কিছু এইরকমই বিষয় শিখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা যেন লজ্জা না করে যিহোবার কাছে পবিত্র শক্তি ‘চাইতে থাকি।’ (লূক ১১:৮-১০, ১৩) আমরা যিহোবার কাছে এও অনুরোধ করতে পারি, যেন তিনি আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক পথ দেখান।

যিহোবা আমাদের সঠিক পথ দেখান

৮. অতীতে যিশাইয় ৩০:২০, ২১ পদে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

যিশাইয় ৩০:২০, ২১ পদ পড়ুন। ব্যাবিলনের সৈন্যেরা দেড় বছর ধরে জেরুসালেম নগরকে ঘিরে রেখেছিল। সেই সময়টা যিহুদিদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ঠিক যেমন, আমরা প্রতিদিন খাবার খাই এবং জল পান করি, একইভাবে প্রত্যেক দিন তাদের দুঃখ এবং সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হত। কিন্তু, ২০ ও ২১ পদে যেমনটা বলা হয়েছে, যিহোবা যিহুদিদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি তারা অনুতপ্ত হয় এবং নিজেদের পরিবর্তন করে, তা হলে তিনি তাদের রক্ষা করবেন। যিশাইয় যিহোবাকে একজন মহান ‘শিক্ষক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং যিহুদিদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, যিহোবা তাদের শেখাবেন যে, কীভাবে তাঁর উপাসনা করা উচিত। যিহুদিরা যখন ব্যাবিলন থেকে মুক্ত হয়েছিল, তখন যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল। আর যিহোবা তাঁর লোকদের সঠিক পথ দেখিয়েছিলেন এবং তারা আবারও বিশুদ্ধ উপাসনা শুরু করেছিল। ইজরায়েলীয়েরা দেখতে পেরেছিল, যিহোবা একজন মহান শিক্ষক। আমরা খুব খুশি যে, আজ যিহোবা একজন মহান শিক্ষক হিসেবে আমাদেরও ক্রমাগত শিক্ষা দিচ্ছেন।

৯. আজ যিহোবা কীভাবে আমাদের শিক্ষা দেন এবং সঠিক পথ দেখান?

ঠিক যেমন, একজন শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান, একইভাবে যিশাইয় বলেছিলেন, যিহোবা হলেন আমাদের মহান ‘শিক্ষক’ এবং তিনি আমাদের শিক্ষা দেন। তিনি আমাদের দুটো উপায়ে শিক্ষা দেন। লক্ষ করুন, প্রথমে যিশাইয় লিখেছিলেন, ‘তোমার চক্ষু তোমার শিক্ষককে দেখিতে পাইবে।’ তিনি আসলে বলতে চাইছিলেন, যিহোবা যেন একজন শিক্ষকের মতো আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের শিক্ষা দেন। চিন্তা করুন, এটা আমাদের জন্য কতই-না এক বড়ো সুযোগ! আজ তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের শেখাচ্ছেন। তিনি সভাগুলোর, সম্মেলনগুলোর, বিভিন্ন প্রকাশনার এবং JW ব্রডকাস্টিং-এর মাধ্যমে আর সেইসঙ্গে অন্যান্য উপায়েও আমাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এই বিষয়গুলো মনে রাখলে আমরা সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধরতে পারব এবং আনন্দে থাকব। এই নির্দেশনাগুলোর জন্য আমরা যিহোবার প্রতি খুব কৃতজ্ঞ!

১০. আজ আমরা কীভাবে পিছন থেকে যিহোবার কথা শুনতে পাই?

১০ এরপর যিশাইয় আরেকটা উপায় সম্বন্ধে বলেন, যেটার মাধ্যমে যিহোবা আমাদের শিক্ষা দেন। তিনি লিখেছিলেন, “তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই [কথা] শুনিতে পাইবে।” যিশাইয় আসলে বলতে চাইছিলেন, যিহোবা যেন একজন শিক্ষকের মতো, যিনি ছাত্রদের পিছনে পিছনে রয়েছেন আর তাদের বলছেন, কোন পথে তাদের চলা উচিত। আজ আমরাও যখন বাইবেল পড়ি, তখন যেন পিছন থেকে আমরা যিহোবার কথা শুনতে পাই। কেন? এর কারণ হল, বাইবেল আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল। তাই, আমরা যখন এটিতে লেখা কথাগুলো পড়ি, তখন বলতে গেলে পিছন থেকে আমরা যিহোবার কথা শুনতে পাই।—যিশা ৫১:৪.

