সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪০

পিতরের মতো হোন, হাল ছেড়ে দেবেন না!

পিতরের মতো হোন, হাল ছেড়ে দেবেন না!

“প্রভু, আমি আপনার কাছে থাকার যোগ্য নই, কারণ আমি পাপী।”—লূক ৫:৮.

গান ৩৮ তিনি সবল করবেন তোমায়

সারাংশ a

১. জালে যখন প্রচুর মাছ ধরা পড়েছিল, তখন তা দেখে পিতরের কেমন লেগেছিল?

 পিতর সারারাত পরিশ্রম করেছিলেন, কিন্তু একটাও মাছ ধরতে পারেননি। তারপরও যিশু তাকে বলেছিলেন, “নৌকাটা গভীর জলে নিয়ে চলো এবং মাছ ধরার জন্য সেখানে তোমার জাল ফেলো।” (লূক ৫:৪) পিতরের মনে হয়েছিল, একটাও মাছ ধরা পড়বে না। তারপরও, তিনি যিশুর কথা শুনেছিলেন। সেইসময় জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছিল, এর ফলে জাল ছিঁড়ে যাচ্ছিল। এই অলৌকিক কাজ দেখে পিতর এবং তার সঙ্গীরা “অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে” গিয়েছিল। তখন পিতর যিশুকে বলেছিলেন, “প্রভু, আমি আপনার কাছে থাকার যোগ্য নই, কারণ আমি পাপী।” (লূক ৫:৬-৯) পিতরের হয়তো মনে হয়েছিল, তিনি যিশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকারও যোগ্য নন।

২. কেন পিতরের উদাহরণের উপর মনোযোগ দেওয়া ভালো?

পিতর সঠিক কথাই বলেছিলেন যে, তিনি একজন “পাপী।” বাইবেল থেকে জানা যায়, অনেক বার তিনি এমন কিছু বলেছিলেন কিংবা এমন কিছু করেছিলেন, যেগুলোর জন্য তিনি পরে আপশোস করেছিলেন। আপনিও কি কখনো কখনো পিতরের মতো অনুভব করেন? আপনার মধ্যে কি এমন কোনো দুর্বলতা রয়েছে, যেটা আপনি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দীর্ঘসময় ধরে পরিশ্রম করে চলছেন? যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে আপনি পিতরের উদাহরণ থেকে অনেক সান্ত্বনা লাভ করতে পারবেন এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? চিন্তা করুন, যিহোবা চাইলে পিতরের ভুলগুলোর বিষয়ে বাইবেলে না-ও লেখাতে পারতেন। তারপরও তিনি সেগুলোর বিষয়ে লিখিয়েছেন, যাতে আমরা তা থেকে শিখতে পারি। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) পিতর যে-ভুলগুলো করেছিলেন আর পরে তিনি যেমন অনুভব করেছিলেন, সেই বিষয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা কী শিখতে পারি? এখান থেকে আমরা শিখতে পারি, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে এটা আশা করেন না যে, আমরা কখনো ভুল করব না। তিনি চান, আমরা যেন কখনোই হাল ছেড়ে না দিই আর নিজেদের দুর্বলতা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত থাকার জন্য পরিশ্রম করে চলি।

৩. কেন আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়?

কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা হাল ছেড়ে না দিই? কথায় বলে, ক্রমাগত প্র্যাকটিস করলে আমরা যেকোনো কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে পারি। একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। একজন ব্যক্তি ভালোভাবে গিটার বাজাতে শেখার জন্য হয়তো অনেক বছর ধরে পরিশ্রম করেছেন। সেইসময় হয়তো তার দ্বারা অনেক ভুলও হয়েছে। তারপরও তিনি প্র্যাকটিস করে চলেন, তাই তিনি গিটার বাজানোর ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠেন। কিন্তু, দক্ষ হয়ে ওঠার পরও হয়তো কখনো কখনো তার দ্বারা ভুল হয়ে যায়। তবে, তিনি হাল ছেড়ে দেন না। তিনি তার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা করে চলেন। একইভাবে, আমাদের যখন মনে হবে, আমরা আমাদের কোনো দুর্বলতা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি, তারপরও হয়তো আমাদের দ্বারা সেই ভুল হয়ে যায়। কিন্তু, আমাদের নিজেদের দুর্বলতাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রচেষ্টা করে চলা উচিত। আমরা সবাই কখনো না কখনো ভুল করে ফেলি আর এটার জন্য হয়তো পরে গিয়ে আমরা অনুতপ্ত হই। কিন্তু, আমরা যদি হাল ছেড়ে না দিই, তা হলে যিহোবা আমাদের পরিশ্রমের উপর আশীর্বাদ করবেন। (১ পিতর ৫:১০) আসুন লক্ষ করি, কীভাবে পিতর হাল ছেড়ে দেননি। আমরা এও লক্ষ করব, তার দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে যিশু তার প্রতি দয়া দেখিয়েছিলেন। এটা জানলে আমরা যিহোবার সেবা করে চলার জন্য উৎসাহিত হব।

