সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১১

গান ১২৯ শেষ পর্যন্ত থাকব স্থির

সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যিহোবার সেবা করে চলুন!

সমস্যা থাকা সত্ত্বেও যিহোবার সেবা করে চলুন!

“তুমি আমার নামের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছ, ক্লান্ত হয়ে পড়নি।”প্রকা. ২:৩.

আমরা কী শিখব?

কখনো কখনো আমরা ভুল করে ফেলি অথবা অন্যেরা আমাদের আঘাত দিয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও, আমরা যিহোবার সেবা করে যেতে পারি।

১. যিহোবার সংগঠনে থাকার ফলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছি?

 জগতের পরিস্থিতি দিনের পর দিনের খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, আমরা কতই-না আনন্দিত যে, আমরা যিহোবার সংগঠনে রয়েছি। যিহোবা আমাদের মণ্ডলীতে এমন ভাই-বোনদের দিয়েছেন এবং এমন এক পরিবার দিয়েছেন, যেখানে সবাই একে অন্যকে মন থেকে ভালোবাসে এবং সবার মধ্যে একতা রয়েছে। (গীত. ১৩৩:১) তিনি আমাদের শেখান, স্বামী-স্ত্রীরা এবং সন্তানেরা কীভাবে আনন্দে থাকতে পারে। (ইফি. ৫:৩৩–৬:১) শুধু তা-ই নয়, আমাদের দুশ্চিন্তার সঙ্গে লড়াই করার জন্য এবং আনন্দে থাকার জন্য তিনি আমাদের বোঝার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা দেন।

২. যিহোবার সেবা করে চলার জন্য আমাদের সবাইকে কী করতে হবে আর কেন?

যদিও যিহোবার সংগঠনে আমরা অনেক আশীর্বাদ পাই, কিন্তু বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। কেন? কারণ অনেকসময় অন্যেরা আমাদের এমন কিছু বলতে পারে অথবা আমাদের সঙ্গে এমন কিছু করতে পারে, যে-কারণে আমরা আঘাত পেতে পারি। অথবা আমরা হয়তো নিজেদের দুর্বলতার জন্য বার বার একই ভুল করে ফেলি এবং হতাশ হয়ে যাই। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, (১) যখন কোনো ভাই কিংবা বোন আমাদের কষ্ট দেয়, (২) যখন আমাদের বিবাহসাথি আমাদের আঘাত দেয় আর (৩) যখন আমরা নিজেদের ভুলের কারণেই হতাশ হয়ে পড়ি, তখন কীভাবে আমরা যিহোবার সেবা করে চলতে পারি এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি। আমরা ঈশ্বরের তিন জন সেবকের উপরও মনোযোগ দেব এবং জানতে পারব, তারা এইরকম পরিস্থিতিতে কী করেছিলেন।

যখন কোনো ভাই কিংবা বোন আপনাকে আঘাত দেয়

৩. যিহোবার লোকদের কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?

সমস্যা। মণ্ডলীর কিছু ভাই-বোনের আচার-আচরণ দেখে আমাদের ভালো লাগে না। অথবা কোনো ভাই কিংবা বোন হয়তো আমাদের আঘাত দিয়েছেন বা আমাদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করেছেন। অথবা কোনো প্রাচীন হয়তো ভুল করেছেন এবং তা দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছি। এইসমস্ত কিছু দেখে কেউ কেউ হয়তো ভাবে, ‘ঈশ্বরের সংগঠনে তো এইরকম হওয়া উচিত নয়!’ তারা ভাই-বোনদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যিহোবার সেবা করার পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে আরও দূরে থাকতে শুরু করে, যারা তাদের আঘাত দিয়েছে। এরপর, তারা হয়তো সভাতে আসাও বন্ধ করে দেয়। (সফ. ৩:৯) এটা করা কি বুদ্ধিমানের কাজ? অতীতেও যিহোবার একজন বিশ্বস্ত সেবকের সামনে এমনই কিছু সমস্যা এসেছিল। আসুন দেখি, তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

৪. পৌল কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন?

