সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২২

‘পবিত্রতার পথে’ চলতে থাকুন

‘পবিত্রতার পথে’ চলতে থাকুন

‘সেই স্থানে এক রাজপথ হইবে; তাহা পবিত্রতার পথ বলিয়া আখ্যাত হইবে।’—যিশা. ৩৫:৮.

গান ৫৪ এটাই সেই পথ

সারাংশ a

১-২. ব্যাবিলনে থাকা যিহুদিদের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হত? (ইষ্রা ১:২-৪)

 ব্যাবিলনে একটা আদেশ জারি করা হয়। যিহুদিরা তাদের নিজেদের দেশ ইজরায়েলে ফিরে যেতে পারে! তারা ৭০ বছর ধরে ব্যাবিলনে বন্দি ছিল। কিন্তু এখন, তারা মুক্ত হয়ে যায়। (পড়ুন, ইষ্রা ১:২-৪.) এটা যিহোবার কারণেই সম্ভব হয়েছে। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ ব্যাবিলনীয়েরা সাধারণত তাদের বন্দিদের মুক্ত করত না। (যিশা. ১৪:৪, ১৭) কিন্তু এখন, ব্যাবিলনের গদি উলটে যায়। এখন সেখানে যিনি রাজা হয়েছেন, তিনি যিহুদিদের বলেন যে, তারা ব্যাবিলন ছেড়ে যেতে পারে। তাই, এখন প্রত্যেক যিহুদিকে, বিশেষভাবে পরিবারের মস্তককে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে: তাদের পরিবার কি ব্যাবিলন ছেড়ে ইজরায়েলে চলে যাবে, না কি ব্যাবিলনেই থাকবে? কিন্তু, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো তাদের জন্য সহজ ছিল না। কেন?

অনেক যিহুদির বয়স হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে এত দীর্ঘযাত্রা করা তাদের জন্য খুবই কঠিন হত। এ ছাড়া, বেশিরভাগ যিহুদি ব্যাবিলনেই জন্মগ্রহণ করেছিল। যিহুদিরা মনে করত, তাদের সমস্ত কিছু এখানেই রয়েছে, ইজরায়েল তো তাদের পূর্বপুরুষদের দেশ। আর এমনটা মনে করা হয়, কিছু যিহুদি সেখানে অনেক ধনী হয়ে গিয়েছিল এবং আরামে জীবন কাটাচ্ছিল। তাই, তাদের হয়তো মনে হয়েছিল, ‘এখানকার আরাম-আয়েশের জীবন এবং সফল ব্যাবসা ছেড়ে একটা অজানা দেশে গিয়ে বাস করা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে?’

৩. যে-বিশ্বস্ত যিহুদিরা ইজরায়েলে ফিরে যেত, তারা কোন আশীর্বাদ পেত?

যে-যিহুদিরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, তারা জানত, এই যাত্রা করার জন্য তাদের ত্যাগস্বীকার করতে হবে। কিন্তু, তারা এটাও জানত, এই ত্যাগস্বীকার সেই আশীর্বাদের তুলনায় কিছুই নয়, যেটা তারা ইজরায়েলে ফিরে গিয়ে পাবে। সবচেয়ে বড়ো আশীর্বাদ এটা হবে যে, তারা এখন খুব ভালোভাবে যিহোবার উপাসনা করতে পারবে। ব্যাবিলন নগরে মিথ্যা দেব-দেবীদের ৫০-টারও বেশি মন্দির ছিল। কিন্তু, সেখানে যিহোবার কোনো মন্দির ছিল না আর সেইসঙ্গে কোনো বেদিও ছিল না, যেটার উপর মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী বলি উৎসর্গ করতে হত। আর সেই বলিগুলো উৎসর্গ করার জন্য সেখানে যাজকদেরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া, তারা এমন লোকদের মাঝে ছিল, যারা মিথ্যা দেব-দেবীদের উপাসনা করত এবং যিহোবার মানগুলোকে একটুও পরোয়া করত না। সেই লোকদের সংখ্যা যিহুদিদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এই সমস্ত কারণে হাজার হাজার বিশ্বস্ত যিহুদি তাদের দেশে ফিরে আসার জন্য উৎসুক হয়ে ছিল, যেখানে তারা আবারও বিশুদ্ধ উপাসনা শুরু করতে পারত।

৪. যে-যিহুদিরা ইজরায়েলে ফিরে যাচ্ছিল, তাদের কাছে যিহোবা কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?