১১. সমস্যা এলেও ধৈর্য ধরার জন্য এবং আনন্দে থাকার জন্য আমাদের কী করতে হবে আর কেন?

১১ আজ যিহোবা আমাদের বাইবেল এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে শেখানোর জন্য যে-ব্যবস্থা করেছেন, তা থেকে কীভাবে আমরা পুরোপুরি উপকার লাভ করতে পারি? লক্ষ করুন, যিশাইয় দুটো বিষয় লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “এই পথ।” আর এরপর তিনি লিখেছিলেন, “তোমরা এই পথেই চল।” (যিশা ৩০:২০, ২১) এর অর্থ হল, আমাদের জানতে হবে, আমাদের কোন পথে চলা উচিত। তবে, শুধু এতটুকুই যথেষ্ট নয়, আমাদের সেই পথে চলতেও হবে। বাইবেল এবং ঈশ্বরের সংগঠনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন। আমরা এও জানতে পারি, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের পথে চলতে পারি। তবে, এই বিষয়গুলো শুধু জানাই যথেষ্ট নয়, আমরা যে-বিষয়গুলো শিখি, সেগুলো আমাদের মেনে চলতেও হবে। আমরা যখন তা করব, তখন সমস্যা এলেও আমরা ধৈর্য ধরতে পারব এবং আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে যেতে পারব। এর ফলে, যিহোবা নিশ্চয়ই আমাদের অনেক আশীর্বাদও করবেন।

যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করেন

১২. যিশাইয় ৩০:২৩-২৬ পদ অনুযায়ী কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকদের আশীর্বাদ করেছিলেন?

১২ যিশাইয় ৩০:২৩-২৬ পদ পড়ুন। যিহুদিরা অনেক বছর ধরে ব্যাবিলনে বন্দি ছিল, কিন্তু যখন তারা ইজরায়েলে ফিরে আসে, তখন এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়? যিহোবা তাদের অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের প্রচুর পরিমাণে খাবার জুগিয়েছিলেন। এর চেয়ে বড়ো বিষয় হল, যিহোবা কিছু ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে তাঁর লোকেরা আবারও সঠিক উপায়ে তাঁর উপাসনা করতে পারে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে পারে। যিহোবার লোকেরা এত আশীর্বাদ পেয়েছিল, যা আগে তারা কখনো পায়নি। যেমন ২৬ পদে বলা হয়েছে, যিহোবা তাদের প্রচুর পরিমাণে আলো জুগিয়েছিলেন অর্থাৎ তাঁর বাক্য ভালোভাবে বোঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (যিশা. ৬০:২) যিহোবার করা সেই আশীর্বাদের কারণে তাঁর দাসেরা অনেক সাহস লাভ করেছিল এবং তারা আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা করতে পেরেছিল। যেমন যিশাইয় বলেছিলেন, তাঁর “দাসেরা চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবে।”—যিশা. ৬৫:১৪.

১৩. বিশুদ্ধ উপাসনা পুনরায় শুরু হওয়ার বিষয়ে যে-ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, সেটা কীভাবে আমাদের সময়ে পরিপূর্ণ হচ্ছে?

১৩ এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কি বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে? হ্যাঁ হচ্ছে! ঠিক যেমন অতীতে ইজরায়েলীয়েরা ব্যাবিলন নগর থেকে মুক্ত হয়েছিল, একইভাবে ১৯১৯ সাল থেকে লক্ষ লক্ষ লোক মহতী বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হচ্ছে। আর যেভাবে ইজরায়েলীয়েরা ব্যাবিলন থেকে মুক্ত হয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে এসেছিল, ঠিক একইভাবে অনেক লোক মিথ্যা ধর্ম থেকে মুক্ত হয়ে, বলতে গেলে এক রূপক পরমদেশে বাস করছে। (যিশা. ৫১:৩; ৬৬:৮) এই রূপক পরমদেশ কী?

