সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৬

“একজন নারীর মস্তক পুরুষ”

“একজন নারীর মস্তক পুরুষ”

“একজন নারীর মস্তক পুরুষ।”—১ করি. ১১:৩.

গান সংখ্যা ৫ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

সারাংশ *

১. বিবাহসাথি বাছাই করার বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করার সময়ে একজন অবিবাহিত বোনের নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

খ্রিস্টান হিসেবে আমরা সবাই যিশু খ্রিস্টের নিখুঁত মস্তকপদের অধীনে রয়েছি। কিন্তু, একজন নারী যখন বিয়ে করেন, তখন তিনি অসিদ্ধ মস্তকপদের অধীনে আসেন। তার জন্য সেই মস্তকপদ মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। তাই, বিবাহসাথি বাছাই করার বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করার সময়ে একজন বোনের নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘সেই ভাই কি পরিবারের এক উত্তম মস্তক হয়ে উঠতে পারবেন? তিনি কি যিহোবার সেবাকে প্রথম স্থানে রাখেন? যদি না রাখেন, তা হলে কেন আমি মনে করি যে, বিয়ের পর তিনি পরিবারকে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারবেন?’ এ ছাড়া, তার নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমার কোন গুণাবলি রয়েছে, যেগুলো আমার বিয়ের জন্য উপকারজনক? আমি কি ধৈর্যশীল? আমি কি উদার? যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন?’ (উপ. ৪:৯, ১২) তাই, বিয়ে করার আগে একজন নারী যদি উত্তম সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তার বিয়ে সফল ও সুখী হবে।

২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

আমাদের লক্ষ লক্ষ খ্রিস্টান বোন তাদের স্বামীর বশীভূত হওয়ার বিষয়ে চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছে। তারা আমাদের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য! এই অনুগত বোনদের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতে পেরে আমরা আনন্দিত! এই প্রবন্ধে তিনটে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হবে: (১) একজন স্ত্রীকে যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলোর কয়েকটা কী? (২) একজন স্ত্রী কেন তার স্বামীর বশীভূত হওয়া বেছে নেন? (৩) খ্রিস্টান স্বামী ও স্ত্রীরা বশীভূত হওয়ার বিষয়ে যিশু, অবীগল এবং যোষেফের স্ত্রী মরিয়মের উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারে?

খ্রিস্টান স্ত্রীরা কোন কোন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়?

৩. কেন সমস্ত বিবাহিত দম্পতি সমস্যার মুখোমুখি হয়?

বিয়ে হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক নিখুঁত উপহার, কিন্তু লোকেরা হল অসিদ্ধ। (১ যোহন ১:৮) এই কারণে ঈশ্বরের বাক্য বিবাহিত দম্পতিদের সতর্ক করে দেয় যে, তাদের বিভিন্ন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, যেগুলোকে বাইবেলে “দৈহিক ক্লেশ” হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। (১ করি. ৭:২৮) একজন স্ত্রী যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন, আসুন আমরা সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে বিবেচনা করি।

৪. কেন একজন স্ত্রী হয়তো তার স্বামীর বশীভূত হওয়ার বিষয়টাকে নীচু চোখে দেখতে পারেন?

একজন স্ত্রী হয়তো তার পটভূমির কারণে তার স্বামীর বশীভূত হওয়ার বিষয়টাকে নীচু চোখে দেখতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মারিসোল নামে একজন বোন বলেন, ‘আমি যেখানে বড়ো হয়ে উঠেছি, সেখানে সবসময় এই কথা বলা হত যে, নারীরা পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। আমি জানি, যিহোবা পরিবারের মস্তক হিসেবে স্বামীদের বাছাই করেছেন এবং তিনি চান যেন স্ত্রীরা স্বামীর বশীভূত হয়। আর তিনি স্ত্রীদের সম্মাননীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিয়েছেন। কিন্তু, মস্তকপদের ভূমিকার প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা কঠিন।’

৫. নারীদের সম্বন্ধে কোনো কোনো পুরুষের কোন ভুল ধারণা রয়েছে?

