সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৩

‘সদাপ্রভুর অগ্নি’ নিভে যেতে দেবেন না

‘সদাপ্রভুর অগ্নি’ নিভে যেতে দেবেন না

“[প্রেমের] শিখা অগ্নির শিখা, তাহা সদাপ্রভুরই অগ্নি।”—পরম. ৮:৬.

গান ১৩১ “ঈশ্বর যা যুক্ত করেছেন”

সারাংশ a

১. প্রকৃত প্রেম সম্বন্ধে বাইবেলে কী বলা হয়েছে?

 প্রেমের “শিখা অগ্নির শিখা, তাহা সদাপ্রভুরই অগ্নি। বহু জল প্রেম নির্ব্বাণ করিতে পারে না, স্রোতস্বতীগণ তাহা ডুবাইয়া দিতে পারে না।” b (পরম. ৮:৬, ৭) রাজা শলোমন কতই-না অসাধারণ উপায়ে বলেছেন যে, প্রকৃত প্রেম কেমন হয়! তাই স্বামী-স্ত্রীরা, নিশ্চিত থাকুন, আপনারাও একে অন্যের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখাতে পারেন, এমন প্রেম যা কখনো শেষ হয় না।

২. স্বামী-স্ত্রীরা কী করলে তাদের মাঝে সবসময় ভালোবাসা বজায় থাকবে?

স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে সবসময় ভালোবাসা থাকবে কি না, এটা তাদের উপরই নির্ভর করে। একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। চিন্তা করুন, আপনি ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য আগুন জ্বালিয়েছেন। কিন্তু, সেই আগুন ততক্ষণ জ্বলতে থাকবে, যতক্ষণ আপনি তাতে কাঠ দেবেন। আপনি যদি এমনটা না করেন, তা হলে সেটা ধীরে ধীরে নিভে যাবে। একইভাবে, স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে প্রেমের শিখা তখনই সবসময় জ্বলতে পারে, যখন তারা তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে চলবে। কিন্তু, কখনো কখনো তাদের মনে হতে পারে, তাদের মাঝে ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এর অনেক কারণ থাকতে পারে। হতে পারে, তাদের টাকাপয়সার সমস্যা রয়েছে, কেউ একজন হয়তো অসুস্থ অথবা তারা সন্তানদের বড়ো করে তোলার ক্ষেত্রে ব্যস্ত। আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কীভাবে ‘সদাপ্রভুর অগ্নি’ অর্থাৎ প্রকৃত প্রেমের শিখা জ্বালিয়ে রাখতে পারেন? এই প্রবন্ধে আমরা এমনই তিনটে উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীরা তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারে আর সুখী হতে পারে। c

যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক দৃঢ় করে চলুন

যোষেফ ও মরিয়মের মতো স্বামী ও স্ত্রী দু-জনেরই যিহোবার সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক থাকা উচিত (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. যিহোবার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীদের এক ভালো সম্পর্ক থাকলে কীভাবে তাদের নিজেদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে? (উপদেশক ৪:১২) (ছবিও দেখুন।)

স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা যদি চান যেন আপনাদের পারিবারিক জীবনে ‘সদাপ্রভুর অগ্নি’ নিভে না যায়, তা হলে আপনাদের দু-জনকেই যিহোবার সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এর ফলে, আপনাদের সম্পর্কও আরও দৃঢ় হবে। কীভাবে? স্বামী-স্ত্রীরা যখন যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে, তখন তারা সহজেই তাঁর দেওয়া পরামর্শ মেনে নেয়। এভাবে, যতদূর সম্ভব তারা এমন সমস্যাগুলো এড়াতে পারে, যেগুলোর কারণে তাদের মধ্যে প্রেম ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। আর এমন সমস্যাগুলো যদি চলেও আসে, তা হলে তারা সেগুলো মিটমাট করে নিতে পারে। (পড়ুন, উপদেশক ৪:১২.) এ ছাড়া, যিহোবার সঙ্গে যাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তারা তাঁর মতোই হওয়ার চেষ্টা করে। যিহোবার মতো তারা ধৈর্য ধরে, অন্যদের ক্ষমা করে দেয় এবং সবার সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করে। (ইফি. ৪:৩২–৫:১) স্বামী-স্ত্রীরা যখন এই গুণগুলো দেখায়, তখন তাদের মাঝে প্রেমের শিখা জ্বলতে থাকে। বোন লিনা, যিনি ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত, বলেন: “যিহোবার সঙ্গে যে-ব্যক্তির এক ভালো সম্পর্ক থাকে, তাকে ভালোবাসা এবং সম্মান করা অনেক সহজ হয়ে যায়।”

