অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৮
অল্পবয়সিরা, তোমরা কেমন জীবন কাটাতে চাও?
“বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে।”—হিতো. ২:১১.
গান ১৩৫ যিহোবার আন্তরিক অনুরোধ: প্রিয় সন্তানেরা, জ্ঞানবান হও
সারাংশ a
১. যিহোয়াশ, উষিয় এবং যোশিয়ের জন্য কী করা কঠিন বলে মনে হয়েছিল?
চিন্তা করো, তোমার বয়স এখন ১০ থেকে ১২ বছর। আর তোমাকে ঈশ্বরের লোকদের উপর রাজা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এখন যেহেতু তোমার কাছে অনেক ক্ষমতা রয়েছে, তাই তুমি কী করবে? বাইবেলে এমন কয়েক জন অল্পবয়সিদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যাদের খুবই কম বয়সে যিহূদার রাজা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। যেমন, যিহোয়াশ মাত্র ৭ বছর বয়সে, উষিয় ১৬ বছর বয়সে এবং যোশিয় ৮ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন। চিন্তা করো, এত কম বয়সে এত বড়ো দায়িত্ব পালন করা তাদের কতটা কঠিন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা এবং অন্যদের সাহায্যে তারা এই দায়িত্বগুলো পালন করতে পেরেছিলেন এবং নিজেদের জীবনে অনেক ভালো কাজ করেছিলেন।
২. কেন আমাদের যিহোয়াশ, উষিয় এবং যোশিয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিতে হবে?
২ এটা ঠিক যে, আমরা রাজা কিংবা রানি নই। কিন্তু, বাইবেলে বলা এই তিন জন ছেলের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। তারা কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আবার কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তাদের উদাহরণ থেকে আমরা শিখব, কেন আমাদের ভালো বন্ধু বাছাই করতে হবে, নম্র হতে হবে এবং ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হতে হবে।
ভালো বন্ধু বাছাই করো
৩. রাজা যিহোয়াশ কীভাবে মহাযাজক যিহোয়াদার সাহায্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন?
৩ যিহোয়াশের মতো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করো। যিহোয়াশ যখন ছোটো ছিলেন, তখন তার বাবা মারা যান। মহাযাজক যিহোয়াদা তাকে নিজের ছেলের মতো বড়ো করে তোলেন। আর তাকে যিহোবার বিষয়ে শেখান। যিহোয়াশ প্রজ্ঞাবান ছিলেন এবং যিহোয়াদার উত্তম পরামর্শ মেনেছিলেন। তিনি যিহোবার সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং অন্যদেরও এমনটা করার জন্য সাহায্য করেছিলেন। তিনি যিহোবার মন্দির মেরামত করার ব্যবস্থা করেছিলেন।—২ বংশা. ২৪:১, ২, ৪, ১৩, ১৪.
৪. আমরা যখন যিহোবার আজ্ঞাগুলোকে মূল্যবান হিসেবে দেখি এবং সেগুলো পালন করি, তখন কীভাবে আমরা তা থেকে উপকৃত হই? (হিতোপদেশ ২:১, ১০-১২)
৪ তোমার বাবা-মা কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি যদি তোমাকে যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে শিখিয়ে থাকেন, তা হলে এটা খুব ভালো বিষয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২:১, ১০-১২.) বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে বিভিন্ন উপায়ে শেখাতে পারে। লক্ষ করো, কিয়ারার বাবা কীভাবে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছিলেন। তার বাবা যখন তাকে প্রতিদিন স্কুলে ছাড়তে যেতেন, তখন তার সঙ্গে সেই দিনের ডেলি