অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৭
মৃদুশীল হওয়ার চেষ্টা করুন এবং যিহোবাকে খুশি করুন
“হে দেশস্থ সমস্ত নম্র [“মৃদুশীল,” NW] লোক, . . . তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, . . . নম্রতার [“মৃদুতার,” NW] অনুশীলন কর।”—সফ. ২:৩.
গান সংখ্যা ১ যিহোবার গুণাবলি
সারাংশ *
১-২. (ক) মোশি সম্বন্ধে কী ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তিনি কী করেছিলেন? (খ) আমাদের কাছে মৃদুতা গড়ে তোলার কোন কারণ রয়েছে?
বাইবেল মোশি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে, তিনি “ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা . . . অতিশয় মৃদুশীল ছিলেন।” (গণনা. ১২:৩) এর মানে কি এই যে, তিনি দুর্বল ছিলেন, সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেতেন এবং বিরোধিতার মুখোমুখি হলে দৃঢ় থাকতে ভয় পেতেন? একজন মৃদুশীল ব্যক্তি সম্বন্ধে কেউ কেউ হয়তো এভাবেই ব্যাখ্যা করে থাকে। কিন্তু, এটা সত্য নয়। ঈশ্বরের দাস মোশি শক্তিশালী ছিলেন, সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেতেন না এবং বিরোধিতার মুখোমুখি হলে দৃঢ় থাকতে ভয় পেতেন না। যিহোবার সাহায্যে তিনি মিশরের ক্ষমতাশালী শাসকের মুখোমুখি হয়েছিলেন, সম্ভবত ৩০ লক্ষ ব্যক্তিকে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ইস্রায়েল জাতিকে তাদের শত্রুদের পরাজিত করতে সাহায্য করেছিলেন।
২ আমরা মোশির মতো সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হই না, যেগুলো তিনি কাটিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু, প্রতিদিন আমাদের এমন ব্যক্তি অথবা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যা আমাদের মৃদুশীল হওয়াকে কঠিন করে তোলে। তবে, আমাদের কাছে এই গুণটা গড়ে তোলার জোরালো কারণ রয়েছে। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন, “মৃদুশীলেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে।” (গীত. ৩৭:১১) আপনি কি একজন মৃদুশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজের পরিচয় দেবেন? অন্যেরাও কি আপনার সম্বন্ধে একই বিষয় বলবে? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার আগে, আমাদের জানতে হবে যে, মৃদুশীল হওয়ার অর্থ কী।
মৃদুতা কী?
৩-৪. (ক) মৃদুতা কীসের মতো? (খ) আমরা যদি মৃদুশীল হতে চাই, তা হলে আমাদের কোন চারটে গুণ গড়ে তুলতে হবে এবং কেন?
৩ মৃদুতা * একটা সুন্দর ছবির মতো। কীভাবে? ঠিক যেমন একজন শিল্পী একাধিক আকর্ষণীয় রং ব্যবহার করে একটা ছবি তৈরি করেন, একইভাবে আমাদের অবশ্যই একাধিক আকর্ষণীয় গুণ একত্রে গড়ে তোলার মাধ্যমে মৃদুশীল হতে হবে। সেই গুণগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল নম্রতা, বশ্যতা, মৃদুতা ও সাহস। আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তা হলে কেন আমাদের এই নির্দিষ্ট গুণগুলো গড়ে তুলতে হবে?
৪ একমাত্র নম্র ব্যক্তিরাই ঈশ্বরের ইচ্ছার বশীভূত হবে। ঈশ্বরের ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত হল আমরা যেন মৃদুশীল হই। (মথি ৫:৫; গালা. ৫:২৩) আমরা যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করি, তখন আমরা শয়তানকে খুবই রাগিয়ে তুলি। তাই, নম্র ও মৃদুশীল হওয়া সত্ত্বেও শয়তানের জগতের অনেকে আমাদের দ্বেষ বা ঘৃণা করে। (যোহন ১৫:১৮, ১৯) এর ফলে, শয়তানের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাহসের প্রয়োজন হয়।
৫-৬. (ক) কেন শয়তান মৃদুশীল ব্যক্তিদের ঘৃণা করে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব?
