সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৯

যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই যেন আপনাকে বাধা না দেয়

যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই যেন আপনাকে বাধা না দেয়

“যাহারা তোমার ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি, তাহাদের উছোট লাগে না।”—গীত. ১১৯:১৬৫.

গান ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!

সারাংশ *

১-২. (ক) একজন লেখক কী বলেছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

বর্তমানে, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি দাবি করে যে, তারা যিশুর উপর বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর দেওয়া শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করে না। (২ তীম. ৪:৩, ৪) একজন লেখক বলেছিলেন: ‘আজকে যদি যিশুর মতো আরেকজন ব্যক্তি আসেন এবং সেই বিষয়গুলো শেখান, যেগুলো যিশু শিখিয়েছিলেন, তা হলেও লোকেরা তাকে প্রত্যাখ্যান করবে, ঠিক যেমনটা দু-হাজার বছর আগে যিশুকে করেছিল।’

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন অনেক লোক তাঁর শিক্ষা সম্বন্ধে শুনেছিল এবং তাঁকে অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিল। তা সত্ত্বেও, লোকেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আগের প্রবন্ধে সেটার চারটে কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রবন্ধে, আমরা আরও চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া, আমরা এও আলোচনা করব, আজকে লোকেরা কেন যিশুর অনুসারীদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে আর কীভাবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন, কোনো কিছুই যেন আপনাকে যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে বাধা না দেয়।

(১) যিশু পক্ষপাতিত্ব করেননি

অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তিনি সব ধরনের ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করতেন। আজকে লোকেরা হয়তো একইরকম কারণে আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৩. কেন অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?

যিশু সমস্ত ধরনের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন আর সেইসঙ্গে দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের সঙ্গেও সময় কাটাতেন। তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতি করুণা দেখাতেন, যাদের লোকেরা ‘পাপী’ হিসেবে দেখত। কিছু গর্বিত ব্যক্তি যিশুর এইরকম আচার-আচরণ দেখে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই ব্যক্তিরা তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞেস করেছিল: “তোমরা কেন কর আদায়কারী ও পাপীদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া কর?” উত্তরে যিশু বলেছিলেন: “সুস্থ লোকদের চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই, কিন্তু অসুস্থ লোকদেরই প্রয়োজন। আমি ধার্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদেরই ডাকতে এসেছি, যেন তারা অনুতপ্ত হয়।”—লূক ৫:২৯-৩২.

৪. যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী যিহুদিদের মশীহ সম্বন্ধে কী বোঝা উচিত ছিল?

শাস্ত্র কী জানায়? মশীহ আসার অনেক আগে ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন, লোকেরা মশীহকে গ্রহণ করবে না। ভবিষ্যদ্‌বাণীতে লেখা ছিল: “তিনি অবজ্ঞাত ও মনুষ্যদের ত্যাজ্য, . . . লোকে যাহা হইতে মুখ আচ্ছাদন করে, তাহার ন্যায় তিনি অবজ্ঞাত হইলেন, আর আমরা তাঁহাকে মান্য করি নাই।” (যিশা. ৫৩:৩) এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মনুষ্যেরা’ মশীহকে গ্রহণ করবে না। তাই, যিশুর প্রতি যখন এই সমস্ত কিছু ঘটছিল, তখন যিহুদিদের স্পষ্টভাবে বোঝা উচিত ছিল যে, এগুলো ঠিক সেভাবে ঘটছে, যেমনটা ভবিষ্যদ্‌বাণীতে লেখা ছিল।

৫. আজকে অনেক লোক যিশুর অনুসারীদের কীভাবে দেখে থাকে?

লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। আজকে, ধর্মীয় গুরুরা সেই ব্যক্তিদের প্রতি বেশি সম্মান দেখিয়ে থাকে, যাদের অনেক টাকাপয়সা রয়েছে, যারা সমাজে বিখ্যাত এবং যাদের লোকেরা বুদ্ধিমান বলে মনে করে। ধর্মীয় গুরুদের এই বিষয়ে কিছু এসে যায় না যে, সেই ব্যক্তিদের নৈতিক মান কতটা নীচে নেমে গিয়েছে। অপর দিকে, যিহোবার লোকেরা ঈশ্বরের উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে থাকে। কিন্তু, এই ধর্মীয় গুরুরা সাক্ষিদের মূল্যহীন হিসেবে দেখে থাকে কারণ তারা খুবই সাধারণ লোক আর এই জগতে বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করে না। যদিও জগৎ তাদের “মূল্যহীন” বলে মনে করে, কিন্তু যিহোবার দৃষ্টিতে তাঁর প্রত্যেক উপাসক খুবই মূল্যবান।—১ করি. ১:২৬-২৯.

৬. (ক) মথি ১১:২৫, ২৬ পদে যিশু কী বলেছেন? (খ) কীভাবে আপনি যিশুর মনোভাব অনুকরণ করতে পারেন?

আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিহোবার সেবা বন্ধ করে না দেন? (পড়ুন, মথি ১১:২৫, ২৬.) ঈশ্বরের লোকদের সম্বন্ধে জগতের লোকদের মতো দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলবেন না। যিহোবা শুধুমাত্র নম্র ব্যক্তিদের ব্যবহার করেই তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করেন। (গীত. ১৩৮:৬) একটু চিন্তা করে দেখুন, জগৎ যাদের মূল্যহীন বলে মনে করে, তাদেরই ব্যবহার করে যিহোবা কত বড়ো বড়ো কাজ সম্পাদন করেছেন।

(২) যিশু মিথ্যা শিক্ষা প্রকাশ করে দেন

৭. (ক) কেন যিশু তাঁর সময়ের ধর্মীয় গুরুদের নিন্দা করেছিলেন? (খ) যিশুর কথা শুনে তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

যিশু সাহসের সঙ্গে তাঁর সময়ের ধর্মীয় গুরুদের নিন্দা করেছিলেন কারণ তারা লোকদের সঠিকভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করতে শেখাত না। যেমন, তারা হাত ধোয়ার রীতি পালন করার উপর খুব জোর দিত, কিন্তু কেউ যখন নিজের বাবা-মায়ের যত্ন নিত না কিংবা সমাদর করত না, তখন তারা তাদের কিছুই বলত না। (মথি ১৫:১-১১) যিশুর শিষ্যেরা হয়তো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন আর তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনি কি জানেন, আপনার কথা শুনে ফরীশীরা অসন্তুষ্ট হয়েছে?” উত্তরে যিশু বলেছিলেন: “যে-সমস্ত চারা আমার স্বর্গস্থ পিতা রোপণ করেননি, সেগুলো উপড়ে ফেলা হবে। তাদের নিজেদের মতো থাকতে দাও। তারা তো অন্ধ পথ প্রদর্শক। কোনো অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখায়, তা হলে উভয়েই গর্তে পড়বে।” (মথি ১৫:১২-১৪) যদিও যিশুর কথা শুনে ধর্মীয় গুরুরা খুব রেগে গিয়েছিল, কিন্তু যিশু সত্যি কথা বলতে পিছপা হননি।   

৮. কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন, ঈশ্বরের কাছে সমস্ত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণযোগ্য নয়?

যিশু ধর্মীয় গুরুদের মিথ্যা শিক্ষাগুলোও প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বরের কাছে সমস্ত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য তিনি দুটো রাস্তার কথা উল্লেখ করেছিলেন: একটা সহজ রাস্তা, যে-রাস্তা দিয়ে অনেক লোক যাবে, কিন্তু সেটা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আরেকটা কঠিন রাস্তা, যে-রাস্তা দিয়ে অল্প লোক যাবে, কিন্তু সেটা অনন্তজীবনের দিকে নিয়ে যায়। (মথি ৭:১৩, ১৪) এ ছাড়া, তিনি এও বলেছিলেন, কিছু লোক ঈশ্বরের উপাসনা করছে বলে দাবি করবে। সেই লোকদের সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “মিথ্যা ভাববাদীদের কাছ থেকে সাবধান, যারা তোমাদের কাছে মেষের ছদ্মবেশে আসে, কিন্তু আসলে তারা ক্ষুধার্ত নেকড়ে। তোমরা তাদের ফল দ্বারাই তাদের চিনতে পারবে।”—মথি ৭:১৫-২০.   

অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তিনি মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষা ও রীতিনীতির নিন্দা করতেন। আজকে লোকেরা হয়তো একইরকম কারণে আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৯. যিশু কোন মিথ্যা শিক্ষাগুলো প্রকাশ করে দিয়েছিলেন?

শাস্ত্র কী জানায়? শাস্ত্রে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, যিহোবার গৃহের প্রতি মশীহের অনেক উদ্যোগ থাকবে। (গীত. ৬৯:৯; যোহন ২:১৪-১৭) সেই উদ্যোগের কারণেই যিশু মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষা ও রীতিনীতি প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ফরীশীরা শেখাত, মানুষ মারা গেলেও তার আত্মা বেঁচে থাকে। কিন্তু, যিশু শিখিয়েছিলেন, মানুষ যখন মারা যায়, তখন তারা গভীরভাবে ঘুমিয়ে থাকে। (যোহন ১১:১১) সদ্দূকীরা শেখাত, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর পুনরুত্থিত হয় না। কিন্তু, যিশু তাঁর বন্ধু লাসারকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (যোহন ১১:৪৩, ৪৪; প্রেরিত ২৩:৮) ফরীশীরা এও শেখাত, আমরা শুধু তা-ই করি, যা আমাদের ভাগ্যে লেখা আছে অথবা ঈশ্বর আমাদের দিয়ে যা করাতে চান। কিন্তু, যিশু শিখিয়েছিলেন, একজন ব্যক্তি নিজে বেছে নিতে পারেন, তিনি ঈশ্বরের সেবা করবেন কি করবেন না।—মথি ১১:২৮.

১০. কেন আজকে অনেকেই যিহোবার সাক্ষিদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে?

১০ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। আজকে অনেকেই যিহোবার সাক্ষিদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে কারণ সাক্ষিরা বাইবেল ব্যবহার করে লোকদের দেখায় যে, কিছু ধর্মীয় শিক্ষা রয়েছে, যেগুলো আসলে বাইবেল অনুযায়ী সঠিক নয়। যেমন, অনেক ধর্মীয় গুরু শেখায়, ঈশ্বর দুষ্ট লোকদের নরকে শাস্তি দেন। তারা লোকদের ভয় দেখিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই মিথ্যা শিক্ষা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা জানে, যিহোবা হলেন একজন প্রেমময় ঈশ্বর। তাই, তারা এই মিথ্যা শিক্ষাকে প্রকাশ করে দেয়। ধর্মীয় গুরুরা এও শেখায়, মানুষ মারা গেলেও তার আত্মা বেঁচে থাকে। একটু চিন্তা করে দেখুন, এই শিক্ষা যদি সঠিক হত, তা হলে মৃতদের পুনরুত্থান করার প্রয়োজন হত না। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেলে থেকে দেখায়, আত্মার অমরত্বের শিক্ষা আসলে মিথ্যা। বেশিরভাগ ধর্ম এও শেখায়, মানুষ সেটাই করে, যেটা তার ভাগ্যে লেখা রয়েছে অথবা ঈশ্বর তাকে দিয়ে যা করাতে চান। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা শেখায়, একজন ব্যক্তি নিজে বেছে নিতে পারেন, তিনি ঈশ্বরের সেবা করবেন কি করবেন না। তাই, সাক্ষিরা যখন ধর্মীয় গুরুদের মিথ্যা শিক্ষা প্রকাশ করে দেয়, তখন তারা তাদের উপর খুবই রেগে যায়।

১১. যোহন ৮:৪৫-৪৭ পদ অনুযায়ী ঈশ্বর তাঁর লোকদের কাছ থেকে কী আশা করেন?

১১ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিহোবার সেবা বন্ধ করে না দেন? সত্যের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করুন। এভাবে আপনি ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মাধ্যমে যা-কিছু বলেছেন, সেগুলো বিশ্বাস করবেন এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবেন। (পড়ুন, যোহন ৮:৪৫-৪৭.) শয়তান দিয়াবল সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু, আপনি যেন কখনোই সত্যকে প্রত্যাখ্যান না করেন। (যোহন ৮:৪৪) ঈশ্বর আশা করেন, যেন তাঁর লোকেরা ‘যা মন্দ, তা ঘৃণা করে’ এবং ‘যা ভালো, তাতে আসক্ত থাকে,’ ঠিক যেমনটা যিশু করেছিলেন।—রোমীয় ১২:৯; ইব্রীয় ১:৯.

(৩) যিশুকে তাড়না করা হয়

অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তাঁকে অপরাধীর মতো একটা দণ্ডের উপর হত্যা করা হয়েছিল। আজকে লোকেরা হয়তো একইরকম কারণে আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১২. কোন কারণে কিছু যিহুদি যিশুকে মশীহ হিসেবে মেনে নেয়নি?

১২ যিশুর দিনে আর কোন কারণে কিছু যিহুদি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল? পৌল বলেছিলেন: “আমরা খ্রিস্ট সম্বন্ধে প্রচার করি, যিনি দণ্ডে বিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর সম্বন্ধে প্রচার যিহুদিদের জন্য গ্রহণ করা খুবই কঠিন।” (১ করি. ১:২৩) যিশুকে একজন অপরাধীর মতো একটা দণ্ডে হত্যা করা হয়েছিল। এই কারণে কিছু যিহুদি যিশুকে মশীহ হিসেবে মেনে নেয়নি।—দ্বিতীয়. ২১:২২, ২৩.

১৩. যিশুকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারা কোন বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল?

১৩ যিহুদি উচ্চ আদালতের বিচারকেরা তাড়াহুড়ো করে এবং বিচারের কোনো নিয়মকানুন না মেনেই যিশুর বিচার করেছিল। (লূক ২২:৫৪; যোহন ১৮:২৪) তারা নিজেরাই “যিশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য খুঁজতে লাগল, যাতে তাঁকে হত্যা করতে পারে।” যখন তারা যিশুর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ খুঁজে পেল না, তখন মহাযাজক যিশুর কথাতেই তাঁকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন। আর এটা পুরোপুরি আইনের বিরুদ্ধে ছিল। (মথি ২৬:৫৯; মার্ক ১৪:৫৫-৬৪) পরে, যিশু যখন পুনরুত্থিত হয়েছিলেন এবং তাঁর কবর যখন খালি ছিল, তখন সেই যাজকেরাই আরেকটা চক্রান্ত করে। তারা রোমীয় সৈন্যদের “প্রচুর রুপোর মুদ্রা” দিয়ে এই মিথ্যা কথা বলতে পরিচালিত করেছিল যে, যিশুর শিষ্যেরা এসে তাঁর দেহ চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। কিছু যিহুদি এই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, যিশু আসলে নির্দোষ ছিলেন, তাঁর উপর মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়েছিল। তাই, তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।—মথি ২৮:১১-১৫.

১৪. শাস্ত্রে মশীহ সম্বন্ধে কী লেখা ছিল?

১৪ শাস্ত্র কী জানায়? যিশুর দিনে অনেক যিহুদি ভাবতে পারেনি, মশীহকে মারা যেতে হবে। কিন্তু লক্ষ করুন, শাস্ত্রে কী লেখা ছিল: “তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন, তিনি অধর্ম্মিদের সহিত গণিত হইলেন; আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন, এবং অধর্ম্মিদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন।” (যিশা. ৫৩:১২) তাই, যিশুকে যে মারা যেতে হবে এই বিষয়ে যিহুদিদের সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না।

১৫. কোন কারণে কিছু লোক যিহোবার সাক্ষিদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে?

১৫ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। যেভাবে যিশুর উপর মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে এসে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, আজকে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গেও এইরকম করা হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সাক্ষিদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার চেষ্টা করা হয়েছিল, যাতে তারা খোলাখুলিভাবে উপাসনা করতে না পারে। সেইসময় সাক্ষিদের তাদের অধিকারের জন্য বিভিন্ন মামলা লড়তে হয়েছিল। আর কিছু বিচারক সাক্ষিদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কানাডার কুইবেকের গির্জা ও রাষ্ট্র একসঙ্গে মিলে আমাদের প্রচার কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। অনেক সাক্ষিকে প্রচার করার জন্য জেলে বন্দি করা হয়েছিল। জার্মানির নাতসি সরকার অনেক যুবক ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। আর বর্তমানে, রাশিয়ায় প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই দেশের সরকার মনে করে, এই কাজ ‘দেশের জন্য বিপদজনক।’ এই কারণে অনেকের বিচার করা হয় এবং জেলে বন্দি করা হয়। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ায় নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল পড়ার এবং এটি বিতরণ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর সেইসঙ্গে এটিকে ‘দেশের জন্য বিপদজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন? কারণ এটিতে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম যিহোবা ব্যবহার করা হয়েছে।

১৬. আপনি যখন যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা শোনেন, তখন কেন আপনার তাতে মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়? (১ যোহন ৪:১)

১৬ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিহোবার সেবা বন্ধ করে না দেন? সমস্ত তথ্য ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখুন। পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশে যিশু বলেছিলেন যে, এমন লোকেরা আসবে, যারা “তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে সমস্ত ধরনের মন্দ কথা” বলবে। (মথি ৫:১১) এই ধরনের কথার পিছনে আসলে শয়তানের হাত রয়েছে। সে আজকে লোকদের উসকে দিচ্ছে যেন তারা যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে মিথ্যা বলে বেড়ায়। (প্রকা. ১২:৯, ১০) তাই, এই ধরনের মিথ্যা কথায় আপনার মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়। আপনি যদি মনোযোগ দেন, তা হলে আপনার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়তে পারে আর আপনি যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিতে পারেন।—পড়ুন, ১ যোহন ৪:১.

(৪) যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় এবং তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ছেড়ে চলে যায়

অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ যিহূদা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। আজকে লোকেরা হয়তো একইরকম কারণে আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। (১৭-১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৭. কিছু লোক কী দেখে যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?

১৭ যিশু মারা যাওয়ার আগে তাঁর ১২ জন প্রেরিতদের মধ্যে এক জন তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। আরেকজন প্রেরিত তাঁকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন। আর বাকি প্রেরিতেরা তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁকে একা ছেড়ে দিয়েছিল। (মথি ২৬:১৪-১৬, ৪৭, ৫৬, ৭৫) যিশু এতে অবাক হননি কারণ তিনি জানতেন, তাঁর প্রতি এই সমস্ত কিছু ঘটবে। (যোহন ৬:৬৪; ১৩:২১, ২৬, ৩৮; ১৬:৩২) কিন্তু, এগুলো দেখে হয়তো কিছু যিহুদি এভাবে চিন্তা করেছিল, ‘যদি যিশুর প্রেরিতেরা এইরকম আচরণ করতে পারে, তা হলে আমি তাঁর শিষ্য হতে চাইব না!’

১৮. যিশু মারা যাওয়ার ঠিক আগে কোন কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল?

১৮ শাস্ত্র কী জানায়? শত শত বছর আগে যিহোবা বলেছিলেন, ৩০টা রুপোর মুদ্রার জন্য মশীহের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। (সখ. ১১:১২, ১৩) আর তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে এক জন তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। (গীত. ৪১:৯) এ ছাড়া, ভাববাদী সখরিয় বলেছিলেন: “পালককে আঘাত কর, তাহাতে পালের মেষেরা ছড়াইয়া পড়িবে।” (সখ. ১৩:৭) এই সমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখে সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের সন্দেহ করার পরিবর্তে, যিশুর উপর তাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী করতে হত।

১৯. সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা কী জানে?

১৯ লোকেরা কি আজও একইরকম রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে। আমাদের সময়েও এমন কিছু সাক্ষি ঈশ্বরের সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে, যাদের অনেক ভাই-বোন খুব ভালোভাবে জানত। তারা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি হয়ে উঠেছে এবং অন্যদের যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। তারা টিভি, খবরের কাগজ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে যিহোবার লোকদের সম্বন্ধে মিথ্যা তথ্য এবং খারাপ কথা ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু, সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা তাদের কথায় মনোযোগ দেয় না কারণ তারা জানে, এই সমস্ত কিছু ঘটবে বলে বাইবেলে আগে থেকে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা আছে।—মথি ২৪:২৪; ২ পিতর ২:১৮-২২.

২০. আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কারণে যিহোবার সেবা বন্ধ করে না দেন? (২ তীমথিয় ৪:৪, ৫)

২০ আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনি যিহোবার সেবা বন্ধ করে না দেন? ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল অধ্যয়ন করে চলুন, ক্রমাগত প্রার্থনা করুন আর প্রচার কাজও করে চলুন। এভাবে আপনি আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করতে পারবেন। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৪:৪, ৫.) যদি আপনার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তা হলে আপনি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা শুনে অবাক হয়ে যাবেন না। (যিশা. ২৮:১৬) আপনার যদি যিহোবা, তাঁর বাক্য বাইবেল আর তাঁর লোকদের প্রতি ভালোবাসা থাকে, তা হলে ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে এমন ব্যক্তিদের কারণে আপনি যিহোবার সেবা বন্ধ করে দেবেন না।

২১. প্রথম শতাব্দীর মতো আজকেও আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি?

২১ প্রথম শতাব্দীতে বেশিরভাগ লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু, এমন লোকেরাও ছিল, যারা তাঁকে মশীহ হিসেবে মেনে নিয়েছিল। যেমন, যিহুদি মহাসভার একজন সদস্য আর এমনকী “যাজকদের এক বিরাট দল” যিশুর অনুসারী হয়েছিল। (প্রেরিত ৬:৭; মথি ২৭:৫৭-৬০; মার্ক ১৫:৪৩) আজকেও অনেক লোক যিশুকে প্রত্যাখ্যান করে ঠিকই, কিন্তু এমন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি রয়েছে, যারা যিশুর উপর বিশ্বাস করে এবং তাঁকে অনুসরণ করে। কেন? কারণ তারা ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া সত্য সম্বন্ধে জানে এবং সেগুলো ভালোবাসে। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যাহারা তোমার ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি, তাহাদের উছোট লাগে না।”—গীত. ১১৯:১৬৫.

গান ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম

^ অনু. 5 আগের প্রবন্ধে চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল, কেন অতীতে লোকেরা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর কেন আজকে লোকেরা তাঁর অনুসারীদের কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রবন্ধে আমরা আরও চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া, আমরা এও আলোচনা করব, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, কেন তারা তাঁর সেবা করার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকে বাধা হতে দেয় না।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু মথি ও কর আদায়কারীদের সঙ্গে খাবার খাচ্ছেন।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু বণিকদের মন্দির থেকে বের করে দিচ্ছেন।

^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু নিজের যাতনাদণ্ড বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

^ অনু. 66 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিহূদা যিশুকে চুম্বন করে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।