টেক্সট নিয়ে আলোচনা করতেন। কিয়ারা বলে, “বাবার সঙ্গে আমার যে-আলোচনা হত, সেটা আমাকে খুব সাহায্য করত। সারাদিন আমার সামনে যে-সমস্যাই আসত, আমি সফলভাবে সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারতাম।” তোমার কি কখনো মনে হয়েছে, তোমার বাবা-মা বাইবেলের মান অনুযায়ী তোমার জন্য যে-নিয়ম স্থির করেছেন, সেটার কারণে তুমি যা-কিছু করতে চাও, সেটা করতে পারছ না? যখন এমনটা হয়, কীভাবে তুমি তখনও তাদের কথা শুনতে পার? আলিয়া নামে একজন বোন বলে, তার বাবা-মা তাকে বোঝাতেন যে, কেন তারা কোনো নিয়ম তৈরি করেছেন। সে বলে, “আমি বুঝতে পারি, বাবা-মা অযথা আমাকে কোনো কিছু করা থেকে আটকানোর জন্য এই নিয়মগুলো তৈরি করেননি। বরং তারা আমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকে সুরক্ষা জোগাতে চান, তাই এই নিয়মগুলো স্থির করেছেন।”
৫. তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা দেখে তোমার বাবা-মা এবং যিহোবার কেমন লাগবে? (হিতোপদেশ ২২:৬; ২৩:১৫, ২৪, ২৫)
৫ তোমার বাবা-মা বাইবেল থেকে যা শেখান এবং যে-পরামর্শগুলো দেন, তুমি যদি সেগুলো মেনে চল, তা হলে তারা অনেক খুশি হবেন। এর চেয়েও বড়ো বিষয় হল, যিহোবা অনেক খুশি হবেন এবং তাঁর সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:৬; ২৩:১৫, ২৪, ২৫.) যিহোয়াশ ছোটোবেলায় যে-ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তুমিও যদি তার মতো ভালো সিদ্ধান্ত নাও, তা হলে এটা কতই-না ভালো হবে!
৬. যিহোয়াদা মারা যাওয়ার পর যিহোয়াশ কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শুরু করেছিলেন এবং এর পরিণতি কী হয়েছিল? (২ বংশাবলি ২৪:১৭, ১৮)
৬ যিহোয়াশ যে-ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা থেকে শেখো। যিহোয়াদা মারা যাওয়ার পর যিহোয়াশ খারাপ ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ২৪:১৭, ১৮.) তিনি যিহূদার অধ্যক্ষদের কথা শুনতে শুরু করেছিলেন, যারা যিহোবাকে ভালোবাসত না। তিনি অনেক খারাপ কাজ করেছিলেন। তোমার কি মনে হয় না, সেই খারাপ ব্যক্তিদের কাছ থেকে যিহোয়াশকে অনেক দূরে থাকা উচিত ছিল? (হিতো. ১:১০) কিন্তু, তিনি সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন এবং তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। পরে যখন যিহোয়াশের পিসির ছেলে সখরিয় তাকে শোধরানোর চেষ্টা করেছিলেন, তখন যিহোয়াশ তাকেও হত্যা করিয়েছিলেন। (২ বংশা. ২৪:২০, ২১; মথি ২৩:৩৫) তিনি কতই-না এক খারাপ কাজ করেছিলেন! এটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না। যিহোয়াশ শুরুর দিকে ভালো কাজ করেছিলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, পরবর্তী সময়ে তিনি মিথ্যা উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন এবং একজন খুনিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে, তার নিজের সেবকেরাই তাকে হত্যা করেছিল। (২ বংশা. ২৪:২২-২৫) যিহোয়াশ যদি সবসময় যিহোবার কথা অনুযায়ী চলতেন এবং সেই লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন, যারা যিহোবাকে ভালোবাসত, তা হলে তার জীবন কতই-না ভালো হত! তুমি যিহোয়াশের কাছ থেকে কী শিখতে পার?
৭. তোমার কোন ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত?
