সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৬

গান ৪৯ যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করা

ভাইয়েরা, আপনারা কি পরিচারক দাস হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন?

ভাইয়েরা, আপনারা কি পরিচারক দাস হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন?

“নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার মধ্যে আরও বেশি সুখ।”প্রেরিত ২০:৩৫.

আমরা কী শিখব?

আমরা শিখব যে, বাপ্তাইজিত ভাইয়েরা কীভাবে পরিচারক দাস হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এগিয়ে আসতে পারে?

১. প্রেরিত পৌল পরিচারক দাসদের বিষয়ে কেমন অনুভব করতেন?

 পরিচারক দাসেরা মণ্ডলীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রেরিত পৌল এই বিশ্বস্ত ভাইদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ ছিলেন। এই কারণে তিনি যখন ফিলিপীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি প্রাচীনদের পাশাপাশি পরিচারক দাসদের বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন।—ফিলি. ১:১.

২. ভাই লুইস তার সেবার বিষয়ে কেমন অনুভব করেন?

বর্তমানে, আলাদা আলাদা বয়সের ভাইয়েরা পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছে। এই কাজ করে তারা অনেক আনন্দ লাভ করে। উদাহরণ স্বরূপ, দেভান নামে একজন ভাইকে ১৮ বছর বয়সে পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ভাই লুইস প্রায় ৫০ বছর বয়সে পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ভাই লুইস এই সেবার বিষয়ে কেমন অনুভব করেন? তিনি বলেন, “মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সেবা করে আমি খুবই আনন্দিত। ভাই-বোনেরা আমাকে খুব ভালোবাসে এবং এই সেবা করে আমিও তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখাতে পারি। সারা পৃথিবীতে থাকা পরিচারক দাসেরা একইরকম অনুভব করে।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব?

আপনার যদি বাপ্তিস্ম হয়ে গিয়ে থাকে, কিন্তু আপনি একজন পরিচারক দাস নন, তা হলে আপনি কি পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার লক্ষ্য রাখতে পারেন? কোন বিষয়টা আপনাকে এটা করতে অনুপ্রাণিত করবে? একজন পরিচারক দাস হওয়ার জন্য আপনাকে বাইবেলে দেওয়া কোন যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে হবে? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব। তবে, প্রথমে আসুন আমরা দেখি, পরিচারক দাসেরা কোন কোন দায়িত্ব পালন করে থাকে।

পরিচারক দাসেরা কোন কোন দায়িত্ব পালন করে থাকে?

৪. একজন পরিচারক দাস কোন কোন দায়িত্ব পালন করে থাকে? (ছবিও দেখুন।)

পরিচারক দাসেরা হল বাপ্তাইজিত ভাই, যাদের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে নিযুক্ত করা হয়। তারা মণ্ডলীর বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে প্রাচীনদের সাহায্য করে। তারা নিশ্চিত করে, ভাই-বোনদের কাছে প্রচার করার জন্য যথেষ্ট এলাকা রয়েছে এবং লোকদের দেওয়ার জন্য তাদের কাছে প্রকাশনা রয়েছে। তারা কিংডম হল পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজেও সাহায্য করে। কিছু পরিচারক দাস পরিচারক (অ্যাটেনডেন্ট) হিসেবেও কাজ করে। আবার সভা চলাকালীন পরিচারক দাসেরা অডিও ভিডিওতে কাজ করে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পরিচারক দাসদের যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক থাকে। তারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এ ছাড়া, তারা মণ্ডলীর ভাই-বোনদেরও হৃদয় থেকে ভালোবাসে। (মথি ২২:৩৭-৩৯) তা হলে, কীভাবে একজন বাপ্তাইজিত ভাই পরিচারক দাস হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন?

পরিচারক দাসেরা অন্যদের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করছে (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৫. পরিচারক দাস হওয়ার জন্য একজন ভাইকে কী করতে হবে?

বাইবেলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, একজন ভাই যদি পরিচারক দাস হতে চান, তা হলে তাকে কোন যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে হবে। (১ তীম. ৩:৮-১০, ১২, ১৩) আপনিও যদি একজন পরিচারক দাস হতে চান, তা হলে এই যোগ্যতাগুলো নিয়ে ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন এবং এগুলো পূরণ করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করুন। কিন্তু, সবচেয়ে প্রথমে আপনাকে এই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে যে, কেন আপনি একজন পরিচারক দাস হতে চান।

কেন আপনি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে চান?

৬. ভাই-বোনদের সেবা করার কোন কারণ থাকা উচিত? (মথি ২০:২৮; ছবিটা দেখুন।)

যিশুর প্রতি একটু মনোযোগ দিন। তিনি আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ। তিনি তাঁর পিতা যিহোবা এবং লোকদের খুব ভালোবাসেন। এই কারণে তিনি অন্যদের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং সেই কাজগুলো করেছিলেন, যেগুলো লোকেরা তুচ্ছ বলে মনে করে। (পড়ুন মথি ২০:২৮; যোহন ১৩:৫, ১৪, ১৫) আপনিও যদি প্রেমের কারণে পরিচারক দাস হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেন, তা হলে যিহোবা আপনাকে আশীর্বাদ করবেন এবং একজন পরিচারক দাস হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আপনাকে সাহায্য করবেন।—১ করি. ১৬:১৪; ১ পিতর ৫:৫.

যিশু তাঁর উদাহরণের মাধ্যমে শিষ্যদের শিখিয়েছেন যে, তাদের কোনো উঁচু পদ পাওয়ার চেষ্টা না করে নম্র হয়ে অন্যদের সেবা করতে হবে (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৭. কেন একজন ভাইয়ের নিজেকে শ্রেষ্ঠ দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত নয়?

বর্তমান জগতে যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ দেখানোর চেষ্টা করে, লোকেরা তাদেরই প্রশংসা করে থাকে। কিন্তু, যিহোবার সংগঠনে এমনটা হয় না। একজন ভাই যিনি যিশুর মতো অন্যদের ভালোবাসেন, তিনি শ্রেষ্ঠ হওয়ার এবং অন্যদের উপর কর্তৃত্ব করারও চেষ্টা করবেন না। যদি এমন একজন ভাইকে মণ্ডলীতে নিযুক্ত করা হয়, যার মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ দেখানোর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা হলে তিনি এমন সাধারণ কাজগুলো করতে চাইবেন না, যে-কাজগুলো যিহোবার মেষদের জন্য করতে হয়। তিনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, এই কাজগুলো করলে তার সম্মান নষ্ট হবে। (যোহন ১০:১২) একজন ভাই যদি অহংকারের কারণে এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যান, তা হলে যিহোবা কখনো তার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন না।—১ করি. ১০:২৪, ৩৩; ১৩:৪, ৫.

৮. যিশু প্রেরিতদের কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

যিশুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও কখনো কখনো ভুল উদ্দেশ্য নিয়ে দায়িত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। একবার প্রেরিত যাকোব ও প্রেরিত যোহন কী করেছিলেন, তা লক্ষ করুন। তারা যিশুকে বলেছিলেন, তিনি যেন তাঁর রাজ্যে তাদের এক বিশেষ স্থান দেন। যিশুর এই বিষয়টা ভালো লাগেনি। তিনি তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যে-কেউ বিশিষ্ট হতে চায়, তাকে তোমাদের সেবক হতে হবে। আর তোমাদের মধ্যে যে-কেউ প্রথম হতে চায়, তাকে সকলের দাস হতে হবে।” (মার্ক ১০:৩৫-৩৭, ৪৩, ৪৪) একজন ভাই যদি সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে অর্থাৎ ভাই-বোনদের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যান, তা হলে তিনি মণ্ডলীর জন্য এক আশীর্বাদ হিসেবে প্রমাণিত হন।—১ থিষল. ২:৮.

আপনি কীভাবে আপনার মধ্যে অন্যদের সেবা করার ইচ্ছা বাড়াতে পারেন?

৯. আপনি কীভাবে নিজের মধ্যে অন্যদের সেবা করার ইচ্ছা বাড়াতে পারেন?

নিঃসন্দেহে, আপনি যিহোবাকে ভালোবাসেন এবং অন্যদের সেবা করতে চান। কিন্তু, আপনার মধ্যে সেই কাজগুলো করার ইচ্ছা না-ও হতে পারে, যেগুলো পরিচারক দাসেরা করে থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনি কী করতে পারেন? আপনি কীভাবে নিজের মধ্যে অন্যদের সেবা করার ইচ্ছা বাড়াতে পারেন? কল্পনা করুন, ভাই-বোনদের সেবা করে আমরা কতটা আনন্দ পাই। যিশু বলেছিলেন: “নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার মধ্যে আরও বেশি সুখ।” (প্রেরিত ২০:৩৫) যিশু শুধু তা মুখেই বলেননি বরং কাজেও দেখিয়েছিলেন। তিনি অন্যদের সেবা করেছিলেন এবং অনেক আনন্দ পেয়েছিলেন। আর আপনিও এই আনন্দ পেতে পারেন!

১০. কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, যিশু অন্যদের সেবা করে আনন্দ পেতেন? (মার্ক ৬:৩১-৩৪)

১০ একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যেখান থেকে বোঝা যায় যে, যিশু খুশিমনে অন্যদের সেবা করতেন। (পড়ুন, মার্ক ৬:৩১-৩৪.) একবার যিশু এবং তাঁর প্রেরিতেরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং বিশ্রামের জন্য একটা নির্জন স্থানে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, যিশু যাওয়ার সময় লোকেরা তাঁকে দেখে নেয় এবং তিনি পৌঁছানোর আগেই তারা সেখানে পৌঁছে যায়। লোকেরা আশা করেছিল যে, যিশু তাদের শিক্ষা দেবেন। যিশু চাইলে তাদের ফিরিয়ে দিতে পারতেন। এমনকী যিশু এবং তাঁর সঙ্গীরা খাবার খাওয়ারও সময় পাননি। তিনি চাইলেই তাদের একটা অথবা দুটো বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে সেখান থেকে বিদায় দিতে পারতেন। তিনি তাদের ভালোবাসতেন, তাই তাদের “অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন” এবং “বেলা প্রায় শেষ” পর্যন্ত শিক্ষা দিলেন। (মার্ক ৬:৩৫) তিনি শুধুমাত্র কর্তব্যের খাতিরে নয়, কিন্তু সত্যিই তাদের শেখাতে চেয়েছিলেন, কারণ তিনি তাদের দেখে “গভীর সমবেদনা বোধ” করেছিলেন। সত্যিই, যিশু অন্যদের সেবা করে অনেক আনন্দ পেতেন।

১১. যিশু আর কোন উপায়ে লোকদের সাহায্য করেছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

১১ যিশু সেই লোকদের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য উপায়েও সাহায্য করেছিলেন। তিনি অলৌকিক কাজ করে লোকদের খাবার জুগিয়েছিলেন এবং তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যেন তারা সেই খাবার বিতরণ করে। (মার্ক ৬:৪১) এভাবে তিনি শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন যে, কীভাবে তারা অন্যদের সেবা করতে পারে এবং খাবার বিতরণের কাজও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে, পরিচারক দাসেরা এইরকমই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। আপনি কল্পনা করতে পারেন, যখন শিষ্যেরা লোকদের খাবার বিতরণ করেছিল এবং এটা দেখেছিল যে, “লোকেরা সকলে খেয়ে পরিতৃপ্ত” হয়েছে, তখন তারা কতই-না আনন্দিত হয়েছিল! (মার্ক ৬:৪২) যিশু অন্যান্য সময়েও নিজের বিষয়ে চিন্তা না করে অন্যদের বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন এবং তাদের সাহায্য করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবন অন্যদের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন। (মথি ৪:২৩; ৮:১৬) অন্যদের শিক্ষা দিয়ে এবং তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দিয়ে তিনি অনেক আনন্দ পেতেন। আপনিও যদি অন্যদের কথা চিন্তা করেন এবং একজন পরিচারক দাস হওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন, তা হলে আপনিও অনেক আনন্দ পাবেন।

যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকলে এবং অন্যদের সেবা করার ইচ্ছা হলে আপনি মণ্ডলীতে যেকোনো ধরনের সেবা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) a


১২. কেন আমাদের এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, আমরা মণ্ডলীর জন্য বেশি কিছু করতে পারব না?

১২ আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার মধ্যে কোনো বিশেষ দক্ষতা নেই, তা হলে হতাশ হবেন না। আপনার মধ্যে নিশ্চয়ই এমন কিছু গুণ রয়েছে, যেগুলো মণ্ডলীর অনেক কাজে আসতে পারে। ১ করিন্থীয় ১২:১২-৩০ পদে দেওয়া পৌলের কথাগুলো পড়ুন এবং এটা নিয়ে প্রার্থনা করুন। পৌল স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, মণ্ডলীতে প্রত্যেকেরই মূল্য রয়েছে, এমনকী আপনারও এবং আপনি নিশ্চয়ই কোনো-না-কোনো উপায়ে ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু, আপনি যদি বর্তমানে পরিচারক দাসদের বিষয়ে বাইবেলে দেওয়া যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে না পারেন, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব, যিহোবার সেবা চালিয়ে যান এবং ভাই-বোনদেরও সাহায্য করতে থাকুন। নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাচীনেরা আপনাকে কার্যভার দেবেন।—রোমীয় ১২:৪-৮.

১৩. পরিচারক দাসদের জন্য দেওয়া যোগ্যতাগুলো পূরণ করা কেন কঠিন নয়?

১৩ কেন আপনাকে একজন পরিচারক দাস হওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে? এর আরেকটা কারণের উপর মনোযোগ দিন। পরিচারক দাসদের জন্য বাইবেলে যে-যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই প্রত্যেক খ্রিস্টানকে পূরণ করতে হয়। যেমন, আমাদের সবার যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া উচিত, আনন্দের সঙ্গে অন্যদের সাহায্য করা এবং যিহোবাকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করা উচিত। আসলে, এই যোগ্যতাগুলোর বেশিরভাগই আপনি ইতিমধ্যেই পূরণ করছেন। তাহলে, একজন ভাই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আর কী করতে পারেন?

পরিচারক দাস হওয়ার জন্য কী করব?

১৪. “গাম্ভীর্য” বজায় রাখার মানে কী? (১ তীমথিয় ৩:৮-১০, ১২)

১৪ এখন আসুন ১ তীমথিয় ৩:৮-১০, ১২ পদে দেওয়া যোগ্যতাগুলোর উপর মনোযোগ দিই। (পড়ুন।) একজন পরিচারক দাসকে অবশ্যই “গাম্ভীর্য” বজায় রাখতে হবে। এই শব্দকে “সম্মান পাওয়ার যোগ্য” এবং “মর্যাদা সহকারে আচরণ” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। এর মানে এই নয় যে, আপনি কখনোই মজা করতে পারবেন না। (উপ. ৩:১,) আসলে, এর অর্থ হল আপনাকে যে-দায়িত্বই দেওয়া হোক না কেন, আপনি সেটা হালকাভাবে না নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন এবং ভালোভাবে সম্পন্ন করবেন। আপনি যদি প্রতিটা কাজ ভালোভাবে এবং সময়মতো পূরণ করেন, তা হলে মণ্ডলীতে আপনার এক সুনাম থাকবে। ভাই-বোনেরা আপনার উপর নির্ভর করতে পারবে এবং আপনাকে সম্মান করবে।

১৫. একজন পরিচারক দাসকে “এক কথার মানুষ” হতে হবে, এর মানে কী এবং “অসৎ উপায়ে লাভ করার ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী” না হওয়ার মানে কী?

