অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৪
“তা হলেই সকলে জানবে, তোমরা আমার শিষ্য”
“তোমাদের মধ্যে যদি প্রেম থাকে, তা হলেই সকলে জানবে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৫.
গান ১০৬ প্রেম দেখাতে শেখা
সারাংশ a
১. লোকেরা যখন প্রথম বার আমাদের সভাতে আসে, তখন তাদের কেমন লাগে? (ছবিও দেখুন।)
কল্পনা করুন, এক স্বামী-স্ত্রী প্রথম বার যিহোবার সাক্ষিদের সভাতে আসে। সবাই তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানোর জন্য এগিয়ে আসে। তারা লক্ষ করে, সবাই একে অন্যকে কত ভালোবাসে। এই সমস্ত কিছু দেখে তাদের অনেক ভালো লাগে। সভার পর বাড়ি ফেরার পথে স্ত্রী তার স্বামীকে বলে, ‘এই লোকেরা কত ভালো, তাই না? তারা অন্যদের চেয়ে কত আলাদা!’
২. কেন কিছু ব্যক্তি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে?
২ যিহোবার লোকদের মধ্যে যে-ভালোবাসা রয়েছে, সেটা সত্যিই চমৎকার। কিন্তু এমনটা নয় যে, আমরা ভুল করি না। (১ যোহন ১:৮) আর যতবেশি আমরা অন্যদের জানতে শুরু করি, ততবেশি তাদের দুর্বলতাগুলো আমাদের চোখে পড়ে। (রোমীয় ৩:২৩) কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, কিছু ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে এই দুর্বলতাগুলো দেখে যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে।
৩. কীভাবে যিশুর শিষ্যদের চেনা যায়? (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫)
৩ এই প্রবন্ধে মুখ্য শাস্ত্রপদের উপর আবারও একটু মনোযোগ দিন। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.) কীভাবে যিশুর প্রকৃত শিষ্যদের চেনা যাবে? তারা যে কখনো ভুল করবে না, এমন নয় বরং তাদের মধ্যে প্রেম থাকবে। এই বিষয়টাও লক্ষ করুন, যিশু তাঁর শিষ্যদের এমনটা বলেননি, ‘তা হলেই তোমরা জানবে, তোমরা আমার শিষ্য।’ এর পরিবর্তে, তিনি তাদের বলেছিলেন, “তা হলেই সকলে জানবে, তোমরা আমার শিষ্য।” এভাবে যিশু বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে যে-নিঃস্বার্থ প্রেম থাকবে, সেটার মাধ্যমে শুধু মণ্ডলীর ভাই-বোনেরাই নয়, কিন্তু বাইরের লোকেরাও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে যে, তারাই হল যিশুর প্রকৃত শিষ্য।
৪. কিছু লোক হয়তো সত্য খ্রিস্টানদের বিষয়ে কী জানতে চায়?
৪ যারা যিহোবার সাক্ষি নয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ চিন্তা করতে পারে: ‘কীভাবে প্রেমের মাধ্যমে যিশুর শিষ্যদের চেনা যায়? কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের ভালোবাসেন? আর আজ আমরা কীভাবে যিশুর মতো হতে পারি?’ আমরা যারা যিহোবার সাক্ষি, আমাদের সবাইকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে চিন্তা করা উচিত। এমনটা করার ফলে আমরা একে অন্যকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারব, এমনকী তখনও, যখন কেউ ভুল করে।—ইফি. ৫:২.
কীভাবে প্রেমের মাধ্যমে সত্য খ্রিস্টানদের চেনা যায়?
৫. যোহন ১৫:১২, ১৩ পদে যিশু যা বলেছিলেন, সেটার মানে কী?
৫ যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের প্রেম থাকবে। (পড়ুন, যোহন ১৫:১২, ১৩.) লক্ষ করুন, যিশু তাদের কী আজ্ঞা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা পরস্পর প্রেম করো, যেমন আমি তোমাদের প্রেম করেছি।” এর মানে কী? যিশু বুঝিয়েছিলেন, তারা যেন নিজেদের চেয়ে অন্য খ্রিস্টানদের আরও বেশি ভালোবাসে। এতটাই ভালোবাসে যে, প্রয়োজন পড়লে তারা যেন তাদের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয়। b
৬. কেন আমরা বলতে পারি, ঈশ্বরের বাক্যে একে অন্যকে ভালোবাসার উপর জোর দেওয়া হয়েছে?