অন্যদিকে, একজন নারীর হয়তো এমন একজন পুরুষের সঙ্গে বিয়ে হতে পারে, যিনি নারীদের পুরুষের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত ইভন নামে একজন বোন বলেন: ‘আমাদের এলাকায় আগে পুরুষেরা এবং এর পরে নারীরা খাবার খায়। ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় যে, ঘরের সমস্ত কাজ মেয়েরা করবে আর মা ও বোনেরা বাড়ির ছোটো ছেলেদের যত্ন নেবে। অন্যদিকে, ছেলেদের বলা হয়, তাদের কোনো কাজ করার প্রয়োজন নেই, তারা হল “বাড়ির রাজা।”’ এশিয়ায় বসবাসরত ইংলিং নামে একজন বোন বলেন: “তাদের এলাকায় একটা প্রবাদ রয়েছে, যেটার অর্থ হল নারীদের বুদ্ধিমতী হওয়ার প্রয়োজন নেই বা তাদের কোনো দক্ষতা থাকার প্রয়োজন নেই। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শুধু ঘরের কাজ করা। তবে, তারা স্বামীর কাছে কোনো মতামত প্রকাশ করতে পারবে না।” যে-স্বামী ভালোবাসা দেখান না এবং বাইবেলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন না, তার স্ত্রীর পক্ষে জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। এইরকম একজন স্বামী আসলে যিশুকে অনুকরণ করেন না এবং যিহোবাকে খুশি করেন না।—ইফি. ৫:২৮, ২৯; ১ পিতর ৩:৭.

৬. যিহোবার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য স্ত্রীদের কী করতে হবে?

আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, যিহোবা চান যেন একজন খ্রিস্টান স্বামী তার পরিবারের বস্তুগত প্রয়োজনগুলো মেটান আর সেইসঙ্গে পরিবারকে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার এবং নিরাপদ বোধ করার জন্য সাহায্য করেন। (১ তীম. ৫:৮) কিন্তু, বিবাহিত বোনেরা অনেক ব্যস্ত থাকে। তবে, এই ব্যস্ততার মধ্যেও ঈশ্বরের বাক্য পড়ার, সেটি নিয়ে ধ্যান করার এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার জন্য প্রতিদিন তাদের সময় বের করে নিতে হবে। তা করা কঠিন হতে পারে। ব্যস্ততার কারণে স্ত্রীরা মনে করতে পারে, এই বিষয়গুলো করার জন্য তাদের হাতে যথেষ্ট সময় ও শক্তি থাকে না। কিন্তু, তাদের মনে রাখতে হবে, এই বিষয়গুলোর জন্য সময় বের করে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ যিহোবা চান যেন আমরা প্রত্যেকে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলি এবং সেই সম্পর্ক বজায় রাখি।—প্রেরিত ১৭:২৭.

৭. কী করলে একজন স্ত্রীর পক্ষে তার দায়িত্ব পালন করা আরও সহজ হয়ে উঠবে?

যেহেতু স্বামী অসিদ্ধ, তাই একজন স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামীর বশীভূত হওয়া সহজ না-ও হতে পারে। কিন্তু, বশীভূত হওয়ার বিষয়ে শাস্ত্রে যে-কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তিনি যদি সেগুলো বুঝতে পারেন এবং সেগুলো মেনে নেন, তা হলে যিহোবা তাকে যে-দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করা তার জন্য আরও সহজ হয়ে উঠবে।

একজন স্ত্রী কেন তার স্বামীর বশীভূত হওয়া বেছে নেন?

৮. ইফিষীয় ৫:২২-২৪ পদ অনুযায়ী কেন একজন খ্রিস্টান স্ত্রী তার স্বামীর বশীভূত হওয়া বেছে নেন?

একজন খ্রিস্টান স্ত্রী সবসময়ই তার স্বামীর বশীভূত হওয়া বেছে নেন। কেন? কারণ যিহোবা তার কাছ থেকে তা-ই চান। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:২২-২৪.) তিনি তার স্বর্গস্থ পিতার উপর নির্ভর করেন। তিনি জানেন, তার স্বর্গস্থ পিতা তাকে ভালোবাসেন এবং তিনি তাকে কেবল সেই বিষয়গুলো করতে বলবেন, যেগুলো তার জন্য মঙ্গলজনক।—দ্বিতীয়. ৬:২৪; ১ যোহন ৫:৩.

