তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন
উদ্যোগী সাক্ষিরা এমন দেশগুলোতে সেবা করছেন, যেখানে রাজ্যের প্রচারকদের আরও বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এই সাক্ষিদের মধ্যে অসংখ্য অবিবাহিত বোনেরাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কয়েক দশক ধরে বিদেশে সেবা করছেন। কী তাদেরকে বিদেশে গিয়ে সেবা করতে অনুপ্রাণিত করেছে? বিদেশে গিয়ে সেবা করার ফলে তারা কোন কোন বিষয় শিখতে পেরেছেন? তাদের জীবনযাপনে কোন কোন পরিবর্তন হয়েছে? আমরা কয়েক জন অভিজ্ঞ বোনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আপনি যদি একজন অবিবাহতি বোন হয়ে থাকেন এবং গভীর পরিতৃপ্তি এনে দেয় এমন পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার জন্য মনেপ্রাণে আকাঙ্ক্ষী হন, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আপনি তাদের মন্তব্য থেকে উপকৃত হবেন। আসলে, ঈশ্বরের সমস্ত লোকই তাদের উদাহরণ থেকে উপকার লাভ করতে পারে।
সন্দেহ কাটিয়ে ওঠা
একজন অবিবাহিত অগ্রগামী হিসেবে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে সফল হওয়ার জন্য যে-বিষয়গুলো থাকা প্রয়োজন, সেগুলো আপনার আছে কি না, তা নিয়ে আপনি কি সন্দেহ করেন? অ্যানিটা, যার বয়স এখন ৭৫ বছর, তার নিজের ক্ষমতার উপর কোনো আস্থাই ছিল না। তিনি ইংল্যান্ডে বড়ো হন এবং সেখানেই ১৮ বছর বয়সে অগ্রগামীর কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, “যদিও লোকেদের যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে আমার ভালো লাগত কিন্তু কখনো কল্পনাও করিনি যে, বিদেশে গিয়ে আমি সেবা করতে পারব। আমি কখনো বিদেশি ভাষা শেখার চেষ্টা করিনি কারণ আমি মনে করতাম, বিদেশি ভাষা রপ্ত করা কখনোই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই, আমি যখন গিলিয়েড স্কুল-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাই, তখন একেবারে অবাক হয়ে যাই। যেহেতু আমি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতাম, তাই এই আমন্ত্রণ পেয়ে আমি অভিভূত হয়ে যাই। কিন্তু, আমি চিন্তা করি, ‘যিহোবা যদি মনে করেন, আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব, তা হলে আমি চেষ্টা করব।’ এটা প্রায় ৫০ বছর আগের কথা। সেই সময় থেকে আমি জাপানে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করছি।” অ্যানিটা আরও বলেন: “কখনো কখনো, অবিবাহিত বোনদের আমি বলি, ‘বিদেশে গিয়ে সেবা করা যে কতটা রোমাঞ্চকর, তা শুরু না করলে বুঝবে না। তাই, তাড়াতাড়ি এই কাজে যোগ দাও!’ আর আমি আনন্দিত যে, অনেকেই তা শুরু করেছে।”
সাহস অর্জন করা
বিদেশে গিয়ে সেবা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন অনেক বোন বিদেশে যাওয়ার আগে প্রথমে ইতস্তত বোধ করেছিলেন। কীভাবে তারা সাহস অর্জন করতে পেরেছেন?
