অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২০
দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করা
“সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর . . . আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।”—২ করি. ১:৩, ৪.
গান সংখ্যা ৪১ যৌবনকালে যিহোবার উপাসনা করো
সারাংশ *
১-২. (ক) কোন উদাহরণ দেখায় যে, মানুষকে সান্ত্বনা গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে এবং সান্ত্বনা প্রদান করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? (খ) কীভাবে কোনো কোনো সন্তান গভীরভাবে চোট পায়?
সমস্ত মানুষকেই সান্ত্বনা গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষকে অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করার ক্ষমতা দিয়েও সৃষ্টি করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো ছোট্ট সন্তান যখন খেলতে গিয়ে পড়ে যায় এবং হাঁটুতে চোট লাগে, তখন সে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে মা অথবা বাবার কাছে যায়। বাবা-মা সেই ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারেন না ঠিকই কিন্তু তারা সন্তানকে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন। তারা হয়তো তাকে জড়িয়ে ধরে কোলে তোলেন, তার চোখের জল মুছে দেন, তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে?’ এবং তাকে ভোলানোর চেষ্টা করেন। আর প্রয়োজনে মলম লাগিয়ে দেন অথবা ব্যান্ডেজ করে দেন। শীঘ্রই সন্তানের কান্না থেমে যায় আর সে হয়তো আবারও খেলতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ক্ষতও সেরে যায়।
২ কখনো কখনো সন্তানরা আরও গভীরভাবে চোট পায়। কোনো কোনো সন্তান যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। তারা হয় এক বার অথবা বেশ কয়েক বছর ধরে বার বার নিপীড়নের শিকার হয়। উভয় ক্ষেত্রেই নিপীড়ন গভীর আবেগগত ক্ষতের সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘসময় ধরে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিপীড়নকারী ব্যক্তি ধরা পরে এবং তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে মনে হয় যেন নিপীড়নকারী ব্যক্তিরা কোনোদিনও শাস্তি পাবে না। কিন্তু, নিপীড়নকারী ব্যক্তি দ্রুত শাস্তি পেলেও নিপীড়নের ফলে যে-ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, সেটা নিপীড়িত সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পরও ভোগ করতে হয়।
৩. (ক) ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪ পদ অনুযায়ী যিহোবা কী চান? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করব?
৩ কোনো খ্রিস্টান যদি ছোটোবেলায় নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন এবং এখন তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পরও যদি আবেগগত কষ্ট ভোগ করেন, তা হলে কী তাকে ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪.) স্পষ্টতই, যিহোবা চান যেন তাঁর মেষেরা প্রয়োজনীয় ভালোবাসা ও সান্ত্বনা লাভ করে। আসুন, আমরা তিনটে প্রশ্ন নিয়ে বিবেচনা করি: (১) কেন শিশু নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের হয়তো সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়? (২) কারা তাদের প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে? (৩) কীভাবে আমরা কার্যকরী উপায়ে তাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি?
সাহায্য করতে পারে? (পড়ুন,কেন সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে?
৪-৫. (ক) কেন এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে অনেক আলাদা? (খ) নিপীড়নের ফলে একটি সন্তানের আস্থা কীভাবে প্রভাবিত হয়?
৪ ছোটোবেলায় নিপীড়নের শিকার হয়েছে, এমন কোনো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হয়তো এখনও সান্ত্বনার প্রয়োজন হয়, যদিও সেই ঘটনা বহু বছর আগে ঘটেছিল। কেন? এটা বোঝার জন্য আমাদের মনে রাখতে হবে, সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে অনেক আলাদা। খারাপ আচরণের শিকার হলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক যেভাবে প্রভাবিত হন, সেটার চেয়ে একটি সন্তান প্রায়ই অনেক ভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত হয়ে থাকে। কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।
৫ সন্তানদের যারা মানুষ করে তোলে এবং যারা তাদের যত্ন নেয়, সন্তানরা তাদের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলে এবং তাদের উপর আস্থা রাখে আর এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। এই ধরনের বন্ধনের ফলে সন্তানরা সুরক্ষিত বোধ করে এবং তারা সেই ব্যক্তিদের উপর আস্থা রাখতে শেখে, যারা তাদের ভালোবাসে। এটা খুবই দুঃখজনক, বেশিরভাগ সময়ে সন্তানরা বাড়িতেই নিপীড়নের শিকার হয় এবং পরিবারের কোনো ঘনিষ্ঠ সদস্য অথবা বন্ধু এই ধরনের জঘন্য কাজ করে। একটি সন্তান যখন এমন কোনো ব্যক্তির দ্বারা নিপীড়িত হয়, যার উপর তার আস্থা ছিল, তখন সেই সন্তানের জন্য অন্যদের উপর আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে আর তা এমনকী বহু বছর পরেও।
৬. কেন যৌন নিপীড়ন নিষ্ঠুর ও ক্ষতিকর এক কাজ?