পিতরের দ্বারা ভুল হয়েছিল, কিন্তু তিনি আশীর্বাদ পেয়েছিলেন

আপনিও যদি পিতরের মতো অনুভব করেন, তা হলে আপনি কী করবেন? (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. লূক ৫:৫-১০ পদ অনুযায়ী পিতর নিজের বিষয়ে কী বলেছিলেন, কিন্তু যিশু কীভাবে তাকে উৎসাহিত করেছিলেন?

বাইবেলে এটা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি যে, পিতর কোন কারণে নিজেকে “পাপী” বলেছিলেন কিংবা সেইসময় কোন ভুলগুলোর কথা তার মাথায় এসেছিল। (পড়ুন, লূক ৫:৫-১০.) হতে পারে, তিনি কিছু বড়ো বড়ো ভুল করেছিলেন। তিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করছিলেন, তাই তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। যিশু বুঝতে পেরেছিলেন পিতর ভয় পাচ্ছেন, তবে তিনি এও জানতেন, পিতর অনুগত থাকতে পারেন। তাই, তিনি প্রেমের সঙ্গে পিতরকে বলেছিলেন, “ভয় কোরো না।” পিতরের উপর যিশুর যে-আস্থা ছিল, সেটা তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। পরে, পিতর এবং তার ভাই আন্দ্রিয় তাদের মাছ ধরার ব্যাবসা ছেড়ে দিয়ে পূর্ণসময় ধরে যিশুর সঙ্গে সেবা করতে শুরু করেছিলেন। আর এই সিদ্ধান্তের কারণে যিহোবা তাদের প্রচুর আশীর্বাদ করেছিলেন।—মার্ক ১:১৬-১৮.

৫. পিতর তার নেতিবাচক অনুভূতিকে নিজের উপর প্রভাব ফেলতে দেননি এবং তিনি খ্রিস্টের শিষ্য হয়েছিলেন, তাই তিনি কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন?

খ্রিস্টের শিষ্য হওয়ার কারণে পিতর অনেক অদ্বিতীয় আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। যিশু যখন অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন, লোকদের ভিতর থেকে মন্দ স্বর্গদূতদের বের করে দিয়েছিলেন আর এমনকী মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করেছিলেন, তখন এই সমস্ত অলৌকিক কাজ পিতর নিজের চোখে দেখেছিলেন। b (মথি ৮:১৪-১৭; মার্ক ৫:৩৭, ৪১, ৪২) এ ছাড়া, পিতর একটা দর্শনে দেখেছিলেন, ভবিষ্যতে যিশু যখন রাজা হবেন, তখন তাঁর গৌরব কেমন হবে। এই দর্শন তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। (মার্ক ৯:১-৮; ২ পিতর ১:১৬-১৮) চিন্তা করুন, যিশুর শিষ্য হওয়ার কারণে পিতরের এই সমস্ত কিছু দেখার সুযোগ হয়েছিল, যেটার বিষয়ে তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। এই বিষয়টা চিন্তা করে পিতর কত খুশি হয়েছিলেন যে, সেই আশীর্বাদগুলো লাভ করার ক্ষেত্রে তিনি নিজের নেতিবাচক অনুভূতিকে বাধা হতে দেননি।

৬. পিতর কি দ্রুত তার দুর্বলতাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

এত কিছু দেখা ও শোনার পরও পিতরের দ্বারা কিছু ভুল হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটার উপর মনোযোগ দিন। যিশু যখন এটা বোঝাচ্ছিলেন যে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী তাঁকে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হবে এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তখন পিতর বলেছিলেন, এমন কিছুই হবে না। (মার্ক ৮:৩১-৩৩) আর বাকি প্রেরিতদের পাশাপাশি পিতরও অনেক বার এই বিষয় নিয়ে তর্ক করেছিলেন যে, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ। (মার্ক ৯:৩৩, ৩৪) যিশু মারা যাওয়ার এক রাত আগে পিতর একজন ব্যক্তির কান কেটে ফেলেছিলেন। (যোহন ১৮:১০) আর সেই রাতেই পিতর ভয়ের কারণে তার বন্ধু যিশুকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৬-৭২) এই কারণে, পরে পিতর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।—মথি ২৬:৭৫.

