অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২২
আপনি যেভাবে অধ্যয়ন করেন, তাতে উন্নতি করুন!
‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [বা শ্রেয়ঃ], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিন।’—ফিলি. ১:১০, পাদটীকা।
গান সংখ্যা ৪২ ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর’
সারাংশ *
১. কেন কোনো কোনো ব্যক্তি অধ্যয়ন করতে চায় না?
বর্তমানে, অনেক লোককে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, যাতে তারা বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেক ভাই-বোনকে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয়। অনেক ভাই-বোনকে আবার কাজের জায়গায় গিয়ে পৌঁছানোর এবং সেখান থেকে ফিরে আসার জন্য প্রতিদিন অনেক ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়। অনেক ভাই-বোনকে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। দিনের শেষে এই কঠোর পরিশ্রমী ভাই-বোনেরা একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ে! আর এই ক্লান্তির কারণে তাদের কাছে আর অধ্যয়ন করার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি থাকে না।
২. আপনি কখন অধ্যয়ন করার জন্য সময় করে নেন?
২ কিন্তু সত্য বিষয়টা হল ঈশ্বরের বাক্য ও আমাদের খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করার জন্য আমাদের অবশ্যই সময় করে নিতে হবে। যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এবং অনন্তজীবন লাভ করার আশা এই অধ্যয়নের উপর নির্ভর করছে। (১ তীম. ৪:১৫, ১৬) অনেকে প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে এবং অধ্যয়ন করে, যে-সময়ে তাদের ঘরের পরিবেশ শান্ত থাকে এবং রাতের বিশ্রামের পর তারা ভালোভাবে চিন্তা করতে পারে। অন্যেরা আবার দিনের শেষে বাইবেল ও আমাদের প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করার এবং তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য কিছু সময় আলাদা করে রাখে, যখন পরিবেশ নিরিবিলি থাকে।
৩-৪. আমরা ছাপানো ও ডিজিটাল ফরম্যাটে যে-পরিমাণ তথ্য লাভ করি, তাতে কোন রদবদল করা হয়েছে এবং কেন?
৩ কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি এই বিষয়ে একমত হবেন, অধ্যয়ন করার জন্য সময় করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, কোন বিষয়গুলো নিয়ে আপনার অধ্যয়ন করা উচিত? আপনি হয়তো বলতে পারেন, ‘পড়ার জন্য এত বিষয়বস্তু রয়েছে যে, আমি সমস্ত কিছু পড়াকে কঠিন বলে মনে করি।’ কেউ কেউ সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত
প্রকাশনা পড়ে এবং সমস্ত বাইবেলভিত্তিক ভিডিও দেখে, কিন্তু কোনো কোনো ভাই-বোন এমনটা করাকে কঠিন বলে মনে করে। পরিচালকগোষ্ঠী এটা জানে। তাই আমরা ছাপানো ও ডিজিটাল ফরম্যাটে যে-পরিমাণ তথ্য লাভ করি, সম্প্রতি তারা সেটা কিছুটা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।৪ উদাহরণ স্বরূপ, অনেক উৎসাহজনক অভিজ্ঞতা যেহেতু jw.org® ওয়েবসাইটে এবং আমাদের মাসিক JW Broadcasting® কার্যক্রমে পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমরা এখন আর যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক (ইংরেজি) প্রকাশ করি না। প্রহরীদুর্গ পত্রিকার জনসাধারণের সংস্করণ এবং সজাগ হোন! পত্রিকা এখন বছরে মাত্র তিন বার প্রকাশ করা হয়। এই রদবদলগুলো করার কারণ এই নয় যে, আমরা যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, এমন কাজগুলোর পিছনে বেশি সময় ব্যয় করতে পারি। এই রদবদলগুলো করা হয়েছে, যাতে আমরা “যাহা যাহা শ্রেয়ঃ” বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারি। (ফিলি. ১:১০) আসুন আমরা আলোচনা করি যে, কীভাবে আপনি অগ্রাধিকার স্থাপন করতে পারেন এবং কীভাবে আপনি ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করতে পারেন।
অগ্রাধিকার স্থাপন করুন
৫-৬. কোন প্রকাশনাগুলো আমাদের সতর্কতার সঙ্গে অধ্যয়ন করা উচিত?
