সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১০

গান ১৩ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

বাপ্তিস্মের পরও যিশুকে ‘অনুসরণ করে চলুন’

বাপ্তিস্মের পরও যিশুকে ‘অনুসরণ করে চলুন’

“কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করতে চায়, তা হলে সে নিজেকে অস্বীকার করুক, নিজের যাতনাদণ্ড তুলে নিক এবং প্রতিদিন তা বহন করুক আর আমাকে অনুসরণ করে চলুক।”লূক ৯:২৩.

আমরা কী শিখব?

এই প্রবন্ধে আমরা শিখব, আমরা যে নিজেদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছি, কীভাবে সেই অনুযায়ী চলতে পারি। এই প্রবন্ধ বিশেষ করে সেই ব্যক্তিদের যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে, যারা কিছুসময় আগে বাপ্তিস্ম নিয়েছে।

১-২. বাপ্তিস্মের পর আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পাই?

 আমরা যখন বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার পরিবারের অংশ হই, তখন আমরা খুবই আনন্দিত হই। আমরা দায়ূদের মতো অনুভব করি, যিনি লিখেছিলেন, “ধন্য সেই, যাহাকে তুমি [যিহোবা] মনোনীত করিয়া নিকটে আন, সে তোমার প্রাঙ্গণে বাস করিবে।”—গীত. ৬৫:৪.

যিহোবা কোন ধরনের ব্যক্তিদের তাঁর প্রাঙ্গণে ডাকেন এবং তাঁর পরিবারের অংশ হওয়ার সুযোগ দেন? আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছিলাম, তিনি সেই ব্যক্তিদের তাঁর দিকে আকর্ষণ করেন, যারা সত্যিই তাঁর নিকটবর্তী হতে চায়। (যাকোব ৪:৮) আপনি যখন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং বাপ্তিস্ম নেন, তখন যিহোবার সঙ্গে আপনার এক বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, এরপর তিনি ‘আপনার প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ’ করবেন।—মালাখি ৩:১০; যির. ১৭:৭, ৮.

৩. বাপ্তিস্মের পর একজন খ্রিস্টানকে কী করতে হবে? (উপদেশক ৫:৪, ৫)

বাপ্তিস্ম হল যাত্রার শুরু। এরপর, আপনাকে কী করতে হবে? আপনাকে প্রলোভিত করা হলেও অথবা আপনার উপর সমস্যা এলেও আপনি যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই অনুসারে চলার জন্য আপনাকে পুরোপুরি চেষ্টা করতে হবে। (পড়ুন, উপদেশক ৫:৪, ৫.) আর যেহেতু আপনি যিশুর শিষ্য, তাই আপনাকে তাঁর মতো হওয়ার এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করার চেষ্টা করতে হবে। (মথি ২৮:১৯, ২০; ১ পিতর ২:২১) এই প্রবন্ধে আপনি জানতে পারবেন, কীভাবে আপনি এই সমস্ত কিছু করতে পারেন।

পরীক্ষা ও সমস্যা এলেও যিশুকে ‘অনুসরণ করে চলুন’

৪. যিশু যখন বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের ‘যাতনাদণ্ড বহন’ করতে হবে, তখন তিনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? (লূক ৯:২৩)

বাপ্তিস্ম নেওয়ার মানে এই নয় যে, আপনার জীবনে আর কোনো সমস্যা আসবে না। যিশু বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের ‘যাতনাদণ্ড বহন’ করতে হবে। তিনি এও বলেছিলেন, তাদের “প্রতিদিন” তা করতে হবে। (পড়ুন, লূক ৯:২৩.) এখানে যিশু কি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, তাঁর শিষ্যদের উপর সবসময় সমস্যা আসবে? না। যিশু আসলে বোঝাতে চেয়েছিলেন, তাঁর শিষ্যেরা আশীর্বাদ পাবে, কিন্তু এর পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সমস্যারও মুখোমুখি হতে হবে। আর কিছু সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করা অনেক কঠিন হবে।—২ তীম. ৩:১২.

৫. যিশুকে অনুসরণ করার জন্য যারা বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করে থাকে, তারা কোন কোন আশীর্বাদ পায়?

