সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৮

যেভাবে পরীক্ষার সময়ে আনন্দ বজায় রাখা যায়

যেভাবে পরীক্ষার সময়ে আনন্দ বজায় রাখা যায়

“হে আমার ভাইয়েরা, তোমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হও, তখন সেটাকে অত্যন্ত আনন্দের বিষয় বলে মনে করো।”—যাকোব ১:২.

গান সংখ্যা ২৮ নতুন গীত

সারাংশ *

১-২. মথি ৫:১১ পদ অনুযায়ী পরীক্ষার সময়ে আমাদের কেমন মনোভাব বজায় রাখা উচিত?

যিশু তাঁর অনুসারীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা প্রকৃতই সুখী হবে। তবে, তিনি এও বলেছিলেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে, তারা পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। (মথি ১০:২২, ২৩; লূক ৬:২০-২৩) আমরা খ্রিস্টের শিষ্য হতে পেরে আনন্দিত। কিন্তু, আমাদের পরিবারের সদস্যেরা যদি যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, সরকার যদি আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে অথবা আমাদের সহকর্মী কিংবা সহছাত্র-ছাত্রীরা যদি আমাদের অন্যায় কাজ করার জন্য প্ররোচিত করে, তা হলে আমরা কেমন অনুভব করি? আমরা যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি।

লোকেরা যখন তাড়না ভোগ করে, তখন তারা সাধারণত আনন্দিত হয় না। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আনন্দিত হতে বলে। উদাহরণ স্বরূপ, শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, পরীক্ষার সময়ে আমরা যেন উদ্‌বিগ্ন না হয়ে বরং আনন্দিত হই। (যাকোব ১:২, ১২) আর যিশু বলেছিলেন, আমরা যখন তাড়না ভোগ করি, তখন আমরা যেন সুখী হই। (পড়ুন, মথি ৫:১১.) কীভাবে আমরা পরীক্ষা সত্ত্বেও আনন্দ বজায় রাখতে পারি? প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে যাকোব যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। প্রথমে আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, সেই খ্রিস্টানেরা কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল।

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কোন কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিল?

৩. যাকোব যিশুর একজন শিষ্য হয়ে ওঠার পর পরই কী ঘটেছিল?

যিশুর সৎভাই যাকোব একজন শিষ্য হয়ে ওঠার পর পরই জেরুশালেমের খ্রিস্টানেরা বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। (প্রেরিত ১:১৪; ৫:১৭, ১৮) আর শিষ্য স্তিফানকে হত্যা করার পর অনেক খ্রিস্টান নগর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল এবং ‘যিহূদিয়া ও শমরিয়া অঞ্চলে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল।’ এমনকী কেউ কেউ সাইপ্রাস ও আন্তিয়খিয়ায় চলে গিয়েছিল। (প্রেরিত ৭:৫৮–৮:১; ১১:১৯) শিষ্যেরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, তারপরও তারা যেখানেই গিয়েছিল, উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করেছিল এবং অনেক মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। (১ পিতর ১:১) কিন্তু, এখানেই শেষ নয়। পরবর্তী সময়ে তাদের আরও বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

৪. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের অন্যান্য কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যেমন, প্রায় ৫০ খ্রিস্টাব্দে রোমীয় সম্রাট ক্লৌদিয় সমস্ত যিহুদিকে রোম থেকে চলে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তাই, যিহুদি খ্রিস্টানেরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। (প্রেরিত ১৮:১-৩) প্রায় ৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, তার সহখ্রিস্টানদের অন্য লোকদের সামনে অপমান করা হয়েছিল, তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল এবং তাদের বিষয়সম্পত্তি লুট করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪) আর অন্যদের মতো খ্রিস্টানদেরও দরিদ্রতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং অসুস্থতা ভোগ করতে হয়েছিল।—রোমীয় ১৫:২৬; ফিলি. ২:২৫-২৭.

৫. আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করব?

যাকোব ৬২ খ্রিস্টাব্দের আগে তার চিঠিটা লিখেছিলেন। সেই সময়ে ভাই-বোনেরা যে-সমস্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছিল, সেই বিষয়ে তিনি খুব ভালোভাবে জানতেন। যিহোবা যাকোবকে কিছু ব্যাবহারিক পরামর্শ লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই পরামর্শগুলো সেই খ্রিস্টানদের পরীক্ষার সময়েও আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। আসুন, আমরা যাকোবের লেখা চিঠি নিয়ে পরীক্ষা করি এবং এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করি: যাকোব কোন আনন্দের বিষয়ে লিখেছিলেন? কী খ্রিস্টানদের সেই আনন্দ কেড়ে নিতে পারে? আর কীভাবে প্রজ্ঞা, বিশ্বাস ও সাহস আমাদের আনন্দ বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে, তা আমরা যে-পরীক্ষার মুখোমুখিই হই না কেন?