১৫ “এক কথার মানুষ।” এর মানে আপনাকে সৎ এবং নির্ভরযোগ্য হতে হবে। আপনাকে কথা অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং অন্যদের ঠকানো এড়িয়ে চলতে হবে। (হিতো. ৩:৩২)“অসৎ উপায়ে লাভ করার ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী” না হন, এর মানে হল, আপনাকে অবশ্যই ব্যাবসা এবং আর্থিক লেন-দেনের বিষয়ে সৎ হতে হবে। ভাই-বোনদের সুযোগ নিয়ে আপনার অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করা উচিত নয়।

১৬. (ক) “প্রচুর দ্রাক্ষারসে আসক্ত” না হওয়ার মানে কী? (খ) “শুদ্ধ বিবেক” থাকার মানে কী?

১৬ “প্রচুর দ্রাক্ষারসে আসক্ত” না হন। এর মানে হল, আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়া উচিত নয় এবং লোকদের মাঝে আপনার এইরকম দুর্নাম থাকা উচিত নয় যে, আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খান।“শুদ্ধ বিবেক” থাকার মানে হল, আপনি যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করেন। যদিও আপনি মাঝে মাঝে ভুল করতে পারেন, তবুও ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার এক উত্তম সম্পর্ক রয়েছে এবং এই কারণে আপনার মনে শান্তি রয়েছে।

১৭. “প্রথমে তাদের যোগ্যতা পরীক্ষা করা হোক,” এর মানে কী? (১ তীমথিয় ৩:১০; ছবিও দেখুন।)

১৭ “প্রথমে তাদের যোগ্যতা পরীক্ষা করা হোক।” এর মানে হল, আপনি প্রমাণ করেছেন যে, আপনাকে যে-দায়িত্বই দেওয়া হোক না কেন, সেগুলো আপনি ভালোভাবে পালন করেন এবং আপনার উপর নির্ভর করা যেতে পারে। তাই, প্রাচীনেরা আপনাকে যখন কোনো কাজ দেয়, তখন তাদের নির্দেশনা এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করুন। এই বিষয়টা ভালো করে বুঝে নিন যে, সেই কাজটা কীভাবে করতে হবে এবং কত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আপনি যদি আপনার সমস্ত দায়িত্ব মন দিয়ে পালন করেন, তা হলে মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আপনার উন্নতি দেখতে পাবে। প্রাচীনেরা, আপনারা মণ্ডলীতে বাপ্তাইজিত ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপর মনোযোগ দিন। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৩:১০.) আপনার মণ্ডলীতে কি এমন ভাইয়েরা রয়েছে, যাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এবং যারা ইতিমধ্যেই বাপ্তিস্ম নিয়ে নিয়েছে? তাদের কি ব্যক্তিগত অধ্যয়নের অভ্যাস রয়েছে? তারা কি সভার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয় এবং সভায় অংশগ্রহণ করে? তারা কি নিয়মিত প্রচারে যায়? যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে তাদের বয়স ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু কাজ দিন। এভাবে অল্পবয়সি ভাইদের “যোগ্যতা পরীক্ষা করা” যেতে পারে। এরপর যখন তাদের বয়স ১৭ অথবা ১৮ বছর হবে, তখন তারা পরিচারক দাস হওয়ার জন্য যোগ্য হতে পারবে।

বাপ্তাইজিত ভাইদের কোনো কাজ দেওয়ার মাধ্যমে প্রাচীনেরা “প্রথমে তাদের যোগ্যতা পরীক্ষা” করতে পারে (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৮. “অনিন্দনীয় হন,” এর মানে কী?