৯. একজন খ্রিস্টান বোন যখন তার স্বামীর কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান দেখান, তখন কী হয়?

বশীভূত হওয়ার বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। জগতের লোকেরা নারীদের বশীভূত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে না, বরং তারা নারীদের যিহোবার মানগুলোকে উপেক্ষা করার জন্য প্ররোচিত করে। আর এর কারণ হল, তারা আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর সম্বন্ধে জানে না। যিহোবা তার প্রিয় কন্যাদের কখনো এমন কিছু করতে বলবেন না, যেটার কারণে তাদের নীচু চোখে দেখা হবে। একজন বোন যখন যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্ব পালন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন, তখন তিনি তাঁর পরিবারে শান্তি নিয়ে আসেন। (গীত. ১১৯:১৬৫) এর ফলে, তিনি নিজে উপকার লাভ করেন এবং তার স্বামী ও সন্তানেরাও উপকার লাভ করে।

১০. বোন ক্যারলের মন্তব্য থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১০ যিহোবা মস্তকপদের ব্যবস্থা করেছেন। তাই, একজন স্ত্রী যখন তার অসিদ্ধ স্বামীর বশীভূত হন, তখন তিনি প্রমাণ দেন যে, তিনি যিহোবাকে ভালোবাসেন এবং সম্মান করেন। দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত ক্যারল নামে একজন বোন বলেন, ‘আমি জানি আমার স্বামী ভুল করবে। আর আমি এও জানি, তার ভুলগুলোর প্রতি আমি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাব, সেটা প্রমাণ করবে যে, যিহোবার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বকে আমি কতটা মূল্য দিই। তাই, আমি বশীভূত থাকার চেষ্টা করি কারণ আমি স্বর্গস্থ পিতাকে খুশি করতে চাই।’

১১. কী অ্যানিস নামে একজন বোনকে ক্ষমাশীল হতে সাহায্য করেছে এবং তার মন্তব্য থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১১ একজন স্ত্রী যখন এইরকমটা অনুভব করেন যে, তার স্বামী তার অনুভূতি ও উদ্‌বিগ্নতাগুলোর প্রতি বিবেচনা দেখেন না, তখন তার পক্ষে তার স্বামীর প্রতি সম্মান দেখানো এবং তার বশীভূত হওয়া কঠিন হতে পারে। অ্যানিস নামে একজন বিবাহিত বোন এই ধরনের পরিস্থিতিতে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান, তা লক্ষ করুন। তিনি বলেন: “আমি বিরক্তির মনোভাব পুষে না রাখার চেষ্টা করি। আমি এটা মনে রাখি যে, আমরা সবাই ভুল করি। আমি পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করার চেষ্টা করি, ঠিক যেমনটা যিহোবা করে থাকেন। আমি যখন ক্ষমা করি, তখন আমি মনের শান্তি লাভ করি।” (গীত. ৮৬:৫) একজন ক্ষমাশীল স্ত্রীর পক্ষে বশীভূত হওয়া আরও সহজ হয়ে ওঠে।

বাইবেলে লিপিবদ্ধ উদাহরণগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২. বাইবেলে কোন উদাহরণগুলো রয়েছে?

১২ কেউ কেউ মনে করে, যারা বশীভূত হয়, তারা দুর্বল। কিন্তু, এটা একেবারেই সত্য নয়। বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা বশীভূত হওয়ার মনোভাব দেখিয়েছিল এবং এর পাশাপাশি সাহসীও ছিল। এদের মধ্যে তিন জন হলেন যিশু, অবীগল ও মরিয়ম। আসুন, আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

১৩. কেন যিশু যিহোবার বশীভূত থাকেন? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ যিশু সবসময় যিহোবার বশীভূত থাকেন, তবে এই কারণে নয় যে, তাঁর বুদ্ধি অথবা দক্ষতার অভাব রয়েছে। যিশুর সহজসরল শিক্ষাগুলো প্রমাণ করে যে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন ব্যক্তি। (যোহন ৭:৪৫, ৪৬) যিহোবা জানতেন, যিশু অনেক দক্ষ আর তাই তিনি নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করার সময় তাঁকে নিজের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। (হিতো. ৮:৩০; ইব্রীয় ১:২-৪) আর যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিহোবা তাঁকে “স্বর্গ ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব” দিয়েছেন। (মথি ২৮:১৮) যিশুর অনেক দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তিনি নির্দেশনার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করেন। কেন? কারণ তিনি তাঁর পিতাকে ভালোবাসেন।—যোহন ১৪:৩১.

