সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪১

পিতরের দুটো চিঠি থেকে যে-শিক্ষা লাভ করা যায়

পিতরের দুটো চিঠি থেকে যে-শিক্ষা লাভ করা যায়

“আমি সবসময় এই বিষয়গুলো তোমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি।”—২ পিতর ১:১২.

গান ১২৭ যে-ধরনের ব্যক্তি আমার হওয়া উচিত

সারাংশ a

১. প্রেরিত পিতর মারা যাওয়ার কিছুসময় আগে যিহোবা তাকে কোন কাজ দিয়েছিলেন?

 প্রেরিত পিতর অনেক বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন। তিনি যিশুর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেছিলেন। তিনিই প্রথম ন-যিহুদিদের কাছে প্রচার করেছিলেন এবং পরে পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবেও সেবা করেছিলেন। তার জীবনের শেষের দিকে যখন তার মনে হচ্ছিল যে, তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না, তখন যিহোবা তাকে একটা কাজ দিয়েছিলেন। ৬২-৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বর পিতরকে দিয়ে দুটো চিঠি লিখিয়েছিলেন, যেগুলো বর্তমানে ১ পিতর এবং ২ পিতর নামে পরিচিত। এই চিঠিগুলোতে তিনি এই আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, তার মৃত্যুর পরও খ্রিস্টানেরা ক্রমাগত সেগুলো থেকে সাহায্য পাবে।—২ পিতর ১:১২-১৫.

২. পিতর যে-চিঠিগুলো লিখেছিলেন, সেগুলো সেইসময়কার খ্রিস্টানদের জন্য কেন উপকারজনক ছিল?

পিতর এই চিঠিগুলো সেইসময় লিখেছিলেন, যখন খ্রিস্টানেরা ‘বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে দুঃখ ভোগ করছিল।’ (১ পিতর ১:৬) মন্দ লোকেরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে মিথ্যা শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল এবং অন্যদের খারাপ আচার-আচরণ করার জন্য উৎসাহিত করছিল। (২ পিতর ২:১, ২, ১৪) আর যে-খ্রিস্টানেরা জেরুসালেমে ছিল, তারা খুব শীঘ্রই “সমস্ত কিছুর শেষ” দেখতে যাচ্ছিল অর্থাৎ রোমীয় সৈন্যেরা সেই নগর এবং যিহুদি বিধিব্যবস্থাকে (মন্দির) ধ্বংস করতে যাচ্ছিল। (১ পিতর ৪:৭) পিতরের এই চিঠিগুলো থেকে খ্রিস্টানেরা নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পেরেছিল, তারা যে-সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে এবং ভবিষ্যতে যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হবে, কীভাবে তারা সেগুলোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। b

৩. কেন আমাদের পিতরের লেখা চিঠিগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

এটা ঠিক যে, পিতর এই চিঠিগুলো প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, তবে যিহোবা তাঁর বাক্যেও এগুলো অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন। তাই, বর্তমানে আমরা এই চিঠিগুলো থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪) আজ আমরা এমন এক জগতে আছি, যেখানে খারাপ আচার-আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এই কারণে যিহোবার সেবা করে চলা আমাদের জন্যও কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া, খুব শীঘ্রই আমরা এমন একটা ক্লেশের মুখোমুখি হব, যেটা জেরুসালেম নগর এবং এর মন্দির ধ্বংসের চেয়ে অনেক বড়ো হবে। পিতরের দুটো চিঠি থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি: (১) এগুলোর সাহায্যে আমরা সবসময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখতে পারব যে, যিহোবার দিন খুবই কাছে, (২) আমরা লোকভয় কাটিয়ে উঠতে পারব এবং (৩) আমরা একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসতে পারব। এই বিষয়গুলো থেকে প্রাচীনেরাও যিহোবার পালের ভালোভাবে দেখাশোনা করার জন্য সাহায্য লাভ করতে পারেন।

যিহোবার দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করুন

৪. দ্বিতীয় পিতর ৩:৩, ৪ পদ অনুযায়ী কোন কারণে আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়তে পারে?

