পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন
রূৎ ৪:১ পদে যে-মুক্তিকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, কেন তিনি বলেছিলেন যে, রূতের সঙ্গে তার বিয়ে হলে তার “নিজের উত্তরাধিকারের ক্ষতি হবে”? (রূৎ. ৪:১, ৬, পাদটীকা, NW)
অতীতে বিবাহিত একজন ইজরায়েলীয় পুরুষ যদি কোনো সন্তান না রেখে মারা যেতেন, তা হলে কিছু প্রশ্ন উঠে আসত: তার যদি কোনো জমি থাকত, তা হলে সেটার কী হত? তার পরিবারের নাম কি চিরকালের জন্য মুছে যেত? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মোশির ব্যবস্থায় পাওয়া যেতে পারে।
একজন ব্যক্তি যদি মারা যেতেন, তা হলে তার ভাই কিংবা নিকট কোনো আত্মীয় সেই জমি উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়ে যেত। আর যদি অভাবের কারণে অন্য কারো কাছে নিজের জমি বিক্রি করতে হত, তা হলে তার ভাই কিংবা নিকট আত্মীয় সেই জমি মুক্ত করতে পারত অর্থাৎ সেটা আবার কিনতে পারত। এভাবে, সেই ব্যক্তির জমি তার পরিবারের কাছেই থাকত।—লেবীয়. ২৫:২৩-২৮; গণনা. ২৭:৮-১১.
কিন্তু, যে-ব্যক্তি মারা যেতেন, তার পরিবারের নাম কীভাবে টিকে থাকত? তার ভাই সেই ব্যক্তির বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করত। সেইসময় এই রীতি প্রচলিত ছিল। রূতের ঘটনাতে এমনই কিছু হয়েছিল। এভাবে বিয়ে করার ফলে প্রথম যে-সন্তান হত, সে সেই মৃত ব্যক্তির বংশ রক্ষা করত, যাতে তার পরিবারের নাম মুছে না যায়। এ ছাড়া, সে উত্তরাধিকার হিসেবে সেই ব্যক্তির জমি পেত। এই সুন্দর ব্যবস্থার কারণে সেই বিধবা স্ত্রীরও যত্ন নেওয়া হত।—দ্বিতীয়. ২৫:৫-৭; মথি ২২:২৩-২৮.
এবার দেখুন, নয়মীর প্রতি কী হয়েছিল। ইলীমেলক নামে একজন পুরুষের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল এবং তাদের দুটো ছেলেও ছিল। কিন্তু পরে, ইলীমেলক এবং তার দুই ছেলে মারা যায় এবং নয়মীর যত্ন নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। (রূৎ. ১:১-৫) এরপর, নয়মী যিহূদায় ফিরে এসেছিলেন। তিনি তার বউমা রূৎকে বলেছিলেন যেন তিনি বোয়স নামে তাদের এক নিকট আত্মীয়ের কাছে যান এবং তাকে বলেন, তিনি যাতে তাদের জমি কিনে নেন। (রূৎ. ২:১, ১৯, ২০; ৩:১-৪) তবে বোয়স জানতেন, আরেকজন ব্যক্তি রয়েছেন, যার কাছে তাদের জমি কেনার প্রথম অধিকার আছে কারণ তিনি বোয়সের চেয়ে নিকট এক আত্মীয়। বাইবেলে সেই ব্যক্তির নাম নেই।—রূৎ. ৩:৯, ১২, ১৩.
সেই ব্যক্তি তাদের জমি কেনার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। (রূৎ. ৪:১-৪) যদিও এই কাজে কিছু টাকাপয়সা লাগত, তবে তিনি জানতেন, এই বয়সে নয়মীর কোনো সন্তান হবে না, যে ইলীমেলকের জমি উত্তরাধিকার হিসেবে পাবে। তাই তিনি মনে করেছিলেন, এটা একটা দারুণ সুযোগ কারণ এর ফলে ইলীমেলকের জমি তার নিজের হয়ে যাবে।
কিন্তু, তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন, তাকে রূৎকে বিয়ে করতে হবে, তখন তিনি তার মত পালটে ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “না, আমি এই জমি মুক্ত করতে পারব না কারণ এটা করলে আমার নিজের উত্তরাধিকারের ক্ষতি হবে।” (রূৎ. ৪:৫, ৬, NW) কেন তিনি হঠাৎ তার মত পালটে ফেলেছিলেন?
রূতের সঙ্গে যদি সেই ব্যক্তির কিংবা অন্য কারো বিয়ে হত এবং রূৎ একটা ছেলের জন্ম দিতেন, তা হলে ইলীমেলকের জমি সেই ছেলে পেয়ে যেত। তাহলে, এতে কীভাবে সেই ব্যক্তির “নিজের উত্তরাধিকারের ক্ষতি” হত? বাইবেলে এই বিষয়ে সরাসরি কিছু লেখা নেই। তবে, তিনি হয়তো নীচে দেওয়া কারণগুলোর জন্য এমনটা মনে করেছিলেন।
প্রথম কারণ: তিনি হয়তো চিন্তা করেছিলেন, পরে গিয়ে ইলীমেলকের জমি যদি রূতের ছেলেরই হয়ে যায়, তা হলে সেই জমি কেনার জন্য টাকা খরচ করে কী লাভ?
দ্বিতীয় কারণ: তিনি যদি রূৎকে বিয়ে করেন, তা হলে তাকে রূৎ ও নয়মী দু-জনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে হবে।
তৃতীয় কারণ: তার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর রূৎ যদি আরও সন্তানের জন্ম দেন এবং সেই ব্যক্তির আগে থেকে কয়েক জন সন্তান থাকে, তা হলে তার নিজের সন্তানেরা উত্তরাধিকার হিসেবে যা-কিছু পেয়েছে, সেগুলো রূতের সন্তানদের সঙ্গেও ভাগ করে নিতে হবে।
চতুর্থ কারণ: সেই ব্যক্তির যদি আগে থেকে কোনো সন্তান না থাকে এবং রূতের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তাদের একটা ছেলে হয়, তা হলে সেই ছেলে ইলীমেলক এবং সেই ব্যক্তি দু-জনেরই জমি উত্তরাধিকার হিসেবে পাবে। এভাবে তার জমি এমন একজন পাবে, যে তার নয় বরং ইলীমেলকের ছেলে হিসেবে পরিচিত হবে। তিনি চাননি যে, নয়মীকে সাহায্য করতে গিয়ে তার নিজের উত্তরাধিকার ঝুঁকির মুখে পড়ুক। তাই, তিনি বোয়সকে বলেছিলেন যেন তিনি তাদের জমি কিনে নেন কারণ সেই ব্যক্তির পরে বোয়সেরই এই অধিকার রয়েছে। বোয়স তা করার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন কারণ তিনি চেয়েছিলেন যেন এই জমি সেই ‘মৃত লোকের বংশধরদেরই থাকে।’—রূৎ. ৪:১০, NW.
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, সেই ব্যক্তি হয়তো শুধু নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করেছিলেন। তার কাছে নিজের নাম এবং নিজের উত্তরাধিকারই ছিল সব কিছু। কিন্তু, আমরা কেউ তার নাম জানি না, তার নাম চিরকালের জন্য মুছে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি একটা অপূর্ব আশীর্বাদ হাতছাড়া করেছিলেন, যেটা বোয়স পেয়েছিলেন। সেই ব্যক্তির বংশে মশীহের জন্ম হতে পারত। স্বার্থের কারণে সেই ব্যক্তি একজন অভাবী ব্যক্তির সাহায্য করেননি। এর কতই-না খারাপ পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়েছিল!—মথি ১:৫; লূক ৩:২৩, ৩২.