আপনার পরিবারের সদস্যেরা হয়তো আপনার বিরোধিতা করেছে কিংবা ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথম স্থানে রাখার জন্য আপনি বেশি টাকাপয়সা রোজগার করার সুযোগকে হাতছাড়া করেছেন। (মথি ৬:৩৩) আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনার করা একটা ত্যাগস্বীকারও যিহোবা ভুলে যাবেন না। (ইব্রীয় ৬:১০) এই সমস্ত কিছু ত্যাগ করে আপনি হয়তো যিশুর বলা এই কথাগুলো নিজের জীবনে ঘটতে দেখেছেন: “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে-কেউ আমার জন্য এবং সুসমাচারের জন্য কি বাড়ি, কি ভাই, কি বোন, কি মা, কি বাবা, কি সন্তান, কি জমিজমা ত্যাগ করে, সে এখনই এই বর্তমান যুগে এগুলোর ১০০ গুণ পাবে অর্থাৎ বাড়ি, ভাই, বোন, মা, সন্তান ও জমিজমা তাড়নার সঙ্গে পাবে আর সেইসঙ্গে আসন্ন বিধিব্যবস্থায় অনন্তজীবন লাভ করবে।” (মার্ক ১০:২৯, ৩০) আপনি হয়তো দেখেছেন যে, আপনি যা-কিছু ত্যাগস্বীকার করেছেন, সেগুলোর চেয়ে আরও বেশি আশীর্বাদ পেয়েছেন।—গীত. ৩৭:৪.

৬. কেন বাপ্তিস্মের পরও আমাদের ‘মাংসিক আকাঙ্ক্ষার’ বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে?

বাপ্তিস্মের পর আমরা নিখুঁত হয়ে যাই না। তাই, এর পরও আমাদের হয়তো ‘মাংসিক আকাঙ্ক্ষার’ বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। (১ যোহন ২:১৬) এইরকম সময়ে কখনো কখনো আমরা পৌলের মতো মনে করতে পারি। তিনি বলেছিলেন, “আমি হৃদয়ে আসলেই ঈশ্বরের আইনে আনন্দ করি, কিন্তু আমি আমার দেহে আরেকটা আইন দেখতে পাই, যা আমার মনের আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং আমার দেহে পাপের যে-আইন রয়েছে, সেটার কাছে আমাকে বন্দি করে।” (রোমীয় ৭:২২, ২৩) পৌলের মতো আমাদেরও হয়তো নিজেদের আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন বলে মনে হয় আর কখনো কখনো আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। তবে, আমরা যদি উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞার কথা মাথায় রাখি, তা হলে আমাদের সামনে যেকোনো পরীক্ষাই আসুক না কেন, আমরা সেটা মোকাবিলা করতে পারব। আসলে, এই প্রতিজ্ঞার কথা মাথায় রাখলে আমাদের প্রলোভিত করা হলেও আমাদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যাবে। কীভাবে?

৭. উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞার কথা মাথায় রাখলে কীভাবে আপনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবেন?

আপনি যখন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন, তখন আপনি নিজেকে অস্বীকার করেন অর্থাৎ আপনি আপনার সেইসমস্ত আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেন, যেগুলো যিহোবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। (মথি ১৬:২৪) তাই যখন কোনো প্রলোভন অথবা সমস্যা আসে, তখন আপনাকে অতিরিক্ত চিন্তা করতে হয় না যে, আপনি কী করবেন বা কী করবেন না। কেন? কারণ আপনি আগে থেকে স্থির করে রেখেছেন, জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, আপনি সবসময় যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন। আপনি সেটাই করবেন, যেটা দেখে তিনি খুশি হবেন। এমনটা করার মাধ্যমে আপনি ইয়োবের মতো হতে পারবেন। তার উপর অনেক বড়ো বড়ো সমস্যা এসেছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন, “আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমার বিশ্বস্ততা পরিত্যাগ করব না!”—ইয়োব ২৭:৫, NW.

৮. যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সময়ে আপনি যে-প্রার্থনা করেছিলেন, সেটা মনে রাখলে কীভাবে আপনি প্রলোভনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন?