৬ সন্তানরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না আর যৌন নিপীড়ন হল নিষ্ঠুর ও ক্ষতিকর এক কাজ। সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনেক বছর আগেই যখন জোর করে তাদের যৌন ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত করা হয়, তখন সেটা তাদের অনেক ক্ষতি করে। কোনো ব্যক্তি যখন একটি সন্তানকে নিপীড়ন করে, তখন সেটার ফলে সন্তানের মনে যৌনতা সম্বন্ধে এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। সন্তানরা নিজেদের মূল্যহীন বলে মনে করতে পারে এবং অন্যদের উপর আর আস্থা রাখতে পারে না।
৭. (ক) কেন একজন নিপীড়নকারী সহজেই একটি সন্তানকে বোকা বানাতে পারে আর কীভাবে হয়তো সে তা করে থাকে? (খ) এই ধরনের মিথ্যা কথার পরিণতি হয়তো কী হয়?
৭ সন্তানরা চিন্তা করার, যুক্তি করার অথবা বিপদ বুঝে তা বিজ্ঞতার সঙ্গে এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিপক্ব নয়। (১ করি. ১৩:১১) তাই, নিপীড়নকারী ব্যক্তিরা সহজেই সন্তানদের বোকা বানিয়ে নিপীড়ন করতে পারে। নিপীড়নকারীরা সন্তানদের মিথ্যা কথা বলে যেমন, ‘এর জন্য তুমিই দায়ী,’ ‘এই বিষয়টা অন্য কেউ যেন জানতে না পারে,’ ‘এই বিষয়ে ছোটোদের কথায় কেউ বিশ্বাস করে না আর কেউ তোমাকে সাহায্যও করবে না,’ অথবা ‘এটা খুবই স্বাভাবিক এক বিষয়, বড়োরা এভাবেই ছোটোদের প্রতি ভালোবাসা দেখায়।’ এগুলোর সমস্তই যে আসলে মিথ্যা, তা বুঝে ওঠার জন্য সন্তানের বহু বছর লাগতে পারে। এইরকম একটি সন্তান বড়ো হয়ে ওঠার সময় হয়তো হীনমন্যতায় ভোগে এবং নিজেকে ভালোবাসা অথবা সান্ত্বনা লাভের অযোগ্য বলে মনে করে।
৮. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন, যারা কষ্ট ভোগ করছে?
৮ এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যৌন নিপীড়নের ফলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়। এটা কতই-না ঘৃণার্হ অপরাধ! শিশু নিপীড়ন বিশ্বব্যাপী যেভাবে মহামারির রূপ ধারণ করেছে, সেটা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আমরা শেষ কালে বাস করছি। আর এই শেষ কালে লোকেরা “স্নেহরহিত” হবে এবং “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা . . . উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর” হবে। (২ তীম. ৩:১-৫, ১৩) শয়তান আমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে আর দুঃখের বিষয় হল লোকেরা এমনভাবে কাজ করে, যেভাবে সে চায়। তবে, শয়তান ও তার সমর্থনকারীদের চেয়ে যিহোবা অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে অজ্ঞাত নন। যিহোবা খুব ভালোভাবে জানেন যে, আমরা কতটা কষ্ট ভোগ করছি আর তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন। আমরা ‘সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ সেবা করতে পেরে খুবই আনন্দিত, “[যিনি] আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন, যেন আমরা নিজে ঈশ্বর-দত্ত যে সান্ত্বনায় সান্ত্বনাপ্রাপ্ত হই, সেই সান্ত্বনা দ্বারা সমস্ত ক্লেশের পাত্রদিগকে সান্ত্বনা করিতে পারি।” (২ করি. ) যিহোবা সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য কাদের ব্যবহার করেন? ১:৩, ৪
কে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে?
৯. গীতসংহিতা ২৭:১০ পদে রাজা দায়ূদ যেমন বলেছেন, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের প্রতি কী করবেন, যাদেরকে তাদের নিজের পরিবারের সদস্যরা পরিত্যাগ করেছে?
৯ বাবা-মায়েরা সুরক্ষিত না রাখার কারণে যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছে অথবা কোনো কাছের ব্যক্তির কাছ থেকে যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছে, বিশেষভাবে তাদের সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে। গীতরচক দায়ূদ জানতেন, সান্ত্বনা লাভ করার জন্য যিহোবা হলেন এক নির্ভরযোগ্য উৎস। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২৭:১০.) দায়ূদের পূর্ণ বিশ্বাস ছিল, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের গ্রহণ করবেন, যাদের সঙ্গে তাদের কাছের ব্যক্তিরা দুর্ব্যবহার করেছে। কীভাবে যিহোবা তাদের গ্রহণ করেন? তাঁর বিশ্বস্ত মানবদাসদের ব্যবহার করার মাধ্যমে। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা হল আমাদের কাছে পরিবারের মতো। উদাহরণ স্বরূপ যিশু বলেছিলেন, যারা তাঁর সঙ্গে যিহোবার উপাসনা করে, তারাই হলেন তাঁর ভাই, বোন ও মা।—মথি ১২:৪৮-৫০.
১০. একজন প্রাচীন হিসেবে প্রেরিত পৌল নিজের কাজ সম্বন্ধে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন?
১০ একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন, যেখানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী হল একটা পরিবারের মতো। প্রেরিত পৌল একজন পরিশ্রমী ও বিশ্বস্ত প্রাচীন ছিলেন। তিনি এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন আর এমনকী তিনি এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, অন্যেরা যেন তাকে অনুকরণ করে, ঠিক যেমন তিনি খ্রিস্টকে অনুকরণ করেন। (১ করি. ১০:৩৪) একজন প্রাচীন হিসেবে পৌল নিজের কাজ সম্বন্ধে একবার কীভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তা লক্ষ করুন: “যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম।” (১ থিষল. ২:৭) বর্তমানে, সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বাইবেল থেকে সান্ত্বনা প্রদান করার সময়ে অনুগত প্রাচীনরা কোমল শব্দ ব্যবহার করেন।
১১. কী দেখায়, একমাত্র প্রাচীনরাই যে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন, এমন নয়?
১১ একমাত্র প্রাচীনরাই কি নিপীড়িত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন? না। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যেন আমরা “এক জন অন্য জনকে সান্ত্বনা” দিই। (১ থিষল. ৪:১৮) পরিপক্ব খ্রিস্টান বোনেরা সেই বোনদের জন্য বিশেষভাবে উৎসাহের কারণ হতে পারেন, যাদের সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে। উপযুক্তভাবেই, যিহোবা নিজেকে একজন মায়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যিনি নিজের সন্তানকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। (যিশা. ৬৬:১৩) বাইবেলে এমন অনেক নারীর উদাহরণ রয়েছে, যারা হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করেছে। (ইয়োব ৪২:১১) বর্তমানে যে-বোনেরা আবেগগত কষ্টের সঙ্গে লড়াই করছে, তাদের সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য যখন পরিপক্ব খ্রিস্টান বোনেরা প্রচেষ্টা করেন, তখন সেটা দেখে যিহোবা কতই-না আনন্দিত হন! কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাচীনরা হয়তো গোপনে কোনো পরিপক্ব বোনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, তিনি এইরকম কষ্টের মধ্যে থাকা একজন বোনকে সাহায্য করতে পারেন কি না। *
কীভাবে আমরা সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি?
১২. আমাদের কী করা এড়িয়ে চলা উচিত?
১২ অবশ্য কোনো ভাই অথবা বোনকে সাহায্য করার সময়ে তাদের এমন বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করা উচিত হবে না, যেগুলো নিয়ে তারা কথা বলতে পছন্দ করে না। (১ থিষল. ৪:১১) তা হলে, সেই ব্যক্তিদের জন্য আমরা কী করতে পারি, যাদের সাহায্য ও সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে এবং যারা তা লাভ করতে চায়? আসুন আমরা পাঁচটা শাস্ত্রীয় উপায় নিয়ে বিবেচনা করি, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা হয়তো সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি।
১৩. প্রথম রাজাবলি ১৯:৫-৮ পদে যেমন বলা হয়েছে, যিহোবার একজন স্বর্গদূত এলিয়ের প্রতি কী করেছিলেন এবং আমরা হয়তো কীভাবে সেই স্বর্গদূতকে অনুকরণ করতে পারি?
১৩ ব্যাবহারিক সাহায্য প্রদান করুন। ভাববাদী এলিয় যখন জীবন হাতে নিয়ে পালাচ্ছিলেন, তখন তিনি এতটাই নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি মারা যেতে চেয়েছিলেন। সেই নিরুৎসাহিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য যিহোবা একজন শক্তিশালী স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন। সেই স্বর্গদূত এলিয়কে ব্যাবহারিক সাহায্য প্রদান করেছিলেন, যেটা সেই সময়ের জন্য একেবারে উপযুক্ত ছিল। তিনি এলিয়কে গরম গরম খাবার দিয়েছিলেন এবং সদয়ভাবে তাকে খেতে বলেছিলেন। (পড়ুন, ১ রাজাবলি ১৯:৫-৮.) এই বিবরণ আমাদের এক ব্যাবহারিক শিক্ষা প্রদান করে: কোনো ব্যক্তির জন্য করা কোনো সাধারণ বিষয়ও অনেক সাহায্যকারী হতে পারে। হতে পারে এক বেলার খাবার, ছোটো কোনো উপহার অথবা উৎসাহজনক একটা চিঠি একজন শোকার্ত ভাই অথবা বোনকে আমাদের ভালোবাসা ও বিবেচনার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারে। আমরা যদি ব্যক্তিগত অথবা কষ্টকর বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করি, তারপরও আমরা এই ধরনের ব্যাবহারিক সাহায্য প্রদান করতে পারি।
১৪. এলিয়ের বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষিত ও স্বচ্ছন্দ বোধ করতে সাহায্য করুন। এলিয়ের বিবরণ থেকে আমরা আরেকটা বিষয় শিখতে পারি। যিহোবা অলৌকিকভাবে সেই ভাববাদীকে প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করেছিলেন যেন তিনি হোরেব পর্বত পর্যন্ত এক দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে পারেন। এলিয় হয়তো এই প্রত্যন্ত এলাকায় সুরক্ষিত বোধ করেছিলেন, যেখানে শত শত বছর আগে যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তিনি হয়তো ভাবছিলেন, অবশেষে তিনি তার শত্রুদের নাগালের বাইরে আসতে পেরেছেন, যারা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এই উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যদি কোনো নিপীড়িত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা প্রদান করতে চাই, তা হলে প্রথমে হয়তো তাদের সুরক্ষিত বোধ করার জন্য সাহায্য করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, প্রাচীনদের মনে রাখতে হবে, একজন হতাশাগ্রস্ত বোন হয়তো কিংডম হলের কনফারেন্স রুমের চেয়ে নিজের বাড়িতে বেশি সুরক্ষিত বোধ করেন এবং কথা বলার সময়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। আবার আরেকজন বোন হয়তো এর সম্পূর্ণ বিপরীত অনুভব করতে পারেন।
১৫-১৬. একজন উত্তম শ্রোতা হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৫ একজন উত্তম শ্রোতা হোন। বাইবেল স্পষ্ট পরামর্শ দেয়: “প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর . . . হউক।” (যাকোব ১:১৯) আমরা কি উত্তম শ্রোতা? আমরা হয়তো মনে করতে পারি, একজন উত্তম শ্রোতা হওয়ার জন্য আমাদের কেবল চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু, একজন উত্তম শ্রোতা হওয়ার জন্য আমাদের আরও বেশি কিছু করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, এলিয় পরিশেষে যিহোবার কাছে নিজের তিক্ত অনুভূতির কথা বলেছিলেন আর যিহোবা মন দিয়ে তা শুনেছিলেন। যিহোবা এটা উপলব্ধি করেছিলেন, এলিয় ভয় পেয়ে গিয়েছেন, একাকিত্ব বোধ করছেন এবং তার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন। যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাকে এই ধরনের অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। যিহোবা দেখিয়েছিলেন, তিনি এলিয়ের কথা মন দিয়ে শুনছেন।—১ রাজা. ১৯:৯-১১, ১৫-১৮.
১৬ আমরা যখন কোনো ভাই-বোনের কথা শুনি, তখন কীভাবে আমরা সহানুভূতি ও কোমল সমবেদনা দেখাতে পারি? কখনো কখনো ভেবেচিন্তে আন্তরিকতার সঙ্গে বলা অল্প কয়েকটা কথাই দেখাতে পারে, আমরা কেমন অনুভব করি। আপনি হয়তো বলতে পারেন: “শুনে খুব খারাপ লাগছে! কোনো বাচ্চার সঙ্গেই এভাবে আচরণ করা উচিত নয়!” আপনি আপনার হতাশাগ্রস্ত বন্ধুর কথা বোঝার জন্য হয়তো একটা অথবা দুটো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন। আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, “আপনি যা বলতে চাইছেন, সেটা কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?” অথবা “আমি এটা বুঝেছি . . . আপনি কি এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন?” এইরকম প্রেমময় অভিব্যক্তিগুলো সেই ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করতে পারে যে, আপনি মন দিয়ে তার কথা শুনছেন এবং তা বোঝার চেষ্টা করছেন।—১৭. কেন আমাদের ধৈর্যশীল ও “কথনে ধীর” হওয়া উচিত?
১৭ তবে, “কথনে ধীর” হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। তাকে পরামর্শ দেওয়ার অথবা তার চিন্তাভাবনা সংশোধন করার জন্য তার কথার মাঝে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর ধৈর্য ধরুন! এলিয় যখন পরিশেষে তার মনের কথা যিহোবাকে বলছিলেন, তখন এলিয় এমন অভিব্যক্তিগুলো ব্যবহার করেছিলেন, যেগুলো তার হতাশাকে প্রকাশ করেছিল। পরে যিহোবা এলিয়ের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার পর এলিয় আবারও তার সেই একই অনুভূতির কথা যিহোবার কাছে জানিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৯:৯, ১০, ১৩, ১৪) এখান থেকে আমরা কী শিখি? কখনো কখনো হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা হয়তো একাধিক বার নিজের অনুভূতির কথা খুলে বলতে পারে। যিহোবার মতো আমরাও সেইসময়ে ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনতে পারি। সমাধানের পথ দেখানোর পরিবর্তে আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতি ও স্নেহ বা কোমল সমবেদনা দেখাতে চাই।—১ পিতর ৩:৮.
১৮. কেন কষ্টের মধ্যে থাকা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রার্থনা করা তাকে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে?
১৮ কষ্টের মধ্যে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করুন। যারা অনেক বেশি হতাশায় ভোগে, তারা হয়তো ভাবতে পারে, তারা প্রার্থনা করতে পারবে না আর তারা হয়তো যিহোবার সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে নিজেদের অযোগ্য বলে মনে করে। আমরা যদি এইরকম একজন ব্যক্তিকে সান্ত্বনা প্রদান করতে চাই, তা হলে আমরা হয়তো তার সঙ্গে তার নাম উল্লেখ করে প্রার্থনা করতে পারি। প্রার্থনায় আমরা হয়তো বলতে পারি, সেই শোকার্ত ব্যক্তিকে মণ্ডলীর ভাই-বোনদের পাশাপাশি আমরাও কতটা ভালোবাসি! আমরা যাকোব ৫:১৬.
হয়তো যিহোবাকে বলতে পারি যেন তিনি তাঁর এই মূল্যবান দাসকে শান্তি ও সান্ত্বনা লাভ করতে সাহায্য করেন। এই ধরনের প্রার্থনা প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে।—১৯. কোনো ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৯ সেই শব্দগুলো বাছাই করুন, যেগুলো সুস্থ হতে এবং সান্ত্বনা লাভ করতে সাহায্য করে। কথা বলার আগে চিন্তা করুন। বিবেচনা না দেখিয়ে বলা কথাগুলো অন্যদের কষ্ট দিতে পারে। দয়া দেখিয়ে বলা কথাগুলো সুস্থ হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। (হিতো. ১২:১৮) তাই আপনি যাতে সদয়, সান্ত্বনাদায়ক ও কোমল শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারেন, সেইজন্য সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। মনে রাখবেন, কোনো কথাই যিহোবার বাক্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী নয়।—ইব্রীয় ৪:১২.
২০. নিপীড়িত ভাই-বোনদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিজেদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করে এবং আমরা তাদের কী স্মরণ করিয়ে দিতে চাই?
২০ নিপীড়িত ভাই-বোনদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এমনটা ধরে নিয়েছে যে, তারা অশুচি, মূল্যহীন এবং ভালোবাসা লাভের অযোগ্য। এটা কতই-না বড়ো এক মিথ্যা! তাই, যিহোবার চোখে তারা যে মূল্যবান, তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য শাস্ত্র ব্যবহার করুন। (“ শাস্ত্রপদ থেকে সান্ত্বনা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) ভাববাদী দানিয়েল যখন নিজেকে দুর্বল বলে মনে করছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত ছিলেন, তখন একজন স্বর্গদূত যেভাবে দয়ার সঙ্গে তাকে শক্তিশালী করেছিলেন, তা নিয়ে চিন্তা করুন। যিহোবা চেয়েছিলেন যেন দানিয়েল জানতে পারেন, তিনি তাঁর প্রীতির পাত্র অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টিতে মূল্যবান। (দানি. ১০:২, ১১, ১৯) একইভাবে, আমাদের হতাশাগ্রস্ত ভাই-বোনেরাও যিহোবার দৃষ্টিতে মূল্যবান!
২১. সমস্ত অনুতাপহীন অন্যায়কারীর জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে কিন্তু সেই সময় না আসা পর্যন্ত নিপীড়িত ব্যক্তিদের প্রতি আমরা কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
২১ আমরা যখন অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করি, তখন আমরা তাদের স্মরণ করিয়ে দিই, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন। আর আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই, যিহোবা ন্যায়বিচারেরও ঈশ্বর। নিপীড়নের কোনো মন্দ কাজই তাঁর কাছে গুপ্ত নয়। যিহোবা সমস্ত কিছুই লক্ষ করেন এবং অনুতাপহীন অন্যায়কারীরা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে না। (গণনা. ১৪:১৮) সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমরা যেন নিপীড়িত ব্যক্তিদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য যথাসাধ্য করি। শুধু তাই নয়, এটা জানা অনেক সান্ত্বনা প্রদান করে যে, শয়তান ও তার জগতের দ্বারা নিপীড়িত ব্যক্তিদের যিহোবা চিরকালের জন্য সুস্থ করে তুলবেন। শীঘ্রই সেই সময় আসতে চলেছে, যখন এই কষ্টকর বিষয়গুলো আমাদের আর কখনো মনে পড়বে না।—যিশা. ৬৫:১৭.
গান সংখ্যা ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ
^ অনু. 5 ছোটোবেলায় যারা যৌন দুর্ব্যবহার বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, তাদের হয়তো এমনকী বহু বছর পরও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। কেন? এই প্রবন্ধ আমাদের তা বুঝতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, আমরা বিবেচনা করব যে, কারা হয়তো এই ধরনের ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে। শেষে, আমরা কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি।
^ অনু. 11 নিপীড়িত ব্যক্তি সাহায্যের জন্য ডাক্তারের কাছে যাবেন কি না, সেটা তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।