আমাদের আশেপাশের বেশিরভাগ লোক বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর উপর বিশ্বাস করে না। এই লোকেরা হয়তো আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করে কারণ আমরা অনেক বছর ধরে এটা বলে আসছি যে, শেষ খুবই কাছে। আবার কিছু লোক আমাদের এইরকম কথাও বলে থাকে, শেষ কখনোই আসবে না। (পড়ুন, ২ পিতর ৩:৩, ৪.) যদি ঘরে ঘরে প্রচার করার সময়ে কোনো ব্যক্তি অথবা আমাদের সহকর্মী কিংবা পরিবারের সদস্যেরা এইরকম কথা বলে, তা হলে আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। প্রেরিত পিতর বুঝিয়েছিলেন যে, এই ক্ষেত্রে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে।

৫. এই জগতের শেষ আসার অপেক্ষা করার সময়ে কীভাবে আমরা এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারি? (২ পিতর ৩:৮, ৯)

কিছু লোক মনে করতে পারে, যিহোবা এই মন্দ জগতের শেষ নিয়ে আসতে দেরি করছেন। তবে, পিতরের কথাগুলো আমাদের এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যখন সময়ের বিষয়টা আসে, তখন যিহোবার চিন্তাধারা এবং মানুষের চিন্তাধারার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। (পড়ুন, ২ পিতর ৩:৮, ৯.) যিহোবার কাছে ১,০০০ বছর এক দিনের সমান। তিনি ধৈর্য ধরেন এবং চান না, কেউ ধ্বংস হয়ে যাক। কিন্তু, যখন তাঁর দিন আসবে, তখন সমস্ত দুষ্ট লোক ধ্বংস হয়ে যাবে। চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো এক সুযোগ যে, শেষ আসার আগে আমাদের কাছে যতটা সময় বাকি আছে, সেটা আমরা সমস্ত জাতির লোকের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি।

৬. কীভাবে আমরা যিহোবার দিন ‘আসার অপেক্ষায় থাকতে’ পারি? (২ পিতর ৩:১১, ১২)

পিতর আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন আমরা যিহোবার দিন ‘আসার অপেক্ষায় থাকি।’ (পড়ুন, ২ পিতর ৩:১১, ১২.) কীভাবে আমরা তা করতে পারি? সম্ভব হলে আমরা প্রতিদিন সেই আশীর্বাদগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি, যেগুলো আমরা নতুন জগতে লাভ করব। কল্পনা করুন, আপনি একটা খোলামেলা জায়গায় রয়েছেন, যেখান বিশুদ্ধ বাতাস বইছে আর আপনি বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছেন এবং পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন। আপনি সেই মৃত প্রিয়জনদের স্বাগত জানাচ্ছেন, যাদের পুনরুত্থিত করা হয়েছে এবং যারা অনেক বছর আগে বেঁচে ছিল, তাদের শেখাচ্ছেন যে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। এগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে আপনি অধীর আগ্রহে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন এবং নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে, শেষ খুবই কাছে। এভাবে ভবিষ্যতের বিষয়ে ‘আগে থেকে জানলে’ আমরা মিথ্যা শিক্ষকদের দ্বারা ‘ভ্রান্ত হব না।’—২ পিতর ৩:১৭.

লোকভয় কাটিয়ে উঠুন

৭. আমরা যদি লোকদের ভয় পাই, তা হলে কী হতে পারে?

আমরা জানি, যিহোবার দিন খুবই কাছে। তাই, আমরা যতবেশি সম্ভব লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে চাই। কিন্তু, অনেকসময় আমরা হয়তো অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করি। কারণ আমরা হয়তো মনে করি, লোকেরা আমাদের বিষয়ে কী ভাববে অথবা তারা আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে। পিতরের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছিল। যে-রাতে যিশুর বিচার চলছিল, সেই রাতে পিতর এটা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন যে, তিনি যিশুর একজন শিষ্য। আর এমনকী তিনি অনেক বার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন। (মথি ২৬:৬৯-৭৫) কিন্তু পরে, তিনি তার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং আস্থার সঙ্গে বলতে পেরেছিলেন: “লোকেরা যেটাতে ভয় পায়, তোমরা সেটাতে ভয় পেয়ো না কিংবা তোমরা দুশ্চিন্তা কোরো না।” (১ পিতর ৩:১৪) পিতরের কথাগুলো থেকে আমরা আশ্বাস পাই যে, আমরাও আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারব।

