সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২০

কীভাবে আরও ভালো করে প্রার্থনা করবেন?

কীভাবে আরও ভালো করে প্রার্থনা করবেন?

“তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল।”—গীত. ৬২:৮.

গান ৪৫ আমার হৃদয়ের চিন্তা

সারাংশ a

যিহোবার কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করুন এবং জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনা চান (১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১. যিহোবা তাঁর উপাসকদের কী করার জন্য উৎসাহ দেন? (ছবিও দেখুন।)

 আমাদের যদি সান্ত্বনার প্রয়োজন হয় অথবা আমরা যদি বুঝতে না পারি, আমাদের কী করা উচিত, তা হলে আমরা কার কাছে যেতে পারি? আমরা সবাই এই প্রশ্নের উত্তর জানি। আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারি। আর তিনি নিজেও এমনটা করার জন্য আমাদের উৎসাহ দেন। তিনি চান আমরা যেন শুধু এক বা দুই বার নয় বরং “অবিরত প্রার্থনা” করি। (১ থিষল. ৫:১৭) আমরা নির্দ্বিধায় তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পারি এবং জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনা চাইতে পারি। (হিতো. ৩:৫, ৬) যিহোবা খুবই উদার ঈশ্বর। আর তিনি প্রার্থনা করার বিষয়ে কোনো সীমা আরোপ করেননি। আমরা তাঁর কাছে যেকোনো সময়ে আর যত বার ইচ্ছা প্রার্থনা করতে পারি।

২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

আমরা যিহোবার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের তাঁর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু, সারাদিন আমাদের এত কাজ করতে হয় যে, প্রার্থনা করার জন্য সময় বের করা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। কিংবা আমাদের মনে হতে পারে, আমাদের আরও ভালো করে প্রার্থনা করা উচিত। আনন্দের বিষয় হল, বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি, কীভাবে আমরা তা করতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা যিশুর উদাহরণের উপর মনোযোগ দেব আর জানতে পারব, প্রার্থনা করার জন্য কীভাবে আমরা সময় বের করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা পাঁচটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা করব, যেগুলো আমরা প্রার্থনা করার সময়ে মনে রাখতে পারি। এভাবে আমরা আরও ভালো করে প্রার্থনা করতে পারব।

যিশু প্রার্থনা করার জন্য সময় বের করেছিলেন

৩. যিশু প্রার্থনার বিষয়ে কী জানতেন?

যিশু জানতেন, যিহোবা কতটা মনোযোগ দিয়ে আমাদের প্রার্থনাগুলো শোনেন। পৃথিবীতে আসার আগে যিশু দেখেছিলেন, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। যেমন তিনি দেখেছিলেন, যখন হান্না, দায়ূদ ও এলিয়ের মতো বিশ্বস্ত উপাসকেরা মন থেকে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, তখন যিহোবা তাদের প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং সেটার উত্তরও দিয়েছিলেন। (১ শমূ. ১:১০, ১১, ২০; ১ রাজা. ১৯:৪-৬; গীত. ৩২:৫) এই কারণেই যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তারা যেন বার বার প্রার্থনা করে আর এই বিষয়ে ইতস্তত বোধ না করে।—মথি ৭:৭-১১.

৪. প্রার্থনা করার বিষয়ে আমরা যিশুর কাছ থেকে কী শিখি?

