প্রত্যাশিত বিষয়ের প্রতি আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করুন
“বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান।”—ইব্রীয় ১১:১.
১, ২. (ক) আমাদের প্রত্যাশিত বিষয় ও অন্য লোকেদের প্রত্যাশিত বিষয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
যিহোবা আমাদের বিভিন্ন চমৎকার প্রত্যাশা প্রদান করেছেন। তিনি নিজের নাম পবিত্রীকৃত করার এবং তাঁর ইচ্ছা স্বর্গে ও পৃথিবীতে পরিপূর্ণ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। (মথি ৬:৯, ১০) আমরা যে-বিষয়গুলো পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, তার মধ্যে এগুলো হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদেরকে স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে অনন্তজীবন দান করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। সেটা কতই-না চমৎকার এক বিষয়! (যোহন ১০:১৬; ২ পিতর ৩:১৩) আর এই শেষকালে যিহোবা যেভাবে তাঁর লোকেদের ক্রমাগত নির্দেশনা ও সমর্থন প্রদান করবেন, তা দেখার জন্যও আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।
২ বাইবেল বলে, বিশ্বাস হল প্রত্যাশিত বিষয়ের “নিশ্চয়জ্ঞান।” এর অর্থ হল যাদের বিশ্বাস রয়েছে, তারা এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত, যিহোবার প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবেই। (ইব্রীয় ১১:১) অন্যদিকে, বর্তমানে অনেক লোক বিভিন্ন বিষয় আশা করে ও পেতে চায়, কিন্তু তাদের সেই আশা যে পরিপূর্ণ হবে, তা তারা নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যক্তি হয়তো লটারি জেতার আশা করতে পারেন, তবে তিনি এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারেন না, তিনি সেটা জিতবেনই। এই প্রবন্ধে আমরা দেখব, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় করার জন্য আমরা কী করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা এটাও আলোচনা করব, দৃঢ়বিশ্বাস কীভাবে আমাদের এখনই সাহায্য করতে পারে।
৩. কেন আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবেই?
গালা. ৫:২২) পবিত্র আত্মা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমরা যখন বুঝতে পারি, তিনি হলেন সর্বশক্তিমান এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ, তখন আমাদের এই আস্থা গড়ে ওঠে, তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। যিহোবা নিজের প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে এমনভাবে উল্লেখ করেন যেন সেগুলো ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে আর তাই তিনি এভাবে বলেন: “হইয়াছে।” (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৬.) আমরা জানি, যিহোবা সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন। তিনি হলেন “বিশ্বসনীয় ঈশ্বর।” তাই, আমাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে তিনি যা-কিছু বলেন, সেই সমস্ত কিছু আমরা বিশ্বাস করি।—দ্বিতীয়. ৭:৯.
৩ আমাদের মধ্যে কেউই বিশ্বাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করিনি। বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা দ্বারা আমাদের হৃদয়কে নির্দেশিত হতে দেওয়া প্রয়োজন। (ঈশ্বরের প্রাচীন কালের দাসেরা, যাদের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল
৪. ঈশ্বরের প্রাচীন কালের দাসদের কোন বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস ছিল?
৪ ইব্রীয় ১১ অধ্যায় থেকে আমরা এমন ১৬ জন পুরুষ ও নারীর নাম জানতে পারি, যাদের যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। এ ছাড়া, এই অধ্যায়ে আরও অনেক ব্যক্তির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা “বিশ্বাস প্রযুক্ত” যিহোবাকে খুশি করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৩৯) তারা সকলে যিহোবার প্রতিজ্ঞাত ‘বংশের’ অপেক্ষায় ছিলেন। তারা জানতেন, এই ‘বংশ’ ঈশ্বরের সমস্ত শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন এবং পৃথিবীকে আবারও পরমদেশে পরিণত করবেন। (আদি. ৩:১৫) আর যিহোবা যে তাদের আবারও জীবনে ফিরিয়ে আনবেন, সেই বিষয়ে ঈশ্বরের এই দাসদের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। অবশ্য, তারা স্বর্গে পুনরুত্থিত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেননি কারণ তখনও যিশুর মাধ্যমে সেই সুযোগ খুলে দেওয়া হয়নি। (গালা. ৩:১৬) এর পরিবর্তে, তারা এক অপূর্ব পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন।—গীত. ৩৭:১১; যিশা. ২৬:১৯; হোশেয় ১৩:১৪.
