অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৯
গান ১০০ “অতিথি হিসেবে তাদের গ্রহণ করো”
অন্যদের দেওয়ার মাধ্যমে প্রচুর আনন্দ পাওয়া যায়
“নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার মধ্যে আরও বেশি সুখ।”—প্রেরিত ২০:৩৫.
আমরা কী শিখব?
আমরা জানব যে, কোন কোন উপায়ে আমরা অন্যদের সাহায্য করতে পারি এবং অন্যদের দেওয়ার মাধ্যমে যে-আনন্দ পাওয়া যায়, সেটা বৃদ্ধি করতে পারি।
১-২. কেন যিহোবা আমাদের এভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, আমরা অন্যদের কিছু দিলে অনেক আনন্দিত হই?
যিহোবা আমাদের এক বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন আর তা হল, আমরা যখন অন্যদের কিছু দিই বা অন্যদের জন্য কিছু করি, তখন আমরা অনেক আনন্দিত হই। কিন্তু এর মানে এই নয়, আমরা যখন অন্যদের কাছ থেকে কিছু পাই, তখন আমরা খুশি হই না। কেউ যখন আমাদের কোনো উপহার দেয়, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে এবং আমরা অনেক আনন্দ পাই। কিন্তু, যখন আমরা অন্যদের কিছু দিই, তখন আমরা এর চেয়েও বেশি আনন্দ পাই। (প্রেরিত ২০:৩৫) কেন যিহোবা আমাদের এভাবে সৃষ্টি করেছেন?
২ যিহোবা আমাদের এভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা আমাদের আনন্দকে বৃদ্ধি করতে পারি। আমরা যতবেশি অন্যদের সাহায্য করি, ততবেশি আমাদের আনন্দ বৃদ্ধি পায়। তাই, আমাদের আলাদা আলাদা উপায়ে অন্যদের সাহায্য করা উচিত। সত্যিই যিহোবা আমাদের কত অপূর্বভাবে সৃষ্টি করেছেন!—গীত. ১৩৯:১৪.
৩. কেন যিহোবাকে ‘সুখী ঈশ্বর’ বলা হয়েছে?
৩ অন্যদের দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ পাওয়া যায়। তাই, বাইবেলে যিহোবা ঈশ্বরকে ‘সুখী ঈশ্বর’ বলা হয়েছে। (১ তীম. ১:১১) অন্যদের দেওয়ার ক্ষেত্রে যিহোবার মতো আর কেউ হতে পারে না। এই ক্ষেত্রে তিনিই হলেন সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ। আসলে তিনিই প্রথম দেওয়া শুরু করেছেন। প্রেরিত পৌল ঈশ্বর সম্বন্ধে লিখেছিলেন, “তাঁর মাধ্যমেই আমরা জীবন, গতি ও সত্তা লাভ করেছি।” (প্রেরিত ১৭:২৮) বাইবেলে এও লেখা রয়েছে, “সমস্ত উত্তম ও নিখুঁত দান স্বর্গ থেকে আসে” অর্থাৎ যিহোবার কাছ থেকে।—যাকোব ১:১৭.
৪. কীভাবে আমরা আমাদের আনন্দকে বৃদ্ধি করতে পারি?
৪ আমরা সবাই সেই আনন্দ পেতে চাই, যা অন্যদের দেওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়। আমরা যদি যিহোবার মতো হৃদয় থেকে অন্যদের সাহায্য করি, তা হলে আমরাও আমাদের আনন্দকে বৃদ্ধি করতে পারব। (ইফি. ৫:১) এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন এবং আমরা কীভাবে যিহোবার মতো হতে পারি। আমরা এও শিখব, আমরা যখন অন্যদের জন্য কিছু করি আর তারা সেটার জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা দেখায় না, তখন আমরা কী করতে পারি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা আমাদের অন্যদের সাহায্য করে চলতে এবং দেওয়ার মাধ্যমে যে-আনন্দ পাওয়া যায়, সেটা বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করবে।
যিহোবার মতো হৃদয় থেকে অন্যদের দিন
৫. যিহোবা আমাদের কোন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিয়েছেন?