৭. যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর পিতর কোন সুযোগ পেয়েছিলেন?

পিতর খুবই দুঃখের মধ্যে ছিলেন, কিন্তু যিশু তাকে একা ছেড়ে দেননি। পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু পিতরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং পিতরকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। যিশু পিতরকে বলেছিলেন, তিনি যেন নম্র হয়ে একজন মেষপালকের মতো তাঁর মেষদের দেখাশোনা করেন। (যোহন ২১:১৫-১৭) পিতর এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পঞ্চাশত্তমীর দিনে জেরুসালেমে ছিলেন আর সেইসঙ্গে যে-লোকদের প্রথম বার পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষেক করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।

৮. প্রেরিত পিতর আন্তিয়খিয়ায় কোন বড়ো ভুল করেছিলেন?

পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষিক্ত হওয়ার পরও পিতর ভুল করেছিলেন। ৩৬ খ্রিস্টাব্দে পিতরকে বলা হয়েছিল, তিনি যেন কর্ণীলিয়ের ঘরে যান, যিনি একজন অছিন্নত্বক ন-যিহুদি ছিলেন। তারপর, পবিত্র শক্তির মাধ্যমে কর্ণীলিয়কে অভিষেক করা হয়েছিল। এটা এই বিষয়ের স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যে, “ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না” আর এখন ন-যিহুদিরাও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ হতে পারে। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৪৪, ৪৫) এরপর থেকে পিতর ন-যিহুদিদের সঙ্গে ওঠা-বসা করতে শুরু করেছিলেন আর সেইসঙ্গে তাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতে শুরু করেছিলেন। তিনি হয়তো জীবনে প্রথম বার এইরকম কিছু করছিলেন। (গালা. ২:১২) কিন্তু, কিছু যিহুদি খ্রিস্টানের মনে হয়েছিল, তাদের ন-যিহুদিদের সঙ্গে খাবার খাওয়া উচিত নয়। যখন এইরকমই কিছু খ্রিস্টান আন্তিয়খিয়ায় এসেছিল, তখন পিতর ন-যিহুদি ভাইদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পিতরের হয়তো এই ভয় ছিল যে, এমনটা করলে যিহুদি খ্রিস্টানদের খারাপ লাগতে পারে। যখন প্রেরিত পৌল এই ভেদাভেদ দেখেছিলেন, তখন তিনি সবার সামনে পিতরকে তিরস্কার করেছিলেন। (গালা. ২:১৩, ১৪) এই ভুলের পরও পিতর ঈশ্বরের সেবা করে গিয়েছিলেন। কোন বিষয়টা তাকে সাহায্য করেছিল?

কেন পিতর হাল ছেড়ে দেননি?

৯. যোহন ৬:৬৮, ৬৯ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, পিতর একজন অনুগত খ্রিস্টান ছিলেন?

পিতর একজন অনুগত খ্রিস্টান ছিলেন। অনেক কিছু হওয়া সত্ত্বেও তিনি যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দেননি। একবার যিশু এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যেটা শিষ্যেরা বুঝতে পারেননি। (পড়ুন, যোহন ৬:৬৮, ৬৯.) তখন অনেক লোক যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা যিশুর কথার অর্থ কী, তা জানার চেষ্টা করেনি। আর সেইসঙ্গে এটার জন্য অপেক্ষা করেনি যে, যিশু তাদের সেটার অর্থ ব্যাখ্যা করবেন। তবে, পিতর যিশুর প্রতি অনুগত ছিলেন এবং যিশুকে ছেড়ে চলে যাননি। তিনি জানতেন, যিশুর কাছেই “অনন্তজীবনের কথা রয়েছে।”