প্রার্থনা করার বিষয়ে যিশু তাঁর শিষ্যদের জন্য একটা অপূর্ব উদাহরণ স্থাপন করেছেন। পৃথিবীতে সেবা করার সময় তিনি বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতেন। তিনি প্রায়ই খুব ব্যস্ত থাকতেন এবং লোকেরা তাঁকে ঘিরে থাকত। তাই, তিনি আগে থেকে চিন্তা করতেন, কখন তিনি প্রার্থনা করবেন। (মার্ক ৬:৩১, ৪৫, ৪৬) তিনি খুব সকালে উঠতেন, যাতে তিনি যিহোবার কাছে একান্তে প্রার্থনা করতে পারেন। (মার্ক ১:৩৫) আর বাইবেলে লেখা আছে, একবার যখন তাঁকে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, তখন তিনি সারা রাত ধরে প্রার্থনা করেছিলেন। (লূক ৬:১২, ১৩) মারা যাওয়ার আগের রাতেও তিনি অনেক বার প্রার্থনা করেছিলেন কারণ এখন তাঁকে পৃথিবীতে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হত।—মথি ২৬:৩৯, ৪২, ৪৪.

৫. যখন প্রার্থনা করার বিষয়টা আসে, তখন আমরা যিশুর মতো কী করতে পারি?

যিশুর কাছ থেকে আমরা শিখি যে, আমরা যতই ব্যস্ত থাকি না কেন, প্রার্থনা করার জন্য আমাদের সময় বের করতে হবে। তাঁর মতো আমরাও হয়তো খুব সকালে অথবা রাতে প্রার্থনা করার জন্য সময় স্থির করে রাখতে পারি। এমনটা করার মাধ্যমে আমরা এটা দেখাব, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা করার যে-বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা খুবই কৃতজ্ঞ। লিনি নামে একজন বোন বলেন, তিনি যখন প্রথম বার জানতে পারেন, তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন, তখন এই বিষয়টা তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমি যখন জানতে পারি, যিহোবার কাছে আমি যেকোনো সময়ে কথা বলতে পারি, তখন আমি বুঝতে পারি, তিনি একজন ভালো বন্ধুর মতো। আর মনে হয়েছিল, তাঁর কাছে আরও ভালো করে আমার প্রার্থনা করা উচিত।” আমাদের মধ্যে অনেকেই এমনটা অনুভব করে। তাই আসুন, আমরা এমন পাঁচটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, যেগুলো আমরা প্রার্থনা করার সময়ে মনে রাখতে পারি।

প্রার্থনা করার সময়ে এই পাঁচটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখুন

৬. প্রকাশিত বাক্য ৪:১০, ১১ পদ অনুযায়ী যিহোবা কী পাওয়ার যোগ্য?

যিহোবার প্রশংসা করুন। প্রেরিত যোহন একটা চমৎকার দর্শনে দেখেছিলেন যে, ২৪ জন প্রাচীন স্বর্গে যিহোবার উপাসনা করছেন। তারা যিহোবার প্রশংসা করছিলেন এবং বলছিলেন: তিনি “গৌরব ও সমাদর ও ক্ষমতা পাওয়ার যোগ্য।” (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১০, ১১.) এ ছাড়া, যিহোবার বিশ্বস্ত স্বর্গদূতদের কাছেও তাঁর প্রশংসা এবং সমাদর করার অনেক কারণ রয়েছে। তারা স্বর্গে যিহোবার সঙ্গে থাকেন এবং তাঁকে অনেক ভালোভাবে জানেন। যিহোবা যা-কিছু করেন, সেগুলো দেখে তারা বুঝতে পারেন যে, তিনি কেমন ঈশ্বর আর তাঁর মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে। তাই, তারা তাঁর প্রশংসা না করে থাকতে পারেন না।—ইয়োব ৩৮:৪-৭.

৭. কোন বিষয়গুলোর জন্য আমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারি?

আমাদেরও প্রার্থনা করার সময়ে যিহোবার প্রশংসা করা উচিত। তাঁকে বলা উচিত, তাঁর কোন বিষয়গুলো আমাদের ভালো লাগে এবং কেন। তাই, আপনি যখন বাইবেল পড়বেন এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করবেন, তখন চিন্তা করুন, যিহোবার কোন বিষয়গুলো আর তাঁর কোন গুণগুলো আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে। (ইয়োব ৩৭:২৩; রোমীয় ১১:৩৩) এরপর আপনি যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করবেন, তখন সেই বিষয়ে তাঁকে বলুন এবং তাঁর প্রশংসা করুন। এ ছাড়া চিন্তা করুন, যিহোবা আপনার জন্য এবং পুরো পৃথিবীর ভাই-বোনদের জন্য কত কিছু করেন। তিনি সবসময় আমাদের যত্ন নেন এবং আমাদের সুরক্ষা জোগান, এরজন্যও আমরা তাঁর প্রশংসা করতে পারি।—১ শমূ. ১:২৭; ২:১, ২.

