সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৩

সত্য উপাসনা আপনার আনন্দ বৃদ্ধি করবে

সত্য উপাসনা আপনার আনন্দ বৃদ্ধি করবে

“হে আমাদের ঈশ্বর যিহোবা, তুমিই গৌরব ও সমাদর ও ক্ষমতা পাওয়ার যোগ্য।”—প্রকা. ৪:১১.

গান ২৬ ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করো!

সারাংশ *

১-২. কী আমাদের উপাসনাকে ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে?

 আপনি যখন “উপাসনা” শব্দটা শোনেন, তখন আপনার মনে কোন ছবি ভেসে ওঠে? আপনি হয়তো এমন একজন নম্র ভাইয়ের কথা কল্পনা করেন, যিনি রাতে শুতে যাওয়ার আগে তার বিছানার পাশে বসে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করছেন। অথবা আপনি হয়তো এমন এক সুখী পরিবারের কথা চিন্তা করেন, যারা পুরোপুরি বাইবেল অধ্যয়নে ডুবে রয়েছে।

এই দুটো ক্ষেত্রেই আপনি যাদের সম্বন্ধে কল্পনা করছেন, তারা উপাসনা করছেন। কিন্তু, যিহোবা কি তাদের উপাসনা গ্রহণ করবেন? অবশ্যই তিনি তা গ্রহণ করবেন, যদি সেটা তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে করা হয়ে থাকে এবং প্রেম ও সম্মানের সঙ্গে তা করা হয়ে থাকে। আমরা যিহোবাকে খুবই ভালোবাসি। আমরা জানি, তিনিই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য আর আমরা সবচেয়ে ভালো উপায়ে তাঁর উপাসনা করতে চাই।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, প্রাচীনকালে যিহোবা কোন উপাসনাপদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন আর বর্তমানে উপাসনার এমন কোন আটটা পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো যিহোবা গ্রহণ করে থাকেন। এটা করার সময় আমরা চিন্তা করতে পারি যে, কীভাবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের উপাসনা করার গুণগত মানকে উন্নত করতে পারি? এ ছাড়া, কেন সত্য উপাসনা আমাদের আনন্দিত করে, সেই বিষয়ে আমরা কয়েকটা কারণ পুনর্বিবেচনা করে দেখব।

প্রাচীনকালে যিহোবা যে-উপাসনা গ্রহণ করেছিলেন

৪. কীভাবে প্রাচীনকালে যিহোবার উপাসকেরা তাঁর প্রতি তাদের সম্মান ও ভালোবাসা দেখিয়েছিল?

প্রাচীনকালের কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তি, যেমন হেবল, নোহ, অব্রাহাম ও ইয়োব যিহোবার প্রতি তাদের সম্মান ও ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। কীভাবে? তাদের বাধ্যতা, বিশ্বাস ও ত্যাগের মাধ্যমে। যদিও বাইবেল তাদের উপাসনা করার পদ্ধতি সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানায় না, কিন্তু আমরা জানতে পারি যে, তারা যিহোবার গৌরব করার জন্য তাদের সর্বোত্তমটা করেছিলেন এবং যিহোবা তাদের উপাসনা গ্রহণ করেছিলেন। এরপর, যিহোবা অব্রাহামের বংশধরদের মোশির ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। এই ব্যবস্থায় যিহোবাকে উপাসনা করার সেই পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশনাগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেগুলো পালন করার দ্বারা একজন ব্যক্তির উপাসনা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারত।

৫. যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর সত্য উপাসনায় কোন পরিবর্তন করা হয়েছিল?

যিহোবার উপাসনা করার বিষয়ে ইজরায়েলজাতিকে মোশির ব্যবস্থায় যে-পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর থেকে পালন করা হবে বলে যিহোবা আর আশা করেননি। (রোমীয় ১০:৪) তখন থেকে খ্রিস্টানদের একটা নতুন আইন অনুসরণ করতে হত আর সেটা ছিল “খ্রিস্টের আইন।” (গালা. ৬:২) তাদের সেই ‘আইনের’ বাধ্য থাকার জন্য সেই আইন মুখস্থ করার অথবা কী করতে হবে আর কী করতে হবে না, তার একটা লম্বা তালিকা অনুসরণ করার দরকার ছিল না। এর পরিবর্তে, তাদের যিশুর উদাহরণ ও শিক্ষাগুলো অনুসরণ করতে হত। আজকেও খ্রিস্টানরা যিহোবাকে খুশি করার জন্য এবং “সতেজতা লাভ” করার জন্য তাদের সর্বোত্তমটা করে থাকে।—মথি ১১:২৯.

৬. কীভাবে এই প্রবন্ধ আমাদের উপকৃত করতে পারে?

এই প্রবন্ধে বলা আমাদের উপাসনার প্রতিটা ক্ষেত্র বিবেচনা করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই ক্ষেত্রে আমি কোন উন্নতি করেছি?’ আপনি হয়তো এও জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘আমি কি আমার উপাসনার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে পারি?’ ইতিমধ্যেই আপনি যে-উন্নতি করেছেন, সেগুলোর জন্য আপনি হয়তো খুশি হতে পারেন কিন্তু এখনও যে-জায়গায়গুলোতে উন্নতি করার প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আপনি প্রার্থনাপূর্বক চিন্তা করতে পারেন।

যিহোবার উপাসনায় কী কী অন্তর্ভুক্ত?

৭. হৃদয় থেকে করা প্রার্থনাকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। শাস্ত্র আমাদের প্রার্থনাকে উত্তমরূপে প্রস্তুত করা সুগন্ধি ধূপের সঙ্গে তুলনা করে, যা আবাসে ব্যবহার করা হত এবং পরবর্তী সময়ে মন্দিরে ব্যবহার করা হত। (গীত. ১৪১:২) সেই ধূপ থেকে সুগন্ধ বের হত, যা ঈশ্বরকে খুশি করত। একইভাবে, হৃদয় থেকে প্রার্থনা করার সময় আমরা যদি খুব সাধারণ শব্দ ব্যবহার করি, তা হলেও যিহোবা তাতে ‘সন্তুষ্ট’ হন। (হিতো. ১৫:৮; দ্বিতীয়. ৩৩:১০) আমরা যখন আমাদের প্রার্থনায় যিহোবার প্রতি প্রেম ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তখন তা শুনে যিহোবা খুবই খুশি হন। তিনি চান যেন আমরা তাঁকে আমাদের উদ্‌বেগ, আমাদের আশা এবং আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো সম্বন্ধে জানাই। তাই, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার আগে তাঁকে কী কী বলবেন, সেটা নিয়ে চিন্তা করা ভালো হবে। এভাবে, আপনি আপনার স্বর্গীয় পিতার উদ্দেশে আপনার সবচেয়ে ভালো “ধূপ” জ্বালাতে পারবেন।

৮. ঈশ্বরের প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোন কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে?

যিহোবার প্রশংসা করার মাধ্যমে আমরা তাঁর উপাসনা করি। (গীত. ৩৪:১) তাঁর চমৎকার গুণাবলি ও কাজগুলো আমরা যে কতটা উপলব্ধি করি, সেই বিষয়ে অন্যদের বলার দ্বারা আমরা তাঁর প্রশংসা করি। আমরা যদি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমাদের কাছে তাঁর বিষয়ে বলার মতো অনেক কিছু থাকবে। যিহোবা যে কত ভালো এবং আমাদের জন্য কত কিছু করেছেন, সেটা নিয়ে ধ্যান করার জন্য আমরা যদি সময় বের করে নিই, তা হলে আমরা কখনো তাঁর প্রশংসা করা বন্ধ করব না। প্রচার কাজের মাধ্যমে আমরা “ঈশ্বরের কাছে প্রশংসাবলি অর্থাৎ আমাদের ওষ্ঠাধরের ফল” উৎসর্গ করার এক বিশেষ সুযোগ পাই। (ইব্রীয় ১৩:১৫) প্রার্থনা করার আগে যেমন আমরা প্রার্থনায় কী বলব, সেই বিষয়ে সতর্কভাবে চিন্তা করি, ঠিক তেমনই যখন আমরা প্রচার করি, তখন আমরা লোকদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলব, সেই সম্বন্ধেও সতর্কভাবে চিন্তা করি। আমরা সর্বোত্তম উপায়ে আমাদের “প্রশংসাবলি” উৎসর্গ করতে চাই। আমরা যখন অন্যদের সত্য সম্বন্ধে জানাই, তখন আমরা হৃদয় থেকে কথা বলি।

৯. প্রাচীন ইজরায়েলীয়দের মতো কীভাবে আমরা সভায় একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হই? আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলুন।

সভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। প্রাচীন ইজরায়েলীয়দের বলা হয়েছিল যে, “প্রত্যেক পুরুষ যেন বছরে তিন বার তোমার ঈশ্বর যিহোবার সামনে উপস্থিত হয়। . . . তাদের সেই জায়গায় উপস্থিত হতে হবে যেটা ঈশ্বর বেছে নেবেন।” (দ্বিতীয়. ১৬:১৬) তাদের নিজেদের বাড়ি ও শস্যখেত ছেড়ে আসতে হত। কিন্তু, যিহোবা তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: ‘তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইবার জন্য গমন করিলে তোমার ভূমিতে কেহ লোভ করিবে না।’ (যাত্রা. ৩৪:২৪) যিহোবার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে সেই ঈশ্বরভয়শীল ইজরায়েলীয়রা বার্ষিক উৎসব পালন করার জন্য একত্রিত হত। আর সেইজন্য তারা বিভিন্ন দিক দিয়ে উপকৃত হত। যেমন, তারা ঈশ্বরের আইন সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানতে পারত। যিহোবা যে তাদের জন্য কতটা চিন্তা করেন, তা তারা বুঝতে পারত। আর তারা অন্যদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেত, যারা যিহোবাকে ভালোবাসত। (দ্বিতীয়. ১৬:১৫) একইভাবে, আমরা যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করি, তখন আমরাও বিভিন্ন উপকার লাভ করি। আর চিন্তা করুন, যিহোবা সেইসময়ে কতই-না খুশি হন, যখন আমরা সভার জন্য অল্প কথায় অর্থপূর্ণ মন্তব্যগুলো তৈরি করি।

১০. কীভাবে গান গাওয়া আমাদের উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ?

১০ গান গাওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। (গীত. ২৮:৭) ইজরায়েলীয়রা গান গাওয়াকে তাদের উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখত। রাজা দায়ূদ ২৮৮ জন লেবীয়দের মন্দিরে গান গাওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। (১ বংশা. ২৫:১, ৬-৮) বর্তমানে, আমরা যখন যিহোবার প্রশংসার্থে গান গাই, তখন আমরা তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি। তবে, আমরা কত ভালোভাবে গান গাইতে পারি, এটা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এই তুলনাটা বিবেচনা করুন: আমরা কথা বলার ক্ষেত্রে “বিভিন্ন সময় ভুল করে থাকি।” কিন্তু, তাই বলে কি আমরা মণ্ডলীতে ও প্রচারে কথা বলা বন্ধ করে দিই? (যাকোব ৩:২) একইভাবে, গান গাওয়ার সময় আমরা যে-ভুলগুলো করে থাকি, সেগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত নয় কারণ সেটা আমাদের যিহোবার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে।

১১. গীতসংহিতা ৪৮:১৩ পদে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, কেন আমাদের পরিবারগতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করার এক তালিকা থাকা উচিত?

১১ ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন করা এবং যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের সন্তানদের শেখানোর মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। বিশ্রামবার ইজরায়েলীয়েদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম বন্ধ রেখে যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উপর মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। (যাত্রা. ৩১:১৬, ১৭) তাদের মধ্যে যারা বিশ্বস্ত ছিল, তারা সেই দিনে যিহোবা ও তাঁর করা ভালো কাজগুলো সম্বন্ধে তাদের সন্তানদের শেখাত। বর্তমানে, আমাদেরও ঈশ্বরের বাক্য পড়া এবং সেটি নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় বের করা উচিত। এটা আমাদের উপাসনার একটা অংশ আর এটা যিহোবার সঙ্গে আমাদের আরও কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। (গীত. ৭৩:২৮) আর আমরা যখন পরিবারগতভাবে অধ্যয়ন করি, তখন আমরা এক নতুন প্রজন্মকে অর্থাৎ আমাদের সন্তানদের আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৮:১৩.

১২. যারা আবাসের আসবাবপত্র তৈরি করেছিল, তাদের কাজকে যিহোবা যেভাবে দেখেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখি?

১২ উপাসনাস্থল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। বাইবেল বলে যে, আবাস ও এটার আসবাবপত্র তৈরি করা এক ‘পবিত্র কর্ম্ম’ ছিল। (যাত্রা. ৩৬:১,) বর্তমানেও, যিহোবা কিংডম হল এবং তাঁর উপাসনায় ব্যবহৃত বিল্ডিংগুলো নির্মাণ করার কাজকে এক পবিত্র কাজ হিসেবে দেখে থাকেন। কিছু ভাই-বোনেরা এই কাজের জন্য অনেক সময় ব্যয় করে থাকে। আমরা কি উপলব্ধি করি, এই কাজ আসলে রাজ্যের কাজকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এক বড়ো অবদান রাখে? তারা প্রচার কাজে অংশ নিয়ে থাকে, এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ অগ্রগামী হিসেবেও কাজ করতে চায়। এই পরিশ্রমী ভাই-বোনদের যোগ্যতা অনুসারে অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করার দ্বারা মণ্ডলীর প্রাচীনেরা নির্মাণ কাজে সমর্থন করে থাকেন। নির্মাণ কাজে আমাদের দক্ষতা থাকুক অথবা না-ই থাকুক, আমরা সবাই এই বিল্ডিংগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ভালো অবস্থায় রাখার মাধ্যমে নির্মাণ কাজে সাহায্য করতে পারি।

১৩. রাজ্যের কাজকে সমর্থন করার জন্য আমরা যে-দান করে থাকি, সেটাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১৩ দান দিয়ে রাজ্যের কাজকে সমর্থন করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। উৎসব পালন করার সময় ইজরায়েলীয়দের যিহোবার জন্য উপহার নিয়ে আসতে হত। (দ্বিতীয়. ১৬:১৬) প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের কিছু বস্তুগত বিষয় উপহার দিতে হত। এভাবে তারা দেখাতে পারত, যিহোবা তাদের জন্য যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলোর জন্য তারা কৃতজ্ঞ রয়েছে। যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করছেন, সেগুলোর জন্য কীভাবে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও উপলব্ধিবোধ প্রকাশ করতে পারি? একটা উপায় হল আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্থানীয় মণ্ডলী ও বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য আর্থিকভাবে সমর্থন করে। প্রেরিত পৌল বিষয়টাকে এভাবে বলেছিলেন: “হৃদয় থেকে করা দান, ঈশ্বরকে খুশি করে। কারণ ঈশ্বর চান, একজন ব্যক্তি যেন তার যা রয়েছে, সেই অনুসারে দান করে, যা নেই, সেই অনুসারে নয়।” (২ করি. ৮:৪, ১২) আমরা যিহোবার জন্য হৃদয় থেকে যে দান করে থাকি, সেটাকে তিনি খুবই মূল্যবান বলে মনে করেন, তা তার পরিমাণ যা-ই হোক না কেন।—মার্ক ১২:৪২-৪৪; ২ করি. ৯:৭.

১৪. হিতোপদেশ ১৯:১৭ পদ অনুযায়ী যখন আমরা প্রয়োজন রয়েছে এমন সহখ্রিস্টানদের সাহায্য করি, তখন সেটাকে যিহোবা কীভাবে দেখে থাকেন?

১৪ প্রয়োজন রয়েছে এমন সহখ্রিস্টানদের সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপাসনা করি। যে-ইজরায়েলীয়েরা দরিদ্রদের দান করেছিল, তাদের যিহোবা আশীর্বাদ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (দ্বিতীয়. ১৫:৭, ১০) তাই, প্রত্যেক বার আমরা যখন এমন কোনো সহবিশ্বাসীকে সাহায্য করি, যার প্রয়োজন রয়েছে, তখন যিহোবা সেটাকে এমন এক উপহার হিসেবে দেখেন যেন সেটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৯:১৭.) উদাহরণস্বরূপ, পৌল যখন বন্দি ছিলেন, তখন ফিলিপীর খ্রিস্টানেরা তার জন্য যে-উপহার পাঠিয়েছিল, সেটাকে তিনি “ঈশ্বরের কাছে এক সুগন্ধি, গ্রহণযোগ্য ও প্রীতিজনক বলি” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (ফিলি. ৪:১৮) আপনার মণ্ডলীর বিষয়ে চিন্তা করুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এমন কি কেউ রয়েছে, যাকে আমি সাহায্য করতে পারি?’ যিহোবা সেইসময়ে খুশি হন, যখন আমরা আমাদের শক্তি, সময়, দক্ষতা ও বস্তুগত বিষয়গুলো দিয়ে এমন ভাই-বোনদের সাহায্য করি, যাদের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি সেটাকে আমাদের উপাসনার এক অংশ হিসেবে দেখেন।—যাকোব ১:২৭.

সত্য উপাসনা আমাদের আনন্দ দেয়

১৫. সত্য উপাসনা করার জন্য সময় ও শক্তির প্রয়োজন, কিন্তু কেন তা বোঝাস্বরূপ নয়?

১৫ সত্য উপাসনা করার জন্য সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কিন্তু, এটা বোঝাস্বরূপ নয়। (১ যোহন ৫:৩) কেন? কারণ আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি বলে তাঁর উপাসনা করি। কল্পনা করুন, একটা ছোট্ট ছেলে তার বাবাকে কিছু দিতে চায়। সে একটা ছবি আঁকার জন্য অনেক সময় ব্যয় করে। সে সেই ছবি আঁকার জন্য যে-সময়টা ব্যয় করেছে, সেটার জন্য সে আপশোস করে না। সে তার বাবাকে ভালোবাসে আর তাই এই উপহারটা দিতে পেরে সে খুবই খুশি। একইভাবে, আমরাও যিহোবাকে ভালোবাসি। তাই, তাঁর উপাসনা করার জন্য আমরা যে-সময় ব্যয় করে থাকি এবং যে-প্রচেষ্টা করে থাকি, তার জন্য আমরা খুশি হই।

১৬. ইব্রীয় ৬:১০ পদ অনুযায়ী আমরা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যে-প্রচেষ্টা করে থাকি, সেটাকে যিহোবা কীভাবে দেখেন?

১৬ একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা তার প্রত্যেক সন্তানের কাছ থেকে একই উপহার আশা করেন না। তারা জানেন, তাদের প্রত্যেক সন্তান আলাদা এবং তাদের ক্ষমতাও আলাদা। একইভাবে, আমাদের স্বর্গীয় পিতাও আমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা সম্বন্ধে জানেন। আপনি হয়তো আপনার মণ্ডলীর অন্য ভাই-বোনদের চেয়ে আরও বেশি করতে পারেন। কিংবা আপনার বয়স, শারীরিক ক্ষমতা অথবা পারিবারিক দায়-দায়িত্বের কারণে আপনি হয়তো অন্যদের মতো ততটা বেশি করতে পারেন না। যদি তা-ই হয়, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। (গালা. ৬:৪) যিহোবা আপনার কাজ কখনই ভুলে যাবেন না। আপনি যদি সঠিক মনোভাব বজায় রেখে আপনার সর্বোত্তমটা দেন, তা হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০.) এমনকি আপনি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন, সেটাও যিহোবা লক্ষ করেন। তিনি চান যেন তাঁর উপাসনা করার জন্য আপনি যা-কিছু করতে পারছেন, তাতে আপনি খুশি ও সন্তুষ্ট হন।

১৭. (ক) আমরা যদি আমাদের উপাসনা করার কয়েকটা পদ্ধতিকে কঠিন বলে মনে করি, তা হলে আমরা কোন কোন পদক্ষেপ নিতে পারি? (খ) “ আপনার আনন্দ বৃদ্ধি করুন” শিরোনামের বাক্সে দেওয়া পরামর্শগুলোর কোনো একটা থেকে কীভাবে আপনি উপকৃত হয়েছেন?

১৭ উপাসনা করার কয়েকটা পদ্ধতি, যেমন ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অথবা প্রচার করা যদি আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে কী? আমরা যতবেশি এই কাজগুলো করব, ততবেশি আমরা এগুলোকে উপভোগ করব এবং এগুলো থেকে উপকৃত হব। আমরা আমাদের উপাসনাকে কোনো একটা বাদ্যযন্ত্র অনুশীলন করার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। আমরা যদি সেই অনুশীলন মাঝেমধ্যে করি, তা হলে আমরা হয়তো ততটা উন্নতি করতে পারব না। কিন্তু ধরুন, আমরা ঠিক করলাম যে, সেই অনুশীলন আমরা প্রত্যেক দিন করব। শুরুর দিকে আমরা অল্প সময়ের জন্য অনুশীলন করব আর ধীরে ধীরে তা করার সময়টা বাড়াব। আমরা যখন দেখব যে, সেই বাদ্যযন্ত্র আমরা অল্প অল্প করে বাজাতে পারছি, তখন সেটা আমরা উপভোগ করব আর আবারও অনুশীলন করার সময়ের জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব। আপনি কি বুঝতে পারলেন, এই নীতিটা কীভাবে আমরা আমাদের উপাসনার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারি?

১৮. কীভাবে আমরা আমাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারি আর এর ফলাফল কী হবে?

১৮ যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করাই হল আমাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য। এর ফলে, আমাদের জীবন সুখী ও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে আর আমাদের কাছে যিহোবাকে অনন্তকাল ধরে সেবা করার আশা থাকে। (হিতো. ১০:২২) আমরা ইতিমধ্যেই মনের শান্তি উপভোগ করছি কারণ আমরা জানি যিহোবা তাঁর উপাসকদের সেইসময়ে সাহায্য করেন, যখন তারা সমস্যায় পড়ে। (যিশা. ৪১:৯, ১০) আমরা আমাদের প্রেমময় পিতাকে উপাসনা করতে পেরে খুবই খুশি, যিনি সমস্ত সৃষ্টির কাছ থেকে ‘গৌরব ও সমাদর পাওয়ার যোগ্য!’—প্রকা. ৪:১১.

গান ১৬ ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে গমন!

^ অনু. 5 সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। সাধারণত আমরা তাঁকে যেভাবে উপাসনা করি, তা তখনই তার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, যখন আমরা তাঁর আজ্ঞাগুলো শুনি এবং তাঁর নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করি। এই প্রবন্ধে আমরা আমাদের উপাসনার আটটা দিক নিয়ে আলোচনা করব। আসুন দেখি, এই আটটা উপায় কীভাবে আমাদের আনন্দ বৃদ্ধি করতে পারে।