৭ যিহোয়াশের সিদ্ধান্ত থেকে আমরা শিখতে পারি, আমাদের সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁকে খুশি করতে চায়। এই ধরনের বন্ধুরা আমাদের সঠিক কাজ করতে উৎসাহিত করবে। আর এমনটা নয় যে, সবসময় আমাদের সমবয়সি ব্যক্তিদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করতে হবে। আমরা আমাদের চেয়ে ছোটো অথবা বড়ো যে-কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারি। মনে আছে, যিহোয়াশের বন্ধু যিহোয়াদা তার চেয়ে কত বড়ো ছিলেন? যখন বন্ধু বাছাই করার বিষয়টা আসে, তখন চিন্তা কোরো, ‘আমার বন্ধুরা কি আমাকে যিহোবার উপর বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে? তারা কি আমাকে যিহোবার বাধ্য হতে উৎসাহিত করে? তারা কি যিহোবা এবং বাইবেলের সত্যগুলো সম্বন্ধে কথা বলে? তারা নিজেরা কি যিহোবার মান অনুযায়ী চলে? আমি যখন ভুল কিছু করি, তখন তারা কি আমাকে শোধরানোর চেষ্টা করে, না কি সেটাকে প্রশ্রয় দেয়?’ (হিতো. ২৭:৫, ৬, ১৭) সত্যি বলতে কী, তোমার বন্ধুরা যদি যিহোবাকে ভালো না বাসে, তা হলে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু, তোমার বন্ধুরা যদি যিহোবাকে ভালোবাসে, তা হলে তাদের ছেড়ে দিয়ো না। তারা সবসময় তোমাকে সাহায্য করবে।—হিতো. ১৩:২০.
৮. আমরা যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, তা হলে আমাদের কোন বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত?
৮ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি। কিন্তু, অনেকে এটা শুধুমাত্র লোকদের দেখানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। তারা যখন কিছু কেনে অথবা কিছু করে, তখন সেগুলোর ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেয়। তুমি যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাক, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করো, ‘কেন আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করি? আমি কি অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য তা করি না কি লোকদের দেখানোর জন্য তা করি, যেন তারা আমার প্রশংসা করে? অন্যেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যা পোস্ট করে, সেটা দেখে আমি কি তাদের মতোই চিন্তা করতে, কথা বলতে এবং কাজ করতে শুরু করেছি?’ ভাই নেথেন নর, যিনি পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য ছিলেন, একবার একটা ভালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। তা হলে, আপনারা কাউকেই খুশি করতে পারবেন না। যিহোবাকে সন্তুষ্ট করুন, আর তা হলেই যারা যিহোবাকে ভালোবাসে তাদের সকলকে আপনারা খুশি করবেন।”
সবসময় নম্র থাকো
৯. যিহোবার সাহায্যে উষিয় কী করতে পেরেছিলেন? (২ বংশাবলি ২৬:১-৫)
৯ উষিয়ের মতো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করো। উষিয়ের বয়স যখন কম ছিল, তখন তিনি নম্র ছিলেন এবং “সত্য ঈশ্বরকে ভয় করতে” শিখেছিলেন। উষিয় ৬৮ বছর বেঁচেছিলেন এবং প্রায় সারাজীবন ধরে যিহোবার আশীর্বাদ তার উপর ছিল। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ২৬:১-৫.) তিনি তার রাজ্যের অনেক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন আর জেরুসালেমকে রক্ষা করার জন্য কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিলেন। (২ বংশা. ২৬:৬-১৫) যিহোবার সাহায্যে উষিয় যা-কিছু করতে পেরেছিলেন, সেগুলোর জন্য তিনি নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছিলেন।—উপ. ৩:১২, ১৩.
১০. উষিয়ের প্রতি কী হয়েছিল?
১০ উষিয় যে-ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা থেকে শেখো। রাজা হওয়ার পর উষিয় সবসময় অন্যদের বলতেন, তাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। হয়তো এই কারণেই তিনি মনে করেছিলেন, তিনি যা-ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। একদিন তিনি ঈশ্বরের মন্দিরে ঢুকে এমন একটা কাজ করতে চেয়েছিলেন, যেটা করার অধিকার রাজাদের ছিল না। (২ বংশা. ২৬:১৬-১৮) তিনি ধূপবেদির উপর ধূপ জ্বালানোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রধান মহাযাজক অসরিয় যখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন, তখন উষিয় তার উপর খুব রেগে গিয়েছিলেন। যিহোবা উষিয়কে শাস্তি দিয়েছিলেন এবং তার কুষ্ঠ রোগ হয়ে গিয়েছিল। (২ বংশা. ২৬:১৯-২১) দুঃখের বিষয় হল, উষিয় বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করার যে-ভালো নাম অর্জন করেছিলেন, সেই নাম তিনি মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। উষিয় যদি সবসময় নম্র থাকতেন, তা হলে তার জীবন কতই-না ভালো হত!