আপনি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সময়ে যে-প্রার্থনা করেছিলেন, সেটা যদি আপনি মনে রাখেন, তা হলে আপনাকে প্রলোভিত করা হলেও আপনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবেন। যেমন, আপনি কোনো বিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের ভান করার কথা চিন্তাও করবেন না কারণ আপনি আগে থেকে যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, আপনি যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন। এমনটা করলে খারাপ আকাঙ্ক্ষাগুলো আপনার হৃদয়ে বাসা বাঁধবে না এবং আপনার হৃদয় আপনাকে দোষী করবে না। এভাবে, আপনি “দুষ্টদের পথে” চলা “এড়িয়ে” চলবেন।—হিতো ৪:১৪, ১৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

৯. যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সময়ে আপনি যে-প্রার্থনা করেছিলেন, সেটা মনে রাখলে কীভাবে আপনি যিহোবাকে আপনার জীবনে প্রথম স্থান দিতে পারবেন?

ধরুন, আপনি এমন একটা চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন, যেটার কারণে আপনি নিয়মিতভাবে সভায় যেতে পারবেন না। এইরকম পরিস্থিতিতে আপনি বেশি চিন্তা করবেন না, আপনি দ্রুত সেই চাকরিটা প্রত্যাখ্যান করে দেবেন। কারণ আপনি আগে থেকে চিন্তা করে রেখেছেন যে, কোনো কিছুকেই যিহোবার উপাসনা করার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেবেন না। আপনি এই চিন্তা করবেন না, ‘এখন আমি চাকরিটা নিয়ে নিই এবং পরে যে করেই হোক সভাতে ঠিকই যাব।’ এর পরিবর্তে, আপনি যিশুর উদাহরণ মনে রাখবেন, যিনি প্রতিটা পরিস্থিতিতে তাঁর পিতাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন। আপনি এমন কিছু করার বিষয়ে স্পষ্টভাবে না করে দেবেন, যেটার কারণে যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করা আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।—মথি ৪:১০; যোহন ৮:২৯.

১০. বাপ্তিস্মের পরও যিশুকে ‘অনুসরণ করে চলার’ জন্য যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করবেন?

১০ আপনাকে যখন প্রলোভিত করা হয় বা কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তখন আপনি এটা দেখানোর সুযোগ পান যে, প্রতিটা পরিস্থিতিতে আপনি যিশুকে ‘অনুসরণ করতে চান।’ আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, এটা করার জন্য যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন। বাইবেলে লেখা আছে: “ঈশ্বর বিশ্বস্ত এবং তিনি তোমাদের উপর সহ্যের অতিরিক্ত প্রলোভন আসতে দেবেন না, বরং প্রলোভনের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের জন্য রক্ষার পথও করে দেবেন, যেন তোমরা তা সহ্য করতে পার।”—১ করি. ১০:১৩.

কীভাবে যিশুকে অনুসরণ করে চলবেন?

১১. যিশুকে অনুসরণ করে চলার একটা উপায় কী? (ছবিও দেখুন।)

১১ যিশু উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতেন এবং ক্রমাগত তাঁর কাছে প্রার্থনা করতেন। (লূক ৬:১২) এই কারণে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ থাকতে পেরেছিলেন। বাপ্তিস্মের পরও আপনি কীভাবে যিশুকে অনুসরণ করে চলতে পারেন? একটা উপায় হল, সেই কাজগুলো করে চলুন, যেগুলোর ফলে আপনি যিহোবার ঘনিষ্ঠ থাকতে পারবেন। বাইবেল আমাদের বলে, “আমরা যতটা উন্নতি করেছি, এসো, আমরা ক্রমাগত সেই একই ধারায় চলি।” (ফিলি. ৩:১৬) বর্তমানে অনেক ভাই-বোন আরও বেশি করে যিহোবার সেবা করার প্রচেষ্টা করছে। অনেকে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল-এ যোগ দিচ্ছে, আবার অনেকে যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করছে। আপনিও যদি এমন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে চান, তা হলে অবশ্যই তা করুন। যিহোবার লোকেরা সবসময় আরও বেশি করে তাঁর সেবা করার প্রচেষ্টা করে। (প্রেরিত ১৬:৯) কিন্তু, বর্তমানে আপনি যদি তা না করতে পারেন, তা হলে হতাশ হবেন না। এটা চিন্তা করবেন না যে, সেই ভাই-বোনদের তুলনায় আপনি কিছুই করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আপনি যেন খ্রিস্টীয় পথে ধৈর্য ধরে দৌড়োতে থাকেন। (মথি ১০:২২) আপনি আপনার ক্ষমতা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী যতটা করতে পারেন, সেটাকে কম বলে মনে করবেন না। যিহোবা আপনার সেবাকে অনেক মূল্যবান হিসেবে দেখেন। এভাবে, মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করলে বাপ্তিস্মের পরও আপনি যিশুকে অনুসরণ করে চলতে পারবেন।—গীত. ২৬:১.