৮. কীভাবে আমরা আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি? (১ পিতর ৩:১৫)

আপনি যদি লোকদের ভয় পান, তা হলে আপনি কীভাবে এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেন? পিতর বলেছিলেন: “তোমরা তোমাদের হৃদয়ে স্বীকার করো, খ্রিস্টই হলেন প্রভু এবং তিনি পবিত্র।” (পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৫.) এটা করার জন্য আমরা চিন্তা করতে পারি, আমাদের প্রভু ও রাজা খ্রিস্ট যিশু আজ কোন পদমর্যাদায় রয়েছেন এবং তাঁর কতটা শক্তি রয়েছে। আপনার যদি কখনো অন্যদের কাছে সুসমাচার জানাতে ভয় লাগে, তা হলে আমাদের রাজার বিষয়ে চিন্তা করুন। মনের চোখে কল্পনা করুন, যিশু স্বর্গে শাসন করছেন এবং তাঁর চারিদিকে অসংখ্য স্বর্গদূত রয়েছেন। এও স্মরণ করুন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব” তাঁকে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি ‘এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত সবসময় আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন।’ (মথি ২৮:১৮-২০) পিতর আরও বলেছিলেন, আমরা যা বিশ্বাস করি, সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমরা যেন ‘সবসময় প্রস্তুত থাকি।’ আপনি কি আপনার কাজের জায়গায়, স্কুলে অথবা অন্য কোথাও সুযোগ খুঁজে সাক্ষ্য দিতে চান? আগে থেকে চিন্তা করুন, আপনি কখন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাদের কী বলবেন। সাহস চেয়ে প্রার্থনা করুন এবং নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা আপনার ভয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন।—প্রেরিত ৪:২৯.

“একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসো”

পিতর পৌলের দেওয়া পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন এবং নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন। পিতরের লেখা দুটো চিঠি থেকে আমরা শিখি যে, আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসা উচিত (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. কীভাবে পিতর একবার ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

পিতর শিখেছিলেন যে, তাকে ভাই-বোনদের ক্রমাগত ভালোবাসতে হবে। যিশু একবার তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদের এক নতুন আজ্ঞা দিচ্ছি, তোমরা পরস্পরকে প্রেম করো; আমি যেমন তোমাদের প্রেম করেছি, তেমনই তোমরাও পরস্পরকে প্রেম করো।” (যোহন ১৩:৩৪) সেই সময়ে পিতরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, পরে একবার তিনি যিহুদি খ্রিস্টানদের ভয়ে ন-যিহুদি খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি যা করেছিলেন, প্রেরিত পৌল সেটাকে ‘ভণ্ডামি’ বলেছিলেন। (গালা. ২:১১-১৪) পৌল যখন তাকে সংশোধন করেছিলেন, তখন পিতর তা মেনে নিয়েছিলেন এবং নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন। পরে, পিতর তার দুটো চিঠিতে এই বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন যে, ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে শুধু ভালোবাসা থাকাই যথেষ্ট নয়, সেটা কাজের মাধ্যমেও দেখানো উচিত।

১০. কখন আমরা “নিষ্কপট ভ্রাতৃপ্রেম” দেখাতে পারব? ব্যাখ্যা করুন। (১ পিতর ১:২২)

১০ পিতর বলেছিলেন যেন আমাদের মধ্যে “নিষ্কপট ভ্রাতৃপ্রেম” থাকে। (পড়ুন, ১ পিতর ১:২২.) এই ধরনের প্রেম দেখানো তখনই সম্ভব, যখন আমরা ‘সত্যের প্রতি বাধ্য’ থাকব। এই সত্যের একটা শিক্ষা হল, “ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) আমরা যদি মণ্ডলীতে কিছু ভাই-বোনের প্রতি ভালোবাসা দেখাই আর কিছু ভাই-বোনের প্রতি ভালোবাসা না দেখাই, তা হলে আমরা ভালোবাসার বিষয়ে যিশুর আজ্ঞার বাধ্য হচ্ছি না। এটা ঠিক যে, আমরা কিছু ভাই-বোনকে অন্য ভাই-বোনদের চেয়ে একটু বেশি ভালোবাসি, যেমনটা যিশুও ভালোবাসতেন। (যোহন ১৩:২৩; ২০:২) কিন্তু, পিতর আমাদের এই বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, সমস্ত খ্রিস্টানের প্রতি আমাদের “ভ্রাতৃপ্রেম” দেখাতে হবে কারণ আমরা সবাই এক পরিবারের অংশ।—১ পিতর ২:১৭.