১১. কোন বিষয়গুলো থেকে বোঝা যায়, আমরা নম্র কি না? (ছবিও দেখুন।)
১১ উষিয় যখন অনেক শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি এটা ভুলে গিয়েছিলেন যে, তার কাছে যা রয়েছে, সব ঈশ্বর তাকে দিয়েছেন। আমরা উষিয়ের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? আমাদের মনে রাখা উচিত, আজ আমাদের কাছে যা-কিছু রয়েছে অথবা যে-দায়িত্বগুলো রয়েছে, সেগুলো যিহোবা আমাদের দিয়েছেন। তাই, আমরা যা-কিছু করি, সেগুলো নিয়ে আমাদের বড়াই করা উচিত নয় বরং যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। b (১ করি. ৪:৭) আমাদের সবসময় নম্র হওয়া উচিত আর মনে রাখা উচিত যে, আমরা অসিদ্ধ এবং নিজেদের পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়তে পারে। একজন ভাই, যার বয়স ৬০-এর কোঠায়, বলেন: “আমি শিখেছি, আমাদের যখন কেউ কিছু বলে, তখন আমাদের খারাপ মনে করা উচিত নয়। আমি যখন ছোটোখাটো ভুল করে ফেলি এবং কেউ আমাকে শোধরানোর চেষ্টা করে, তখন আমি খারাপ মনে করি না বরং নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করি এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাই।” আসলে, আমরা যখন নম্র হই এবং যিহোবাকে ভয় করে চলি, তখন আমরা প্রকৃত আনন্দ পাই।—হিতো. ২২:৪.
ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হও
১২. যোশিয় যখন কিশোরবয়সি ছিলেন, তখন থেকেই তিনি কীভাবে যিহোবার খোঁজ করেছিলেন? (২ বংশাবলি ৩৪:১-৩)
১২ যোশিয়ের মতো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করো। যোশিয় যখন কিশোরবয়সি ছিলেন, তখন থেকেই তিনি যিহোবাকে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তার পক্ষে এইসমস্ত কিছু করা হয়তো সহজ ছিল না। তার আশেপাশে এমন লোকেরা থাকত, যারা মিথ্যা উপাসনা করত। এটাকে দূর করার জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন ছিল আর যোশিয় ঠিক তা-ই করেছিলেন! যোশিয়ের বয়স যখন ২০ বছরেরও কম ছিল, তখন থেকেই তিনি পুরো দেশ থেকে মিথ্যা উপাসনাকে দূর করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।—পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৪:১-৩.
১৩. তুমি যদি ঈশ্বরের কাছে তোমার জীবন উৎসর্গ কর, তা হলে প্রতিদিন তুমি কী করার চেষ্টা করবে?
১৩ তোমার বয়স কি অনেক কম? তুমি অনেক ছোটো হলেও যোশিয়ের মতো হতে পার। কীভাবে? তুমি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারো। তুমি আরও ভালোভাবে জানতে পারো যে, যিহোবা কেমন ঈশ্বর এবং তাঁর মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে। এটা করার ফলে তুমি তাঁর কাছে তোমার জীবন উৎসর্গ করতে চাইবে। যারা ঈশ্বরের কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করে, তারা প্রতিদিন কী করার চেষ্টা করে? লুক ১৪ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সে যখন তার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিল, তখন সে স্থির করেছিল, “এখন থেকে আমি সবসময় যিহোবাকে আমার জীবনে প্রথম স্থান দেব এবং তাঁকে খুশি করার চেষ্টা করব।” (মার্ক ১২:৩০) তুমিও যদি এমনটা করতে চাও, তা হলে তুমি প্রচুর আশীর্বাদ পাবে।
১৪. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো, কীভাবে কিছু অল্পবয়সি রাজা যোশিয়ের মতো হওয়ার চেষ্টা করে?