৫ যিহোবা হৃদয় থেকে আমাদের সাহায্য করেন। তিনি বিভিন্ন উপায়ে এটা করে থাকেন। যেমন, তিনি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আমাদের জোগান। আমাদের কাছে আরাম-আয়েশের জন্য সমস্ত কিছু না-ও থাকতে পারে। তবে, যিহোবা এটা খেয়াল রাখেন যেন আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু থাকে, যেমন খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। (গীত. ৪:৮; মথি ৬:৩১-৩৩; ১ তীম. ৬:৬-৮) যিহোবা কি শুধু কর্তব্যের খাতিরে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেন? একদমই না। তাহলে, তিনি কেন আমাদের সাহায্য করেন?
৬. মথি ৬:২৫, ২৬ পদ থেকে আমরা কী শিখি?
৬ যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো দেন, কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন। সৃষ্টির কিছু উদাহরণ দেওয়ার মাধ্যমে যিশু আমাদের এই বিষয়টা বুঝিয়েছিলেন। যিশুর এই কথাগুলোর উপর একটু মনোযোগ দিন, যেটা মথি ৬:২৫, ২৬ পদে লেখা রয়েছে। (পড়ুন।) যিশু পাখিদের বিষয়ে বলেছিলেন, “এরা বোনেও না, কাটেও না কিংবা গোলা ঘরে সঞ্চয়ও করে না, তবুও তোমাদের স্বর্গীয় পিতা এদের খাবার জুগিয়ে দেন।” এরপর তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা কি তাদের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান নও?” এখান থেকে আমরা কী শিখি? যিহোবার কাছে তাঁর লোকেরা পাখিদের চেয়েও অনেক মূল্যবান। তাই, যিহোবা যদি পাখিদের এভাবে যত্ন নিয়ে থাকেন, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদেরও যত্ন নেবেন। যিহোবা একজন বাবার মতো আমাদের অনেক ভালোবাসেন আর তাই তিনি আমাদের সমস্ত কিছু জুগিয়ে দেন।—গীত. ১৪৫:১৬; মথি ৬:৩২.
৭. কীভাবে আমরা যিহোবার মতো হৃদয় থেকে অন্যদের সাহায্য করতে পারি? (ছবিও দেখুন।)
৭ যিহোবার মতো আমরাও লোকদের ভালোবাসি আর তাই আমরা তাদের সাহায্য করি। আপনি কি এমন কোনো ভাই-বোনকে জানেন, যাদের হয়তো খাবার অথবা জামাকাপড়ের প্রয়োজন রয়েছে? যিহোবা আপনার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দিতে পারেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে যিহোবার লোকেরা আরও বেশি করে অন্যদের সাহায্য করে। যেমন, কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন ভাই-বোনেরা প্রয়োজন রয়েছে এমন লোকদের খাবার, জামাকাপড় এবং অন্যান্য জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছিল। অনেক ভাই-বোন বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য হৃদয় থেকে দান দিয়েছিল। এর ফলে, আলাদা আলাদা জায়গায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। যে-ভাই-বোনেরা দান দিয়েছিল, তারা ইব্রীয় ১৩:১৬ পদে বলা এই কথাগুলো মেনে চলেছিল: “ভালো কাজ করতে এবং নিজের যা আছে, তা দিয়ে অন্যদের সাহায্য করতে ভুলে যেয়ো না, কারণ ঈশ্বর এই ধরনের বলিদানে খুবই সন্তুষ্ট হন।”—ইব্রীয় ১৩:১৬.
৮. যিহোবা আমাদের যে-শক্তি দেন, সেটার মাধ্যমে আমরা কী করতে পারি? (ফিলিপীয় ২:১৩)
৮ যিহোবা আমাদের শক্তি দেন। যিহোবার কাছে অসাধারণ শক্তি রয়েছে আর তিনি আনন্দের সঙ্গে তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদেরও শক্তি দেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১৩.) আপনি কি কখনো প্রলোভনের মুখোমুখি হওয়ার সময় কিংবা কোনো সমস্যা সহ্য করার সময় যিহোবার কাছে সাহস চেয়ে প্রার্থনা করেছেন? হতে পারে, আপনি প্রার্থনায় যিহোবাকে বলেছেন: ‘যিহোবা, দয়া করে আজকের দিনটা কাটানোর জন্য আমাকে শক্তি দাও।’ তারপর যিহোবা যখন আপনার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন, তখন আপনি হয়তো প্রেরিত পৌলের মতো এইরকম অনুভব করেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁর মাধ্যমে আমি সব কিছুই করতে পারি।”—ফিলি. ৪:১৩.
৯. যিহোবার মতো অন্যদের সাহায্য করার জন্য কীভাবে আমরা নিজেদের শক্তিকে ব্যবহার করতে পারি? (ছবিও দেখুন।)
৯ যিহোবার শক্তির তুলনায় আমাদের শক্তি কিছুই নয়। তবে, আমরা যিহোবার মতো উদার হতে পারি। কীভাবে? এটা ঠিক যে, আমরা অন্যদের শক্তি দিতে পারব না, কিন্তু আমরা নিজেদের শক্তি ব্যবহার করে অন্যদের সাহায্য করতে পারব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা আমাদের অসুস্থ ও বয়স্ক ভাই-বোনদের জন্য কেনাকাটা করতে পারি কিংবা তাদের ঘরের কাজ করে দিতে পারি। সম্ভব হলে, আমরা কিংডম হল পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সাহায্য করতে পারি। আমরা যখন এই কাজগুলোতে আমাদের শক্তি ব্যবহার করি, তখন আমরা আসলে আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করে চলি।
১০. কীভাবে আপনি আপনার কথার মাধ্যমে অন্যদের উৎসাহিত করতে পারেন?
১০ এটাও মনে রাখুন যে, আমাদের কথাতেও প্রচুর শক্তি রয়েছে। তাই চিন্তা করুন, আপনি কি এমন কোনো ভাই বা বোনকে জানেন, যার উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে? অথবা এমন কোনো ভাই বা বোন কি রয়েছে, যার সান্ত্বনার প্রয়োজন? যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে তাকে উৎসাহিত করুন অথবা সান্ত্বনা দিন। আপনি তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারেন, ফোন করতে পারেন অথবা ই-মেল বা ম্যাসেজ পাঠাতে পারেন কিংবা তাকে কার্ড দিতে পারেন। আপনি তাকে কী বলবেন, তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনাকে অনেক কিছু বলতে হবে, এমন নয় বরং হৃদয় থেকে তার সঙ্গে কথা বলুন। উৎসাহিত করার জন্য কেবল এতটুকুই যথেষ্ট। আর হতে পারে আপনার কথা সেই ভাই বা বোনকে আরও একটা দিন বিশ্বস্ত থাকতে এবং নিজের পরিস্থিতিকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করবে।—হিতো. ১২:২৫; ইফি. ৪:২৯.
১১. আর কোন দিক দিয়ে যিহোবা উদার?
১১ যিহোবা প্রজ্ঞা দেন। যাকোব লিখেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে যদি কারো প্রজ্ঞার অভাব হয়, তা হলে সে ঈশ্বরের কাছে বার বার সেটার জন্য অনুরোধ করুক। এতে তিনি তাকে তা দেবেন, কারণ ঈশ্বর কারো দোষ না খুঁজে সবাইকে উদারভাবে দান করেন।” (যাকোব ১:৫, পাদটীকা) এই পদ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবা তাঁর প্রজ্ঞা নিজের কাছেই রেখে দেন না, কিন্তু অন্যদেরও হৃদয় থেকে তা দেন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তিনি “অসন্তুষ্ট না হয়ে” বা “কারো দোষ না খুঁজে” তা দেন। তিনি আমাদের কখনো এমনটা অনুভব করান না যে, আমরা অযোগ্য এবং বেশি কিছু জানি না। এর পরিবর্তে, তিনি চান আমরা যেন প্রজ্ঞা চাই, যাতে তিনি আমাদের তা দিতে পারেন।—হিতো. ২:১-৬.
১২. অন্যদের সঙ্গে জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?