৫, ৬. অব্রাহাম ও তার পরিবার কী দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন আর তারা কীভাবে তাদের বিশ্বাস দৃঢ় রেখেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৫ যিহোবার এই বিশ্বস্ত দাসদের সম্বন্ধে ইব্রীয় ১১:১৩ পদ বলে: “বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা সকলে মরিলেন; ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন।” তারা নতুন জগৎ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন এবং কল্পনায় সেখানে নিজেদের বসবাস করতে দেখেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন অব্রাহাম। যিশু বলেছিলেন, অব্রাহাম সেই দিন “দেখিবার আশায় উল্লাসিত হইয়াছিলেন।” (যোহন ৮:৫৬) এ ছাড়া, সারা, ইস্হাক, যাকোব ও আরও অনেকে সেই সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন, যখন রাজ্য পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবে, যে-রাজ্যের “স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।”—ইব্রীয় ১১:৮-১১.
৬ কীভাবে অব্রাহাম ও তার পরিবার তাদের বিশ্বাস দৃঢ় রেখেছিলেন? তারা ক্রমাগত যিহোবা সম্বন্ধে শিখেছিলেন। কখনো কখনো, ঈশ্বর তাদের সঙ্গে স্বর্গদূত, দর্শন অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে কথা বলেছিলেন। এ ছাড়া, তারা হয়তো বিশ্বস্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এবং প্রাচীন লেখাগুলো থেকেও শিখেছিলেন। অব্রাহাম ও তার পরিবার ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো কখনো ভুলে যাননি আর তারা সেগুলো নিয়ে ধ্যান করতে ভালোবাসতেন। ফল স্বরূপ, যিহোবা যে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন, সেই ব্যাপারে তাদের কোনো সন্দেহই ছিল না। তাই, তারা এমনকী কঠিন সময়ে অথবা তাড়নার সময়েও তাঁর প্রতি অনুগত ছিলেন।
৭. আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় করার জন্য যিহোবা কী দিয়েছেন আর আমাদের কী করতে হবে?
৭ কী আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে? যিহোবা ভবিষ্যতের বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাইবেল দিয়েছেন। বাইবেলের মধ্যে তিনি দেখিয়েছেন, সুখী হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে। তাই, প্রতিদিন বাইবেল পড়া ও এর নির্দেশনা অনুসরণ করা আমাদের জন্য উপকারজনক। (গীত. ১:১-৩; পড়ুন, প্রেরিত ১৭:১১.) এ ছাড়া, যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ মাধ্যমে আমাদের “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” দেন। (মথি ২৪:৪৫) ঈশ্বরের প্রাচীন কালের দাসদের মতো, আমাদেরও নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে পড়তে হবে ও সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করতে হবে। এটা আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকতে এবং সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে সাহায্য করবে, যখন তাঁর রাজ্য পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবে।
৮. কীভাবে প্রার্থনা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে পারে?
৮ যিহোবার প্রাচীন কালের দাসদের বিশ্বাস দৃঢ় রাখার জন্য আর কোন বিষয়টা সাহায্য করেছিল? তারা সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন আর তারা যখন দেখেছিলেন, তিনি তাদের প্রার্থনার উত্তর দেন, তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছিল। (নহি. ১:৪, ১১; গীত. ৩৪:৪, ১৫, ১৭; দানি. ৯:১৯-২১) একইভাবে, আমরাও যখন দেখি, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনছেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো একেবারে উপযুক্ত সময়ে জুগিয়ে দিচ্ছেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। (পড়ুন, ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.) এ ছাড়া, আমাদের যিহোবার কাছে পবিত্র আত্মা ‘যাচ্ঞা করিতে’ বা করে চলতে হবে, যাতে আমরা আরও বেশি বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি।—লূক ১১:৯, ১৩.
৯. কোন বিষয়গুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?
৯ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় আমাদের শুধু নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যাচ্ঞা করা উচিত নয়। আমাদের প্রতিদিন তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত ও তাঁর প্রশংসা করা উচিত। কারণ তিনি আমাদের জন্য অসংখ্য চমৎকার বিষয় জুগিয়ে যাচ্ছেন! (গীত. ৪০:৫) এ ছাড়া, যিহোবার লোকেরা বিশ্বব্যাপী তাদের ভাই-বোনদের জন্যও প্রার্থনা করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা “বন্দিগণকে স্মরণ” করি এবং ‘নেতাদিগের’ বা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের জন্যও প্রার্থনা করি। যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন, তা যখন আমরা দেখতে পাই, তখন তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় আর আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হই।—ইব্রীয় ১৩:৩, ৭.
তারা অনুগত ছিলেন
১০. কোন বিষয়টা অনেক ব্যক্তিকে সাহসী হতে ও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করেছিল?
