সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সত্য কথা বলুন

সত্য কথা বলুন

“আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও।”​—সখ. ৮:১৬.

গান সংখ্যা: ৩৪, ১৮

১, ২. দিয়াবল মানবজাতিকে সবচেয়ে বেশি আঘাত দেওয়ার জন্য কী করেছিল?

কিছু উদ্ভাবন যেমন, টেলিফোন, ইলেকট্রিক বাল্ব, গাড়ি ও ফ্রিজ জীবনকে আরও উন্নত করে তুলেছে। আবার অন্যান্য উদ্ভাবন যেমন বারুদ, মাটিতে পোতা বিস্ফোরক, সিগারেট ও পারমাণবিক বোমা জীবনকে আরও বিপদজনক করে তুলেছে। কিন্তু, এই সমস্ত কিছুর চেয়ে আরও পুরোনো একটা বিষয় রয়েছে, যেটা মানবজাতিকে সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছে। সেটা কী? মিথ্যা কথা! মিথ্যা কথা বলা হল কাউকে প্রতারিত করার বা ঠকানোর জন্য এমন কিছু বলা, যেটা সত্য নয় বলে আমরা জানি। কে প্রথম মিথ্যা কথা বলেছিল? দিয়াবল! যিশু খ্রিস্ট তাকে “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা” বলেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ৮:৪৪.) কখন সে প্রথম মিথ্যা কথা বলেছিল?

সে এটা হাজার হাজার বছর আগে এদন উদ্যানে বলেছিল। আদম ও হবা সেই অপূর্ব পরমদেশে জীবন উপভোগ করছিলেন, যেটা যিহোবা তাদের জন্য তৈরি করেছিলেন। ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন, তারা যদি ‘সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ’ থেকে ফল খান, তা হলে তারা মারা যাবেন। যদিও শয়তান এই বিষয়টা জানত, তারপরও সে একটা সাপকে ব্যবহার করে হবাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না।” সেটাই ছিল সর্বপ্রথম মিথ্যা। শয়তান আরও বলেছিল: “ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”—আদি. ২:১৫-১৭; ৩:১-৫.

৩. কেন শয়তানের সেই মিথ্যা কথাটা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল এবং সেই মিথ্যা কথার কারণে কী ঘটেছিল?

শয়তানের সেই মিথ্যা কথাটা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল কারণ সে জানত, হবা যদি তার কথা বিশ্বাস করেন ও সেই ফল খান, তা হলে তিনি মারা যাবেন। আর ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। হবা ও পরে আদম যিহোবার আজ্ঞার অবাধ্য হয়েছিলেন এবং পরিশেষে মারা গিয়েছিলেন। (আদি. ৩:৬; ৫:৫) এর চেয়ে বড়ো বিষয় হল আদমের পাপের কারণে “মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল।” সত্যি বলতে কী, “যাহারা আদমের আজ্ঞালঙ্ঘনের সাদৃশ্যে পাপ করে নাই, . . . তাহাদের উপরেও মৃত্যু রাজত্ব করিয়াছিল।” (রোমীয় ৫:১২, ১৪) এই কারণেই আমরা সিদ্ধ নই এবং ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য অনুযায়ী চিরকাল বেঁচে থাকি না। এর পরিবর্তে, আমরা কেবল “সত্তর বৎসর; বলযুক্ত হইলে আশী বৎসর” বেঁচে থাকি আর আমাদের জীবন ‘ক্লেশ ও দুঃখে’ পরিপূর্ণ। (গীত. ৯০:১০) এই সমস্ত কিছু শয়তানের মিথ্যা কথার কারণে ঘটেছে!

৪. (ক) আমাদের অবশ্যই কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে? (খ) গীতসংহিতা ১৫:১, ২ পদ অনুযায়ী একমাত্র কারা যিহোবার বন্ধু হতে পারে?

যোহন ৮:৪৪ পদে যিশু শয়তানের বিষয়ে বলেছিলেন: “সে . . . সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই।” শয়তান পরিবর্তিত হয়নি। সে এখনও তার বিভিন্ন মিথ্যার দ্বারা ‘সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মাচ্ছে।’ (প্রকা. ১২:৯) কিন্তু আমরা চাই না যে, শয়তান আমাদের ভ্রান্ত করুক। তাই, আমাদের তিনটে প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। কীভাবে শয়তান বর্তমানে লোকেদের ভ্রান্ত করছে? কেন লোকেরা মিথ্যা কথা বলে? আর কীভাবে আমরা সবসময় সত্য কথা বলতে পারি, যাতে আমরা আদম ও হবার মতো যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হারিয়ে না ফেলি?—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৫:১, ২.

যেভাবে শয়তান মানুষকে ভ্রান্ত করছে

৫. কীভাবে শয়তান বর্তমানে লোকেদের ভ্রান্ত করছে?

আমরা শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।” (২ করি. ২:১১) আমরা জানি, শয়তান সমগ্র জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যেটার অন্তর্ভুক্ত হল মিথ্যা ধর্ম, কলুষিত সরকার ও লোভী ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। (১ যোহন ৫:১৯) তাই, আমরা এতে অবাক হই না যে, শয়তান ও তার মন্দদূতেরা ক্ষমতাশালী লোকেদের ‘মিথ্যা’ কথা বলার জন্য প্রভাবিত করে। (১ তীম. ৪:১, ২) উদাহরণ স্বরূপ, কোনো কোনো ব্যবসায়ী ক্ষতিকর পণ্য বিক্রি করার অথবা লোকেদের ঠকিয়ে তাদের টাকাপয়সা নেওয়ার জন্য নিজেদের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা কথা বলে।

৬, ৭. (ক) ধর্মীয় নেতারা যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন কেন সেটা খুবই খারাপ হয়? (খ) আপনি ধর্মীয় নেতাদের কোন কোন মিথ্যা কথা বলতে শুনেছেন?

