সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৭

আপনি ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখতে পারেন!

আপনি ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখতে পারেন!

“প্রেম . . . সমস্ত কিছু বিশ্বাস করে, সমস্ত কিছু সহ্য করে।”—১ করি. ১৩:৪, ৭.

গান ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম

সারাংশ a

১. কেন আমরা এটা দেখে অবাক হই না যে, বর্তমানে লোকেরা একে অন্যের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে?

 বর্তমানে লোকেরা একে অন্যের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ব্যাবসায়িক, ধর্মীয় গুরু ও নেতারা এমন এমন কাজ করে, যেটার কারণে লোকেরা তাদের উপর আস্থা রাখতে পারে না। আর এমনকী লোকেরা তাদের বন্ধুবান্ধব, আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরা এবং নিজেদের পরিবারের সদস্যদের উপরও আস্থা রাখতে পারে না। কিন্তু, আমরা এগুলো দেখে অবাক হই না কারণ বাইবেলে অনেক আগে থেকেই লেখা ছিল: ‘শেষকালে লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করবে, নিন্দা করবে, অপবাদ দেবে।’ এর মানে হল, লোকেরা এই বিধিব্যবস্থার ঈশ্বর শয়তানের মতো হবে, যার উপর আস্থা রাখা যায় না।—২ তীম. ৩:১-৪; ২ করি. ৪:৪.

২. (ক) আমরা কাদের উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারি? (খ) কিছু ব্যক্তি হয়তো কী করাকে কঠিন বলে মনে করে?

এই জগতের লোকেরা জানে না, তারা কাদের উপর আস্থা রাখতে পারে। তবে, আমরা তা জানি। আমরা যিহোবার উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারি কারণ তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি তাঁর বন্ধুদের কখনো “পরিত্যাগ” করবেন না। (গীত. ৯:১০; যির. ১৭:৭, ৮) আমরা যিশুর উপরও আস্থা রাখতে পারি কারণ তিনি আমাদের এতটাই ভালোবাসেন যে, আমাদের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দান করেছিলেন। (১ পিতর ৩:১৮) শুধু তা-ই নয়, আমরা বাইবেলে লেখা কথাগুলোর উপরও পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারি কারণ আমরা দেখেছি, সেখানে দেওয়া পরামর্শগুলো আমাদের জীবনে কতটা উপকার নিয়ে আসে। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) কিন্তু, যখন ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখার বিষয়টা আসে, তখন কিছু ব্যক্তি হয়তো তাদের উপর আস্থা রাখাকে কঠিন বলে মনে করে। আসুন দেখি, কেন আমরা তাদের উপরও আস্থা রাখতে পারি।

আমাদের ভাই-বোনদের প্রয়োজন রয়েছে

পুরো পৃথিবীতে থাকা আমাদের ভাই-বোনেরা আমাদের মতোই যিহোবাকে ভালোবাসে আর আমরা তাদের উপর আস্থা রাখতে পারি (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. আমরা সবাই কোন বিশেষ সুযোগ পেয়েছি? (মার্ক ১০:২৯, ৩০)

এটা কত বড়ো বিষয় যে, যিহোবা আমাদের তাঁর পরিবারের অংশ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা একা নই, পুরো পৃথিবীর ভাই-বোনেরা আমাদের সঙ্গে আছে। আর এটা কোনো আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়! (পড়ুন, মার্ক ১০:২৯, ৩০.) আমরা সবাই আলাদা আলাদা ভাষায় কথা বলি, আমাদের জীবনধারা আলাদা এবং আমরা আলাদা আলাদা ধরনের পোশাক পরি। তারপরও, যখন একে অন্যের সঙ্গে আমাদের প্রথম বার দেখা হয়, তখন তাদের খুব আপন বলে মনে হয়। আমরা সবাই যিহোবাকে ভালোবাসি এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি। আর আমরা যখন সবাই একসঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করি, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে।—গীত. ১৩৩:১.

৪. কেন আমাদের ভাই-বোনদের প্রয়োজন রয়েছে?