৪. কেন যিহোবা যোষেফ ও মরিয়মকেই মশীহের বাবা-মা হওয়ার জন্য বাছাই করেছিলেন?

বাইবেলে দেওয়া একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। যিহোবাকে যখন বাছাই করতে হত যে, পৃথিবীতে কারা মশীহের বাবা-মা হবে, তখন তিনি চাইলে দায়ূদের বংশ থেকে যে-কাউকে বাছাই করতে পারতেন। তা সত্ত্বেও, কেন তিনি যোষেফ ও মরিয়মকেই বাছাই করেছিলেন? কারণ তাদের দু-জনারই যিহোবার সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক ছিল আর যিহোবা জানতেন, স্বামী-স্ত্রী হিসেবেও তারা তাঁকে তাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখবে। তাহলে স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা যোষেফ ও মরিয়মের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?

৫. স্বামীরা যোষেফের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

যিহোবা যখন যোষেফকে কোনো পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে সেটা কাজে লাগিয়েছিলেন। এই কারণে তিনি একজন ভালো স্বামী হতে পেরেছিলেন। বাইবেলে এমন তিনটে ঘটনার বিষয়ে বলা হয়েছে, যেখানে যিহোবা যোষেফকে পরিবারের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যদিও সেই নির্দেশনাগুলো মেনে নেওয়ার জন্য তাকে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করতে হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তিনি তা মেনে নিয়েছিলেন। (মথি ১:২০, ২৪; ২:১৩-১৫, ১৯-২১) যিহোবার নির্দেশনা মেনে নিয়ে যোষেফ মরিয়মকে সুরক্ষা জুগিয়েছিলেন, তার পাশে ছিলেন এবং তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোরও যত্ন নিয়েছিলেন। চিন্তা করুন, মরিয়ম যখন দেখেছিলেন, যোষেফ কীভাবে যিহোবার দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে নিচ্ছেন, তখন তিনি যোষেফকে আরও কতই-না ভালোবেসেছিলেন আর সম্মান করেছিলেন! স্বামীরা, আপনারাও পরিবারের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে যোষেফের মতো হতে পারেন। d এমনটা করার জন্য আপনাদের বড়ো বড়ো পরিবর্তন করতে হতে পারে। কিন্তু, তা করার মাধ্যমে আপনারা দেখাবেন, আপনারা আপনাদের স্ত্রীকে ভালোবাসেন। এভাবে আপনাদের দু-জনার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। ভ্যানুআটুতে থাকা একজন বোন, যিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত, বলেন: “আমার স্বামী যখন এটা জানার চেষ্টা করে যে, কোনো বিষয়ে যিহোবা কী পরামর্শ দিয়েছেন এবং তারপর সেটা কাজে লাগায়, তখন ওর প্রতি আমার সম্মান আরও বেড়ে যায়। আমি একেবারে নিশ্চিত, ও যেকোনো সিদ্ধান্ত নিক না কেন, সেগুলো সঠিক হবে। আর আমার কোনো বিষয়ে চিন্তা হয় না।”