উদাহরণ। প্রেরিত পৌলকে ভাই-বোনেরা অনেক আঘাত দিয়েছিল। খ্রিস্টান হওয়ার পরও মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, তিনি সত্যিই যিশুর একজন শিষ্য হয়েছেন। (প্রেরিত ৯:২৬) এর কিছুসময় পর, কিছু ভাই-বোন তার পিছনে খারাপ খারাপ কথা বলেছিল এবং তাকে বদনাম করারও চেষ্টা করেছিল। (২ করি. ১০:১০) এরপর, পৌল একজন প্রাচীনকে এমন একটা ভুল করতে দেখেছিলেন, যেটার কারণে অনেক ভাই-বোন বিঘ্ন পেতে পারত। (গালা. ২:১১, ১২) শুধু তা-ই নয়, পৌলের একজন কাছের বন্ধু মার্ক তার সঙ্গে এমন কিছু করেছিলেন, যে-কারণে পৌল অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৩৭, ৩৮) পৌল চাইলে সেই ভাই-বোনদের থেকে দূরে দূরে থাকতে পারতেন, কিন্তু তিনি এমনটা করেননি কারণ তিনি জানতেন যে, তারা নিখুঁত নয়। তিনি ভাই-বোনদের প্রতি সঠিক মনোভাব বজায় রেখেছিলেন এবং যিহোবার সেবায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কীভাবে তা করতে পেরেছিলেন?

৫. কেন পৌল ভাই-বোনদের ক্ষমা করতে পেরেছিলেন? (কলসীয় ৩:১৩, ১৪) (ছবিও দেখুন।)

প্রেরিত পৌল তার ভাই-বোনদের ভালোবাসতেন, তাই তিনি তাদের খারাপ বিষয়গুলোর উপর নয় বরং ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন। ভালোবাসা থাকার কারণে তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যেমনটা তিনি খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১৩, ১৪.) লক্ষ করুন, পৌল কীভাবে মার্কের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন। পৌলের প্রথম মিশনারি যাত্রায় মার্ক তার সঙ্গেই ছিলেন, কিন্তু কিছুসময় পর মার্ক তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এতে পৌল খুবই রেগে গিয়েছিলেন। তবে, পরে তিনি যখন কলসীয় মণ্ডলীকে চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি মার্কের অনেক প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মার্ক এমন একজন সহকর্মী, “যিনি আমাকে অনেক সান্ত্বনা প্রদান করেছেন।” (কল. ৪:১০, ১১) পরে পৌল যখন রোমে বন্দি ছিলেন, তখন তিনি বিশেষ করে মার্ককে সাহায্যের জন্য ডেকেছিলেন। (২ তীম. ৪:১১) এই বিষয়গুলো থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, পৌল সেই ভাই-বোনদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যারা তাকে আঘাত দিয়েছিল। পৌলের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

পৌল, বার্ণবা ও মার্কের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। তবে, পৌল রেগে থাকেননি। তিনি আবারও মার্কের সঙ্গে হাসিমুখে সেবা করেছিলেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)


৬-৭. ভাই-বোনদের মধ্যে বিভিন্ন দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে আমরা তাদের ক্রমাগত ভালোবাসতে পারি? (১ যোহন ৪:৭)

শিক্ষা। যিহোবা চান যেন আমরা সেইসময়ও ভাই-বোনদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিই, যখন তা করা আমাদের জন্য কঠিন হয়। (পড়ুন, ১ যোহন ৪:৭.) যখন কোনো ভাই অথবা বোন আমাদের আঘাত দেয়, তখন আমাদের এটা চিন্তা করা উচিত নয় যে, তিনি জেনে-শুনে তা করেছেন। আমাদের মনে রাখা উচিত, তিনিও যিহোবার আজ্ঞা পালন করার প্রচেষ্টা করছেন আর হয়তো অজান্তে আমাদের আঘাত দিয়ে ফেলেছেন। (হিতো. ১২:১৮) যিহোবা জানেন, তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও, তিনি তাদের অনেক ভালোবাসেন। তাই, আমরা যখন কোনো ভুল করে ফেলি, তখন তিনি আমাদের উপর রেগে থাকেন না অথবা আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভেঙে ফেলেন না। (গীত. ১০৩:৯) আসুন, আমরাও আমাদের বাবা যিহোবার মতো হই এবং একে অন্যকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিই।—ইফি. ৪:৩২–৫:১.