১১. ‘একে অন্যকে হৃদয় থেকে গভীরভাবে ভালোবাসার’ মানে কী?

১১ পিতর আমাদের অনুরোধ করেছেন যেন আমরা ‘একে অন্যকে হৃদয় থেকে গভীরভাবে ভালোবাসি।’ পিতর যখন বলেছিলেন, “গভীরভাবে ভালোবেসো,” তখন তিনি আসলে বোঝাতে চেয়েছিলেন, যখন আমাদের কারো প্রতি ভালোবাসা দেখাতে ইচ্ছে করে না, তখনও যেন আমরা তার প্রতি ভালোবাসা দেখাই। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো ভাই হয়তো আমাদের মনে আঘাত দিয়েছেন। এইরকম ক্ষেত্রে আমরা চিন্তা করতে পারি, তার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর পরিবর্তে তার সঙ্গে আমরা সেরকমই আচরণ করব। তবে, পিতর যিশুর কাছ থেকে শিখেছিলেন যে, আমরা যখন প্রতিশোধ নিই, তখন যিহোবা খুশি হন না। (যোহন ১৮:১০, ১১) পিতর লিখেছিলেন: “আঘাতের পরিশোধে কাউকে আঘাত কোরো না অথবা অপমানের পরিশোধে কাউকে অপমান কোরো না। বরং, তাদের প্রতি ভালো কাজ কোরো।” (১ পিতর ৩:৯) আমরা যখন অন্যদের গভীরভাবে ভালোবাসি, তখন আমরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গেও ভালো আচরণ করি, যারা হয়তো আমাদের মনে আঘাত দিয়েছে।

১২. (ক) আমরা যখন ভাই-বোনদের গভীরভাবে ভালোবাসব, তখন আমরা আর কী করার জন্য প্রস্তুত থাকব? (খ) একতার বহুমূল্য উপহারকে বজায় রাখুন শিরোনামের ভিডিওতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, সেই অনুযায়ী আপনি কী করতে চান?

১২ পিতর তার প্রথম চিঠিতে এইরকমই কিছু বিষয়ে বলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসো।” এই ধরনের ভালোবাসা শুধুমাত্র কিছু পাপকে নয় বরং “অসংখ্য পাপ ঢেকে দেয়।” (১ পিতর ৪:৮) পিতরের হয়তো ক্ষমা করার বিষয়ে সেই কথাগুলো মনে পড়ে গিয়েছিল, যেগুলো যিশু তাকে অনেক বছর আগে শিখিয়েছিলেন। সেইসময় পিতর বলেছিলেন যে, তিনি তার ভাইকে “সাত বার” পর্যন্ত ক্ষমা করতে পারেন। তার হয়তো মনে হয়েছিল, তিনি অনেক বড়ো মনের মানুষ। কিন্তু, যিশু তাকে এবং আমাদের সবাইকে বলেছেন যেন আমরা “৭৭ বার” ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকি অর্থাৎ আমরা যেন ক্ষমা করার বিষয়ে কোনো সীমা স্থির না করি। (মথি ১৮:২১, ২২) আপনার যদি এই পরামর্শ মেনে চলা কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে হতাশ হবেন না! যিহোবার সমস্ত অসিদ্ধ উপাসকেরই কোনো-না-কোনো সময়ে অন্যদের ক্ষমা করা কঠিন বলে মনে হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, কেউ যদি আপনার মনে আঘাত দিয়ে থাকে, তা হলে তাকে ক্ষমা করার জন্য আপনার পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, তা করুন এবং তার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করুন। c

প্রাচীনেরা, ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করুন

১৩. কেন প্রাচীনদের জন্য ভাই-বোনদের দেখাশোনা করা কঠিন হতে পারে?

