জীবনকাহিনি
“এই আমরা, আমাদের পাঠান!”
আপনি কি আপনার পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করার জন্য যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার কথা ভাবছেন, হতে পারে বিদেশে গিয়ে? যদি ভাবছেন, তা হলে ভাই ও বোন বের্গ্যামের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি উপকৃত হতে পারেন।
ভাই জ্যাক ও বোন ম্যারি-লিন ১৯৮৮ সাল থেকে একসঙ্গে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করছেন। বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন বলে তারা গোয়াডেলুপ ও ফ্রেঞ্চ গায়েনায় অনেক কার্যভার গ্রহণ করতে পেরেছেন। বর্তমানে, এই দুটো জায়গা ফ্রান্স শাখার যত্নাধীনে রয়েছে। আসুন, আমরা ভাই জ্যাক ও বোন ম্যারি-লিনকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি।
কী আপনাদের পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?
ম্যারি-লিন: আমি গোয়াডেলুপে বড়ো হয়েছি আর সেখানে আমি মায়ের সঙ্গে প্রায়ই সারা দিন ধরে প্রচার করতাম, যিনি একজন উদ্যোগী প্রচারক ছিলেন। আমি লোকেদের ভালোবাসতাম আর তাই আমি ১৯৮৫ সালে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি।
জ্যাক: আমি পূর্ণসময়ের দাসদের মাঝে বড়ো হয়ে উঠি, যারা পরিচর্যাকে ভালোবাসত। আর আমি স্কুলের ছুটির সময়ে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতাম। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে আমরা অগ্রগামীদের সঙ্গে প্রচার করার জন্য বাসে করে তাদের এলাকায় যেতাম। আমরা সারা দিন ধরে প্রচার করতাম এবং দিনের শেষে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যেতাম। সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনও আমার ভালো লাগে!
১৯৮৮ সালে, ম্যারি-লিনকে বিয়ে করার অল্পসময় পরেই আমি মনে মনে ভাবি, ‘পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমাদের তো কোনো বাধা নেই, তা হলে আমরা দেরি করছি কেন?’ আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। এর এক বছর পর আমরা অগ্রগামী বিদ্যালয়ে যোগ দিই আর আমাদের বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। গোয়াডেলুপে আমাদের একাধিক কার্যভার দেওয়া হয় আর আমরা তা উপভোগ করি। তারপর আমাদের ফ্রেঞ্চ গায়েনায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু বার আপনাদের কার্যভার পরিবর্তিত হয়েছে। কী আপনাদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে?
ম্যারি-লিন: ফ্রেঞ্চ গায়েনা বেথেলের ভাইয়েরা জানত, আমাদের প্রিয় শাস্ত্রপদ হল যিশাইয় ৬:৮ পদ। তাই, তারা আমাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ে প্রায়ই মজা করে বলত, “আপনাদের প্রিয় শাস্ত্রপদটা কী যেন?” এর অর্থ ছিল আমাদের কার্যভার পরিবর্তিত হতে চলেছে। তাই উত্তরে আমরা বলতাম, “এই আমরা, আমাদের পাঠান!”
আমরা আমাদের অতীতের কার্যভারের সঙ্গে বর্তমান কার্যভারের তুলনা করা এড়িয়ে চলি কারণ এর ফলে আমরা আমাদের
নতুন কার্যভারে আনন্দ হারিয়ে ফেলতে পারি। এ ছাড়া, আমরা নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে আমাদের নতুন কার্যভারের এলাকার ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করি।জ্যাক: অতীতে আমাদের কয়েক জন শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু অন্য জায়গায় গিয়ে সেবা করার বিষয়ে আমাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল কারণ তারা চেয়েছিল যেন আমরা তাদের কাছাকাছি থাকি। তবে, গুয়াডেলুপ থেকে চলে যাওয়ার সময়ে একজন ভাই আমাদের মথি ১৩:৩৮ পদে বলা যিশুর কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন: “ক্ষেত্র জগৎ।” তাই, আমাদের কার্যভার যখন পরিবর্তিত হয়, তখন আমরা নিজেদের স্মরণ করিয়ে দিই, আমরা এখনও সেই একই ক্ষেত্রে সেবা করছি, তা যে-প্রান্তেই থাকি না কেন। আর এলাকার লোকেদের কাছে প্রচার করাটাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!