ব্যাবিলন থেকে ইজরায়েল পর্যন্ত যাত্রা করা অনেক কঠিন ছিল আর এই যাত্রার জন্য তাদের প্রায় চার মাস সময় লাগতে পারত। কিন্তু, যিহোবা যিহুদিদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি পথে আসা যেকোনো বাধা দূর করে দেবেন। যিশাইয় লিখেছিলেন: “প্রান্তরে সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত কর, মরুভূমিতে আমাদের ঈশ্বরের জন্য রাজপথ সরল কর। … বক্র স্থান সরল হইবে, উচ্চনীচ ভূমি সমস্থলী হইবে।” (যিশা. ৪০:৩, ৪) কল্পনা করুন, মরুভূমির মাঝখান থেকে একটা রাজপথ বা হাইওয়ে যাচ্ছে। সেটা একেবারে সমতল, কোথাও উঁচু-নীচু নেই। এই পথ দিয়ে যারা যাবে, তাদের পাহাড়পর্বত কিংবা কোনো উপত্যকায় ওঠা-নামা করতে হবে না। আর সেইসঙ্গে তাদের ঘুরে ঘুরেও যেতে হবে না বরং তারা সোজা সেই পথ দিয়ে যেতে পারবে। তারা এই পথে সহজেই যাত্রা করতে পারবে এবং তারা তাদের গন্তব্যে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারবে!

৫. ব্যাবিলন থেকে ইজরায়েল পর্যন্ত যে-রাজপথ গিয়েছিল, সেটার কোন নাম দেওয়া হয়েছিল?

আজ বেশিরভাগ হাইওয়ে বা রাজপথের কোনো একটা নাম থাকে কিংবা সেটার একটা নম্বর দেওয়া হয়ে থাকে। যিশাইয় যে-রাজপথের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, সেটারও একটা নাম আছে। বাইবেলে লেখা রয়েছে: ‘সেই স্থানে এক রাজপথ হইবে; তাহা পবিত্রতার পথ বলিয়া আখ্যাত হইবে; তাহা দিয়া কোন অশুচি লোক যাতায়াত করিবে না।’ (যিশা. ৩৫:৮) ঈশ্বর যিহুদিদের কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটা তাদের জন্য কোন অর্থ রেখেছিল? আর এটা আজ আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?

“পবিত্রতার পথ”—অতীতে ও বর্তমানে

৬. কেন এই পথকে পবিত্র বলা হয়েছে?

“পবিত্রতার পথ”—কতই-না সুন্দর এক নাম এই রাজপথের! কিন্তু, কেন এটাকে পবিত্র বলা হয়েছে? এর কারণ হল, যখন ইজরায়েল দেশ পুনর্স্থাপন করা হত, তখন সেখানে কোনো অশুচি লোককে জায়গা দেওয়া হত না। এর মানে হল, কোনো ব্যক্তি যদি অনৈতিক কাজ করা, প্রতিমাপূজা করা অথবা অন্যান্য গুরুতর পাপ করা বন্ধ না করত, তা হলে সে সেখানে থাকার সুযোগ পেত না। যে-যিহুদিরা তাদের দেশে ফিরে যাচ্ছিল, তাদের ঈশ্বরের “পবিত্র জাতি” হতে হত। (দ্বিতীয়. ৭:৬, NW) কিন্তু এর মানে এই নয়, যে-লোকেরা ব্যাবিলন থেকে ফিরে আসত, তাদের যিহোবাকে খুশি করার জন্য আর কোনো পরিবর্তন করতে হত না।