মনে রাখুন, শেষ যতই এগিয়ে আসছে, ততই আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে আরও মিলেমিশে থাকতে হবে। পরবর্তী সময়ে, আমাদের উপর হয়তো আরও তাড়না আসবে। আমাদের বিশ্বাসের কারণে আমাদের হয়তো জেলে বন্দি করা হবে। সেইসময়ে ভাই-বোনেরাই আমাদের সাহায্য করবে। (হিতো. ১৭:১৭) লক্ষ করুন, ভাই জোসেফের প্রতি কী ঘটেছিল। a তিনি স্পেনে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন। তিনি এবং আরও কিছু ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাই তাদের সবাইকে জেলে বন্দি করা হয়েছিল। ভাই বলেন, “জেলে এত কম জায়গা ছিল যে, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হত আর এই কারণে আমরা মাঝে মাঝে একে অন্যের উপর বিরক্ত হয়ে যেতাম। পরে, আমরা একে অন্যকে ক্ষমাও করে দিতাম। এর ফলে, আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও একতা থাকত এবং আমরা জেলে থাকা অন্য বন্দিদের থেকে আমাদের ভাইদের সুরক্ষিতও রাখতে পারতাম। একবার আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল এবং আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। তখন একজন ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। তিনি আমার কাপড় ধুয়ে দিয়েছিলেন এবং আমার জন্য অনেক কিছু করেছিলেন। আমি তার এই সাহায্য কোনো দিনও ভুলতে পারব না!” সত্যিই, এখনই সময় যেন আমরা ভাই-বোনদের সঙ্গে থাকা সমস্যাগুলো মিটমাট করে নিই এবং একে অন্যকে ক্ষমা করে দিই।

যখন আপনার বিবাহসাথি আপনাকে আঘাত দেয়

৮. স্বামী-স্ত্রীদের সামনে কোন কোন সমস্যা আসতে পারে?

সমস্যা। বিবাহিত জীবনেও সমস্যা আসতে পারে। বাইবেলে লেখা রয়েছে, “যারা বিয়ে করে, তাদের প্রতি দৈহিক ক্লেশ ঘটবে।” (১ করি. ৭:২৮) স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে কেউই নিখুঁত নয়, তাদের পছন্দ অপছন্দ এবং স্বভাব একে অন্যের চেয়ে আলাদা। তারা হয়তো আলাদা আলাদা পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের কিছুসময় পর তারা হয়তো একে অন্যের এমন অভ্যাস সম্বন্ধে জানতে পারে, যেগুলো তারা আগে খেয়াল করেনি। এই কারণে তাদের মাঝে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যখন এমনটা হয়, তখন স্বামী-স্ত্রীদের নিজেদের ভুলগুলো দেখা উচিত এবং সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। কিন্তু, এমনটা করার পরিবর্তে তারা হয়তো একে অন্যকে দোষ দেয়। তারা হয়তো মনে করে, আলাদা হয়ে যাওয়া কিংবা ডিভোর্স নেওয়াই সবচেয়ে ভালো হবে। কিন্তু, তা করলে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? b আসুন, আমরা অতীতের যিহোবার একজন বিশ্বস্ত উপাসকের উপর মনোযোগ দিই। তার কাছ থেকে আমরা শিখব, বিবাহিত জীবনে যতই সমস্যা আসুক না কেন, আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারব।

৯. অবীগলকে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

উদাহরণ। অবীগল নাবল নামে একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। বাইবেলে বলা হয়েছে, নাবল অনেক নিষ্ঠুর ছিলেন এবং সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। (১ শমূ. ২৫:৩) এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে থাকা অবীগলের পক্ষে সহজ ছিল না। কিন্তু, তিনি কি এমনটা চিন্তা করেছিলেন, ‘যেকোনো উপায়েই হোক আমি নাবলকে ছেড়ে দেব’? যদিও তিনি এমনটা করার একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। একবার, নাবল দায়ূদ এবং তার লোকদের অপমান করেছিলেন। তাই, দায়ূদ অনেক রেগে গিয়েছিলেন এবং তাকে মেরে ফেলার জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন। (১ শমূ. ২৫:৯-১৩) এইরকম পরিস্থিতিতে অবীগল চাইলে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন এবং নাবলকে দায়ূদের হাতে মারা যেতে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি দায়ূদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তাকে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন নাবলকে ছেড়ে দেন আর দায়ূদ তার কথা মেনে নিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৫:২৩-২৭) অবীগল কেন এমনটা করেছিলেন?

১০. অবীগল হয়তো কোন কারণে নিজের বিয়ের বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন?

১০ অবীগল যিহোবাকে ভালোবাসতেন এবং তিনি বিয়েকে একটা পবিত্র বন্ধন হিসেবে দেখতেন। কেন? কারণ তিনি হয়তো জানতেন, ঈশ্বর আদম ও হবার বিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনি চেয়েছিলেন, তারা যেন সবসময় একসঙ্গে থাকে। (আদি. ২:২৪) অবীগল যিহোবাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি নিজের স্বামী এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্য যা করতে পারতেন, তা-ই করেছিলেন। তিনি দেরি না করে দায়ূদের কাছে গিয়েছিলেন এবং নাবলকে খুন করা থেকে দায়ূদকে আটকেছিলেন। অবীগলের কোনো ভুল ছিল না, কিন্তু তারপরও তিনি দায়ূদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সত্যিই, অবীগল খুবই সাহসী ছিলেন এবং তিনি নিজের স্বার্থের বিষয়ে চিন্তা করেননি। এই কারণে যিহোবা তাকে খুব ভালোবাসতেন। বর্তমানে, স্বামী-স্ত্রীরা অবীগলের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

১১. (ক) যিহোবা বিবাহিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কী চান? (ইফিষীয় ৫:৩৩) (খ) বোন কারমেন তার বিয়ের বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার জন্য কী করেছিলেন এবং তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

১১ শিক্ষা। যিহোবা চান যেন স্বামী-স্ত্রীরা তাদের বিয়ের বন্ধনকে পবিত্র হিসেবে দেখে আর সেইসময়েও একসঙ্গে থাকে, যখন একসঙ্গে থাকা কঠিন হয়। তাই, সমস্যা এলে স্বামী-স্ত্রীরা যখন সেটা মিটমাট করার প্রচেষ্টা করে, একে অন্যকে ভালোবাসে এবং সম্মান করে, তখন এটা দেখে যিহোবা কতই-না খুশি হন! (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:৩৩.) বোন কারমেনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। বিয়ের ছয় বছর পর, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন আর পরে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এই বিষয়টা আমার স্বামীর একদম ভালো লাগেনি। আমি যিহোবার সেবায় অনেক বেশি সময় দিচ্ছি বলে ও খুব রেগে যেত। ও আমাকে অপমান করত এবং আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি দিত।” তারপরও, বোন কারমেন হাল ছেড়ে দেননি। তিনি ৫০ বছর ধরে তার বিয়ের বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন এবং তার স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান দেখিয়েছেন। “সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আরও বুঝে-শুনে কাজ করতে শিখেছি। আমি সবসময় আমার স্বামীর সঙ্গে ভালো করে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমি মনে রেখেছি, যিহোবার চোখে বিয়ের বন্ধন অনেক পবিত্র। তাই, এটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমি আমার সবটা দিয়েছি। আমি যিহোবাকে ভালোবাসি, তাই আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।” c আপনার বিবাহিত জীবনে যদি সমস্যা আসে, তা হলে নিশ্চিত থাকুন, এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন।

অবীগল নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য যা-কিছু করা সম্ভব, তা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। অবীগলের কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন? (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)


আপনার ভুলের কারণে যখন আপনি হতাশ হয়ে পড়েন

১২. আমরা যখন কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তখন আমাদের কেমন লাগতে পারে?

১২ সমস্যা। আমরা যখন কোনো গুরুতর ভুল করে ফেলি, তখন আমরা অনেক হতাশ হয়ে পড়ি। বাইবেল বলে, একজন ব্যক্তি যখন পাপ করেন, তখন সেটা তাকে ভিতর থেকে “ভগ্ন ও চূর্ণ” করে দেয়। (গীত. ৫১:১৭) ভাই রবার্টের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি অনেক বছর ধরে একজন পরিচারক দাস হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি একটা গুরুতর পাপ করে ফেলেছিলেন এবং মনে করেছিলেন, তিনি যিহোবাকে ঠকিয়েছেন। তিনি বলেন: “পাপ করার পর আমার বিবেকের কারণে আমি নিজেকে অনেক দোষী বলে মনে করছিলাম। আমি ভিতর থেকে অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতাম আর যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম। আমার মনে হত, ঈশ্বর আমার প্রার্থনা কখনো শুনবেন না কারণ আমি তাঁকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।” আমরাও যদি কোনো পাপ করে ফেলি, তা হলে আমাদের মনে হতে পারে, আমরা অযোগ্য এবং কোনো কাজের নই। আমাদের মন আমাদের বলতে পারে, ‘যিহোবা তোমাকে ছেড়ে দিয়েছেন আর তাঁর উপাসনা করে কোনো লাভ নেই।’ (গীত. ৩৮:৪) আপনিও যদি কখনো এমনটা মনে করে থাকেন, তা হলে যিহোবার একজন বিশ্বস্ত সেবকের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তার কাছ থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। সেই সেবকও গুরুতর পাপ করেছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন।

