সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৫

যিহোবা তাঁর নম্র দাসদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন

যিহোবা তাঁর নম্র দাসদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন

“ঈশ্বর . . . নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।”—১ পিতর ৫:৫.

গান সংখ্যা ৪৮ প্রতিদিন যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করা

সারাংশ *

১. নম্র ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেন? ব্যাখ্যা করুন।

যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। কেবল প্রকৃত নম্র ব্যক্তিরাই তাঁর সঙ্গে এক উষ্ণ ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। অন্যদিকে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন।” (১ পিতর ৫:৫) আমরা সবাই যিহোবাকে খুশি করতে চাই এবং তাঁর উষ্ণ ভালোবাসা উপভোগ করতে চাই আর তাই নম্রতা গড়ে তোলার বিষয়টা শেখার জন্য আমাদের কাছে উত্তম উত্তম কারণ রয়েছে।

২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব: (১) নম্রতা কী? (২) কেন আমাদের এটা গড়ে তোলা উচিত? (৩) কোন পরিস্থিতিগুলো আমাদের নম্রতাকে পরীক্ষায় ফেলতে পারে? আমরা দেখব যে, আমরা যখন নম্রতা গড়ে তুলি, তখন আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করি এবং নিজেরা উপকৃত হই।—হিতো. ২৭:১১; যিশা. ৪৮:১৭.

নম্রতা কী?

৩. নম্রতা কী?

একজন নম্র ব্যক্তি অন্যদের চেয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না। তিনি গর্বিতমনা নন। বাইবেল ইঙ্গিত দেয়, একজন নম্র ব্যক্তি যিহোবা ঈশ্বর ও সেইসঙ্গে তার সহমানবদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে এক উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখেন। একজন নম্র ব্যক্তি এটা স্বীকার করেন যে, প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো দিক দিয়ে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।—ফিলি. ২:৩, ৪.

৪-৫. কেন কোনো কোনো ব্যক্তিকে দেখে নম্র বলে মনে হলেও তারা আসলে নম্র নয়?

কোনো কোনো ব্যক্তিকে দেখে হয়তো নম্র বলে মনে হয় কিন্তু তারা আসলে নম্র নয়। তারা হয়তো শান্ত স্বভাবের ব্যক্তি। অথবা তারা হয়তো তাদের বাবা-মায়ের শিক্ষা অনুযায়ী অন্যদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে এবং মার্জিতভাবে আচরণ করে। কিন্তু বাস্তবে, তারা হয়তো খুবই গর্বিতমনা ব্যক্তি। এক না একদিন তারা এটা প্রকাশ করে দেবে, তাদের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে।—লূক ৬:৪৫.

আবার অন্যদের দেখে হয়তো আত্মবিশ্বাসী অথবা স্পষ্টবাদী বলে মনে হয় কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা গর্বিতমনা ব্যক্তি। (যোহন ১:৪৬, ৪৭) তবে, যারা শান্ত স্বভাবের ব্যক্তি নয়, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন তারা নিজেদের সহজাত ক্ষমতার উপর নির্ভর না করে। আমরা শান্ত স্বভাবের হই অথবা না-ই হই, আমাদের সবাইকে অবশ্যই এক নম্র হৃদয় গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে।

প্রেরিত পৌল নম্র ছিলেন এবং তিনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করেননি (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৬. প্রথম করিন্থীয় ১৫:১০ পদে যেমন দেখানো হয়েছে, প্রেরিত পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

প্রেরিত পৌলের উদাহরণ বিবেচনা করুন। যিহোবা একের-পর-এক নগরে নতুন নতুন মণ্ডলী গঠন করার জন্য তাকে ভালোভাবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি হয়তো এমনকী যিশু খ্রিস্টের অন্যান্য প্রেরিতের তুলনায় পরিচর্যায় আরও বেশি কিছু সম্পাদন করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, পৌল তার ভাইদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেননি। তিনি নম্রতার সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন: “প্রেরিতগণের মধ্যে আমি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র বরং প্রেরিত নামে আখ্যাত হইবার অযোগ্য, কারণ আমি ঈশ্বরের মণ্ডলীর তাড়না করিতাম।” (১ করি. ১৫:৯) তারপর, পৌল উপযুক্তভাবেই বলেছিলেন, তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে অথবা অনেক কিছু লাভ করেছেন বলে নয় বরং একমাত্র ঈশ্বরের অনুগ্রহের কারণেই যিহোবার সঙ্গে তার এক উত্তম সম্পর্ক রয়েছে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:১০.) পৌল একজন নম্র ব্যক্তি হিসেবে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি করিন্থের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে নিজের বিষয়ে বড়াই করেননি, এমনকী যদিও মণ্ডলীর কেউ কেউ তার সমালোচনা করেছিল!—২ করি. ১০:১০.