১৪. (ক) যিহোবা নারীদের যেভাবে দেখেন, সেখান থেকে একজন স্বামী কী শিখতে পারেন? (খ) হিতোপদেশ ৩১ অধ্যায়ে যা বলা আছে, সেখান থেকে একজন স্বামী কী শিখতে পারেন?

১৪ স্বামীরা যা শিখতে পারে। আমরা হয়তো মনে করতে পারি, যিহোবা নারীদের পুরুষদের চেয়ে নীচু চোখে দেখেন আর তাই তিনি স্ত্রীদের স্বামীদের বশীভূত হতে বলেছেন। কিন্তু, আসলে তা নয়। তিনি পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও যিশুর সহ-শাসক হিসেবে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে এর প্রমাণ দিয়েছেন। (গালা. ৩:২৬-২৯) যিহোবা তাঁর পুত্রকে কর্তৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। একইভাবে, একজন স্বামী তার স্ত্রীকে আস্থা সহকারে কিছুটা কর্তৃত্ব দেবেন। একজন গুণবতী স্ত্রী কী কী করে থাকেন, সেই বিষয়ে বাইবেলে বর্ণনা করা আছে। তিনি ঘরের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন, জমি ক্রয়-বিক্রয় করেন এবং টাকাপয়সার লেনদেন করেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩১:১৫, ১৬, ১৮.) তিনি কোনো দাসী নন, যার মতামত প্রকাশ করার কোনো অধিকার নেই। এর পরিবর্তে, তার স্বামী তার উপর আস্থা রাখেন এবং তার মতামত মন দিয়ে শোনেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩১:১১, ২৬, ২৭.) একজন পুরুষ যখন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে এইরকম সম্মান সহকারে আচরণ করেন, তখন স্ত্রী আনন্দ সহকারে তার স্বামী বশীভূত হন।

যিহোবার প্রতি যিশুর বশীভূত মনোভাব থেকে গুণবতী স্ত্রীরা কী শিখতে পারে? (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. স্ত্রীরা যিশুর উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারে?

১৫ স্ত্রীরা যা শিখতে পারে। যিশু অনেক বড়ো বড়ো কাজ করেছেন। তা সত্ত্বেও, তিনি যিহোবার মস্তকপদের বশীভূত হওয়াকে নীচু চোখে দেখেন না। (১ করি. ১৫:২৮; ফিলি. ২:৫, ৬) একইভাবে, একজন গুণবতী স্ত্রী, যিনি যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করেন, তিনি তার স্বামীর বশীভূত হওয়াকে নীচু চোখে দেখেন না। তিনি তার স্বামীকে সমর্থন করেন কারণ তিনি তাকে ভালোবাসেন। তবে, তার স্বামীকে সমর্থন করার মূল কারণ হচ্ছে তিনি যিহোবাকে ভালোবাসেন এবং তাঁকে সম্মান করেন।

দায়ূদ এবং তার লোকদের কাছে খাবার পাঠানোর পর অবীগল দায়ূদের কাছে যান। এরপর তিনি মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসেন এবং দায়ূদকে অনুরোধ করেন যেন তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার মাধ্যমে নিজের উপর রক্তপাতের দোষ ডেকে না আনেন (অনুচ্ছেদ ১৬ দেখুন)

১৬. প্রথম শমূয়েল ২৫:৩, ২৩-২৮ পদ অনুযায়ী অবীগল কোন কোন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৬ অবীগলের প্রথমে যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, তার নাম ছিল নাবল। তিনি একজন গর্বিত, স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। একবার দায়ূদ এবং তার লোকেরা নাবলকে হত্যা করতে আসছিল। সেই সময়ে অবীগল চাইলে সহজেই তার বিবাহবন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারতেন। কিন্তু, তিনি তা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি নাবলকে এবং তার বড়ো পরিবারকে রক্ষা করার জন্য ব্যাবহারিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কল্পনা করুন, ৪০০ জন সশস্ত্র ব্যক্তির সামনে যাওয়ার জন্য এবং দায়ূদের সঙ্গে সম্মানপূর্বক যুক্তি করার জন্য অবীগলের কতটা সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি এমনকী তার স্বামীর কাজের দোষ নিজের মাথায় নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। (পড়ুন, ১ শমূয়েল ২৫:৩, ২৩-২৮.) দায়ূদ এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিহোবা এই সাহসী নারীকে ব্যবহার করে তাকে গুরুতর ভুল করা থেকে বিরত করেছিলেন।