৭. কিছু যিহুদিকে কোন পরিবর্তন করতে হত? একটা উদাহরণ দিন।

আমরা যেমনটা দেখলাম, ব্যাবিলনে থাকা বেশিরভাগ যিহুদির জন্ম সেখানেই হয়েছিল। আর এমনটা মনে করা হয় যে, তাদের মধ্যে অনেক যিহুদি ব্যাবিলনের লোকদের মতো চিন্তা করতে এবং তাদের মতো জীবনযাপন করতে শুরু করেছিল। প্রথম প্রথম যে-যিহুদিরা ইজরায়েলে ফিরে এসেছিল, সেটার অনেক বছর পর ইষ্রা জানতে পেরেছিলেন, কিছু যিহুদি এমন মহিলাদের বিয়ে করেছিল, যারা মিথ্যা দেব-দেবীদের উপাসনা করত। (যাত্রা. ৩৪:১৫, ১৬; ইষ্রা ৯:১, ২) পরে যখন রাজ্যপাল নহিমিয় এসেছিলেন, তখন তিনি এটা জেনে খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন যে, ইজরায়েলে যে-সন্তানদের জন্ম হয়েছিল, তারা যিহুদিদের ভাষা পর্যন্ত জানত না। (দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭; নহি. ১৩:২৩, ২৪) ঈশ্বরের বাক্যের বেশিরভাগ অংশ ইব্রীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল, কিন্তু এই সন্তানেরা ইব্রীয় ভাষা বুঝতই না। তাহলে, কীভাবে তারা যিহোবাকে ভালোবাসতে পারত? কীভাবে তারা তাঁর উপাসনা করার বিষয়ে জানতে পারত? (ইষ্রা ১০:৩, ৪৪) এই উদাহরণগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যে-যিহুদিরা ইজরায়েলে ফিরে এসেছিল, তাদের কত বড়ো বড়ো পরিবর্তন করতে হত। আর ইজরায়েলে থেকে এই পরিবর্তনগুলো করা তাদের জন্য আরও সহজ ছিল, যেখানে ধীরে ধীরে আবারও যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনা শুরু হয়েছিল।—নহি. ৮:৮, ৯.

১৯১৯ সাল থেকে লক্ষ লক্ষ পুরুষ, নারী ও সন্তান মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে ‘পবিত্রতার পথে’ চলতে শুরু করেছে (অনুচ্ছেদ ৮ দেখুন)

৮. হাজার হাজার বছর আগে হওয়া ঘটনাগুলো আজ আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

কিছু লোক বলতে পারে, ‘এই সমস্ত কিছু তো সত্যিই অনেক আগ্রহজনক, কিন্তু এগুলো আজ আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?’ এটা আমাদের জন্য অর্থ রাখে কারণ আমরা সবাই এক ধরনের ‘পবিত্রতার পথে’ চলছি। আমরা অভিষিক্ত খ্রিস্টান কিংবা “আরও মেষ” যে-ই হই না কেন, আমাদের সবাইকে ক্রমাগত এই ‘পবিত্রতার পথে’ চলতে হবে। এই পথে চলার মাধ্যমে আজ আমরা যিহোবার উপাসনা করতে পারি। আর ভবিষ্যতে যখন ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীতে শাসন করতে শুরু করবে, তখন আমরা সবাই আরও অনেক আশীর্বাদ পাব। b (যোহন ১০:১৬) ১৯১৯ সাল থেকে লক্ষ লক্ষ পুরুষ, নারী এবং সন্তান মহতী বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্য ছেড়ে এই পথে চলতে শুরু করেছে। আপনিও হয়তো তাদের মধ্যে একজন। যদিও এই পথ প্রায় ১০০ বছর আগে খোলা হয়েছিল, তবে এটা প্রস্তুত করার কাজ হাজার হাজার বছর আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।

পথ প্রস্তুত করা হয়

৯. যিশাইয় ৫৭:১৪ পদে “পবিত্রতার পথ” প্রস্তুত করার বিষয়ে যা বলা হয়েছে, সেটা আমাদের সময়ে কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে?

