সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৯

প্রকাশিত বাক্যে আমাদের জন্য শিক্ষা

প্রকাশিত বাক্যে আমাদের জন্য শিক্ষা

“সুখী সেই ব্যক্তি, যে এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর কথাগুলো জোরে জোরে পড়ে।”—প্রকা. ১:৩.

গান ৫ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

সারাংশ *

১-২. কেন আমাদের প্রকাশিত বাক্যে লেখা কথাগুলোর বিষয়ে জানা উচিত?

 কল্পনা করুন, আপনি কোনো পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন আর তারা আপনাকে তাদের একটা ফোটো অ্যালবাম দেখতে দিয়েছে। আপনি তাতে অনেক নতুন মুখ দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু তখনই, একটা ছবির উপর আপনার চোখ পড়ে। সেই ছবিতে আপনিও রয়েছেন। আপনি সেই ছবিটা খুব মনোযোগ সহকারে দেখেন। আপনি দেখেন যে, আপনার সঙ্গে সেই ছবিতে কে কে রয়েছে আর মনে করার চেষ্টা করেন, সেই ছবিটা কোথায় এবং কখন তোলা হয়েছিল।

প্রকাশিত বাক্য বইও সেই ছবির মতো। কেন আমরা তা বলতে পারি? এর দুটো কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হল, এই বই আমাদের জন্য লেখানো হয়েছে। এই বইয়ের প্রথম পদে লেখা রয়েছে: “যিশু খ্রিস্টের দ্বারা প্রকাশিত বাক্য, যে-বাক্য ঈশ্বর তাঁকে দিয়েছেন, যেন তিনি তাঁর দাসদের সেই বিষয়গুলো দেখান, যেগুলো শীঘ্রই ঘটবে।” (প্রকা. ১:১) এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, এই বই সমস্ত মানুষের জন্য নয় বরং বিশেষ করে ঈশ্বরের লোকদের জন্য লেখানো হয়েছে। আর এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ঈশ্বরের লোক হিসেবে আমরা প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে অংশ নিচ্ছি। অন্যভাবে বললে, এটা এমন যেন সেই ছবিতে আমরা নিজেদের মুখ দেখতে পাচ্ছি।

৩-৪. (ক) প্রকাশিত বাক্য অনুযায়ী কখন এই বইয়ে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হত? (খ) আজ আমাদের প্রত্যেকের কী করা জরুরি?

দ্বিতীয় কারণ হল, প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো আমাদের দিনে পরিপূর্ণ হচ্ছে। কেন আমরা তা বলতে পারি? প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “পবিত্র শক্তির অনুপ্রেরণায় আমি প্রভুর দিনে উপস্থিত হলাম।” (প্রকা. ১:১০) এই কথাগুলো যোহন ৯৬ খ্রিস্টাব্দে লিখেছিলেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত, ‘প্রভুর দিন’ শুরু হয়নি। (মথি ২৫:১৪, ১৯; লূক ১৯:১২) বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী থেকে বোঝা যায় যে, ‘প্রভুর দিন’ ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল, যখন যিশু স্বর্গে রাজা হয়েছিলেন। তখন থেকে ঈশ্বরের লোকদের বিষয়ে প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পরিপূর্ণ হতে শুরু করে। আজ আমরা সবাই “প্রভুর দিনে” বাস করছি।

তাই, এটা খুবই জরুরি যেন আমরা প্রকাশিত বাক্য ১:৩ পদে দেওয়া পরামর্শের উপর মনোযোগ দিই। এখানে লেখা আছে: “সুখী সেই ব্যক্তি, যে এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর কথাগুলো জোরে জোরে পড়ে এবং সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে লেখা বিষয়গুলো শোনে এবং পালন করে, কারণ নিরূপিত সময় কাছে এসে গিয়েছে।” আমাদের ভবিষ্যদ্‌বাণীর এই কথাগুলো ‘জোরে জোরে পড়তে’ হবে, সেগুলো ‘শুনতে’ হবে আর তা “পালন” করতে হবে। তাই আসুন, এগুলোর মধ্যে কিছু কথার উপর মনোযোগ দিই।

যিহোবা কি আপনার উপাসনা গ্রহণ করছেন?

৫. আমরা যদি চাই, যিহোবা আমাদের উপাসনা গ্রহণ করুক, তা হলে আমাদের কার পরামর্শ মেনে চলা উচিত আর কেন?

প্রকাশিত বাক্যের শুরুর অধ্যায়গুলোতে বলা হয়েছে, যিশু এশিয়া মাইনরের সাতটা মণ্ডলীকে আলাদা আলাদা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেগুলো পড়ার মাধ্যমে বোঝা যায়, তিনি তাদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানতেন। (প্রকা. ১:১২-১৬, ২০; ২:১) যিশু তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাদের কী করা উচিত, যাতে যিহোবা তাদের উপাসনা গ্রহণ করেন। এখান থেকে আমরা কী শিখি? আজও যিশু খুব ভালোভাবে জানেন, মণ্ডলীগুলোতে কী হচ্ছে। তিনি হলেন আমাদের নেতা এবং তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন। তাঁর চোখে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। তিনি জানেন, আমাদের প্রত্যেকের যিহোবার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রয়েছে আর এও জানেন যে, যিহোবার অনুমোদন লাভ করার জন্য আমাদের কী করা উচিত। তিনি এশিয়া মাইনরের মণ্ডলীগুলোকে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা থেকে আমরাও অনেক কিছু শিখতে পারি। আসুন দেখি, তিনি সেই মণ্ডলীগুলোকে কী বলেছিলেন।

৬. (ক) প্রকাশিত বাক্য ২:৩, ৪ পদ অনুযায়ী ইফিষ মণ্ডলীতে কোন সমস্যা ছিল? (খ) এখান থেকে আমরা কী শিখি?

প্রকাশিত বাক্য ২:৩, ৪ পদ পড়ুন। আমাদের যিহোবার প্রতি ভালোবাসা কমে যেতে দেওয়া উচিত নয়। যিশু ইফিষ মণ্ডলীর উদ্দেশে যে-বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা থেকে বোঝা যায় যে, সেখানকার ভাই-বোনেরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছিল, তারপরও তারা ধৈর্য ধরেছিল আর যিহোবার সেবা করে গিয়েছিল। কিন্তু, তাদের মধ্যে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আগের মতো ছিল না। তাদের সেই ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে হত, তা হলেই যিহোবা তাদের উপাসনা গ্রহণ করতেন। একইভাবে, আমরা যখন কষ্ট ভোগ করি, তখন আমরা ধৈর্য ধরি। তবে, যিহোবা শুধু এটাই দেখেন না যে, আমরা ধৈর্য ধরছি, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এও দেখেন, কেন আমরা তা ধরছি। যিহোবা চান, আমরা যেন তাঁকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসার এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে তাঁর উপাসনা করি।—হিতো. ১৬:২; মার্ক ১২:২৯, ৩০.

৭. (ক) প্রকাশিত বাক্য ৩:১-৩ পদ অনুযায়ী সার্দি মণ্ডলীতে কোন সমস্যা ছিল? (খ) আমাদের জেগে থাকার জন্য কী করা উচিত?

প্রকাশিত বাক্য ৩:১-৩ পদ পড়ুন। আমাদের জেগে থাকা উচিত। সার্দি মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আগে অনেক উদ্যোগের সঙ্গে সেবা করত। কিন্তু, পরে তারা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। তাই, যিশু তাদের “জেগে” থাকতে বলেছিলেন। এটা ঠিক যে, যিহোবা আমাদের কাজ কখনো ভুলে যাবেন না। কিন্তু, আমাদের কখনোই এমনটা চিন্তা করা উচিত নয়, ‘আমি অনেক বছর ধরে যিহোবার সেবা করছি। এখন যদি অল্প করি, তা হলেও কোনো ক্ষতি নেই।’ (ইব্রীয় ৬:১০) আমরা হয়তো আমাদের পরিস্থিতির কারণে বেশি করে যিহোবার সেবা করতে পারি না, কিন্তু “প্রভুর সেবায়” আমরা যতটা করতে পারি, ততটা আমাদের করা উচিত। এভাবে, শেষ না আসা পর্যন্ত আমরা জেগে থাকতে পারব।—১ করি. ১৫:৫৮; মথি ২৪:১৩; মার্ক ১৩:৩৩.

৮. যিশু লায়দিকেয়া মণ্ডলীকে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখি? (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৫-১৭)

প্রকাশিত বাক্য ৩:১৫-১৭ পদ পড়ুন। আমাদের মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করা উচিত। লায়দিকেয়া মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা উপাসনা করার ক্ষেত্রে “ঈষদুষ্ণ” হয়ে গিয়েছিল। এইজন্য, যিশু তাদের বলেছিলেন, ‘তোমরা দুর্দশাগ্রস্ত এবং তোমাদের অবস্থা করুণ।’ তিনি তাদের উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। (প্রকা. ৩:১৯) এখান থেকে আমরা কী শিখি? যিহোবার সেবা করতে করতে আমাদের উদ্যোগ যদি কমে যায়, তা হলে আমাদের সেটা বাড়ানো উচিত। আমাদের মনে রাখা উচিত, যিহোবা এবং তাঁর সংগঠন আমাদের জন্য কত কিছু করছেন। (প্রকা. ৩:১৮) আমাদের কখনো আরাম-আয়েশের জিনিসগুলো অর্জন করার পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা উচিত নয়। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা হয়তো যিহোবার সেবাকে হালকাভাবে দেখতে শুরু করব।

৯. পর্গাম ও থুয়াতীরার খ্রিস্টানদের মতো আজ আমাদের সামনেও কোন বিপদ রয়েছে?

আমাদের ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষাগুলো থেকে অনেক দূরে থাকা উচিত। যিশু পর্গাম মণ্ডলীর কিছু ভাই-বোনকে কড়া পরামর্শ দিয়েছিলেন কারণ তারা মাংসিক চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মণ্ডলীতে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল। (প্রকা. ২:১৪-১৬) কিন্তু, তিনি থুয়াতীরা মণ্ডলীর সেই ভাই-বোনদের প্রশংসা করেছিলেন, যারা “শয়তানের গভীর বিষয়” থেকে নিজেদের দূরে রেখেছিল। তিনি তাদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা সত্যকে ‘দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে।’ (প্রকা. ২:২৪-২৬) সেই দুটো মণ্ডলীর কিছু খ্রিস্টানের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছিল, যেটার কারণে তারা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তাই, তাদের অনুতপ্ত হতে হত। আজ আমাদের দিনেও, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা যিহোবার সংগঠনের বিরুদ্ধে কথা বলে। দেখে মনে হতে পারে, তারা বাইবেলের শিক্ষাগুলো মেনে চলে, কিন্তু আসলে তা নয়। (২ তীম. ৩:৫) তাই, আমাদের তাদের কথা একদমই শোনা উচিত নয়। আমরা যদি বাইবেল নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করি, তা হলেই আমরা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা ছড়ানো মিথ্যা শিক্ষাগুলো শনাক্ত করতে পারব আর তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে থাকতে পারব।—২ তীম. ৩:১৪-১৭; যিহূদা ৩, ৪.

১০. যিশু পর্গাম ও থুয়াতীরা মণ্ডলীকে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখি?

১০ আমাদের যেকোনো ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত। পর্গাম ও থুয়াতীরা মণ্ডলীতে আরেকটা সমস্যা ছিল। সেখানকার কিছু লোক যৌন অনৈতিকতার মতো গুরুতর পাপকে খুবই হালকাভাবে নিচ্ছিল। সেইজন্য যিশু তাদের কড়া শব্দগুলো ব্যবহার করে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (প্রকা. ২:১৪, ২০) এখান থেকে আমরা কী শিখি? আমাদের যেকোনো ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত আর সেগুলোকে কোনোভাবেই সহ্য করা উচিত নয়। আমাদের কখনোই এইরকমটা চিন্তা করা উচিত নয় যে, আমি এত বছর ধরে যিহোবার সেবা করছি আর তাঁর সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছি, তাই আমি এই পাপ করলেও যিহোবা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। (১ শমূ. ১৫:২২; ১ পিতর ২:১৬) জগতের নৈতিক মান যতই নীচে নেমে যাক না কেন, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি।—ইফি. ৬:১১-১৩.

১১. আমরা এখন পর্যন্ত কী শিখেছি? (“ আমাদের জন্য শিক্ষা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১১ এই প্রবন্ধ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কী শিখেছি? আমাদের যিহোবার উপাসনা করার পাশাপাশি সঠিক কাজগুলোও করতে হবে। আমরা যদি এমন কিছু করে থাকি, যেগুলো যিহোবা ঘৃণা করেন, তা হলে আমাদের সেই কাজগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে, আমাদের উপাসনার কোনো মূল্য থাকবে না। (প্রকা. ২:৫, ১৬; ৩:৩, ১৬) যিশু এশিয়া মাইনরের মণ্ডলীগুলোকে যে-বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা আরও কিছু শিখতে পারি। আসুন, তা দেখি।

তাড়না সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকুন

শয়তানকে যখন স্বর্গ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে সে কীভাবে ঈশ্বরের লোকদের উপর আক্রমণ করছে? (১২-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. যিশু স্মুর্ণা ও ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীকে যে-বার্তা পাঠিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখি? (প্রকাশিত বাক্য ২:১০)

১২ এখন আসুন দেখি যে, যিশু স্মুর্ণা ও ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীকে কোন বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার ভাই-বোনদের বলেছিলেন, তারা যেন তাড়না এলে ভয় না পায় কারণ তারা যদি বিশ্বস্ত থাকে, তা হলে পরবর্তী সময়ে তারা পুরস্কার লাভ করবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২:১০; ৩:১০) এখান থেকে আমরা কী শিখি? এই বিষয়টা নিশ্চিত যে, আমাদের উপরও তাড়না আসবে, তবে আমাদের তাড়না সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। (মথি ২৪:৯, ১৩; ২ করি. ১২:১০) আজ এই পরামর্শের উপর মনোযোগ দেওয়া আরও বেশি জরুরি।

১৩-১৪. যখন থেকে শয়তানকে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তখন থেকে ঈশ্বরের লোকদের প্রতি কী ঘটছে?

১৩ প্রকাশিত বাক্য বই থেকে বোঝা যায় যে, ঈশ্বরের লোকদের উপর “প্রভুর দিনে” তাড়না আসবে অর্থাৎ আমাদের দিনে। আসুন দেখি যে, যখন ‘প্রভুর দিন’ শুরু হয়, তখন কী হয়। প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যখন স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপিত হয়, তখন এর ঠিক পরেই সেখানে এক যুদ্ধ শুরু হয়। মীখায়েল অর্থাৎ যিশু খ্রিস্ট এবং তাঁর সেনাবাহিনী শয়তান এবং তার মন্দ স্বর্গদূতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। (প্রকা. ১২:৭, ৮) এর পরিণতি কী হয়? শয়তান এবং তার মন্দ স্বর্গদূতেরা পরাজিত হয় এবং তাদের পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তারা সমস্ত মানুষের উপর আরও বেশি দুঃখকষ্ট নিয়ে আসতে শুরু করে। (প্রকা. ১২:৯, ১২) আর ঈশ্বরের লোকদের প্রতি কী ঘটতে শুরু হয়?

১৪ শয়তানের জন্য স্বর্গে ফিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই, সে পৃথিবীতে থাকা অবশিষ্ট অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উপর নিজের রাগ প্রকাশ করতে শুরু করে। শয়তান জানে, এই অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের রাজ্যে শাসন করবে আর তাদের “যিশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ দেওয়া হয়েছে।” এইজন্য, সে তাদের উপর একের-পর-এক তাড়না নিয়ে আসতে শুরু করে। (প্রকা. ১২:১৭; ২ করি. ৫:২০; ইফি. ৬:১৯, ২০) আসুন দেখি, সে কীভাবে তা করেছে।

১৫. (ক) প্রকাশিত বাক্য ১১ অধ্যায়ে বলা ‘দু-জন সাক্ষি’ কারা? (খ) তাদের প্রতি কী হয়েছিল?

১৫ শয়তান সেই অভিষিক্ত ভাইদের আক্রমণ করেছিল, যারা প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিচ্ছিলেন। সেই ভাইদের প্রকাশিত বাক্য ১১ অধ্যায়ে ‘দু-জন সাক্ষি’ বলা হয়েছে, যাদের হত্যা করা হয়। * (প্রকা. ১১:৩, ৭-১১) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল? ১৯১৮ সালে নেতৃত্ব নিচ্ছিলেন এমন আট জন ভাইয়ের উপর মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল আর তাদের প্রত্যেককে দীর্ঘসময়ের জন্য জেলে বন্দি করা হয়েছিল। সেইসময় মনে হয়েছিল যেন প্রচার কাজ পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

১৬. উনিশ-শো উনিশ সালে কী হয়েছিল আর সেই সময় থেকে শয়তান কী করে আসছে?

১৬ প্রকাশিত বাক্য ১১ অধ্যায়ে এও বলা ছিল যে, সেই “দু-জন সাক্ষিকে” কিছুসময় পর আবারও জীবিত করা হবে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল? যে-আট জন ভাইকে জেলে বন্দি করা হয়েছিল, তাদের পরের বছরেই অর্থাৎ ১৯১৯ সালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের উপর থেকে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই তারা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু, এটা দেখে শয়তান চুপ করে থাকেনি। সে ঈশ্বরের লোকদের উপর ‘নদীর জলপ্রবাহ বের করল।’ এর মানে হল, সে ক্রমাগত তাদের উপর তাড়না করছে। (প্রকা. ১২:১৫) এই কারণে, আজ আমাদের প্রত্যেকেরই “ধৈর্য ও বিশ্বাস বজায় রাখা প্রয়োজন।”—প্রকা. ১৩:১০.

যিহোবা যে-কাজ দিয়েছেন, সেটা ভালোভাবে করুন

১৭. ঈশ্বরের লোকেরা কাদের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করে?

১৭ এরপর, প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ঈশ্বরের লোকেরা এমন কিছু সাহায্য লাভ করে, যেগুলো তারা আশা করে না। ১৬ পদে লেখা রয়েছে, শয়তান তাদের উপর “যে-নদী” বের করল, “পৃথিবী” সেটাকে খেয়ে ফেলল। এর মানে কী? শয়তান ঈশ্বরের লোকদের উপর তাড়না নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু কখনো কখনো তার জগতের কিছু আধিকারিকেরা যিহোবার সাক্ষিদের সাহায্য করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, অনেক বার আদালত যিহোবার সাক্ষিদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এর ফলে, সাক্ষিরা তাদের কাজ করার স্বাধীনতা পেয়েছে এবং তারা খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে পারছে। (১ করি. ১৬:৯) কিন্তু, তারা কোন বার্তা প্রচার করছে?

আজ ঈশ্বরের লোকেরা কোন দুটো বার্তা ঘোষণা করছে? (১৮-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. শেষ আসার আগে আমাদের কোন কাজ করতে হবে?

১৮ যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, তাঁর শিষ্যেরা শেষ আসার আগে পুরো পৃথিবীতে “[ঈশ্বরের] রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করবে। (মথি ২৪:১৪) কিন্তু, তারা একা এই কাজ করছে না। প্রকাশিত বাক্যে লেখা রয়েছে, একজন স্বর্গদূতের কাছে “অনন্তকালীন সুসমাচার রয়েছে, যেন তিনি পৃথিবীতে বসবাসকারী লোকদের কাছে অর্থাৎ প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও বর্ণের লোকদের কাছে তা ঘোষণা করেন।” (প্রকা. ১৪:৬) এটা থেকে বোঝা যায় যে, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে স্বর্গদূতেরাও ঈশ্বরের লোকদের সাহায্য করছেন।

১৯. যিহোবার লোকেরা আর কোন বার্তা ঘোষণা করছে?

১৯ ঈশ্বরের লোকেরা কেবল রাজ্যের সুসমাচারই ঘোষণা করছে না, কিন্তু সেইসঙ্গে শয়তানের জগতের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচার সম্বন্ধেও ঘোষণা করছে। তাদের এই বার্তাকে ‘শিলা ও আগুনের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (প্রকা. ৮:৭, ১৩) এভাবে তারা স্বর্গদূতদের কাজে সহযোগিতা করছেন। প্রকাশিত বাক্য ৮ থেকে ১০ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, স্বর্গদূতেরা একটা বার্তা ঘোষণা করছেন আর তা হল, যারা ঈশ্বরের রাজ্যকে মেনে নেবে না, তাদের জীবনে গুরুতর সমস্যা দেখা দেবে। যিহোবার সাক্ষিরা জানে, লোকদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এইজন্য সাক্ষিরা লোকদের বলছে, তারা যদি শেষ আসার আগে নিজেদের পরিবর্তন করে, তা হলেই যিহোবার ক্রোধের দিনে তারা রক্ষা পাবে। (সফ. ২:২, ৩) কিন্তু, অনেক লোকই এই বার্তা শুনতে পছন্দ করে না। তাই, এটা বলার জন্য আমাদের সাহসের প্রয়োজন। যখন মহাক্লেশ শুরু হবে, তখন আমাদের আরও বেশি সাহস দেখাতে হবে, কারণ সেইসময় আমরা শেষ বারের মতো লোকদের কাছে সরাসরি বিচারের বার্তা ঘোষণা করব আর অনেক লোক আমাদের বিরোধিতা করবে।—প্রকা. ১৬:২১.

‘এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে লেখা বিষয়গুলো পালন করুন’

২০. পরবর্তী দুটো প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

২০ আজ প্রকাশিত বাক্য বইয়ের অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলো পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে আমরাও অংশ নিচ্ছি। তাই, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে লেখা কথাগুলো আমাদের মেনে চলা উচিত। (প্রকা. ১:৩) আমাদের তাড়না সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত এবং সাহসের সঙ্গে প্রচার করা উচিত। তা করার জন্য আমরা প্রকাশিত বাক্যে বলা দুটো বিষয় মনে রাখতে পারি। প্রথমত, ঈশ্বরের শত্রুদের কী হবে। আর দ্বিতীয়ত, আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করব। পরবর্তী দুটো প্রবন্ধে আমরা এগুলো জানতে পারব।

গান ২৭ নাও পক্ষ যিহোবার!

^ আমরা এক রোমাঞ্চকর সময়ে বাস করছি! আজ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লেখা অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে। এই প্রবন্ধে এবং পরের দুটো প্রবন্ধে আমরা প্রকাশিত বাক্য থেকে বিশেষ কিছু কথার বিষয়ে জানব। আমরা যখন সেই কথাগুলো মনে রেখে যিহোবার উপাসনা করব, তখন তিনি আমাদের উপর খুশি হবেন।

^ ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় দেওয়া “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।