মরিন, যার বয়স এখন ৬৪ বছর, বলেন, “ছোটো থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল অন্যদের সাহায্য করা।” ২০ বছর বয়সে তিনি কানাডার কুইবেক প্রদেশে যান, যেখানে আরও বেশি অগ্রগামীর প্রয়োজন ছিল। “পরবর্তী সময়ে, আমি গিলিয়েড স্কুল-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাই, কিন্তু চেনা-পরিচিত ব্যক্তিদের ছেড়ে অচেনা এক জায়গায় যাওয়ার কথা চিন্তা করেই আমার ভয় হতে থাকে।” তিনি আরও বলেন: “যেহেতু আমার বাবা অসুস্থ ছিলেন এবং মাকে তার যত্ন নিতে হতো, তাই মাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেও আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।
এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনেক রাত আমি কেঁদে কেঁদে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। আমি যখন বাবা-মাকে আমার উদ্বিগ্নতার বিষয়ে জানাই, তখন তারা আমাকে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করেন। এ ছাড়া, আমি লক্ষ করেছিলাম যে, স্থানীয় মণ্ডলীর ভাই-বোনেরাও বাবা-মাকে প্রেমের সঙ্গে সাহায্য করছে। যিহোবার প্রেমময় যত্ন আমাকে এই আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, তিনি আমারও যত্ন নেবেন। এই সমস্ত কিছু বিবেচনা করার পর আমি বুঝতে পারি, এখন আমি যাওয়ার জন্য তৈরি!” ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু করে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মরিন পশ্চিম আফ্রিকায় একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করেন। বর্তমানে, কানাডায় নিজের মায়ের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি তিনি এখন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন। বিদেশে গিয়ে সেবা করার সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন: “যিহোবা সবসময়ই প্রয়োজনের সময়ে আমার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছেন।”ওয়েন্ডি, যার বয়স এখন ৬৫ বছর, কিশোর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেন: “আমি খুবই লাজুক স্বভাবের ছিলাম আর অপরিচিত লোকেদের সঙ্গে কথা বলা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু, অগ্রগামীর কাজ করার ফলে সমস্ত ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বলা আমার জন্য সহজ হয়ে ওঠে আর এভাবে আমার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। পরে আমি বুঝতে পারি, আত্মবিশ্বাস আমার জন্য আর বড়ো কোনো সমস্যা নয়। অগ্রগামীর কাজের মাধ্যমে আমি যিহোবার উপর নির্ভর করতে শিখি এবং বুঝতে পারি, আমার পক্ষে বিদেশে গিয়ে সেবা করা সম্ভব। এ ছাড়া, একজন অবিবাহিত বোন, যিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাপানে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করেন, আমাকে তিন মাসের জন্য জাপানে গিয়ে প্রচার করার আমন্ত্রণ জানান। তার সঙ্গে কাজ করার ফলে বিদেশে গিয়ে সেবা করার ব্যাপারে আমার আকাঙ্ক্ষা আরও বৃদ্ধি পায়।” ১৯৮৬ সালে ওয়েন্ডি অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় ১,৭৭০ কিলোমিটার (১,১০০ মাইল) পূর্ব দিকে অবস্থিত ভানুয়াতু নামে একটা দ্বীপে যান।
ওয়েন্ডি এখনও ভানুয়াতুতে আছেন এবং সেখানকার অনুবাদ অফিসে সেবা করছেন। তিনি বলেন, “বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে নতুন নতুন দল ও মণ্ডলী গড়ে উঠতে দেখাই আমার জন্য সবচেয়ে বড়ো আনন্দ। এই দ্বীপপুঞ্জে যিহোবার কাজে সামান্য অংশ নিতে পারা যে কত বড়ো সুযোগ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
কুমিকো, যার বয়স এখন ৬৫ বছর, যখন জাপানে একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছিলেন, তখন তার অগ্রগামী সঙ্গী নেপালে গিয়ে সেবা করার প্রস্তাব দেন। কুমিকো বলেন, “তিনি বার বার আমাকে একই কথা বলতে থাকেন, কিন্তু প্রতিবারই আমি না বলি। নতুন ভাষা শেখা এবং নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টা আমার কাছে কঠিন বলে মনে হতো। এ ছাড়া, বিদেশে গিয়ে সেবা করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সঞ্চয় করার বিষয়টাও একটা সমস্যা ছিল। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে থাকি আর হঠাৎ একদিন আমি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হই এবং আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। হাসপাতালে বসে আমি চিন্তা করি: ‘এরপর আমার প্রতি কী ঘটবে, কে জানে? আমি হয়তো গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি এবং বিদেশে গিয়ে অগ্রগামীর কাজ করার সুযোগ হারাতে পারি। অন্ততপক্ষে এক বছরের জন্য হলেও কি আমি বিদেশে গিয়ে সেবা করতে পারি না?’ আমি সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি।” হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কুমিকো প্রথমে
নেপালে ঘুরতে যান এবং এরপর তিনি ও তার অগ্রগামী সঙ্গী সেখানে সেবা করতে যান।তিনি নেপালে প্রায় দশ বছর ধরে সেবা করছেন আর এই সম্বন্ধে কুমিকো বলেন: “আমি যে-সমস্যাগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম, সেগুলো আমার সামনে থেকে লোহিত সমুদ্রের মতো দু-ভাগ হয়ে সরে গিয়েছে। আমি অনেক আনন্দিত যে, যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে আমি সেবা করা বেছে নিয়েছি। প্রায়ই দেখা যায়, আমি হয়তো কোনো পরিবারের সঙ্গে বাইবেলের বার্তা নিয়ে আলোচনা করছি আর আশেপাশে থেকে আরও পাঁচ-ছয় জন প্রতিবেশী তা শুনতে এসেছে। এমনকী ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরাও সম্মানের সঙ্গে আমার কাছ থেকে বাইবেলের একটা ট্র্যাক্ট নিতে চায়। এমন এলাকায় প্রচার করা খুবই আনন্দের বিষয়, যেখানে লোকেরা সহজেই সাড়া দেয়।”
বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করা
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, যে-সাহসী অবিবাহিত বোনদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন। কীভাবে তারা সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করেন?