ভাই কার্ল এফ. ক্লাইন একজন নম্র ব্যক্তি ছিলেন, যিনি পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য ছিলেন (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. কীভাবে আধুনিক সময়ের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই নম্রতা দেখিয়েছিলেন?

ভাই কার্ল এফ. ক্লাইনের জীবনকাহিনি থেকে অনেক ভাই-বোন উৎসাহিত হয়েছে। ভাই কার্ল পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি তার জীবনকাহিনিতে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে নম্রতার সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন, যেগুলোর সঙ্গে তাকে বছরের পর বছর ধরে লড়াই করতে হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯২০-র দশকে তিনি যখন প্রথম বার ঘরে ঘরে প্রচারে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেই কাজকে এতটাই কঠিন বলে মনে করেছিলেন যে, তারপর প্রায় দু-বছর তিনি সেই কাজে অংশ নেননি। পরে, বেথেলে সেবা করার সময়ে একজন ভাই তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আর তাই তিনি সেই ভাইয়ের উপর কিছু সময়ের জন্য রেগে ছিলেন। এ ছাড়া, তিনি স্নায়ুর রোগে ভুগেছিলেন, যেটা পরে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তবে, তিনি বেশ কিছু অদ্বিতীয় বিশেষ সুযোগ উপভোগ করেছিলেন। একটু চিন্তা করুন, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই হিসেবে নিজের দুর্বলতা সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করার জন্য তার কতটা নম্রতার প্রয়োজন হয়েছিল! অনেক ভাই-বোন ভাই ক্লাইন এবং তার সৎ ও আগ্রহজনক জীবনকাহিনিকে আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করে থাকে। *

কেন আমাদের নম্রতা গড়ে তোলা উচিত?

৮. কীভাবে ১ পিতর ৫:৬ পদ আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে, নম্রতা গুণটা যিহোবাকে খুশি করে?

আমাদের জন্য নম্রতা গড়ে তোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এটা যিহোবাকে খুশি করে। প্রেরিত পিতর এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৬.) পিতরের এই কথাগুলোর উপর মন্তব্য করতে গিয়ে “আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও” শিরোনামের ইংরেজি বইয়ে বলা হয়েছিল: “অহংকার হল বিষের মতো। এর প্রভাব খুব বিপদজনক হতে পারে। এটা একজন সুদক্ষ ব্যক্তিকেও যিহোবার ব্যবহারের অযোগ্য করে তুলতে পারে। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তির খুব সামান্য দক্ষতা থাকলেও নম্রতা তাকে যিহোবার ব্যবহারের যোগ্য করে তুলতে পারে। . . . [তিনি] . . . আপনার নম্রতার জন্য আপনাকে পুরস্কার দিতে পেরে আনন্দিত হবেন।” * সত্যিই, যিহোবার চিত্ত বা হৃদয়কে আনন্দিত করার চেয়ে আমরা কি আরও ভালো কিছুর আশা করতে পারি?—হিতো. ২৩:১৫.

৯. আমরা যদি নম্র হই, তা হলে কেন অন্যেরা আমাদের নিকটবর্তী হতে চাইবে?

নম্রতা গড়ে তোলার মাধ্যমে যিহোবাকে খুশি করার পাশাপাশি আমরা আরও অনেক উপকার লাভ করি। আমরা যদি নম্র হই, তা হলে অন্যেরা আমাদের নিকটবর্তী হতে চাইবে। কেন? একটু চিন্তা করুন, আপনি কোন ধরনের ব্যক্তির সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন? (মথি ৭:১২) আমাদের মধ্যে খুব কম ব্যক্তিই সেইসমস্ত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইবে, যারা সবসময় নিজেদের মতো করে কাজ করার জন্য অন্যদের চাপ দেয় এবং অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে চায় না। এর বিপরীতে, আমাদের সহবিশ্বাসীরা যখন দেখায় যে, তারা “পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা,” তখন আমরা তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে সতেজতা অনুভব করি। (১ পিতর ৩:৮) ঠিক যেমন আমরা এই ধরনের ব্যক্তিদের নিকটবর্তী হই, একইভাবে তারাও আমাদের নিকটবর্তী হবে, যদি আমরা নম্র হই।

১০. কীভাবে নম্রতা আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তোলে?

১০ এ ছাড়া, নম্রতা আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তোলে। এটা ঠিক যে, আমরা হয়তো জীবনে এমন কিছু দেখি, যেগুলোকে হয়তো ভুল অথবা অন্যায্য বলে মনে হতে পারে। জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেছিলেন: “আমি দাসদিগকে ঘোড়ার উপরে, এবং অধিপতিদিগকে দাসের ন্যায় পায়ে হাঁটিয়া চলিতে দেখিয়াছি।” (উপ. ১০:৭) সুদক্ষ ব্যক্তিরা কখনো কখনো সম্মান পায় না। আর খুব সামান্য দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কখনো কখনো লোকেরা অনেক সম্মান পেয়ে থাকে। তারপরও শলোমন এটা স্বীকার করেছিলেন যে, জীবনের নেতিবাচক বিষয়গুলোর কারণে হতাশ হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ। (উপ. ৬:৯) আমরা যদি নম্র হই, তা হলে জীবনের সেই বিষয়গুলো আমাদের জন্য মেনে নেওয়া সহজ হবে, যেগুলোকে আমরা পছন্দ করি না।

কোন পরিস্থিতিগুলো আমাদের নম্রতাকে পরীক্ষায় ফেলতে পারে?

কেন এইরকম পরিস্থিতিতে নম্রতা বজায় রাখা কঠিন? (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. আমরা যখন পরামর্শ লাভ করি, তখন আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১১ প্রতিদিন আমরা নম্রতা দেখানোর অগণিত সুযোগ পাই। কয়েকটা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করুন।আমরা যখন পরামর্শ লাভ করি। আমাদের এই বিষয়টা মনে রাখা উচিত, কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেন, তা হলে হতে পারে আমরা যতটা ভাবছি, সেটার চেয়েও বড়ো কোনো ভুল করে ফেলেছি। কখনো কখনো কোনো ব্যক্তি যখন আমাদের পরামর্শ দেন, তখন আমরা হয়তো দ্রুত সেই পরামর্শকে প্রত্যাখ্যান করতে চাই। আমরা হয়তো সেই ব্যক্তি অথবা তিনি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটার সমালোচনা করতে পারি। কিন্তু আমরা যদি নম্র হই, তা হলে আমরা সঠিক মনোভাব দেখানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।

১২. কোনো ব্যক্তি আমাদের পরামর্শ দিলে, হিতোপদেশ ২৭:৫, ৬ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত? একটা উদাহরণ দিন।

১২ একজন নম্র ব্যক্তিকে পরামর্শ দিলে তিনি কৃতজ্ঞ হন। উদাহরণ স্বরূপ: কল্পনা করুন, আপনি খ্রিস্টীয় সভায় রয়েছেন। সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের মধ্যে একজন আপনাকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে কৌশলে বলেন, আপনার দাঁতে খাবারের টুকরো আটকে রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, আপনি এতে অস্বস্তিবোধ করবেন। কিন্তু, সেইসঙ্গে তিনি আপনাকে বলেছেন বলে, আপনি কি তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না? সত্যি বলতে কী, আপনি হয়তো ভাববেন, কেউ আমাকে আরেকটু আগে কেন বলেনি! একইভাবে, কোনো সহবিশ্বাসী যখন সাহস দেখিয়ে প্রয়োজনে উপযুক্ত সময়ে আমাদের পরামর্শ দেন, তখন আমাদের নম্রতার সঙ্গে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত। আমরা যেন তাদের আমাদের শত্রু হিসেবে নয় বরং ‘প্রণয়ী [‘বন্ধু,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ হিসেবে দেখি।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:৫, ৬; গালা. ৪:১৬.

অন্যেরা যখন যিহোবার সেবায় বিশেষ বিশেষ সুযোগ লাভ করে, তখন কেন নম্রতার প্রয়োজন? (১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৩. অন্যেরা যখন যিহোবার সেবায় বিশেষ বিশেষ সুযোগ লাভ করে, তখন কীভাবে আমরা নম্রতা দেখাতে পারি?

১৩ অন্যেরা যখন যিহোবার সেবায় বিশেষ বিশেষ সুযোগ লাভ করে। জেসেন নামে একজন প্রাচীন ভাই স্বীকার করেন: “অন্যদের বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করতে দেখে কখনো কখনো আমি ভাবি, কেন আমাকে বেছে নেওয়া হয়নি।” আপনি কি কখনো এইরকম অনুভব করেছেন? যিহোবার সেবায় আরও বেশি বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করার বিষয়ে “আকাঙ্ক্ষী” হওয়া ভুল নয়। (১ তীম. ৩:১) তবে, আমরা যা চিন্তা করি, সেই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা গর্বকে আমাদের হৃদয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, একজন খ্রিস্টান ভাই এইরকম চিন্তা করতে পারেন, কোনো নির্দিষ্ট কার্যভার পালন করার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে যোগ্য। অথবা একজন খ্রিস্টান স্ত্রী হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ‘আমার স্বামী অন্যান্য ভাইয়ের চেয়ে আরও ভালোভাবে এই কাজটা করতে পারবে!’ কিন্তু, আমরা যদি প্রকৃতই নম্র হই, তা হলে আমরা এইরকম গর্বিত মনোভাব এড়িয়ে চলব।

১৪. অন্যেরা যখন বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করেছিল, তখন মোশি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৪ অন্যেরা যখন বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করেছিল, তখন মোশি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। ইস্রায়েল জাতির নেতৃত্ব নেওয়ার বিষয়ে তার কার্যভারকে মোশি খুবই উচ্চ মূল্য দিয়েছিলেন। কিন্তু, যিহোবা যখন মোশির সঙ্গে কাজ করার জন্য অন্যদের অনুমতি দিয়েছিলেন, তখন তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি ঈর্ষান্বিত হননি। (গণনা. ১১:২৪-২৯) তিনি নম্র ছিলেন এবং অন্যদের সুযোগ দিয়েছিলেন, যাতে তারা লোকেদের বিচার করার বিষয়ে মোশিকে সাহায্য করতে পারে। (যাত্রা. ১৮:১৩-২৪) এর ফলে, ইস্রায়েলীয়রা একাধিক বিচারকর্তা লাভ করেছিল আর তাদের বিচার লাভ করার জন্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতো না। এটা দেখায় যে, মোশি নিজের বিশেষ সুযোগগুলোর চেয়ে অন্যদের মঙ্গলের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের জন্য কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন! আমরা এটা স্মরণে রাখি যে, আমরা যদি সত্যিই যিহোবার ব্যবহারের যোগ্য হতে চাই, তা হলে আমাদের দক্ষতার চেয়ে আমাদের নম্রতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও যিহোবা অনেক উচ্চ অবস্থানে রয়েছেন, তারপরও তিনি “নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।”—১ পিতর ৫:৫; গীত. ১৩৮:৬.

১৫. অনেকে কোন নতুন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে?

১৫ আমরা যখন নতুন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। দশকের পর দশক ধরে যিহোবার সেবা করে আসছে, এমন অনেক ভাই-বোনের কার্যভার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৪ সালে জেলা অধ্যক্ষ ও তাদের স্ত্রীদের কার্যভার পরিবর্তিত হয় এবং তাদের অন্য কার্যভার দেওয়া হয়। সেই বছরেই সংগঠন জানায় যে, একজন ভাইয়ের বয়স যদি ৭০ বছর হয়ে যায়, তা হলে তিনি আর সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতে পারবেন না। আর একজন ভাইয়ের বয়স যদি ৮০ বছর অথবা তার চেয়ে বেশি হয়, তা হলে তিনি আর মণ্ডলীর প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর হিসেবে সেবা করতে পারবেন না। এ ছাড়া, বিগত কয়েক বছর ধরে বেথেল পরিবারের অনেককে পুনরায় ক্ষেত্রে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়েছে। অন্যেরা আবার স্বাস্থ্যগত সমস্যা, পারিবারিক দায়দায়িত্ব অথবা অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণে বিশেষ পূর্ণসময়ের সেবা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

১৬. কীভাবে আমাদের ভাই-বোনেরা তাদের নতুন নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়ে নম্রতা দেখিয়েছে?

১৬ এই ভাই-বোনদের জন্য এইরকম রদবদলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ ছিল না। স্পষ্টতই, তারা তাদের প্রাক্তন কার্যভারকে ভালোবেসে ফেলেছিল আর অনেক ক্ষেত্রে তারা সেই কার্যভার বছরের পর বছর ধরে উপভোগ করেছিল। নতুন নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়ে তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের প্রিয় প্রাক্তন কার্যভার পরিবর্তিত হওয়ার জন্য “শোক” করে থাকে। তবে, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। কেন? যে-প্রধান বিষয়টা তাদের সাহায্য করে, সেটা হল যিহোবার প্রতি তাদের ভালোবাসা। তারা জানে, তারা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে, কোনো পদ অথবা কার্যভারের কাছে নয়। (কল. ৩:২৩) তারা নম্রতার সঙ্গে ক্রমাগত যিহোবার সেবায় যেকোনো কার্যভার পালন করতে পেরে আনন্দিত। তারা এটা জেনে “[তাদের] সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া” দেয় যে, যিহোবা তাদের জন্য চিন্তা করেন।—১ পিতর ৫:৬, ৭.

১৭. ঈশ্বরের বাক্য যে আমাদের নম্রতা গড়ে তোলার বিষয়ে উৎসাহিত করে, সেইজন্য কেন আমরা কৃতজ্ঞ?

১৭ ঈশ্বরের বাক্য যে আমাদের নম্রতা গড়ে তোলার বিষয়ে উৎসাহিত করে, সেইজন্য আমরা কি কৃতজ্ঞ নই? আমরা যখন এই চমৎকার গুণটা গড়ে তুলি, তখন আমরা নিজেরা উপকৃত হই ও সেইসঙ্গে অন্যদের উপকৃত করি। আমরা আরও ভালোভাবে জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী হই। আমরা এটা জেনে কতই-না আনন্দিত, যিহোবা “উচ্চ ও উন্নত” হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নম্র দাসদের ভালোবাসেন এবং মূল্যবান হিসেবে দেখেন!—যিশা. ৫৭:১৫.

গান সংখ্যা ২২ “সদাপ্রভু আমার পালক”

^ অনু. 5 একটা যে-গুরুত্বপূর্ণ গুণ আমাদের গড়ে তুলতে হবে, সেটা হল নম্রতা। নম্রতা কী? কেন আমাদের এটা গড়ে তোলা উচিত? আর কীভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিগুলো আমাদের নম্রতাকে পরীক্ষায় ফেলতে পারে? এই প্রবন্ধে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

^ অনু. 7 ১৯৮৪ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় “যিহোবা আমাকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 8 ৩ অধ্যায়ের ২৩ অনু. দেখুন।

^ অনু. 53 ছবি সম্বন্ধে: প্রেরিত পৌল একজন ভাইয়ের বাড়িতে নম্রতার সঙ্গে অন্যদের সাহচর্য উপভোগ করছেন, যার মধ্যে অল্পবয়সিরাও রয়েছে।

^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই তার চেয়ে কমবয়সি একজন ভাইয়ের কাছ থেকে বাইবেলভিত্তিক পরামর্শ লাভ করছেন।

^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: একজন বয়স্ক ভাই তার চেয়ে কমবয়সি একজন ভাইকে মণ্ডলীতে বিশেষ সুযোগ উপভোগ করতে দেখে ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন না।