কী একজন খ্রিস্টানকে আনন্দিত হতে সাহায্য করে?

একটা হ্যারিকেনের ভিতরে যেমন একটা শিখা ক্রমাগত জ্বলতে থাকে, তেমনই আমাদের হৃদয়ে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া গভীর আনন্দ সবসময় বজায় থাকে (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. লূক ৬:২২, ২৩ পদ অনুযায়ী পরীক্ষার সময়ে কেন একজন খ্রিস্টান আনন্দিত হতে পারেন?

বর্তমানে লোকেরা হয়তো মনে করে, উত্তম স্বাস্থ্য, অনেক টাকাপয়সা এবং পরিবারে শান্তি থাকলেই তারা আনন্দিত হতে পারবে। কিন্তু, যাকোব এইরকম আনন্দের বিষয়ে লেখেননি। তিনি যে-আনন্দের বিষয়ে লিখেছিলেন, সেটা ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির ফলের একটা দিক আর এই আনন্দ একজন ব্যক্তির পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে না। (গালা. ৫:২২) একজন খ্রিস্টান যখন জানেন যে, তিনি যিহোবাকে খুশি করছেন এবং যিশুকে অনুসরণ করছেন, তখন তিনি আনন্দ ও সুখ লাভ করেন। (পড়ুন, লূক ৬:২২, ২৩; কল. ১:১০, ১১) আমাদের আনন্দকে হ্যারিকেনের মধ্যে জ্বলতে থাকা একটা শিখার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কাঁচের ভিতরে থাকায় এই শিখা বাতাস ও বৃষ্টির হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে আর ক্রমাগত জ্বলতে থাকে। আমাদের জীবনেও যা-ই ঘটুক না কেন, আমরাও সেই জ্বলতে থাকা শিখার মতো আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারি। আমরা অসুস্থ হই অথবা আমাদের টাকাপয়সার অভাব থাকে, যা-ই হোক না কেন, আমরা কখনো আমাদের আনন্দ হারিয়ে ফেলি না। এমনকী লোকদের উপহাস এবং পারিবারিক বিরোধিতার মুখেও আমরা আনন্দ বজায় রাখতে পারি। প্রতি বারই লোকেরা যখন আমাদের আনন্দ কেড়ে নিতে চায়, তখন আমাদের আনন্দ আরও বৃদ্ধি পায়। বিশ্বাসের কারণে আমরা যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন এটা প্রমাণ দেয় যে, আমরা প্রকৃতই খ্রিস্টের শিষ্য। (মথি ১০:২২; ২৪:৯; যোহন ১৫:২০) এই কারণে যাকোব লিখতে পেরেছিলেন: “হে আমার ভাইয়েরা, তোমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হও, তখন সেটাকে অত্যন্ত আনন্দের বিষয় বলে মনে করো।”—যাকোব ১:২.

কেন পরীক্ষাগুলোকে আগুনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা একটা ধাতুকে বার বার উত্তপ্ত করে মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়? (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৭-৮. আমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের বিশ্বাস কেন আরও শক্তিশালী হয়?

কেন খ্রিস্টানেরা চরম পরীক্ষার মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক, সেই বিষয়ে যাকোব আরও একটা কারণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন: “তোমাদের বিশ্বাস এভাবে পরীক্ষিত হলে, তা ধৈর্য বাড়িয়ে তোলে।” (যাকোব ১:৩) কোনো ধাতুকে যখন আগুনে উত্তপ্ত করা হয় এবং এরপর সেটাকে ঠাণ্ডা করা হয়, তখন সেই ধাতু আরও মজবুত হয়। পরীক্ষাকে আগুনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আমরা যখন ধৈর্য ধরে পরীক্ষা সহ্য করি, তখন আমাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়। এই কারণে যাকোব লিখেছেন: “তোমরা যদি সবসময় ধৈর্য ধর, তা হলে সেই ধৈর্য তোমাদের পুরোপুরিভাবে প্রশিক্ষিত করবে, তোমরা সমস্ত ক্ষেত্রে নিখুঁত হবে।” (যাকোব ১:৪) আমরা যখন দেখি, আমাদের পরীক্ষাগুলো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে, তখন আমরা আনন্দের সঙ্গে সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।

যাকোব তার চিঠিতে আরও কিছু বিষয় তুলে ধরেছিলেন, যেগুলো আমাদের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে। সেই সমস্যাগুলো কী আর কীভাবে আমরা সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি?

আনন্দ কেড়ে নেয় এমন সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা

৯. কেন আমাদের প্রজ্ঞার প্রয়োজন?

সমস্যা: যখন আমরা জানি না, আমরা কী করব। আমরা যখন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমরা যিহোবার কাছে সাহায্য চাই। আমরা এমন বাছাইগুলো করতে চাই, যেগুলো তাঁকে খুশি করে, আমাদের ভাই-বোনদের জন্য উপকার নিয়ে আসে এবং আমাদের যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করে। (যির. ১০:২৩) আমাদের কী করা উচিত এবং অন্যেরা যখন আমাদের বিরোধিতা করে, তখন আমাদের কী বলা উচিত, তা জানার জন্য আমাদের প্রজ্ঞার প্রয়োজন। আমরা যদি না জানি, আমরা কী করব, তখন আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি এবং সহজেই আমাদের আনন্দ হারিয়ে ফেলতে পারি।

১০. আমরা যদি প্রজ্ঞা লাভ করতে চাই, তা হলে যাকোব ১:৫ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করতে হবে?

১০ সমাধান: যিহোবার কাছে প্রজ্ঞা চান। আমরা যদি পরীক্ষার সময়ে আনন্দ বজায় রাখতে চাই, তা হলে প্রথমে আমাদের প্রার্থনায় যিহোবার কাছে প্রজ্ঞা চাইতে হবে, যাতে আমরা উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (পড়ুন, যাকোব ১:৫.) কিন্তু, যিহোবা যদি সঙ্গেসঙ্গে আমাদের প্রার্থনার উত্তর না দেন, তা হলে আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? যাকোব বলেন, আমরা যেন ঈশ্বরের কাছে ‘বার বার অনুরোধ করি।’ আমরা যখন বার বার যিহোবার কাছে প্রজ্ঞা চাই, তখন তিনি বিরক্ত হন না বা রেগেও যান না। আমরা যখন ধৈর্য ধরে পরীক্ষা সহ্য করার জন্য তাঁর কাছে প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করি, তখন আমাদের স্বর্গস্থ পিতা তা “উদারভাবে দান করেন।” (গীত. ২৫:১২, ১৩) তিনি আমাদের সমস্যা দেখতে পান এবং আমরা যে-কষ্ট ভোগ করছি, সেটার জন্য দুঃখ পান আর তিনি আমাদের সাহায্য করতে চান। এটা জানা আমাদের জন্য সত্যিই আনন্দের বিষয়। কিন্তু, যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রজ্ঞা দান করেন?

১১. প্রজ্ঞা লাভ করার জন্য আমাদের আর কী করতে হবে?

১১ যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের প্রজ্ঞা দান করেন। (হিতো. ২:৬) সেই প্রজ্ঞা অর্জন করার জন্য আমাদের অবশ্যই বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করতে হবে। তবে, কেবল প্রজ্ঞা অর্জন করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের সেই প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে হবে। যাকোব লিখেছেন: “তোমরা সেই বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করো, কেবল শ্রোতা হোয়ো না।” (যাকোব ১:২২) আমরা যখন ঈশ্বরের পরামর্শ কাজে লাগাই, তখন আমরা আরও শান্তিপ্রবণ, যুক্তিবাদী ও করুণাময় হই। (যাকোব ৩:১৭) এই গুণগুলো আমাদের আনন্দ হারিয়ে না ফেলে যেকোনো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

১২. কেন বাইবেল সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা গুরুত্বপূর্ণ?

১২ ঈশ্বরের বাক্য হল একটা আয়নার মতো। এটি আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে, কোথায় আমাদের উন্নতি করতে হবে এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি। (যাকোব ১:২৩-২৫) উদাহরণ স্বরূপ, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার পর আমরা হয়তো এটা উপলব্ধি করি, আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যিহোবার সাহায্যে আমরা শিখতে পারি যে, লোকদের অথবা সমস্যার কারণে আমরা যখন রেগে যাই, তখন কীভাবে আমরা মৃদুতা দেখাতে পারি। আমরা যেহেতু মৃদুশীল, তাই বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে আমরা আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি। আমরা আরও ভালোভাবে চিন্তা করতে পারি এবং আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (যাকোব ৩:১৩) বাইবেল সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ!

