সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৭

শিম্‌শোনের মতো যিহোবার উপর নির্ভর করুন

শিম্‌শোনের মতো যিহোবার উপর নির্ভর করুন

“হে নিখিলবিশ্বের প্রভু যিহোবা, দয়া করে আমাকে স্মরণ করো। . . . আমাকে শক্তি দাও।”—বিচার. ১৬:২৮, NW.

গান ৩০ যিহোবা আমার পিতা, ঈশ্বর ও বন্ধু

সারাংশ a

১-২. কেন শিম্‌শোনের বিষয়ে অধ্যয়ন করা ভালো?

 আপনি যখন শিম্‌শোনের বিষয়ে শোনেন, তখন আপনার মনে কোন চিত্র ভেসে ওঠে? হয়তো একজন বলিষ্ঠ ব্যক্তি, যার অনেক শক্তি ছিল। আর সত্যিই শিম্‌শোন অনেক শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু, তিনি একটা ভুল করেছিলেন, যেটার পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়েছিল। তারপরও, যিহোবা এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন যে, শিম্‌শোন সারাজীবন ধরে তাঁর জন্য কত কিছু করেছিলেন আর যিহোবার উপর তার কত বিশ্বাস ছিল। এই কারণে তিনি বাইবেলে শিম্‌শোনের বিষয়ে লিখিয়েছেন, যাতে আমরা তার কাছ থেকে শিখতে পারি।

যিহোবা তাঁর বেছে নেওয়া লোক ইজরায়েলীয়দের সাহায্য করার জন্য শিম্‌শোনের মাধ্যমে অনেক বড়ো বড়ো কাজ করেছিলেন। এরপর, শিম্‌শোন মারা যাওয়ার শত শত বছর পর যখন যিহোবা প্রেরিত পৌলের মাধ্যমে এমন ব্যক্তিদের নাম লিখিয়েছিলেন, যাদের অসাধারণ বিশ্বাস ছিল, তখন তিনি শিম্‌শোনের নামও লিখিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪) শিম্‌শোনের উদাহরণ থেকে আজ আমরাও উৎসাহিত হতে পারি। তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। আসুন দেখি, আমরা শিম্‌শোনের কাছ থেকে কীভাবে উৎসাহ লাভ করতে পারি এবং কোন বিষয়গুলো শিখতে পারি।

শিম্‌শোন যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন

৩. শিম্‌শোনকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল?

শিম্‌শোন যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন ইজরায়েল জাতির উপর পলেষ্টীয়েরা শাসন করছিল এবং তারা তাদের উপর অত্যাচার করছিল। (বিচার. ১৩:১) পলেষ্টীয়েরা খুবই নিষ্ঠুর ছিল, তাই ইজরায়েলীয়দের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছিল। সেইসময়ে যিহোবা শিম্‌শোনকে বেছে নিয়েছিলেন, যাতে তিনি “পলেষ্টীয়দের হাত থেকে ইজরায়েলীয়দের উদ্ধার” করেন। (বিচার. ১৩:৫, NW) এটা খুবই কঠিন কাজ ছিল। শিম্‌শোন এই বড়ো দায়িত্ব যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমেই পালন করতে পারতেন।

শিম্‌শোন যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন এবং রদবদল করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তিনি যা পেয়েছিলেন, সেটাই ব্যবহার করেছিলেন (৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কীভাবে যিহোবা শিম্‌শোনকে সাহায্য করেছিলেন? (বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৫:১৪-১৬)