ডাইয়ান নামে কানাডার একজন বোন বলেন, “প্রথম প্রথম বাড়ি থেকে দূরে থাকাটা আমার কাছে কঠিন বলে মনে হতো।” এখন তার বয়স ৬২ বছর আর তিনি বিগত ২০ বছর ধরে আইভরি কোস্টে (বর্তমানে কোট ডিভোর) একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করছেন। “আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাকে আমার এলাকার লোকেদের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। গিলিয়েড স্কুল-এ আমাদের একজন শিক্ষক, ভাই জ্যাক রেডফোর্ড বলেছিলেন, কার্যভারে গিয়ে আমরা যে-সমস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হব, সেটা দেখে প্রথম প্রথম আমরা হয়তো বিরক্ত হতে, এমনকী হতাশ হয়ে পড়তে পারি আর তা বিশেষভাবে সেই সময়, যখন নিজের চোখে আমরা লোকেদের দরিদ্রতা দেখতে পাব। কিন্তু তিনি বলেন: ‘দরিদ্রতার প্রতি মনোযোগ দেবেন না। লোকেদের দিকে, তাদের চেহারা ও চোখের দিকে মনোযোগ দিন। বাইবেলের সত্য শোনার পর তাদের যে-প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা লক্ষ করুন।’ আমি ঠিক তা-ই করি আর এটা আমার জন্য এক বড়ো আশীর্বাদ হয়ে ওঠে! আমি যখন লোকেদের সান্ত্বনাদায়ক রাজ্যের বার্তা জানাতাম, তখন আনন্দে তাদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত!” আর কোন বিষয়টা ডাইয়ানকে বিদেশে গিয়ে সেবা করার সময় মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে? “আমি আমার বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলি এবং তাদেরকে যিহোবার বিশ্বস্ত দাস হতে দেখে গভীর আনন্দ লাভ করি। আমার কার্যভারের এলাকাই এখন আমার বাড়ি। আমি অনেক আধ্যাত্মিক মা ও বাবা, ভাই ও বোন লাভ করেছি, যেমনটা যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।”—মার্ক ১০:২৯, ৩০.
অ্যান, যার বয়স এখন ৪৬ বছর, তিনি এশিয়ার এমন একটা জায়গায় সেবা করছেন, যেখানে আমাদের কাজের উপর সীমা আরোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন: “বহু বছর ধরে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় সেবা করার সময় আমাকে এমন বোনদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে, যাদের পটভূমি ও ব্যক্তিত্ব আমার থেকে একেবারে আলাদা। এই কারণে কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি হতো এবং দুঃখ পেতাম। যখন এমনটা হতো, তখন আমি অগ্রগামী সঙ্গীদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতাম, যাতে তাদের সংস্কৃতি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এ ছাড়া, আমি তাদের প্রতি আরও প্রেমময় ও যুক্তিবাদী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতাম। আমি আনন্দিত যে, সেই প্রচেষ্টা সার্থক
হয়েছে এবং অনেকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে আর এটা আমাকে ধৈর্য ধরে কার্যভার চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।”উটা নামে জার্মানির একজন বোন, যার বয়স এখন ৫৩ বছর, ১৯৯৩ সালে মাদাগাস্কারে একজন মিশনারি হিসেবে কার্যভার লাভ করেন। তিনি বলেন: “প্রথম প্রথম আমাকে স্থানীয় ভাষা শেখার ও আর্দ্র আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়। এ ছাড়া, আমাকে ম্যালেরিয়া, অ্যামিবা ও পরজীবী প্রাণীর কারণে যে-সমস্ত রোগজীবাণু ছড়ায়, সেগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হয়। কিন্তু, আমি প্রচুর সাহায্য লাভ করি। স্থানীয় বোনেরা, তাদের সন্তানেরা এবং আমার বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে নতুন ভাষা শেখার জন্য ধৈর্য ধরে সাহায্য করে। আমি যখন অসুস্থ হতাম, তখন আমার মিশনারী সঙ্গী আমার যত্ন নিতেন। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, যিহোবা আমাকে সাহায্য করেন। আমি নিয়মিতভাবে প্রার্থনায় তাঁর কাছে নিজের উদ্বিগ্নতার কথা খুলে বলতাম। এরপর, আমি ধৈর্য ধরে প্রার্থনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতাম, কখনো কখনো কয়েক দিন আবার কখনো কখনো কয়েক মাস। যিহোবা প্রতিটা সমস্যার সমাধান করেন।” উটা এখন প্রায় ২৩ বছর ধরে মাদাগাস্কারে সেবা করছেন।
আশীর্বাদে পরিপূর্ণ এক জীবন
যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করেন এমন অন্যান্য ভাই-বোনের মতো এই অবিবাহিত বোনেরাও প্রায়ই বলে থাকেন যে, বিদেশে গিয়ে সেবা করা সত্যিই তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। তারা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করেছেন?