৫ যে-ব্যক্তি মৃদুশীল নন, তিনি অহংকারী স্বভাবের হন, রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না এবং যিহোবার বাধ্য হন না। এটা শয়তানের ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরে। কোনো সন্দেহ নেই যে, সে মৃদুশীল ব্যক্তিদের ঘৃণা করে! মৃদুশীল ব্যক্তিরা শয়তানের ব্যক্তিত্বের খারাপ দিকগুলো প্রকাশ করে দেয়। আর শয়তানের জন্য সবচেয়ে খারাপ বিষয়টা হল, তারা শয়তানকে মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত করে। কেন? কারণ সে যা-কিছুই বলুক বা করুক না কেন, সে মৃদুশীল ব্যক্তিদের যিহোবার সেবা করা থেকে বিরত করতে পারে না!—ইয়োব ২:৩-৫.
৬ কখন মৃদুশীল হওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে? আর কেন আমাদের ক্রমাগত মৃদুশীল হওয়ার চেষ্টা করা উচিত? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আমরা মোশি, বাবিলের বন্দিত্বে থাকা তিন জন ইব্রীয় এবং যিশুর দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ বিবেচনা করব।
কখন মৃদুশীল হওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে?
৭-৮. মোশির সঙ্গে যখন অসম্মানজনক উপায়ে আচরণ করা হয়েছিল, তখন তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
৭ যখন কর্তৃত্ব দেওয়া হয়: কর্তৃত্ব রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের জন্য মৃদুতা বজায় রাখা প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ হতে পারে। আর এটা বিশেষভাবে সেইসময়ে হতে পারে, যখন তাদের যত্নাধীনে থাকা কোনো ব্যক্তি তাদের সঙ্গে অসম্মানজনক উপায়ে আচরণ করে অথবা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আপনার সঙ্গে কি কখনো এমনটা হয়েছে? কী হবে, যদি পরিবারের কোনো সদস্য এভাবে আচরণ করে থাকে? আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? মোশি কীভাবে এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন।
৮ যিহোবা মোশিকে ইস্রায়েলের নেতা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তাকে সেই জাতির উদ্দেশে বিভিন্ন আইন লেখার সম্মান প্রদান করেছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা মোশিকে সাহায্য জুগিয়ে গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, মোশির নিজের দিদি ও দাদা অর্থাৎ মরিয়ম ও হারোণ তার গণনা. ১২:১-১৩) কেন মোশি এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
সমালোচনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, একজন কূশীয়া মহিলাকে তার বিয়ে করা উচিত হয়নি। মোশির জায়গায় অন্যান্য পুরুষ থাকলে, তারা হয়তো রেগে যেত এবং প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করত কিন্তু মোশি তা করেননি। তিনি সহজে বিরক্ত হয়ে যাননি। তিনি এমনকী যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন যেন যিহোবা মরিয়মকে শাস্তি থেকে মুক্তি দেন। (৯-১০. (ক) যিহোবা মোশিকে কী বুঝতে সাহায্য করেছিলেন? (খ) পরিবারের মস্তক ও প্রাচীনরা মোশির কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?
৯ মোশি যিহোবার দ্বারা প্রশিক্ষিত হতে চেয়েছিলেন। প্রায় ৪০ বছর আগে তিনি যখন মিশরের রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন, তখন তিনি মৃদুশীল ছিলেন না। সত্যি বলতে কী, তিনি খুবই দ্রুত রেগে যেতেন। একবার, তিনি একজন পুরুষকে হত্যা করেছিলেন কারণ তার বিচারে সেই ব্যক্তি অন্যায় কাজ করেছিলেন। মোশি এটা ধরে নিয়েছিলেন যে, যিহোবা তার এই কাজের সঙ্গে একমত হবেন। যিহোবা ৪০ বছর ধরে মোশিকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার সাহসের চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন রয়েছে; তাকে মৃদুশীল হতে হবে। আর মৃদুশীল হওয়ার জন্য তাকে নম্রতা, বশ্যতা ও দয়ার মতো গুণগুলোও দেখাতে হবে। তিনি খুব ভালোভাবে এটা শিখেছিলেন এবং একজন অসাধারণ অধ্যক্ষ হয়ে উঠেছিলেন।—যাত্রা. ২:১১, ১২; প্রেরিত ৭:২১-৩০, ৩৬.
১০ বর্তমানে, পরিবারের মস্তক ও প্রাচীনদের মোশিকে অনুকরণ করা উচিত। অসম্মানজনক উপায়ে আচরণ করা হলে সহজে বিরক্ত হয়ে যাবেন না। নম্রতার সঙ্গে নিজের যেকোনো ভুল স্বীকার করুন। (উপ. ৭:৯, ২০) সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য বশ্যতা দেখিয়ে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করুন। আর সবসময় কোমলভাবে উত্তর দিন। (হিতো. ১৫:১) যে-সমস্ত পরিবারের মস্তক ও অধ্যক্ষরা এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, তারা যিহোবাকে খুশি করেন, শান্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেন এবং মৃদুশীল হওয়ার উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন।
১১-১৩. তিন জন ইব্রীয় আমাদের জন্য কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
১১ যখন তাড়িত হই: ইতিহাস জুড়ে মানব শাসকরা যিহোবার লোকেদের উপর তাড়না নিয়ে এসেছে। তারা হয়তো আমাদের বিভিন্ন “অপরাধের” অভিযোগে অভিযুক্ত করে কিন্তু তাদের রেগে যাওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হল আমরা তাদের পরিবর্তে ঈশ্বরের বাধ্য হই। (প্রেরিত ৫:২৯) আমরা হয়তো উপহাস, কারাবদ্ধ আর এমনকী মারধরের শিকার হই। কিন্তু, আমরা মন্দের পরিশোধে মন্দ করি না, এর পরিবর্তে আমরা যিহোবার সাহায্যে পরীক্ষার সময়ে মৃদুতা বজায় রাখি।
১২ বন্দিত্বে থাকা সেই তিন জন ইব্রীয় ব্যক্তি অর্থাৎ হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয় আমাদের জন্য যে-উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা বিবেচনা করুন। * বাবিলের রাজা তাদের একটা বড়ো সোনার প্রতিমার সামনে নত হওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তারা মৃদুতার সঙ্গে রাজার কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কেন তারা সেই প্রতিমার উপাসনা করবেন না। তারা রাজার কাছ থেকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার হুমকি সত্ত্বেও ঈশ্বরের প্রতি বশ্যতা দেখিয়ে গিয়েছিলেন। যিহোবা দ্রুত তাদের রক্ষা করা বেছে নিয়েছিলেন যদিও তারা নিশ্চিত ছিলেন না যে, ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করবেন। এর পরিবর্তে, যিহোবা যা-কিছুই ঘটার অনুমতি দিন না কেন, তারা সেটা ইচ্ছুক মনে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। (দানি. ৩:১, ৮-২৮) তারা দেখিয়েছিলেন যে, মৃদুশীল ব্যক্তিরা সত্যিই সাহসী—কোনো রাজা, হুমকী ও শাস্তির ভয়ই আমাদের একমাত্র যিহোবার উপাসনা করার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে ভেঙে দিতে পারে না, যিনি “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী [“একাগ্র ভক্তি পাওয়ার,” NW] ঈশ্বর।”—যাত্রা. ২০:৪, ৫.
১৩ ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য যখন পরীক্ষিত হয়, তখন কীভাবে আমরা এই তিন জন ইব্রীয়কে অনুকরণ করতে পারি? আমরা নম্রতার সঙ্গে আস্থা রাখি যে, যিহোবা আমাদের যত্ন নেবেন। (গীত. ১১৮:৬, ৭) যারা আমাদের উপর অন্যায় কাজ করার দোষারোপ করে, তাদের আমরা মৃদুতা ও ভয় বা সম্মানের সঙ্গে উত্তর দিই। (১ পিতর ৩:১৫) আর আমরা সেই সমস্ত কিছু করা প্রত্যাখ্যান করি, যেগুলো আমাদের প্রেমময় পিতার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
১৪-১৫. (ক) আমরা যখন চাপের মধ্যে থাকি, তখন কী ঘটতে পারে? (খ) যিশাইয় ৫৩:৭, ১০ পদ অনুযায়ী কেন আমরা বলতে পারি, চাপের মধ্যেও মৃদুতা দেখানোর ক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় যিশুই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
১৪ যখন চাপের মুখোমুখি হই: আমরা সবাই বিভিন্ন কারণে চাপ অনুভব করি। আমরা হয়তো স্কুলে পরীক্ষা দেওয়ার আগে অথবা কর্মস্থলে নির্দিষ্ট কোনো কাজ করার আগে এমনটা অনুভব করি। অথবা আমরা হয়তো কোনো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতির বিষয়ে কেবল চিন্তা করেই চাপগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারি। আমরা যখন চাপের মধ্যে দিয়ে যাই, তখন মৃদুতা দেখানো কঠিন হয়। যে-ঘটনাগুলো সাধারণত আমাদের সমস্যায় ফেলে না, সেগুলো হয়তো আমাদের বিরক্ত করা শুরু করতে পারে। আমরা হয়তো নির্দয় কথা বলে ফেলতে পারি এবং অন্যদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে ফেলতে পারি। আপনি যদি কখনো চাপ অনুভব করে থাকেন, তা হলে যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন।
১৫ পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষের মাসগুলোতে যিশু প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন। তিনি জানতেন যে, তাঁকে হত্যা করা হবে আর তাঁকে চরম কষ্ট ভোগ করতে হবে। (যোহন ৩:১৪, ১৫; গালা. ৩:১৩) তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি সঙ্কুচিত বা প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে আছেন। (লূক ১২:৫০) আর মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি বলেছিলেন: “আমার প্রাণ উদ্বিগ্ন হইয়াছে।” নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য প্রার্থনায় তিনি যে-কথাগুলো ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলো প্রমাণ করে যে, তিনি নম্র ছিলেন এবং ঈশ্বরের প্রতি বশীভূত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “পিতঃ এই সময় হইতে আমাকে রক্ষা কর? কিন্তু ইহারই নিমিত্ত আমি এই সময় পর্য্যন্ত আসিয়াছি। পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।” (যোহন ১২:২৭, ২৮) যখন সময় এসেছিল, তখন যিশু সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের শত্রুদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন, যারা তাঁকে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও লজ্জাজনকভাবে হত্যা করেছিল। চাপ ও দুঃখকষ্ট থাকা সত্ত্বেও যিশু মৃদুতার সঙ্গে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন। নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি, চাপের মধ্যেও মৃদুতা দেখানোর ক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় যিশুই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।—পড়ুন, যিশাইয় ৫৩:৭, ১০.
১৬-১৭. (ক) কীভাবে যিশু মৃদুতা দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁর বন্ধুদের দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি?
১৬ যিশু তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ রাতে মৃদুতা দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছিলেন। কল্পনা করুন, সেই রাতে যিশু কতটা চাপ অনুভব করেছিলেন। তিনি কি মৃত্যু পর্যন্ত নিখুঁতভাবে তাঁর বিশ্বস্ততা বজায় রাখবেন? কোটি কোটি লোকের জীবন এর উপর নির্ভর করছিল। (রোমীয় ৫:১৮, ১৯) এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর সঙ্গে তাঁর পিতার সম্মান জড়িত ছিল। (ইয়োব ২:৪) তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে অর্থাৎ প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ ভোজের সময়ে প্রেরিতরা এই বিষয়ে তর্কবিতর্ক করেছিলেন যে, “তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য।” যিশু আগেও অনেক বার এই বিষয়ে তাঁর বন্ধুদের সংশোধন করেছিলেন, এমনকী সেই সন্ধ্যায় কিছু সময় আগেও তাদের সংশোধন করেছিলেন! লক্ষণীয় বিষয়টা হল যিশু বিরক্ত হয়ে যাননি। এর পরিবর্তে, তিনি মৃদুতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। যিশু সদয়ভাবে অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে আবারও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তাদের কেমন মনোভাব থাকা উচিত। আর তারপর, তিনি তাঁর বন্ধুদের প্রশংসা করেছিলেন, যারা অনুগতভাবে তাঁকে সমর্থন করে গিয়েছিলেন।—লূক ২২:২৪-২৮; যোহন ১৩:১-৫, ১২-১৫.
১৭ আপনি যদি এইরকম পরিস্থিতিতে থাকতেন, তা হলে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন? আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি এবং শান্তভাব বজায় রাখতে পারি আর তা এমনকী চাপের মধ্যেও। বশ্যতা দেখিয়ে প্রভু যিহোবার এই আজ্ঞার বাধ্য হোন, “পরস্পর সহনশীল হও।” (কল. ৩:১৩) আমরা যদি এটা স্মরণে রাখি যে, আমরা সবাই কথায় ও কাজে অন্যদের বিরক্ত করি, তা হলে আমরা এই আজ্ঞার বাধ্য হব। (হিতো. ১২:১৮; যাকোব ৩:২, ৫) আর আপনি অন্যদের মধ্যে যে-ভালো গুণগুলো লক্ষ করেন, সেগুলোর জন্য সবসময় তাদের প্রশংসা করুন।—ইফি. ৪:২৯.
