অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১২
প্রেম আমাদের ঘৃণা সহ্য করতে সাহায্য করে
“আমি তোমাদের এইসমস্ত বিষয়ে আজ্ঞা দিচ্ছি, যেন তোমরা পরস্পর প্রেম কর। জগৎ যদি তোমাদের ঘৃণা করে, তা হলে মনে রেখো, তোমাদের ঘৃণা করার আগে জগৎ আমাকে ঘৃণা করেছে।”—যোহন ১৫:১৭, ১৮.
গান সংখ্যা ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত
সারাংশ *
১. মথি ২৪:৯ পদ অনুযায়ী জগতের লোকেরা আমাদের ঘৃণা করলে কেন আমরা অবাক হই না?
যিহোবা আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই আর অন্যেরা আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখায়। কিন্তু, কেউ যখন আমাদের ঘৃণা করে, তখন আমরা খুব দুঃখ পাই আর কখনো কখনো ভয়ও পেয়ে যাই। ইউরোপে বসবাসকারী বোন জর্জিনার উদাহরণ একটু বিবেচনা করে দেখুন। তিনি বলেন: “আমি যখন ১৪ বছর বয়সে যিহোবার সেবা করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমার মা খুব রেগে যান এবং আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। মায়ের আচরণের কারণে আমি খুব কষ্ট পেতাম এবং একাকিত্ব বোধ করতাম আর ভাবতাম, আমি হয়তো খুব খারাপ মেয়ে।” * ড্যানিয়েল নামে একজন ভাই লেখেন: “একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ায় সৈন্যরা আমাকে মারধর ও অপমান করে এবং অন্যান্য উপায়ে কষ্ট দেয়। এর ফলে, আমি খুব ভয় পেয়ে যাই আর নিজেকে অসহায় বলে মনে করি।” লোকেরা যখন আমাদের ঘৃণা করে, তখন আমাদের খারাপ লাগে ঠিকই, কিন্তু আমরা অবাক হই না। কেন? কারণ যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, লোকেরা আমাদের সঙ্গে এইরকম আচরণ করবে।—পড়ুন, মথি ২৪:৯.
২-৩. কেন জগৎ যিশুর অনুসারীদের ঘৃণা করে?
২ জগৎ যিশুর অনুসারীদের ঘৃণা করে। কেন? কারণ যিশুর মতো আমরাও ‘জগতের অংশ নই।’ (যোহন ১৫:১৭-১৯) যদিও আমরা মানবসরকারকে সম্মান করি, কিন্তু তাদের উপাসনা করি না। এ ছাড়া, আমরা পতাকা অভিবাদন করা এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া প্রত্যাখ্যান করি কিংবা রাজনীতিতে অংশ নিই না। আমরা শুধুমাত্র যিহোবার উপাসনা করি। আমরা ঈশ্বরের শাসন করার অধিকারকে সমর্থন করি, কিন্তু শয়তান ও তার ‘বংশ’ ঈশ্বরের শাসন করার অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে। (আদি. ৩:১-৫, ১৫) আমরা প্রচার করি, একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই মানবজাতির সমস্ত সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে এবং যারা এই রাজ্যের বিরোধিতা করবে, তাদের শীঘ্র ধ্বংস করা হবে। (দানি. ২:৪৪; প্রকা. ১৯:১৯-২১) এই বার্তাটা মৃদুশীল ব্যক্তিদের জন্য আনন্দের সংবাদ, কিন্তু দুষ্ট ব্যক্তিদের জন্য খারাপ সংবাদ।—গীত. ৩৭:১০, ১১.
যিহূদা ৭) যেহেতু আমরা বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তাই লোকেরা আমাদের ঘৃণা ও উপহাস করে এবং গোঁড়া ব্যক্তি বলে থাকে।—১ পিতর ৪:৩, ৪.
৩ এ ছাড়া, ঈশ্বরের উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করায় জগৎ আমাদের ঘৃণা করে। ঈশ্বরের নৈতিক মান আর জগতের নৈতিক মানের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা সদোম ও ঘমোরা নগরকে যে-জঘন্য অনৈতিক কাজের জন্য ধ্বংস করেছিলেন, সেগুলোই আজ লোকেরা খোলাখুলিভাবে করে থাকে। (৪. লোকদের ঘৃণা সহ্য করার জন্য আমাদের মধ্যে কোন কোন গুণ থাকতে হবে?