এখন একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যেখান থেকে বোঝা যায় যে, শিম্‌শোন যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন আর যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন। একবার পলেষ্টীয় সৈন্যের একটা দল শিম্‌শোনকে ধরার জন্য লিহী নামে এক জায়গায় এসেছিল, সেটা হয়তো যিহূদায় ছিল। এটা দেখে যিহূদার লোকেরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা ভেবেছিল, শিম্‌শোনকে তারা শত্রুদের হাতে তুলে দেবে। শিম্‌শোনের নিজের লোকেরাই তাকে নতুন দড়ি দিয়ে বেঁধে পলেষ্টীয়দের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। (বিচার. ১৫:৯-১৩) কিন্তু, ‘যিহোবার পবিত্র শক্তি শিম্‌শোনের উপর কাজ করেছিল।’ তিনি দড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলেছিলেন এবং নিজেকে মুক্ত করেছিলেন। এরপর, তিনি ‘একটা গাধার চোয়ালের হাড় পেয়েছিলেন’ আর সেটা দিয়ে ১,০০০ জন পলেষ্টীয় পুরুষকে মেরে ফেলেছিলেন।—পড়ুন, বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৫:১৪-১৬.

৫. কীভাবে শিম্‌শোন দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার উপর তার আস্থা রয়েছে?

কেন শিম্‌শোন একটা গাধার চোয়ালের হাড় ব্যবহার করেছিলেন? এটা এমন কোনো অস্ত্র ছিল না, যেটার মাধ্যমে শত্রুদের আক্রমণ করা যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই, শিম্‌শোন জানতেন যে, তার সাফল্য কোনো অস্ত্রের উপর নয় বরং যিহোবার উপর নির্ভর করার মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব। যিহোবার এই বিশ্বস্ত উপাসক তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য যা পেয়েছিলেন, সেটাই ব্যবহার করেছিলেন। শিম্‌শোন যিহোবার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন, তাই যিহোবা তাকে জয়ী করেছিলেন।

৬. শিম্‌শোনের বিবরণ থেকে আমরা কোন বিষয়টা শিখতে পারি?

যিহোবা আমাদের যে-কাজ দেন, সেটা সম্পন্ন করার জন্য আমাদের শক্তিও দেন, এমনকী সেই কাজ করার জন্যও, যেটা আমাদের পক্ষে হয়তো খুব কঠিন বলে মনে হয়। অনেকসময়, যিহোবা আমাদের এমন উপায়ে সাহায্য করেন, যে-উপায় সম্বন্ধে আমরা হয়তো কখনো চিন্তাও করিনি। আপনি যদি সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেন, তা হলে নিশ্চিত থাকুন, যে-ঈশ্বর শিম্‌শোনকে শক্তি দিয়েছিলেন, তিনি আপনাকেও শক্তি দেবেন, যাতে আপনি তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন।—হিতো. ১৬:৩.

৭. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কেন যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা চাওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

নির্মাণ কাজে সাহায্য করে এমন অনেক ভাই-বোনও যিহোবার উপর আস্থা রেখেছে। আগে আমাদের ভাইয়েরাই কিংডম হল এবং অন্যান্য বিল্ডিংয়ের নকশা তৈরি করত এবং তারাই সেগুলো নির্মাণ করত। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবার সংগঠনে লোকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাই নির্মাণ কাজে নেতৃত্ব নেয় এমন ভাইদের মনে হয়েছিল যে, এবার তাদের কিছু রদবদল করার প্রয়োজন রয়েছে। তারা প্রার্থনা করে যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা চেয়েছিল এবং কিছু নতুন উপায় কাজে লাগিয়েছিল। যেমন, তারা ইতিমধ্যে তৈরি রয়েছে এমন বিল্ডিংগুলো কিনেছিল এবং সেগুলোকে মেরামত করেছিল। ভাই রবার্ট, যিনি কয়েক বছর ধরে সারা পৃথিবীতে হওয়া নির্মাণ কাজে সাহায্য করেছিলেন, তিনি বলেন: “শুরুতে এই নতুন পদ্ধতি কিছু ভাই-বোনের একদমই ভালো লাগেনি কারণ তারা অনেক বছর ধরে যে-উপায়ে কাজ করত, এখন সেটা একেবারে আলাদা। কিন্তু, আমাদের ভাইয়েরা রদবদল করার জন্য প্রস্তুত ছিল। এখন আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে, যিহোবা আমাদের কাজের উপর আশীর্বাদ করছেন।” যিহোবা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তাঁর লোকদের যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন, এটা কেবল সেটার একটা উদাহরণ। তাই, সময়ে সময়ে আমরা প্রত্যেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে নির্দেশনা চাই? আর তাঁর সেবা করার ক্ষেত্রে আমি কি রদবদল করতে প্রস্তুত থাকি?’

শিম্‌শোন যিহোবার ব্যবস্থা থেকে উপকার পেয়েছিলেন

৮. একবার যখন শিম্‌শোনের খুব জল পিপাসা পেয়েছিল, তখন তিনি কী করেছিলেন?

আপনি হয়তো শিম্‌শোনের চমৎকার কাজের আরও বিবরণ পড়েছেন। যেমন, একবার তিনি একাই একটা সিংহের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং সিংহটাকে মেরে ফেলেছিলেন। আরেক বার তিনি পলেষ্টীয়দের নগর অস্কিলোনে ৩০ জন পুরুষকে মেরে ফেলেছিলেন। (বিচার. ১৪:৫, ৬, ১৯) শিম্‌শোন জানতেন, তিনি এই সমস্ত কাজ নিজের শক্তিতে নয় বরং যিহোবার সাহায্যেই করতে পেরেছিলেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? লক্ষ করুন, ১,০০০ জন পলেষ্টীয়কে মেরে ফেলার পর তার যখন খুব জল পিপাসা পেয়েছিল, তখন তিনি কী করেছিলেন। জলের জন্য এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানোর পরিবর্তে তিনি সাহায্যের জন্য যিহোবাকে ডেকেছিলেন।—বিচার. ১৫:১৮.

৯. শিম্‌শোন যখন সাহায্যের জন্য যিহোবাকে ডেকে ছিলেন, তখন যিহোবা কী করেছিলেন? (বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৫:১৯)

যিহোবা শিম্‌শোনের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং অলৌকিকভাবে তাকে জল জুগিয়েছিলেন। শিম্‌শোন যখন সেখান থেকে জল খেয়েছিলেন, তখন “তিনি আবারও সতেজ” হয়েছিলেন। (পড়ুন, বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৫:১৯.) এমনটা মনে করা হয়, অনেক বছর পর ভাববাদী শমূয়েল যখন ঈশ্বরের প্রেরণায় বিচারকর্তৃগণের বিবরণ বই লিখেছিলেন, তখনও সেই জলের উৎস সেখানেই ছিল। যে-ইজরায়েলীয়েরা জলের উৎস দেখেছিল, তাদের হয়তো এই বিষয়টা মনে পড়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকেরা যখন প্রয়োজনের সময়ে তাঁর উপর নির্ভর করে এবং সাহায্যের জন্য তাঁকে ডাকে, তখন তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন।

যিহোবা যে-জলের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই জল খেয়ে শিম্‌শোন সতেজতা লাভ করেছিলেন। যিহোবা আজ যে-ব্যবস্থা করেছেন, সেটা থেকে আমাদের পুরোপুরি উপকার নেওয়া উচিত, যাতে আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করার মানে কী? (ছবিও দেখুন।)

১০ আমাদের কাছে যদি কোনো দক্ষতা থাকে কিংবা আমরা যদি যিহোবার সংগঠনে অনেক কিছু করে থাকি, তা সত্ত্বেও আমাদের সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করা উচিত। আমাদের এটা স্বীকার করা উচিত, যখন আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করব, তখনই আমরা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া কাজ ভালোভাবে করতে পারব। যিহোবা শিম্‌শোনের জন্য যে-জলের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই জল খেয়ে তিনি সতেজতা লাভ করেছিলেন। একইভাবে, আজ যিহোবা আমাদের জন্য যে-ব্যবস্থা করেছেন, তা থেকে পুরোপুরি উপকার নেওয়ার মাধ্যমে আমরাও সাহস ও শক্তি লাভ করতে পারব এবং তাঁর সেবা করে যেতে পারব।—মথি ১১:২৮.

১১. যিহোবার উপর নির্ভর করার জন্য কোন বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ? একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১১ রাশিয়ায় আমাদের অনেক ভাই-বোনের উপর তাড়না করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, তারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছে। অ্যালেক্সি নামে একজন ভাইয়ের উপর মনোযোগ দিন। তিনি এইরকম এক কঠিন পরিস্থিতিতে কোন কারণে ধৈর্য ধরতে পারছেন? তিনি এবং তার স্ত্রী ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করেন এবং উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। ভাই বলেন: “আমি নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার এবং প্রতিদিন বাইবেল পড়ার চেষ্টা করি। আমি এবং আমার স্ত্রী প্রতিদিন সকালে ডেলি টেক্সট নিয়ে আলোচনা করি আর তারপর আমরা একসঙ্গে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি।” এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? নিজেদের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে আমাদের যিহোবার উপর নির্ভর করা উচিত। এটার জন্য ক্রমাগত ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করা এবং উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা এমনটা করব, তখন যিহোবা আমাদের পরিশ্রমের উপর আশীর্বাদ করবেন আর শিম্‌শোনকে যেভাবে শক্তি দিয়েছিলেন, তিনি আমাদেরও শক্তি দেবেন এবং সাহস জোগাবেন।

শিম্‌শোন হাল ছেড়ে দেননি

১২. শিম্‌শোন কোন ভুল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন আর এটা তার আগের সিদ্ধান্তগুলোর চেয়ে কীভাবে আলাদা ছিল?

১২ শিম্‌শোন আমাদের মতোই অসিদ্ধ ছিলেন, তাই কোনো কোনো সময়ে তিনিও ভুল করেছিলেন। যেমন, একবার তিনি এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যেটার কারণে তাকে খুবই খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। কিছুসময় ধরে বিচারক হিসেবে সেবা করার পর ‘শিম্‌শোন দলীলা নামে একজন মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন, যিনি সোরেক উপত্যকায়’ থাকতেন। (বিচার. ১৬:৪, NW) এর আগে একবার শিম্‌শোন একজন পলেষ্টীয় মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সিদ্ধান্তের পিছনে যিহোবার হাত ছিল কারণ তিনি “পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পথ প্রস্তুত করছিলেন।” এরপর শিম্‌শোন পলেষ্টীয়ের গাজা নগরে একজন বেশ্যার বাড়িতে ছিলেন। সেইসময় যিহোবা শিম্‌শোনকে এতটাই শক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি সেই নগরের দরজার কাঠ উপড়ে ফেলেছিলেন আর এভাবে সেই নগরকে দুর্বল করে দিয়েছিলেন। (বিচার. ১৪:১-৪; ১৬:১-৩) কিন্তু, দলীলার বিষয়টা আলাদা ছিল কারণ তিনি হয়তো একজন ইজরায়েলীয় ছিলেন এবং শিম্‌শোন স্বেচ্ছায় এই কাজ করেছিলেন।

১৩. কীভাবে দলীলা শিম্‌শোনকে বিপদের মুখে ফেলেছিলেন?

১৩ দলীলা পলেষ্টীয়দের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে শিম্‌শোনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। শিম্‌শোন কি দলীলার প্রেমে এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি তার মনোভাব বুঝতে পারেননি? যা-ই হোক না কেন, একটা বিষয় স্পষ্ট যে, দলীলা প্রতিদিন শিম্‌শোনের সামনে ঘ্যানঘ্যান করতেন আর জেদ করতেন, যাতে শিম্‌শোন তার শক্তির রহস্য তাকে বলে দেন। অবশেষে, শিম্‌শোন অতিষ্ঠ হয়ে তাকে সব কিছু বলে দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হল, শিম্‌শোন তার এই ভুলের কারণে কিছুসময়ের জন্য যিহোবার অনুমোদন হারিয়েছিলেন আর সেইসঙ্গে নিজের শক্তিও হারিয়েছিলেন।—বিচার. ১৬:১৬-২০.

১৪. দলীলার উপর আস্থা রাখার কারণে শিম্‌শোনকে কোন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল?

১৪ শিম্‌শোন যিহোবার উপর আস্থা রাখার পরিবর্তে দলীলার উপর আস্থা রেখেছিলেন। এই কারণে তাকে খুবই মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। পলেষ্টীয়েরা শিম্‌শোনকে ধরে ফেলেছিল এবং তার দুটো চোখ উপড়ে ফেলেছিল। তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আর তারা তাকে গাজার একটা কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল এবং সেখানে তাকে দিয়ে শস্য পেষাই করার কাজ করিয়েছিল। এটা সেই নগর ছিল, যেটার দরজার কাঠ শিম্‌শোন উপড়ে ফেলেছিলেন এবং সেখানকার লোকদের অপমানিত করেছিলেন। সেই জায়গায় পলেষ্টীয়েরা একটা উৎসবের ব্যবস্থা করেছিল আর শিম্‌শোনকে অপমানিত করেছিল। তারা তাদের দেবতা দাগোনের উদ্দেশে অনেক বলি উৎসর্গ করেছিল কারণ তারা মনে করেছিল, সেই দেবতাই শিম্‌শোনকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এরপর তারা শিম্‌শোনকে কারাগার থেকে বাইরে বের করে উৎসবে নিয়ে এসেছিল, যাতে তারা তাকে নিয়ে “হাসিঠাট্টা” করতে পারে।—বিচার. ১৬:২১-২৫, NW.

যিহোবা পলেষ্টীয়দের শাস্তি দেওয়ার জন্য শিম্‌শোনকে অনেক শক্তি দিয়েছিলেন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. কীভাবে শিম্‌শোন আরেক বার দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার উপর তার আস্থা রয়েছে? (বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৬:২৮-৩০) (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৫ শিম্‌শোন একটা বড়ো ভুল করেছিলেন, কিন্তু তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তিনি এটা মনে রেখেছিলেন, যিহোবা তাকে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই করার কাজ দিয়েছেন আর শিম্‌শোন সেটা সম্পন্ন করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। (পড়ুন, বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ১৬:২৮-৩০.) তাই, উৎসবের সময়ে শিম্‌শোন হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন, যেন তিনি তাকে শেষ বারের মতো শক্তি দেন আর তিনি “পলেষ্টীয়দের উপর প্রতিশোধ নিতে” পারেন। সত্য ঈশ্বর শিম্‌শোনের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং তারপর তিনি তাকে প্রচুর শক্তি দিয়েছিলেন। এর ফলাফল কী হয়েছিল? শিম্‌শোন তার জীবনকালে যত পলেষ্টীয়কে মেরেছিলেন, সেটার চেয়েও অনেক বেশি পলেষ্টীয়কে তিনি এই সুযোগে মেরেছিলেন।

১৬. শিম্‌শোন ভুল করার পর যা করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৬ যদিও শিম্‌শোনকে তার ভুলের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল, তারপরও তিনি যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। একইভাবে, আমরা যদি কোনো ভুল করে ফেলি আর আমাদের সংশোধন করা হয় কিংবা আমাদের কাছ থেকে যদি কোনো দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়, তা হলে আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত। তিনি কখনো আমাদের একা ছেড়ে দেন না, তাই আমাদেরও তাঁর সেবা করা কখনো বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। (গীত. ১০৩:৮-১০) আমাদের দ্বারা ভুল হওয়া সত্ত্বেও যিহোবা আমাদের তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য শক্তি দিতে পারেন, যেমনটা তিনি শিম্‌শোনকে দিয়েছিলেন।

ভুল করার পর শিম্‌শোনের খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু তিনি হাল ছেড়ে দেননি আর আমাদেরও হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় (১৭-১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭-১৮. মাইকেলের অভিজ্ঞতা থেকে কোন বিষয়টা আপনার ভালো লেগেছে? (ছবিও দেখুন।)