১৪ যে-অল্পবয়সিরা যিহোবার সেবা করে, তাদের আজ কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়? যোহানের উদাহরণের উপর মনোযোগ দাও, যে ১২ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সে বলে যে, তার ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা তাকে ই-সিগারেট খাওয়ার জন্য জোর করে। কীভাবে সে তাদের প্রত্যাখ্যান করে? সে সবসময় নিজেকে মনে করায়, ই-সিগারেট খেলে (ভেপিং করলে) তার স্বাস্থ্য কতটা খারাপ হয়ে যাবে এবং যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বও ভেঙে যাবে। এবার রেচেলের উদাহরণের উপর মনোযোগ দাও, যে ১৪ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। স্কুলে তার সামনে যে-সমস্যাগুলো আসে, কীভাবে সে সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারে? সে বলে, “আমি এমন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করি, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা এবং বাইবেলের উপর আমার মনোযোগ বজায় থাকবে। যেমন, আমি যখন ইতিহাসের বিষয়ে কিছু পড়ি, তখন আমি বাইবেলের কোনো বিবরণ কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী মনে করার চেষ্টা করি। অথবা আমার সঙ্গে কেউ যখন কোনো বিষয়ে কথা বলে, তখন আমি চিন্তা করি, আমি তাকে বাইবেলের কোন পদটা দেখাতে পারি।” অল্পবয়সিরা, তোমাদের সামনে হয়তো সেই সমস্যাগুলো আসবে না, যেগুলো রাজা যোশিয়ের সামনে এসেছিল। তারপরও, তোমরা প্রজ্ঞাবান হতে পার এবং যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পার। বর্তমানে, তুমি যদি এই ধরনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে শেখ, তা হলে ভবিষ্যতেও তুমি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে।
১৫. কেন যোশিয় বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করতে পেরেছিলেন? (২ বংশাবলি ৩৪:১৪, ১৮-২১)
১৫ যোশিয় যখন বড়ো হয়েছিলেন, তখন তিনি মন্দির মেরামতের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে “মোশির মাধ্যমে দেওয়া যিহোবার ব্যবস্থার পুস্তক” খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তাকে যখন সেই ব্যবস্থার পুস্তক পড়ে শোনানো হয়েছিল, তখন সেটার কথাগুলো তার হৃদয় স্পর্শ করেছিল আর তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৪:১৪, ১৮-২১.) তুমি কি প্রতিদিন বাইবেল পড়তে চাও? তুমি যদি প্রতিদিন বাইবেল পড়ে থাক, তা হলে তোমার কেমন লাগছে? তুমি কি সেই পদগুলো লিখে রাখ, যেগুলো তোমাকে সাহায্য করতে পারে? লুকের যে-বিষয়গুলো ভালো লাগে, সেগুলো সে একটা ডাইরিতে লিখে রাখে। তুমি কি বাইবেলের পদগুলো ভালো করে মনে রাখার জন্য এবং সেগুলো থেকে শেখার জন্য আরও কিছু করতে চাও? যত ভালোভাবে তুমি বাইবেলে লেখা কথাগুলো বুঝতে পারবে এবং সেগুলোকে ভালোবাসবে, ততই তুমি যিহোবার সেবা করতে চাইবে। আর যোশিয়ের মতো তোমারও ঈশ্বরের বাক্যে লেখা কথাগুলো মেনে চলতে ইচ্ছে করবে।
১৬. কেন যোশিয় একটা বড়ো ভুল করেছিলেন আর সেই ভুল থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৬ যোশিয় যে-ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা থেকে শেখো। যোশিয়ের যখন ৩৯ বছর বয়স ছিল, তখন তিনি একটা বড়ো ভুল করেছিলেন। যোশিয় যিহোবার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার পরিবর্তে নিজের উপর নির্ভর করেছিলেন। (২ বংশা. ৩৫:২০-২৫) এর পরিণতি কী হয়েছিল? তাকে নিজের জীবন হারাতে হয়েছিল। এখান থেকে আমরা একটা শিক্ষা লাভ করতে পারি। আমরা যত বড়োই হয়ে যাই না কেন কিংবা যত দীর্ঘসময় ধরেই বাইবেল অধ্যয়ন করে থাকি না কেন, আমাদের সবসময় যিহোবার চিন্তাধারা জানার চেষ্টা করে চলতে হবে। আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত, যাতে তিনি আমাদের সঠিক পথ দেখান। এ ছাড়া, আমাদের তাঁর বাক্য বাইবেল নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত এবং অভিজ্ঞ খ্রিস্টানদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমরা যখন এমনটা করব, তখন আমরা হয়তো কোনো বড়ো ভুল করব না এবং আমরা আনন্দে থাকব।—যাকোব ১:২৫.
অল্পবয়সিরা, তোমরা আনন্দে থাকতে পার
১৭. আমরা যিহূদার তিন জন রাজার কাছ থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখতে পারি?
১৭ অল্পবয়সিরা জীবনে অনেক কিছু করতে পারে। যিহোয়াশ, উষিয় এবং যোশিয়ের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, অল্পবয়সিরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং এমনভাবে জীবনযাপন করতে পারে, যেটা দেখে যিহোবা খুশি হন। এই অল্পবয়সিদের মতো তুমিও তোমার জীবনে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পার। এটা ঠিক যে, তারা তিন জনই কিছু ভুল করেছিলেন, যেটার পরিণতি তাদের ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু, তোমরা খেয়াল রাখতে পারো যেন তোমাদের দ্বারা এইরকম ভুল না হয়। তোমরা যদি এই বিষয়গুলো মনে রাখ, তা হলে তোমাদের জীবন সুখের হবে।
১৮. কোন ব্যক্তিদের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, আমরা জীবনে আনন্দে থাকতে পারি?
১৮ বাইবেলে এমন অনেক অল্পবয়সির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল। আর এই কারণে তারা আনন্দে জীবনযাপন করতে পেরেছিল। দায়ূদ হলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি যখন ছোটো ছিলেন, তখন তিনি যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি একজন রাজা হয়েছিলেন এবং তাঁর লোকদের উপর বিশ্বস্তভাবে শাসন করেছিলেন। তিনিও অনেক ভুল করেছিলেন, তারপরও যিহোবা তাকে তাঁর একজন বিশ্বস্ত সেবক বলে উল্লেখ করেছিলেন। (১ রাজা. ৩:৬; ৯:৪, ৫; ১৪:৮) তাই, তুমি দায়ূদের জীবনের বিষয়ে এবং তিনি যেভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন, সেই বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারো। তা করলে, তোমারও বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করতে ইচ্ছে করবে। অথবা তুমি মার্ক কিংবা তীমথিয়ের বিষয়েও অধ্যয়ন করতে পারো। তারাও কম বয়স থেকে যিহোবার সেবা করতে শুরু করেছিলেন এবং বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করে গিয়েছিলেন। এতে যিহোবা খুশি হয়েছিলেন এবং তারাও খুশি হয়েছিলেন।
১৯. তুমি কীভাবে জীবন কাটাতে পার?
১৯ তুমি আজ যা-কিছু কর এবং যে-সিদ্ধান্ত নাও, সেটার উপর নির্ভর করবে, পরবর্তী সময়ে তোমার জীবন কেমন হবে। তাই, নিজের উপর নয় বরং যিহোবার উপর নির্ভর করো। (হিতো. ২০:২৪) তিনি তোমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন। এরপর, তুমি আনন্দে থাকবে এবং এক উত্তম জীবন কাটাতে পারবে। মনে রেখো, তুমি যিহোবার জন্য যা-কিছু কর, সেটা তিনি খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তাই তোমার কী মনে হয়, যিহোবাকে সেবা করার চেয়ে জীবনে আর কি কোনো ভালো কাজ হতে পারে?
গান ১৪৪ থাকলে স্থির পাবে পুরস্কার!
a অল্পবয়সিরা, যিহোবা জানেন অনেকসময় তোমাদের সামনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে, যখন তোমাদের পক্ষে সঠিক কাজ করা কঠিন বলে মনে হতে পারে। এইরকম সময়ে তোমরা সঠিক সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে পার, যাতে যিহোবা তা দেখে খুশি হন এবং তোমাদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব বজায় থাকে? এই প্রবন্ধে আমরা এমন তিনটে ছেলের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেব, যারা পরবর্তী সময়ে যিহূদার রাজা হয়েছিলেন। লক্ষ কোরো, তাদের সিদ্ধান্ত থেকে তোমরা কী শিখতে পার।
b jw.org ওয়েবসাইটে “How Important Is Online Popularity?” শিরোনামের অনলাইন প্রবন্ধে “Beware of the ‘Humble Brag’” বাক্সটা দেখুন।