৬. স্ত্রীরা মরিয়মের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

যিহোবার সঙ্গে মরিয়মের এক ভালো সম্পর্ক ছিল। নিজের বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য তিনি যোষেফের উপর নির্ভর করেননি বরং তিনি নিজে পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি শাস্ত্র সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতেন। (লূক ১:৪৬) তিনি যে-বিষয়গুলো শিখতেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময়ও বের করতেন। (লূক ২:১৯, ৫১) যিহোবার সঙ্গে এক ভালো সম্পর্ক থাকার ফলেই তিনি একজন উত্তম স্ত্রী হতে পেরেছিলেন। আজ অনেক বিবাহিত বোন মরিয়মের মতো হওয়ার চেষ্টা করে। বোন এমিকোর উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেন: “বিয়ের আগে উপাসনার সঙ্গে যুক্ত কাজগুলো করার বিষয়ে আমার একটা ভালো তালিক ছিল। কিন্তু, বিয়ের পর আমার স্বামীই আমাদের জন্য প্রার্থনা করতে এবং পারিবারিক উপাসনাতে নেতৃত্ব নিতে শুরু করে। তাই, এই সমস্ত কিছু করার জন্য আমি আমার স্বামীর উপরই নির্ভর হয়ে গিয়েছিলাম। পরে আমি বুঝতে পারি, আমাকেই আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য আমাকেও কিছু করতে হবে। তাই, এখন আমি আমার ঈশ্বরের জন্য আলাদাভাবে সময় বের করে নিই আর তখন আমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, বাইবেল পড়ি এবং সেটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি।” (গালা. ৬:৫) স্ত্রীরা, আপনারা যখন যিহোবার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য পরিশ্রম করে চলবেন, তখন আপনাদের স্বামী আপনাদের আরও ভালোবাসবে এবং প্রশংসা করবে।—হিতো. ৩১:৩০.

৭. স্বামী-স্ত্রীরা একসঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করার বিষয়ে যোষেফ ও মরিয়মের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

যোষেফ ও মরিয়ম যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করার জন্য একসঙ্গে মিলে অনেক কিছু করেছিলেন। তারা জানতেন, একটা পরিবার হিসেবে যিহোবার উপাসনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। (লূক ২:২২-২৪, ৪১; ৪:১৬) পরে যখন তাদের আরও সন্তান হয়েছিল, তখন এমনটা করা তাদের জন্য হয়তো অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তারপরও, তারা একসঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করে চলেছিলেন। যোষেফ ও মরিয়ম স্বামী-স্ত্রীদের জন্য কতই-না উত্তম এক উদাহরণ রেখেছেন! তাদের মতো আপনাদেরও যদি সন্তান থাকে, তা হলে সভাগুলোতে যাওয়া অথবা পারিবারিক উপাসনার জন্য সময় বের করা আপনাদের জন্য হয়তো সহজ হয় না। আর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে অধ্যয়ন করা এবং প্রার্থনা করার জন্য সময় বের করা হয়তো আরও কঠিন হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনারা যখন একসঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করবেন, তখন আপনারা তাঁর নিকটবর্তী হবেন এবং আপনাদের নিজেদের মধ্যেও সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে যাবে। তাই, যিহোবার উপাসনাকে আপনাদের জীবনে সবসময় প্রথম স্থানে রাখুন।

৮. যে-স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তারা পারিবারিক উপাসনা থেকে পুরোপুরি উপকার পাওয়ার জন্য কী করতে পারে?

হতে পারে, আপনারা একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না। এইরকম সময়ে আপনাদের হয়তো একসঙ্গে মিলে পারিবারিক উপাসনা করতে একটুও ইচ্ছা করে না। তা সত্ত্বেও, একসঙ্গে মিলে অল্প কিছু করার চেষ্টা করুন। আপনারা চাইলে এমন কিছু বিষয় নিয়ে শুরু করতে পারেন, যেগুলো আপনারা দু-জনেই উপভোগ করবেন। এমনটা করলে আপনাদের মধ্যে থাকা দূরত্ব কমে যাবে এবং আপনাদের হয়তো একসঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করতে ইচ্ছা করবে।

একসঙ্গে সময় কাটান

৯. কেন স্বামী-স্ত্রীদের একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত?

