সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২১

যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন?

যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন?

‘আমরা জানি, আমরা তাঁর কাছ থেকে যা-কিছু চাই, সেগুলো পাব।’—১ যোহন ৫:১৫.

গান ৪১ শোনো যিহোবা এই প্রার্থনা

সারাংশ a

১-২. যখন প্রার্থনা করার বিষয়টা আসে, তখন আমাদের কী মনে হতে পারে?

 আপনার মনে কি কখনো এই প্রশ্ন এসেছে যে, ‘কী জানি, যিহোবা আমার প্রার্থনা শুনছেন কি না?’ যদি এসে থাকে, তা হলে আপনি একা নন। অনেকেই এইরকমটা মনে করে। অনেক ভাই-বোন বলে, তাদেরও এমনটা মনে হয়েছিল, বিশেষ করে তারা যখন কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। আমরাও যদি কোনো সমস্যার মধ্যে থাকি, তা হলে আমাদেরও হয়তো এটা বোঝা কঠিন হতে পারে যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন।

আসুন দেখি, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা তাঁর উপাসকদের প্রার্থনাগুলো শোনেন। (১ যোহন ৫:১৫) এ ছাড়া, এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব: কেন অনেকসময় এটা মনে হতে পারে যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনছেন না? যিহোবা আজ কোন কোন উপায়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন?

আমরা যেভাবে চাই, সেভাবে যিহোবা হয়তো উত্তর দেন না

৩. কেন যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করি?

বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি, যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং আমরা তাঁর চোখে খুবই মূল্যবান। (হগয় ২:৭; ১ যোহন ৪:১০) তাই, তিনি আমাদের উৎসাহিত করেন, আমরা যেন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে সাহায্য চাই। (১ পিতর ৫:৬, ৭) যিহোবা চান, আমরা যেন তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখি এবং সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করি। এই কারণে তিনি আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

যিহোবা দায়ূদকে তার শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে তার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিয়েছিলেন (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা তাঁর উপাসকদের প্রার্থনাগুলো শোনেন? (ছবিও দেখুন।)

বাইবেলে এমন অনেক বিবরণের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যেখানে যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের প্রার্থনাগুলো শুনেছিলেন। আপনার কি এমন কোনো বিবরণের কথা মনে আছে? আপনার হয়তো রাজা দায়ূদের কথা মনে পড়ছে। সারাজীবন ধরে তাকে অনেক শত্রুদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যারা তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তাই, তিনি প্রায়ই সাহায্যের জন্য যিহোবাকে ডাকতেন। এক বার তিনি যিহোবার কাছে বিনতি করে বলেন, “সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনা শুন; আমার বিনতিতে কর্ণপাত কর; তোমার বিশ্বস্ততায় ও তোমার ধর্ম্মশীলতায় আমাকে উত্তর দেও।” (গীত. ১৪৩:১) যিহোবা দায়ূদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং তাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। (১ শমূ. ১৯:১০, ১৮-২০; ২ শমূ. ৫:১৭-২৫) তাই, দায়ূদ সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলতে পেরেছিলেন, “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।” দায়ূদের মতো আমরাও যিহোবার উপর আস্থা রাখতে পারি।—গীত. ১৪৫:১৮.

যিহোবা পৌলকে ধৈর্য ধরার শক্তি দেওয়ার মাধ্যমে তার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিয়েছিলেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. অতীতে যিহোবার উপাসকেরা তাদের প্রার্থনার উত্তর কি সবসময় সেভাবেই পেয়েছিল, যেভাবে তারা চিন্তা করেছিল? একটা উদাহরণ দিন। (ছবিও দেখুন।)

আমরা যেভাবে চিন্তা করি, যিহোবা হয়তো সেভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন না। প্রেরিত পৌলের প্রতি এমনই কিছু ঘটেছিল। তার একটা সমস্যা ছিল, যেটাকে তিনি তার “মাংসে একটা কাঁটা” বলেছিলেন। পৌল তিন বার যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন যেন তার মাংস থেকে সেই কাঁটা বেরিয়ে যায়। যিহোবা কি তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন? হ্যাঁ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেভাবে নয়, যেভাবে পৌল চিন্তা করেছিলেন। যিহোবা তার সমস্যা দূর করে দেননি বরং তাকে সহ্য করার শক্তি দিয়েছিলেন, যেন তিনি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলেন।—২ করি. ১২:৭-১০.