কেন আমরা ক্রমাগত মৃদুশীল হওয়ার চেষ্টা করব?
১৮. কীভাবে যিহোবা মৃদুশীল ব্যক্তিদের ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন কিন্তু তাদের অবশ্য কী করতে হবে?
১৮ আমরা আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের যখন জীবনে বিভিন্ন কঠিন বাছাই করতে হয়, তখন যিহোবা আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন। কিন্তু, তিনি একমাত্র তখনই সাহায্য করবেন, যদি আমরা মৃদুশীল হই। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি “নম্রদের আকাঙ্ক্ষা [“মৃদুশীল ব্যক্তির অনুরোধ,” NW]” শুনবেন। (গীত. ১০:১৭) আর তিনি আমাদের অনুরোধ শোনার চেয়ে আরও বেশি কিছু করবেন। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “তিনি নম্রদিগকে [“মৃদুশীলদের,” NW] ন্যায়বিচারের পথে চালান, নম্রদিগকে [“মৃদুশীলদের,” NW] আপন পথ দেখাইয়া দেন।” (গীত. ২৫:৯) যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেল, প্রকাশনাদি * এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ দ্বারা জোগানো বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এই নির্দেশনা জোগান। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশটুকু করতে হবে। প্রথমে, আমাদের নম্রতার সঙ্গে এটা স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। এরপর, আমাদের যিহোবার দ্বারা জোগানো বিষয়গুলো অধ্যয়ন করতে হবে আর তারপর আমরা যা-কিছু শিখি, তা ইচ্ছুক মনে কাজে লাগাতে হবে।
১৯-২১. মোশি কাদেশে কোন ভুল করেছিলেন এবং আমরা এখান থেকে কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১৯ আমরা ভুল করা এড়িয়ে চলব। মোশির বিষয়ে আবারও চিন্তা করুন। কয়েক দশক ধরে তিনি মৃদুতা বজায় রেখেছিলেন এবং যিহোবাকে খুশি করেছিলেন। এরপর, প্রান্তরে ৪০ বছরের কঠিন যাত্রার শেষের দিকে মোশি মৃদুতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার দিদি, খুব সম্ভবত যিনি মিশরে তার জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করেছিলেন, অল্পসময় আগে মারা গিয়েছেন এবং কাদেশে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। আর ইস্রায়েলীয়রা আবারও অভিযোগ করেছিল যে, তাদের ভালোভাবে যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। এই বার তারা জলের অভাবের কারণে “মোশির সহিত বিবাদ করিয়া” ছিল। মোশির দ্বারা করা যিহোবার সমস্ত অলৌকিক কাজ দেখা ও সেইসঙ্গে মোশি এত দিন ধরে নিঃস্বার্থভাবে নেতৃত্ব দেওয়া সত্ত্বেও লোকেরা অভিযোগ করেছিল। তারা কেবল গণনা. ২০:১-৫, ৯-১১.
জলের অভাবের কারণেই অভিযোগ করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে তারা মোশির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিল। তাদের মনে হয়েছিল যেন মোশির ভুলের কারণেই তারা তৃষ্ণার্ত রয়েছে।—২০ মোশি প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন এবং মৃদুতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। যিহোবার আদেশ অনুযায়ী বিশ্বাস সহকারে পাথরের উদ্দেশে কথা বলার পরিবর্তে, মোশি লোকেদের উদ্দেশে তিক্ততার সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং নিজে প্রশংসা পেতে চেয়েছিলেন। এরপর, তিনি পাথরের উপর দু-বার আঘাত করেছিলেন এবং অনেক জল বের হয়ে এসেছিল। গর্ব ও রাগ তাকে এক গুরুতর ভুল করতে পরিচালিত করেছিল। (গীত. ১০৬:৩২, ৩৩) কিছু সময়ের জন্য মৃদুতা দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মোশিকে প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।—গণনা. ২০:১২.