১৭. দায়ূদ ও অবীগলের বিবরণ থেকে স্বামীরা কী শিখতে পারে?

১৭ স্বামীরা যা শিখতে পারে। অবীগল একজন বিজ্ঞ নারী ছিলেন। আর দায়ূদ তার উপদেশে মনোযোগ দিয়ে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এর ফলে, তিনি রক্তপাতের দোষ এড়াতে পেরেছিলেন। একইভাবে, একজন বিজ্ঞ স্বামী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার স্ত্রীর মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। এটা হয়তো তাকে মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে।

১৮. অবীগলের উদাহরণ থেকে স্ত্রীরা কী শিখতে পারে?

১৮ স্ত্রীরা যা শিখতে পারে। যে-স্ত্রী যিহোবাকে ভালোবাসেন এবং সম্মান করেন, তিনি তার পরিবারের উপর ভালো প্রভাব ফেলেন, এমনকী তার স্বামী যদি যিহোবাকে সেবা না-ও করেন অথবা তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন না-ও করেন। তিনি তার বিবাহবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ খুঁজবেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তার স্বামীর প্রতি সম্মান দেখাবেন এবং তার বশীভূত হবেন। এভাবে তিনি তাকে যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে অনুপ্রাণিত করবেন। (১ পিতর ৩:১, ২) কিন্তু, তার উত্তম উদাহরণ দেখে তার স্বামী যদি সাড়া না-ও দেন, তবুও তিনি যদি তার স্বামীর প্রতি বাধ্যতা দেখান এবং যিহোবার প্রতি অনুগত থাকেন, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন।

১৯. কখন একজন স্ত্রী তার স্বামীর বাধ্য হবেন না?

১৯ তবে, একজন খ্রিস্টান স্ত্রী সেইসময় তার স্বামীর বাধ্য হবেন না, যখন তার স্বামী যদি তাকে বাইবেলের কোনো আইন অথবা নীতি লঙ্ঘন করতে বলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন একজন বোনের ন-সাক্ষি স্বামী তাকে চুরি করতে, মিথ্যা কথা বলতে অথবা এমন কাজ করতে বলেন, যা ঈশ্বরকে খুশি করে না। সমস্ত খ্রিস্টানকে, যার মধ্যে বিবাহিত বোনেরাও রয়েছে, প্রথমে যিহোবা ঈশ্বরের বাধ্য হতে হবে। একজন বোনকে যদি তার স্বামী বাইবেলের নীতি লঙ্ঘন করতে বলেন, তা হলে তিনি তা করবেন না এবং কেন করবেন না, তা তার স্বামীর কাছে সদয়ভাবে অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাখ্যা করবেন।—প্রেরিত ৫:২৯.

অনুচ্ছেদ ২০ দেখুন *

২০. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবার সঙ্গে মরিয়মের এক ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল?

২০ যিহোবার সঙ্গে মরিয়মের এক ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। নিশ্চিতভাবেই তিনি শাস্ত্র সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন। যোহন বাপ্তাইজকের মা ইলীশাবেতের সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিনি ২০ বারেরও বেশি বার ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন। (লূক ১:৪৬-৫৫) আর এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: যদিও যোষেফের সঙ্গে মরিয়মের বিয়ে ঠিক হয়েছিল, কিন্তু যিহোবার স্বর্গদূত প্রথমে যোষেফকে দেখা দেননি। স্বর্গদূত সরাসরি মরিয়মের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাকে জানিয়েছিলেন, তিনি ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম দেবেন। (লূক ১:২৬-৩৩) যিহোবা মরিয়মকে ভালোভাবে জানতেন আর তাঁর এই আস্থা ছিল, মরিয়ম তাঁর পুত্রকে ভালোবাসবেন এবং তাঁর যত্ন নেবেন। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এমনকী যিশু মারা যাওয়ার এবং তাঁকে স্বর্গে পুনরুত্থিত করার পরও মরিয়ম যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।—প্রেরিত ১:১৪.

২১. বাইবেল মরিয়ম সম্বন্ধে যা বলে, সেখান থেকে স্বামীরা কী শিখতে পারে?

২১ স্বামীরা যা শিখতে পারে। একজন বিজ্ঞ স্বামী যখন এটা দেখেন যে, তার স্ত্রী শাস্ত্র সম্বন্ধে ভালোভাবে জানেন, তখন তিনি আনন্দিত হন। তিনি তার স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হন না অথবা এইরকম চিন্তা করেন না, তার স্ত্রী পরিবারের মস্তক হতে চান। তিনি এটা উপলব্ধি করেন, তার স্ত্রী যদি বাইবেল এবং বাইবেলের নীতি সম্বন্ধে ভালোভাবে জানেন, তা হলে তার স্ত্রী পরিবারকে সাহায্য করতে পারবেন। অবশ্য, স্ত্রী যদি তার স্বামীর চেয়ে বেশি শিক্ষিত হয়েও থাকেন, তবুও যিহোবার উপাসনার সঙ্গে জড়িত কাজকর্মে নেতৃত্ব নেওয়ার দায়িত্ব হল স্বামীর।—ইফি. ৬:৪.

যিশুর মা মরিয়মের কাছ থেকে অধ্যয়ন ও ধ্যান সম্বন্ধে স্ত্রীরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারে? (২২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

২২. স্ত্রীরা মরিয়মের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

২২ স্ত্রীরা যা শিখতে পারে। একজন নারীকে অবশ্যই তার স্বামীর বশীভূত হতে হবে। তবে, তার নিজের বিশ্বাসকে শক্তিশালী রাখার দায়িত্ব তার নিজেরই। (গালা. ৬:৫) তাই, তিনি অবশ্যই ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং ধ্যান করার জন্য সময় আলাদা করে রাখবেন। এটা তাকে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান বজায় রাখতে এবং তার স্বামীর বশীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

২৩. বশীভূত হওয়ার মনোভাব দেখায় এমন স্ত্রীরা কীভাবে নিজেদের জন্য, তাদের পরিবারের জন্য এবং মণ্ডলীর জন্য উপকার নিয়ে আসে?

২৩ যে-স্ত্রীরা যিহোবাকে ভালোবাসে বলে তাদের স্বামীর বশীভূত থাকে, তারা সেই স্ত্রীদের চেয়ে আরও বেশি আনন্দ ও পরিতৃপ্তি লাভ করবে, যারা যিহোবার মস্তকপদের ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে। এ ছাড়া, তারা যুবক-যুবতীদের জন্যও উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে। আর তারা কেবল পরিবারেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে মণ্ডলীতেও এক প্রেমপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে। (তীত ২:৩-৫) বর্তমানে, যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের মধ্যে অধিকাংশই হল নারী। (গীত. ৬৮:১১) আমরা নারী অথবা পুরুষ যে-ই হই না কেন, আমাদের সবারই মণ্ডলীতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা প্রত্যেকে কীভাবে সেই ভূমিকা পালন করতে পারি, তা নিয়ে পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

গান সংখ্যা ৩৬ “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন”

^ অনু. 5 যিহোবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, একজন নারী তার স্বামীর প্রতি বশীভূত থাকবেন। এর সঙ্গে কী জড়িত? যিশু খ্রিস্ট এবং বাইবেলে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন নারীর উদাহরণ থেকে স্বামী ও স্ত্রীরা বশীভূত হওয়ার বিষয়ে অনেক কিছু শিখতে পারেন।

^ অনু. 68 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যোহন বাপ্তাইজকের মা ইলীশাবেতের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মরিয়ম ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে মুখস্থ করা বিভিন্ন পদ উদ্ধৃতি করেছিলেন।

^ অনু. 70 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন খ্রিস্টান স্ত্রী তার বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখার উদ্দেশে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য সময় আলাদা করে রাখেন।