সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১২

সৃষ্টি দেখুন এবং যিহোবা সম্বন্ধে জানুন!

সৃষ্টি দেখুন এবং যিহোবা সম্বন্ধে জানুন!

“জগৎ সৃষ্টির পর থেকেই তাঁর অদৃশ্য গুণাবলি অর্থাৎ তাঁর অনন্ত শক্তি ও ঈশ্বরত্ব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, কারণ এগুলো তাঁর সৃষ্ট বিষয়গুলো থেকে উপলব্ধি করা যায়।”—রোমীয় ১:২০.

গান ৬ নিখিলবিশ্ব যিহোবার গৌরব করে

সারাংশ a

১. একটা উপায় সম্বন্ধে বলুন, যেটার মাধ্যমে ইয়োব যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছিলেন।

 ইয়োব তার জীবনে অনেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু, একজন ব্যক্তির সঙ্গে হওয়া কথাবার্তা হয়তো তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। সেটা ছিল যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে হওয়া কথাবার্তা। যিহোবা তাকে বলেছিলেন, তিনি যেন তাঁর কিছু অসাধারণ সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেন। এমনটা করার মাধ্যমে তিনি জানতে পারতেন, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান এবং তিনি নিশ্চিত হয়ে যেতেন যে, যিহোবা তাঁর সেবকদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করতে পারেন। যেমন ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন, যেভাবে তিনি জীবজন্তুর যত্ন নেন, একইভাবে তিনি ইয়োবেরও যত্ন নিতে পারেন। (ইয়োব ৩৮:৩৯-৪১; ৩৯:১, ৫, ১৩-১৬) এভাবে সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ইয়োব ঈশ্বর সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলেন।

২. কেন অনেকসময় যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে?

আমরাও যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি। কিন্তু, অনেকসময় আমাদের পক্ষে এমনটা করা কঠিন হতে পারে। হতে পারে আমরা শহরে থাকি, যেখানে প্রকৃতির বিষয়গুলো বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। কিংবা আমরা হয়তো এমন কোনো জায়গায় থাকি, যেখানে চারিদিকে গাছপালা রয়েছে, কিন্তু আমাদের মনে হতে পারে, আমাদের কাছে প্রকৃতির বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার সময়ই নেই। তাই, এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা সময় বের করে যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দিই। আমরা এও জানতে পারব, যিহোবা ও যিশু কীভাবে সৃষ্টি থেকে আমাদের শিখিয়েছেন এবং যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আমরা আরও বিষয় শিখতে পারি।

কেন সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেবেন?

যিহোবা চেয়েছিলেন, আদম যেন তাঁর সৃষ্টি থেকে আনন্দ লাভ করেন আর জীবজন্তুর নাম রাখেন (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা চেয়েছিলেন যেন আদম তাঁর সৃষ্টি দেখে আনন্দ লাভ করুক?

যিহোবা যখন প্রথম মানুষ আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি চেয়েছিলেন, আদম যেন তাঁর সৃষ্টি থেকে আনন্দ লাভ করেন। তিনি আদমের থাকার জন্য একটা অপূর্ব পরমদেশ তৈরি করেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন, তিনি যেন এটার দেখাশোনা করেন এবং পুরো পৃথিবীকে সেই বাগানের মতোই সুন্দর করে তোলেন। (আদি. ২:৮, ৯, ১৫) চিন্তা করুন, এটা আদমের কাছে কত বড়ো এক বিষয় ছিল! তিনি যখন দেখতেন, কীভাবে একটা বীজ থেকে অঙ্কুর বের হচ্ছে এবং কীভাবে ফুল ফুটছে, তখন তার কতটা ভালো লাগত। যিহোবা আদমকে আরেকটা কাজ দিয়েছিলেন। তিনি তাকে সমস্ত জীবজন্তুর নাম রাখতে বলেছিলেন। (আদি. ২:১৯, ২০) যিহোবা চাইলে নিজেই এই কাজ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি এই কাজ আদমকে দিয়েছিলেন। যেকোনো জীবজন্তুর নাম রাখার আগে আদম নিশ্চয়ই সেটাকে খুব মনোযোগ সহকারে লক্ষ করতেন যে, সেটা দেখতে কেমন, সেটার বৈশিষ্ট্যগুলো কী, কীভাবে সেটা আচরণ করে আর তার পরেই তিনি সেই জীবজন্তুর সঠিক নাম রাখতেন। তিনি এই কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছিলেন! তিনি এও দেখেছিলেন, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান এবং তাঁর সৃষ্টি কতটা সুন্দর এবং অসাধারণ।

৪. (ক) কেন আমাদের যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত? (খ) যিহোবার সৃষ্টির মধ্যে কোন বিষয়গুলো আপনার ভালো লাগে?

সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার আরেকটা কারণ হল, যিহোবা নিজে চান যেন আমরা এমনটা করি। তিনি আমাদের বলেছেন, “ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে?” (যিশা. ৪০:২৬) যিহোবা কেবল আকাশেই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে সমুদ্রে এবং স্থলে এমন অনেক অপূর্ব বিষয় সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো থেকে আমরা তাঁর সম্বন্ধে শিখতে পারি। (গীত. ১০৪:২৪, ২৫) একটু এই বিষয়েও চিন্তা করুন, যিহোবা কীভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আমরা যখন প্রকৃতির আশেপাশে থাকি, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে। আমরা সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাই, বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ শুনতে পাই, আলাদা আলাদা বিষয় চেখে দেখতে পারি, সেগুলোর সুগন্ধ নিতে পারি এবং সেগুলো ছুঁয়ে অনুভব করতে পারি। এভাবে যিহোবা যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, আমরা সেগুলো পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি।

৫. রোমীয় ১:২০ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত?

বাইবেল থেকে আমরা এই বিষয়ে আরেকটা কারণ খুঁজে পাই যে, কেন আমাদের যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। সেটা হল এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, যিহোবা আসলে কেমন ঈশ্বর এবং তাঁর মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে। (পড়ুন, রোমীয় ১:২০.) যিহোবার সৃষ্টির কোনো বিষয় দেখুন এবং সেটার গঠনের উপর মনোযোগ দিন। সেটা দেখে আপনার কি মনে হয় না, যিহোবা খুবই প্রজ্ঞাবান? আর চিন্তা করুন, যিহোবা আমাদের খাবারের জন্য কত আলাদা আলাদা বিষয় জুগিয়েছেন। এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন। আমরা যখন যিহোবার সৃষ্টি দেখে তাঁর সম্বন্ধে চিন্তা করি, তখন আমরা তাঁকে আরও ভালোভাবে জানতে পারি এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হই। এখন আসুন দেখি, যিহোবা তাঁর সৃষ্টি থেকে কীভাবে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখান।

যিহোবা সৃষ্টি থেকে তাঁর সম্বন্ধে শেখান

৬. পরিযায়ী পাখির উপর মনোযোগ দিলে আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবা প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য একটা সময় স্থির করেছেন। প্রতি বছর ইজরায়েলীয়েরা ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারস পাখিদের উত্তরের দিকে উড়ে যেতে দেখত। যিহোবা ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন, “আকাশে হাড়গিলাও [‘সারস পাখিও’, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] আপনার সময় জানে।” (যির. ৮:৭) ঠিক যেমন যিহোবা একটা সময় স্থির করেছেন যে, এই পরিযায়ী পাখিরা কখন একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় যাবে, একইভাবে যিহোবা আগে থেকে স্থির করে রেখেছেন, কখন তিনি সমস্ত দুষ্টের বিচার করবেন। আমরা যখন পরিযায়ী পাখিদের উড়তে দেখি, তখন আমাদের এই বিষয়ে আস্থা আরও বাড়াতে হবে যে, যিহোবা তাঁর “নিরূপিত” সময়ে এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করে দেবেন।—হবক্‌. ২:৩.

৭. উঁচুতে উড়তে থাকা একটা পাখিকে দেখে আমরা কী শিখতে পারি? (যিশাইয় ৪০:৩১)

যিহোবা তাঁর লোকদের শক্তি দেন। ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা যখনই দুর্বল অথবা হতাশ হয়ে পড়বে, তখন তিনি তাদের শক্তি দেবেন। বলতে গেলে তারা যেন “ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্দ্ধ্বে উঠিবে।” (পড়ুন, যিশাইয় ৪০:৩১.) ইজরায়েলীয়েরা প্রায়ই দেখত, কীভাবে ঈগল পাখি গরম বাতাসের সাহায্যে বেশি ডানা না ঝাপটিয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। ঠিক যেমন, যিহোবা এই পাখিদের ওড়ার জন্য শক্তি দেন, একইভাবে তিনি আমাদেরও প্রচুর শক্তি দিতে পারেন। তাই, পরের বার আপনি যখন কোনো বড়ো পাখিকে উপরের দিকে উড়ে যেতে দেখবেন, তখন মনে রাখবেন, যিহোবা আপনাকেও উপরে তুলতে পারেন অর্থাৎ আপনার সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে আপনাকে শক্তি দিতে পারেন।