স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা একসঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনাদের প্রেমের শিখা জ্বালিয়ে রাখতে পারেন। একসঙ্গে সময় কাটালে আপনারা জানতে পারবেন যে, আপনাদের সাথি কেমন অনুভব করে এবং কীভাবে চিন্তা করে। (আদি. ২:২৪) একটু ভাই রুসলান এবং বোন লিলিয়ার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যারা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত। লক্ষ করুন, বিয়ের কিছুসময় পর তারা কোন বিষয়টা বুঝতে পারে। বোন লিলিয়া বলেন: “আমরা যতটা ভেবেছিলাম, ততটা একে অন্যকে সময় দিতে পারছিলাম না। সারাদিন চাকরি এবং ঘরের কাজ করেই কেটে যেত। আর পরে গিয়ে যখন আমাদের সন্তান হয়, তখন কীভাবে যে সময় কেটে যেত, আমরা বুঝতেই পারতাম না। আমরা বুঝতে পারি, আমরা যদি একে অন্যকে সময় না দিই, তা হলে আমাদের মাঝে দূরত্ব চলে আসতে পারে।”

১০. কীভাবে স্বামী-স্ত্রীরা ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬ পদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারে?

১০ স্বামী-স্ত্রীরা একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য কী করতে পারে? আগে থেকে স্থির করুন, আপনারা কখন একে অন্যকে সময় দেবেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬.) নাইজিরিয়ায় থাকা ভাই উজোন্ডু বলেন: “আমি যখন চিন্তা করি, কোন কাজটা কখন করব, তখন আমি এও স্থির করি, কখন আমার স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাব। আমি এটাকে কখনো হালকাভাবে নিই না।” (ফিলি. ১:১০) লক্ষ করুন, মলডোভাতে থাকা বোন অ্যানেস্ট্যাসিয়া কীভাবে তার সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করেন। তার স্বামী একজন সীমা অধ্যক্ষ। বোন বলেন: “আমার স্বামী যখন সীমার কাজ করে, তখন আমি আমার ব্যক্তিগত কাজগুলো সেরে ফেলি। এভাবে পরে আমরা একসঙ্গে সময় কাটাতে পারি।” কিন্তু, অন্য কাজগুলো করতে গিয়ে আপনাদের জন্য যদি একসঙ্গে সময় কাটানো কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে আপনারা কী করতে পারেন?

স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা কোন কোন কাজ একসঙ্গে করতে পারেন? (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা একসঙ্গে কী কী করেছিলেন?

১১ স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লার কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারেন। প্রথম শতাব্দীর ভাই-বোনেরা তাদের দু-জনকে খুব সম্মান করত। (রোমীয় ১৬:৩, ৪) বাইবেলে তাদের বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বেশি কিছু বলা নেই, কিন্তু আমরা এটা জানি যে, তারা একসঙ্গে কাজ করেছিলেন, প্রচার করেছিলেন এবং অন্যদের সাহায্যও করেছিলেন। (প্রেরিত ১৮:২, ৩, ২৪-২৬) বাইবেলে যত বারই আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক বারই তাদের নাম একসঙ্গে এসেছে।

১২. স্বামী-স্ত্রীরা একে অন্যের সঙ্গে আরও সময় কাটানোর জন্য কী করতে পারে? (ছবিও দেখুন।)

১২ স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লার কাছ থেকে কী শিখতে পারেন? চিন্তা করুন, আপনাদের দু-জনকে কোন কোন কাজ করতে হয়। সেগুলোর মধ্যে আপনারা কি কিছু কাজ একসঙ্গে করতে পারেন? আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা একসঙ্গে প্রচার করতেন। আপনারাও কি কখনো কখনো একসঙ্গে প্রচার করেন? আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা একসঙ্গে কাজও করতেন। আপনারা হয়তো একসঙ্গে চাকরি করেন না, কিন্তু আপনারা কি ঘরের কাজগুলো একসঙ্গে করতে পারেন? (উপ. ৪:৯) স্বামী-স্ত্রীরা যখন কোনো কাজ করতে একে অন্যকে সাহায্য করে, তখন তাদের কাছে কথা বলার অনেক সুযোগ থাকে এবং তারা একে অন্যের আরও ঘনিষ্ঠ হয়। ভাই রবার্ট এবং বোন লিন্ডার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যারা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত। ভাই রবার্ট বলেন: “সত্যি বলতে কী, আমাদের দু-জনের কাছে একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ফ্রি টাইম থাকে না। কিন্তু, আমি যখন থালা-বাসন ধুই এবং আমার স্ত্রী পাশে এসে সেগুলো কাপড় দিয়ে মোছে অথবা আমি যখন বাগানে কাজ করি আর ও এসে আমাকে সাহায্য করে, তখন আমার খুব ভালো লাগে। একসঙ্গে কাজ করার ফলে আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং একে অন্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বেড়ে যায়।”