যিহোবা এই বিষয়টা খেয়াল রেখেছিলেন, যে-যিহুদিরা ব্যাবিলন ছেড়ে যাচ্ছিল, তাদের পথ থেকে যেন যেকোনো বাধা সরিয়ে দেওয়া হয়। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৭:১৪.) বর্তমানে যিহোবা কীভাবে “পবিত্রতার পথ” থেকে প্রতিটা বাধা সরিয়ে দিয়েছেন? ১৯১৯ সালের শত শত বছর আগে এমন অনেক ব্যক্তি ছিল, যারা ঈশ্বরকে খুবই সম্মান করত এবং তাঁকে ভালোবাসত। যিহোবা তাদের মাধ্যমে মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসার পথ প্রস্তুত করেছিলেন। (তুলনা করুন, যিশাইয় ৪০:৩.) তারা এই পথ প্রস্তুত করার জন্য যে-কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, সেটার কারণেই পরবর্তী সময়ে সৎহৃদয়ের লোকেরা মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং যিহোবার লোকদের সঙ্গে মিলে বিশুদ্ধ উপাসনা করতে পেরেছিল। এই পথ প্রস্তুত করার জন্য অনেক কিছু করা হয়েছিল। আসুন, কিছু কাজের উপর মনোযোগ দিই।

শত শত বছর ধরে যারা ঈশ্বরকে সম্মান করত, তারা মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসার পথ প্রস্তুত করতে শুরু করে দিয়েছিল (১০-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০-১১. বাইবেল ছাপানো এবং সেটির অনুবাদ থেকে কীভাবে অনেকে বাইবেলের সত্যগুলো জানতে পেরেছিল? (ছবিও দেখুন।)

১০ বাইবেল ছাপানো। প্রায় ১৪৫০ সাল পর্যন্ত হাতে লিখে বাইবেলের কপি তৈরি করা হত। এতে অনেক সময় লাগত, তাই বাইবেলের বেশি কপি ছিল না আর যেগুলো ছিল, সেগুলো খুবই দামি ছিল। কিন্তু, ছাপার মেশিন আবিষ্কৃত হওয়ার পর কম সময়ে অনেক বেশি বাইবেল ছাপানো শুরু হয় আর লোকদের সেগুলো বিতরণ করা হয়।

১১ বাইবেলের অনুবাদ। শত শত বছর ধরে বাইবেল বিশেষভাবে ল্যাটিন ভাষায় ছিল, যেটা শুধুমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তিরাই বুঝতে পারত। কিন্তু, যখন ছাপানোর কাজ সহজ হয়ে যায়, তখন বাইবেল আরও ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঈশ্বরকে সম্মান করে এমন কিছু লোক সেই ভাষাগুলোতে অনুবাদ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, যে-ভাষাগুলোতে সাধারণ লোকেরা কথা বলত। এর ফলে, লোকেরা এখন নিজেরা বাইবেল পড়তে পারত আর দেখতে পারত যে, তাদের গির্জায় যা শেখানো হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে বাইবেলের মিল রয়েছে কি না।

যারা ঈশ্বরকে সম্মান করত, তারা মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসার পথ প্রস্তুত করতে শুরু করে দিয়েছিল (১২-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) c

১২-১৩. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, ১৮৩৫ সাল থেকে কিছু বাইবেল ছাত্র কীভাবে গির্জার মিথ্যা শিক্ষাগুলো প্রকাশ করতে শুরু করে।

১২ বাইবেল অধ্যয়নের জন্য প্রকাশনা। কিছু লোক খুবই মন দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিল আর ফলে, তারা অনেক সত্য সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল। তারা যা-কিছু শিখত, সেগুলো অন্যদেরও জানাত। এটা দেখে পাদরিরা তাদের উপর খুবই রেগে যেত। উদাহরণ স্বরূপ, প্রায় ১৮৩৫ সালে কিছু সৎহৃদয়ের ব্যক্তি এমন ট্র্যাক্টগুলো ছাপাতে শুরু করে, যেগুলোতে গির্জার মিথ্যা শিক্ষাগুলো প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছিল।