১৮ “অনিন্দনীয় হন।” এর মানে হল, কেউ যেন আপনার উপর গুরুতর পাপ করার অভিযোগ না আনে। একজন খ্রিস্টানের প্রতি মিথ্যা অভিযোগ আনা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মনে রাখুন, যিশুর প্রতিও মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তিনি বলেছিলেন যে, তাঁর শিষ্যদের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটবে। (যোহন ১৫:২০) কিন্তু, যদি যিশুর মতো আপনি শুদ্ধ আচার-আচরণ বজায় রাখেন, তা হলে মণ্ডলীতে আপনার সুনাম থাকবে।

১৯. একজন বিবাহিত ভাই যেন “এক স্ত্রীর স্বামী হন,” এর মানে কী?

১৯ “এক স্ত্রীর স্বামী হন।” আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়ে যিহোবার মান অনুসরণ করতে হবে, যে-মান তিনি একদম শুরুতে স্থির করেছিলেন অর্থাৎ একজন পুরুষের শুধুমাত্র একজন নারীকেই বিয়ে করা উচিত। (মথি ১৯:৩-৯) একজন খ্রিস্টানের কারো সঙ্গে যৌন অনৈতিকতায় রত হওয়া উচিত নয়। (ইব্রীয় ১৩:৪) কিন্তু, আপনাকে আরও কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। আপনাকে আপনার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং আপনার কখনোই কোনো মহিলাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয় আর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করাও উচিত নয়।—ইয়োব ৩১:১.

২০. একজন ভাই কীভাবে ‘উত্তমভাবে পরিবারের দেখাশোনা’ করতে পারেন?

২০ “উত্তমভাবে নিজেদের সন্তানদের ও পরিবারের দেখাশোনা করেন।” আপনি যদি পরিবারের একজন মস্তক হয়ে থাকেন, তা হলে আপনাকে আপনার পরিবারের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে পারিবারিক উপাসনা করুন। পরিবারের প্রত্যেকের সঙ্গে যতটা সম্ভব প্রচার করুন। আপনার সন্তানদের সাহায্য করুন, যাতে যিহোবার সঙ্গে তারা এক দৃঢ় ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলে। (ইফি. ৬:৪) আপনি যদি আপনার পরিবারের ভালোভাবে যত্ন নেন, তা হলে এটা দেখাবে যে, আপনি মণ্ডলীর ভাই-বোনদেরও ভালোভাবে যত্ন নিতে পারবেন।—তুলনা করুন, ১ তীমথিয় ৩:৫.

২১. আপনি যদি পরিচারক দাস হতে চান, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?

২১ ভাইয়েরা, আপনি যদি পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করতে চান, তা হলে এই প্রবন্ধ ভালোভাবে পড়ুন এবং এই বিষয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। বাইবেলে পরিচারক দাসদের জন্য যে-যোগ্যতাগুলো দেওয়া রয়েছে, সেগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করুন এবং সেগুলো পালন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করুন। এই বিষয়েও চিন্তা করুন যে, আপনি যিহোবা এবং ভাই-বোনদের কতটা ভালোবাসেন। নিজের মধ্যে অন্যদের সেবা করার ইচ্ছা আরও বৃদ্ধি করে চলুন। (১ পিতর ৪:৮, ১০) এরপর আপনি যখন একজন পরিচারক দাস হবেন এবং ভাই-বোনদের সেবা করবেন, তখন আপনি অনেক আনন্দ পাবেন। আমরা প্রার্থনা করি, লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনি যে-প্রচেষ্টা করছেন, যিহোবা যেন তাতে আশীর্বাদ করেন!—ফিলি. ২:১৩.

গান ১৭ আমি চাই

a ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা,: বাঁ দিকে যিশু নম্র হয়ে প্রেরিতদের পা ধুয়ে দিচ্ছেন; ডান দিকে একজন পরিচারক দাস একজন বয়স্ক ভাইকে সাহায্য করছেন।