আমরা আমাদের কার্যভারের নতুন এলাকায় গিয়ে দেখি যে, লোকেদের কাছে যা-কিছু রয়েছে, তাতেই তারা খুশি। তাই, আমরা স্থানীয় লোকেদের মতো জীবনযাপন করার চেষ্টা করি। নতুন এলাকার খাবার হয়তো আলাদা হতে পারে, কিন্তু তারা যা খায় এবং পান করে, আমরাও তা খাই এবং পান করি। তবে, এক্ষেত্রে আমরা শরীরের যত্ন নেওয়ার জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা অবলম্বন করি। আমরা আমাদের প্রতিটা কার্যভার সম্বন্ধে ইতিবাচক বিষয় বলার জন্য প্রচেষ্টা করি।
ম্যারি-লিন: আমরা স্থানীয় ভাই-বোনদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখি। আমরা যখন প্রথম বার ফ্রেঞ্চ গায়েনায় গিয়েছিলাম, সেই সময়ের কথা আমার আজও মনে আছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল আর তাই আমরা ভেবেছিলাম, বৃষ্টি থামার পর প্রচার করতে যাব। কিন্তু, একজন বোন আমাকে বলেন, “চলুন, প্রচারে যাই!” আমি অবাক হয়ে বলি, “কীভাবে?” তিনি বলেন, “ছাতা নিন আর সাইকেল তো রয়েছে।” এভাবে আমি এক হাতে ছাতা নিয়ে সাইকেল চালাতে শিখি। আমি যদি এভাবে সাইকেল চালাতে না শিখতাম, তা হলে আমি কখনো বর্ষাকালে প্রচার করতে পারতাম না!
কার্যভারের পরিবর্তনের কারণে আপনারা প্রায় ১৫টা এলাকায় গিয়ে থেকেছেন। অন্য এলাকায় গিয়ে সেবা করার বিষয়ে আপনারা কি ভাই-বোনদের কোনো পরামর্শ দিতে চান?
ম্যারি-লিন: অন্য এলাকায় গিয়ে সেবা করা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসতে পারে। তারপরও, সারা দিনের প্রচারের পর আপনি যখন বাড়ি ফিরে আসেন, তখন যেন আপনি সেখানে স্বচ্ছন্দ বোধ করতে পারেন।
জ্যাক: আমি সাধারণত আমাদের নতুন ঘরে প্রবেশ করার আগে রং করি। শাখা অফিসের ভাইয়েরা যদি জানত যে, আমরা হয়তো বেশি দিনের জন্য সেখানে থাকব না, তা হলে তারা কখনো
কখনো মজা করে বলত, “জ্যাক, এ-বারের মতো ছেড়ে দাও, ঘর রং কোরো না!”আমার স্ত্রী খুব ভালোভাবে প্যাকিং করতে জানে! ও সব কিছু বাক্সগুলোর মধ্যে রেখে সেগুলোর উপর নাম লিখে রাখে যেমন, “বাথরুম,” “বেডরুম,” “কিচেন” ইত্যাদি। তাই, আমরা যখন আমাদের নতুন ঘরে গিয়ে পৌঁছাই, তখন আমরা খুব সহজেই বাক্সগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে পারি। ও প্রতিটা বাক্সে কী কী রয়েছে, সেটার একটা তালিকা বানিয়ে রাখে, যাতে আমরা সহজেই সেগুলো খুঁজে পেতে পারি।
ম্যারি-লিন: আমরা যেহেতু সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে শিখেছি, তাই আমরা দ্রুত আমাদের কাজ শুরু করতে পারি।
আপনাদের “পরিচর্য্যা সম্পন্ন” করার জন্য আপনারা কীভাবে তালিকা তৈরি করেন?—২ তীম ৪:৫.
ম্যারি-লিন: প্রতি সোমবার আমরা বিশ্রাম নিই এবং সভার জন্য প্রস্তুতি নিই। মঙ্গলবার থেকে আবার আমরা পরিচর্যায় বের হই।
জ্যাক: যদিও প্রতি মাসে আমাদের একটা নির্দিষ্ট ঘণ্টা পূরণ করতে হয়, তারপরও আমরা সেটার উপর মনোযোগ দিই না। প্রচার কাজ হল আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘর থেকে বের হওয়ার পর বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা কঠোর প্রচেষ্টা করি।
ম্যারি-লিন: আমরা যখন পিকনিক করার জন্য কোথাও যাই, তখন আমি সঙ্গে করে ট্র্যাক্ট নিয়ে যাই। কোনো কোনো ব্যক্তি নিজে থেকে এগিয়ে এসে আমাদের কাছে প্রকাশনা চায় আর তা এমনকী যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা নিজেদের পরিচয় না দিলেও। তাই, আমরা নিজেদের পোশাক-আশাক ও আচরণের বিষয়ে সতর্ক থাকি। লোকেরা এই বিষয়গুলো লক্ষ করে।
জ্যাক: এ ছাড়া, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি সদয় কাজগুলো করার মাধ্যমে সাক্ষ্য দিয়ে থাকি। আমি আমাদের বাড়ির চারপাশ থেকে কাগজের টুকরোগুলো তুলি, ডাস্টবিন পরিষ্কার করি এবং একধারে গাছের পাতা জড়ো করি। আমাদের প্রতিবেশীরা এগুলো লক্ষ করে এবং কখনো কখনো জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি আমাকে একটা বাইবেল দিতে পারেন?”