হাইডি নামে জার্মানির একজন বোন, যার বয়স এখন ৭৩ বছর, ১৯৬৮ সাল থেকে আইভরি কোস্টে (বর্তমানে কোট ডিভোর) একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করছেন। তিনি বলেন: “সবচেয়ে বড়ো যে-আনন্দ আমি লাভ করেছি, তা হল আমার আধ্যাত্মিক সন্তানদের ‘সত্যে চলতে’ দেখা। যাদেরকে আমি বাইবেল অধ্যয়ন করাতাম, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন অগ্রগামী এবং মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসেবে সেবা করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে মা অথবা দিদা বলে ডাকে। একজন প্রাচীন ও তার স্ত্রী এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা আমাকে তাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখে। এভাবে যিহোবা আমাকে একটা ছেলে, বৌমা এবং তিন নাতি-নাতনি দিয়েছেন।”—৩ যোহন ৪.
ক্যারেন নামে কানাডার একজন বোন, যার বয়স এখন ৭২ বছর, ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম আফ্রিকায় সেবা করেন। তিনি বলেন: “মিশনারি জীবন আমাকে আরও আত্মত্যাগী, প্রেমময় ও ধৈর্যশীল হতে শিখিয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন জাতির সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করা আমাকে আরও খোলামনের ব্যক্তি হতে সাহায্য করেছে। বিভিন্ন কাজ যে বিভিন্ন উপায়ে করা যায়, তা আমি শিখতে পেরেছি। আর পুরো পৃথিবী থেকে প্রিয় বন্ধুদের পাওয়া সত্যিই এক আশীর্বাদের বিষয়! যদিও আমাদের জীবন ও কার্যভার পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব এখনও একই আছে।”
মার্গ্রেট নামে ইংল্যান্ডের একজন বোন, যার বয়স এখন ৭৯ বছর, লাওসে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করেন। তিনি বলেন: “বিদেশে সেবা করার ফলে আমি নিজের চোখে দেখতে পেরেছি যে, কীভাবে যিহোবা সমস্ত জাতি ও পটভূমি থেকে আসা লোকেদের তাঁর সংগঠনের দিকে আকৃষ্ট করছেন। এই অভিজ্ঞতা আমার বিশ্বাসকে অনেক শক্তিশালী করেছে। এটা আমাকে এই আস্থা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে যে, যিহোবা তাঁর সংগঠনকে পরিচালনা দিচ্ছেন এবং তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ হবেই।”
সত্যিই, বিদেশে গিয়ে সেবা করছেন এমন অবিবাহিত বোনেরা খ্রিস্টান হিসেবে সেবা করার বিষয়ে এক উল্লেখযোগ্য নথি গড়ে তুলেছেন। তারা আমাদের আন্তরিক প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। (বিচার. ১১:৪০) আর উল্লেখযোগ্য বিষয়টা হল, তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। (গীত. ৬৮:১১) আপনি কি আপনার পরিস্থিতির রদবদল করতে এবং এই প্রবন্ধে যে-উদ্যোগী বোনদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন? যদি পারেন, তা হলে নিঃসন্দেহে আপনি ‘আস্বাদন করিয়া দেখিতে’ পারবেন যে, “সদাপ্রভু মঙ্গলময়।”—গীত. ৩৪:৮.