৬. কেন অনেকসময় আমাদের এমনটা মনে হতে পারে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনছেন না?

হতে পারে, আমরাও যেভাবে চিন্তা করি, যিহোবা সেভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন না। এর পরিবর্তে, যিহোবা হয়তো অন্য কোনো উপায়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা খুব ভালোভাবে জানেন, আমাদের জন্য কোনটা ভালো হবে। বাইবেলে লেখা রয়েছে: “ঈশ্বর সত্যিই আমাদের সমস্ত চাওয়া এবং সমস্ত চিন্তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু করতে পারেন।” (ইফি. ৩:২০) তাই, তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর হয়তো এমন সময়ে কিংবা এমন উপায়ে দেন, যেটার বিষয়ে আমরা চিন্তাও করিনি।

৭. কেন আমাদের অন্য কোনো বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করতে হতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।

আমরা যখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি, যিহোবার ইচ্ছা কী, তখন আমরা যে-বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করছিলাম, সেটার পরিবর্তে আমাদের অন্য কোনো বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করতে হতে পারে। ভাই মার্টিন পোটজিঙ্গরের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। বিয়ের কিছুসময় পরেই তাকে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। প্রথম প্রথম ভাই যিহোবার কাছে এই বিষয়ে প্রার্থনা করতেন, যেন তাকে যেকোনোভাবে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি তার স্ত্রীর যত্ন নিতে পারেন এবং আবারও প্রচার কাজ করতে পারেন। কিন্তু, দু-সপ্তাহ পরও ভাই এই প্রার্থনার কোনো উত্তর পাননি। এমন কিছুই ঘটেনি, যেটা দেখে ভাইয়ের এটা মনে হত, যিহোবা তাকে মুক্ত করার জন্য কোনো উপায় বের করছেন। তাই, ভাই এই প্রার্থনা করতে শুরু করেন, “যিহোবা, প্লিজ আমাকে বলো তোমার ইচ্ছা কী।” এরপর, ভাই মার্টিন সেই ভাইদের বিষয়ে চিন্তা করেন, যাদের তার মতোই সেই ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। সেই ভাইয়েরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য চিন্তা করছিল। ভাই বুঝতে পারেন, যিহোবা তার কাছ থেকে কী চান। তাই এখন তিনি প্রার্থনা করেন, “যিহোবা, এই নতুন দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আমাকে সাহায্য করো যেন আমি ভাইদের সাহায্য ও উৎসাহিত করতে এবং শক্তিশালী করতে পারি।” পরবর্তী নয় বছর ধরে ভাই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে এমনটাই করে চলেন।

৮. প্রার্থনা করার সময়ে আমাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

আমাদের মনে রাখা উচিত, যিহোবার একটা উদ্দেশ্য রয়েছে আর তিনি সেটা তাঁর নির্ধারিত সময়ে পূরণ করবেন। তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যা মূল থেকে উপড়ে ফেলতে চান। এমনটা তিনি তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে করবেন। তাঁর রাজ্য যখন আসবে, তখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর মতো বড়ো বড়ো সমস্যাগুলোও চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যাবে। আর কেউই তখন দুঃখকষ্ট ভোগ করবে না। (দানি. ২:৪৪; প্রকা. ২১:৩, ৪) কিন্তু, যতক্ষণ না তাঁর রাজ্য আসছে, ততক্ষণ যিহোবা শয়তানকে এই জগতের উপর শাসন করার অনুমতি দিয়েছেন। b (যোহন ১২:৩১; প্রকা. ১২:৯) যিহোবা আজ যদি মানুষের সমস্ত সমস্যা দূর করে দেন, তা হলে এমনটা মনে হতে পারে, শয়তান এই জগতের উপর ভালোভাবে শাসন করছে। তাই, আমাদের কিছুসময় অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন না যিহোবা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করছেন। তবে, এর মানে এই নয়, যিহোবা আমাদের একা ছেড়ে দিয়েছেন। আসুন দেখি, যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন।

যিহোবা আজ কীভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন?