১৩. পিতর কোন কোন ভুল করেছিলেন আর পরে কোন গুরুতর পাপ করে ফেলেছিলেন?

১৩ উদাহরণ। যিশু মারা যাওয়ার আগের রাতে প্রেরিত পিতর অনেক বার ভুল করেছিলেন। শেষে, তিনি এক গুরুতর পাপ করে ফেলেছিলেন। প্রথমত, তার একটু বেশি আত্মবিশ্বাস ছিল। তাই, পিতর জোর গলায় যিশুকে বলেছিলেন, তাঁর অন্য প্রেরিতেরা তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেও তিনি তাঁকে ছেড়ে যাবেন না। (মার্ক ১৪:২৭-২৯) গেৎশিমানী বাগানে যিশু যখন তাকে জেগে থাকতে বলেছিলেন, তখন তিনি বার বার ঘুমিয়ে পড়ছিলেন। (মার্ক ১৪:৩২, ৩৭-৪১) এরপর, একদল লোক যখন যিশুকে ধরতে এসেছিল, তখন তিনি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। (মার্ক ১৪:৫০) তিনি তিন বার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন আর এমনকী মিথ্যা দিব্য দিয়ে বলেছিলেন যে, তিনি তাঁকে চেনেনই না। (মার্ক ১৪:৬৬-৭১) পিতর যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি কত বড়ো ভুল করেছেন, তখন তিনি কী করেছিলেন? তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিলেন এবং ভিতর থেকে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। (মার্ক ১৪:৭২) কয়েক ঘণ্টা পর যখন তার বন্ধু যিশুকে মেরে ফেলা হয়েছিল, তখন চিন্তা করুন, পিতরের বিবেক তাকে কতটা দোষী করেছিল। তিনি নিজেকে কতটা অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন!

১৪. কেন পিতর ভুল করার পরও যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন? (ছবিটা দেখুন।)

১৪ এইসমস্ত কিছু হওয়ার পরও পিতর যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দেননি এবং হাল ছেড়ে দেননি। কেন? এর অনেক কারণ ছিল। যেমন, তিনি অন্যদের থেকে দূরে দূরে থাকেননি। তিনি তাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং নিজের মনের কথা খুলে বলেছিলেন। তখন প্রেরিতেরা নিশ্চয়ই তাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়েছিল। (লূক ২৪:৩৩) শুধু তা-ই নয়, পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু পিতরকে দেখা দিয়েছিলেন এবং নিশ্চয়ই তাকে উৎসাহিত করেছিলেন। (লূক ২৪:৩৪; ১ করি. ১৫:৫) পরে যখন যিশু তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি সবার সামনে পিতরকে বকেননি। এর পরিবর্তে তিনি তাকে বলেছিলেন যে, তাকে আরও বড়ো বড়ো দায়িত্ব দেওয়া হবে। (যোহন ২১:১৫-১৭) এইসমস্ত কিছু দেখে পিতর নিশ্চিত হয়েছিলেন, তার প্রভু যিশু এখনও তাকে অনেক ভালোবাসেন। এ ছাড়া, অন্য প্রেরিতেরাও তার পাশে ছিল। তাই, পাপ করার পরও পিতর হাল ছেড়ে দেননি। তিনি যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন। আজ আমরা পিতরের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

যোহন ২১:​১৫-১৭ পদ দেখায়, যিশু পিতরকে অযোগ্য বলে মনে করেননি। এটা দেখে পিতর যিহোবার সেবা করে চলার জন্য উৎসাহিত হয়েছিলেন (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৫. যিহোবা আমাদের কোন নিশ্চয়তা দিতে চান? (গীতসংহিতা ৮৬:৫; রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) (ছবিও দেখুন।)

১৫ শিক্ষা। যিহোবা চান যেন আমরা নিশ্চিত হই, তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৬:৫; রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯.) আমরা যখন পাপ করে ফেলি, তখন নিজেদের দোষ দিতে শুরু করি। এটা প্রত্যেকের সঙ্গে হয় আর তা হওয়াও উচিত। কিন্তু আমাদের এটা চিন্তা করা উচিত নয়, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না আর আমাদের ক্ষমাও করবেন না। এর পরিবর্তে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ভাইদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া উচিত। ভাই রবার্ট, যার বিষয়ে আগে আমরা পড়েছি, তিনিও তা করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমার এতটাই আত্মবিশ্বাস ছিল যে, আমি কারো কাছে সাহায্য চাইনি। এই কারণে আমি একটা পাপ করে ফেলেছিলাম।” তবে পরে, তিনি প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ভাই বলেন, “প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, যিহোবা এখনও আমাকে ভালোবাসেন। ভাইয়েরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল আর আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে, যিহোবা আমাকে ছেড়ে দেননি।” আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তা হলে আমরা কী করব? আমরা অনুতপ্ত হব, প্রাচীনদের সাহায্য নেব আর সেই একই ভুল আবারও না করার চেষ্টা করব। তা করলে আমরা নিশ্চিত হব, যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং সবসময় ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত। (১ যোহন ১:৮, ৯) এই নিশ্চয়তার কারণে আমরা হোঁচট খেলে বা পড়ে গেলে হাল ছেড়ে দেব না বরং নিজেদের সামলাতে পারব এবং এগিয়ে যাব।

আপনি যখন দেখেন যে, প্রাচীনেরা আপনাকে সাহায্য করার জন্য কত কিছু করছে, তখন আপনি কোন বিষয়ে নিশ্চিত হন? (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৬. কেন আপনি যিহোবাকে সেবা করে যেতে চান?

১৬ এই শেষকালে কঠিন সময়গুলোতে আমরা যিহোবার সেবা করার জন্য যে-প্রচেষ্টা করি, তা দেখে তিনি অনেক খুশি হন। আমরা হতাশ হয়ে পড়তে পারি, কিন্তু যিহোবার সেবা করে চলার জন্য তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। কোনো ভাই কিংবা বোন যদি আমাদের কষ্ট দেয়, তা হলেও আমরা তাকে ভালোবাসব এবং ক্ষমা করব। আমাদের বিবাহিত জীবনে যদি কোনো সমস্যা আসে, তা হলে আমরা একসঙ্গে সেটাকে মিটমাট করার চেষ্টা করব। এভাবে আমরা দেখাব, আমরা বিয়ের ব্যবস্থাকে অনেক সম্মান করি আর যিহোবাকে ভালোবাসি। আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তা হলে আমরা যিহোবার কাছে সাহায্য চাইব। আমরা নিশ্চিত থাকব যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন আর আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এভাবে, আমরা তাঁর সেবায় ব্যস্ত থাকব। তাই, আমরা যদি “উত্তম কাজ করার ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দিই,” তা হলে যিহোবা আমাদের প্রচুর আশীর্বাদ করবেন!—গালা. ৬:৯.

কীভাবে আমরা সেইসময়েও যিহোবার সেবা করে যেতে পারি, . . .

  • যখন কোনো ভাই কিংবা বোন আমাদের আঘাত দেয়?

  • যখন আমাদের বিবাহসাথি আমাদের আঘাত দেয়?

  • যখন আমরা কোনো ভুল করে ফেলি?

গান ১৩৯ নিজেকে পরমদেশে কল্পনা করুন

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

b বাইবেল স্বামী-স্ত্রীদের আলাদা হওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করে না এবং এটি স্পষ্টভাবে বলে, তারা যদি আলাদা হয়েও যায়, তা হলে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কেউই আবারও বিয়ে করতে পারবে না। তবে, কিছু পরিস্থিতিতে কোনো কোনো খ্রিস্টান তার বিবাহসাথির কাছ থেকে আলাদা হওয়াকে সঠিক বলে মনে করেছে। এই বিষয়ে জানার জন্য চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের টীকা ৪ “স্বামী ও স্ত্রী আলাদা থাকা” পড়ুন।