১৭ মাইকেল নামে একজন যুবক ভাইয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি যিহোবার সেবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি একজন পরিচারক দাস ছিলেন এবং একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, তিনি একটা ভুল করে ফেলেন, যেটার কারণে মণ্ডলীতে তার কাছে কোনো দায়িত্ব ছিল না। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত আমার জীবন খুব ভালোভাবে চলছিল, আমি উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করছিলাম। কিন্তু, হঠাৎ সব কিছু শেষ হয়ে যায়। আমি নিজেকে খুবই অযোগ্য বলে মনে করি। আমি কখনো এমনটা চিন্তা করিনি যে, যিহোবা আমাকে একা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে, অনেকসময় আমার মনে এইরকম চিন্তা আসত, ‘কী জানি, যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আবারও আগের মতো হবে কি না আর আমি মণ্ডলীতে আগের মতো যিহোবার সেবা করতে পারব কি না।’”

১৮ খুশির বিষয় হল, মাইকেল হাল ছেড়ে দেননি। তিনি বলেন: “আমি যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঠিক করার জন্য পরিশ্রম করি। আমি বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম, আমার মনে কী চলছে, সেটা তাঁকে খুলে বলতাম, অধ্যয়ন করতাম এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতাম।” কিছুসময় পর মাইকেল মণ্ডলীতে আবারও এক সুনাম অর্জন করতে পেরেছিলেন। এখন তিনি একজন প্রাচীন ও নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন। তিনি বলেন: “ভাই-বোনেরা যেভাবে আমাকে সমর্থন করেছে এবং উৎসাহিত করেছে, বিশেষ করে প্রাচীনেরা, সেটা থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, যিহোবা এখনও আমাকে ভালোবাসেন। এর ফলে, আমি আবারও এক শুচি বিবেক নিয়ে মণ্ডলীতে সেবা করতে পেরেছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি, যারা প্রকৃত অনুতপ্ত হয়, তাদের যিহোবা ক্ষমা করে দেন।” এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ভুল করার পরও আমরা যদি সংশোধন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি এবং যিহোবার উপর নির্ভর করি, তা হলে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ দেবেন এবং আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—গীত. ৮৬:৫; হিতো. ২৮:১৩.

১৯. কীভাবে শিম্‌শোনের উদাহরণ আপনাকে শক্তিশালী করেছে?

১৯ এই প্রবন্ধে আমরা শিম্‌শোনের জীবনের কিছু বিশেষ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করলাম। তিনি অসিদ্ধ ছিলেন; যদিও দলীলার ক্ষেত্রে শিম্‌শোনের দ্বারা ভুল হয়েছিল, তারপরও তিনি হাল ছেড়ে দেননি বরং যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তিনি প্রচেষ্টা করে গিয়েছিলেন। যিহোবাও তাকে ছেড়ে দেননি। তিনি শিম্‌শোনের মাধ্যমে আরেক বার খুবই অসাধারণ উপায়ে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন। যিহোবার চোখে শিম্‌শোন একজন বিশ্বস্ত উপাসক ছিলেন। তাই যিহোবা যখন শাস্ত্রে সেই ব্যক্তিদের নাম লিখিয়েছিলেন, যারা তাঁর উপর অটুট বিশ্বাস দেখিয়েছিল, তখন তিনি তাদের সঙ্গে শিম্‌শোনের নামও লিখিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১) এটা জেনে আমরা কতই-না উৎসাহিত হই যে, আমাদের ঈশ্বর এমন একজন পিতা, যিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং আমাদের শক্তি দেন, বিশেষ করে যখন আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। তাই আসুন, শিম্‌শোনের মতো আমরাও যিহোবার কাছে হৃদয় উজাড় করে বিনতি করি: ‘দয়া করে আমাকে স্মরণ করো। আমাকে শক্তি দাও।’—বিচার. ১৬:২৮.

গান ৩ দৃঢ় দুর্গ তুমি ও বিশ্বাসভূমি

a শিম্‌শোন বাইবেলের একটা পরিচিত চরিত্র। তার বিষয়ে অনেক নাটক লেখা হয়েছে, গান রচনা করা হয়েছে এবং সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। তবে, তিনি শুধুমাত্র গল্পের কোনো চরিত্র নন, তিনি সত্যিই বেঁচে ছিলেন। ঈশ্বরের উপর তার যে-অটুট বিশ্বাস ছিল, তা থেকে আজ আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।