৯. আমাদের যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন? একটা উদাহরণ দিন।

যিহোবা আমাদের প্রজ্ঞা দেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রজ্ঞা দেবেন। আমাদের বিশেষভাবে সেই সময়ে যিহোবার কাছ থেকে প্রজ্ঞার প্রয়োজন হয়, যখন আমাদের জীবনে বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন, আমরা বিয়ে করব কি করব না। (যাকোব ১:৫) মারিয়া নামে একজন অবিবাহিত বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। c তিনি আনন্দের সঙ্গে অগ্রগামীর সেবা করছিলেন। তারপর একদিন একজন ভাইয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়। বোন বলেন: “ধীরে ধীরে আমরা একে অপরকে জানতে শুরু করি আর একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করি। আমি জানতাম, এখন আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই, আমি যিহোবার কাছে বার বার প্রার্থনা করি। আমি জানতাম, যিহোবার সাহায্য ছাড়া আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। তবে, আমি এও জানতাম, যিহোবা আমার হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমার সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে।” বোনের মনে হয়, যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং তাকে প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন। কীভাবে? বোন যখন আমাদের প্রকাশনাগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তখন তিনি এমন অনেক প্রবন্ধ পান, যেখানে এই বিষয়ে খুব ভালো তথ্য দেওয়া হয়েছিল আর তিনি তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান। বোন এই বিষয়ে তার মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি। তিনি বোনকে ভালো পরামর্শ দেন, যেটার কারণে বোন আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। মারিয়া এই বিষয়ে অনেক চিন্তা করেন আর অবশেষে তিনি একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কীভাবে যিহোবা আমাদের শক্তি দেন, যাতে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি? (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. ফিলিপীয় ৪:১৩ পদ অনুযায়ী যিহোবা কীভাবে তাঁর উপাসকদের সাহায্য করেন? একটা উদাহরণ দিন। (ছবিও দেখুন।)

১০ তিনি আমাদের ধৈর্য ধরতে শক্তি দেন। যেমন যিহোবা পৌলকে শক্তি দিয়েছিলেন, একইভাবে আজ তিনি আমাদেরও শক্তি দিতে পারেন, যাতে আমরা পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য ধরতে পারি। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:১৩.) এখন ভাই বেঞ্জামিনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। লক্ষ করুন, যিহোবা কীভাবে তাকে কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে শক্তি দিয়েছিলেন। ভাই এবং তার পরিবারকে অনেক বছর ধরে আফ্রিকার শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকতে হয়েছিল। ভাইয়ের প্রায় পুরো যৌবনকাল সেই শিবিরগুলোতেই কেটে গিয়েছিল। ভাই বলেন: “আমি যিহোবার কাছে বার বার প্রার্থনা করতাম, যেন তিনি আমাকে শক্তি দেন, যাতে আমি সঠিক কাজ করতে পারি এবং তাঁকে খুশি করতে পারি। আর সত্যিই যিহোবা আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন। যিহোবা আমাকে মনের শান্তি দিয়েছিলেন, প্রচার করে চলার জন্য সাহস জুগিয়েছিলেন এবং এমন অনেক প্রকাশনা জুগিয়েছিলেন, যেগুলো পড়ার মাধ্যমে আমি তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও মজবুত করতে পেরেছিলাম।” ভাই এও বলেন: “আমি যখন ভাই-বোনদের অভিজ্ঞতা পড়ি আর দেখি যে, যিহোবা কীভাবে ধৈর্য ধরতে সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করেছিলেন, তখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়ে যায়।”

যিহোবা কি ভাই-বোনদের মাধ্যমে কখনো আপনাকে সাহায্য করেছেন? (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) d

১১-১২. যিহোবা কীভাবে ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)

১১ যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। যিশু তাঁর জীবন বলি হিসেবে উৎসর্গ করার এক রাত আগে যিহোবার কাছে মনপ্রাণ উজাড় করে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি বিনতি করেছিলেন, যেন তাঁর উপরে ঈশ্বর নিন্দার অভিযোগ না দেওয়া হয়। যিহোবা এমন কিছুই করেননি, যাতে তাঁর উপর সেই অভিযোগ না আসুক। কিন্তু, তাঁকে শক্তিশালী করার জন্য যিহোবা তাঁর এক ভাইকে অর্থাৎ একজন স্বর্গদূতকে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন। (লূক ২২:৪২, ৪৩) আজও যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারে কিংবা ফোন করার মাধ্যমে আমাদের উৎসাহিত করতে পারে। তাই, আমাদের সবারই এমন সুযোগ খুঁজতে থাকা উচিত, যখন আমরা কোনো “উত্তম বাক্য” বলার মাধ্যমে একে অপরকে উৎসাহিত করতে পারব।—হিতো. ১২:২৫.