২১ এই ঘটনা থেকে আমরা কিছু মূল্যবান শিক্ষা লাভ করি। প্রথমত, মৃদুতা বজায় রাখার জন্য আমাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি এক মুহূর্তের জন্যেও এটাকে উপেক্ষা করি, তা হলে আমাদের মধ্যে গর্ব জেগে উঠতে পারে এবং আমরা কথায় ও কাজে মূর্খতার পরিচয় দিতে পারি। দ্বিতীয়ত, চাপ আমাদের দুর্বল করে দিতে পারে, তাই আমাদের মৃদুশীল হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে আর তা এমনকী চাপের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও।
২২-২৩. (ক) কেন আমাদের মৃদুশীল হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করা উচিত? (খ) সফনিয় ২:৩ পদের বিবরণ কী ইঙ্গিত দেয়?
২২ আমরা সুরক্ষিত থাকব। শীঘ্রই, যিহোবা দেশ বা পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্ট লোককে দূর করে দেবেন এবং কেবল মৃদুশীল ব্যক্তিরা সেখানে থাকবে। সেইসময় পৃথিবী প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ হবে। (গীত. ৩৭:১০, ১১) আপনি কি সেই মৃদুশীল ব্যক্তিদের মধ্যে থাকবেন? আপনি থাকতে পারেন, যদি আপনি ভাববাদী সফনিয়ের দ্বারা লিখিত যিহোবার এই আন্তরিক আমন্ত্রণে সাড়া দেন: “হে দেশস্থ সমস্ত মৃদুশীল লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, মৃদুতার অনুশীলন কর; হয় ত সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে।”—সফ. ২:৩.
২৩ কেন সফনিয় ২:৩ পদে এই কথাগুলো বলা হয়েছে: “হয় ত . . . তোমরা গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে”? এই বিবৃতির অর্থ এই নয় যে, যারা যিহোবাকে খুশি করতে চায় এবং যাদের তিনি ভালোবাসেন, তাদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাঁর নেই। এর পরিবর্তে এটা ইঙ্গিত দেয় যে, রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। আমরা যদি মৃদুশীল হওয়ার এবং যিহোবাকে খুশি করার জন্য এখনই প্রচেষ্টা করি, তা হলে “সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে” রক্ষা পাওয়ার এবং চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ আমাদের থাকবে।
গান সংখ্যা ২১ দয়াশীল লোকেরা সুখী!
^ অনু. 5 আমরা কেউই মৃদুশীল হয়ে জন্মগ্রহণ করি না। আমাদের অবশ্যই মৃদুতা গড়ে তুলতে হবে। আমরা হয়তো শান্তিপ্রিয় লোকেদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মৃদুতা দেখাতে পারি কিন্তু গর্বিত লোকেদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মৃদুতা দেখানোকে হয়তো কঠিন বলে মনে করতে পারি। এই প্রবন্ধে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে, যাতে আমরা একটা চমৎকার গুণ মৃদুতা গড়ে তুলতে পারি।
^ অনু. 3 এর অর্থ কী?: মৃদুতা। মৃদুশীল ব্যক্তিরা সদয়ভাবে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করে আর এমনকী অন্যেরা তাদের বিরক্ত করার চেষ্টা করলেও তারা শান্তভাব বজায় রাখে। নম্রতা। নম্র ব্যক্তিরা গর্বিত অথবা অহংকারী নয়; তারা নিজেদের চেয়ে অন্যদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখে। যিহোবার বিষয়ে যখন উল্লেখ করা হয়, তখন নম্রতার অর্থ হল তিনি তাঁর চেয়ে নিম্ন স্তরে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রেমপূর্ণ ও করুণাপূর্ণ উপায়ে আচরণ করেন।
^ অনু. 12 বাবিলীয়রা এই তিন জন ইব্রীয়ের নাম শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো দিয়েছিল।—দানি. ১:৭.
^ অনু. 18 উদাহরণ স্বরূপ, ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আসে এমন সিদ্ধান্ত নিন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।
^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: যিশুর শিষ্যরা যখন তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ সেই বিষয়ে তর্কবিতর্ক করছিলেন, তখন তিনি শান্তভাব বজায় রেখেছিলেন এবং পরে শান্তভাবে তাদের সংশোধন করেছিলেন।