১৩. কেন আমাদের বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত?

১৩ কখনো কখনো আমরা কেবল ভুল করার পরই বুঝতে পারি, আমাদের কী করা উচিত নয়। কিন্তু, এভাবে শিক্ষা লাভ করা কঠিন। প্রজ্ঞা লাভ করার আরও উত্তম উপায় হল অন্যদের উত্তম ও মন্দ কাজগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করা। এই কারণে যাকোব আমাদের বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে, যেমন অব্রাহাম, রাহব, ইয়োব ও এলিয়ের মতো ব্যক্তিদের উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (যাকোব ২:২১-২৬; ৫:১০, ১১, ১৭, ১৮) যিহোবার এই অনুগত দাসেরা এমন পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, যেগুলো তাদের আনন্দ কেড়ে নিতে পারত। কিন্তু, তারা এই পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে তাদের উদাহরণ দেখায় যে, যিহোবার সাহায্যে আমরাও একই বিষয় করতে পারি।

১৪-১৫. কেন আমাদের সন্দেহগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত নয়?

১৪ সমস্যা: যখন নিজেদের বিশ্বাস সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে। কখনো কখনো বাইবেলের কোনো বিষয় বোঝা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। অথবা আমরা যেভাবে আশা করি, যিহোবা হয়তো সেভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন না। এর ফলে, আমাদের মনে হয়তো সন্দেহ জেগে উঠতে পারে। আমরা যদি আমাদের সন্দেহগুলোকে উপেক্ষা করি, তা হলে সেগুলো আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেবে এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে। (যাকোব ১:৭, ৮) আর সেগুলো এমনকী আমাদের ভবিষ্যতের আশাকে একেবারে দুর্বল করে দিতে পারে।

১৫ প্রেরিত পৌল আমাদের ভবিষ্যতের আশাকে একটা নোঙরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (ইব্রীয় ৬:১৯) একটা নোঙর ঝড়ের সময়ে একটা জাহাজকে স্থির রাখে এবং ভেসে গিয়ে শিলাপাথরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু, একটা নোঙর তখনই কাজে লাগবে, যদি নোঙরের শিকলটা ছিঁড়ে না যায়। কারণ সেই শিকলটার দ্বারাই নোঙরটা জাহাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ঠিক যেমন মরচে একটা নোঙরের শিকলকে দুর্বল করে দেয়, তেমনই বিশ্বাস সম্বন্ধে সন্দেহ আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। আর পরে আমরা যদি বিরোধিতার মুখোমুখি হই, তা হলে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর আমাদের বিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে। আমরা যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, তা হলে আমরা আমাদের আশা হারিয়ে ফেলব। যাকোব যেমন বলেছিলেন, যে সন্দেহ করে, “সে বাতাসের দ্বারা আলোড়িত এবং দুলতে থাকা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো।” (যাকোব ১:৬) এইরকম একজন ব্যক্তি সম্ভবত কখনোই আনন্দিত হবেন না!

১৬. আমাদের মনে যদি সন্দেহ থাকে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

১৬ সমাধান: সন্দেহ দূর করুন; আপনার বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করুন। দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। ভাববাদী এলিয়ের দিনে যিহোবার লোকেরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এলিয় তাদের বলেছিলেন: “তোমরা কত কাল দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবে? সদাপ্রভু যদি ঈশ্বর হন, তবে তাঁহার অনুগামী হও; আর বাল যদি ঈশ্বর হয়, তবে তাহার অনুগামী হও।” (১ রাজা. ১৮:২১) এই বিষয়টা বর্তমান সময়েও সত্য। তাই, বিভিন্ন বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের গবেষণা করতে হবে। যেমন, যিহোবাই হলেন একমাত্র ঈশ্বর, বাইবেল তাঁর বাক্য এবং যিহোবার সাক্ষিরা তাঁর লোক। (১ থিষল. ৫:২১) এই সমস্ত কিছু করার মাধ্যমে আমাদের সন্দেহ দূর হয়ে যাবে এবং আমাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে। আমাদের সন্দেহগুলো দূর করার জন্য যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা হলে আমরা প্রাচীনদের কাছে যেতে পারি। আমরা যদি যিহোবার সেবায় আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে!