৮. যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু কারণ সম্বন্ধে বলুন। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৮)

যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন। আমাদের কাছে যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১৮.) আমরা চিন্তা করতে পারি, আমাদের কাছে কোন কোন ভালো বিষয় রয়েছে এবং সেগুলোর জন্য আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে পারি। আসলে সমস্ত উত্তম দান আমরা তাঁর কাছ থেকেই পাই! (যাকোব ১:১৭) যেমন, আমরা এই সুন্দর পৃথিবী এবং তাঁর সৃষ্টির অন্যান্য অপূর্ব বিষয়ের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারি। আমরা এই বিষয়ের জন্যও যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, তিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন, একটা পরিবার দিয়েছেন, ভালো বন্ধুবান্ধব দিয়েছেন আর ভবিষ্যতের জন্য একটা চমৎকার আশা দিয়েছেন। এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর বন্ধু হওয়ার জন্য আমাদের যে-সুযোগ দিয়েছেন, সেটার জন্যও আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারি।

৯. কেন আমাদের কৃতজ্ঞ হতে শেখা উচিত?

আমাদের প্রত্যেককে হয়তো একটু সময় বের করে এই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে যে, যিহোবা আমাদের জন্য কী কী করেছেন আর সেটার জন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারি। আজ এই জগতে বেশিরভাগ লোক অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায় না। তাদের কাছে যা-কিছু আছে, সেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে তারা শুধু এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকে যে, তাদের আর কী কী দরকার আর কীভাবে সেগুলো তারা পেতে পারে। আমরা যদি সতর্ক না হই, তা হলে আমরাও তাদের মতো হয়ে যেতে পারি। এরপর আমরা হয়তো প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পরিবর্তে শুধু তাঁর কাছ থেকে কোনো-না-কোনো বিষয় চাইতেই থাকব। তাই আসুন, আমরা কৃতজ্ঞ হতে শিখি এবং যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিই।—লূক ৬:৪৫.

আমরা যদি যিহোবার করা ভালো কাজগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিই, তা হলে সমস্যা এলেও আমরা ধৈর্য ধরতে পারব (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে কীভাবে একজন বোন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ধৈর্য ধরতে পেরেছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

১০ আমরা যখন ছোটো ছোটো বিষয়ের জন্যও কৃতজ্ঞ হই, তখন আমরা সাহসের সঙ্গে বড়ো বড়ো সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি। বোন কিয়ুং-সুকের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যার অভিজ্ঞতা ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এসেছিল। ডাক্তারেরা বোনকে বলে, তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং সেটা অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে। বোন বলেন: “স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম, মনে হয়েছিল যেন আমার সব কিছু হারিয়ে গিয়েছে। আর আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” কীভাবে তিনি এই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন? তিনি বলেন, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিনি বাড়ির ছাদে যেতেন এবং জোরে জোরে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতেন। তিনি সেই দিনে হওয়া এমন পাঁচটা বিষয়ের জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতেন, যেগুলোর কারণে তিনি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন। এভাবে তার দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমে যেত এবং তিনি যিহোবার প্রতি তার ভালোবাসা দেখাতে পারতেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন, যিহোবার কোনো বিশ্বস্ত সেবক যখন পরীক্ষাগুলোর মধ্য দিয়ে যায়, তখন তিনি তার যত্ন নেন। সেই বোন এও অনুভব করেছিলেন, আমাদের জীবনে যত সমস্যাই আসুক না কেন, যিহোবা সেগুলোর চেয়ে আরও বেশি আশীর্বাদ দেন। বোন কিয়ুং-সুকের মতো আমরাও হয়তো কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোর জন্য আমরা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারি। আমরা যদি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে তাঁকে ধন্যবাদ দিই, তা হলে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা ধৈর্য ধরতে পারব এবং আনন্দে থাকব।

১১. যিশু স্বর্গে যাওয়ার পর কেন তাঁর শিষ্যদের সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হত?

