সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৮

গান ১২৩ আমরা যিহোবার ও তাঁর সংগঠনের বশীভূত থাকি

যিহোবার দেখানো পথে চলতে থাকুন

যিহোবার দেখানো পথে চলতে থাকুন

“আমি সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর . . . তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”যিশা. ৪৮:১৭.

আমরা কী শিখব?

আজ যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের সঠিক পথ দেখান এবং সেই পথে চলার মাধ্যমে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করি?

১. উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে বলুন, কেন আমাদের যিহোবার দেখানো পথে চলা উচিত।

 চিন্তা করুন, আপনি একটা ঘন জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছেন। জায়গাটা খুবই উঁচু-নীচু আর পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। চারিদিকে হিংস্র পশু ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আপনি যে-দিকেই তাকান, সেদিকেই বিষাক্ত পোকামাকড় ও গাছপালা দেখতে পান। কিন্তু, আপনার সঙ্গে এমন একজন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি জানেন, কোথায় কোথায় বিপদ রয়েছে এবং কীভাবে তা এড়ানো যায়। আপনি নিশ্চয়ই অনেক স্বস্তি পাবেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন! এই জগৎও একটা ঘন জঙ্গলের মতো। আপনি যেখানেই যান না কেন, বিপদ দেখতে পাবেন। আমরা যদি একটু অসতর্ক হয়ে পড়ি, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তবে, আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ আমরা জানি, যিহোবা আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি আমাদের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদের সেই পথে চলতে সাহায্য করেন, যে-পথ আমাদের নতুন জগতের দিকে নিয়ে যায় আর যেখানে আমরা নিরাপদে থাকতে পারব।

২. যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের পথ দেখান?

বর্তমানে যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের পথ দেখান? তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে তা দেখান। এ ছাড়া, তিনি মানুষের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। যেমন, যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের’ মাধ্যমে আমাদের সঠিক সময়ে খাবার দেন, যাতে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (মথি ২৪:৪৫) তিনি এমনকী যোগ্য পুরুষদের মাধ্যমেও আমাদের পথ দেখান। যেমন, তিনি সীমা অধ্যক্ষ এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের মাধ্যমে আমাদের উৎসাহিত করেন এবং আমাদের নির্দেশনা দেন, যাতে আমরা সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। এই শেষ দিনগুলোতে যিহোবা যেভাবে আমাদের সাহায্য করেন, সেটার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। এভাবে, আমরা যিহোবার বন্ধু হতে পারব এবং ক্রমাগত জীবনের পথে চলতে পারব।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

কখনো কখনো যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের কঠিন বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে যখন অসিদ্ধ পুরুষেরা সেই নির্দেশনা দেয়। অনেকসময় ভাইয়েরা আমাদের এমন নির্দেশনাগুলো দেয়, যেগুলো আমাদের ঠিক বলে মনে না-ও হতে পারে। তাই আমরা সন্দেহ করতে শুরু করি যে, ‘এগুলো কি আদৌ যিহোবার কাছ থেকে আসছে?’ এই ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবাই সেই ভাইদের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনাগুলো দিচ্ছেন, যেগুলো মেনে চললে আমাদেরই ভালো হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা আমাদের আস্থাকে আরও বাড়াতে পারি। আমরা তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব: (১) যিহোবা কীভাবে অতীতে তাঁর লোকদের পথ দেখিয়েছিলেন? (২) যিহোবা কীভাবে বর্তমানে আমাদের পথ দেখাচ্ছেন? (৩) তাঁর দেখানো পথে চলার মাধ্যমে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করব?

অতীত থেকে এখনও পর্যন্ত যিহোবা তাঁর লোকদের মাধ্যমে আমাদের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)


যিহোবা কীভাবে ইজরায়েলীয়দের পথ দেখিয়েছিলেন?

৪-৫. যিহোবা কীভাবে প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি মোশির মাধ্যমে ইজরায়েলীয়দের পথ দেখাচ্ছেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিও দেখুন।)

যিহোবা মোশিকে নিযুক্ত করেছিলেন, যাতে তিনি ইজরায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করেন। আর যিহোবা বিভিন্ন উপায়ে এটা প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি মোশির মাধ্যমে তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন। এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন। যিহোবা দিনের বেলায় মেঘস্তম্ভের আর রাতের বেলায় অগ্নিস্তম্ভের ব্যবস্থা করেছিলেন। (যাত্রা. ১৩:২১) মোশি স্তম্ভের পিছন পিছন গিয়েছিলেন এবং ইজরায়েলীয়দের নিয়ে লোহিত সাগরের কাছে পৌঁছেছিলেন। যখন ইজরায়েলীয়েরা তাদের সামনে লোহিত সাগর এবং পিছনে মিশরীয় সৈন্যদের ধেয়ে আসতে দেখেছিল, তখন তারা অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাদের মনে হয়েছিল যেন তারা এখান থেকে আর বের হতে পারবে না এবং মোশি তাদের এখানে নিয়ে এসে অনেক বড়ো ভুল করেছেন। কিন্তু, সেটা কোনো ভুল ছিল না। যিহোবাই মোশির মাধ্যমে তাঁর লোকদের সেখানে এনেছিলেন। (যাত্রা. ১৪:২) যিহোবা কতই-না অসাধারণ উপায়ে তাঁর লোকদের রক্ষা করেছিলেন!—যাত্রা. ১৪:২৬-২৮.

প্রান্তরে ঈশ্বরের লোকদের পথ দেখানোর জন্য মোশি মেঘস্তম্ভের উপর নির্ভর করেছিলেন (৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)


এরপর ৪০ বছর ধরে মোশি মেঘস্তম্ভের পিছন পিছন চলেছিলেন আর প্রান্তরে যিহোবার লোকদের পথ দেখিয়েছিলেন। a কিছুসময়ের জন্য যিহোবা মেঘস্তম্ভকে মোশির তাঁবুর উপর স্থাপন করেছিলেন এবং সমস্ত ইজরায়েলীয় সেটা স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিল। (যাত্রা. ৩৩:৭, ৯, ১০) সেই মেঘস্তম্ভের মাধ্যমে যিহোবা মোশির সঙ্গে কথা বলতেন এবং তাকে নির্দেশনা দিতেন। তারপর, মোশি সেই নির্দেশনাগুলো লোকদের জানাতেন। (গীত. ৯৯:৭) ইজরায়েলীয়েরা স্পষ্টভাবে এই প্রমাণ পেয়েছিল যে, যিহোবা মোশির মাধ্যমে তাদের পথ দেখাচ্ছেন।

মোশির পরে যিহোশূয়কে নেতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল (৫, ৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৬. বেশিরভাগ ইজরায়েলীয় কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? (গণনাপুস্তক ১৪:২, ১০, ১১)

দুঃখের বিষয় হল, বেশিরভাগ ইজরায়েলীয় এটা মেনে নিতে পারেনি যে, যিহোবা মোশির মাধ্যমে তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, যদিও এর স্পষ্ট প্রমাণ ছিল। (পড়ুন, গণনাপুস্তক ১৪:২, ১০, ১১.) তারা বার বার মোশিকে অগ্রাহ্য করেছিল। এই কারণে যিহোবা ইজরায়েলীয়দের সেই প্রজন্মকে প্রতিজ্ঞাত দেশে যেতে দেননি।—গণনা. ১৪:৩০.

৭. এমন কিছু ব্যক্তির উদাহরণ দিন, যারা যিহোবার দেখানো পথে চলেছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:২৪) (ছবিও দেখুন।)

কিন্তু, কিছু ইজরায়েলীয় যিহোবার দেখানো পথে চলেছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কালেব। যিহোবা তার বিষয়ে বলেছিলেন, “[কালেব] সম্পূর্ণরূপে আমার অনুগত হইয়া চলিয়াছে।” (পড়ুন, গণনাপুস্তক ১৪:২৪.) এই কারণে যিহোবা তাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন আর এমনকী তাকে এটা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন যে, তিনি প্রতিজ্ঞাত দেশে কোথায় থাকবেন। (যিহো. ১৪:১২-১৪) এ ছাড়া, পরবর্তী প্রজন্মের ইজরায়েলীয়েরা যিহোবার দেখানো পথে চলেছিল। মোশির পরে যিহোশূয়কে যখন ইজরায়েল জাতির নেতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন যিহোশূয় যতদিন বেঁচে ছিলেন, ‘তারা ততদিন ধরে তাকে গভীরভাবে সম্মান করেছিল।’ (যিহো. ৪:১৪, NW) এই কারণে যিহোবা ইজরায়েল জাতিকে প্রচুর আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তাদের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন।—যিহো. ২১:৪৩, ৪৪.

৮. রাজাদের সময়ে যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকদের পথ দেখিয়েছিলেন, তা বুঝিয়ে বলুন। (ছবিও দেখুন।)

অনেক বছর পর যিহোবা তাঁর লোকদের পথ দেখানোর জন্য বিচারকদের নিযুক্ত করেছিলেন। এরপর, রাজাদের সময়কালে যিহোবা ভাববাদীদের মাধ্যমে লোকদের পথ দেখিয়েছিলেন। বিশ্বস্ত রাজারাও এই ভাববাদীদের কথা শুনেছিল। যেমন, ভাববাদী নাথন যখন রাজা দায়ূদকে তার ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তখন দায়ূদ নম্রভাবে তার ভুল স্বীকার করেছিলেন। (২ শমূ. ১২:৭, ১৩; ১ বংশা. ১৭:৩, ৪) রাজা যিহোশাফট ভাববাদী যহসীয়েলের পরামর্শ মেনে চলেছিলেন এবং যিহূদার লোকদের উৎসাহিত করেছিলেন, ‘যাতে তারা ঈশ্বরের ভাববাদীদের উপর বিশ্বাস রাখে।’ (২ বংশা. ২০:১৪, ১৫, ২০, NW) রাজা হিষ্কিয় যখন অনেক উদ্‌বিগ্ন ছিলেন, তখন তিনি ভাববাদী যিশাইয়ের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন। (যিশা. ৩৭:১-৬) যখন রাজারা যিহোবার দেখানো পথে চলত, তখন তারা অনেক আশীর্বাদ লাভ করত এবং পুরো জাতি সুরক্ষিত থাকত। (২ বংশা. ২০:২৯, ৩০; ৩২:২২) এইসমস্ত কিছু দেখে লোকেরা বুঝতে পারত, যিহোবা ভাববাদীদের মাধ্যমে তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন। কিন্তু, বেশিরভাগ রাজা এবং লোক যিহোবার ভাববাদীদের কথা শোনেনি।—যির. ৩৫:১২-১৫.

রাজা হিষ্কিয় এবং ভাববাদী যিশাইয় (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)


যিহোবা কীভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের পথ দেখিয়েছিলেন

৯. কীভাবে যিহোবা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের পথ দেখিয়েছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

প্রথম শতাব্দীতে যিহোবা খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠন করেছিলেন। সেইসময় যিহোবা কীভাবে খ্রিস্টানদের পথ দেখিয়েছিলেন? তিনি যিশুকে মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। (ইফি. ৫:২৩) কিন্তু, যিশু প্রত্যেক শিষ্যের কাছে গিয়ে নির্দেশনা দিতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি জেরুসালেমে থাকা প্রাচীন এবং প্রেরিতদের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। (প্রেরিত ১৫:১, ২) এ ছাড়া, মণ্ডলীগুলোতে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য প্রাচীনদের নিযুক্ত করা হয়েছিল।—১ থিষল. ৫:১২; তীত ১:৫.

জেরুসালেমে থাকা প্রাচীনেরা এবং প্রেরিতেরা (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১০. (ক) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? (প্রেরিত ১৫:৩০, ৩১) (খ) অতীত কালে কেন কেউ কেউ যিহোবার নিযুক্ত লোকদের কথা মানতে চায়নি? (“ কেন কিছু লোক স্পষ্ট প্রমাণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি?” বক্স দেখুন।)

১০ যিহোবা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের যেভাবে পথ দেখিয়েছিলেন, তারা সেটার প্রতি কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? বেশিরভাগ খ্রিস্টান সেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলেছিল। তারা সবাই সেই “উৎসাহজনক” নির্দেশনাগুলো পেয়ে ‘আনন্দ করেছিল।’ (পড়ুন, প্রেরিত ১৫:৩০, ৩১.) কিন্তু, বর্তমানে কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন?

বর্তমানে যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন

১১. উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে বলুন, কীভাবে যিহোবা নেতৃত্ব নেয় এমন লোকদের পথ দেখিয়েছেন।

১১ বর্তমানে, যিহোবা তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন। তিনি তাঁর বাক্য বাইবেল এবং তাঁর পুত্রের মাধ্যমে এমনটা করছেন, যিনি মণ্ডলীর মস্তক। তিনি মানুষের মাধ্যমে তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছেন, যেমনটা তিনি অতীতেও করেছিলেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? লক্ষ করুন, ১৮৭০ সালের পর কী ঘটেছিল। চার্লস টেজ রাসেল এবং তার সঙ্গীরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল এবং তারা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, ১৯১৪ সাল ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে। (দানি. ৪:২৫, ২৬) এই সমস্ত কিছুর পিছনে কি যিহোবাই ছিলেন? হ্যাঁ, অবশ্যই। ১৯১৪ সালে যে-ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো থেকে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে, ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে দিয়েছে। সেই সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল, মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল, জায়গায় জায়গায় ভূমিকম্প হয়েছিল এবং খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল। (লূক ২১:১০, ১১) সত্যিই, যিহোবা বাইবেল ছাত্রদের মাধ্যমে তাঁর লোকদের পথ দেখিয়েছিলেন।

১২-১৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কোন কোন ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে আরও বড়ো আকারে প্রচার এবং শেখানোর কাজ করা যায়?

১২ লক্ষ করুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কী ঘটেছিল। বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে যে-ভাইয়েরা দায়িত্বে ছিল, তারা প্রকাশিত বাক্য ১৭:৮ পদের কথাগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরমাগিদোন আসবে না বরং এমন এক শান্তির সময় আসবে, যখন তারা আরও লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে পারবে। তাই, যিহোবার সংগঠন ওয়াচটাওয়ার বাইবেল কলেজ (স্কুল) অফ গিলিয়েডের ব্যবস্থা করে। মানুষের দৃষ্টিতে দেখলে সেইসময় এমনটা করা হয়তো উপযুক্ত ছিল না। তা সত্ত্বেও ভাইয়েরা এই ব্যবস্থা করেছিল, যাতে সারা পৃথিবীতে থাকা লোকদের প্রচার করার এবং শেখানোর জন্য মিশনারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন মিশনারিদের আলাদা আলাদা জায়গায় পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস থিওক্র্যাটিক মিনিস্ট্রি কোর্সের b ব্যবস্থা করেছিল, যাতে মণ্ডলীর ভাই-বোনদের ভালোভাবে প্রচার করার এবং শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এভাবে, যিহোবা তাঁর লোকদের ভালোভাবে প্রচার করার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। সেইসময় যা-কিছু ঘটেছিল, সেগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা গিয়েছিল যে, সেই কঠিন সময়ও যিহোবা তাঁর লোকদের পথ দেখাচ্ছিলেন।

১৩ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যিহোবার লোকেরা অনেক দেশে শান্তিতে এবং কোনো বিধি-নিষেধ ছাড়াই প্রচার করতে পারছে। ঈশ্বরের লোকেরা সারা পৃথিবীতে থাকা লোকদের সুসমাচার জানাচ্ছে এবং অনেকে যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারছে।

১৪. যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে এবং প্রাচীনদের মাধ্যমে আমরা যে-সমস্ত নির্দেশনা পাই, সেগুলোর উপর কেন আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি? (প্রকাশিত বাক্য ২:১) (ছবিও দেখুন।)

১৪ পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা সবসময় এটা জানার চেষ্টা করে, যিশু তাদের কাছ থেকে কী আশা করেন। তারা ভাই-বোনদের এমন নির্দেশনা দিতে চায়, যেটার মাধ্যমে যিহোবা এবং যিশু খ্রিস্টের চিন্তাধারা প্রকাশ পায়। তারা এই নির্দেশনাগুলো সীমা অধ্যক্ষ এবং প্রাচীনদের মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোতে পৌঁছে দেয়। c সমস্ত অভিষিক্ত প্রাচীন এবং মণ্ডলীর প্রাচীনেরা খ্রিস্টের “ডান হাতে” রয়েছে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২:১.) যেহেতু কোনো প্রাচীনই নিখুঁত নয়, তাই তারাও ভুল করে ফেলে। এমনকী মোশি, যিহোশূয় এবং প্রেরিতেরাও কখনো কখনো ভুল করে ফেলেছিল। (গণনা. ২০:১২; যিহো. ৯:১৪, ১৫; রোমীয় ৩:২৩) তা সত্ত্বেও, যিশু অনেক ভেবে-চিন্তে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস এবং প্রাচীনদের পথ দেখাচ্ছেন আর তিনি এই ‘বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত সবসময়’ এমনটা করবেন। (মথি ২৮:২০) সেইজন্য, প্রাচীনদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার উপর আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, যাদের মাধ্যমে আজ যিশু তাঁর লোকদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)


যিহোবার দেখানো পথে চলার মাধ্যমে অনেক আশীর্বাদ লাভ করা যায়

১৫-১৬. যে-লোকেরা যিহোবার দেখানো পথে চলে, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখেছেন?

১৫ যিহোবার দেখানো পথে চলার মাধ্যমে আজও আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করতে পারি। ভাই অ্যালেক্স এবং বোন রিচেলের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। d তাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখার জন্য তারা কিছু পরামর্শ মেনে চলেছিলেন। (ইব্রীয় ১৩:৫) এই কারণে তারা সংগঠনের নির্মাণ কাজে সাহায্য করতে পেরেছিলেন। বোন রিচেল বলেন: “কখনো কখনো আমরা এমন একটা ছোটো জায়গায় থাকতাম, যেখানে রান্না করার কোনো জায়গাই ছিল না। এ ছাড়া, আমি ছবি তুলতে খুব ভালোবাসতাম, কিন্তু আমাকে আমার ক্যামেরা এবং অন্যান্য জিনিস বিক্রি করতে হয়েছিল। সেইসময় আমার চোখে জল চলে এসেছিল। কিন্তু, অব্রাহামের স্ত্রী সারার মতো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ফেলে আসা জিনিসগুলোর প্রতি নয় বরং এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দেব যে, আমি এখন কী করতে পারছি।” (ইব্রীয় ১১:১৫) এই দম্পতি যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা থেকে তারা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। বোন বলেন, “আমরা খুবই খুশি যে, যিহোবাকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিচ্ছি। সংগঠনের নির্মাণ কাজে সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা একটা আইডিয়া পাই যে, নতুন জগতে জীবন কেমন হবে।” ভাই অ্যালেক্সও এমনটাই অনুভব করেন। তিনি বলেন: “রাজ্যের কাজে নিজেদের পুরোপুরি বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা সত্যিই অনেক আনন্দিত।”

১৬ যিহোবার দেখানো পথে চলার মাধ্যমে আর কোন কোন উপকার লাভ করা যায়? আসুন লক্ষ করি, বোন মারসিয়া কেমন অনুভব করেছিলেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলেছিলেন আর যিহোবার সেবাকে তার কেরিয়ার হিসেবে বাছাই করেছিলেন। (মথি ৬:৩৩; রোমীয় ১২:১১) তিনি বলেন: “আমার কাছে চার বছরের জন্য একটা ইউনিভার্সিটিতে বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল, কিন্তু আমি যিহোবার সেবা করতে চেয়েছিলাম। তাই আমি একটা ছোটো টেকনিক্যাল কোর্স করি, যাতে আমি টাকা রোজগার করতে পারি এবং আরও বেশি করে প্রচার করতে পারি। সেটা আমার জীবনে নেওয়া একটা বড়ো সিদ্ধান্ত ছিল। এখন আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছি এবং আমি অনেক আনন্দিত। আমার এমন একটা কাজ রয়েছে, যেটা আমি নিজের সময়মতো করতে পারি। তাই, আমি কিছুদিন বেথেলেও সেবা করি এবং যিহোবাকে সেবা করার আরও অনেক সুযোগ খুঁজে পাই।”

১৭. যিহোবার দেখানো পথে চলার মাধ্যমে আর কোন কোন উপকার লাভ করা যায়? (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮)

১৭ সময়ে সময়ে যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে আমরা যে-সমস্ত পরামর্শ পাই, সেগুলো মেনে চললে আমরা সুরক্ষা লাভ করতে পারব। যেমন, আমাদের সাবধান করা হয়, আমরা যেন টাকাপয়সার পিছনে না ছুটি এবং এমন কাজ না করি, যেটার কারণে পরে গিয়ে আমরা পাপ করে ফেলতে পারি। এই ধরনের পরামর্শ মেনে চললে আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করি। আমাদের বিবেকও শুদ্ধ থাকে এবং আমরা অযথা কোনো সমস্যায় পড়ি না। (১ তীম. ৬:৯, ১০) এভাবে, আমরা মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার উপাসনা করতে পারি। এর থেকে আমরা যে-খুশি ও শান্তি লাভ করি, তা আর কোনো কিছুতেই পাওয়া যায় না।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

১৮. আপনি কেন যিহোবার দেখানো পথে চলতে চান?

১৮ এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা মহাক্লেশের সময়ে এবং খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে মানুষের মাধ্যমে তাঁর লোকদের সঠিক পথ দেখাবেন। (গীত. ৪৫:১৬) সেইসময়ে আমাদের যে-নির্দেশনাগুলো দেওয়া হবে, সেগুলো যদি আমাদের ভালো না লাগে, তারপরও কি সেগুলো আমরা মেনে চলব? আমরা যদি এখন যিহোবার নির্দেশনাগুলো মেনে চলি, তখনও আমরা এমনটা করতে পারব। তাই আসুন, আমরা চিরকাল যিহোবার দেখানো পথে চলি আর সেই ব্যক্তিদের পরামর্শ মেনে চলি, যাদের তিনি নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন। (যিশা. ৩২:১, ২; ইব্রীয় ১৩:১৭) এমনটা করার মাধ্যমে আমরা দেখাব, যিহোবার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে, তিনি আমাদের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন। তিনি আমাদের অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করেন, যেগুলো তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে এবং তিনি আমাদের গন্তব্য অর্থাৎ নতুন জগতের দিকে নিয়ে যান, যেখানে আমরা চিরকাল বেঁচে থাকব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • কীভাবে যিহোবা ইজরায়েলীয়দের পথ দেখিয়েছিলেন?

  • কীভাবে যিহোবা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের পথ দেখিয়েছিলেন?

  • কীভাবে যিহোবার দেখানো পথে চলার মাধ্যমে অনেক আশীর্বাদ লাভ করা যায়?

গান ৮৮ তোমার পথ আমাকে জানাও

a যিহোবা একজন স্বর্গদূতকে বাছাই করেছিলেন, যিনি “ইস্রায়েলীয় দলের আগে আগে যাচ্ছিলেন,” যাতে তিনি তাদের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যেতে পারেন। আসলে, সেই স্বর্গদূত ছিলেন মীখায়েল। পৃথিবীতে আসার আগে স্বর্গে যিশুর নাম ছিল মীখায়েল।—যাত্রা. ১৪:১৯; ৩২:৩৪.

b পরে এটাকে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় বলা হত। বর্তমানে, এই প্রশিক্ষণ সপ্তাহের মাঝের সভায় দেওয়া হয়।

c ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৮ পৃষ্ঠায় দেওয়া “পরিচালকগোষ্ঠীর ভূমিকা” বক্স দেখুন।

d কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।