১২ বোন মিরিয়ামের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। কয়েক সপ্তাহ আগে তার স্বামী মারা গিয়েছেন। একদিন তিনি তার ঘরে একা ছিলেন এবং খুবই দুঃখের মধ্যে ছিলেন। কেঁদে কেঁদে তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল আর তিনি কারো সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। বোন বলেন: “আমার এতটা শক্তি ছিল না যে, আমি কাউকে ফোন করব। তাই, আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। আমি কেঁদে কেঁদে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছিলাম, ঠিক তখনই আমার ফোন বেজে ওঠে। একজন প্রাচীন আমাকে ফোন করেন, যিনি একজন ভালো বন্ধু ছিলেন।” বোন মিরিয়াম সেই প্রাচীন এবং তার স্ত্রীয়ের কাছ থেকে অনেক সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন। তিনি নিশ্চিত, যিহোবাই সেই ভাইকে ফোন করার জন্য পরিচালিত করেছিলেন।

কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য অন্য ব্যক্তিদেরও পরিচালিত করতে পারেন? (১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, যিহোবা কীভাবে সেই লোকদের মাধ্যমে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন, যারা তাঁর উপাসনা করে না।

১৩ যিহোবা সেই ব্যক্তিদের মাধ্যমেও আমাদের সাহায্য করেন, যারা তাঁর উপাসনা করে না। (হিতো. ২১:১) অতীতে যিহোবা রাজা অর্তক্ষস্তকে পরিচালিত করেছিলেন, যেন তিনি নহিমিয়কে জেরুসালেমে যেতে অনুমতি দেন, যাতে নহিমিয় সেই নগর পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেন। (নহি. ২:৩-৬) আজও আমরা যখন কোনো দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি, তখন যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য সেই লোকদের পরিচালিত করতে পারেন, যারা তাঁর উপাসনা করে না।

১৪. বোন সু হিংগের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন? (ছবিও দেখুন।)

১৪ বোন সু হিংগ অনুভব করেছিলেন, যিহোবা তার ডাক্তারের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছিলেন। তার ছেলের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা রয়েছে। একবার তার ছেলে অনেক উঁচু থেকে পড়ে যায় আর এর ফলে সে খুব আঘাত পায়। সেইসময় ছেলের যত্ন নেওয়ার জন্য বোন এবং তার স্বামী নিজেদের চাকরি ছেড়ে দেন। এই কারণে তাদের অনেক আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। বোনের মনে হয়েছিল, এখন তিনি এই চাপ আর সহ্য করতে পারবেন না। তাই, তিনি হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চান। এরপর এমন কিছু হয়, যেটা বোন আশাই করেননি। যে-ডাক্তার তার ছেলের চিকিৎসা করছিলেন, তিনি তাদের সাহায্য করার জন্য চিন্তা করেন। এই কারণে বোন এবং তার পরিবার সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পায় এবং কম ভাড়ায় থাকার একটা ঘরও খুঁজে পায়। পরে বোন বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলাম, এই সমস্ত কিছুর পিছনে যিহোবারই হাত ছিল। সত্যিই তিনি হলেন ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারী’ ঈশ্বর।”—গীত. ৬৫:২.

বিশ্বাস থাকলেই দেখতে পাব, যিহোবা কীভাবে উত্তর দেন

১৫. কীভাবে একজন বোন বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা তার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিচ্ছেন?

১৫ এটা ঠিক যে, যিহোবা সবসময় আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর অসাধারণ উপায়ে দেন না। কিন্তু, তিনি সেগুলোর উত্তর অবশ্যই দেন। তিনি জানেন, তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন আর তিনি আমাদের ঠিক সেটাই দেন। তাই, সবসময় এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দিন যে, যিহোবা কীভাবে আপনার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিচ্ছেন। ইয়োকো নামে একজন বোনের মনে হয়েছিল, যিহোবা তার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিচ্ছেন না। তখন তিনি একটা ডায়েরিতে সেই কথাগুলো লিখতে শুরু করেন, যেগুলোর বিষয়ে তিনি প্রার্থনা করছিলেন। কিছুসময় পর বোন যখন সেই ডায়েরিটা খুলে দেখেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন, যিহোবা তার বেশিরভাগই প্রার্থনার উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। আর এমন কিছু প্রার্থনারও উত্তর দিয়েছেন, যেগুলোর বিষয়ে তিনি নিজেই ভুলে গিয়েছিলেন। আমাদেরও সময়ে সময়ে এই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত, যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিচ্ছেন।—গীত. ৬৬:১৯, ২০.