১৩ তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হেনরি গ্রু, যিনি ঈশ্বরকে খুবই সম্মান করতেন। ১৮৩৫ সালের দিকে তিনি একটা ট্র্যাক্ট ছাপান, যেখানে বলা হয়েছিল, মারা যাওয়ার পর একজন ব্যক্তির কী হয়। সেটাতে তিনি বাইবেলের পদগুলোর মাধ্যমে প্রমাণ করে বলেছিলেন, গির্জায় অমরত্বের বিষয়ে যে-শিক্ষা দেওয়া হয়, সেটা ভুল আর কোনো মানুষই জন্মগত অমর হয় না, যদি ঈশ্বর কাউকে অমর জীবন দান করেন, তা হলেই সে অমর হয়ে থাকবেন। এরপর ১৮৩৭ সালে জর্জ স্টোর্জ নামে একজন পাদরি যখন ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি সেই ট্র্যাক্টটা পান। সেটা পড়ে তিনি নিশ্চিত হন যে, তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ সত্য সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন। তিনি অন্যদেরও সেই সত্য সম্বন্ধে জানানোর কথা চিন্তা করেন। তাই, ১৮৪২ সালে তিনি একটা আগ্রহজনক বিষয়ের উপর একের-পর-এক অনেক বক্তৃতা দেন। সেই বিষয়টা ছিল, “দুষ্ট লোকেরা কি সত্যিই অমর?—তা নিয়ে অনুসন্ধান।” জর্জ স্টোর্জ যে-কথাগুলো লিখেছিলেন, সেগুলো এক যুবকের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সেই যুবকের নাম ছিল চার্লস টেজ রাসেল।

১৪. অতীতে “পবিত্রতার পথ” প্রস্তুত করার জন্য যে-পরিশ্রম করা হয়েছিল, তা থেকে ভাই রাসেল এবং তার সঙ্গীরা কীভাবে উপকার পেয়েছিল? (ছবিও দেখুন।)

১৪ “পবিত্রতার পথ” প্রস্তুত করার জন্য আগে যে-পরিশ্রম করা হয়েছিল, তা থেকে ভাই রাসেল এবং তার সঙ্গীরা কীভাবে উপকার পেয়েছিল? অধ্যয়ন করার সময়ে তারা বাইবেলের আলাদা আলাদা অনুবাদ, শব্দকোষ (ডিকশনারি) এবং বর্ণানুক্রমিক সূচি নিয়ে গবেষণা করত, যেগুলো তাদের সময়ের আগেই তৈরি করা হয়েছিল। এ ছাড়া হেনরি গ্রু, জর্জ স্টোর্জ এবং অন্যেরা গবেষণা করে বাইবেলের যে-সত্যগুলো জানতে পেরেছিল, সেগুলো থেকেও তারা অনেক উপকার পেয়েছিল। ভাই রাসেল এবং তার সঙ্গীরাও অনেক বই এবং ট্র্যাক্ট ছাপিয়েছিল, যেগুলোতে বাইবেলের আলাদা আলাদা বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করা ছিল। এভাবে তারা পবিত্রতার পথ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল।

১৫. উনিশ-শো উনিশ সালে কী হয়?

১৫ উনিশ-শো উনিশ সালে ঈশ্বরের লোকেরা মহতী বাবিল থেকে মুক্ত হয় আর সেই বছরেই ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে’ নিযুক্ত করা হয়। এটা একেবারে সঠিক সময় ছিল। সেই সময়েই “পবিত্রতার পথ” খোলা হয়! এখন এই দাস তার কাজ শুরু করে দেয় এবং এই পবিত্রতার পথে চলার জন্য সৎহৃদয়ের লোকদের স্বাগত জানাতে শুরু করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) অতীতের বিশ্বস্ত লোকেরা “পবিত্রতার পথ” প্রস্তুত করার জন্য যে-পরিশ্রম করেছিল, সেটার কারণে পরবর্তী সময়ে এই পথে যে-নতুন লোকেরা চলত, তারা যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্যের বিষয়ে আরও শিখতে পারত। (হিতো. ৪:১৮) তারা যিহোবার মান অনুযায়ী নিজেদের জীবনেও পরিবর্তন করতে পারত। তবে, যিহোবা এমনটা আশা করেননি যে, তাঁর লোকেরা রাতারাতি সমস্ত পরিবর্তন করে ফেলবে। তিনি জানেন, এতে সময় লাগবে, তাই তিনি ধীরে ধীরে তাদের চিন্তাধারা সংশোধন করেন। (“ যিহোবা ধীরে ধীরে তাঁর লোকদের চিন্তাধারা সংশোধন করেন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) একটু চিন্তা করুন, সেই সময়টা কত ভালো হবে, যখন আমরা সবাই আমাদের প্রতিটা কাজের মাধ্যমে যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারব!—কল. ১:১০.