১৭. আমরা যদি সাহস হারিয়ে ফেলি, তা হলে কী হবে?

১৭ সমস্যা: নিরুৎসাহিতা। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” (হিতো. ২৪:১০) যে-ইব্রীয় শব্দকে ‘অবসন্ন হওয়া’ বা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ হতে পারে ‘সাহস হারিয়ে ফেলা।’ আপনি যদি সাহস হারিয়ে ফেলেন, তা হলে আপনি সহজেই আপনার আনন্দ হারিয়ে ফেলবেন।

১৮. ধৈর্য ধরে সহ্য করার অর্থ কী?

১৮ সমাধান: ধৈর্য ধরে সহ্য করার জন্য যিহোবার কাছে সাহস চান। আমরা যদি ধৈর্য ধরে পরীক্ষা সহ্য করতে চাই, তা হলে আমাদের সাহসের প্রয়োজন। (যাকোব ৫:১১) ‘ধৈর্য ধরা’ হিসেবে অনুবাদিত অভিব্যক্তির জন্য যাকোব যে-শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, সেটা এমন একজন ব্যক্তির কথা চিন্তা করতে পরিচালিত করে, যিনি নিজ অবস্থানে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমরা এমন একজন সৈনিকের কথা চিন্তা করতে পারি, যিনি নিজ অবস্থানে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে কোনোভাবেই পালিয়ে যান না।

১৯. প্রেরিত পৌলের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৯ প্রেরিত পৌল সাহস দেখানোর এবং ধৈর্য বজায় রাখার বিষয়ে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। কখনো কখনো তিনি নিজেকে দুর্বল বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু, তিনি ধৈর্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন কারণ তিনি প্রয়োজনীয় শক্তি লাভ করার জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। (২ করি. ১২:৮-১০; ফিলি. ৪:১৩) আমরা এই ধরনের শক্তি ও সাহস লাভ করতে পারব, যদি আমরা নম্রভাবে এটা স্বীকার করি যে, আমাদের যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে।—যাকোব ৪:১০.

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন এবং আপনার আনন্দ বজায় রাখুন

২০-২১. আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

২০ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো যিহোবার কাছ থেকে কোনো শাস্তি নয়। যাকোব আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন: “পরীক্ষার সময় কেউ না বলুক: ‘ঈশ্বর আমার পরীক্ষা করছেন।’ কারণ মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যায় না আর তিনি নিজেও মন্দ বিষয়ের দ্বারা কারো পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) আমরা যখন এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকি, তখন আমরা আমাদের প্রেমময় স্বর্গস্থ পিতার আরও নিকটবর্তী হই।—যাকোব ৪:৮.

২১ যিহোবা “পরিবর্তিত হন না।” (যাকোব ১:১৭) তিনি প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের পরীক্ষার সময় সাহায্য করেছিলেন আর তিনি বর্তমানেও আমাদের প্রত্যেককে সাহায্য করবেন। প্রজ্ঞা, বিশ্বাস ও সাহস লাভ করার জন্য যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনার প্রার্থনার উত্তর দেবেন। এর ফলে আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে, পরীক্ষার মধ্যে তিনি আপনাকে আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করবেন!

গান সংখ্যা ২৪ পুরস্কারে তোমার চোখ রাখো!

^ অনু. 5 পরীক্ষার সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে যাকোবের বইয়ে বিভিন্ন ব্যাবহারিক পরামর্শ রয়েছে। এই প্রবন্ধে যাকোবের দেওয়া কিছু পরামর্শ নিয়ে বিবেচনা করা হবে। সেই পরামর্শগুলো আমাদের যিহোবার সেবায় আনন্দ না হারিয়ে কষ্ট সহ্য করার জন্য সাহায্য করতে পারে।

^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাইকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশেরা তাকে নিয়ে যাচ্ছে আর তার স্ত্রী ও মেয়ে তা দেখছে। স্বামী কারাগারে থাকার সময় মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা সেই বোন এবং তার মেয়ের সঙ্গে একত্রে পারিবারিক উপাসনা করছে। সেই মা ও মেয়ে পরীক্ষা সহ্য করার জন্য শক্তি চেয়ে যিহোবার কাছে বার বার প্রার্থনা করছে। যিহোবা তাদের সাহস ও মনের শান্তি প্রদান করেন। এর ফলে তাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয় এবং তারা আনন্দের সঙ্গে পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে।