সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৩

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখান

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখান

“তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ এবং তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাসবে।”—মথি ২২:৩৭.

গান ৪১ যৌবনকালে যিহোবার উপাসনা করো

সারাংশ *

১-২. যখন আমাদের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়, তখন বাইবেলের কিছু পদের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে পালটে যায়?

 যখন দু-জন যিহোবার সাক্ষির বিয়ে হয়, তখন প্রায়ই একজন প্রাচীন বিয়ের বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। সেই বক্তৃতায় স্বামী-স্ত্রীর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও নীতির বিষয়ে বলা হয়ে থাকে। বর ও কনে হয়তো এই সমস্ত বিষয়ে আগেও শুনেছিল, তবে এখন তারা আরও মনোযোগ সহকারে এগুলো শুনে থাকে। কেন? কারণ এখন থেকে তাদের দু-জনকেই এগুলো কাজে লাগাতে হবে।

একইভাবে, এক স্বামী-স্ত্রী হয়তো বহু বছর ধরে সন্তানদের বড়ো করে তোলার বিষয়ে বিভিন্ন বক্তৃতা শুনেছে। কিন্তু, যখন তারা বাবা-মা হয়, তখন তারা সেই বিষয়গুলো আরও মনোযোগ সহকারে শুনে থাকে। তারা বোঝে যে, সন্তানদের বড়ো করে তোলা হল এক গুরুদায়িত্ব। এখান থেকে আমরা শিখি, যখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়, তখন বাইবেলের কিছু পদের উপর আমরা আরও বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করি। এটা একটা কারণ যে, কেন যিহোবার উপাসকেরা “প্রতিদিন” বাইবেল পড়ে আর সেটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে, ঠিক যেমনটা ইজরায়েলীয় রাজাদের করার জন্য বলা হয়েছিল।—দ্বিতীয়. ১৭:১৯, NW.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানব?

বাবা-মায়েরা, আপনারা এক বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন। আপনাদের সন্তানদের যিহোবার বিষয়ে শেখাতে হবে। কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, আপনারা শুধু তাদের তথ্য দেবেন বরং আপনাদের তাদের যিহোবাকে ভালোবাসতেও শেখাতে হবে। এরজন্য আপনারা কী করতে পারেন? এই প্রবন্ধে বাইবেলের চারটে পরামর্শের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো আপনারা মনে রাখতে পারেন। (২ তীম. ৩:১৬) আমরা এও জানব, কিছু বাবা-মা যখন এই পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়েছিল, তখন কীভাবে তারা উপকার পেয়েছিল।

বাবা-মায়েদের জন্য বাইবেল থেকে পরামর্শ

আপনি যদি সবসময় যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান এবং নিজে এক উত্তম উদাহরণ রাখেন, তা হলে এটা সন্তানদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে? (৪, ৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. সন্তানদের যিহোবার বিষয়ে শেখানোর সময় বাবা-মায়েরা কোন পরামর্শ মনে রাখতে পারে? (যাকোব ১:৫)

প্রথম পরামর্শ: যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান। প্রার্থনায় তাঁর কাছ থেকে প্রজ্ঞা চান, যাতে আপনারা আপনাদের সন্তানদের হৃদয়ে যিহোবার জন্য ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে পারেন। (পড়ুন, যাকোব ১:৫.) বলতে গেলে, একমাত্র যিহোবাই সবচেয়ে উত্তম পরামর্শ দিতে পারেন। এমনটা বলার আমাদের কাছে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রথমত, যিহোবা নিজেও একজন পিতা আর তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। (গীত. ৩৬:৯) দ্বিতীয়ত, তিনি হলেন সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি আর তিনি যা-ই পরামর্শ দেন, তা থেকে সবসময় আমরা উপকৃত হই।—যিশা. ৪৮:১৭.

৫. (ক) যিহোবার সংগঠন থেকে বাবা-মায়েরা কোন কোন সাহায্য লাভ করে? (খ) ভাই ও বোন অ্যামোরিমের ভিডিও থেকে সন্তানদের বড়ো করে তোলার বিষয়ে আপনি কী শিখেছেন?

যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকাশনা জুগিয়েছেন, যেগুলো বাইবেলের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। (মথি ২৪:৪৫) এগুলোর সাহায্যে বাবা-মায়েরা তাদের নিজের নিজের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখাতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি “পরিবারের জন্য সাহায্য” ধারাবাহিক প্রবন্ধ পড়তে পারেন। এই প্রবন্ধগুলো আগে সজাগ হোন! পত্রিকায় প্রকাশিত হত আর এখন jw.org ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া, আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভিডিও রয়েছে। কিছু ভিডিওতে বাবা-মায়েদের সাক্ষাৎকার রয়েছে আর কিছু ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে, বাবা-মায়েরা কীভাবে যিহোবার দেওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে তাদের সন্তানদের বড়ো করে তুলতে পারে। *হিতো. ২:৪-৬.

৬. যিহোবার সংগঠন যেভাবে বাবা-মায়েদের সাহায্য করে, সেই বিষয়ে একজন বাবা কী বলেছেন?

যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে যে-সমস্ত প্রকাশনা ও ভিডিও জুগিয়েছেন, সেগুলো ব্যবহার করে বাবা-মায়েরা অনেক উপকার পেয়েছে। এই বিষয়ে জোসেফ এবং তার স্ত্রীর উদাহরণ বিবেচনা করুন। তারা বলেন, এই প্রকাশনাগুলোর কারণে তাদের সন্তানেরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পেরেছে। জোসেফ বলেন: “আমার তিন সন্তানকে যিহোবার বিষয়ে শেখানো সহজ নয়। আমি এবং আমার স্ত্রী সবসময় প্রার্থনা করে যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চাই। কখনো কখনো আমরা বুঝতে পারি না যে, আমরা কী করব, কিন্তু এইরকম সময়ে যিহোবা অনেক অপূর্ব উপায়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন। তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে একেবারে সঠিক সময়ে কোনো ভিডিও কিংবা প্রবন্ধ জুগিয়ে থাকেন। যিহোবা যদি আমাদের সাহায্য না করতেন, তা হলে আমরা হয়তো আমাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারতাম না।”

৭. কেন বাবা-মায়েদের এক উত্তম উদাহরণ রাখা উচিত? (রোমীয় ২:২১)

দ্বিতীয় পরামর্শ: নিজে এক উত্তম উদাহরণ রাখুন। সন্তানেরা প্রায়ই তাদের বাবা-মায়েদের দেখে শেখে। যদিও বাবা-মায়েরা সিদ্ধ নয়, তারপরও সন্তানদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ রাখার ক্ষেত্রে তাদের কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত। (পড়ুন, রোমীয় ২:২১; রোমীয় ৩:২৩) একজন বাবা বলেন: “তারা হল স্পঞ্জের মতো। আমরা যা বলি ও করি সব কিছুই তারা শুষে নেয় এবং আমরা তাদের যা শিক্ষা দিতে চাই, সেটার সঙ্গে আমাদের উদাহরণ যখন মেলে না, তখন তারা আমাদের সেটা বলে দেয়।” তাই, আমরা যদি চাই যে, আমাদের সন্তানেরা যিহোবাকে ভালোবাসুক, তা হলে সবচেয়ে প্রথমে আমাদের দেখতে হবে, আমরা যিহোবাকে কতটা ভালোবাসি। আর এও দেখতে হবে, এটা আমাদের কথাবার্তা এবং কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে কি না।

৮-৯. আপনি অ্যান্ড্রু ও এমার কথাগুলো থেকে কী শিখেছেন?

বাবা-মায়েরা বিভিন্ন উপায়ে তাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখাতে পারে। অ্যান্ড্রু নামে ১৭ বছর বয়সি একজন ভাই বলেন: “ছোটোবেলা থেকেই আমার বাবা-মা শিখিয়েছেন যে, প্রার্থনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে আমার বাবা এসে আমার সঙ্গে প্রার্থনা করতেন। অনেক বার এমনও হয়েছে, আমার প্রার্থনা করা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তারপরও বাবা এসে আমার সঙ্গে প্রার্থনা করেছেন। বাবা-মা সবসময় আমাকে বলতেন: ‘তুমি চাইলে যিহোবার সঙ্গে যত খুশি কথা বলতে পারো।’ এই কথাটা আমার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। এখন আমি যিহোবাকে আমার পিতা হিসেবে দেখি আর খোলাখুলিভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি।” বাবা-মায়েরা মনে রাখবেন, যত বেশি আপনারা যিহোবাকে ভালোবাসবেন, তত বেশি আপনার সন্তানেরা যিহোবাকে ভালোবাসবে।

এমার উদাহরণের উপরও মনোযোগ দিন। যখন তার বাবা পরিবার ছেড়ে চলে যান, তখন তার বাবার নেওয়া সমস্ত ঋণ তার মাকে শোধ করতে হয়। এমা বলেন: “কখনো কখনো আমাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা থাকত না। তবে মা আমাদের মনে করাতেন যে, যিহোবা তাঁর লোকদের অনেক ভালোবাসেন আর তিনি তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান। তবে মা শুধু তার কথার দ্বারাই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে তার কাজের দ্বারাও দেখিয়েছেন যে, যিহোবার উপর তিনি কতটা নির্ভর করেন। সত্যিই, মা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ ছিলেন।” এখান থেকে বোঝা যায়, বাবা-মায়েরা কঠিন পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তাদের সন্তানদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ রাখতে পারে।—গালা. ৬:৯.

১০. ইজরায়েলীয় বাবা-মায়েরা কখন তাদের সন্তানদের যিহোবার বিষয়ে শেখাতে পারত? (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭)

১০ তৃতীয় পরামর্শ: আপনার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় বের করুন। যিহোবা ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন, তারা যেন আলাদা আলাদা সুযোগে তাঁর বিষয়ে তাদের সন্তানদের শেখায়। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.) সেই সময় যখন বাবা-মায়েরা কাজ করত, তখন সন্তানেরা তাদের সঙ্গে থাকত। তাই, তারা ক্রমাগত তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারত আর যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখাতে পারত। যেমন, একজন বাবা যখন খেতে বীজ বুনত কিংবা ফসল কাটত, তখন তার ছেলে সেই কাজে তার বাবাকে সাহায্য করত। আর মা যখন সেলাই এবং ঘরে অন্যান্য কাজ করত, তখন তার মেয়ে মাকে সাহায্য করত। সেইসময় তারা যিহোবার বিষয়ে কথা বলতে পারত, যেমন যিহোবা কতটা মঙ্গলময় আর কীভাবে তিনি তাদের পরিবারকে সাহায্য করছেন।

১১. একটা কোন সুযোগে বাবা-মায়েরা সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে পারে?

১১ কিন্তু, এখন সময় পালটে গিয়েছে। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের সঙ্গে সারাদিন সময় কাটাতে পারে না। তাদের চাকরি বা কাজের জায়গায় যেতে হয় এবং সন্তানদের স্কুলে যেতে হয়। তাই, বাবা মায়েদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় বের করতে হবে। (ইফি. ৫:১৫, ১৬; ফিলি. ১:১০) যখন সবাই মিলে পারিবারিক উপাসনা করে, তখন একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার একটা ভালো সুযোগ খুলে যায়। অ্যালেকজান্ডার নামে একজন যুবক ভাই বলেন: “আমার বাবা খেয়াল রাখেন যেন প্রতি সপ্তাহে আমাদের পারিবারিক উপাসনা হয় আর সেইসময়ে যেন কোনো কিছুই আমাদের বাধা না দেয়। পারিবারিক উপাসনার শেষে আমরা সবাই একসঙ্গে কথা বলি যে, আমাদের জীবনে সব কিছু কেমন চলছে।”

১২. পারিবারিক উপাসনার বিষয়ে একজন বাবার কোন বিষয়গুলো লক্ষ রাখা উচিত?

১২ আপনি যদি একজন বাবা হন, তা হলে আপনি এমন কী করতে পারেন, যাতে পারিবারিক উপাসনা চলাকালীন সন্তানেরা তা উপভোগ করতে পারে? আপনি চাইলে আপনার সন্তানদের সঙ্গে চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বই থেকে অধ্যয়ন করতে পারেন। এর ফলে, আপনি সন্তানদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলার অনেক সুযোগ পাবেন। আপনি নিশ্চয়ই চান, যাতে আপনার সন্তানেরা খোলাখুলিভাবে তাদের অনুভূতি এবং চিন্তার বিষয়ে আপনাকে জানায়। তাই, পারিবারিক উপাসনা চলাকালীন তাদের ভাষণ দেবেন না আর সেইসঙ্গে তাদের বকাঝকাও করবেন না। যদি আপনার সন্তানেরা এমন কোনো কথা বলে, সেটা বাইবেল অনুযায়ী সঠিক নয়, তা হলে দ্রুত রেগে যাবেন না। এর পরিবর্তে, এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন যে, তারা আপনাকে তাদের মনের কথা বলেছে। তাদের উৎসাহিত করুন যেন তারা পরবর্তী সময়ে এভাবেই আপনার সঙ্গে কথা বলে। যখন আপনি জানতে পারবেন, আপনার সন্তানদের হৃদয় কী রয়েছে, তখনই আপনি তাদের সাহায্য করতে পারবেন।

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের যিহোবার সৃষ্টি দেখানোর মাধ্যমে কীভাবে তাঁর সম্বন্ধে শেখাতে পারেন? (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. বাবা-মায়েরা আর কোন কোন সুযোগে তাদের সন্তানদের যিহোবার বিষয়ে শেখাতে পারে?

১৩ বাবা-মায়েরা, শুধু বাইবেল অধ্যয়নের সময়ই নয় বরং অন্যান্য সুযোগেও আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। চিন্তা করুন, আপনারা আর কখন তাদের যিহোবার বিষয়ে শেখাতে পারেন এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করতে পারেন। লিজা নামে একজন বোন বলেন: “আমরা সন্তানদের সঙ্গে প্রকৃতির বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতাম। যেমন, যখন তারা আমাদের পোষা কুকুরকে কিছু করতে দেখে হাসত, তখন আমরা তাদের বলতাম, এখান থেকে আমরা যিহোবার বিষয়ে কী শিখতে পারি। যিহোবা হলেন আনন্দের ঈশ্বর আর তিনি চান যেন আমরাও আনন্দিত ও হাসিখুশি থাকি এবং জীবন উপভোগ করি।”

বাবা-মায়েরা, আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের বন্ধুদের জানেন? (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৪. কেন বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখা উচিত যেন তাদের সন্তানেরা ভালো বন্ধু বাছাই করে? (হিতোপদেশ ১৩:২০)

১৪ চতুর্থ পরামর্শ: আপনার সন্তানদের সাহায্য করুন, যাতে তারা ভালো বন্ধু বাছাই করতে পারে। বাইবেলে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, যদি আমাদের ভালো বন্ধু থাকে, তা হলে আমাদের উপর তার ভালো প্রভাব পড়বে আর যদি খারাপ বন্ধু থাকে, তা হলে আমাদের উপর তার খারাপ প্রভাব পড়বে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৩:২০.) বাবা-মা হিসেবে আপনি কি জানেন, আপনার সন্তানদের বন্ধু কারা? আপনি কি তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন? আপনি কি তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছেন? আপনি যদি চান, আপনার সন্তানেরা এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুক, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? (১ করি. ১৫:৩৩) যখন আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে কিছু করার বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনি কিছু ভাই-বোনকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। এভাবে, আপনার সন্তানেরা ভালো বন্ধু বাছাই করতে পারবে।—গীত. ১১৯:৬৩.

১৫. বাবা-মায়েরা কী করতে পারে, যাতে তাদের সন্তানেরা ভালো বন্ধু বাছাই করে?

১৫ ভাই টোনি এবং তার স্ত্রীর উদাহরণ লক্ষ করুন, যারা তাদের সন্তানদের ভালো বন্ধু বাছাই করতে সাহায্য করেছিলেন। ভাই টোনি বলেন: “আমরা আলাদা আলাদা বয়সের এবং সংস্কৃতির ভাই-বোনদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার আর পারিবারিক উপাসনা করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানাতাম। এভাবে, আমরা এমন ভাই-বোনদের ভালোভাবে জানতে পেরেছিলাম, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে আর আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা করে। আমরা সীমা অধ্যক্ষদের, মিশনারিদের আর সেইসঙ্গে অন্য ভাই-বোনদের আমাদের ঘরে থাকার জন্য ব্যবস্থা করতাম। তাদের অভিজ্ঞতা শুনে এবং তাদের উদ্যোগ ও পরিশ্রম দেখে আমাদের সন্তানেরা অনেক কিছু শিখেছে আর যিহোবার নিকটবর্তী হতে পেরেছে।” তাই বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের সাহায্য করে চলুন, যাতে তারা ভালো বন্ধু বাছাই করতে পারে।

আশা ছেড়ে দেবেন না!

১৬. আপনার সন্তান যদি বলে, সে যিহোবার সেবা করতে চায় না, তা হলে আপনি কী করবেন?

১৬ ধরুন, আপনি আপনার সন্তানদের যিহোবার বিষয়ে শেখানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। তারপরও, আপনার এক সন্তান বলে, সে যিহোবার সেবা করতে চায় না। এই কথা শুনে আপনি কী করবেন? নিজেকে দোষ দেবেন না। এইরকমটা চিন্তা করবেন না যে, আপনি আপনার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারেননি। যিহোবা আমাদের সবাইকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমরা তাঁর সেবা করব কি করব না। আপনার সন্তান যদি যিহোবার সেবা না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না। আশা রাখুন, একদিন সে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। (লূক ১৫:১১-১৯, ২২-২৪) আপনি হারানো ছেলের দৃষ্টান্তও মনে রাখতে পারেন। সে সঠিক পথ থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল, কিন্তু সে আবারও ফিরে এসেছিল। তবে, কিছু লোক বলতে পারে, “এটা তো শুধু একটা গল্প। বাস্তবে এমনটা কখনো হয় না।” বিশ্বাস করুন, বাস্তবেও এমনটা হয়! ইলি নামে একজন ব্যক্তির প্রতি এমনই কিছু ঘটেছিল।

১৭. ইলির উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি?

১৭ ইলি তার বাবা-মা সম্বন্ধে বলেন: “তারা আমার মধ্যে যিহোবা ও তাঁর বাক্য বাইবেলের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দেওয়ার জন্য তাদের যথাসাধ্য করেছিল। কিন্তু, আমি আমার কিশোর বয়সে বিদ্রোহ করতে শুরু করেছিলাম।” ইলি দ্বৈত জীবনযাপন করতে শুরু করেন। তার বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেছিল যেন তিনি যিহোবার নিকটে থাকেন, কিন্তু ইলি তাদের কোনো কথাই শুনতেন না। কিছুসময় পর, ইলি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং মন্দ কাজ করতে শুরু করেন। তবে, সেইসময় তিনি মাঝে মাঝে তার এক বন্ধুকে বাইবেলের বিষয়ে বলতেন। ইলি বলেন: ‘আমার বন্ধুর কাছে আমি যিহোবা সম্বন্ধে যত বেশি কথা বলতাম, ততই বেশি যিহোবা সম্বন্ধে আমি চিন্তা করতাম। ধীরে ধীরে, আমার হৃদয়ে বাইবেলের সত্যের যে-বীজগুলো চাপা ছিল, যে-বীজগুলো বপন করার জন্য আমার বাবা-মা কঠোর প্রচেষ্টা করেছিল, সেগুলো বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল।’ অনেক বছর পর, ইলি যিহোবার কাছে ফিরে আসেন। * একটু চিন্তা করুন, ইলির বাবা-মা এটা দেখে কতটা খুশি হয়েছিল যে, তারা ছোটোবেলায় তাকে যিহোবার বিষয়ে যা-কিছু শিখিয়েছিল, সেগুলো ইলি ভুলে যাননি।—২ তীম. ৩:১৪, ১৫.

১৮. আপনি সেই বাবা-মায়েদের সম্বন্ধে কী বলবেন, যারা অনেক পরিশ্রম করে তাদের সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখায়?

১৮ বাবা-মায়েরা, আপনাদের একটা বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা হল, পরের প্রজন্মকে যিহোবার বিষয়ে শেখানো। (গীত. ৭৮:৪-৬) এটা কোনো ছোটোখাটো দায়িত্ব নয়। এতে অনেক পরিশ্রম জড়িত রয়েছে। এইজন্য, আপনারা যে-পরিশ্রম করে চলেছেন, সেটার জন্য আমরা আপনাদের হৃদয় থেকে প্রশংসা করতে চাই! তাই, আপনাদের সন্তানদের ক্রমাগত শেখান যেন তারা যিহোবাকে ভালোবাসে আর তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে। আপনারা যদি তা করেন, তা হলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনাদের পরিশ্রম দেখে অনেক খুশি হবেন।—ইফি. ৬:৪.

গান ৮৯ যিহোবার আন্তরিক অনুরোধ: “বৎস, জ্ঞানবান হও”

^ খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের খুব ভালোবাসে। তাই, সন্তানদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানোর এবং তাদের খুশি করার জন্য তারা অনেক পরিশ্রম করে। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা চায় যেন তাদের সন্তানেরা যিহোবাকে ভালোবাসে। তাই, তারা তাদের যিহোবার বিষয়ে শেখানোর জন্য আরও পরিশ্রম করে। এমনটা করার সময় বাবা-মায়েরা বাইবেলের কিছু পরামর্শ মনে রাখতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা এইরকমই চারটে পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব।

^ jw.org ওয়েবসাইট থেকে সন্তান মানুষ করার জন্য যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষালাভ শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।

^ ২০১২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন বাবা তার ছেলের বন্ধুকে ভালোভাবে জানার জন্য তাদের দু-জনের সঙ্গে বাস্কেটবল খেলছেন।