১০ ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “নারীগণ আপন আপন মৃত লোককে পুনরুত্থান দ্বারা পুনঃপ্রাপ্ত হইলেন; অন্যেরা প্রহার দ্বারা নিহত হইলেন, মুক্তি গ্রহণ করেন নাই, যেন শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থানের ভাগী হইতে পারেন।” (ইব্রীয় ১১:৩৫) অনেকে পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন ও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন কারণ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত পুনরুত্থানের প্রতি তাদের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। তারা জানতেন, ভবিষ্যতে যিহোবা তাদের জীবনে ফিরিয়ে আনবেন আর তারা চিরকাল এই পৃথিবীতে বাস করবেন। নাবোৎ ও সখরিয়ের কথা চিন্তা করুন। ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার কারণে তাদের পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছিল। (১ রাজা. ২১:৩, ১৫; ২ বংশা. ২৪:২০, ২১) দানিয়েলকে ক্ষুধার্ত সিংহের গর্তে ও তার বন্ধুদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তারা যিহোবার প্রতি আনুগত্যহীন হয়ে পড়ার চেয়ে বরং মৃত্যুকে বরণ করে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। তাদের এই ব্যাপারে দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা তাদের পবিত্র আত্মা দেবেন ও কষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করবেন।—দানি. ৩:১৬-১৮, ২০, ২৮; ৬:১৩, ১৬, ২১-২৩; ইব্রীয় ১১:৩৩, ৩৪.
১১. ভাববাদীদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের বিশ্বাসের কারণে কোন পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন?
১১ অনেক ভাববাদীকে, যেমন মীখায় ও যিরমিয়কে উপহাস করা হয়েছিল অথবা কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল। আবার অন্যেরা, যেমন এলিয় ‘প্রান্তরে প্রান্তরে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায় ও পৃথিবীর গহ্বরে গহ্বরে ভ্রমণ করিয়াছিলেন।’ তারা সকলে কষ্ট সহ্য করেছিলেন ও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন কারণ তাদের “প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান” ছিল।—ইব্রীয় ১১:১, ৩৬-৩৮; ১ রাজা. ১৮:১৩; ২২:২৪-২৭; যির. ২০:১, ২; ২৮:১০, ১১; ৩২:২.
১২. আমাদের অনুকরণের জন্য সর্বোত্তম উদাহরণ কে আর কোন বিষয়টা তাঁকে পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করেছিল?
১২ যিশু খ্রিস্ট সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন ও যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। কোন বিষয়টা তাঁকে কষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করেছিল? পৌল বলেছিলেন: “তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” (ইব্রীয় ১২:২) পৌল এরপর খ্রিস্টানদের ‘তাঁহাকেই আলোচনা করিতে’ অর্থাৎ যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করতে উৎসাহিত করেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:৩.) যিশুর মতো, প্রথম শতাব্দীর অনেক খ্রিস্টানও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আন্তিপা। (প্রকা. ২:১৩) ঈশ্বরের প্রাচীন কালের দাসেরা, যারা পৃথিবীতে জীবন লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন, তাদের বিপরীতে এই খ্রিস্টানরা ইতিমধ্যে তাদের পুরস্কার লাভ করেছেন। (ইব্রীয় ১১:৩৫) ১৯১৪ সালে যিশু রাজা হওয়ার অল্পসময় পর, সেই মৃত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা স্বর্গে পুনরুত্থিত হয়ে অমর জীবন লাভ করেছেন আর ভবিষ্যতে তারা তাঁর সঙ্গে মানবজাতির উপর শাসন করবেন।—প্রকা. ২০:৪.
ঈশ্বরের বর্তমান সময়ের দাসেরা, যাদের দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে
১৩, ১৪. রাডল্ফ গ্রাইকেন কোন কোন পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন আর কোন বিষয়টা তাকে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করেছিল?