৪ লোকেরা যখন আমাদের ঘৃণা করে এবং অপমান করে, তখন আমরা কী করতে পারি? আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। একটা ঢালের মতো বিশ্বাসও ‘শয়তানের সমস্ত জ্বলন্ত তির নিভিয়ে ফেলতে পারে।’ (ইফি. ৬:১৬) কিন্তু, বিশ্বাসের পাশাপাশি আমাদের মধ্যে প্রেমও থাকতে হবে। কেন? কারণ প্রেম “দ্রুত রেগে ওঠে না।” এটা যেকোনো পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে না দিতে এবং সমস্ত কিছু সহ্য করতে সাহায্য করে। (১ করি. ১৩:৪-৭, ১৩) এখন আসুন আমরা দেখি, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা, ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা আর এমনকী শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা কীভাবে আমাদের ঘৃণা সহ্য করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আমাদের ঘৃণা সহ্য করতে সাহায্য করে
৫. যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকায় যিশু কী করতে পেরেছিলেন?
৫ যিশু মারা যাওয়ার আগের রাতে তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “আমি পিতাকে ভালোবাসি, তাই পিতা আমাকে যেমন আজ্ঞা দিয়েছেন, আমি সেইমতো কাজ করছি।” (যোহন ১৪:৩১) যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকায় যিশু বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করতে পেরেছিলেন। একইভাবে, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকলে আমরাও জগতের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করতে পারব।
৬. রোমীয় ৫:৩-৫ পদ অনুযায়ী জগতের কাছ থেকে ঘৃণার মুখোমুখি হলে যিহোবার দাসেরা কেমন অনুভব করে?
৬ এই বিষয়টা লক্ষ করা গিয়েছে যে, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে তাঁর দাসেরা তাড়না সহ্য করতে পেরেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যিহুদি উচ্চ আদালত প্রেরিতদের প্রচার কাজ বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা প্রেরিতদের “মানুষের প্রতি নয়, বরং ঈশ্বরের প্রতিই বাধ্য” থাকতে সাহায্য করেছিল। (প্রেরিত ৫:২৯; ১ যোহন ৫:৩) বর্তমানেও, যিহোবার প্রতি অটুট ভালোবাসা থাকার কারণে আমাদের অনেক ভাই-বোন জগতের নিষ্ঠুর এবং ক্ষমতাশালী সরকারগুলোর কাছ থেকে আসা তাড়না সহ্য করছে। জগতের কাছ থেকে ঘৃণার মুখোমুখি হলে আমরা নিরুৎসাহিত হই না। এর পরিবর্তে, আমরা আনন্দ করি।—প্রেরিত ৫:৪১; পড়ুন, রোমীয় ৫:৩-৫.
৭. পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আমার যখন বিরোধিতার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের কী করা উচিত?
৭ আমরা যখন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হই, তখন সেটা সহ্য করা আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হতে পারে। সত্যের প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখে তারা মনে করতে পারে যে, কেউ আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে কিংবা আমাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। (তুলনা করুন, মার্ক ৩:২১) তারা আমাদের বাধা দেওয়ার জন্য হয়তো শারীরিক বা আবেগগতভাবে নির্যাতন করতে পারে। আমাদের সঙ্গে যখন এইরকম ঘটনা ঘটে, তখন আমরা অবাক হই না কারণ যিশু বলেছিলেন: “একজন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যেরাই তার শত্রু হবে।” (মথি ১০:৩৬) এটা ঠিক যে, তারা আমাদের ঘৃণা করে কিংবা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে, আমাদের কখনোই তাদের ঘৃণা করা অথবা তাদের শত্রু হিসেবে দেখা উচিত নয়। এর বিপরীতে, যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা যত বৃদ্ধি পাবে, ততই লোকদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। (মথি ২২:৩৭-৩৯) কিন্তু, তাদের খুশি করার জন্য আমরা যেন কখনো বাইবেলের আইন ও নীতির বিরুদ্ধে আপোশ না করি।
৮-৯. কীভাবে বোন জর্জিনা নিজের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন?