১৩. একে অন্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রীদের কী করা উচিত?

১৩ স্বামী-স্ত্রীরা মনে রাখবেন, শুধু একসঙ্গে থাকলেই যে আপনারা একে অন্যের ঘনিষ্ঠ হবেন, এমনটা নয়। ব্রাজিলে থাকা একজন বিবাহিত বোন বলেন: “কখনো কখনো আমাদের মনে হতে পারে, আমরা তো একই ছাদের নীচে আছি, তাই এর মানে হল, আমরা একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু, এমনটা মনে করার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরই ঠকাই। কারণ বিক্ষিপ্ত করার মতো আজ এত বিষয় রয়েছে যে, আমরা একসঙ্গে আছি বলে মনে হলেও আসলে আমরা একসঙ্গে নেই। আমি বুঝতে পারি, একসঙ্গে থাকাই যথেষ্ট নয়। আমাকে আমার স্বামীর উপর সম্পূর্ণ মনোযোগও দিতে হবে।” লক্ষ করুন, ভাই ব্রুনো এবং তার স্ত্রী টাইস কীভাবে এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন যেন তারা একে অন্যের উপর মনোযোগ দেয়। ভাই বলেন: “আমরা যখন একসঙ্গে থাকি, তখন আমরা আমাদের ফোন দূরে রাখি, যাতে আমরা একসঙ্গে ভালো সময় কাটাতে পারি।”

১৪. কোনো স্বামী-স্ত্রীর যদি একসঙ্গে সময় কাটাতে ভালো না লাগে, তা হলে তারা কী করতে পারে?

১৪ হতে পারে,আপনাদের একসঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে না। আপনাদের পছন্দ-অপছন্দ হয়তো আলাদা অথবা আপনারা হয়তো একে অন্যের কথায় বিরক্ত হয়ে যান। এমন সময়ে আপনারা কী করতে পারেন? আরেক বার সেই আগুনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। আগুন জ্বালানোর সঙ্গেসঙ্গেই সেটা থেকে শিখা উঠে আসে না। আমাদের ধীরে ধীরে তাতে কাঠ দিতে হয়, প্রথমে ছোটো ছোটো, পরে বড়ো বড়ো। একইভাবে প্রথম প্রথম আপনারা প্রত্যেক দিন অল্প কিছু সময় একসঙ্গে কাটাতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, যেন আপনারা এমন কিছু না করেন, যেটার কারণে আপনাদের সাথি রেগে যাবে। এর পরিবর্তে, এমন কিছু করার চেষ্টা করুন, যেটার ফলে আপনারা দু-জনেই উপভোগ করবেন। (যাকোব ৩:১৮) এভাবে আপনারা যখন অল্প কিছু সময় একসঙ্গে কাটাতে শুরু করবেন, তখন আপনাদের মধ্যে প্রেমের শিখা আবারও জ্বলতে শুরু করবে।

একে অন্যকে সম্মান করুন

১৫. কেন স্বামী-স্ত্রীদের একে অন্যকে সম্মান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ?