বাপ্তিস্মের পরও সেই কাজগুলো করে চলুন, যেগুলোর ফলে আপনি যিহোবার ঘনিষ্ঠ থাকতে পারবেন (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১২-১৩. আপনার উদ্যোগ যদি কমে যায়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? (১ করিন্থীয় ৯:১৬, ১৭) (এ ছাড়া, “ দৌড়োতে থাকুন” বক্স দেখুন।)

১২ আপনার কি অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছে, আপনি সবসময় একইরকম প্রার্থনা করেন? আপনি কি প্রচার কাজ করে আনন্দ লাভ করছেন না অথবা বাইবেল পড়তে আপনার কি একঘেয়ে লাগছে? যদি এমনটা হয়, তা হলে এটা চিন্তা করবেন না যে, যিহোবা আপনাকে দেখে খুশি নন। আমরা যেহেতু নিখুঁত নই, তাই আমাদের চিন্তাভাবনা সবসময় পালটাতে থাকে আর আমাদের উদ্যোগ সবসময় একইরকম থাকে না। আপনার একার প্রতিই যে এই সমস্ত কিছু ঘটছে, এমন নয়। প্রেরিত পৌলের প্রতিও এমনটাই ঘটেছিল। প্রেরিত পৌল যিশুকে অনুসরণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন, কিন্তু কখনো কখনো তার সেবা করতে ইচ্ছা করত না। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৯:১৬, ১৭.) তিনি বলেছিলেন, “আমি যদি আমার ইচ্ছার বিপরীতেও তা করি, তবুও আমাকে আস্থা সহকারে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আমি তা করি।” পৌলের কথা থেকে বোঝা যায়, তিনি স্থির করেছিলেন, তার ইচ্ছা না করলেও তিনি যিহোবার সেবা করে চলবেন।

১৩ পৌলের কাছ থেকে আমরা কী শিখি? আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেবেন না। ইচ্ছা না করলেও সঠিক কাজ করে চলুন। এমনটা করলে ধীরে ধীরে সঠিক কাজ করতে আপনার ভালো লাগবে। তাই ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করুন, প্রার্থনা করুন, সভাতে যান এবং প্রচার করুন। এই কাজগুলো করলে আপনি বাপ্তিস্মের পরও যিশুকে অনুসরণ করে চলতে পারবেন। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা যখন দেখবে যে, আপনি যিহোবার সেবায় ব্যস্ত রয়েছেন, তখন তারাও অনেক উৎসাহিত হবে।—১ থিষল. ৫:১১.

“সবসময় নিজেদের পরীক্ষা করে দেখো . . . প্রমাণ করে চলো”

১৪. নিয়মিতভাবে আপনার কোন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত এবং কেন? (২ করিন্থীয় ১৩:৫)

১৪ বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর নিজেকে পরীক্ষা করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিতভাবে চিন্তা করুন: ‘আমি কীভাবে জীবনযাপন করছি এবং আমার কোন কোন অভ্যাস রয়েছে?’ (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১৩:৫.) ‘আমি কি রোজ প্রার্থনা করছি, বাইবেল পড়ছি এবং সেটির অধ্যয়ন করছি?’ ‘আমি কি ক্রমাগত প্রচারে ও সভাতে যাচ্ছি?’ এরপর চিন্তা করুন, আপনি কীভাবে এই কাজগুলো আরও ভালোভাবে করতে পারেন। যেমন, আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আমি কি বাইবেলের শিক্ষাগুলো অন্যদেরও ভালোভাবে বোঝাতে পারি? আমি কীভাবে আরও আনন্দের সঙ্গে প্রচার করতে পারি? আমি কি প্রার্থনায় যিহোবাকে স্পষ্টভাবে বলি যে, আমার মনে কী চলছে? আমার প্রার্থনা থেকে কি বোঝা যায়, যিহোবার উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে? আমি কি প্রতিটা সভায় যাই? আমি কীভাবে সভাতে আরও মনোযোগ দিতে পারি এবং ভালোভাবে অংশ নিতে পারি?’

১৫-১৬. আপনি ভাই রবার্টের উদাহরণ থেকে কী শিখেছেন?