পিতরের উপর যিশুর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল, এটা জেনে আপনি কীভাবে উৎসাহিত হন? (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. কীভাবে বোঝা যায় যে, পিতরের উপর যিশুর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল? (ছবিও দেখুন।)

১০ যিশুও পিতরকে একা ছেড়ে দেননি। লক্ষ করুন, পৃথিবীতে যিশুর জীবনের শেষ রাতে কী ঘটেছিল। যিশু জানতেন, পিতর ও বাকি প্রেরিতেরা তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে। তারপরও যিশু যা বলেছিলেন, তা থেকে বোঝা যায় যে, পিতরের উপর তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল। তাঁর আস্থা ছিল যে, পিতর অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। (লূক ২২:৩১, ৩২) যিশু এও বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার “হৃদয় উৎসুক বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।” (মার্ক ১৪:৩৮) এই কারণে যিশু পিতরকে সেইসময়ও প্রত্যাখ্যান করেননি, যখন তিনি তাঁকে অস্বীকার করেছিলেন। যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর পিতরকে দেখা দিয়েছিলেন, হয়তো সেই সময়ে, যখন পিতর একা ছিলেন। (মার্ক ১৬:৭; লূক ২৪:৩৪; ১ করি. ১৫:৫) পিতর খুবই দুঃখের মধ্যে ছিলেন, কিন্তু তিনি তার প্রভুকে দেখে কতই-না উৎসাহিত হয়েছিলেন!

১১. যিশু পিতরকে কীভাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, যিহোবা তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন?

১১ যিশু পিতরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, যিহোবা তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু আরেক বার একটা অলৌকিক কাজ করেছিলেন, যেটার ফলে পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতেরা অনেক মাছ ধরতে পেরেছিলেন। (যোহন ২১:৪-৬) এই অলৌকিক কাজ দেখে পিতর আরেক বার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন, যিহোবা তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। পিতরের হয়তো যিশুর এই কথাগুলো মনে পড়ে গিয়েছিল, যারা ‘ঈশ্বরের রাজ্যকে সবসময় জীবনে প্রথম স্থান’ দেয়, যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেন। (মথি ৬:৩৩) এই কারণে পিতর তার মাছ ধরার ব্যাবসা নয় বরং প্রচার কাজকে নিজের জীবনে প্রথম স্থান দিয়েছিলেন। এরপর, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে তিনি সাহসের সঙ্গে যিশুর বিষয়ে লোকদের বলতে পেরেছিলেন আর এই কারণে হাজার হাজার লোক সুসমাচার গ্রহণ করতে পেরেছিল। (প্রেরিত ২:১৪, ৩৭-৪১) এরপর, তিনি শমরীয় ও ন-যিহুদিদেরও খ্রিস্টের শিষ্য হতে সাহায্য করেছিলেন। (প্রেরিত ৮:১৪-১৭; ১০:৪৪-৪৮) যিহোবা কতই-না চমৎকার উপায়ে পিতরকে তাঁর সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন! পিতরের মাধ্যমে তিনি সমস্ত ধরনের লোককে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নিয়ে এসেছিলেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা

১২. আমরা যদি কোনো দুর্বলতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে থাকি, তা হলে পিতরের মতো আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

১২ যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে পারেন, যাতে আমরা তাঁর সেবা করে চলি। কিন্তু, কখনো কখনো তাঁর সেবা করা কঠিন হতে পারে, বিশেষভাবে সেইসময়ে, যখন কোনো দুর্বলতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা অনেক বছর ধরে প্রচেষ্টা করে চলছি। কখনো কখনো হয়তো আমাদের মনে হতে পারে, আমরা যে-দুর্বলতাগুলোর সঙ্গে লড়াই করছি, সেগুলো পিতরের দুর্বলতাগুলোর চেয়ে অনেক কঠিন। কিন্তু, যিহোবা আমাদের শক্তি দিতে পারেন, যাতে আমরা হাল ছেড়ে না দিই। (গীত. ৯৪:১৭-১৯) একজন ভাইয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। সত্য শেখার আগে তিনি অনেক বছর ধরে সমকামী জীবনযাপনে রত ছিলেন। কিন্তু, এরপর তিনি নিজেকে পরিবর্তন করেন এবং বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে শুরু করেন। এরপরও কখনো কখনো তার মধ্যে সেই মন্দ আকাঙ্ক্ষা দেখা দিত। তবে, তিনি হাল ছেড়ে দেননি। কোন বিষয়টা তাকে সাহায্য করেছিল? ভাই বলেন, ‘যিহোবা আমাকে শক্তি দিয়েছিলেন। আমি শিখেছিলাম, যিহোবার পবিত্র শক্তির সাহায্যে আমি সত্যের পথে ক্রমাগত চলতে পারি। যিহোবা আমাকে তাঁর সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং আমার দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও ক্রমাগত আমাকে শক্তি দিয়েছেন।’

ভাই হোর্স্ট হেনসেল ১ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে পূর্ণসময়ের সেবা করতে শুরু করেছিলেন এবং সারা জীবন ধরে যিহোবার সেবায় ব্যস্ত ছিলেন। আপনার কি মনে হয়, এরজন্য তিনি কখনো আপশোস করেছিলেন? (১৩, ১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) d

১৩. প্রেরিত ৪:১৩, ২৯, ৩১ পদ অনুযায়ী পিতর কীভাবে সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলেন এবং আমরা কীভাবে তাকে অনুকরণ করতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

১৩ আমরা যেমনটা দেখলাম, পিতর অনেক বার লোকভয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং বড়ো বড়ো ভুল করে ফেলেছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন সাহসী হওয়ার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, তখন তিনি সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৪:১৩, ২৯, ৩১.) আমরাও নিজেদের ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। জার্মানিতে থাকা ভাই হোর্স্টের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। এটা সেই সময়কার কথা, যখন তিনি স্কুলে পড়তেন এবং সেখানে নাতসি শাসন চলছিল। তিনি অনেক বার তার শিক্ষক ও স্কুলের ছেলে-মেয়েদের ভয় পেয়ে “হাইল হিটলার” বলে দিয়েছিলেন, যেটার মানে ছিল হিটলার আমাদের রক্ষা করবেন। ভাই হোর্স্টের বাবা-মা যখন জানতে পেরেছিলেন, তখন তারা ভাইকে বকাঝকা করেননি বরং তার সঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন, যেন যিহোবা তাকে সাহস জোগান। তার বাবা-মায়ের সাহায্যে এবং যিহোবার উপর আস্থা রাখার কারণে পরবর্তী সময়ে ভাই হোর্স্ট সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলেন এবং যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পেরেছিলেন। পরে তিনি বলেছিলেন, “যিহোবা কখনো আমাকে একা ছেড়ে দেননি।” c

১৪. যে-ভাই-বোনেরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে, কীভাবে প্রাচীনেরা তাদের উৎসাহিত করতে পারেন?

১৪ যিহোবা ও যিশু কখনো আমাদের একা ছেড়ে দেবেন না। যখন পিতর যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন, তখন তিনি এই দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি কি হাল ছেড়ে দেবেন কিংবা তিনি কি খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে থাকতে পারবেন? যিশু যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন পিতর তার বিশ্বাস হারিয়ে না ফেলেন। যিশু তাঁর এই প্রার্থনার বিষয়ে পিতরকে বলেছিলেন আর তাকে বলেছিলেন, তিনি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত, পিতর তাঁর ভাইদের শক্তিশালী করবেন। (লূক ২২:৩১, ৩২) কল্পনা করুন, পিতর যখন যিশুর এই কথা নিয়ে হয়তো চিন্তা করেছিলেন, তখন তিনি কতটা উৎসাহিত হয়েছিলেন। অনেকসময় আমরাও হয়তো কোনো দ্বিধার মধ্যে পড়ে যাই। এইরকম সময়ে যিহোবা হয়তো প্রাচীনদের মাধ্যমে এই নিশ্চয়তা দেন যে, আমরা তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে পারি। (ইফি. ৪:৮, ১১) পল নামে একজন ভাই, যিনি দীর্ঘসময় ধরে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করেন, তিনি এভাবেই লোকদের উৎসাহ দেন। যখন লোকেরা সাহস হারিয়ে ফেলে, তখন তিনি তাদের বলেন, ‘চিন্তা করো, একেবারে প্রথমে কীভাবে যিহোবা তোমাকে সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেছিলেন।’ এরপর তিনি তাদের নিশ্চয়তা দেন যে, যিহোবার প্রেম অটল আর তিনি তাদের কখনো প্রত্যাখ্যান করবেন না। তিনি এও বলেন, “আমি এমন অনেক লোকদের দেখেছি, যারা হাল ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু যিহোবার সাহায্যে তারা আবারও তাঁর সেবা চালিয়ে যেতে পেরেছে।”

১৫. প্রেরিত পিতর এবং ভাই হোর্স্টের উদাহরণ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, মথি ৬:৩৩ পদে লেখা কথাগুলো একেবারে সত্য?

১৫ যিহোবা পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন। তাদের মতো আমরাও যদি ঈশ্বরের রাজ্যকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দিই, তা হলে তিনি আমাদেরও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। (মথি ৬:৩৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভাই হোর্স্ট অগ্রগামীর সেবা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, একটা সমস্যা ছিল। তিনি খুব গরিব ছিলেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, পূর্ণসময়ের সেবা করার পাশাপাশি তিনি নিজের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারবেন কি না। তবে, তিনি কী করেছিলেন? তিনি ভেবেছিলেন, তিনি যিহোবাকে আস্বাদন করে দেখবেন। সীমা অধ্যক্ষের পরিদর্শনের সময়ে তিনি পুরো সপ্তাহ ধরে প্রচার কাজ করবেন বলে স্থির করেন। সপ্তাহের শেষে সীমা অধ্যক্ষ তাকে একটা খাম দেন, যেটার মধ্যে কিছু টাকা ছিল। কিন্তু, সেই খামের উপর কারো নাম লেখা ছিল না। ভাই হোর্স্ট সেই খামটা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সেটার মধ্যে এত টাকা ছিল যে, কয়েক মাস তিনি নিজের খরচ মেটাতে পারবেন এবং সহজেই অগ্রগামী সেবা করতে পারবেন। সেই উপহার দেখে ভাই হোর্স্ট নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, যিহোবা তার যত্ন নেবেন। এরপর থেকে তিনি সবসময় ঈশ্বরের রাজ্যকে তার জীবনে প্রথম স্থান দিয়েছিলেন।—মালাখি ৩:১০.

১৬. কেন আমাদের পিতরের উদাহরণ এবং তার চিঠিগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত?

১৬ পিতর যখন যিশুকে তার কাছ থেকে চলে যেতে অনুরোধ করেছিলেন, তখন যিশু তার কথা শোনেননি। এটা চিন্তা করে পিতর কতই-না খুশি হয়েছিলেন! খ্রিস্ট ক্রমাগত পিতরকে শিখিয়েছিলেন, যেটার কারণে পিতর একজন অনুগত শিষ্য হতে পেরেছিলেন। যিশু পিতরকে যেভাবে শিখিয়েছিলেন, সেখান থেকে আজ আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। সেগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় আমরা সেই দুটো চিঠিতে পেতে পারি, যা তিনি প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোকে লিখেছিলেন। সেই চিঠিগুলোতে পিতর কিছু অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধেও বলেছিলেন, যেগুলো থেকে আমরা উপকার পেতে পারি। পরের প্রবন্ধে আমরা সেই চিঠিগুলো থেকে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং দেখব যে, কীভাবে আমরা সেই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারি।

গান ১১৯ বিশ্বাস থাকতে হবে

a এই প্রবন্ধ সেই ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা নিজেদের দুর্বলতাগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে। এর সাহায্যে তারা নিশ্চিত হবে যে, তারা নিজেদের দুর্বলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আর সবসময় যিহোবার সেবা করে চলতে পারে।

b এই প্রবন্ধে উল্লেখিত বেশিরভাগ শাস্ত্রপদ মার্কের বই থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই পদগুলোতে লেখা কথাগুলো তিনি নিশ্চয়ই পিতরের কাছ থেকে শুনেছিলেন, যিনি নিজের চোখে এই সমস্ত কিছু ঘটতে দেখেছিলেন।

c ভাই হোর্স্ট হেনসেলের জীবনকাহিনি পড়ার জন্য ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সজাগ হোন! (ইংরেজি) পত্রিকায় “Motivated by My Family’s Loyalty to God” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: নাটকের আকারে দেখানো হয়েছে, ভাই হোর্স্ট হেনসেলের বাবা-মা তাদের সন্তানের সঙ্গে প্রার্থনা করছেন এবং যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য তাকে সাহায্য করছেন।