১৫ স্বামী-স্ত্রীদের একে অন্যকে সম্মানও করা উচিত। এটা সেই বাতাসের মতো, যেটার কারণে আগুন জ্বলতে থাকে। আর বাতাস যদি না থাকে, তা হলে আগুন তাড়াতাড়ি নিভে যাবে। একইভাবে, স্বামী-স্ত্রীরা যদি একে অন্যকে সম্মান না করে, তা হলে তাদের মধ্যে প্রেম সহজেই ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু, তারা যদি একে অন্যকে সম্মান করার কঠোর প্রচেষ্টা করে, তা হলে তাদের মাঝে প্রেম বজায় থাকবে। তবে, একটা বিষয় মনে রাখবেন: আপনারা হয়তো মনে করছেন যে, আপনারা আপনাদের সাথিকে সম্মান করেন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আপনাদের সাথিও যেন এমনটা অনুভব করে, আপনারা তাকে সম্মান করেন। ভাই আরেট এবং বোন পেনি ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত। বোন বলেন: “আমরা একে অন্যকে সম্মান করি, তাই আমাদের ঘরে একটা প্রেমময় পরিবেশ থাকে। আমরা মন খুলে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারি কারণ আমরা জানি, আমরা একে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেব।” তাহলে আপনারা কী করতে পারেন, যাতে আপনাদের সাথি অনুভব করে যে, আপনারা তাকে সম্মান করেন? আসুন, আমরা অব্রাহাম ও সারার উদাহরণ থেকে শিখি।

একজন খ্রিস্টান স্বামীর তার স্ত্রীর কথা মন দিয়ে শোনা উচিত, এভাবে তিনি তাকে সম্মান দেখাবেন (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. স্বামীরা অব্রাহামের কাছ থেকে কী শিখতে পারে? (১ পিতর ৩:৭) (ছবিও দেখুন।)

১৬ অব্রাহাম সারাকে অনেক সম্মান করতেন। অব্রাহাম তার মতামত জানার চেষ্টা করতেন এবং তার অনুভূতির বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। একবার সারা খুবই চিন্তিত ছিলেন। তিনি অব্রাহামের উপর প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন আর এমনকী তাকে দোষও দিয়েছিলেন। সেইসময় কি অব্রাহামও সারার উপর রেগে গিয়েছিলেন? না। অব্রাহাম জানতেন, সারা সবসময় তার অধীনে থাকেন এবং তাকে সমর্থন করেন। তাই, তিনি সারার কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন এবং বিষয়টা মিটমাট করার চেষ্টা করেছিলেন। (আদি. ১৬:৫, ৬) স্বামীরা, আপনারা অব্রাহামের কাছ থেকে কী শিখতে পারেন? যিহোবা আপনাদের পরিবারের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছেন। (১ করি. ১১:৩) কিন্তু, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো হবে যেন আপনারা আপনাদের স্ত্রীর মতামতও নেন, বিশেষ করে সেইসময়, যখন সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব তার উপরও পড়বে। (১ করি. ১৩:৪, ৫) হতে পারে, কখনো কখনো আপনাদের স্ত্রী খুবই চিন্তিত থাকেন আর আপনাদের বলতে চান যে, তিনি কেমন অনুভব করছেন। এই ক্ষেত্রে, মন দিয়ে তার কথা শুনুন। এভাবেও আপনারা দেখাবেন, আপনারা তাকে সম্মান করেন। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৭.) ভাই দিমিত্রি এবং বোন অ্যানজেলার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যারা প্রায় ৩০ বছর ধরে বিবাহিত। বোন বলেন, কেন তার মনে হয়, তার স্বামী তাকে সম্মান করেন। তিনি বলেন: “আমি যখন খুব চিন্তিত থাকি অথবা শুধু কথা বলতে চাই, তখন দিমিত্রি সবসময় আমার কথা মন দিয়ে শোনে। অনেকসময় আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ি, কিন্তু তখনও ও আমার প্রতি ধৈর্য ধরে।”

১৭. স্ত্রীরা সারার উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারে? (১ পিতর ৩:৫, ৬)

১৭ অব্রাহাম যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সারা সেটাকে সমর্থন করতেন। (আদি. ১২:৫) এভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন, তিনি অব্রাহামকে সম্মান করেন। একবার হঠাৎ করে কিছু অতিথি এসে পড়েছিল এবং অব্রাহাম তাদের আতিথেয়তা দেখানোর কথা চিন্তা করেন। তিনি সারাকে বলেন, সারা যেন তার কাজ ছেড়ে তাড়াতাড়ি অনেকটা ময়দা মাখেন এবং রুটি তৈরি করেন। (আদি. ১৮:৬) সারা দেরি না করে সঙ্গেসঙ্গে সেই কাজে লেগে পড়েছিলেন। স্ত্রীরা, সারার মতো আপনারাও কি আপনাদের স্বামীর নেওয়া সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারেন? আপনারা যখন তা করবেন, তখন আপনাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৫, ৬.) ভাই দিমিত্রি, যার বিষয়ে আগের অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন, কোন বিষয়টা থেকে তিনি বুঝতে পারেন যে, তার স্ত্রী তাকে সম্মান করেন। তিনি বলেন: “অ্যানজেলার একটা বিষয় আমার খুব ভালো লাগে, ও সবসময় আমাকে সমর্থন করে, এমনকী তখনও, যখন কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের মতামত মেলে না। আর পরে যদি মনে হয় যে, আমি ভালো সিদ্ধান্ত নিইনি, তা হলেও অ্যানজেলা আমাকে দোষ দেয় না।” সত্যিই, যে আপনাকে সম্মান করে, তাকে ভালোবাসা কতই-না সহজ হয়ে যায়!

১৮. স্বামী-স্ত্রীরা যখন তাদের মাঝে প্রেম বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে, তখন তারা কোন কোন উপকার পায়?

১৮ আজ খ্রিস্টান স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে প্রেমের যে-শিখা জ্বলছে, সেটাকে শয়তান নিভিয়ে দিতে চায়। সে জানে, স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে যদি ভালোবাসা কমে যায়, তা হলে তারা ধীরে ধীরে যিহোবার কাছ থেকেও দূরে চলে যাবে। কিন্তু আমরা জানি, প্রকৃত প্রেম কখনো শেষ হয় না। তাই, চেষ্টা করুন যেন আপনাদের দু-জনের মাঝে সেরকমই প্রেম থাকে, যেমনটা পরমগীত বইয়ে বলা হয়েছে। দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন যে, আপনারা আপনাদের বিবাহিত জীবনে যিহোবাকে প্রথম স্থান দেবেন, একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটাবেন, একে অন্যকে সম্মান করবেন এবং একে অন্যের অনুভূতি ও প্রয়োজনের বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। স্বামী-স্ত্রীরা, আপনারা যখন এগুলো করবেন, তখন আপনারা যিহোবার প্রশংসা করতে পারবেন, যিনি হলেন প্রকৃত প্রেমের উৎস আর আপনাদের মাঝে থাকা প্রেমের শিখা সবসময় জ্বলতে থাকবে।

গান ১৩২ এবার আমরা এক হলাম

a বিয়ে হল যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক চমৎকার উপহার। একজন পুরুষ ও নারী যখন বিয়ে করে, তখন তারা একটা বিশেষ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারে। কিন্তু, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একে অন্যের প্রতি সেই ভালোবাসা কমে যেতে পারে। আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে এই প্রবন্ধে দেওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগালে আপনি আপনার বিবাহসাথির প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে পারবেন এবং আপনি আপনাদের বিবাহিত জীবনে সুখী থাকতে পারবেন।

b প্রকৃত প্রেম কখনো শেষ হয় না, এটা সবসময় বজায় থাকে। বাইবেলে এইরকম প্রেমকে ‘সদাপ্রভুর অগ্নি’ বলা হয়েছে কারণ এই প্রেমের উৎস হলেন যিহোবা।

c আপনার বিবাহসাথি যদি যিহোবার উপাসনা না করে থাকে, তারপরও এই পরামর্শগুলো কাজে লাগালে আপনাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে।—১ করি. ৭:১২-১৪; ১ পিতর ৩:১, ২.

d উদাহরণ স্বরূপ, আপনি “পরিবারের জন্য সাহায্য” ধারাবাহিক প্রবন্ধ পড়তে পারেন। এই প্রবন্ধগুলো আপনি jw.org ওয়েবসাইটে পেতে পারেন।