১৫ আমাদের কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন? ভাই রবার্টের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেন, “আমার বয়স যখন ২০ বছর ছিল, তখন আমি একটা পার্ট টাইম কাজ করতাম। একদিন কাজের পর অফিসের একটা মেয়ে আমাকে তার বাড়িতে ডাকে। সে বলে যে, সেদিন সে একা থাকবে আর আমরা খুব মজা করব। প্রথমে আমি কিছু অজুহাত দিই। কিন্তু পরে, আমি স্পষ্টভাবে না বলে দিই আর এও বলি, আমি কেন যেতে পারব না।” এটা ভালো যে, ভাই রবার্ট সেই প্রলোভনে পড়েননি। কিন্তু, পরে যখন তিনি এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন, তখন তার মনে হয়েছিল, তিনি আরও ভালোভাবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারতেন। তিনি বলেন, “যোষেফ পোটীফরের স্ত্রীকে সঙ্গেসঙ্গে না করে দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি করতে পারিনি। (আদি. ৩৯:৭-৯) আমার এই বিষয়ে চিন্তা করে খুব অবাক লাগছিল যে, কেন তাকে না বলতে আমার দেরি হয়েছিল। এখান থেকে আমি একটা বিষয় শিখি, যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

১৬ ভাই রবার্টের মতো আপনিও নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এতে আপনার অনেক উপকার হবে। যদিও আপনি প্রলোভনের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন, তবুও নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার না বলতে কতক্ষণ লেগেছে?’ আপনার যদি মনে হয়, নিজেকে শোধরাতে হবে, তা হলে নিজেকে দোষ দেবেন না বরং এই বিষয়ে খুশি হোন যে, আপনি জানতে পেরেছেন, আপনার কোথায় দুর্বলতা রয়েছে। যিহোবার কাছে এই বিষয়ে প্রার্থনা করুন। তারপর কিছু পদক্ষেপ নিন, যাতে যিহোবার উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার ব্যাপারে আপনার সঙ্কল্প আরও দৃঢ় হতে পারে।

১৭. কীভাবে ভাই রবার্ট যিহোবার নামের প্রশংসা করেছিলেন?

১৭ ভাই রবার্টের উদাহরণ এখানেই শেষ নয়। তিনি বলেন, “আমি যখন সেই মেয়েটাকে না বলি, তখন সে বলে, ‘তুমি পরীক্ষায় পাস করেছ!’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, এর মানে কী? সে বলে, তার এক বন্ধু আগে একজন যিহোবার সাক্ষি ছিল। সেই বন্ধু তাকে বলে, সমস্ত অল্পবয়সি সাক্ষি একইরকম হয়, তারা বলে এক আর করে এক। আর তাদের যদি খারাপ কাজ করতে বলা হয়, তা হলে সেটা করা থেকে তারা সরে যায় না। তখন সেই মেয়ে তার বন্ধুকে বলে, ‘আমি দেখতে চাই, রবার্টও এইরকম কি না।’” ভাই রবার্ট বলেন, “এটা শোনামাত্রই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম যে, আমি যিহোবার নামের উপর কোনো নিন্দা আসতে দিইনি।”

১৮. বাপ্তিস্মের পরও আপনাকে কী করে চলতে হবে? (এ ছাড়া, “ এই দুটো প্রবন্ধ পড়ুন এবং খ্রিস্টীয় পথে দৌড়ান!” বক্সটা দেখুন।)

১৮ আপনি যখন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং বাপ্তিস্ম নেন, তখন আপনি প্রতিটা পরিস্থিতিতে তাঁর নামকে পবিত্র করেন। যিহোবা যখন দেখেন যে, সমস্যা এলে কিংবা প্রলোভিত করা হলে আপনি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তখন তিনি আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন। তিনি আপনাকে তাঁর পবিত্র শক্তি দেন, যাতে আপনি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন। (লূক ১১:১১-১৩) হ্যাঁ, আপনি যিহোবার সাহায্যে বাপ্তিস্মের পরও যিশুকে অনুসরণ করে চলতে পারবেন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • কীভাবে সত্য খ্রিস্টানেরা ‘প্রতিদিন যাতনাদণ্ড বহন’ করে?

  • বাপ্তিস্মের পরও যিশুকে ‘অনুসরণ করে চলার’ জন্য আপনাকে কী করতে হবে?

  • উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞার কথা মাথায় রাখলে কীভাবে আপনি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন?

গান ৫১ ঈশ্বরকে করি উৎসর্গ