৮ আগে উল্লেখিত বোন জর্জিনার কথা বিবেচনা করে দেখুন, যিনি তার মায়ের কাছ থেকে চরম বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন। তিনি বলেন: “আমি ও আমার মা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করি। ছয় মাস পর, আমি যখন সভায় যেতে চাই, তখন মা বিরোধিতা করেন। পরে আমি জানতে পারি, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মায়ের যোগাযোগ
রয়েছে। তাই, মা আমাকে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের যুক্তিগুলো ব্যবহার করেন। এ ছাড়া, মা আমাকে অপমান করতেন, চুলের মুঠি ধরে মারধর করতেন এবং গলা টিপে ধরতেন আর আমার সাহিত্যাদি ছুড়ে ফেলে দিতেন। আমি ১৫ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিই। তখনও পর্যন্ত মা বিরোধিতা করা বন্ধ করেননি। মা আমাকে এমন এক হোমে রাখেন, যেখানে ড্রাগস নেয় এবং অপরাধমূলক কাজ করে এমন কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের রাখা হত, যাতে তাদের সংশোধন করা যায়। সত্যিই, আমাদের কাছের কেউ যখন আমাদের সঙ্গে এইরকম আচরণ করে, তখন আমাদের খুবই খারাপ লাগে।”৯ কীভাবে বোন জর্জিনা নিজের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন? তিনি বলেন: “মা যখন প্রথম বার আমার বিরোধিতা করেন, তখন ইতিমধ্যেই আমি পুরো বাইবেল পড়ে শেষ করে ফেলেছি। আমি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হই যে, এটাই হল সত্য এবং যিহোবার সঙ্গে আমার এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি যিহোবার কাছে প্রায়ই প্রার্থনা করতাম আর তিনি তা শুনতেন। আমি যখন সেই কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে হোমে ছিলাম, তখন একজন বোন আমাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান আর আমরা একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করি। সেই সময় মণ্ডলীর অন্যান্য ভাই-বোন আমাকে উৎসাহিত করে এবং বিশ্বাসে স্থির থাকতে সাহায্য করে। আর আমি ধীরে ধীরে তাদের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠি। আমি এই বিষয় নিশ্চিত ছিলাম যে, যিহোবা আমাদের বিরোধীদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।”
১০. কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?
১০ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, কোনো কিছুই “আমাদের প্রভু খ্রিস্ট যিশুর মাধ্যমে প্রকাশিত ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।” (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) এমনকী আমাদের কিছু সময়ের জন্য কষ্ট ভোগ করতে হতে পারে, কিন্তু যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন, সান্ত্বনা প্রদান করবেন এবং শক্তিশালী করবেন। আর জর্জিনার অভিজ্ঞতা দেখায় যে, যিহোবা মণ্ডলীর ভাই-বোনদের মাধ্যমেও আমাদের সাহায্য করে থাকেন।
ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা আমাদের ঘৃণা সহ্য করতে সাহায্য করে
১১. যোহন ১৫:১২, ১৩ পদ অনুযায়ী যিশুর শিষ্যদের মধ্যে যদি প্রেম থাকে, তা হলে কীভাবে সেটা তাদের সাহায্য করতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।
১১ যিশু মারা যাওয়ার আগের রাতে তাঁর শিষ্যদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, তারা যেন পরস্পরকে প্রেম করে। (পড়ুন, যোহন ১৫:১২, ১৩.) তিনি জানতেন যে, তাদের মধ্যে যদি আত্মত্যাগমূলক প্রেম এবং একতা থাকে, তা হলে তারা জগতের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করতে পারবে। উদাহরণ স্বরূপ, থিষলনীকী মণ্ডলীর কথা বিবেচনা করে দেখুন। থিষলনীকীতে মণ্ডলী গঠিত হওয়ার সময় থেকে সেখানকার ভাই-বোনেরা বিরোধিতার মুখোমুখি হয়। তা সত্ত্বেও, তারা পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিল এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। আর এভাবে তারা সবার জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিল। (১ থিষল. ১:৩, ৬, ৭) তবুও, পৌল তাদের উৎসাহিত করেছিলেন, তারা যেন “আরও বেশি করে প্রেম” দেখিয়ে চলে। (১ থিষল. ৪:৯, ১০) পৌল জানতেন, তাদের মধ্যে যদি প্রেম থাকে, তা হলে তারা হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দিতে এবং দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারবে। (১ থিষল. ৫:১৪) থিষলনীকী মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা পৌলের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিল। এইজন্য এক বছর পর, পৌল তার দ্বিতীয় চিঠিতে লিখেছিলেন: “একে অন্যের প্রতি তোমাদের সকলের প্রেম আরও গভীর হচ্ছে।” (২ থিষল. ১:৩-৫) একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানোর ফলে তারা যেকোনো তাড়না এবং ঘৃণা সহ্য করতে পেরেছিল।
১২. কীভাবে যুদ্ধের সময় ভাই-বোনেরা একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিল?
১২ এখন আসুন, আগে উল্লেখিত ড্যানিয়েলের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি। তিনি ও তার স্ত্রী যে-দেশে বাস করতেন, সেখানে যুদ্ধ শুরু হয় আর পরবর্তী সময়ে তাদের শহরেও যুদ্ধ বেঁধে যায়। এই পরিস্থিতির মধ্যেও তারা নিয়মিতভাবে সভায় যেতেন ও প্রচারে অংশ নিতেন। আর তাদের কাছে যা খাবার ছিল, তারা অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে তা ভাগ করে নিতেন। একদিন, কিছু সৈন্য তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। ড্যানিয়েল বলেন, “তারা আমাকে যিহোবার সেবা বন্ধ করতে বলে। আমি তাদের না বলায় তারা আমাকে মারধর করে আর ভয় দেখানোর জন্য আমার মাথার উপর দিয়ে গুলি চালায়। শুধু তা-ই নয়, তারা আমাকে হুমকি দেয়, পরের বার এলে তারা আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে। ভাই-বোনেরা যখন এই বিষয়টা জানতে পারে, তখন তারা সঙ্গেসঙ্গে ট্রেনে করে আমাদের অন্য শহরে পাঠিয়ে দেয়। আর আমরা যখন অন্য শহরে পৌঁছাই, তখন সেখানকার ভাই-বোনেরা আমাদের অনেক যত্ন নেয় এবং আমাদের প্রতি প্রেম দেখায়। যেমন, তারা আমাদের খাবার দেয় এবং ঘর ও চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। সেই ভাই-বোনদের দেখানো প্রেমের কারণে আমি এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পেরেছিলাম, যাদের যুদ্ধের সময় নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল।” সত্যিই, আমাদের মধ্যে যদি এইরকম প্রেম থাকে, তা হলে জগতের কাছ থেকে আসা ঘৃণা আমরা সহ্য করতে পারব।
শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা আমাদের ঘৃণা সহ্য করতে সাহায্য করে
১৩. লোকেরা যখন আমাদের ঘৃণা করে, তখন পবিত্র শক্তি কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?
১৩ যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন, তারা যেন শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা দেখায়। (মথি ৫:৪৪, ৪৫) এটা ঠিক যে, এমনটা করা সহজ নয়। কিন্তু, কী আমাদের তা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি। এটা প্রেম, ধৈর্য, দয়া, মঙ্গলভাব, মৃদুতা এবং আত্মসংযমের মতো গুণাবলি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে। (গালা. ৫:২২, ২৩) আমাদের মধ্যে যদি এই গুণগুলো থাকে, তা হলে আমরা জগতের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করতে পারব। আর এতে অনেক উত্তম ফলাফল দেখা গিয়েছে। যেমন, অনেক বিরোধী তাদের মন পরিবর্তন করেছে কারণ তারা তাদের বিশ্বাসী স্বামী, স্ত্রী, সন্তান অথবা প্রতিবেশীর মধ্যে এই গুণগুলো লক্ষ করেছে। শুধু তা-ই নয়, অনেক বিরোধী এমনকী আমাদের প্রিয় ভাই ও বোন হয়ে উঠেছে। শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো আপনার পক্ষে যদি কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে পবিত্র শক্তির জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (লূক ১১:১৩) আর এই বিষয় পুরোপুরি নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা আমাদের যা-কিছু করতে বলেন, সেগুলো সবসময় আমাদেরই উপকৃত করে।—হিতো. ৩:৫-৭.
১৪-১৫. রোমীয় ১২:১৭-২১ পদের পরামর্শ কাজে লাগানোর ফলে বোন ইয়াসমিন কীভাবে তার স্বামীর প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন?
১৪ বোন ইয়াসমিনের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। তিনি যখন একজন যিহোবার সাক্ষি হন, তখন তার স্বামীর মনে হয়েছিল, তার স্ত্রী ভুল পথে চলে গিয়েছে। তাই, তিনি বোনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে বোন যিহোবার উপাসনা করা বন্ধ করে দেন। তিনি বোনকে প্রায়ই অপমান করতেন। বোনকে বাধা দেওয়ার জন্য তিনি আত্মীয়দের বাড়িতে ডাকেন আর তারা বোনের উপর পরিবার ভেঙে ফেলার অভিযোগ আনে। এ ছাড়া, তিনি একজন পাদরি ও একজন ওঝাকে দিয়ে বোনকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। এক বার বোনের স্বামী মণ্ডলীর সভা চলাকালীন ভিতরে ঢুকে প্রাচীনদের অপমান করেন এবং খারাপভাবে কথা বলেন। এইরকম নির্দয় আচরণের কারণে বোন ইয়াসমিন প্রায়ই কান্নাকাটি করতেন।
১৫ মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা ইয়াসমিনকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিল এবং সাহস জুগিয়েছিল। আর প্রাচীনেরা তাকে রোমীয় ১২:১৭-২১ পদে দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (পড়ুন।) ইয়াসমিন বলেন, ‘এই পরামর্শ মেনে চলা সহজ ছিল না, কিন্তু আমি সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। ও যখন ইচ্ছে করে রান্নাঘর নোংরা করত, তখন আমি সেটা পরিষ্কার করতাম। ও যখন আমাকে অপমান করত, তখন আমি শান্তি বজায় রাখতাম আর প্রেমের সঙ্গে কথা বলতাম। ও যখন অসুস্থ হত, তখন আমি খুব ভালোভাবে ওর যত্ন নিতাম।’
১৬-১৭. বোন ইয়াসমিনের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?
১৬ ইয়াসমিন তার স্বামীর প্রতি ক্রমাগত প্রেম দেখানোর ফলে অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। তিনি বলেন: “এখন আমার স্বামী আমার উপর আস্থা রাখে আর ও বিশ্বাস করে, আমি সবসময় সত্যি কথা বলি। বাড়িতে যখন ধর্ম নিয়ে আলোচনা হয়, তখন ও শান্তভাবে সেটা শোনে আর নিজেই আমাকে সভায় যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। এখন আমাদের মধ্যে শান্তি ও প্রেম রয়েছে। আমি আশা করি, একদিন ও সত্য গ্রহণ করবে আর আমরা একসঙ্গে যিহোবার উপাসনা করতে পারব।”
১৭ ইয়াসমিনের উদাহরণ দেখায় যে, প্রেম “কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেয় না, . . . সবসময় প্রত্যাশা রাখে, সমস্ত কিছু সহ্য করে।” (১ করি. ১৩:৪, ৭) লোকেরা যখন ঘৃণা করে, তখন আমাদের কষ্ট লাগে ঠিকই, কিন্তু প্রেমের দ্বারা লোকদের মন জয় করা সম্ভব। কারণ ঘৃণার চেয়ে প্রেমের অনেক শক্তি রয়েছে। আমরা যখন লোকদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলি, তখন যিহোবা খুশি হন। কিন্তু, বিরোধীরা যদি আমাদের ঘৃণা করেই চলে, তবুও আমরা সুখী হতে পারি। আসুন দেখি কীভাবে।
ঘৃণা করা হলেও সুখী হতে পারি
১৮. লোকেরা আমাদের ঘৃণা করলেও কেন আমরা সুখী হতে পারি?
১৮ যিশু বলেছিলেন: “সুখী তোমরা, . . . যখন লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করে।” (লূক ৬:২২) আমাদের বিশ্বাসের কারণে তাড়না করা হলে আমাদের ভালো লাগে না আর আমরা চাই না, কেউ আমাদের ঘৃণা করুক। তাহলে, কেন যিশু বলেছিলেন, লোকেরা আমাদের ঘৃণা করলে আমরা সুখী হতে পারি? তিনটে কারণ বিবেচনা করুন। প্রথমত, আমরা যখন ঘৃণা সহ্য করে যিহোবার সেবা চালিয়ে যাই, তখন তিনি খুশি হন। (১ পিতর ৪:১৩, ১৪) দ্বিতীয়ত, আমাদের বিশ্বাস পরিশোধিত হয় এবং আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠি। (১ পিতর ১:৭) আর তৃতীয়ত, আমরা এক মূল্যবান উপহার অর্থাৎ অনন্তজীবন লাভ করতে পারব।—রোমীয় ২:৬, ৭.
১৯. প্রেরিতদের মারধর করার পরও, কেন তারা আনন্দ করেছিলেন?
১৯ যিশুর পুনরুত্থানের কিছু সময় পর, প্রেরিতরা সেই সুখ অনুভব করেছিলেন, যেটার বিষয় যিশু বলেছিলেন। তাদের মারধর করার এবং প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়ার পরও তারা আনন্দ করেছিলেন। কেন? “কারণ যিশুর নামে অপমানিত হওয়ার জন্য ঈশ্বর তাদের যোগ্য বলে মনে করেছিলেন।” (প্রেরিত ৫:৪০-৪২) তারা প্রভুকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, শত্রুরা তাদের ঘৃণা করলেও তারা ভয় পেতেন না। তারা সুসমাচার প্রচার করা “বন্ধ” না করার মাধ্যমে প্রেম দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে, ভাই-বোনদের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সেবা করে চলেছে। তারা যে-কাজ করছে এবং তাঁর নামের প্রতি যে-প্রেম দেখাচ্ছে, তা যিহোবা কখনো ভুলে যাবেন না।—ইব্রীয় ৬:১০.
২০. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২০ শয়তানের জগৎ যতদিন থাকবে, ততদিন লোকেরা আমাদের ঘৃণা করেই যাবে। (যোহন ১৫:১৯) কিন্তু, আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, যিহোবা কীভাবে তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের “শক্তিশালী করবেন এবং . . . রক্ষা করবেন।” (২ থিষল. ৩:৩) তাই আসুন, আমরা যিহোবার প্রতি, ভাই-বোনদের প্রতি আর এমনকী আমাদের শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে চলি। এই পরামর্শ কাজে লাগালে আমাদের সবার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে, মণ্ডলীর মধ্যে একতা থাকবে এবং আমরা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসব আর সেইসঙ্গে প্রমাণ করব যে, ঘৃণার চেয়ে প্রেমের শক্তি অনেক বেশি।
গান সংখ্যা ৩ “ঈশ্বর প্রেম”
^ অনু. 5 এই প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, কীভাবে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা, ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা আর এমনকী শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা আমাদের জগতের কাছ থেকে আসা ঘৃণা সহ্য করতে এবং যিহোবার সেবা চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, আমরা এও দেখব, কেন যিশু এই কথা বলেছিলেন, আমাদের ঘৃণা করা হলে আমরা সুখী হতে পারি।
^ অনু. 1 নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ অনু. 58 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন সৈন্য ভাই ড্যানিয়েলকে বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছেন, এরপর ভাই-বোনেরা ড্যানিয়েল ও তার স্ত্রীকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর সেই শহরে থাকা এক দম্পতি তাদের স্বাগত জানাচ্ছে এবং সাহায্য করছে।
^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বোন ইয়াসমিনকে তার স্বামী বিরোধিতা করছে, কিন্তু প্রাচীনেরা বাইবেল থেকে বোনকে উত্তম পরামর্শ দিচ্ছেন। বোন সেই পরামর্শ কাজে লাগানোর এবং একজন ভালো স্ত্রী হওয়ার প্রচেষ্টা করছেন। তার স্বামী অসুস্থ হওয়ায় তিনি খুব ভালোভাবে যত্ন নিচ্ছেন।