৬ ঈশ্বরের বাক্যে এই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে, আমরা যেন একে অন্যকে ভালোবাসি। কিছু ভাই-বোনের প্রিয় শাস্ত্রপদ প্রেমের বিষয়ে তুলে ধরে। যেমন, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) “তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসবে।” (মথি ২২:৩৯) “ভালোবাসা অসংখ্য পাপ ঢেকে দেয়।” (১ পিতর ৪:৮) “প্রেম কখনো শেষ হয় না।” (১ করি. ১৩:৮) এই পদগুলো এবং এইরকমই অন্য পদগুলো থেকে আমরা জানতে পারি, একে অন্যকে ভালোবাসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
৭. কেন শয়তান কখনো এমন একটা সংগঠন তৈরি করতে পারে না, যেখানে লোকদের মধ্যে প্রেম ও একতা থাকবে?
৭ অনেক লোক বলে, ‘আজ সমস্ত ধর্ম এই দাবি করে যে, তারা যা শেখায়, সেটাই সত্য। কিন্তু, যখন ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখানোর বিষয়টা আসে, তখন কেউ এক কথা বলে, আবার কেউ আরেক কথা বলে। তা হলে কীভাবে আমরা বুঝতে পারব, কোন ধর্ম সত্য?’ শয়তান এত ধর্ম তৈরি করেছে যে, লোকেরা বুঝতেই পারে না, কোন ধর্ম সত্য। কিন্তু, সে কখনোই এমন একটা সংগঠন তৈরি করতে পারে না, যেটার লোকেরা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকবে এবং যাদের মধ্যে প্রকৃত ভালোবাসা থাকবে। এমনটা শুধু যিহোবাই করতে পারেন কারণ যে-লোকদের উপর যিহোবার পবিত্র শক্তি ও আশীর্বাদ থাকে, তাদের মধ্যেই প্রকৃত ভালোবাসা দেখা যায়। (১ যোহন ৪:৭) এই কারণেই যিশু বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে প্রকৃত ভালোবাসা থাকবে এবং এর মাধ্যমেই তাদের চেনা যাবে।
৮-৯. অনেক লোক যখন যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে ভালোবাসা দেখেছিল, তখন তাদের কেমন লেগেছিল?
৮ যিশু যেমনটা বলেছিলেন, অনেক লোক দেখেছে যে, যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে প্রকৃত ভালোবাসা রয়েছে। এটা দেখে তারা বুঝতে পেরেছে, এই লোকেরাই হল যিশুর প্রকৃত শিষ্য। আইয়েন নামে একজন ভাইয়ের এইরকম কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তিনি বলেন, তার বাড়ির পাশেই একটা স্টেডিয়াম ছিল, যেখানে তিনি প্রথম বার যিহোবার সাক্ষিদের সম্মেলনে গিয়েছিলেন। এর কিছু মাস আগেই তিনি সেখানে একটা ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন: “সেই ম্যাচ আর এই সম্মেলনের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল। যিহোবার সাক্ষিরা খুবই সম্মানের সঙ্গে কথা বলছিল এবং তারা খুবই ভালো জামাকাপড় পড়ে ছিল আর এমনকী তাদের সন্তানদের আচার-আচরণও খুব ভালো ছিল। আমার যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছিল, সেটা হল তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি আর তাদের কোনো বিষয়ে চিন্তা নেই। আর আমিও এভাবে জীবনযাপন করতে চেয়েছিলাম। সেই দিনের বক্তৃতাগুলোর মধ্যে একটাও আমার মনে নেই, কিন্তু সাক্ষিরা যেভাবে আচার-আচরণ করেছিল, সেটা আমি কখনো ভুলতে পারব না।” c আসলে, আমাদের ভালো আচার-আচরণের পিছনে কারণ হল, আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসার কারণেই আমরা ভাই-বোনদের প্রতি সম্মান দেখাই এবং তাদের জন্য চিন্তা করি।
৯ জন নামে একজন ভাই যখন সভাগুলোতে যেতে শুরু করেন, তখন তিনিও এইরকম কিছু অনুভব করেছিলেন। তিনি বলেন: “সেখানে সবাই একে অন্যের সঙ্গে খুবই ভালোভাবে কথা বলছিল। তাদের দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, তারা যেন অন্য কোনো জগতের লোক। তাদের মধ্যে ভালোবাসা দেখে বুঝতে পারি, এটাই হল সত্য ধর্ম।” d অনেক লোকের এইরকমই অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয় যে, যিহোবার লোকেরাই সঠিক অর্থে যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে।
১০. বিশেষভাবে কখন আমরা ভাই-বোনদের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা দেখাতে পারি? (পাদটীকাও দেখুন।)
১০ প্রবন্ধের শুরুতে আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, আমরা সবাই অসিদ্ধ। তাই, অনেকসময় ভাই-বোনেরা এমন কিছু করে ফেলে, যেটার কারণে আমাদের খুব খারাপ লাগে। e (যাকোব ৩:২) যখন এমনটা হয়, তখন আমরা যেভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করি, বিশেষভাবে সেটার মাধ্যমে আমরা তাদের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা দেখাতে পারি। আসুন দেখি, এই ব্যাপারে আমরা যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারি।—যোহন ১৩:১৫.
কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর প্রেরিতদের ভালোবাসেন?
১১. যাকোব ও যোহনের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা ছিল? (ছবিও দেখুন।)
১১ যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে এমনটা আশা করেননি যে, তারা কখনো ভুল করবে না। এর পরিবর্তে তিনি জানতেন, তাদের মধ্যে কিছু দুর্বলতা রয়েছে আর সেগুলো দূর করার জন্য তিনি প্রেমের সঙ্গে তাদের সাহায্য করেছিলেন, যাতে যিহোবা তাদের দেখে খুশি হন। একবার যিশুর দু-জন শিষ্য যাকোব ও যোহন তাদের মাকে যিশুর কাছে গিয়ে এটা বলতে বলেছিলেন, যিশু যেন তাঁর রাজ্যে তাদের দু-জনকে উঁচু পদ দেন। (মথি ২০:২০, ২১) এভাবে যাকোব ও যোহন দেখিয়েছিলেন যে, তাদের মধ্যে গর্ব রয়েছে আর তারা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে চান।—হিতো. ১৬:১৮.
১২. শুধু কি যাকোব ও যোহনের মধ্যেই দুর্বলতা ছিল? ব্যাখ্যা করুন।
১২ এমনটা নয় যে, সেইসময় শুধু যাকোব ও যোহনই দেখিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে। লক্ষ করুন, যখন এই বিষয়ে অন্য প্রেরিতেরা জানতে পেরেছিল, তখন তারা কী করেছিল। বাইবেলে লেখা আছে: “অন্য দশ জন যখন সেই কথা শুনতে পেলেন, তখন তারা এই দুই ভাইয়ের উপর অসন্তুষ্ট হলেন।” (মথি ২০:২৪) আমরা কল্পনা করতে পারি, যাকোব, যোহন এবং বাকি প্রেরিতেরা কীভাবে রেগে গিয়ে একে অন্যের সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করেছিল। বাকি প্রেরিতেরা হয়তো তাদের দু-জনকে এইরকম কিছু বলেছিল: ‘তোমাদের কী মনে হয়, তোমরা কি আমাদের চেয়ে বেশি যোগ্য? শুধু কি তোমরা দু-জনেই যিশুর সঙ্গে পরিশ্রম করেছ? আমরা কি কিছুই করিনি? আমরা সবাই কি উঁচু পদ পাওয়ার যোগ্য নই?’ সেই প্রেরিতেরা যা-ই বলুক না কেন, একটা বিষয় সত্য: সেইসময় তারা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
১৩. প্রেরিতদের মধ্যে বিভিন্ন দুর্বলতা ছিল, তারপরও যিশু তাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেছিলেন? (মথি ২০:২৫-২৮)
১৩ এইরকম পরিস্থিতিতে যিশু কী করেছিলেন? তিনি সেই প্রেরিতদের উপর রেগে যাননি। তিনি তাদের এমনটা বলেননি যে, ‘এখন আমি অন্য প্রেরিতদের খুঁজব, যারা তোমাদের চেয়ে অনেক নম্র এবং যারা সবসময় একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাবে।’ এর পরিবর্তে, যিশু তাদের প্রতি ধৈর্য ধরেছিলেন এবং তাদের বুঝিয়ে বলেছিলেন কারণ তিনি জানতেন, তাদের মন খুব ভালো। (পড়ুন, মথি ২০:২৫-২৮.) এমনটা নয় যে, প্রেরিতদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই বিষয় নিয়ে এটাই প্রথম আর শেষ বারের মতো তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়েও, তাদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। তারপরও, যিশু সবসময় তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন।—মার্ক ৯:৩৪; লূক ২২:২৪.
১৪. যিশুর প্রেরিতেরা কোন ধরনের সমাজে বড়ো হয়ে উঠেছিল?
১৪ যিশু নিশ্চয়ই এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রেরিতেরা কোন সমাজে বড়ো হয়ে উঠেছে। (যোহন ২:২৪, ২৫) যিহুদি সমাজে ধর্মীয় গুরুরা নিজেদের স্থান বা পদকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিত। (মথি ২৩:৬) তারা নিজেদের খুবই ধার্মিক বলে মনে করত। f (লূক ১৮:৯-১২) যিশু বুঝতে পেরেছিলেন, আশেপাশের লোকদের চিন্তাভাবনা তাঁর শিষ্যদের উপরও হয়তো প্রভাব ফেলেছিল, তাই তারা হয়তো একটু-আধটু তাদের মতো করে চিন্তা করছিল। (হিতো. ১৯:১১) এইজন্য যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করেননি। আর তারা যখন কোনো ভুল করত, তখন যিশু তাদের উপর রেগে যেতেন না বরং তাদের প্রতি ধৈর্য ধরতেন। তিনি জানতেন, তাঁর প্রেরিতেরা সঠিক কাজ করতে চায়। তাই, তিনি তাদের শিখিয়েছিলেন, তারা যেন অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে না করে বরং যেন আরও নম্র হয় এবং সবাইকে ভালোবাসে।
কীভাবে আমরা যিশুর মতো হতে পারি?
১৫. আমরা যাকোব ও যোহনের বিবরণ থেকে কী শিখতে পারি?
১৫ যাকোব ও যোহনের বিবরণ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। ঈশ্বরের রাজ্যে উঁচু পদ পাওয়ার জন্য তারা যা করেছিল, সেটা ভুল ছিল। তবে বাকি প্রেরিতেরা যা করেছিল, সেটাও ঠিক ছিল না। তারা নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রাখেনি। কিন্তু, যিশু নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেননি বরং সমস্ত প্রেরিতের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করেছিলেন। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, অন্যেরা কী ভুল করেছে। এর পরিবর্তে, তাদের ভুল দেখে আমরা কেমন আচরণ করছি, এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো ভাই কিংবা বোন যদি এমন কিছু করে, যেটার কারণে আমাদের খারাপ লাগে, তা হলে আমরা চিন্তা করতে পারি, ‘তার কথায় কেন আমার এত খারাপ লাগছে? এমনটা নয় তো, আমার মধ্যেই কিছু দুর্বলতা রয়েছে আর আমাকে সেটা শোধরাতে হবে? সেই ভাই কিংবা বোন কোনো সমস্যার মধ্যে নেই তো? যদিও তিনি ভুল করেছেন, কিন্তু ভালোবাসার কারণে আমি কি তাকে ক্ষমা করতে পারি?’ এভাবে আমরা যদি ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে চলি, তা হলে আমরা এটা প্রমাণ করতে পারব যে, আমরা যিশুর প্রকৃত শিষ্য।
১৬. আমরা যিশুর কাছ থেকে আর কী শিখতে পারি?
১৬ যিশুর কাছ থেকে আমরা এও শিখি, আমাদের ভাই-বোনদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। (হিতো. ২০:৫) যিশুর মতো আমরা তাদের হৃদয় পড়তে পারি না ঠিকই, তবে তারা যখন কোনো ভুল করে, তখন তাদের উপর বিরক্ত হওয়ার পরিবর্তে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি। (ইফি. ৪:১, ২; ১ পিতর ৩:৮) এটা করা তখন আরও সহজ হয়ে যায়, যখন আমরা ভাই-বোনদের ভালোভাবে জানতে শুরু করি। আসুন, একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই।
১৭. একজন সীমা অধ্যক্ষ যখন একজন ভাইকে আরও ভালোভাবে জেনেছিলেন, তখন কী হয়েছিল?
১৭ একজন সীমা অধ্যক্ষ পূর্ব আফ্রিকাতে সেবা করছিলেন। সেইসময় একটা মণ্ডলীর একজন ভাইয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়। তার মনে হয়েছিল, সেই ভাই খুবই নির্দয়। তিনি বলেন, “আমি স্থির করেছিলাম, সেই ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার পরিবর্তে আমি তাকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করব।” এমনটা করার ফলে তিনি জানতে পেরেছিলেন, সেই ভাই যে-পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছেন, সেটার কারণেই তিনি এইরকম আচরণ করেন। সীমা অধ্যক্ষ ভাই আরও বলেন, “আমি যখন জানতে পেরেছিলাম, অন্যদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা তার জন্য কত কঠিন ছিল এবং এরজন্য সেই ভাই কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন করেছিলেন, তখন তার প্রতি আমার সম্মান আরও বেড়ে যায়। কিছুসময় পর আমরা অনেক ভালো বন্ধু হয়ে উঠি।” সত্যিই, আমরা যখন ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করি, তখন তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো আরও সহজ হয়ে যায়।
১৮. কোনো ভাই কিংবা বোন যদি আমাদের আঘাত দিয়ে থাকেন, তা হলে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি? (হিতোপদেশ ২৬:২০)
১৮ কখনো কখনো আমাদের মনে হতে পারে, যে-ভাই কিংবা বোন আমাদের আঘাত দিয়েছেন, তার কাছে গিয়ে কথা বলা উচিত। কিন্তু, এমনটা করার আগে আমাদের কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যেমন, ‘যা-কিছু ঘটেছিল, সেই বিষয়ে আমার কাছে কি সমস্ত তথ্য আছে?’ (হিতো. ১৮:১৩) ‘এমনটা নয় তো, তিনি অজান্তে ভুলটা করেছেন?’ (উপ. ৭:২০) ‘আমিও কি কখনো সেই ভুলটা করেছি?’ (উপ. ৭:২১, ২২) ‘আমি যদি তার কাছে গিয়ে কথা বলি, তা হলে বিষয়টা সমাধান হওয়ার পরিবর্তে আরও খারাপ হয়ে যাবে না তো?’ (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৬:২০.) আমরা যখন সময় বের করে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করব, তখন সেই ভাই কিংবা বোনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে। এরপর, আমরা হয়তো বিষয়টা ভুলে যাব এবং তাকে ক্ষমা করে দেব।
১৯. কী করার জন্য আপনি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৯ সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিরা একে অন্যকে ভালোবাসে। আর এভাবে তারা দেখায়, তারা যিশুর প্রকৃত শিষ্য। আমরা প্রত্যেকে যখন একে অন্যের দুর্বলতাগুলো দেখেও তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই, তখন আমরা প্রমাণ করি, আমরা যিশুর প্রকৃত শিষ্য। এভাবে আমরা যখন ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই, তখন অন্যেরা বুঝতে পারে, যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মই হল সত্য ধর্ম। এর ফলে, তারাও হয়তো আমাদের সঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করতে শুরু করবে, যিনি প্রত্যেককে খুব ভালোবাসেন। তাই আসুন, আমরা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে চলি, যে-ভালোবাসার মাধ্যমে সত্য খ্রিস্টানদের চেনা যায়।
গান ১৭ আমি চাই
a আমাদের মধ্যে প্রকৃত ভালোবাসা দেখে লোকেরা সত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু, আমরা সবাই অসিদ্ধ আর আমরা ভুল করে ফেলি। তাই, কখনো কখনো ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন ভাই-বোনদের ভালোবাসা এতটা গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ যখন ভুল করে ফেলে, তখন কীভাবে আমরা যিশুর মতো তার সঙ্গে আচরণ করতে পারি।
c ভাই আইয়েনের জীবনকাহিনি পড়ার জন্য jw.org/bn ওয়েবসাইটে যান এবং সার্চ বক্সে “শেষপর্যন্ত আমি জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাই” টাইপ করুন।
d ভাই জনের জীবনকাহিনি পড়ার জন্য jw.org/bn ওয়েবসাইটে যান এবং সার্চ বক্সে “আমার জীবন ভালোই চলছিল” টাইপ করুন।
e এই প্রবন্ধে গুরুতর পাপের বিষয়ে বলা হয়নি, যেগুলো ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০ পদে বলা হয়েছে আর যেগুলো প্রাচীনেরা সামলান।
f একটা বই থেকে জানা যায়, এর অনেকসময় পর একজন রব্বি বলেন, “এই পৃথিবীতে অব্রাহামের মতো অন্ততপক্ষে ৩০ জন ধার্মিক ব্যক্তি তো থাকবেই। যদি ৩০ জন ব্যক্তি থাকে, তা হলে তাদের মধ্যে দু-জন হলাম আমি এবং আমার ছেলে। যদি ১০ জন ব্যক্তি থাকে, তা হলে তাদের মধ্যে দু-জন হলাম আমি এবং আমার ছেলে। যদি পাঁচ জন থাকে, তা হলে তাদের মধ্যে দু-জন হলাম আমি এবং আমার ছেলে। যদি দু-জন ব্যক্তি থাকে, তা হলে সেটা আমি এবং আমার ছেলে। আর যদি শুধুমাত্র এক জন ব্যক্তি থাকে, তা হলে সেটা হলাম আমি।”