আপনারা প্রায়ই দূরবর্তী এলাকায় প্রচার করেছেন। আপনাদের কি সেই ভ্রমণের কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা মনে আছে?
জ্যাক: গায়েনার কোনো কোনো এলাকায় গিয়ে পৌঁছানো কঠিন ছিল। আমাদের প্রায়ই প্রতি সপ্তাহে খারাপ রাস্তা দিয়ে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মাইল) পথ পাড়ি দিতে হতো। আমাজন বনাঞ্চলের সেন্ট এলি নামে একটা গ্রামে আমরা গিয়েছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা আমরা কোনো দিনও ভুলতে পারব না। বেশ কয়েক ঘণ্টা গাড়ি করে খারাপ রাস্তার উপর দিয়ে আর সেইসঙ্গে বোটে করে যাত্রা করার পর আমরা সেখানে পৌঁছাই। সেখানকার বেশিরভাগ লোকই সোনার খনিতে কাজ করত। আমাদের প্রকাশনার প্রতি উপলব্ধি দেখিয়ে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছোটো ছোটো সোনার টুকরো দান করে! সন্ধ্যা বেলায় তাদের আমরা সংগঠনের একটা ভিডিও দেখাই। অনেক স্থানীয় ব্যক্তি তা দেখতে আসে।
ম্যারি-লিন: সম্প্রতি ওকে ক্যাম্পি নামে একটা গ্রামে স্মরণার্থ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বলা হয়। সেখানে যাওয়ার জন্য আমরা অইয়াপ্ক নদীর উপর দিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা বোটে করে যাত্রা করি। এটা খুবই রোমাঞ্চকর এক যাত্রা ছিল!
জ্যাক: নদীর জলের স্রোত যেখানে বেশি থাকে, সেখান দিয়ে যাত্রা করা বিপদজনক হতে পারে। বোট যখন সেই স্রোতের কাছাকাছি এসে পৌঁছায়, তখন সেই দৃশ্য অপরূপ হয়ে থাকে। যিনি বোট চালাচ্ছেন, তাকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। তবে, আমাদের জন্য এই যাত্রা খুবই রোমাঞ্চকর ছিল! যদিও সেই গ্রামে মাত্র ৬ জন সাক্ষি ছিল, তবে সেখানে প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি স্মরণার্থ সভায় যোগ দিয়েছিল, যাদের মধ্যে কয়েক জন আমেরিকার আদিবাসীও ছিল!
ম্যারি-লিন: যুবক-যবতীরা যদি যিহোবার সেবায় আরও বেশি কিছু করে, তা হলে তারাও এই ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপনাকে যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে আর এভাবে আপনার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে। আমরা প্রায়ই লক্ষ করি যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন।
আপনারা তো অনেক ভাষা শিখেছেন। আপনারা কি খুব সহজেই ভাষাগুলো শিখতে পেরেছিলেন?
জ্যাক: একেবারেই না। আমি এই ভাষাগুলো শিখেছি, যাতে আমি এই ভাষাগুলোতে প্রচার করতে এবং মণ্ডলীতে সাহায্য করতে পারি। স্রানানটাঙ্গো * ভাষার মণ্ডলীতে বাইবেল পাঠ করার আগে আমাকে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন পরিচালনা করতে হয়েছিল! আমি ঠিকঠাক পরিচালনা করেছি কি না, সেই বিষয়ে একজন ভাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, “কয়েকটা জায়গায় কিছু কিছু শব্দ আমরা বুঝতে পারিনি, তবে আপনি খুব ভালোভাবেই পরিচালনা করেছেন।” বাচ্চারা এক্ষেত্রে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। কিছু ভুল বলে ফেললে বড়োরা আমাকে সংশোধন না করলেও বাচ্চারা তা করে। আমি অল্পবয়সিদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
ম্যারি-লিন: একটা এলাকায় আমার একাধিক ভাষার বাইবেল ছাত্র ছিল যেমন, ফ্রেঞ্চ, পোর্তুগিজ ও স্রানানটাঙ্গো। একজন বোন
পরামর্শ দেন যেন আমি আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ভাষা দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করাতে শুরু করি আর তারপর যে-ভাষা আমি ভালো জানি, সেই ভাষার ব্যক্তির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করাই। এটা যে-এক বিজ্ঞ পরামর্শ ছিল, তা আমি শীঘ্রই বুঝতে পারি।একদিন আমি দুটো ভাষায় বাইবেল অধ্যয়ন করিয়েছিলাম, প্রথমটা স্রানানটাঙ্গো ভাষায় এবং দ্বিতীয়টা পোর্তুগিজ ভাষায়। আমি যখন দ্বিতীয় ভাষায় বাইবেল অধ্যয়ন করাচ্ছিলাম, তখন আমার সঙ্গে যে-বোন ছিলেন, তিনি আমাকে বলেন, “বোন ম্যারি-লিন, আপনার কথা উনি বুঝতে পারছেন না!” আমি বুঝতে পারি, ব্রাজিলের একজন মহিলার সঙ্গে আমি পোর্তুগিজ ভাষায় কথা না বলে স্রানানটাঙ্গো ভাষায় কথা বলছিলাম!