১৪. রূপক পরমদেশ কী আর সেখানে কারা বাস করছে? (এই অভিব্যক্তির অর্থ দেখুন।)

১৪ উনিশ-শো উনিশ সাল থেকে অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা এই রূপক পরমদেশে b বাস করছে। ধীরে ধীরে “আরও মেষ” অর্থাৎ যে-খ্রিস্টানদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তারাও তাদের সঙ্গে এই রূপক পরমদেশে বাস করতে শুরু করে। আর এই রূপক পরমদেশে সবাই যিহোবার কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ পাচ্ছে।—যোহন ১০:১৬; যিশা. ২৫:৬; ৬৫:১৩.

১৫. রূপক পরমদেশ কোথায়?

১৫ এই রূপক পরমদেশ কোথায়? যিহোবার উপাসকেরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাস করে। তাই, এটা কোনো আক্ষরিক জায়গা নয়। এটা পরমদেশের মতো এমন এক পরিবেশ, যেটা পুরো পৃথিবীতে থাকা যিহোবার লোকদের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়। সেইজন্য, আমরা এই পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, আমরা যদি সত্য উপাসনা করি, তা হলে আমরাও এই রূপক পরমদেশে থাকতে পারব।

আমরা প্রত্যেকে কী করতে পারি, যাতে রূপক পরমদেশ দেখতে আরও সুন্দর লাগে? (১৬-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. আমাদের কী করতে হবে, যাতে রূপক পরমদেশ আমাদের কাছে সবসময় সুন্দর লাগে?

১৬ আমরা যদি রূপক পরমদেশে থাকতে চাই, তা হলে আমাদের কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সেগুলোর মধ্যে একটা বিষয় হল, আমাদের মনে রাখতে হবে, যিহোবার সংগঠন কত অপূর্ব। আমরা যদি ভাই-বোনদের দুর্বলতাগুলোর উপর মনোযোগ দিতে শুরু করি, তা হলে হতে পারে আমরা তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখছি না। তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা যেন তাদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ দিই। (যোহন ১৭:২০, ২১) আসুন, এই বিষয়টা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি। চিন্তা করুন, আপনি একটা সুন্দর পার্কে বা বাগানে গিয়েছেন। সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর গাছ আছে এবং সেগুলো দেখে আপনার খুব ভালো লাগছে। কিন্তু, আপনি যদি সেই গাছগুলোর কাছে যান, তা হলে হতে পারে আপনি সেগুলোর উপর কিছু দাগ দেখতে পাবেন। একইভাবে, যিহোবার সংগঠনও একটা সুন্দর বাগানের মতো। আর প্রত্যেক ভাই কিংবা বোন এক একটা গাছের মতো। (যিশা. ৪৪:৪; ৬১:৩) কিন্তু, আমরা যদি অন্য ভাই-বোনদের ও সেইসঙ্গে নিজেদের দুর্বলতাগুলোর উপর মনোযোগ দিতে শুরু করি, তা হলে আমরা এটা দেখতে ব্যর্থ হব যে, যিহোবার সংগঠন কতটা অপূর্ব আর ভাই-বোনদের মধ্যে কতটা একতা রয়েছে। তাই আসুন, আমরা ভাই-বোনদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ দিই এবং মনে রাখি, এই রূপক পরমদেশ কতটা সুন্দর।

১৭. সংগঠনে একতা বজায় রাখার জন্য আমরা প্রত্যেকে কী করতে পারি?

১৭ সংগঠনে একতা বজায় রাখার জন্য আমরা প্রত্যেকে কী করতে পারি? আমরা নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি। (মথি ৫:৯; রোমীয় ১২:১৮) আমরা যখনই এমনটা করি, তখন রূপক পরমদেশ আমাদের কাছে আরও সুন্দর লাগে। আমরা মনে রাখতে পারি, যিহোবাই সমস্ত ভাই-বোনকে এই রূপক পরমদেশে নিয়ে এসেছেন যেন তারা বিশুদ্ধ উপাসনা করতে পারে। (যোহন ৬:৪৪) তারা সবাই যিহোবার দৃষ্টিতে খুবই মূল্যবান। তাই, যখন তিনি দেখেন আমরা নিজেদের মধ্যে একতা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য কতটা প্রচেষ্টা করছি, তখন তিনি খুব খুশি হন।—যিশা. ২৬:৩; হগয় ২:৭.

১৮. আমাদের কোন বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত আর কেন?