“পবিত্রতার পথ” এখনও খোলা আছে

১৬. উনিশ-শো উনিশ সাল থেকে ‘পবিত্রতার পথে’ কোন কাজ করা হয়েছে? (যিশাইয় ৪৮:১৭; ৬০:১৭)

১৬ প্রতিটা রাস্তাকে ক্রমাগত মেরামত করতে হয়। একইভাবে ১৯১৯ সাল থেকে ‘পবিত্রতার পথে’ ক্রমাগত কাজ করা হচ্ছে, যাতে আরও সৎহৃদয়ের ব্যক্তি মহতী বাবিল ছেড়ে এই পথে চলতে পারে। যখনই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে নিযুক্ত করা হয়, তখনই তারা কাজ করতে শুরু করে দেয়। ১৯২১ সালে তারা একটা বই প্রস্তুত করে। এটা অধ্যয়ন করার মাধ্যমে লোকেরা বাইবেলের সত্যগুলো সম্বন্ধে জানতে পারত। সেই বইয়ের নাম ছিল ঈশ্বরের বীণা। পরে এই বই ৩৬টা ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং এর প্রায় ৬০ লক্ষ কপি ছাপানো হয়। এর ফলে অনেক লোক বাইবেলের সত্যগুলো সম্বন্ধে জানতে পারে। আর সম্প্রতি বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য আমরা আরেকটা অপূর্ব প্রকাশনা পেয়েছি, যেটার নাম হল চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! এই শেষকালে যিহোবা সবসময় এই বিষয়টার খেয়াল রেখেছেন যে, ‘পবিত্রতার পথে’ যেন কাজ চলতে থাকে। তিনি সংগঠনের মাধ্যমে ক্রমাগত আমাদের তাঁর বাক্য থেকে নির্দেশনা দিচ্ছেন, যাতে আমরা সবাই এই পথে চলতে থাকি।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭; ৬০:১৭.

১৭-১৮. “পবিত্রতার পথ” আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?

১৭ একজন ব্যক্তি যখন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, তখন বলা যেতে পারে যে, তিনি ‘পবিত্রতার পথে’ চলতে শুরু করেছেন। কিছু লোক এই পথে একটু দূর পর্যন্ত যায়, কিন্তু তারপর এই পথ ছেড়ে দেয়। আবার কিছু লোক স্থির করেছে, যতক্ষণ না তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে, ততক্ষণ তারা এই পথে চলতে থাকবে। সেই গন্তব্য কী?

১৮ যে-লোকদের স্বর্গে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তাদের এই “পবিত্রতার পথ” স্বর্গে “ঈশ্বরের পরমদেশে” নিয়ে যাবে। (প্রকা. ২:৭) তবে, যে-লোকদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তাদের এই রাজপথ খ্রিস্টের ১,০০০ বছরের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে, যখন সমস্ত লোক সিদ্ধ হয়ে যাবে। আজ আপনি যদি এই রাজপথে চলতে থাকেন, তা হলে পিছনে ঘুরে তাকাবেন না। যতক্ষণ না আপনি নতুন জগতে পৌঁছাচ্ছেন এবং আপনার যাত্রা শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই পথে চলতে থাকুন। আমরা প্রার্থনা করি, “আপনার যাত্রা আরামদায়ক ও শুভ হোক।”

গান ২৪ যিহোবার পর্বতে এসো

a বাইবেলে ব্যাবিলন থেকে ইজরায়েল পর্যন্ত যাওয়ার একটা রাজপথের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যেটাকে যিহোবা “পবিত্রতার পথ” বলেছেন। যিহোবা কি আজও তাঁর লোকদের জন্য কোনো রাজপথ প্রস্তুত করেছেন? হ্যাঁ, করেছেন। ১৯১৯ সাল থেকে লক্ষ লক্ষ লোক মহতী বাবিল ছেড়ে এই ‘পবিত্রতার পথে’ চলতে শুরু করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সবাইকে এই পথে ক্রমাগত চলতে হবে।

c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: ভাই রাসেল এবং তার সঙ্গীরা বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য সেই প্রকাশনাগুলো ব্যবহার করেছিল, যেগুলো তাদের সময়ের আগে তৈরি করা হয়েছিল।