১২ অন্যদের সঙ্গে জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি? (গীত. ৩২:৮) এটা করার আমাদের কাছে অনেক সুযোগ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা নতুন ব্যক্তিদের শেখাতে পারি, কীভাবে তারা ভালোভাবে প্রচার করতে পারে। প্রাচীনেরা, ভাইদের প্রতি ধৈর্য ধরতে পারে। তারা বাপ্তাইজিত ভাইদের এবং পরিচারক দাসদের শেখাতে পারে যে, তারা কীভাবে মণ্ডলীতে দায়িত্বগুলো পালন করবে। আর যে-ভাই-বোনদের সংগঠনের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা কম অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ভাই-বোনদের তা শেখাতে পারে।
১৩. অন্যদের শেখানোর ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?
১৩ অন্যদের শেখানোর সময় বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় যিহোবাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করুন। যিহোবা তাঁর প্রজ্ঞা নিজের কাছে রেখে দেন না বরং হৃদয় থেকে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। একইভাবে, আমাদের নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। আমাদের এমন চিন্তা করা উচিত নয়, “আমি যদি তাকে সব কিছু শিখিয়ে দিই, তা হলে সে আমার জায়গা নিয়ে নেবে না তো?” অথবা এভাবেও চিন্তা করা উচিত নয়, “আমাকে তো কেউ শেখায়নি, তা হলে সেও নিজে নিজে শিখুক।” এর পরিবর্তে, আমরা যা কিছু জানি, তা আনন্দের সঙ্গে অন্যদের বলতে হবে এবং তাদের শেখানোর জন্য যথাসাধ্য করতে হবে। (১ থিষল. ২:৮) আমাদের তাদের এমনভাবে শেখাতে হবে, যাতে তারাও ‘অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যথাযোগ্য হয়।’ (২ তীম. ২:১, ২) এভাবে, আমরা যখন আমাদের জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেব, তখন আমরা উভয়ই উপকৃত হব এবং আমাদের আনন্দ বৃদ্ধি করতে পারব।
যখন কেউ আপনাকে ধন্যবাদ জানায় না
১৪. যখন আমরা অন্যদের জন্য কিছু করি, তখন বেশিরভাগ লোকই কী করে?
১৪ আমরা যখন হৃদয় থেকে অন্যদের সাহায্য করি, বিশেষ করে আমাদের ভাই-বোনদের, তখন প্রায়ই তারা আমাদের ধন্যবাদ জানায়। তারা হয়তো থ্যাঙ্ক ইউ কার্ড দিয়ে অথবা অন্যান্য উপায়ে কৃতজ্ঞতা জানায়। (কল. ৩:১৫) এভাবে, যখন অন্যেরা আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়, তখন আমাদের আনন্দ আরও বেড়ে যায়।
১৫. কেউ যদি আমাদের ধন্যবাদ না জানায় বা কৃতজ্ঞতা না দেখায়, তা হলে আমরা কী মনে রাখতে পারি?
১৫ এটাও ঠিক যে, কিছু লোক হয়তো আমাদের ধন্যবাদ না-ও জানাতে পারে অথবা কৃতজ্ঞতা না-ও দেখাতে পারে। যেমন, হতে পারে আমরা কোনো ভাই বা বোনকে সাহায্য করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি, কঠোর পরিশ্রম করেছি অথবা আমাদের সম্পদ ব্যবহার করেছি, কিন্তু সে হয়তো এটার প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতাই দেখায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি? হতাশ না হয়ে আমরা কীভাবে আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারি? এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ, প্রেরিত ২০:৩৫ পদ মনে রাখুন, যা দেখায় অন্যেরা আমাদের ধন্যবাদ দিক বা না দিক, এটার উপর আমাদের সুখ বা আনন্দ নির্ভর করে না। কেউ আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাক বা না দেখাক, আমরা আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারি। কীভাবে? আসুন, কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করি।
১৬. আমরা যখন অন্যদের জন্য কিছু করি, তখন আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখতে হবে?