১১ প্রচার করার জন্য সাহস চান। স্বর্গে যাওয়ার আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের “জেরুসালেমে, সমস্ত যিহূদিয়া ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত” তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে হত। (প্রেরিত ১:৮; লূক ২৪:৪৬-৪৮) এর কিছুসময় পর, যিহুদি ধর্মগুরুরা পিতর ও যোহনকে ধরে ফেলে এবং তাদের যিহুদি মহাসভার সামনে নিয়ে যায়। তারা তাদের প্রচার করা বন্ধ করতে বলে আর এমনকী তারা তাদের ভয় দেখায় এবং হুমকিও দেয়। (প্রেরিত ৪:১৮, ২১) এরপর পিতর ও যোহন কী করেন?

১২. প্রেরিত ৪:২৯, ৩১ পদ অনুযায়ী যিশুর শিষ্যেরা কী করেন?

১২ যিহুদি ধর্মগুরুদের হুমকিগুলো শোনার পর, পিতর ও যোহন বলেন: “ঈশ্বরের কথা না শুনে বরং আপনাদের কথা শোনা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক কি না, তা আপনারাই বিচার করুন। তবে, আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি, তা না বলে থাকতে পারি না।” (প্রেরিত ৪:১৯, ২০) পিতর ও যোহনকে যখন ছাড়া হয়, তখন তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করার বিষয়ে জোরে জোরে তাঁর কাছে বিনতি করে বলেন, “তোমার দাসদের সাহসের সঙ্গে তোমার বাক্য বলে চলার ক্ষমতা দাও।” মন থেকে করা সেই প্রার্থনা যিহোবা শুনেছিলেন।—পড়ুন, প্রেরিত ৪:২৯, ৩১.

১৩. আমরা ভাই জিন-হুকের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১৩ সরকারি কর্তৃপক্ষেরা যদি আমাদের প্রচার কাজ করতে বারণ করে, তা হলেও আমরা প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের মতো প্রচার করে চলব। ভাই জিন-হুকের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি সেনাবাহিনীতে ভরতি হতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই কারণে তাকে জেলে বন্দি করা হয়েছিল। সেখানে তাকে এমন বন্দিদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যাদের প্রত্যেককে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে রাখা হয়েছিল। ভাইকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন তাদের সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা না বলেন, এমনকী বাইবেল নিয়েও কোনো কথা না বলেন। ভাই যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন, তিনি যেন তাকে সাহস ও বুদ্ধি দেন, যাতে তিনি যখনই সুযোগ পান, তখন লোকদের কাছে ভেবে-চিন্তে সাক্ষ্য দিতে পারেন। (প্রেরিত ৫:২৯) ভাই জিন-হুক বলেন: “যিহোবা আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন। তিনি আমাকে সাহস ও বুদ্ধি দিয়েছিলেন, এর ফলে আমি অনেক বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পেরেছিলাম। জেলে তারা যে-ঘরে থাকত, সেটার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমি তাদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট করে বাইবেল অধ্যয়ন করতাম। এরপর রাতে আমি তাদের জন্য চিঠি লিখতাম এবং পরের দিন সকালে তাদের সেগুলো দিয়ে দিতাম।” ভাই জিন-হুকের মতো আমরাও যিহোবার কাছে সাহস ও বুদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে পারি। আর নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি ভালোভাবে তাঁর সেবা করে চলার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন।

১৪. আমাদের উপর যখন কোনো সমস্যা আসে, তখন আমরা কী করতে পারি? (গীতসংহিতা ৩৭:৩,)

১৪ সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য চান। আমাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ রয়েছে অথবা অন্য কোনো কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। হতে পারে, আমাদের কোনো প্রিয়জন মারা গিয়েছে, আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য আমাদের বিরোধিতা করছে অথবা আমাদের অন্য কোনো সমস্যা রয়েছে। তার উপর এই অতিমারি এবং যুদ্ধের কারণে এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে। সেইজন্য মন খুলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। ঠিক যেমন, আপনি আপনার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে আপনার মনের কথা খুলে বলেন, একইভাবে যিহোবাকে মন খুলে বলুন যে, আপনি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং কেমন অনুভব করছেন। এরপর, এই বিষয়ে আস্থা রাখুন, তিনি আপনার হয়ে “কার্য্য সাধন করিবেন।”—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৩, .

১৫. প্রার্থনা করলে কীভাবে আমরা “ক্লেশের সময় ধৈর্য” ধরতে পারব? একটা উদাহরণ দিন।

১৫ অবিরত প্রার্থনা করলে আমরা “ক্লেশের সময় ধৈর্য” ধরতে পারব। (রোমীয় ১২:১২) যিহোবা জানেন, তাঁর উপাসকেরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে এবং ‘তিনি তাদের আর্তনাদ শোনেন।’ (গীত. ১৪৫:১৮, ১৯) উনত্রিশ বছর বয়সি বোন ক্রিস্টিও এই বিষয়টা অনুভব করেছিলেন। তার জীবনে সব কিছু ভালোই চলছিল আর তিনি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ বোনের শরীর খারাপ হয়ে যায়। এর ফলে, বোন খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। পরে ডাক্তারের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, তার মায়ের একটা মারাত্মক রোগ হয়ে গিয়েছে। বোন ক্রিস্টি বলেন: “আমি প্রতিদিন কেঁদে কেঁদে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম, তাঁর কাছ থেকে শক্তি চাইতাম, যাতে কোনোভাবে সেই দিনটা কেটে যায়। আমি কঠোর প্রচেষ্টা করতাম যেন আমি একটাও সভা বাদ না দিই আর আমি ক্রমাগত ব্যক্তিগত অধ্যয়নও করতাম।” বোন আরও বলেন: “কখনো কখনো মনে হত যেন আমি আর সহ্য করতে পারব না। তখন প্রার্থনা করার ফলে আমি শক্তি পেতাম। আমি জানতাম, যিহোবা প্রতিটা মুহূর্তে আমার সঙ্গে রয়েছেন। এই বিষয়টা চিন্তা করে আমি অনেক সান্ত্বনা পেতাম। যদিও আমার শরীর সঙ্গেসঙ্গে ঠিক হয়ে যায়নি, কিন্তু যিহোবা আমার প্রার্থনাগুলো শুনেছিলেন আর আমাকে স্বস্তি এবং মনের শান্তি প্রদান করেছিলেন।” তাই আসুন আমরা সবসময় মনে রাখি, “যিহোবা জানেন, যারা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখায়, তাদের কীভাবে পরীক্ষা থেকে উদ্ধার করতে হয়।”—২ পিতর ২:৯.

মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য (১) যিহোবার কাছে সাহায্য চান, (২) আপনার প্রার্থনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন এবং (৩) যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক দৃঢ় করুন (১৬-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. মন্দ কাজ করার আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কেন আমাদের যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন?

১৬ মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাহায্য চান। আমরা সবাই অসিদ্ধ। তাই, আমাদের সবসময় মন্দ কাজ করার আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। তার উপর শয়তান আমাদের চিন্তাভাবনাকে নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করে, যেটার কারণে আমাদের এই লড়াই আরও কঠিন হয়ে যায়। আর অনেকসময় সে আমোদপ্রমোদের মাধ্যমে এমনটা করে থাকে। আমরা যদি এমন আমোদপ্রমোদ বাছাই করি, যেটাতে অনৈতিক বিষয়গুলো দেখানো হয়, তা হলে আমাদের মন মন্দ বিষয়গুলোর দ্বারা ভরে যাবে। এর ফলে, আমরা যিহোবার চোখে অশুচি হয়ে যাব এবং হয়তো কোনো গুরুতর পাপও করে ফেলব।—মার্ক ৭:২১-২৩; যাকোব ১:১৪, ১৫.

১৭. যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়াও আমাদের আর কী করতে হবে, যাতে আমাদের মনে মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো না আসে? (ছবিও দেখুন।)

১৭ আমরা যদি মন্দ কাজ করার আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শেখাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের এই বিষয়ে বিনতি করতেও বলেছিলেন: “আমাদের প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করতে দিয়ো না কিন্তু শয়তানের হাত থেকে উদ্ধার করো।” (মথি ৬:১৩) এটা ঠিক যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে চান, কিন্তু আমাদেরও কর্তব্য হল যেন আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করে সাহায্য চাই। এরপর, আমাদের সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে। আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে যেন আমরা এমন আমোদপ্রমোদ বাছাই না করি, যেটার কারণে আমাদের মনে মন্দ বিষয়গুলো ভরে যেতে পারে আর যেগুলো শয়তানের এই জগৎ খারাপ বলে মনে করে না। (গীত. ৯৭:১০) আমরা আর কী করতে পারি? আমরা বাইবেল পড়তে পারি এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করে আমাদের মনে ভালো বিষয়গুলো ভরতে পারি। সভাগুলোতে যাওয়া এবং প্রচার করার মাধ্যমেও আমাদের মন ভালো বিষয় দিয়ে ভরে যাবে। যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি তা করি, তা হলে তিনি আমাদের এমন যেকোনো পরীক্ষার মুখে পড়তে দেবেন না, যেটা আমরা সহ্য করতে পারব না।—১ করি. ১০:১২, ১৩.

১৮. যখন প্রার্থনা করার বিষয়টা আসে, তখন আমরা কী মনে রাখতে পারি?

১৮ সমস্যায় ভরা এই শেষকালে আমাদের প্রত্যেকের আরও বেশি করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার প্রয়োজন রয়েছে। তা হলেই আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারব। যিহোবাও চান যেন আমরা ‘তাঁহারই সম্মুখে আমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলি।’ (গীত. ৬২:৮) তাই, প্রতিদিন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার জন্য সময় স্থির করে রাখুন। তাঁর প্রশংসা করুন এবং তিনি আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিন। প্রচার করার জন্য তাঁর কাছে সাহস চান। যিহোবার কাছে বিনতি করুন, যেন তিনি সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আপনাকে সাহায্য করেন। এই বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন যে, কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছুই যেন আপনাকে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে বাধা না দেয়। আর নিশ্চিত থাকুন, তিনি আপনার প্রার্থনাগুলোর উত্তর অবশ্যই দেবেন। কীভাবে তিনি তা দেবেন? এই বিষয়ে আমরা পরের প্রবন্ধে জানতে পারব।

গান ৪২ ঈশ্বরের দাসের প্রার্থনা

a আমরা সবাই চাই যেন আমাদের প্রার্থনাগুলো এমন চিঠির মতো হয়, যেটা আমরা খুবই প্রেমের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্ধুকে লিখে থাকি। কিন্তু, অনেকসময় আমাদের পক্ষে প্রার্থনা করার জন্য সময় বের করা কঠিন হতে পারে। অথবা আমরা হয়তো বুঝতে পারি না যে, আমরা কোন বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করব। এই প্রবন্ধে আমরা এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।