১৮ যিহোবা তাঁর লোকদের অনেক আশীর্বাদ করেছেন, আমরা যখন সেগুলোর উপর মনোযোগ দিই, তখন আমরা অনেক উপকার পাই। আমরা বাইবেল এবং আমাদের প্রকাশনাগুলো থেকে যা-কিছু পড়ি, সেগুলো নিয়েও আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত। এভাবে অধ্যয়ন এবং গভীরভাবে চিন্তা করার ফলে আমরা এমন গুণগুলো গড়ে তুলতে পারব, যেগুলো একজন খ্রিস্টানের মধ্যে থাকা উচিত। এর ফলে, আমরা ‘ভ্রাতৃপ্রেম’ ও সেইসঙ্গে সবার প্রতি “কোমল স্নেহ” দেখাতে পারব। (রোমীয় ১২:১০) আমরা যখন সেই আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে চিন্তা করব, যেগুলো আজ যিহোবা আমাদের দিচ্ছেন, তখন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হব এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। যিহোবা আমাদের এক প্রত্যাশাও দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে তিনি আমাদের অনন্তজীবন দেবেন। আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করব যে, সেই সময় আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পাব, তখন আমাদের প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হবে। এর ফলে, আমরা আরও আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতে পারব!

আমরা ধৈর্য ধরব এবং যিহোবার সেবা চালিয়ে যাব

১৯. (ক) যিশাইয় ৩০:১৮ পদ অনুযায়ী আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি? (খ) ধৈর্য ধরার জন্য এবং আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৯ যিহোবা খুব শীঘ্রই এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করার জন্য পদক্ষেপ নেবেন। (যিশা. ৩০:১৮) যিহোবা হলেন “ন্যায়বিচারের ঈশ্বর।” তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি সঠিক সময়ে তা করবেন, এক দিনও দেরি করবেন না। (যিশা. ২৫:৯) যতক্ষণ না সেই দিন আসছে, ততক্ষণ যিহোবা ধৈর্য ধরে রয়েছেন। তাই আসুন, আমরাও ধৈর্য ধরি, সেই দিন না আসা পর্যন্ত যিহোবার কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করি এবং ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করি, সেটিতে লেখা কথাগুলো মেনে চলি আর যিহোবা আমাদের যে-সমস্ত আশীর্বাদ করেছেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। এগুলো করলে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। আর সমস্যা এলেও আমরা ধৈর্য ধরতে পারব এবং আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে পারব।

গান ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন

a এই প্রবন্ধে আমরা এমন তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দেব, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা সমস্যাগুলো সহ্য করতে পারি আর আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা চালিয়ে যেতে পারি। আমরা যিশাইয় ৩০ অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করব আর জানব যে, কেন আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত, বাইবেল অধ্যয়ন করা উচিত এবং সেই আশীর্বাদগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত, যেগুলো যিহোবা বর্তমানে আমাদের দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে দেবেন।

b এই অভিব্যক্তির অর্থ: “রূপক পরমদেশ” হল পরমদেশের মতো এমন এক পরিবেশ, যেখানে যিহোবার লোকেরা সুরক্ষিত থাকে এবং একসঙ্গে তাঁর উপাসনা করে থাকে। এই রূপক পরমদেশে ‘খাদ্যের’ কোনো অভাব নেই। আজ আমাদের কাছে অনেক প্রকাশনা আছে, যেগুলোতে বাইবেলের সত্যগুলো লেখা আছে এবং মিথ্যা ধর্মের কোনো কথাই লেখা নেই। আমাদের কাছে এমন কাজ রয়েছে, যা করে আমরা আনন্দ পাই। আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করি। এই পরমদেশে যারা বাস করে, যিহোবার সঙ্গে তাদের এক ভালো সম্পর্ক আছে এবং তাদের মধ্যে শান্তি রয়েছে। প্রত্যেকে একে অন্যকে সাহায্য করে থাকে, যাতে সমস্যা এলেও তারা ধৈর্য ধরতে পারে এবং আনন্দে থাকতে পারে। কিন্তু, কারা এই রূপক পরমদেশে বাস করতে পারে? যারা সঠিক উপায়ে যিহোবার উপাসনা করে এবং তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা করে, তারাই এখানে থাকতে পারে।