১৬ মনে রাখুন, অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে আপনি যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা করছেন। যিহোবা লোকদের ভালো বিষয় দেন, তা লোকেরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাক অথবা না-ই দেখাক। (মথি ৫:৪৩-৪৮) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি তাঁর মতো অন্যদের দিই আর “কোনো কিছু ফিরে পাওয়ার আশা না” করি, তা হলে আমরা “প্রচুর পুরস্কার” পাব। (লূক ৬:৩৫) “কোনো কিছু” ফিরে পাওয়ার আশা না করার মানে হল, আমরা যেন ধন্যবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার আশা না করি। তাই, কেউ আমাদের ধন্যবাদ দিক বা না দিক, আমরা মনে রাখতে পারি, যিহোবা সবসময় আমাদের ভালো কাজের জন্য আমাদের পুরস্কার দেবেন কারণ “যে খুশিমনে দান করে,” ঈশ্বর সেই ব্যক্তিকেই ভালোবাসেন।—হিতো. ১৯:১৭; ২ করি. ৯:৭.
১৭. যিহোবার মতো হওয়ার জন্য আমরা আর কী করতে পারি? (লূক ১৪:১২-১৪)
১৭ অন্যদের দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও একটা উপায়ে আমরা যিহোবার মতো হতে পারি। এরজন্য আমরা যিশুর দেওয়া পরামর্শ অনুসরণ করতে পারি, যা লূক ১৪:১২-১৪ পদে লেখা রয়েছে। (পড়ুন।) এই পদে যিশু এটা বলছিলেন না যে, তাদের আতিথেয়তা দেখানো ভুল যারা বিনিময়ে আমাদের জন্য কিছু করতে পারে। কিন্তু, যদি আমাদের এমনটা মনে হয়, আমরা কিছু পাওয়ার আশায় অন্যদের সাহায্য করছি, তা হলে আমাদের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সেই ব্যক্তিদেরও আতিথেয়তা দেখাতে হবে এবং তাদের জন্য কিছু করতে হবে, যাদের বিনিময়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এভাবে, আমরা যিহোবার মতো হয়ে উঠতে পারব এবং যখন কেউ আমাদের ধন্যবাদ জানায় না, তখনও আনন্দে থাকতে পারব।
১৮. ভাই-বোনদের সম্বন্ধে আমাদের কী চিন্তা করা উচিত নয় এবং কেন?
১৮ সন্দেহ করবেন না। (১ করি. ১৩:৭) আপনি যখন অন্যদের সাহায্য করেন এবং তারা আপনাকে ধন্যবাদ না জানায়, তখন তাদের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ করবেন না। এর পরিবর্তে এটা চিন্তা করুন, “তারা কি সত্যিই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, না কি তারা ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছে?” হতে পারে আমরা যেভাবে চেয়েছি, লোকেরা সেভাবে আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়নি। আবার কখনো কখনো কিছু ব্যক্তি হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞ হয়, কিন্তু তারা সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। আর কিছু লোক এই ভেবে ইতস্তত বোধ করে যে, আগে তারাই অন্যদের সাহায্য করত, কিন্তু এখন তাদেরই সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে। যাই হোক, আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি, তা হলে আমরা তাদের ভুল বুঝব না বরং আনন্দের সঙ্গে তাদের সাহায্য করে চলব।—ইফি. ৪:২.
