সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২২

অদৃশ্য ধনের প্রতি আপনার উপলব্ধি দেখান

অদৃশ্য ধনের প্রতি আপনার উপলব্ধি দেখান

“আমরা ত দৃশ্য বস্তু লক্ষ্য না করিয়া অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করিতেছি; কারণ যাহা যাহা দৃশ্য, তাহা ক্ষণকালস্থায়ী, কিন্তু যাহা যাহা অদৃশ্য, তাহা অনন্তকালস্থায়ী।”—২ করি. ৪:১৮.

গান সংখ্যা ২২ “সদাপ্রভু আমার পালক”

সারাংশ *

১. যিশু স্বর্গীয় ধনের বিষয়ে কী বলেছিলেন?

সব ধরনের ধন দেখা যায় না। সত্যি বলতে কী, সবচেয়ে মূল্যবান ধনগুলো দেখা যায় না। পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু স্বর্গীয় ধনের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যে-ধন বস্তুগত ধনের চেয়ে অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ। তারপর তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন: “যেখানে তোমার ধন, সেইখানে তোমার মনও থাকিবে।” (মথি ৬:১৯-২১) আমরা যখন কোনো বিষয়কে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখি, তখন আমরা সেটা লাভ করার জন্য প্রচেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত হই। আমরা ঈশ্বরের কাছে সুনাম অর্জন করার বা তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে ‘স্বর্গে ধন’ সঞ্চয় করি। যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, এই ধরনের ধন কেউ কখনোই নষ্ট করতে অথবা চুরি করতে পারবে না।

২. (ক) দ্বিতীয় করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮ পদ অনুযায়ী পৌল আমাদের কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

প্রেরিত পৌল ‘অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করিবার’ বিষয়ে আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮.) এই অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হল সেইসমস্ত উত্তম বিষয়, যেগুলো আমরা ঈশ্বরের নতুন জগতে লাভ করব। এই প্রবন্ধে আমরা চারটে অদৃশ্য ধন নিয়ে পরীক্ষা করব, যেগুলোর দ্বারা আমরা এখনই উপকৃত হতে পারি। এগুলো হল ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব, উপহার হিসেবে পাওয়া প্রার্থনার সুযোগ, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্য এবং পরিচর্যায় আমাদের সঙ্গে থাকা স্বর্গীয় সমর্থন। এ ছাড়া, আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে আমরা এই অদৃশ্য ধনগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি।

যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব

৩. সবচেয়ে মূল্যবান অদৃশ্য ধন কী এবং কীভাবে তা সম্ভবপর হয়েছে?

সবচেয়ে মূল্যবান অদৃশ্য ধন হল যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব। (যাকোব ২:২৩) কীভাবে ঈশ্বর অসিদ্ধ মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এবং সম্পূর্ণরূপে পবিত্র থাকতে পারেন? যিশুর মাধ্যমে জোগানো মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে তিনি এমনটা করতে পারেন কারণ যিশু “জগতের পাপভার লইয়া যায়।” (যোহন ১:২৯) যিশুর মৃত্যুর আগেই যিহোবা এটা জানতেন যে, মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য যিশু মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকবেন। এই কারণেই ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরেছিলেন, যারা খ্রিস্টের মৃত্যুর আগে জীবিত ছিল।—রোমীয় ৩:২৫.

৪. যিশুর জন্মের আগের কয়েক জন পুরুষের উদাহরণ দিন, যারা ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন।

যিশুর জন্মের আগের কয়েক জন পুরুষের কথা চিন্তা করুন, যারা ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। অব্রাহাম এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি উল্লেখযোগ্য উপায়ে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। অব্রাহামের মৃত্যুর ১,০০০ বছরেরও বেশি সময় পর যিহোবা তাকে “আমার বন্ধু” বলে সম্বোধন করেছিলেন। (যিশা. ৪১:৮) এর অর্থ হল এমনকী মৃত্যুও যিহোবাকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে পৃথক করতে পারে না। অব্রাহাম যিহোবার স্মৃতিতে জীবিত রয়েছেন। (লূক ২০:৩৭, ৩৮) আরেকজন ব্যক্তি হলেন ইয়োব। স্বর্গে যখন সমস্ত স্বর্গদূত একত্রিত হয়েছিল, তখন যিহোবা আস্থার সঙ্গে ইয়োবের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। যিহোবা তাকে “সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী” ব্যক্তি বলে সম্বোধন করেছিলেন। (ইয়োব ১:৬-৮) আর যিহোবা দানিয়েলের বিষয়ে কেমন অনুভব করেছিলেন, যিনি প্রায় ৮০ বছর ধরে একটা পৌত্তলিক দেশে বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করেছিলেন? স্বর্গদূতেরা তিন বার সেই বৃদ্ধ ব্যক্তিকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিল যে, তিনি ঈশ্বরের কাছে “অতিশয় প্রীতি-পাত্র” ছিলেন। (দানি. ৯:২৩; ১০:১১, ১৯) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা সেই দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন, যখন তিনি তাঁর প্রিয় মৃত বন্ধুদের জীবিত করবেন।—ইয়োব ১৪:১৫.

অদৃশ্য ধনগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখানোর কিছু উপায় কী? (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৫. যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব উপভোগ করার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন রয়েছে?

বর্তমানে, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব উপভোগ করে। আমরা এটা জানি কারণ পৃথিবীব্যাপী অনেক পুরুষ, মহিলা ও সন্তান তাদের আচরণের মাধ্যমে দেখাচ্ছে যে, তারা ঈশ্বরের বন্ধু হতে চায়। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করেন, যারা ধর্মকর্ম বা ন্যায্য আচরণ করে। (গীত. ১৫:১, ২) এই বন্ধুত্ব যিশুর দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে সম্ভব হয়। আর এই বলিদানের ভিত্তিতেই যিহোবা আমাদের তাঁর কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার সুযোগ দেন। আমরা যখন এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিই, তখন আমরা লক্ষ লক্ষ উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানদের সঙ্গে যোগ দিই, যারা নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে মহান ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব উপভোগ করে!

৬. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?

কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে আমরা মূল্যবান হিসেবে দেখি? অব্রাহাম ও ইয়োব যেমন বছরের পর বছর ধরে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, একইভাবে আমাদেরও অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে, তা আমরা এই পুরোনো বিধিব্যবস্থায় যতদিন ধরেই তাঁর সেবা করি না কেন। দানিয়েলের মতো আমাদেরও অবশ্যই নিজেদের জীবনের চেয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে মূল্যবান হিসেবে দেখতে হবে। (দানি. ৬:৭, ১০, ১৬, ২২) যিহোবার সাহায্যে আমরা যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করতে পারি এবং তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন বজায় রাখতে পারি।—ফিলি. ৪:১৩.

উপহার হিসেবে পাওয়া প্রার্থনার সুযোগ

৭. (ক) হিতোপদেশ ১৫:৮ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন? (খ) কীভাবে যিহোবা আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন?

আরেকটা অদৃশ্য ধন হল প্রার্থনা। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা নিজেদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসে। যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং এটির মাধ্যমে তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি সম্বন্ধে প্রকাশ করেন। আমরা প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে কথা বলি আর এভাবে আমরা আমাদের আন্তরিক চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো তাঁর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি। যিহোবা আমাদের প্রার্থনাগুলো শোনার মাধ্যমে সন্তুষ্ট হন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৫:৮.) একজন প্রেমময় বন্ধু হিসেবে যিহোবা কেবল আমাদের প্রার্থনাগুলো শোনেনই না কিন্তু সেইসঙ্গে সেগুলোর উত্তরও দেন। কখনো কখনো আমরা দ্রুত উত্তর পাই। আবার কখনো কখনো আমাদের হয়তো একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বার বার প্রার্থনা করতে হয়। তারপরও আমরা এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি, আমরা আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর উপযুক্ত সময়ে এবং সর্বোত্তম উপায়ে লাভ করব। অবশ্য, যিহোবা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী উত্তর না-ও দিতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো পরীক্ষা সরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে সেটা ‘সহ্য করিবার’ জন্য তিনি হয়তো আমাদের প্রজ্ঞা ও শক্তি দিতে পারেন।—১ করি. ১০:১৩.

(৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. কীভাবে আমরা প্রার্থনার অমূল্য উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?

কীভাবে আমরা প্রার্থনার অমূল্য উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি? “অবিরত প্রার্থনা” করার বিষয়ে যিহোবার নির্দেশনার বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা তা দেখাতে পারি। (১ থিষল. ৫:১৭) যিহোবা তাঁর কাছে প্রার্থনা করার জন্য আমাদের জোর করেন না। এর পরিবর্তে, তিনি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখান এবং “প্রার্থনায় নিবিষ্ট” থাকার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দেন। (রোমীয় ১২:১২) তাই, আমরা সারা দিনে বার বার প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি। অবশ্য, আমাদের প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ জানানো এবং তাঁর প্রশংসা করা উচিত।—গীত. ১৪৫:২, ৩.

৯. প্রার্থনা সম্বন্ধে একজন ভাই কেমন অনুভব করেন এবং আপনি কেমন অনুভব করেন?

আমরা যতবেশি সময় ধরে যিহোবার সেবা করব এবং যিহোবাকে আমাদের বিনতির উত্তর দিতে দেখব, প্রার্থনার প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ ততবেশি বৃদ্ধি পাবে। উদাহরণ স্বরূপ, ক্রিস নামে একজন ভাইয়ের কথা বিবেচনা করুন, যিনি ৪৭ বছর ধরে পূর্ণসময়ের সেবা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠতে ভালোবাসি, যাতে আমি প্রার্থনায় যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারি। সকাল বেলায় যখন সূর্য ওঠে এবং সব কিছু সুন্দর দেখায়, তখন যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে! তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত উপহারের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে অনুপ্রাণিত হই, যার মধ্যে প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আর দিনের শেষে প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমি এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে ঘুমাতে পারি।’

উপহার হিসেবে পাওয়া পবিত্র আত্মা

১০. কেন ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখা উচিত?

১০ ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা হল আরেকটা অদৃশ্য উপহার, যেটাকে আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখা উচিত। যিশু পবিত্র আত্মা চেয়ে ক্রমাগত প্রার্থনা করার জন্য আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (লূক ১১:৯, ১৩) যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ [“অসাধারণ মহাশক্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” প্রদান করেন। (২ করি. ৪:৭; প্রেরিত ১:৮) ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করতে পারি।

(১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. পবিত্র আত্মা আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

১১ পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের সেবায় আমাদের কার্যভার পালন করার জন্য সাহায্য করতে পারে। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদের প্রতিভা ও দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। এটা আমাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলো পালন করতে সাহায্য করে। আমরা জানি যে, ঈশ্বরের সেবায় আমরা যে-উত্তম ফলগুলো লাভ করি, তা একমাত্র পবিত্র আত্মার সাহায্যের কারণেই সম্ভব।

১২. গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪ পদ অনুযায়ী কী করার জন্য আমরা পবিত্র আত্মার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করতে পারি?

১২ কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে মূল্যবান হিসেবে দেখি? আমরা আমাদের অন্তঃকরণ বা হৃদয়ে থাকা যেকোনো মন্দ চিন্তাভাবনা অথবা আকাঙ্ক্ষা শনাক্ত করার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করার মাধ্যমে তা দেখাতে পারি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪.) আমরা যদি এইরকম অনুরোধ করি, তা হলে যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে আমাদের মধ্যে থাকা মন্দ চিন্তাভাবনা অথবা আকাঙ্ক্ষা শনাক্ত করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। আর আমরা যদি কোনো মন্দ চিন্তাভাবনা অথবা আকাঙ্ক্ষাকে শনাক্ত করি, তা হলে আমাদের সেটার প্রতিরোধ করার জন্য ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত। এভাবে আমরা দেখাব যে, আমরা এমন যেকোনো কিছু এড়িয়ে চলার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, যেটার কারণে যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে আমাদের সাহায্য করা বন্ধ করে দেবেন।—ইফি. ৪:৩০.

১৩. কীভাবে আমরা পবিত্র আত্মার প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ বৃদ্ধি করতে পারি?

১৩ আমাদের দিনে পবিত্র আত্মার সাহায্যে যা-কিছু সম্পাদিত হচ্ছে, আমরা যখন সেগুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন পবিত্র আত্মার প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি পায়। যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আগে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) এই কথাগুলো এক চমৎকার উপায়ে পরিপূর্ণ হচ্ছে। পবিত্র আত্মার সাহায্যে ৮৬ লক্ষেরও বেশি যিহোবার উপাসক পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একত্রিত হয়েছে। এ ছাড়া, আমরা এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করি কারণ ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদের অপূর্ব গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে যেমন, প্রেম, আনন্দ, শান্তি, ধৈর্য, দয়া, মঙ্গলভাব, বিশ্বাস, মৃদুতা ও ইন্দ্রিয়দমন। এই গুণগুলো মিলে “আত্মার ফল” গঠিত হয়। (গালা. ৫:২২, ২৩) উপহার হিসেবে পাওয়া এই পবিত্র আত্মা কতই-না মূল্যবান!

আমাদের পরিচর্যায় স্বর্গীয় সমর্থন

১৪. আমরা যখন পরিচর্যায় অংশ নিই, তখন আমরা কোন অদৃশ্য সমর্থন লাভ করি?

১৪ আমাদের কাছে আরেকটা অদৃশ্য ধন রয়েছে আর সেটা হল যিহোবা, যিশু ও স্বর্গদূতদের “সঙ্গে কার্য্য” করা। (২ করি. ৬:১) আমরা যখনই শিষ্য তৈরি করার কাজে অংশ নিই, তখনই তাদের সঙ্গে কাজ করি। পৌল নিজের সম্বন্ধে এবং যারা এই কাজে অংশ নেয়, তাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।” (১ করি. ৩:৯) আমরা যখন খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশ নিই, তখন আমরা যিশুর সঙ্গেও কাজ করি। মনে করে দেখুন, যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ আজ্ঞা দেওয়ার পর বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।’ (মথি ২৮:১৯, ২০) আর স্বর্গদূতদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা ‘পৃথিবী-নিবাসীদিগকে অনন্তকালীন সুসমাচার’ জানানোর সময়ে স্বর্গদূতদের দ্বারা নির্দেশিত হতে পেরে কতই-না কৃতজ্ঞ!—প্রকা. ১৪:৬.

১৫. বাইবেল থেকে একটা উদাহরণ দিন, যেটা দেখায় যে, যিহোবা আমাদের পরিচর্যায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৫ স্বর্গ থেকে পাওয়া এই সমর্থন আমাদের কী সম্পাদন করতে সাহায্য করে? আমরা যখন রাজ্যের বার্তা ছড়াই, তখন কিছু বীজ উত্তম হৃদয়ে গিয়ে পড়ে এবং সেগুলো বৃদ্ধি পায়। (মথি ১৩:১৮, ২৩) কে এই সত্যের বীজগুলোকে বৃদ্ধি পেতে এবং ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে সাহায্য করে? যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন, “পিতা . . . আকর্ষণ না করিলে” কোনো ব্যক্তিই তাঁর অনুসারী হতে পারে না। (যোহন ৬:৪৪) বাইবেলে এই বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে। সেই সময়ের কথা মনে করে দেখুন, যখন পৌল ফিলিপী নগরের বাইরে এক দল মহিলার কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। লক্ষ করুন, সেই মহিলাদের মধ্যে লুদিয়া নামে একজনের বিষয়ে বাইবেল কী বলে: “প্রভু [ঈশ্বর] তাঁহার হৃদয় খুলিয়া দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ করেন।” (প্রেরিত ১৬:১৩-১৫) লুদিয়ার মতো আরও লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে যিহোবা আকর্ষণ করেছেন।

১৬. আমরা পরিচর্যায় যে-সাফল্যই লাভ করি না কেন, সেটার প্রশংসা কার পাওয়া উচিত?

১৬ আমরা পরিচর্যায় যে-সাফল্যই লাভ করি না কেন, সেটার প্রশংসা কার পাওয়া উচিত? পৌল এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, যখন তিনি করিন্থীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমি রোপণ করিলাম, আপল্লো জল সেচন করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন। অতএব রোপক কিছু নয়, সেচকও কিছু নয়, বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার।” (১ করি. ৩:৬, ৭) আমরা পরিচর্যায় যে-সাফল্যই লাভ করি না কেন, পৌলের মতো আমাদেরও সবসময় সেটার প্রশংসা যিহোবাকে প্রদান করা উচিত।

১৭. ঈশ্বর, খ্রিস্ট ও স্বর্গদূতদের “সঙ্গে কার্য্য” করার বিশেষ সুযোগের প্রতি আমরা কীভাবে আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি?

১৭ ঈশ্বর, খ্রিস্ট ও স্বর্গদূতদের “সঙ্গে কার্য্য” করার বিশেষ সুযোগের প্রতি আমরা কীভাবে আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি? অন্যদের কাছে সুসমাচার জানানোর জন্য যথাসাধ্য করার মাধ্যমে আমরা তা দেখাতে পারি। আর তা করার একাধিক উপায় রয়েছে যেমন, “সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে” সাক্ষ্য দেওয়া। (প্রেরিত ২০:২০) অনেকে রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্যদান করতেও ভালোবাসে। তারা যখন কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে, তখন তারা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সম্ভাষণ জানায় এবং কথোপকথন শুরু করার চেষ্টা করে। সেই ব্যক্তি যদি ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়, তা হলে তারা কৌশলতার সঙ্গে রাজ্যের বার্তা জানিয়ে থাকে।

(১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৮-১৯. (ক) কীভাবে আমরা সত্যের বীজের উপর জল সেচন করি? (খ) একটা অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলুন, যেটা দেখায় যে, কীভাবে যিহোবা একজন বাইবেল ছাত্রকে সাহায্য করেছেন।

১৮ ‘ঈশ্বরের সহকার্য্যকারী’ হিসেবে সেবা করার সময়ে সত্যের বীজ বপন করার পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই জল সেচনও করতে হবে। কোনো ব্যক্তি যখন আগ্রহ দেখান, তখন আমরা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার উদ্দেশে সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে গিয়ে কথা বলার জন্য অথবা অন্য কোনো প্রকাশক যাতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার জন্য যথাসাধ্য করি। আর আমরা যখন দেখি যে, যিহোবার সাহায্যে বাইবেল ছাত্ররা তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি পরিবর্তন করছে, তখন আমরা আনন্দিত হই।

১৯ রাপালালানি নামে দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ওঝার কথা বিবেচনা করুন। তিনি বাইবেল অধ্যয়ন থেকে যা শিখেছিলেন, সেটা তার খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু, তিনি যখন মৃত পূর্বপুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য যা বলে, তা পড়েছিলেন, তখন সেটা মেনে নেওয়া তার জন্য অনেক কঠিন ছিল। (দ্বিতীয়. ১৮:১০-১২) ধীরে ধীরে তিনি নিজের চিন্তাভাবনাকে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার দ্বারা গঠিত হতে দিয়েছিলেন। এক সময়ে, তিনি ওঝা হিসেবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যদিও এটাই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস। ভাই রাপালালানির বয়স এখন ৬০ বছর আর তিনি বলেন: “আমি যিহোবার সাক্ষিদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ কারণ তারা বিভিন্ন উপায়ে আমাকে সাহায্য করেছে আর সেগুলোর মধ্যে একটা হল তারা আমাকে চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। আর আমি সবচেয়ে বেশি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ কারণ তিনি আমাকে আমার জীবন পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছেন। এখন আমি একজন বাপ্তাইজিত সাক্ষি হিসেবে পরিচর্যায় অংশ নিয়ে থাকি।”

২০. আপনি কী করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২০ এই প্রবন্ধে আমরা চারটে অদৃশ্য ধন সম্বন্ধে বিবেচনা করেছি। আর সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ধন হল আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে যিহোবাকে আমাদের কাছে পাওয়ার বিশেষ সুযোগ। এটা আমাদের অন্যান্য অদৃশ্য ধন থেকে উপকার লাভ করতে সাহায্য করে যেমন, প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা, তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্য লাভ করা এবং আমাদের পরিচর্যায় স্বর্গীয় সমর্থন লাভ করা। আমরা যেন এই অদৃশ্য ধনগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ বৃদ্ধি করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। আর একজন উত্তম বন্ধু হিসেবে আমাদের পাশে থাকার জন্য আমরা সবসময় তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

গান সংখ্যা ১৯ পরমদেশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা

^ অনু. 5 আগের প্রবন্ধে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একাধিক উপহার বা ধন নিয়ে বিবেচনা করেছি, যেগুলো আমরা দেখতে পাই। এই প্রবন্ধে আমরা সেই ধনগুলো নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমরা দেখতে পাই না এবং দেখব যে, কীভাবে আমরা সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি। এমনটা করার মাধ্যমে এই ধনগুলোর জোগানদাতা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি পাবে।

^ অনু. 58 ছবি সম্বন্ধে: (১) যিহোবার সৃষ্টি দেখার সময়ে একজন বোন যিহোবার সঙ্গে নিজের বন্ধুত্ব নিয়ে চিন্তা করছেন।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে: (২) সেই একই বোন সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য শক্তি চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছেন।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে: (৩) পবিত্র আত্মার সাহায্যে বোন সাহসের সঙ্গে রীতিবহির্ভূতভাবে রাজ্যের বার্তা জানাচ্ছেন।

^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে: (৪) বোন যার কাছে রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তিকেই বাইবেল অধ্যয়ন করাচ্ছেন। বোন প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ করছেন আর তার সঙ্গে স্বর্গদূতদের সমর্থন রয়েছে।