৫ কোন বিষয়গুলোকে আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত? আমাদের অবশ্যই প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার জন্য সময় ব্যয় করা উচিত। মণ্ডলীর সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠের বিষয়বস্তুর পরিমাণ কমানো হয়েছে, যাতে আমরা যা-পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করার এবং অতিরিক্ত গবেষণা করার জন্য সময় লাভ করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য যেন কেবল সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত বিষয়বস্তু পড়া না হয় কিন্তু আমরা যেন বাইবেলের বার্তাকে আমাদের হৃদয় স্পর্শ করতে দিই এবং যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই।—গীত. ১৯:১৪.
৬ আর কোন বিষয়গুলো আমাদের সতর্কতার সঙ্গে অধ্যয়ন করা উচিত? অবশ্য, আমরা প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন ও মণ্ডলীর বাইবেল অধ্যয়নের পাশাপাশি সপ্তাহের মাঝের সভার অন্যান্য বিষয়বস্তুর জন্যও প্রস্তুতি নিতে চাই। এ ছাড়া, প্রহরীদুর্গ পত্রিকার জনসাধারণের সংস্করণের ও সজাগ হোন! পত্রিকার প্রতিটা সংখ্যা আমাদের পড়া উচিত।
৭. আমরা যদি আমাদের ওয়েবসাইট এবং JW ব্রডকাস্টিং-এর মাধ্যমে জোগানো সমস্ত বিষয়বস্তু পড়তে এবং সমস্ত ভিডিও দেখতে না পারি, তা হলে কি আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত?
৭ আপনি হয়তো বলবেন, ‘ঠিক আছে কিন্তু সেইসমস্ত প্রবন্ধ ও ভিডিও-র বিষয়ে কী বলা যায়, যেগুলো আমাদের ওয়েবসাইট jw.org-এ প্রকাশিত হয় আর সেইসঙ্গে যে-বিষয়গুলো JW ব্রডকাস্টিং-এ তুলে ধরা হয়? এত তথ্য কীভাবে পড়ব?’ একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন: আপনি একটা ভোজে গিয়েছেন এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর সুস্বাদু খাবার রয়েছে। আপনি হয়তো সমস্ত কিছু নাও খেতে পারেন। তবে, কিছু কিছু খাবার হয়তো আপনি খেতে চাইবেন। একইভাবে, আপনি যদি ডিজিটাল ফরম্যাটে জোগানো সমস্ত বিষয়বস্তু পড়তে এবং সমস্ত ভিডিও দেখতে না পারেন, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব, ততটা পড়ুন অথবা দেখুন। এখন আসুন আমরা আলোচনা করি, অধ্যয়ন করার সঙ্গে কী জড়িত রয়েছে এবং আমাদের অধ্যয়ন থেকে কীভাবে আমরা পূর্ণ উপকার লাভ করতে পারি।
অধ্যয়ন করার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়
৮. প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করার সময়ে আমরা কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারি এবং এমনটা করলে আপনি কীভাবে উপকৃত হবেন?
৮ আপনি যখন অধ্যয়ন করেন, তখন আপনি যা পড়েন, সেটার উপর মনোযোগ দেন, যাতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখতে পারেন। অধ্যয়ন করার মানে কেবল নির্ধারিত বিষয়বস্তু দ্রুত পড়া নয় এবং প্রশ্নের উত্তরের তলায় দাগ দেওয়া নয়। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যখন প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতি নেন, তখন প্রথমে প্রবন্ধের শুরুতে দেওয়া সারাংশটা পড়ুন। এরপর, প্রবন্ধের শিরোনাম, উপশিরোনাম ও সেইসঙ্গে পুনরালোচনার প্রশ্নগুলো বিবেচনা করুন। তারপর, ধীরে ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে প্রবন্ধটা পড়ুন। প্রতিটা অনুচ্ছেদে সেই বাক্যের উপর মনোযোগ দিন, যেটা বলে যে, অনুচ্ছেদে কী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণত এটা প্রতিটা অনুচ্ছেদের শুরুর বাক্যেই পাওয়া যেতে পারে। প্রবন্ধটা পড়ার সময়ে চিন্তা করুন, প্রতিটা অনুচ্ছেদ কীভাবে উপশিরোনাম এবং প্রবন্ধের মূলভাবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কোনো অপরিচিত শব্দ এবং পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত গবেষণা করে দেখার মতো কোনো বিষয় পেলে, সেটা আলাদাভাবে লিখে রাখুন।
৯. (ক) কেন এবং কীভাবে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করার সময়ে শাস্ত্রপদগুলোর উপর আমাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত? (খ) যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮ পদ অনুযায়ী শাস্ত্রপদ পড়ার পাশাপাশি আমাদের আর কী করা উচিত?
৯ আমরা যখন মণ্ডলীর সভায় প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করি, তখন সেটা আমাদের বাইবেলকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। তাই, শাস্ত্রপদগুলোর উপর মনোযোগ দিন, বিশেষভাবে যেগুলো মণ্ডলীতে অধ্যয়নের সময়ে পড়া হবে। কীভাবে শাস্ত্রপদের মুখ্য শব্দগুলো অথবা অভিব্যক্তিগুলো অনুচ্ছেদের প্রধান ধারণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেটার উপর বিশেষ মনোযোগ দিন। শুধু তাই নয়, আপনি যে-শাস্ত্রপদগুলো পড়েন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য এবং কীভাবে আপনি সেগুলো আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কাজে লাগাতে পারেন, তা বিবেচনা করার জন্য সময় করে নিন।—পড়ুন,১০. কীভাবে অধ্যয়ন করতে হয় এবং কীভাবে গবেষণা করতে হয়, সেই বিষয়ে সন্তানদের শেখানোর জন্য ইব্রীয় ৫:১৪ পদের শিক্ষা অনুযায়ী কেন বাবা-মায়েদের পারিবারিক উপাসনায় সময় ব্যয় করা উচিত?
১০ এটা স্বাভাবিক যে, বাবা-মায়েরা চান যেন তাদের সন্তানরা প্রতি সপ্তাহে পারিবারিক উপাসনা উপভোগ করে। যদিও বাবা-মায়েদের সবসময় আগে থেকে পরিকল্পনা করা উচিত যে, তারা পারিবারিক উপাসনায় কী নিয়ে আলোচনা করবে, তবে তাদের প্রত্যেক সপ্তাহে বিশেষ ও রোমাঞ্চকর কিছুর ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই। পারিবারিক উপাসনার সময়ে JW ব্রডকাস্টিং-এর মাসিক কার্যক্রম দেখা যেতে পারে অথবা কখনো কখনো কোনো বিশেষ প্রকল্পে কাজ করা যেতে পারে, যেমন নোহের জাহাজের নমুনা তৈরি করা। এ ছাড়া, সন্তানদের এটা শেখানো গুরুত্বপূর্ণ যে, কীভাবে অধ্যয়ন করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ, তাদের শিখতে হবে, কীভাবে মণ্ডলীর সভার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায় অথবা কীভাবে কোনো একটা সমস্যার বিষয়ে গবেষণা করতে হয়, যেটা স্কুলে দেখা দিয়েছে। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:১৪.) তারা যদি বাড়িতে কোনো অধ্যয়ন প্রকল্পের জন্য সময় ব্যয় করে, তা হলে মণ্ডলীর সভায় ও সম্মেলনে আলোচিত বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া তাদের পক্ষে সহজ হবে, যেগুলোতে হয়তো সবসময় ভিডিও অন্তর্ভুক্ত থাকে না। অবশ্য, বাবা-মায়েরা একসঙ্গে কতক্ষণ ধরে সন্তানের সঙ্গে অধ্যয়ন করবেন, সেটা সন্তানের বয়স ও ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করবে।
১১. যেভাবে আমাদের বাইবেল ছাত্ররা নিজেরাই গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে, সেই বিষয়ে তাদের শেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১১ আমাদের বাইবেল ছাত্রদেরও শিখতে হবে যে, কীভাবে অধ্যয়ন করতে হয়। তারা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে, তখন আমরা তাদের বাইবেল অধ্যয়ন অথবা মণ্ডলীর সভার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে কেবল উত্তরের নীচে দাগ দিতে দেখে আনন্দিত হই। কিন্তু, আমাদের বাইবেল ছাত্রদের শেখাতে হবে, কীভাবে তারা গবেষণা করতে পারে এবং কীভাবে তারা নিজেরাই গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারে। এমনটা করলে, তারা যখন সমস্যার মুখোমুখি হবে, তখন তাদের মণ্ডলীর অন্যদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হবে না যে, তাদের কী করা উচিত। এর পরিবর্তে, তারা নিজেরাই আমাদের প্রকাশনা থেকে গবেষণা করার মাধ্যমে ব্যাবহারিক পরামর্শ খুঁজে বের করতে পারবে।
একটা লক্ষ্য নিয়ে অধ্যয়ন করুন
১২. অধ্যয়ন করার সময়ে আমাদের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
১২ আপনি যদি অধ্যয়ন করতে পছন্দ না করেন, তা হলে হয়তো আপনি ভাবতে পারেন, ‘আমি কি কোনো দিনও অধ্যয়ন করাকে উপভোগ করতে পারব?’ হ্যাঁ, পারবেন। আপনি হয়তো শুরুতে অল্প কিছু সময় ধরে অধ্যয়ন করতে পারেন আর তারপর ধীরে ধীরে অধ্যয়নের সময় বাড়াতে পারেন। মনে মনে একটা লক্ষ্য স্থির করুন। এটা ঠিক যে, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া। তবে, আমরা ছোটো ছোটো কিছু লক্ষ্য রাখতে পারি। যেমন, কোনো প্রশ্নের উত্তর খোঁজা অথবা কোনো সমস্যা নিয়ে গবেষণা করা, যেটার মুখোমুখি আমরা হচ্ছি।
১৩. (ক) একজন অল্পবয়সি স্কুলে তার বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার জন্য যে-পদক্ষেপগুলো নিতে পারে, সেগুলো ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে তুমি কলসীয় ৪:৬ পদে প্রাপ্ত পরামর্শ কাজে লাগাতে পারো?
১৩ উদাহরণ স্বরূপ, তুমি কি একজন অল্পবয়সি এবং স্কুলে পড়ো? তোমার ক্লাসের সমস্ত সহপাঠী হয়তো বিবর্তনবাদের শিক্ষায় বিশ্বাস করে। তুমি হয়তো বাইবেলের শিক্ষার পক্ষসমর্থন করতে চাও কিন্তু তুমি হয়তো নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করো। এর জন্য তোমার অধ্যয়ন প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে! এর পিছনে দুটো কারণ থাকতে পারে: (১) ঈশ্বর যে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেই বিষয়ে তোমার নিজের বিশ্বাস দৃঢ় করা এবং (২) সত্যের পক্ষসমর্থন করার জন্য নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। (রোমীয় ১:২০; ১ পিতর ৩:১৫) তুমি হয়তো প্রথমে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারো, ‘বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে আমার সহপাঠীরা কোন কোন যুক্তি ব্যবহার করে?’ তারপর, আমাদের প্রকাশনাদি ব্যবহার করে সতর্কতার সঙ্গে গবেষণা করো। তোমার বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করাকে তুমি যতটা কঠিন বলে মনে করো, ততটা কঠিন নাও হতে পারে। অনেকে বিবর্তনবাদের শিক্ষায় বিশ্বাস করে কারণ তাদের সম্মাননীয় কোনো ব্যক্তি হয়তো বলেছেন যে, এটাই সত্য। তুমি যদি তাদের বলার মতো কেবল একটা অথবা দুটো তথ্য খুঁজে পাও, তা হলে তুমি এমন একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারবে, যে সত্যিই সত্য জানতে চায়।—পড়ুন, কলসীয় ৪:৬.
আগ্রহ বৃদ্ধি করুন
১৪-১৬. (ক) কীভাবে আপনি বাইবেলের এমন কোনো বই সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু জানতে পারেন, যে-বইয়ের সঙ্গে আপনি ভালোভাবে পরিচিত নন? (খ) কীভাবে ব্যবহৃত শাস্ত্রপদগুলো আপনাকে আমোষ বইটা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন। (এ ছাড়া, “ বাইবেলের চরিত্রগুলোকে আরও ভালোভাবে জানুন!” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১৪ ধরুন, মণ্ডলীতে সামনের সভায় আমরা বাইবেলের কোনো ছোটো ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বই পড়ব এবং সেটা নিয়ে আলোচনা করব। আপনি হয়তো সেই বইয়ের সঙ্গে খুব-একটা পরিচিত নন। প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে, সেই ভাববাদী যা-কিছু লিখেছিলেন, সেই বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করা। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন?
১৫ শুরুতে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এই বইয়ের লেখক সম্বন্ধে আমি কী জানি? তিনি কে ছিলেন? তিনি কোথায় বাস করতেন? তার পেশা কী ছিল?’ আমরা যখন লেখক সম্বন্ধে শিখি, তখন আমরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি যে, কেন তিনি তার লেখায় নির্দিষ্ট কিছু শব্দ অথবা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছেন। আপনি যখন বাইবেল পড়বেন, তখন এমন বাক্যাংশগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যেগুলো আপনাকে লেখকের ব্যক্তিত্ব বুঝতে সাহায্য করবে।
১৬ তারপর, সেই বইটা কখন লেখা হয়েছিল, সেই বিষয়ে জানা আপনার জন্য সাহায্যকারী হবে। আপনি পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের “বাইবেলের বইয়ের তালিকা” দেখার মাধ্যমে খুব সহজেই তা খুঁজে পেতে পারেন। এ ছাড়া, আপনি ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক সহায়িকা শিরোনামের পুস্তিকার ১৪-১৭ পৃষ্ঠায় দেওয়া ভাববাদী এবং রাজাদের তালিকা বিবেচনা করে দেখতে পারেন। আপনি যদি বাইবেলের কোনো ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বই নিয়ে অধ্যয়ন করেন, তা হলে এটা জানা ভালো হবে যে, সেই সময়ে লোকেদের জীবনযাত্রার মান সম্ভবত কেমন ছিল। লোকেদের কোন মন্দ মনোভাব অথবা অভ্যাস এড়িয়ে চলতে সাহায্য করার জন্য সেই ভাববাদীকে পাঠানো হয়েছিল? কারা তার সমসাময়িক ব্যক্তি ছিলেন? পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আপনাকে হয়তো বাইবেলের অন্যান্য বইয়ের সাহায্য নিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, ভাববাদী আমোষের সময়ে কোন কোন ঘটনা ঘটেছিল, সেই বিষয়ে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আপনি ২ রাজাবলি ও ২ বংশাবলি বইগুলো পড়তে পারেন, যেগুলো আমোষ ১:১ পদের পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের মার্জিনাল রেফারেন্সে দেওয়া আছে। এর পাশাপাশি, আপনি হয়তো হোশেয়ের লেখা কথাগুলো বিবেচনা করে দেখতে পারেন, যিনি আমোষের সমসাময়িক ব্যক্তি ছিলেন। আপনি যদি বাইবেলের এই বইগুলো লক্ষ করেন, তা হলে আপনি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যে, আমোষের সময়ে লোকেদের জীবনযাত্রার মান কেমন ছিল।—২ রাজা. ১৪:২৫-২৮; ২ বংশা. ২৬:১-১৫; হোশেয় ১:১-১১; আমোষ ১:১.
খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন
১৭-১৮. অনুচ্ছেদে দেওয়া উদাহরণগুলো থেকে অথবা আপনার ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া আপনার ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে।
১৭ আমরা যখন বাইবেল পড়ি, তখন ভালো হবে যেন আমরা আরও বেশি জানার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তা করি। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি হয়তো সখরিয় বইয়ের ১২ অধ্যায় পড়ছেন, যেখানে মশীহের মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। (সখ. ১২:১০) আপনি যখন ১২ পদ পড়েন, তখন দেখেন যে, “নাথন-কুলের গোষ্ঠী” মশীহের মৃত্যুতে গভীর শোক করবে। এই খুঁটিনাটি বিষয়গুলো উপর উপর পড়ে চলে যাওয়ার পরিবর্তে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘নাথনের কুলের সঙ্গে মশীহের কী সম্পর্ক রয়েছে? আরও তথ্য লাভ করার জন্য অন্য কোনো উপায় কি রয়েছে?’ আপনি গবেষণা করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ-এর মার্জিনাল রেফারেন্স দেখতে পারেন। সেখানে সখরিয় ১২:১২ পদের জন্য দুটো মার্জিনাল রেফারেন্স দেওয়া আছে। প্রথমটা আমাদের ২ শমূয়েল ৫:১৩, ১৪ পদের দিকে নিয়ে যায়, যেখান থেকে আমরা জানতে পারি, নাথন হলেন রাজা দায়ূদের একজন ছেলে। দ্বিতীয় মার্জিনাল রেফারেন্স লূক ৩:২৩, ৩১ পদের দিকে নিয়ে যায়, যেটা প্রকাশ করে যে, নাথন মরিয়মের পূর্বপুরুষ ছিলেন। (২০১৮ সালের জুন মাসের জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স-এর ৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া “যোষেফের বাবা কে ছিলেন?” শিরোনামের প্রশ্নটা দেখুন।) এটা জেনে আপনার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়! আপনি জানেন যে, ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী দায়ূদের বংশ থেকে যিশুর আসার কথা ছিল। (মথি ২২:৪২) কিন্তু, দায়ূদের ২০ জনেরও বেশি ছেলে ছিল। এটা দেখা কি আগ্রহজনক নয় যে, সখরিয় নির্দিষ্টভাবে নাথনের কুলের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যারা যিশুর মৃত্যুতে শোক করবে?
১৮ আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। লূক বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে আমরা পড়ি, গাব্রিয়েল নামে একজন স্বর্গদূত মরিয়মের সঙ্গে দেখা করেন এবং মরিয়ম যে-পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছিলেন, তার বিষয়ে ঘোষণা করেন: “তিনি মহান্ হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্ত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন।” (লূক ১:৩২, ৩৩) স্বাভাবিকভাবেই আমরা হয়তো গাব্রিয়েলের বলা কথাগুলোর শুরুর অংশের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারি, যেটা বলে, যিশুকে “পরাৎপরের পুত্ত্র” বলা হবে। তবে, গাব্রিয়েল আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যিশু “রাজত্ব করিবেন।” তাই, আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, গাব্রিয়েলের সেই কথাগুলো মরিয়ম কীভাবে বুঝেছিলেন। তিনি কি এটা বুঝেছিলেন যে, যিশু রাজা হেরোদ অথবা তার কোনো উত্তরাধিকারীর জায়গায় ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করবেন? যিশু যদি রাজা হন, তা হলে মরিয়ম মাতারাণী হবেন এবং তার পরিবার রাজপ্রাসাদে থাকবে। কিন্তু বাইবেল বলে না যে, মরিয়ম গাব্রিয়েলকে এইরকম কিছু বলেছিলেন। এ ছাড়া, বাইবেল এটাও কখনো বলে না যে, মরিয়ম ঈশ্বরের রাজ্যে কোনো বিশেষ পদমর্যাদা লাভ করার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যেমনটা যিশুর দু-জন শিষ্য জানিয়েছিলেন। (মথি ২০:২০-২৩) এই খুঁটিনাটি তথ্যগুলো আমাদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করে, মরিয়ম অত্যন্ত নম্র মহিলা ছিলেন!
১৯-২০. যাকোব ১:২২-২৫ পদ এবং ৪:৮ পদে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, অধ্যয়ন করার সময়ে আমাদের কোন কোন লক্ষ্য থাকা উচিত?
১৯ আমরা যেন মনে রাখি, ঈশ্বরের বাক্য এবং আমাদের খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করার পিছনে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া। এ ছাড়া, আমরা আরও ভালোভাবে দেখতে চাই, আমরা “কিরূপ লোক” এবং ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য আমাদের কোন কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে। (পড়ুন, যাকোব ১:২২-২৫; ৪:৮.) প্রত্যেক বার অধ্যয়ন শুরু করার আগে যিহোবার কাছে পবিত্র আত্মার সাহায্য চেয়ে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। বিষয়বস্তু থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার এবং যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেদের দেখার জন্য তাঁর কাছে আমাদের সাহায্যভিক্ষা করা উচিত।
২০ আমরা সবাই যেন ঈশ্বরের সেই বিশ্বস্ত দাসের মতো হতে পারি, যার সম্বন্ধে গীতরচক ব্যাখ্যা করেছিলেন: “[সে] সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। . . . সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”—গীত. ১:২, ৩.
গান সংখ্যা ১১ যিহোবার চিত্তকে আনন্দিত করা
^ অনু. 5 যিহোবা আমাদের দেখার, পড়ার ও অধ্যয়ন করার জন্য উদারভাবে প্রচুর বিষয় জুগিয়ে দেন। এই প্রবন্ধ আপনাকে অধ্যয়নের বিষয়বস্তু বাছাই করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করবে আর কীভাবে আপনি ব্যক্তিগত অধ্যয়ন থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করতে পারেন, সেই বিষয়ে কিছু ব্যাবহারিক পরামর্শ প্রদান করবে।
^ অনু. 61 ছবি সম্বন্ধে: বাবা-মায়েরা সন্তানদের শেখাচ্ছেন যে, কীভাবে সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
^ অনু. 63 ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই বাইবেল লেখক আমোষের বিষয়ে গবেষণা করছেন। পিছনের ছবিগুলো দেখায় যে, ভাই বাইবেলের বিবরণগুলো পড়ার এবং তা নিয়ে ধ্যান করার সময়ে কোন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করছেন।