অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৮
শান্তির এই সময়কালকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করুন
“দেশ সুস্থির ছিল, এবং কয়েক বৎসর পর্য্যন্ত কেহ তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিল না, কারণ সদাপ্রভু তাঁহাকে বিশ্রাম দিয়াছিলেন।”—২ বংশা. ১৪:৬.
গান সংখ্যা ১০ “এই আমি, আমাকে পাঠাও”
সারাংশ *
১. কখন যিহোবার সেবা করা প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ হতে পারে?
আপনি কী মনে করেন, কখন যিহোবার সেবা করা আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে? যখন আপনি বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে থাকেন অথবা যখন আপনি তুলনামূলকভাবে কম সমস্যার মধ্যে থাকেন? আমরা যখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমরা দ্রুত যিহোবার উপর নির্ভর করি। কিন্তু, আমাদের জীবনে যখন শান্তি থাকে, তখন আমরা কী করি? আমরা কি ঈশ্বরের সেবা করা থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই? এমনটা যে ঘটতে পারে, তা আমরা ইস্রায়েলীদের প্রতি দেওয়া যিহোবার সতর্কবাণী থেকে জানতে পারি।—দ্বিতীয়. ৬:১০-১২.
রাজা আসা দৃঢ়ভাবে মিথ্যা উপাসনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন (২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *
২. রাজা আসা কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
২ রাজা আসা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি যিহোবার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করার মাধ্যমে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি কেবল মন্দ সময়েই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে শান্তির সময়কালেও যিহোবার সেবা করেছিলেন। শুরু থেকেই “আসার অন্তঃকরণ . . . সদাপ্রভুর উদ্দেশে একাগ্র ছিল।” (১ রাজা. ১৫:১৪) যিহূদা থেকে মিথ্যা উপাসনাকে উচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে রাজা আসা যিহোবার প্রতি তার ভক্তি দেখিয়েছিলেন। বাইবেল বলে যে, “তিনি বিজাতীয় যজ্ঞবেদি ও উচ্চস্থলী সকল উঠাইয়া ফেলিলেন, স্তম্ভ সকল খণ্ড খণ্ড করিলেন ও আশেরা-মূর্ত্তি সকল ছেদন করিলেন।” (২ বংশা. ১৪:৩, ৫) তিনি এমনকী তার ঠাকুরমা মাখাকে মাতারানির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কেন? কারণ তিনি লোকেদের প্রতিমাপূজা করার জন্য প্ররোচিত করেছিলেন।—১ রাজা. ১৫:১১-১৩.
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
৩ আসা মিথ্যা উপাসনাকে উচ্ছিন্ন করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিলেন। তিনি যিহূদার লোকেদের যিহোবার কাছে ফিরে আসার জন্য সাহায্য করার মাধ্যমে বিশুদ্ধ উপাসনাকে উচ্চীকৃত করেছিলেন। যিহোবার আশীর্বাদে আসা ও ইস্রায়েলীয়রা এক * আসার রাজত্বে প্রায় দশ বছর “দেশ সুস্থির ছিল” অর্থাৎ দেশে কোনো সমস্যা ছিল না। (২ বংশা. ১৪:১, ৪, ৬) এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, আসা কীভাবে সেই সময়কালকে ব্যবহার করেছিলেন। তারপর, আমরা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করব, যারা আসার মতোই শান্তির সময়কালের সদ্ব্যবহার করেছিলেন। পরিশেষে, আমরা এই প্রশ্নটার উত্তর লাভ করব: আপনার দেশে যদি যিহোবার উপাসনা করার স্বাধীনতা থাকে, তা হলে কীভাবে আপনি শান্তির এই সময়কালকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন?
শান্তির সময়কাল লাভ করেছিল।যেভাবে রাজা আসা শান্তির সময়কালকে ব্যবহার করেছিলেন
৪. দ্বিতীয় বংশাবলি ১৪:২, ৬, ৭ পদ অনুযায়ী কীভাবে আসা শান্তির সময়কালকে ব্যবহার করেছিলেন?
৪ দ্বিতীয় বংশাবলি ১৪:২, ৬, ৭ পদ পড়ুন। আসা লোকেদের বলেছিলেন যে, যিহোবাই “সকল দিকে [তাহাদিগকে] বিশ্রাম দিয়াছেন।” আসা সেই শান্তির সময়কালকে আনন্দফুর্তি করার সময় হিসেবে দেখেননি। এর বিপরীতে, তিনি সেই সময়ে নগর, প্রাচীর, দুর্গ ও দরজা নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন। তিনি যিহূদার লোকেদের বলেছিলেন: “দেশ ত অদ্যাপি আমাদের সম্মুখে আছে।” আসা কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, কোনোরকম বিরোধিতা ছাড়াই দেশের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার এবং নির্মাণ কাজ করার স্বাধীনতা তাদের রয়েছে। তিনি শান্তির সেই সময়কালের সদ্ব্যবহার করার বিষয়ে লোকেদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।
৫. কেন আসা তার সৈন্যদের আরও বেশি শক্তিশালী করেছিলেন?
৫ আসা শান্তির সেই সময়কালকে নিজের সৈন্যদের আরও বেশি শক্তিশালী করার জন্যও ব্যবহার করেছিলেন। (২ বংশা. ১৪:৮) এর মানে কি এই ছিল যে, যিহোবার উপর আসার আস্থা ছিল না? না। এর পরিবর্তে, আসা এটা জানতেন যে, রাজা হিসেবে তার দায়িত্ব হল ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য লোকেদের প্রস্তুত করা। আসা এটাও জানতেন যে, যিহূদার সেই শান্তির সময়কাল সম্ভবত চিরকাল ধরে টিকে থাকবে না আর ঠিক সেটাই ঘটেছিল।
যেভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা শান্তির সময়কালকে ব্যবহার করেছিল
৬. কীভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা শান্তির সময়কালকে ব্যবহার করেছিল?
৬ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা প্রায়ই তাড়িত হয়েছিল, তবে তারা শান্তির সময়কাল উপভোগ করেছিল। খ্রিস্টের শিষ্যরা সেই সময়কালকে কীভাবে ব্যবহার করেছিল? সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করেছিল এবং যিহোবার সেবার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। এই কারণে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এটা দেখায় যে, শান্তির সময়কালে উদ্যোগের সঙ্গে করা তাদের প্রচার কাজের উপর যিহোবা আশীর্বাদ করেছিলেন।—প্রেরিত ৯:২৬-৩১.
৭-৮. পৌল ও অন্য খ্রিস্টানরা যখন সুযোগ পেয়েছিল, তখন তারা কী করেছিল? ব্যাখ্যা করুন।
৭ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা সুসমাচার প্রচার করার প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ইফিষে থাকাকালীন প্রেরিত পৌল যখন এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার সামনে একটা বড়ো দরজা খোলা রয়েছে, তখন তিনি সেই নগরে প্রচার করা এবং শিষ্য তৈরি করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন।—১ করি. ১৬:৮, ৯.
৮ পৌল ও অন্য খ্রিস্টানরা ৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রচার করার আরেকটা সুযোগ পেয়েছিল, যখন ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধীয় সমস্যার মীমাংসা করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১৫:২৩-২৯) পৌল ও অন্য খ্রিস্টানরা ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে যিরূশালেমের প্রেরিত ও প্রাচীনদের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে বিভিন্ন মণ্ডলীতে জানানোর পর শিষ্যরা ‘প্রভুর বাক্যের সুসমাচার প্রচার করিবার’ জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। (প্রেরিত ১৫:৩০-৩৫) এর ফল কী হয়েছিল? বাইবেল বলে “মণ্ডলীগণ বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।”—প্রেরিত ১৬:৪, ৫.
বর্তমানে শান্তির সময়কালকে ব্যবহার করা
৯. বর্তমানে অনেক দেশে কেমন পরিস্থিতি রয়েছে আর আমরা নিজেদের কী জিজ্ঞেস করতে পারি?
৯ বর্তমানে অনেক দেশে আমরা কোনোরকম বিরোধিতা ছাড়াই প্রচার করতে পারি। আপনার দেশে কি প্রচার করার স্বাধীনতা রয়েছে? যদি থেকে থাকে, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কীভাবে আমি এই স্বাধীনতাকে ব্যবহার করছি?’ শেষকাল যিহোবার লোকেদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর কারণ তারা ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো প্রচার ও শিক্ষাদানের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। (মার্ক ১৩:১০) এই কাজে আমরা অনেক কিছু করতে পারি!
অনেকে অন্য একটা দেশে গিয়ে পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে অথবা ভিন্নভাষী ব্যক্তিদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ করছে (১০-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *
১০. দ্বিতীয় তীমথিয় ৪:২ পদ আমাদের কী করার জন্য উৎসাহিত করে?
১০ কীভাবে আপনি শান্তির সময়কালের সদ্ব্যবহার করতে পারেন? (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৪:২.) আপনার পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখুন না কেন? আপনি অথবা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য কি প্রচার কাজে আরও বেশি করে অংশ নিতে পারে, হতে পারে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার মাধ্যমে? এটা প্রচুর পরিমাণে অর্থ ও বস্তুগত বিষয় সঞ্চয় করার সময় নয় কারণ মহাক্লেশের সময়ে এই বিষয়গুলো আমাদের সঙ্গে রক্ষা পাবে না।—হিতো. ১১:৪; মথি ৬:৩১-৩৩; ১ যোহন ২:১৫-১৭.
১১. যতটা সম্ভব বেশি লোকের কাছে সুসমাচার জানানোর জন্য কোনো কোনো ব্যক্তি কী করে?
১১ অনেক প্রকাশক একটা নতুন ভাষা শিখেছে, যাতে তারা যিহোবা সম্বন্ধে জানার জন্য অন্যদের সাহায্য করতে পারে। আরও বেশি ভাষায় প্রচার করার জন্য ঈশ্বরের সংগঠন বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি জুগিয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, ২০১০ সালে প্রায় ৫০০টা ভাষায় আমাদের সাহিত্যাদি পাওয়া যেত। বর্তমানে, ১,০০০-রেরও বেশি ভাষায় সাহিত্যাদি পাওয়া যায়!
১২. নিজেদের মাতৃভাষায় রাজ্যের বার্তা শোনার দ্বারা লোকেরা কীভাবে উপকৃত হয়? একটা উদাহরণ দিন।
১২ লোকেরা যখন নিজেদের মাতৃভাষায় ঈশ্বরের বাক্য থেকে সত্য শোনে, তখন সেটা তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে? একজন বোনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির মেমফিসে আয়োজিত আঞ্চলিক সম্মেলন থেকে উপকৃত হয়েছিলেন। সেই সম্মেলন কিনিয়ারুয়ান্ডা ভাষায় তুলে ধরা হয়েছিল, যে-ভাষায় মূলত রুয়ান্ডা, কঙ্গো (কিনশাসা) ও উগান্ডার লোকেরা কথা বলে থাকে। সম্মেলনের শেষে কিনিয়ারুয়ান্ডাভাষী সেই বোন বলেছিলেন: “১৭ বছর ধরে আমি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি, তবে এখানে আসার পর এই প্রথম বার আমি কোনো আধ্যাত্মিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছি।” স্পষ্টতই, সেই বোন যখন মাতৃভাষায় কার্যক্রম শুনেছিলেন, তখন সেটা তার হৃদয়ে
গভীর ছাপ ফেলেছিল। আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তা হলে আপনি কি আপনার এলাকার লোকেদের সাহায্য করার জন্য অন্য একটা ভাষা শিখতে পারেন? আপনার মণ্ডলীর এলাকার লোকেরা যদি অন্য একটা ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তা হলে তাদের ভাষায় সাক্ষ্য দেওয়া কি উত্তম ফল নিয়ে আসবে না? এটা ঠিক যে, এরজন্য কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন কিন্তু এমনটা করার মাধ্যমে আপনি আনন্দিত হবেন।১৩. রাশিয়ার ভাইয়েরা কীভাবে শান্তির সময়কালকে ব্যবহার করেছিল?
১৩ আমাদের সমস্ত ভাইয়েরা খোলাখুলিভাবে প্রচার করার স্বাধীনতা উপভোগ করে না। কখনো কখনো সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, রাশিয়ার ভাইদের কথা বিবেচনা করুন। বহু দশক ধরে তাড়না ভোগ করার পর ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে সেখানকার সরকার আমাদের উপাসনা করার স্বাধীনতা প্রদান করেছিল। সেইসময়ে রাশিয়ায় প্রায় ১৬,০০০ সাক্ষি ছিল। ২০ বছর পর সেখানে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১,৬০,০০০ ছাড়িয়ে যায়! স্পষ্টতই, ভাইয়েরা প্রচার করার স্বাধীনতার সুযোগকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিল। শান্তির সেই সময়কাল দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকেনি। তবে, পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে বিশুদ্ধ উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ কমে যায়নি। তারা যিহোবার সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত যথাসাধ্য করে থাকে।
শান্তির সময়কাল চিরকাল টিকে থাকবে না
রাজা আসা যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন আর যিহোবা তাকে তার শত্রুদের এক বৃহৎ সৈন্যকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছিলেন (১৪-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৪-১৫. রাজা আসাকে সাহায্য করার জন্য যিহোবা কীভাবে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন?
১৪ রাজা আসার দিনের শান্তির সময়কাল এক সময়ে শেষ হয়েছিল। কূশ দেশ অর্থাৎ ইথিওপিয়া থেকে ১০ লক্ষেরও বেশি শক্তিশালী সৈন্য সেখানে এসেছিল। সেই সৈন্যের সেনাপতি সেরহ এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, তাদের সৈন্যরা যিহূদাকে পরাজিত করবে। তবে, রাজা আসা সৈন্যের সংখ্যার উপর নয় বরং যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন। আসা প্রার্থনায় বলেছিলেন: “হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমাদের সাহায্য কর; কেননা আমরা তোমার উপরে নির্ভর করি, এবং তোমারই নামে এই জন-সমারোহের বিরুদ্ধে আসিয়াছি।”—২ বংশা. ১৪:১১.
১৫ যদিও আসার সৈন্যদের চেয়ে ইথিওপীয় সৈন্যরা সংখ্যায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল, তারপরও আসা এটা জানতেন যে, যিহোবা হলেন ক্ষমতাবান এবং তিনি তাঁর লোকেদের সাহায্য করতে পারেন। আর যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য ২ বংশা. ১৪:৮-১৩.
করেছিলেন। ইথিওপীয় সৈন্যরা পরাজিত হয়েছিল।—১৬. কীভাবে আমরা জানি যে, শান্তির এই সময় চিরকাল টিকে থাকবে না?
১৬ ভবিষ্যতে ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আমাদের প্রতি ঠিক কী কী ঘটবে, আমরা তা জানি না। তবে, আমরা এটা জানি যে, যিহোবার দাসেরা বর্তমানে যে-শান্তির সময়কাল উপভোগ করছে, সেটা চিরকাল টিকে থাকবে না। সত্যি বলতে কী, যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শেষকালে “সমুদয় জাতি” তাঁর শিষ্যদের “দ্বেষ করিবে।” (মথি ২৪:৯) একইভাবে, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীম. ৩:১২) শয়তান “অতিশয় রাগাপন্ন” আর আমরা যদি এইরকমটা ভাবি যে, আমরা কোনোরকমভাবে তার ক্রোধের শিকারে পরিণত হওয়া এড়িয়ে যেতে পারব, তা হলে আমরা নিজেদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছি।—প্রকা. ১২:১২.
১৭. কোন কোন উপায়ে আমাদের বিশ্বাস হয়তো পরীক্ষিত হবে?
১৭ নিকট ভবিষ্যতে আমাদের সবাইকেই বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। শীঘ্রই জগতে “মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই।” (মথি ২৪:২১) সেই সময়ে আমাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো আমাদের বিরোধিতা করবে এবং সরকার হয়তো আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। (মথি ১০:৩৫, ৩৬) আমরা কি সাহায্য ও সুরক্ষা লাভ করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার উপর আস্থা রাখব, ঠিক যেমনটা রাজা আসা রেখেছিলেন?
১৮. ইব্রীয় ১০:৩৮, ৩৯ পদ অনুযায়ী আসন্ন পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৮ যিহোবা এখনই আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করছেন, যাতে ভবিষ্যতে আমরা এক দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে পারি। তিনি “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” প্রদান করার জন্য ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসকে’ নিযুক্ত করেছেন, যাতে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করি। (মথি ২৪:৪৫) তবে, আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশটুকু করতে হবে এবং যিহোবার উপর এক অটল বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।—পড়ুন, ইব্রীয় ১০:৩৮, ৩৯.
১৯-২০. প্রথম বংশাবলি ২৮:৯ পদ অনুযায়ী আমাদের নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?
১৯ রাজা আসার মতো আমাদের “সদাপ্রভুর অন্বেষণ” করতে হবে। (২ বংশা. ১৪:৪; ১৫:১, ২) আমরা যিহোবাকে জানার এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে এই অন্বেষণ করতে শুরু করেছি। আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাই। তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি নিয়মিতভাবে মণ্ডলীর সভায় যোগ দিই?’ সভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবার সেবা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি অর্জন করি এবং ভাই-বোনদের কাছ থেকে সতেজতা লাভ করি। (মথি ১১:২৮) এ ছাড়া, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করি?’ আপনার যদি পরিবার থাকে, তা হলে আপনি কি প্রতি সপ্তাহে পারিবারিক উপাসনা করেন? অথবা আপনি যদি একা হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য প্রতি সপ্তাহে সময় আলাদা করে রাখেন? এ ছাড়া, আপনি কি প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজে যতটা সম্ভব পূর্ণরূপে অংশ নেন?
২০ কেন আমাদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত? বাইবেল বলে যে, যিহোবা আমাদের চিন্তাভাবনা ও অন্তঃকরণ বা হৃদয় পরীক্ষা করেন আর তাই আমাদেরও তা করা উচিত। (পড়ুন, ১ বংশাবলি ২৮:৯.) আর আমরা যদি বুঝতে পারি যে, আমাদের লক্ষ্য, মনোভাব ও চিন্তাভাবনায় কিছু রদবদল করার প্রয়োজন রয়েছে, তা হলে আমাদের সেই রদবদলগুলো করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত। আসন্ন পরীক্ষাগুলোর জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। শান্তির এই সময়কালকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই যেন আমাদের থামিয়ে না দেয়!
গান সংখ্যা ২৮ নতুন গীত
^ অনু. 5 আপনার দেশে কি যিহোবার উপাসনা করার স্বাধীনতা রয়েছে? যদি থেকে থাকে, তা হলে শান্তির এই সময়কালকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন? এই প্রবন্ধ আপনাকে এটা বিবেচনা করতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে আপনি যিহূদার রাজা আসা এবং প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের অনুকরণ করতে পারেন, যারা শান্তির সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিল।
^ অনু. 3 এই অভিব্যক্তির অর্থ: “শান্তি” অভিব্যক্তিটা যুদ্ধবিহীন এক অবস্থার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে চিত্রিত করে। যে-ইব্রীয় শব্দ থেকে এই অভিব্যক্তিটা এসেছে, সেটা সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ধারণাও প্রদান করে।
^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: রাজা আসা তার ঠাকুরমাকে মাতারানির পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন কারণ তার ঠাকুরমা মিথ্যা উপাসনাকে তুলে ধরেছিলেন। আসার অনুগত সমর্থকরা তার উদাহরণ অনুসরণ করেছিল এবং প্রতিমাগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল।
^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: এক উদ্যোগী দম্পতি নিজেদের জীবনকে সাদাসিধে করছেন, যাতে তারা যেখানে আরও বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করতে পারেন।