৮. যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ইয়োব কী শিখেছিলেন আর আজ আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবার উপর আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। যিহোবা ইয়োবকে এমন অনেক বিষয় বলেছিলেন, যেগুলোর মাধ্যমে ইয়োব তাঁর উপর আরও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন। (ইয়োব ৩২:২; ৪০:৬-৮) যিহোবা ইয়োবকে তাঁর সৃষ্টির বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে বলেছিলেন, যেমন মেঘ, তারা ও বিদ্যুৎ। যিহোবা তাকে কিছু জীবজন্তুর বিষয়েও বলেছিলেন, যেমন বুনো ষাঁড় ও ঘোড়া। (ইয়োব ৩৮:৩২-৩৫; ৩৯:৯, ১৯, ২০) এই সমস্ত বিষয় চিন্তা করার মাধ্যমে ইয়োব বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা কেবল শক্তিশালীই নন, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি অনেক প্রজ্ঞাবানও আর আমাদের খুব ভালোবাসেন। এভাবে ইয়োব যিহোবার উপর আরও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন। (ইয়োব ৪২:১-৬) আজ আমরা যখন যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দিই, তখন বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের চেয়ে কত বেশি প্রজ্ঞাবান এবং শক্তিশালী। তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যাও দূর করতে পারেন আর তিনি অবশ্যই তা করবেন। এই বিষয়টা মনে রাখার মাধ্যমে আমরা যিহোবার উপর আরও আস্থা রাখতে পারব।

যিশু সৃষ্টি থেকে তাঁর পিতার বিষয়ে শিখিয়েছিলেন

৯-১০. আমরা সূর্যের আলো ও বৃষ্টি থেকে যিহোবার বিষয়ে কী শিখি?

যিশু সৃষ্টির বিষয়ে অনেক কিছু জানতেন। যিহোবা যখন সমস্ত কিছু সৃষ্টি করছিলেন, তখন তিনি একজন দক্ষ কারিগরের মতো যিহোবাকে সাহায্য করেছিলেন। (হিতো. ৮:৩০) পরে, যিশু যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের সৃষ্টি থেকে দৃষ্টান্ত দিয়ে তাঁর পিতা সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। আসুন, সেগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই।

১০ যিহোবা সবাইকে ভালোবাসেন। পর্বতের উপরে উপদেশ দেওয়ার সময় যিশু তাঁর শিষ্যদের সূর্যের আলো ও বৃষ্টির বিষয়ে বলেছিলেন। যদিও এই বিষয়গুলোর উপর লোকেরা বেশি মনোযোগ দেয় না, কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য এগুলো খুবই প্রয়োজন। যিহোবা চাইলে মন্দ লোকদের সূর্যের আলো এবং বৃষ্টির জল না-ও দিতে পারতেন। কিন্তু, তিনি এমনটা করেননি। তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে সূর্যের আলো এবং বৃষ্টির জল দেন। (মথি ৫:৪৩-৪৫) এভাবে যিশু তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন, যিহোবা সবাইকে ভালোবাসেন। তাই, যখন আমরা সূর্যাস্তের সুন্দর দৃশ্য দেখি কিংবা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপভোগ করি, তখন আসুন আমরা মনে রাখি, যিহোবা সব ধরনের ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। এর ফলে, আমাদেরও ইচ্ছে করবে, যেন আমরা সব ধরনের ব্যক্তির কাছে প্রচার করি এবং এভাবে দেখাই যে, আমরা সবাইকে ভালোবাসি।

১১. কীভাবে আমরা পাখিদের দেখে উৎসাহ লাভ করতে পারি?

১১ যিহোবা আমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান। পর্বতের উপরে উপদেশ দেওয়ার সময় যিশু এও বলেছিলেন, “আকাশের পাখিদের ভালো করে লক্ষ করো; এরা বোনেও না, কাটেও না কিংবা গোলা ঘরে সঞ্চয়ও করে না, তবুও তোমাদের স্বর্গীয় পিতা এদের খাবার জুগিয়ে দেন।” হতে পারে, যিশু যখন এই কথাগুলো বলেছিলেন, তখন লোকেরা আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখিদের উড়তে দেখেছিল। তারপর, যিশু তাদের বলেছিলেন, “তোমরা কি তাদের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান নও?” (মথি ৬:২৬) যিশু কত অসাধারণ উপায়ে লোকদের এই বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। (মথি ৬:৩১, ৩২) এই বিষয়টা মনে রাখার মাধ্যমে আজ আমরাও অনেক উৎসাহ লাভ করি। স্পেনের একজন যুবতী অগ্রগামী বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি থাকার জন্য একটা ঘর খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই, বোন খুবই উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, তিনি একদিন কিছু পাখিকে দানা এবং ফল খেতে দেখেন। এটা দেখে তিনি অনেক উৎসাহ লাভ করেন। বোন বলেন, “সেই পাখিদের দেখে আমার মনে পড়ে যায়, যিহোবা যেভাবে এদের যত্ন নেন, একইভাবে তিনি আমাদেরও যত্ন নেবেন।” আর এমনটাই হয়। কিছুসময় পর বোন থাকার জন্য একটা ঘর খুঁজে পান।

১২. মথি ১০:২৯-৩১ পদে পাখিদের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, সেখান থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি?

১২ যিহোবা আমাদের সবাইকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। যিশু যখন প্রেরিতদের প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের উৎসাহিত করেছিলেন, যাতে বিরোধিতা এলে তারা ঘাবড়ে না যায়। (পড়ুন, মথি ১০:২৯-৩১.) এমনটা করার জন্য তিনি তাদের ছোটো পাখিদের দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন, যেগুলো প্রায়ই ইজরায়েলে দেখতে পাওয়া যেত। যিশুর দিনে এই পাখিদের খুব-একটা মূল্য ছিল না। কিন্তু, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “তোমাদের পিতার অলক্ষ্যে সেগুলোর একটাও মাটিতে পড়ে না।” এরপর তিনি তাদের বলেন, “তোমরা অনেক চড়ুই পাখির চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান।” এভাবে, যিশু তাঁর শিষ্যদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, যিহোবা তাদের সবাইকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তাই, তাদের যদি বিরোধিতা করা হয়, তা হলে তাদের ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শিষ্যেরা যখন গ্রামে গ্রামে প্রচার করার সময় কোনো ছোটো পাখি দেখত, তখন নিশ্চয়ই তাদের যিশুর সেই কথাগুলো মনে পড়ে যেত। সেইজন্য, যখন আপনিও কোনো ছোটো পাখিকে দেখেন, তখন মনে রাখবেন, আপনি যিহোবার চোখে খুবই বিশেষ কারণ তাঁর কাছে আপনি “অনেক চড়ুই পাখির চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান।” যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন, তাই যতই আপনার বিরোধিতা করা হোক না কেন, আপনি সাহসের সঙ্গে সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারবেন।—গীত. ১১৮:৬.

কীভাবে সৃষ্টি থেকে যিহোবার বিষয়ে আরও জানা যায়?

১৩. যিহোবার সৃষ্টি থেকে আরও শেখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৩ আমরা যিহোবার সৃষ্টি থেকে তাঁর বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানতে পারি। এমনটা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? সবচেয়ে প্রথমে আমাদের যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য সময় বের করতে হবে। এরপর আমাদের চিন্তা করতে হবে, এগুলো থেকে আমরা যিহোবার বিষয়ে কী জানতে পেরেছি। এমনটা করা হয়তো সবসময় সহজ না-ও হতে পারে। ক্যামেরুনে থাকা বোন জেরলডিন বলেন, “আমি শহরে বড়ো হয়ে উঠেছি, তাই আমি জানি, প্রকৃতির বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে হয়।” আলফ্রেড নামে একজন প্রাচীন বলেন, “আমি দেখি, যিহোবার সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য আগে থেকে একটা সময় স্থির করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ে আমি একান্তে মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করতে পারি যে, এগুলো থেকে যিহোবার বিষয়ে আর কী জানতে পেরেছি।”

দায়ূদ যখন তার আশেপাশে সৃষ্টির উপর মনোযোগ দিতেন, তখন তিনি চিন্তা করতেন, এখান থেকে যিহোবা সম্বন্ধে কী জানা যায় (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. যিহোবার সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার ফলে দায়ূদ কী বুঝতে পেরেছিলেন?

১৪ দায়ূদ যিহোবার সৃষ্টির বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। একবার তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন, “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?” (গীত. ৮:৩, ৪) দায়ূদ যখন রাতে তারা ভরা আকাশ দেখতেন, তখন তিনি শুধু সেটার সৌন্দর্যের উপরই মনোযোগ দিতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি এই বিষয়টাও চিন্তা করতেন, এখান থেকে যিহোবা সম্বন্ধে কী জানা যায়। এভাবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা কতটা মহান। এ ছাড়া, দায়ূদ এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন যে, তিনি যখন তার মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন তিনি কীভাবে বেড়ে উঠছিলেন। তিনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন, তাকে কত অসাধারণ উপায়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান। তাই, দায়ূদের হৃদয় যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল।—গীত. ১৩৯:১৪-১৭.

১৫. আপনি সৃষ্টি থেকে যিহোবার কোন কোন গুণ সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন? (গীতসংহিতা ১৪৮:৭-১০)

১৫ আপনার আশেপাশেও যিহোবার সৃষ্টির এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোর উপর আপনি মনোযোগ দিতে পারেন এবং দায়ূদের মতো সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন। এভাবে আপনি আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন, যিহোবার মধ্যে আর কোন কোন গুণ রয়েছে। যেমন, আপনি যখনই সূর্যের তাপ অনুভব করেন, তখন এই বিষয়ে চিন্তা করুন, যিহোবা কতটা শক্তিশালী একজন ঈশ্বর। (যির. ৩১:৩৫) অথবা আপনি যখন কোনো পাখিকে বাসা তৈরি করতে দেখেন, তখন এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন, যিহোবা কতটা প্রজ্ঞাবান। কিংবা আপনি যখন দেখেন, কোনো কুকুরছানা ওর নিজেরই লেজ ধরার চেষ্টা করছে, তখন এটা থেকে কি বোঝা যায় না, যিহোবা সবসময় আনন্দে থাকেন? আর আপনি যখন দেখেন, একজন মা তার ছোটো সন্তানের সঙ্গে খেলছেন, তখন যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন যে, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। পুরো নিখিলবিশ্বে যিহোবার প্রতিটা সৃষ্টি তাঁর প্রশংসা করে, তা সেটা বড়ো হোক বা ছোটো, আমাদের কাছ থেকে দূরে থাকুক কিংবা আমাদের কাছে। আমাদের শুধু চোখ তুলে দেখতে হবে, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। তা হলেই, আমরা সেগুলো থেকে যিহোবা সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানতে পারব।—পড়ুন গীতসংহিতা ১৪৮:৭-১০.

১৬. কী করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৬ আমাদের ঈশ্বর খুবই প্রজ্ঞাবান, শক্তিশালী এবং আমাদের অনেক ভালোবাসেন আর তিনি সমস্ত কিছু খুবই সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন। আমরা যদি আমাদের আশেপাশে সৃষ্টির উপর মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা তাঁর এই গুণগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে পাব এবং তাঁর সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানতে পারব। তাই আসুন, আমরা যিহোবার সৃষ্টি মনোযোগ দিয়ে দেখার জন্য সময় বের করি এবং চিন্তা করি, এগুলো থেকে আমরা তাঁর বিষয়ে কী শিখতে পারি। এভাবে আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে পারব। (যাকোব ৪:৮) পরের প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সৃষ্টির বিষয়গুলো দেখানোর মাধ্যমে শেখাতে পারে, যাতে তারাও যিহোবার নিকটবর্তী হয়।

গান ৫ যিহোবার আশ্চর্য কাজ

a যিহোবা যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো খুবই অসাধারণ। তাঁর সৃষ্টি দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই, তা বিশাল শক্তিতে পরিপূর্ণ সূর্য কিংবা ছোট্ট বা কোমল একটা ফুলের কুঁড়ি যা-ই হোক না কেন। যিহোবার সৃষ্টি দেখে আমরা এও জানতে পারি, তিনি কেমন ঈশ্বর এবং তাঁর মধ্যে কোন গুণাবলি রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমাদের সময় বের করে সৃষ্টি মনোযোগ সহকারে দেখা উচিত আর এমনটা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে পারি।