আপনারা যাদের সঙ্গে সেবা করেছেন, তারা আপনাদের খুব ভালোবাসে। কীভাবে আপনারা ভাই-বোনদের সঙ্গে এত ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছেন?
জ্যাক: হিতোপদেশ ১১:২৫ পদ বলে: “দানশীল ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়।” আমরা অন্যদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিতে কখনো দ্বিধাবোধ করি না। কিংডম হল রক্ষণাবেক্ষণ করার বিষয়ে কেউ কেউ আমাকে বলেছিল, “প্রকাশকদের করতে দিন।” কিন্তু, আমি তাদের বলি: “আমিও একজন প্রকাশক। তাই, কিংডম হলে যদি কোনো কাজ করার থাকে, তা হলে আমি তা করতে চাই।” এটা ঠিক যে, আমাদের নিজেদের জন্য কিছুটা সময় আলাদা করে রাখার প্রয়োজন রয়েছে, তবে আমরা কখনোই অন্যদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে এটাকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দিইনি।
ম্যারি-লিন: আমরা ভাই-বোনদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানোর জন্য প্রচেষ্টা করি। এভাবে আমরা জানতে পারি, কখন তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করার অথবা তাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। একবার তা জানতে পারার পর আমরা নিজেদের কাজে রদবদল করে তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যেতাম। এভাবে প্রয়োজনের সময়ে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে উঠি।
যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার ফলে আপনারা কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করেছেন?
জ্যাক: পূর্ণসময়ের সেবা করার ফলে আমরা জীবনে অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছি। আমরা প্রায়ই যিহোবার সৃষ্টিকে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও আমাদের মনের শান্তি রয়েছে কারণ আমরা জানি, আমরা যেখানেই থাকি না কেন, ঈশ্বরের লোকেদের সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার কারণে যুবক বয়সে আমাকে ফ্রেঞ্চ গায়েনায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আমি কখনো ভাবিনি যে একদিন আমি মিশনারি হিসেবে সেখানে ফিরে যেতে পারব এবং একজন পরিচারক হিসেবে কারাগারে বন্দিদের কাছে প্রচার করতে পারব। কোনো সন্দেহ নেই, যিহোবা উদারভাবে আশীর্বাদ করেন!
ম্যারি-লিন: অন্যদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হই। যিহোবার সেবা করতে পেরে আমি আনন্দিত। এ ছাড়া, এভাবে আমরা বিবাহিত দম্পতি হিসেবে একে অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছি। কখনো কখনো আমরা একইরকম চিন্তা করি। যেমন, ও আমাকে বলে, আমরা কি এমন কোনো দম্পতিকে খাবার খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানাতে পারি, যাদের উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে। প্রায়ই আমি ওকে বলি, “আমিও ঠিক এটাই ভাবছিলাম!”
জ্যাক: সম্প্রতি আমার প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। যদিও ও এই খবর শুনে খুব দুঃখ পেয়েছিল কিন্তু আমি ওকে বলি: “আমি এখনও বুড়ো হয়ে যায়নি, তবে আমি যদি কাল মারাও যাই, আমি এটা জেনে আনন্দিত, আমি আমার জীবন সবচেয়ে ভালো কাজে, যিহোবার সেবায় ব্যয় করেছি।”—আদি. ২৫:৮.
ম্যারি-লিন: যিহোবা আমাদের এমন এমন কার্যভার দিয়েছেন এবং সেগুলো সম্পাদন করার জন্য যেভাবে সাহায্য করেছেন, সেই বিষয়ে আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। আমাদের জীবন যিহোবার আশীর্বাদে পরিপূর্ণ। যিহোবার সংগঠন আমাদের যেখানে গিয়েই সেবা করতে বলুক না কেন, আমরা সেখানে যাব কারণ তিনি যে আমাদের সাহায্য করবেন, সেই বিষয়ে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে!
^ অনু. 32 স্রানানটাঙ্গো হল একটা মিশ্র ভাষা, যেটা ইংরেজি, ডাচ, পোর্তুগিজ ও কিছু আফ্রিকান ভাষা নিয়ে গঠিত। এই ভাষা মূলত দাসেরা তৈরি করেছিল।