১৬. প্রার্থনা করার বিষয়ে কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে? (ইব্রীয় ১১:৬)

১৬ আমরা শুধু প্রার্থনা করে দেখাই না যে, যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু, সেইসঙ্গে তিনি আমাদের প্রার্থনাগুলোর যে-উত্তরই দেন না কেন, সেটা গ্রহণ করার মাধ্যমেও আমরা আমাদের বিশ্বাস দেখাই। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬.) ভাই মাইক এবং তার স্ত্রী ক্রিসির উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তারা দু-জনেই বেথেলে সেবা করতে চেয়েছিলেন। ভাই মাইক বলেন, “আমরা দু-জনেই অনেক বছর ধরে বেথেলে সেবা করার জন্য আবেদন করি আর বার বার আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, কিন্তু আমাদের ডাকা হয় না।” তাদের দু-জনেরই পুরোপুরি আস্থা ছিল, যিহোবা জানেন তারা কীভাবে সবচেয়ে ভালো উপায়ে তাঁর সেবা করতে পারেন। আর তাদের পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব ছিল, তা তারা করে চলেন। তারা এমন জায়গায় গিয়ে অগ্রগামীর সেবা করেন, যেখানে বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন ছিল। আর তারা অনেকসময় নির্মাণ প্রকল্পেও সাহায্য করেছিলেন। বর্তমানে তারা সীমার কাজ করছেন। ভাই বলেন, “যিহোবা সবসময় আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর ঠিক সেভাবে দেননি, যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি সেগুলোর উত্তর অবশ্যই আমাদের দিয়েছেন। আর তা এমনভাবে দিয়েছেন, যেমনটা আমরা আশাও করিনি।”

১৭-১৮. গীতসংহিতা ৮৬:৬, ৭ পদ অনুযায়ী আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৭ গীতসংহিতা ৮৬:৬, ৭ পদ পড়ুন। দায়ূদের সম্পূর্ণ আস্থা ছিল, যিহোবা তার প্রার্থনাগুলো শুনেছেন এবং সেগুলোর উত্তরও দিয়েছেন। দায়ূদের মতো আমরাও আস্থা রাখতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা যে-ব্যক্তিদের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিয়েছি, সেগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনাগুলোরও উত্তর দেবেন। তিনি আমাদের প্রজ্ঞা দিতে পারেন এবং পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য শক্তি দিতে পারেন। তিনি হয়তো ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করতে পারেন। অথবা সেই ব্যক্তিদের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারেন, যারা আপাতত তাঁর উপাসনা করছে না।

১৮ যিহোবা হয়তো প্রতি বার সেভাবে আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেবেন না, যেভাবে আমরা চাই। কিন্তু, তিনি সেগুলোর উত্তর অবশ্যই দেবেন। তিনি জানেন, কখন আমাদের কোন জিনিসের প্রয়োজন রয়েছে আর সেটাই তিনি আমাদের দেন। তাই, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে চলুন আর বিশ্বাস রাখুন, তিনি আজ আপনার যত্ন নেবেন এবং নতুন জগতে তিনি “সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ” করবেন।—গীত. ১৪৫:১৬.

গান ১২ মহান যিহোবা

a যিহোবা আমাদের আশ্বাস দেন যে, আমাদের প্রার্থনাগুলো যদি তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হয়, তা হলে তিনি অবশ্যই তা শুনবেন। বিশেষ করে আমরা যখন কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমাদের যা প্রয়োজন, তা তিনি অবশ্যই জুগিয়ে দেবেন। আসুন দেখি, যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন।

b কেন যিহোবা শয়তানকে এই জগতের উপর শাসন করার অনুমতি দিয়েছেন, সেই বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্য ২০১৭ সালের জুন মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টার উপর আপনার দৃষ্টি রাখুন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

c কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন মা তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অন্য একটা দেশে শরণার্থী হিসেবে এসেছেন। সেখানকার ভাই-বোনেরা প্রেমের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানোর ব্যবস্থাও করেছে।