১৩ বর্তমানে ঈশ্বরের লক্ষ লক্ষ দাস যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করছে। তারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে ধ্যান করে ও পরীক্ষার সময়েও তাঁর প্রতি অনুগত থাকে। রাডল্ফ গ্রাইকেনের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি ১৯২৫ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি যখন ছোটো ছিলেন, তখন তার বাবা-মা তাদের ঘরে বাইবেলে বর্ণিত বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি টাঙিয়ে রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘একটা ছবিতে দেখানো হয়েছিল, নেকড়ে ও যিশা. ১১:৬-৯) এটা ভাই রাডল্ফকে পরমদেশ পৃথিবী সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করতে ও সেটার প্রতি তার বিশ্বাস দৃঢ় করতে সাহায্য করেছিল। ফল স্বরূপ, নাতসি গেস্টাপো এবং পূর্ব জার্মানির সাম্যবাদী সরকারের শ্টাজি-র কাছ থেকে চরম তাড়নার শিকার হওয়া সত্ত্বেও, তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন।
ভেড়ার ছানা, ছাগল ছানা ও চিতাবাঘ, বাছুর ও সিংহ—সকলে শান্তিতে আছে আর একটা ছোটো বালক তাদের চালাচ্ছে।’ (১৪ ভাই রাডল্ফ আরও অনেক পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন। তার মা রেভেন্সব্রুক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে টাইফাস নামে এক সংক্রামক রোগে মারা গিয়েছিলেন। তার বাবা এমন একটা দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, তিনি এখন থেকে আর যিহোবার সাক্ষি নন। কিন্তু ভাই রাডল্ফ দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর, তিনি একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেছিলেন। তারপর, তাকে গিলিয়েড স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং চিলিতে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তিনি আবারও একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেছিলেন। সেখানে তিনি প্যাটসি নামে একজন মিশনারি বোনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এক বছর পর তাদের শিশুকন্যা মারা গিয়েছিল। এর কিছু সময় পর, বোন প্যাটসিও মারা গিয়েছিলেন। তার বয়স ছিল মাত্র ৪৩ বছর। এসব পরীক্ষা সত্ত্বেও ভাই রাডল্ফ যিহোবার সেবা করে গিয়েছেন। এমনকী বৃদ্ধ বয়সে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী ও প্রাচীন হিসেবে সেবা করেছিলেন। আমরা ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২০-২৫ পৃষ্ঠায় তার জীবনকাহিনি পড়তে পারি। [১]
১৫. বর্তমানের কিছু ভাই-বোনের উদাহরণ তুলে ধরুন, যারা তাড়না সত্ত্বেও আনন্দ সহকারে যিহোবাকে সেবা করে যাচ্ছেন।
১৫ বর্তমানে, আমাদের অনেক ভাই ও বোন চরম তাড়নার শিকার হওয়া সত্ত্বেও আনন্দ সহকারে যিহোবাকে সেবা করে থাকে। তাদের মধ্যে শত শত ব্যক্তি “খড়্গ ধারণ” করতে প্রত্যাখ্যান করার কারণে এরিট্রিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার কারাগারে বন্দি রয়েছে। (মথি ২৬:৫২) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভাই আইজাক, নেগেদে ও পাউলোস ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এরিট্রিয়ার একটা কারাগারে বন্দি আছেন! তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। আর এই পরিস্থিতির কারণে তারা নিজেদের পরিবার গড়ে তুলতে পারেননি কিংবা তাদের বাবা-মায়েরও যত্ন নিতে পারেননি। তা সত্ত্বেও, তারা যিহোবার প্রতি অনুগত আছেন এবং তাদের বিশ্বাস দৃঢ় আছে। এমনকী কারাগারের রক্ষীরাও এখন তাদের সম্মান করেন। jw.org ওয়েবসাইটের ইংরেজি সংস্করণে এই ভাইদের একটা ছবি রয়েছে। কষ্টভোগ করা সত্ত্বেও, সেই ছবিতে তাদের হাসিমুখ দেখা যায়।
১৬. দৃঢ়বিশ্বাস আপনাকে কী করতে সাহায্য করে?
১৬ যিহোবার অধিকাংশ দাস সবেমাত্র উল্লেখিত আমাদের ভাইদের মতো কারাগারে বন্দি হয়নি অথবা কঠোর আচরণের শিকার হয়নি। তবে অনেকে দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা গৃহযুদ্ধের কারণে কষ্টভোগ করেছে। অন্যেরা অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব ও মোশির উদাহরণ অনুসরণ করেছে এবং খ্যাতি কিংবা ধনসম্পদ অর্জনের আশা ত্যাগ করে যিহোবার সেবার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছে। কোন বিষয়টা আমাদের ভাই-বোনদেরকে যিহোবার সেবায় সুখী থাকতে সাহায্য করেছে? যিহোবার প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি তাদের দৃঢ়বিশ্বাস। তারা জানে, তিনি নতুন জগতে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের অনন্তজীবন দান করবেন আর সেখানে কোনো অবিচার থাকবে না।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৫, ৭, ৯, ২৯.
১৭. কীভাবে আপনি দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে পারবেন আর পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
১৭ এই প্রবন্ধে আমরা দেখেছি, কীভাবে বিশ্বাস “প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান” প্রদান করে। এই ধরনের বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে ধ্যান করতে হবে। তা হলে, আমরা যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করতে পারব। পরের প্রবন্ধে, বিশ্বাস থাকার অর্থ কী, সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
^ [১] (১৪ অনুচ্ছেদ) এ ছাড়া, ২০০২ সালের ২২ এপ্রিল সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “বিভিন্ন পরীক্ষা সত্ত্বেও আমার আশা উজ্জ্বল ছিল” শিরোনামের প্রবন্ধ থেকে স্লোভাকিয়ার আন্দ্রেজ হানাকের জীবনকাহিনি দেখুন।