১৩ পিতর হয়তো সেই কথাটা কখনো ভুলতে পারেননি, যেটা যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর তাকে বলেছিলেন: “আমার মেষশাবকদের পালন করো।” (যোহন ২১:১৬) আপনি যদি একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি জানেন, আপনাকেও এই পরামর্শ মেনে চলতে হবে। কিন্তু, একজন প্রাচীনের হয়তো এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার জন্য সময় বের করা কঠিন বলে মনে হয়। প্রাচীনদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ, তারা যেন সবচেয়ে প্রথমে নিজের পরিবারের দেখাশোনা করেন, তাদের ভরণ-পোষণ জোগান, তাদের সঙ্গে সময় কাটান, তাদের প্রতি প্রেম দেখান এবং যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সাহায্য করেন। এ ছাড়া, তাদের প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিতে হয় এবং সভা ও সম্মেলনগুলোতে তারা যে-অ্যাসাইনমেন্ট পান, সেটার জন্য তাদের প্রস্তুতি নিতে হয় আর তা তুলে ধরতে হয়। কিছু প্রাচীন ‘হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি’-র সদস্য এবং কিছু প্রাচীন ‘স্থানীয় নকশা/নির্মাণ কমিটি’-তেও সাহায্য করে থাকেন। সত্যিই, প্রাচীনদের অনেক কাজ করতে হয়!

প্রাচীনদের কাছে অনেক কাজ থাকে, তারপরও তারা মেষপালকের মতো ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করার জন্য সমস্ত কিছু করেন (১৪-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা প্রাচীনদের সাহায্য করতে পারে? (১ পিতর ৫:১-৪)

১৪ পিতরও একজন প্রাচীন ছিলেন এবং তিনি অন্যান্য প্রাচীনকে অনুরোধ করেছিলেন: “ঈশ্বরের যে-পাল আছে, সেই পালের দেখাশোনা করো।” (পড়ুন, ১ পিতর ৫:১-৪.) আপনি যদি একজন প্রাচীন হয়ে থাকেন, তা হলে আমরা জানি যে, আপনি ভাই-বোনদের ভালোবাসেন এবং একজন মেষপালকের মতো তাদের দেখাশোনা করতে চান। কিন্তু অনেকসময় আপনার মনে হতে পারে, আপনার কাছে এত কাজ রয়েছে অথবা আপনি এতটা ক্লান্ত যে, আপনি এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এই ক্ষেত্রে আপনি কী করতে পারেন? আপনার মনে যে-উদ্‌বিগ্নতাগুলো রয়েছে, সেগুলো যিহোবাকে বলুন। পিতর লিখেছিলেন: “যদি কেউ সেবা করে, তা হলে সে ঈশ্বরের দেওয়া শক্তির উপর নির্ভর করেই তা করুক।” (১ পিতর ৪:১১) আপনার ভাই-বোনেরা হয়তো এমন সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে, যেগুলো এই জগতে পুরোপুরিভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে রাখুন, আপনি ভাই-বোনদের জন্য যতটা করতে পারেন, সেটার চেয়েও অনেক বেশি “প্রধান মেষপালক” যিশু খ্রিস্ট তাদের জন্য করতে পারেন। তিনি বর্তমানে তাদের সাহায্য করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে নতুন জগতেও সাহায্য করবেন। আর এও মনে রাখুন, যিহোবা শুধু এটাই চান যেন প্রাচীনেরা ভাই-বোনদের ভালোবাসেন, মেষপালকের মতো তাদের দেখাশোনা করেন এবং “পালের আদর্শ” হন।

১৫. একজন প্রাচীন কীভাবে ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করেন? (ছবিও দেখুন।)

১৫ ভাই উইলিয়াম অনেক বছর ধরে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন। তিনি জানেন, ভাই-বোনদের সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হয়েছিল, তখন তিনি এবং তার মণ্ডলীর অন্য প্রাচীনেরা স্থির করেছিলেন যে, তারা প্রতি সপ্তাহে তাদের পরিচর্যা দলের প্রত্যেকের সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করবেন। তিনি বলেন, কেন তারা এমনটা করেছিলেন: “অনেক ভাই-বোন ঘরে একা থাকত। তাই, তারা সহজেই হতাশ হয়ে পড়তে পারত।” যখন কোনো ভাই কিংবা বোন উদ্‌বিগ্নতার মধ্য দিয়ে যান, তখন ভাই উইলিয়াম মন দিয়ে তার কথা শোনেন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন, তার কোন কোন উদ্‌বিগ্নতা রয়েছে এবং কীভাবে তিনি তাকে সাহায্য করতে পারেন। এরপর, তিনি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে কোনো প্রকাশনা অথবা ভিডিও খোঁজেন, যেটার মাধ্যমে তিনি তাকে উৎসাহিত করতে পারেন। তিনি বলেন: “বর্তমানে পালকীয় সাক্ষাৎ করা আগের চেয়ে আরও জরুরি হয়ে গিয়েছে। আমরা যেমন লোকদের যিহোবা সম্বন্ধে শেখানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করি, তেমনই ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করার জন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হবে, যাতে ঈশ্বরের প্রত্যেক মেষ সত্যে স্থির থাকে।”

আপনাকে পুরোপুরিভাবে প্রশিক্ষিত করার জন্য যিহোবাকে সুযোগ দিন

১৬. পিতরের চিঠিগুলো থেকে আমরা যা শিখেছি, কীভাবে সেগুলো কাজে লাগাতে পারি?

১৬ এই প্রবন্ধে আমরা পিতরের লেখা চিঠিগুলো থেকে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তা নিয়ে অধ্যয়ন করার সময়ে আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, আপনাকে কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। যেমন, আপনি কি নতুন জগতে পাওয়া আশীর্বাদগুলো মনের চোখে দেখার কথা চিন্তা করেছেন? আপনি কি কাজের জায়গায়, স্কুলে অথবা অন্য কোথাও সুযোগ খুঁজে সাক্ষ্য দেওয়ার এক লক্ষ্য স্থাপন করেছেন? আপনি কি অন্য কোনো উপায়ে ভাই-বোনদের গভীরভাবে ভালোবাসতে চান? প্রাচীনেরা, আপনারা কি স্থির করেছেন যে, আপনারা আনন্দের সঙ্গে এবং তৎপরতার সঙ্গে ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করবেন? এভাবে নিজেকে পরীক্ষা করার মাধ্যমে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন, আপনাকে কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। তবে, নিরুৎসাহিত হবেন না! ‘প্রভু সদয়’ আর তিনি আপনাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবেন। (১ পিতর ২:৩) পিতর আমাদের এই আশ্বাস দিয়েছেন: “ঈশ্বর নিজে তোমাদের পুরোপুরিভাবে প্রশিক্ষিত করবেন। তিনি তোমাদের দৃঢ় করবেন, সবল করবেন এবং শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাবেন।”—১ পিতর ৫:১০.

১৭. আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলি এবং ক্রমাগত তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিই, তা হলে আমরা কোন আশীর্বাদ লাভ করব?

১৭ একবার পিতরের মনে হয়েছিল, তিনি ঈশ্বরের পুত্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার যোগ্য নন। (লূক ৫:৮) কিন্তু, তিনি হাল ছেড়ে দেননি। যিহোবা ও যিশুর সাহায্যে তিনি বিশ্বস্তভাবে সেবা করে গিয়েছিলেন। এইজন্য যিহোবা পিতরকে ‘আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্তা যিশু খ্রিস্টের অনন্তকালীন রাজ্যে সগৌরবে প্রবেশ করার অধিকার দিয়েছেন।’ (২ পিতর ১:১১) যিহোবা তাকে কতই-না বড়ো এক পুরস্কার দিয়েছেন! আপনি যদি হাল ছেড়ে না দেন, পিতরের মতো বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলেন এবং তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন, তা হলে তিনি আপনাকেও অনন্তজীবন দেবেন। আপনি ‘আপনার বিশ্বাসের ফলে পরিত্রাণ লাভ করবেন।’—১ পিতর ১:৯.

গান ১০৬ প্রেম দেখাতে শেখা

a এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব যে, কীভাবে পিতরের লেখা চিঠিগুলো আমাদের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে প্রাচীনেরা মেষপালকের মতো তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

b এমনটা মনে করা হয়, ৬৬ খ্রিস্টাব্দে জেরুসালেমের উপর আক্রমণ হওয়ার আগেই প্যালেস্টাইনের খ্রিস্টানেরা পিতরের লেখা দুটো চিঠি পেয়েছিল।

c jw.org ওয়েবসাইটে একতার বহুমূল্য উপহারকে বজায় রাখুন শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।