১৯-২০. আমরা যখন অন্যদের সাহায্য করি, তখন কেন আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে? (ছবিও দেখুন।)
১৯ ধৈর্য ধরুন। আমাদের হৃদয় থেকে অন্যদের সাহায্য করতে হবে। এই বিষয়ে রাজা শলোমন বলেছিলেন, “তুমি জলের উপরে আপন ভক্ষ্য ছড়াইয়া দেও, কেননা অনেক দিনের পরে তাহা পাইবে।” (উপ. ১১:১) এটা দেখায় যে, আমরা যখন অন্যদের সাহায্য করি, তখন তারা হয়তো ‘অনেক দিন পরে’ আমাদের ধন্যবাদ জানাতে পারে। এটা বোঝার জন্য আসুন একটা উদাহরণের ওপর মনোযোগ দিই।
২০ অনেক বছর আগে একজন সীমা অধ্যক্ষের স্ত্রী, একজন বোনকে চিঠি লিখেছিলেন, যিনি সবেমাত্র বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, সেই বোন যেন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। এর প্রায় আট বছর পর সেই বোন সেই সীমা অধ্যক্ষের স্ত্রীকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। বোন চিঠিতে লিখেছিলেন, “আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে, গত আট বছরে আপনি আমাকে কত সাহায্য করেছেন। আপনি আমাকে যে-চিঠিটা লিখেছিলেন, সেটা পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছিল। এই চিঠিতে আপনি যে-শাস্ত্রপদটা লিখেছিলেন, সেটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল আর আমি সেটা কখনো ভুলতে পারিনি।” a সেই বোন চিঠিতে আরও লিখেছিলেন যে, তিনি কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। যেমন তিনি লিখেছিলেন, “কখনো কখনো আমার মনে হয়েছিল, সব কিছু ছেড়ে চলে যাই আর যিহোবার সেবা করাও ছেড়ে দিই। কিন্তু, আপনি যে-শাস্ত্রপদটা লিখেছিলেন, সেটা আমি সবসময় মনে রেখেছিলাম। সেটা থেকে আমি সাহস পেয়েছিলাম আর আমি কখনো হাল ছেড়ে দিইনি।” বোন আরও লিখেছিলেন, “গত আট বছরে আমি অন্য কোনো কিছু থেকে এতটা সাহস পাইনি, যা আপনার চিঠি এবং এই শাস্ত্রপদটা থেকে পেয়েছি।” একটু কল্পনা করে দেখুন, যখন সীমা অধ্যক্ষের স্ত্রী ‘অনেক দিন পর’ তার চিঠির উত্তর পেয়েছিলেন, তখন তার কেমন লেগেছিল। সত্যিই তিনি হয়তো অনেক খুশি হয়েছিলেন! আমাদের সঙ্গেও এমন কিছু হতে পারে। আমরাও হয়তো কারো জন্য কিছু করেছি আর সে হয়তো অনেক দিন পর আমাদের ধন্যবাদ দিতে পারে।
২১. আপনি কেন যিহোবার মতো অন্যদের হৃদয় থেকে দিতে চান?
২১ আমরা যেমন শুরুতে দেখেছিলাম, যিহোবা আমাদের এক বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যখন অন্যেরা আমাদের কিছু দেয়, তখন আমরা অনেক আনন্দ পাই। কিন্তু, যখন আমরা অন্যদের কিছু দিই, তখন আমরা এর চেয়েও বেশি আনন্দ পাই। ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগে। আর যখন তারা আমাদের ধন্যবাদ জানায় এবং আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়, তখনও আমরা অনেক খুশি হই। কিন্তু, অন্যেরা আমাদের ধন্যবাদ না জানালেও আমরা এটা ভেবে আনন্দিত হতে পারি যে, আমরা যিহোবার চোখে যা সঠিক, তা-ই করেছি। সেইসঙ্গে আমরা মনে রাখতে পারি, আমরা অন্যদের যা-কিছুই দিই না কেন, ‘যিহোবার কাছে আমাদের সেটার চেয়েও বেশি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।’ (২ বংশা. ২৫:৯) যিহোবা আমাদের প্রচুর পরিমাণে দিতে পারেন! এর চেয়ে বড়ো আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে যে, যিহোবা আমাদের পুরস্কার দেবেন। তাই আসুন, আমরা আমাদের পিতা যিহোবার মতো হই আর হৃদয় থেকে অন্যদের দিতে থাকি।
গান ১৭ আমি চাই
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: সীমা অধ্যক্ষের স্ত্রী একজন বোনকে উৎসাহিত করার জন্য তাকে একটা চিঠি লিখছেন। অনেক বছর পর, সীমা অধ্যক্ষের স্ত্রী একটা চিঠি পেয়েছিলেন, যেখানে সেই বোন তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এই ছবিগুলোতে সেই বোনদের দেখানো হয়নি, যাদের অভিজ্ঞতা এই অনুচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে।