অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১২
গান ৮২ ‘তোমাদের আলো উজ্জ্বল হোক’
অন্ধকার থেকে দূরে থাকুন—আলোতে চলুন
“একসময় তোমরা অন্ধকারে ছিলে, কিন্তু এখন তোমরা . . . আলোতে আছ।”—ইফি. ৫:৮.
আমরা কী শিখব?
ইফিষীয় ৫ অধ্যায়ে পৌল যখন অন্ধকার ও আলোর বিষয়ে বলেছিলেন, তখন এর মানে কী ছিল?
১-২. (ক) প্রেরিত পৌল কোন পরিস্থিতিতে ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের চিঠি লিখেছিলেন? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর লক্ষ করব?
প্রেরিত পৌল রোমে একটা ঘরে বন্দি ছিলেন। তিনি ভাই-বোনদের উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য যেতে পারছিলেন না, তাই তাদের চিঠি লিখেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটা চিঠি তিনি ৬০ কিংবা ৬১ খ্রিস্টাব্দে ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন।—ইফি. ১:১; ৪:১.
২ প্রায় ১০ বছর আগে পৌল ইফিষে ছিলেন। সেখানে তিনি লোকদের সুসমাচার জানানোর এবং তাদের শাস্ত্র থেকে শেখানোর জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন। (প্রেরিত ১৯:১, ৮-১০; ২০:২০, ২১) তিনি সেখানকার ভাই-বোনদের খুবই ভালোবাসতেন এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তার চিঠিতে পৌল সেখানকার অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অন্ধকার ও আলোর বিষয়ে লিখেছিলেন। কিন্তু, কেন তিনি তাদের এই বিষয়ে লিখেছিলেন? আর তিনি তাদের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেখান থেকে সমস্ত খ্রিস্টান কী শিখতে পারে? আসুন, আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর লক্ষ করি।
অন্ধকার থেকে আলোতে
৩. ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের চিঠি লেখার সময়ে পৌল কোন শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন?
৩ পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “একসময় তোমরা অন্ধকারে ছিলে, কিন্তু এখন তোমরা . . . আলোতে আছ।” (ইফি. ৫:৮) কেন পৌল ‘অন্ধকার’ ও ‘আলো’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন? তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, ইফিষে থাকা খ্রিস্টানেরা সত্য শেখার আগে যেমন ছিল আর এখন যেমন রয়েছে, সেটার মধ্যে অনেক বড়ো পার্থক্য আছে। আসুন আমরা দেখি, কেন পৌল বলেছিলেন যে, সেখানকার খ্রিস্টানেরা ‘একসময় অন্ধকারে ছিল’?
৪. ইফিষে থাকা খ্রিস্টানেরা কোন দিক দিয়ে মিথ্যা ধর্মের কারণে অন্ধকারে ছিল?
৪ মিথ্যা ধর্মের কারণে অন্ধকারে। ইফিষে থাকা খ্রিস্টানেরা সত্য শেখার আগে মিথ্যা ধর্মের শিক্ষা এবং বিভিন্ন কুসংস্কার মেনে চলত। ইফিষ নগরে আর্তেমিস দেবীর একটা বিখ্যাত মন্দির ছিল। সেইসময়ে এই মন্দিরকে পৃথিবীর সাতটা আশ্চর্যের মধ্যে ধরা হত। সেখানকার লোকেরা মূর্তিপূজা করত। কিছু লোক আর্তেমিস দেবীর ছোটো ছোটো মন্দির তৈরি করে বিক্রি করত। এভাবে, তারা অনেক টাকা রোজগার করত। তাই, এটা অনেক বড়ো একটা ব্যাবসা ছিল। (প্রেরিত ১৯:২৩-২৭) এ ছাড়া, এই নগর জাদুবিদ্যার জন্য বিখ্যাত ছিল।—প্রেরিত ১৯:১৯.
৫. ইফিষে থাকা খ্রিস্টানেরা কোন দিক দিয়ে অনৈতিক কাজের কারণে অন্ধকারে ছিল?
৫ অনৈতিক কাজের কারণে অন্ধকারে। ইফিষের লোকেরা খুবই অনৈতিক ও নির্লজ্জ কাজ করত। সেখানকার থিয়েটারগুলোতে খুবই অশ্লীল নাটক দেখানো হত। শুধু তা-ই নয়, ধর্মীয় উৎসবগুলোতে খুবই নোংরা কথাবার্তা শোনা যেত। (ইফি. ৫:৩) সেখানকার বেশিরভাগ লোক ‘আর নৈতিক মান বুঝতে পারত না,’ অন্যভাবে বললে, তাদের হৃদয় “অসার” হয়ে গিয়েছিল। (ইফি. ৪:১৭-১৯) সত্য শেখার আগে ইফিষের লোকেরা যিহোবার মানগুলো জানত না। তাই, তারা যে-খারাপ কাজগুলো করত, সেগুলো তাদের কাছে খারাপ বলে মনে হত না। তাদের বিবেক কাজ করত না। তারা এটাও চিন্তা করত না যে, তাদের খারাপ কাজগুলোর কারণে তাদের যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে হবে। তাই পৌল তাদের বিষয়ে বলেছিলেন, “তাদের মন অন্ধকারে রয়েছে এবং ঈশ্বর আমাদের যে-জীবন দিতে চান, তারা তা গ্রহণ করে না।”
৬. কেন পৌল ইফিষে থাকা লোকদের বলেছিলেন যে, তারা ‘আলোতে আছে’?
৬ ইফিষের কিছু লোক সবসময় অন্ধকারে থাকেনি। পৌল বলেছিলেন, ‘এখন তারা প্রভুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আলোতে আছে।’ (ইফি. ৫:৮) তারা বাইবেলে দেওয়া সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করতে শুরু করেছিল, যেটা একটা আলোর মতো। (গীত. ১১৯:১০৫) তারা মিথ্যা ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলা এবং অনৈতিক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা “ঈশ্বরের অনুকারী” হওয়ার এবং যিহোবার উপাসনা করার আর তাঁকে খুশি করার প্রচেষ্টা করেছিল।—ইফি. ৫:১.
৭. কীভাবে আমরাও ইফিষের খ্রিস্টানদের মতো?
৭ একইভাবে, সত্য শেখার আগে আমরাও অন্ধকারে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করত, আবার অনেকে অনৈতিক জীবনযাপন করত। কিন্তু, আমরা যখন যিহোবার মান সম্বন্ধে জেনেছি এবং শিখেছি, কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল, তখন আমরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন করেছি এবং যিহোবার মান অনুযায়ী চলতে শুরু করেছি। এই কারণে আমরা অনেক উপকার পেয়েছি। (যিশা. ৪৮:১৭) কিন্তু, আমাদের প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। আমাদের অন্ধকার থেকে দূরে থাকতে হবে অর্থাৎ এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যেগুলো আমরা ছেড়ে দিয়েছি এবং ‘আলোর সন্তান হিসেবে চলতে’ হবে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
অন্ধকার থেকে দূরে থাকুন
৮. ইফিষীয় ৫:৩-৫ পদ অনুযায়ী ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের কোন বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল?
৮ ইফিষীয় ৫:৩-৫ পদ পড়ুন। অনৈতিক কাজ করার কারণে ইফিষের খ্রিস্টানেরা যে-অন্ধকারের মধ্যে ছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য তাদের কী করতে হয়েছিল? তাদের সেই কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল, যেগুলো যিহোবা ঘৃণা করেন। তাদের যে শুধু অনৈতিক কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল, এমন নয়। তাদের নোংরা কথাবার্তা বলা এবং তা শোনা এড়িয়ে চলতে হয়েছিল। পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তারা যদি “খ্রিস্ট ও ঈশ্বরের রাজ্য লাভ” করতে চায়, তা হলে তাদের এই সমস্ত ধরনের কথা বলা এবং কাজ করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
৯. কেন আমাদের সমস্ত ধরনের অনৈতিক কাজ এবং কথাবার্তা থেকে দূরে থাকতে হবে?
৯ আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা যেন আবারও ‘অন্ধকারের নিষ্ফল কাজগুলো’ করে না ফেলি। (ইফি. ৫:১১) যে-ব্যক্তি নোংরা ছবি দেখেন এবং অশ্লীল কথা বলেন অথবা শোনেন, তিনি সহজেই অনৈতিক কাজ করে ফেলতে পারেন। আর এমনটা অনেকের প্রতি ঘটেছে। (আদি. ৩:৬; যাকোব ১:১৪, ১৫) একটা দেশে অনেক যিহোবার সাক্ষি অনলাইনে একটা গ্রুপে একে অন্যকে ম্যাসেজ পাঠাত। প্রথম প্রথম তারা সবাই যিহোবা ও সত্য নিয়ে কথা বলত। তবে, ধীরে ধীরে তারা এমন বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে, যেগুলো যিহোবা পছন্দ করেন না। তারা বেশিরভাগ সময়েই অনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলত। পরে অনেক সাক্ষি বলেছিল, এই ধরনের নোংরা কথাবার্তার কারণে তারা অনৈতিক কাজ করে ফেলেছিল।
১০. শয়তান কোন কোন উপায়ে আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে? (ইফিষীয় ৫:৬)
১০ শয়তানের জগৎ আমাদের বিশ্বাস করাতে চায়, যিহোবা যে-বিষয়গুলোকে অনৈতিক ও নোংরা হিসেবে দেখেন, সেগুলো একদমই ভুল নয়। (২ পিতর ২:১৯) কিন্তু, আমরা অবাক হই না! এটা শয়তানের অনেক পুরোনো চাতুরী। সে শুরু থেকেই লোকদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, যাতে লোকেরা সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে না পারে। (যিশা. ৫:২০; ২ করি. ৪:৪) এই কারণে বর্তমানে বেশিরভাগ সিনেমা, টিভির প্রোগ্রাম এবং ওয়েবসাইটে এমন বিষয়গুলো থাকে, যেগুলো যিহোবার মানের বিরুদ্ধে। শয়তান আমাদের বিশ্বাস করাতে চায়, নোংরা কথাবার্তা বলা এবং অনৈতিক জীবনযাপন করা ভুল নয় আর আমাদের কোনো ক্ষতি হয় না বরং এতে অনেক আনন্দ আসে।—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:৬.
১১. বোন অ্যানজেলার অভিজ্ঞতা থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, ইফিষীয় ৫:৭ পদের কথাগুলো মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ? (ছবিও দেখুন।)
১১ শয়তান চায়, আমরা যেন এমন লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করি, যারা আমাদের যিহোবার মান মেনে চলতে বাধা দেবে। তাই, পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন, তারা যেন ‘তাদের মতো কাজ না করে,’ যারা যিহোবার চোখে খারাপ কাজ করে চলে। (ইফি. ৫:৭) আমাদের মনে রাখতে হবে, বন্ধুত্ব করার মানে শুধু এটা নয় যে, আমরা কাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করি বরং এটাও যে, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাদের সঙ্গে কথা বলি। ইফিষের খ্রিস্টানদের সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদের মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু, আমাদের সামনে এর বিপদ রয়েছে। তাই, আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এশিয়ায় থাকা অ্যানজেলা a নামে একজন বোন বুঝতে পেরেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়া কত বড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে। তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জন্য একটা ফাঁদ হতে পারে আর ধীরে ধীরে আমাদের বিবেক অকেজো হয়ে যেতে পারে। আমার সঙ্গে এটাই ঘটেছিল। আমি এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শুরু করেছিলাম, যারা যিহোবার মানগুলোর প্রতি সম্মান দেখাত না। আর আমি এটাকে অতটাও গুরুত্ব দিতাম না। আমি জানতাম, যিহোবা কোন কাজগুলো ঘৃণা করেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, এগুলো ঠিকই আছে, একটু-আধটু করলে ক্ষতি কী!” প্রাচীনদের সাহায্যে বোন অ্যানজেলা তার চিন্তাভাবনা পালটাতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “এখন আমি সোশ্যাল মিডিয়ার উপর মনোযোগ দিই না বরং যিহোবা এবং তাঁর চিন্তাভাবনার উপর মনোযোগ দিই।”
১২. যিহোবার মান মেনে চলার জন্য আমাদের কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে?
১২ এই জগৎ বার বার আমাদের বোঝাতে চায় যে, অনৈতিক কাজ করা ভুল নয়। কিন্তু আমরা জানি, এটা ভুল। তাই, আমাদের প্রাণপণ প্রচেষ্টা করতে হবে যেন এই জগতের চিন্তাভাবনা আমাদের উপর প্রভাব না ফেলে। (ইফি. ৪:১৯, ২০) তাই, আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি যিহোবার মান মেনে চলি বলে লোকেরা যখন আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে অথবা উলটোপালটা কথা বলে, তখনও কি আমি সাহসের সঙ্গে যিহোবার মান মেনে চলি? আমি কি এমন লোকদের সঙ্গে অযথা সময় কাটানো এড়িয়ে চলি, যারা যিহোবার মানকে সম্মান করে না, যেমন আমার সহপাঠী, সহকর্মী অথবা অন্যান্য লোক?’ ২ তীমথিয় ২:২০-২২ পদ থেকে বোঝা যায়, আমাদের মণ্ডলীতেও ভেবে-চিন্তে বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে হবে। কেন? কারণ মণ্ডলীতেও এমন কিছু ব্যক্তি থাকতে পারে, যারা আমাদের যিহোবার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে।
‘আলোর সন্তান হিসেবে চলতে’ থাকুন
১৩. ‘আলোর সন্তান হিসেবে চলার’ মানে কী? (ইফিষীয় ৫:৭-৯)
১৩ পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, তাদের সবসময় অন্ধকার থেকে দূরে থাকতে হবে আর সেইসঙ্গে ‘আলোর সন্তান হিসেবেও চলতে’ হবে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:৭-৯.) সহজভাবে বললে, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা হলাম সত্য খ্রিস্টান আর আমাদের সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। এটা করার একটা উপায় হল, বাইবেল এবং সেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা প্রকাশনা মন দিয়ে পড়া আর তা নিয়ে অধ্যয়ন করা। আমাদের যিশুর শিক্ষাগুলোর উপর আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে এবং তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যিনি হলেন “জগতের আলো।”—যোহন ৮:১২; হিতো. ৬:২৩.
১৪. কীভাবে পবিত্র শক্তি আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৪ ‘আলোর সন্তান হিসেবে চলার’ জন্য আমাদের পবিত্র শক্তিরও সাহায্য নিতে হবে। কেন? কারণ এই জগৎ অনৈতিকতায় ভরে গিয়েছে আর এর মধ্যে নিজেদের শুদ্ধ রাখা সহজ নয়। (১ থিষল. ৪:৩-৫, ৭, ৮) কিন্তু, পবিত্র শক্তির সাহায্যে আমরা জগতের সেইসমস্ত চিন্তাভাবনা ও মনোভাবকে নিজেদের উপর প্রভাব ফেলতে দেব না, যেগুলো যিহোবার চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে না। এ ছাড়া, পবিত্র শক্তির সাহায্যে আমরা ‘ধার্মিক হতে এবং সত্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে’ পারব।—ইফি. ৫:৯.
১৫. পবিত্র শক্তি পাওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? (ইফিষীয় ৫:১৯, ২০)
১৫ পবিত্র শক্তির পাওয়ার একটা উপায় হল, এটার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা। যিশু বলেছিলেন, ‘[যিহোবার] কাছে যারা চায়, তিনি তাদের পবিত্র শক্তি দেবেন।’ (লূক ১১:১৩) এ ছাড়া, আমরা যখন সভায় প্রত্যেকের সঙ্গে যিহোবার উপাসনা করি, তখন আমরা পবিত্র শক্তি পাই। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৯, ২০.) পবিত্র শক্তি যখন আমাদের মধ্যে কাজ করে, তখন আমরা এমনভাবে জীবনযাপন করি, যেটা দেখে যিহোবা খুশি হন।
১৬. সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (ইফিষীয় ৫:১০, ১৭)
১৬ আমাদের যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আমাদের বোঝার চেষ্টা করা উচিত, সেই বিষয়ে “যিহোবার ইচ্ছা কী” আর তারপর আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করা উচিত। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১০, ১৭.) এভাবে, আমরা যখন বাইবেলের নীতিগুলো জানার চেষ্টা করব, তখন আমরা জানতে পারব, সেই বিষয়ে যিহোবা কী চিন্তা করেন। আর সেই নীতিগুলো কাজে লাগালে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
১৭. কীভাবে আমরা বুঝে-শুনে আমাদের সময়কে ব্যবহার করতে পারি? (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) (ছবিও দেখুন।)
১৭ পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তারা যেন তাদের সময়কে বুঝে-শুনে ব্যবহার করে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬.) শয়তান খুবই দুষ্ট। সে চায় যেন আমরা জগতের কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, আমাদের হাতে যিহোবার সেবা করার জন্য সময়ই না বাঁচে। (১ যোহন ৫:১৯) এই কারণে একজন খ্রিস্টান হয়তো টাকাপয়সা কামাতে, পড়াশোনা করতে অথবা একটা ভালো কেরিয়ার তৈরি করতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি যিহোবার সেবার চেয়ে এগুলোকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখেন। একজন খ্রিস্টানের প্রতি যদি তা হয়, তার মানে জগতের চিন্তাভাবনা তার উপর প্রভাব ফেলছে। যদিও এগুলো ভুল নয়, তবে আমরা যেন এগুলোকে জীবনে প্রথম স্থানে না রাখি। ‘আলোর সন্তান হিসেবে চলার’ জন্য ‘[আমাদের] সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করতে’ হবে অর্থাৎ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে হবে।
১৮. নিজের সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য ডোনাল্ড কী করেছিলেন?
১৮ চিন্তা করুন, কীভাবে আপনি আরও বেশি করে যিহোবার সেবা করতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ডোনাল্ড নামে একজন ভাই বলেন, “আমি চিন্তা করেছিলাম, আরও বেশি করে প্রচার করার জন্য আমি কী করতে পারি। তাই, আমি যিহোবার কাছে মন থেকে প্রার্থনা করেছিলাম। আমি বিনতি করে বলেছিলাম, আমি যেন এমন একটা কাজ খুঁজে পাই, যাতে আমি প্রচারে বেশি সময় দিতে পারি। যিহোবা আমাকে সাহায্য করেছিলেন আর আমি এইরকমই একটা কাজ খুঁজে পেয়েছিলাম। এরপর, আমি আর আমার স্ত্রী পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করি।”
১৯. ‘আলোর সন্তান হিসেবে চলার’ জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৯ পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেটা তাদের যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে অনেক সাহায্য করেছিল। যিহোবার কাছ থেকে আসা সেই পরামর্শগুলো মেনে চললে আজ আমরাও অনেক উপকার পেতে পারি। যেমন, আমরা বিনোদন ও বন্ধুবান্ধব বাছাই করার সময়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমরা যদি ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করি, তা হলে আমরা সত্যের আলোতে চলতে পারব। আমরা বুঝতে পারব, পবিত্র শক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, যেটার সাহায্যে আমরা নিজেদের মধ্যে ভালো গুণ বাড়াতে পারব। আমরা যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। এইসমস্ত কিছু করলে আমরা অন্ধকার থেকে দূরে থাকতে পারব এবং ক্রমাগত আলোতে চলতে পারব।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
-
ইফিষীয় ৫:৮ পদ বলা ‘অন্ধকার’ ও ‘আলোর’ মানে কী?
-
কীভাবে আমরা ‘অন্ধকার’ থেকে দূরে থাকতে পারি?
-
কীভাবে আমরা ‘আলোর সন্তান হিসেবে চলতে’ পারি?
গান ৯৫ উজ্জ্বল ধীরে ধীরে হয় আলো
a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: প্রেরিত পৌল ইফিষে থাকা খ্রিস্টানদের যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেটারই একটা পুরোনো কপি।