আজ আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে ভাই-বোনদের নিকটে থাকার প্রয়োজন। কখনো কখনো, আমরা চিন্তার ভারী বোঝার নীচে চাপা পড়ে যাই আর সেইসময় এই ভাই-বোনেরাই আমাদের শক্তিশালী করে। (রোমীয় ১৫:১; গালা. ৬:২) তারা আমাদের উৎসাহিতও করে, যাতে আমরা উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে যেতে পারি এবং তাঁর সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। (১ থিষল. ৫:১১; ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) চিন্তা করুন, যদি ভাই-বোনেরা সঙ্গে না থাকত, তা হলে আমরা কি শয়তানের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারতাম? এই দুষ্ট জগতে জীবন কাটানো আমাদের জন্য কতটা কঠিন হত। খুব তাড়াতাড়ি, শয়তান এবং তার সঙ্গীরা মিলে যিহোবার উপাসকদের উপর আক্রমণ করবে। সেইসময় আমরা কতটা খুশি হব যে, আমরা একা নই, আমাদের ভাই-বোনেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে!

৫. কেন কিছু ভাই-বোন অন্যদের উপর আস্থা রাখতে পারে না?

কিন্তু, কিছু ভাই-বোন অন্য ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখাকে কঠিন বলে মনে করে। হতে পারে, তারা কাউকে নিজের কোনো মনের কথা বলেছে। পরে সে অন্যদের কাছে সেটা বলে দিয়েছে। অথবা কোনো ভাই কিংবা বোন তাদের হয়তো বলেছে, ‘আমি এমনটা করব,’ কিন্তু সেই ভাই কিংবা বোন তেমনটা করেনি। এ ছাড়া, হতে পারে কেউ এমন কিছু বলেছে বা কিছু করেছে, যেটার কারণে তারা খুব দুঃখ পেয়েছে। যখন এইরকম কিছু ঘটে, তখন অন্যদের উপর আস্থা রাখা সত্যিই অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আসুন দেখি, কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখতে পারি।

ভালোবাসা থাকলে আস্থা রাখতে পারব

৬. ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখার জন্য কেন তাদের ভালোবাসা জরুরি? (১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮)

আমরা ভাই-বোনদের উপর তখনই আস্থা রাখতে পারব, যখন আমরা তাদের ভালোবাসব। প্রথম করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে প্রেমের বিষয়ে অনেক কিছু বলা আছে। সেগুলো মনে রাখলে ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখা আমাদের পক্ষে আরও সহজ হবে আর কেউ যদি আমাদের আস্থা ভেঙে দেয়, তা হলে আমরা আবারও তার উপর আস্থা রাখতে পারব। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮.) যেমন, ৪ পদে লেখা আছে, “প্রেম ধৈর্য ধরে এবং দয়া দেখায়।” চিন্তা করুন, প্রতিদিন আমরা কত ভুল করি, তারপরও যিহোবা ধৈর্য ধরেন। তাই, আমাদের কোনো ভাই-বোন যদি এমন কিছু করে, যেটার কারণে আমাদের খারাপ লেগেছে কিংবা আমরা রেগে গিয়েছি, তা হলে আমাদেরও ধৈর্য ধরতে হবে। আর ৫ পদে লেখা আছে, “[প্রেম] দ্রুত রেগে ওঠে না। প্রেম কারো কাছ থেকে পাওয়া আঘাতের হিসাব রাখে না।” তাই, আমাদের ভাই-বোনেরা যদি ভুল কিছু করে দেয় কিংবা এমন কিছু বলে ফেলে, যেটার কারণে আমাদের খুব খারাপ লেগেছে, তা হলে আমরা যেন তাদের ভুলগুলোর ‘হিসাব না রাখি।’ উপদেশক ৭:৯ পদেও লেখা আছে, আমরা যেন কোনো বিষয়ে “সত্বর বিরক্ত” হয়ে না পড়ি। এর পরিবর্তে, আমাদের ইফিষীয় ৪:২৬ পদের কথাগুলো মনে রাখা উচিত, যেখানে লেখা আছে, “সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তোমাদের রাগ পুষে রেখো না।”

৭. মথি ৭:১-৫ পদে দেওয়া নীতিগুলো মনে রাখলে কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখতে পারব?

ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখার জন্য আমাদের তাদের সেই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেওয়াও জরুরি, যেগুলোর উপর যিহোবা মনোযোগ দিয়ে থাকেন। যিহোবা তাদের অনেক ভালোবাসেন এবং তিনি তাদের ভুলগুলোর হিসাব রাখেন না। আমাদেরও এমনটাই করা উচিত। (গীত. ১৩০:৩) তাদের ভুলগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে তাদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আর চিন্তা করা উচিত, তারা কোন কোন ভালো কাজ করতে পারে। (পড়ুন, মথি ৭:১-৫.) প্রেম “সমস্ত কিছু বিশ্বাস করে,” তাই আমাদের এইরকমটা চিন্তা করা উচিত নয়, তারা জেনে-শুনে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। (১ করি. ১৩:৭) তবে, ‘সমস্ত কিছু বিশ্বাস করার’ অর্থ এটাও নয় যে, আমরা চোখ বন্ধ করে ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখব। যিহোবা চান, যেন আমরা তাদের অন্য কাজগুলোর উপরও মনোযোগ দিই এবং তারপর তাদের উপর আস্থা রাখি। b

৮. ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

আমরা যখন কারো সঙ্গে সময় কাটাই এবং তাকে জানতে শুরু করি, তখন তাকে আরও সম্মান করি। ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখার জন্য আমাদের এমনই কিছু করতে হবে। আমাদের ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানতে হবে। তাই, যখন সভাগুলোতে যান, তখন ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলুন এবং তাদের সঙ্গে মিলে প্রচার করুন। মনে রাখবেন, আপনার তাদের উপর আস্থা রাখতে সময় লাগবে। তাই, ধৈর্য ধরুন। হতে পারে, শুরু শুরুতে আপনি তাদের সমস্ত কথা বলবেন না। তবে, ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় আপনি তাদের উপর আরও আস্থা রাখতে পারবেন। তখন আপনি তাদের সঙ্গে আরও কথা বলতে পারবেন। (লূক ১৬:১০) কিন্তু, যদি কোনো ভাই কিংবা বোন আপনার আস্থা ভেঙে দেয়, তা হলে আপনি কী করবেন? এমনটা চিন্তা করবেন না, এখন থেকে আপনি আর কখনো তার উপর আস্থা রাখতে পারবেন না। হয়তো কিছুসময় পর, আপনি আবারও তার উপর আস্থা রাখতে পারবেন। আর যদি কোনো একজন ভাই কিংবা বোন আপনার আস্থা ভেঙে দিয়ে থাকে, তা হলে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি কারো উপরই আস্থা রাখতে পারবেন না। অতীত কালেও কিছু লোক ঈশ্বরের কিছু দাসদের আস্থা ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু, এই কারণে তারা অন্যদের উপর আস্থা রাখা বন্ধ করে দেয়নি। এখন আসুন, তাদের মধ্যে কিছু জনের বিষয় আলোচনা করি।

যারা অন্যদের উপর আস্থা রেখেছিল, তাদের কাছ থেকে শিখুন

এলি চিন্তাভাবনা না করেই হান্নাকে বকেছিলেন। তারপরও, যিহোবা এবং তাঁর নিযুক্ত লোকদের উপর হান্না আস্থা রেখেছিলেন (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. (ক) এলি এবং তার ছেলেদের ভুলগুলো দেখা সত্ত্বেও হান্না কী করেছিলেন? (খ) আপনি হান্নার কাছ থেকে কী শিখতে পারেন? (ছবি দেখুন।)

দায়িত্বে থাকা কোনো ভাই কি কখনো এমন কিছু করেছিলেন, যেটা আপনি হয়তো একদমই আশা করেননি? হান্নার প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। সেই সময় এলি ইজরায়েলের মহাযাজক ছিলেন আর তিনি এবং তার ছেলেরাও আবাসে সেবা করতেন। এলির ছেলেরা খুবই মন্দ কাজ করত, তবে এলি তাদের সংশোধন করেননি। যিহোবা এই সমস্ত কিছু দেখছিলেন, তারপরও তিনি কিছু সময়ের জন্য এলিকে মহাযাজক হিসেবে সেবা করতে দিয়েছিলেন। হান্না চিন্তা করতে পারতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এলি মহাযাজক হিসেবে সেবা করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি যিহোবার উপাসনা করার জন্য আবাসে যাবেন না। কিন্তু, হান্না এমনটা করেননি। একবার তিনি খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন এবং আবাসে গিয়ে প্রার্থনা করছিলেন। এলি যখন তাকে দেখেছিলেন, তখন তার মনে হয়েছিল, হান্না মাতাল হয়ে রয়েছেন। তাই, এলি চিন্তাভাবনা না করেই তাকে বকেছিলেন। (১ শমূ. ১:১২-১৬) হান্না মানত করেছিলেন, যদি তার একটা ছেলে হয়, তা হলে তিনি তাকে আবাসে সেবা করার জন্য দিয়ে দেবেন। হান্না জানতেন, আবাসে এই এলিই তার ছেলের দেখাশোনা করবেন, তারপরও তিনি সেখানে তার ছেলেকে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। (১ শমূ. ১:১১) আর এমনটা ছিল না যে, আবাসে যা-কিছু হচ্ছিল, সেগুলো যিহোবা দেখছিলেন না। সঠিক সময়ে যিহোবা এলির ছেলেদের শাস্তি দিয়েছিলেন। (১ শমূ. ৪:১৭) তবে, সেই সময় পর্যন্ত হান্না যিহোবার উপর এবং সেইসঙ্গে তাঁর নিযুক্ত লোকদের উপর আস্থা রেখেছিলেন। আর যিহোবা তাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার একটা ছেলে হয়, যার নাম তিনি শমূয়েল রাখেন।—১ শমূ. ১:১৭-২০.

১০. কিছু লোক দায়ূদের আস্থা ভেঙে দিয়েছিল, তারপরও দায়ূদ কী করা বন্ধ করেননি?

১০ আপনার একজন ভালো বন্ধু কি কখনো আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন? লক্ষ করুন, রাজা দায়ূদের প্রতি কী ঘটেছিল। অহীথোফল দায়ূদের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন। যখন দায়ূদের ছেলে অবশালোম তার বাবার রাজসিংহাসন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন অহীথোফলও তাকে সাহায্য করেছিলেন। একটু চিন্তা করুন, সেইসময়ে দায়ূদের অনুভূতি কেমন হয়েছিল, তিনি নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তার নিজের ছেলে এবং তার ভালো বন্ধু দু-জনেই তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। কিন্তু, এই কারণে দায়ূদ অন্যদের উপর আস্থা রাখা বন্ধ করেননি। দায়ূদ তার বন্ধু হূশয়ের উপরে আস্থা রেখেছিলেন এবং হূশয় সত্যিই একজন ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি অবশালোমকে সমর্থন করেননি বরং দায়ূদের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি দায়ূদের জন্য নিজের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন।—২ শমূ. ১৭:১-১৬.

১১. নাবলের একজন সেবক কীভাবে অবীগলের উপর আস্থা রেখেছিলেন?

১১ আমরা নাবলের একজন সেবকের কাছ থেকেও শিখতে পারি। নাবল একজন ইজরায়েলীয় এবং অনেক ধনী ব্যক্তি ছিলেন। দায়ূদ এবং তার লোকেরা নাবলের সেবকদের রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু, কিছুসময় পর দায়ূদ যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি তার লোকদের জন্য কিছু খাবার দিতে পারেন কি না, তখন নাবল স্পষ্টভাবে বারণ করে দিয়েছিলেন। এটা শুনে দায়ূদ খুবই রেগে গিয়েছিলেন এবং ভেবে নিয়েছিলেন, তিনি নাবল এবং তার পরিবারের এক জন পুরুষকেও ছাড়বেন না। সেই সময়ের মধ্যে নাবলের একজন সেবক নাবলের স্ত্রী অবীগলের কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। তার জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। তাই, তিনি চাইলে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু, তিনি এমনটা করেননি। তিনি জানতেন, অবীগল একজন বুদ্ধিমতী মহিলা এবং তিনি সমস্ত কিছু সামলে নেবেন। তার আস্থা ছিল, অবীগল তার জীবন রক্ষা করতে পারবেন আর এমনটাই হয়। অবীগল সাহসের সঙ্গে দায়ূদের কাছে গিয়েছিলেন এবং তাকে একটা বড়ো ভুল করা থেকে রক্ষা করেছিলেন। (১ শমূ. ২৫:২-৩৫) অবীগলেরও দায়ূদের উপর আস্থা ছিল যে, দায়ূদ তার কথা শুনবেন এবং কোনো ভুল কাজ করবেন না।

১২. যিশুর শিষ্যেরা অনেক ভুল করেছিলেন, তারপরও তিনি কী করেছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

১২ এখন আসুন, যিশুর উদাহরণ লক্ষ করি। তাঁর শিষ্যেরাও অনেক ভুল করেছিলেন। তারপরও, তিনি তাদের উপর আস্থা রাখা বন্ধ করেননি। (যোহন ১৫:১৫, ১৬) একবার যাকোব ও যোহন যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা তাঁর রাজ্যে তাঁর ডান দিক ও বাঁ-দিকে বসতে চান। তারা যা চাইছিলেন, তা সঠিক ছিল না। কিন্তু, যিশু তাদের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ করেননি বরং প্রেরিত হিসেবে কাজ করে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। (মার্ক ১০:৩৫-৪০) পরে, যে-রাতে যিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই রাতে তাঁর সমস্ত শিষ্য তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। (মথি ২৬:৫৬) কিন্তু, যিশু তাদের উপর আস্থা রাখা বন্ধ করেননি। তিনি খুব ভালোভাবে জানতেন, তাদের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও, যিশু “তাদের শেষ পর্যন্ত ভালোবাসলেন।” (যোহন ১৩:১) পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতকে একটা বড়ো দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, তারা যেন শিষ্য তৈরির কাজে নেতৃত্ব নেয় এবং তাঁর মেষদের দেখাশোনা করেন। (মথি ২৮:১৯, ২০; যোহন ২১:১৫-১৭) আর সত্যিই তারা নির্ভরযোগ্য ছিলেন। মৃত্যু পর্যন্ত তারা যিহোবা ও যিশুর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। আমরা যেমনটা দেখলাম হান্না, দায়ূদ, নাবলের সেবক, অবীগল ও যিশু অসিদ্ধ লোকদের উপর আস্থা রেখেছিলেন। আমরাও তাদের মতো করতে পারি।

যখন কেউ আপনার আস্থা ভেঙে দেয়

১৩. কেন কিছু ব্যক্তি অন্যদের উপর আস্থা রাখতে পারে না?

১৩ আপনি কি কাউকে আপনার মনের কথা বলেছিলেন এবং চেয়েছিলেন, সে যেন সেই কথাটা নিজের মধ্যেই রাখে, অন্য কাউকে না বলে? কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আপনি যখন দেখেছিলেন, সে বিষয়টা অন্যদের কাছে বলে দিয়েছে, তখন আপনার কেমন লেগেছিল? যখন কেউ এভাবে আমাদের আস্থা ভেঙে দেয়, তখন সত্যিই আমাদের খুব খারাপ লাগে। একজন বোনের প্রতি ঠিক এমনই কিছু ঘটেছিল। একদিন বোন ভরসা করে একজন প্রাচীনকে তার অনুভূতির কথা খুলে বলেছিলেন। কিন্তু, সেই প্রাচীন তার স্ত্রীকে বোনের সব কথা বলে দিয়েছিলেন। পরের দিন, প্রাচীনের স্ত্রী যখন সেই বোনকে উৎসাহিত করার জন্য ফোন করেছিলেন, তখন বোনের খুব খারাপ লেগেছিল। বোন চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন, ‘তিনি কীভাবে এই কথাগুলো জানতে পারলেন?’ বোন সেই প্রাচীনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু, বোন এমনটা মনে করেননি, তিনি এখন আর কারো উপর আস্থা রাখতে পারবেন না। এই বিষয়ে তিনি অন্য প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাদের সাহায্যে তিনি আবারও প্রাচীনদের উপর আস্থা রাখতে পেরেছিলেন।

১৪. একজন ভাই কীভাবে প্রাচীনদের উপর আবারও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন?

১৪ একজন ভাই কোনো বিষয় নিয়ে দু-জন প্রাচীনের উপর দীর্ঘসময় ধরে রেগে ছিলেন। তার মনে হয়েছিল, তাদের উপর আস্থা রাখা যাবে না। এরপর, তার একটা কথা মনে পড়ে। এই কথাটা একজন ভাই তাকে বলেছিলেন, যাকে তিনি খুব সম্মান করতেন। তিনি বলেছিলেন, “শয়তান আমাদের শত্রু, আমাদের ভাইয়েরা নয়।” ভাই এই বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তা করেন এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনাও করেন। অবশেষে, তিনি সেই দু-জন প্রাচীনের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন।

১৫. কারো উপর আবারও আস্থা রাখার জন্য কেন সময় লাগতে পারে? একটা উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।

১৫ আপনার প্রতি কি কখনো এমনটা ঘটেছে যে, আপনাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়ার পর সেটা আপনার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে? যখন এমনটা হয়, তখন সত্যিই খুব কষ্ট লাগে। গ্রেটা নামে একজন বোনের প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের কথা, যখন জার্মানিতে নাতসি সরকার শাসন করছিল এবং আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ভাইয়েরা গ্রেটাকে অন্য ভাই-বোনদের জন্য প্রহরীদুর্গ পত্রিকার প্রবন্ধ টাইপ করতে বলেছিলেন। কিন্তু, যখন ভাইয়েরা জানতে পারেন, তার বাবা যিহোবার সাক্ষিদের বিরোধিতা করে, তখন ভাইয়েরা গ্রেটাকে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার প্রবন্ধ টাইপ করতে বারণ করে দেন। তাদের ভয় ছিল, গ্রেটার বাবা নাতসি সরকারকে আমাদের কাজের বিষয়ে বলে দিতে পারে। একটু চিন্তা করুন, যখন গ্রেটার কাছ থেকে সেই দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তখন তার কতটা কষ্ট লেগেছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলেছিল, ততক্ষণ ভাইয়েরা গ্রেটা এবং তার মাকে পড়ার জন্য কোনো প্রহরীদুর্গ পত্রিকাও দেননি। আর যদি রাস্তায় কখনো তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেত, সেই ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে কথাও বলতেন না। ভাইদের এইরকম আচরণ দেখে গ্রেটা অনেক আঘাত পেয়েছিলেন। তাই, সেই ভাইদের ক্ষমা করা এবং তাদের উপর আবারও আস্থা রাখার জন্য গ্রেটার অনেক সময় লেগেছিল। তবে, শেষপর্যন্ত গ্রেটা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন, যিহোবা নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাই, তারও তাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। c

“শয়তান আমাদের শত্রু, আমাদের ভাইয়েরা নয়”

১৬. আমাদের আস্থা যদি ভেঙে যায়, তারপরও কেন আমাদের ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত?

১৬ যদি কোনো ভাই কিংবা বোন আপনারও আস্থা ভেঙে দিয়ে থাকে, তা হলে অন্য ভাই-বোনদের উপর থেকে আপনার আস্থা হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু, এমনটা হতে দেবেন না। ভাই-বোনদের উপর আবারও আস্থা রাখার চেষ্টা করুন। এতে সময় লাগবে ঠিকই, তবে বিশ্বাস করুন, তা করলে মঙ্গলই হবে। এটা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। ধরুন, আপনি এমন কিছু খাবার খেয়েছেন, যেটার কারণে আপনার পেট খারাপ হয়ে গিয়েছে। তা হলে, আপনি কি এইরকম চিন্তা করবেন, এখন থেকে আপনি আর কিছুই খাবেন না? একইভাবে, যদি কোনো ভাই কিংবা বোন একবার আমাদের আস্থা ভেঙে দিয়েছে, এর মানে এই নয় যে, আমরা কখনোই কোনো ভাই কিংবা বোনের উপর আস্থা রাখতে পারব না। আমরা সবাই অসিদ্ধ এবং জানতে-অজান্তে কখনো কখনো ভুল করে ফেলি। তাই, আমাদের একে অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত এবং একে অন্যের উপর আবারও আস্থা রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা আরও আনন্দে থাকব। শুধু তা-ই নয়, আমরা এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারব যেন আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে মণ্ডলীতে এক ভালো পরিবেশ বজায় থাকে, যাতে সবাই একে অন্যের উপর আস্থা রাখতে পারে।

১৭. (ক) কেন ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখা জরুরি? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৭ শয়তানের এই জগতে অন্যদের উপর আস্থা রাখা লোকদের পক্ষে কঠিন বলে মনে হয়। কিন্তু, আমরা আমাদের ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখতে পারি কারণ আমরা তাদের ভালোবাসি এবং তারা আমাদের ভালোবাসে। একে অন্যের উপর আস্থা রাখলে আমাদের মধ্যে একতা থাকবে এবং আমরা আনন্দে থাকব আর ভবিষ্যতে যখন কঠিন সময় আসবে, তখন আমরা সুরক্ষিত থাকব। তবে, কেউ যদি আপনার আস্থা ভেঙে দেয়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? যিহোবার মতো সেই ভাই-বোনদের ভালো গুণগুলোর উপর মনোযোগ দিন। বাইবেলে দেওয়া নীতিগুলো মেনে চলুন। ভাই-বোনদের আরও বেশি করে ভালোবাসুন এবং বাইবেলে দেওয়া বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের উদাহরণ থেকে শিখুন। কেউ যখন আমাদের আস্থা ভেঙে দেয়, তখন সত্যিই আমরা খুব কষ্ট পাই। তবে, আমরা সেই বিষয়কে ভুল যেতে পারি এবং অন্যদের উপর আবারও আস্থা রাখা শিখতে পারি। তখন আমাদের এমন অনেক বন্ধু হবে, যারা “ভাইয়ের চেয়েও বেশী বিশ্বস্ত।” (হিতো. ১৮:২৪, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) এই প্রবন্ধে আমরা শিখেছি, কীভাবে আমরা অন্যদের উপর আস্থা রাখতে পারি। তবে, আমাদের এমন ব্যক্তিও হতে হবে, যাদের উপর অন্যেরা আস্থা রাখতে পারে। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আমরা এমন ব্যক্তি হতে পারি।

গান ৩১ যিহোবার সাক্ষি মোরা!

a আমাদের ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখা খুবই জরুরি। তবে, অনেকসময় তারা এমন কিছু করে ফেলে, যেটার কারণে আমরা তাদের উপর আস্থা রাখতে পারি না। এই প্রবন্ধে আমরা বাইবেলের কিছু নীতির উপর মনোযোগ দেব এবং অতীতের কিছু ব্যক্তির উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব, যারা অন্যদের উপর আস্থা রেখেছিল। এখান থেকে আমরা শিখব, কেন আমাদের ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখা উচিত আর কেউ যদি আমাদের আস্থা ভেঙে দেয়, তা হলে কীভাবে আমরা আবারও তার উপর আস্থা রাখতে পারি।

b বাইবেলে বলা আছে মণ্ডলীর মধ্যে এমন কিছু লোকও থাকতে পারে, যাদের উপর আস্থা রাখা যায় না। (যিহূদা ৪) হতে পারে, তারা ‘বিকৃত শিক্ষার’ মাধ্যমে ভাই-বোনদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। (প্রেরিত ২০:৩০) আমাদের এমন লোকদের কথাগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত নয় আর সেইসঙ্গে তাদের উপর আস্থা রাখাও উচিত নয়।

c গ্রেটার অভিজ্ঞতার বিষয়ে আরও জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৭৪ (ইংরেজি) বইয়ের ১২৯-১৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।