ধর্মীয় নেতারা যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন সেটা খুবই খারাপ হয়। কেন? কারণ কোনো ব্যক্তি যদি তাদের মিথ্যা শিক্ষায় বিশ্বাস করেন এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ঘৃণার্হ কাজগুলো করেন, তা হলে তিনি হয়তো চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ হারাতে পারেন। (হোশেয় ৪:৯) যিশু জানতেন, তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতারা লোকেদের প্রতারিত করছিল। তিনি নির্ভীকভাবে তাদের বলেছিলেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ এক জনকে যিহূদী-ধর্ম্মাবলম্বী করিবার জন্য তোমরা সমুদ্রে ও স্থলে পরিভ্রমণ করিয়া থাক; আর যখন কেহ হয়, তখন তাহাকে . . . নারকী করিয়া তুল” অর্থাৎ অনন্ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দাও। (মথি ২৩:১৫) যিশু বলেছিলেন, সেই মিথ্যা ধর্মীয় নেতারা ঠিক তাদের পিতা দিয়াবলের মতোই, যে হল “নরঘাতক।”—যোহন ৮:৪৪.

আমাদের দিনেও অনেক ধর্মীয় নেতা রয়েছে। তারা হয়তো পাদরি, যাজক, রব্বি, স্বামীজি অথবা অন্যান্য উপাধির দ্বারা পরিচিত। ফরীশীদের মতোই তারাও ঈশ্বরের বাক্য থেকে সত্য শেখায় না কিন্তু এর পরিবর্তে, ‘মিথ্যার সহিত ঈশ্বরের সত্য পরিবর্ত্তন করে।’ (রোমীয় ১:১৮, ২৫) তাদের কিছু মিথ্যা শিক্ষা হল মানুষকে নরকাগ্নির যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, মানুষের অমর আত্মা রয়েছে, মৃতদের পুনর্জন্ম হয় এবং ঈশ্বর সমকামী জীবনধারা ও সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের বিবাহকে গ্রহণ করেন।

৮. রাজনৈতিক নেতারা শীঘ্রই কোন মিথ্যা কথা বলবে কিন্তু সেটার প্রতি আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

রাজনৈতিক নেতারাও লোকেদের প্রতারিত করার জন্য মিথ্যা কথা ব্যবহার করেছে। শীঘ্রই, তারা সবচেয়ে বড়ো একটা মিথ্যা কথা বলবে আর সেটা হল তারা জগতে “শান্তি ও অভয়” নিয়ে এসেছে। কিন্তু ‘তখনই তাহাদের কাছে আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হইবে।’ তাই, আমাদের এই রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস করা উচিত নয়, যারা বলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সত্য বিষয়টা হল আমরা ‘বিলক্ষণ জানি, রাত্রিকালে যেমন চোর, তেমনি প্রভুর [ঈশ্বরের] দিন আসিতেছে।’—১ থিষল. ৫:১-৪.

যে-কারণে লোকেরা মিথ্যা কথা বলে

৯, ১০. (ক) কেন লোকেরা মিথ্যা কথা বলে এবং এর পরিণতি কী হয়? (খ) যিহোবার বিষয়ে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

বর্তমানে কেবল ক্ষমতাশালী লোকেরাই যে মিথ্যা কথা বলে, এমন নয়। ওয়াই. ভট্টাচার্য তার লেখা “যে-কারণে আমরা মিথ্যা কথা বলি” শিরোনামের ইংরেজি প্রবন্ধে বলেন, “মিথ্যা কথা বলাটা মানুষের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে থাকা একটা বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।” অন্যভাবে বললে, লোকেরা মনে করে যে, মিথ্যা কথা বলা হল একটা স্বাভাবিক ও সাধারণ বিষয়। লোকেরা প্রায়ই নিজেদের বাঁচানোর জন্য—হতে পারে, তাদের করা কোনো ভুল অথবা অপরাধ গোপন করার জন্য—মিথ্যা কথা বলে। এ ছাড়া, তারা টাকা কামানোর অথবা অন্য কোনো উপায়ে উপকার লাভ করার জন্য মিথ্যা কথা বলে। সেই প্রবন্ধ আরও বলে যে, কোনো কোনো ব্যক্তির “অপরিচিত লোকেদের, সহকর্মীদের, বন্ধুদের ও প্রিয়জনদের কাছে” মিথ্যা কথা বলতে কোনো সমস্যাই হয় না।

১০ এই সমস্ত মিথ্যা কথার পরিণতি কী হয়? লোকেরা একে অন্যকে আর বিশ্বাস করে না এবং সম্পর্ক ভেঙে যায়। উদাহরণ স্বরূপ কল্পনা করুন, একজন বিশ্বস্ত স্বামী যখন জানতে পারেন যে, তার স্ত্রী কারো সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন এবং সেটা গোপন করার জন্য তার কাছে মিথ্যা কথা বলেছেন, তখন সেই স্বামী কতটা ভেঙে পড়েন। অথবা কল্পনা করুন, একজন পুরুষ যখন বাড়িতে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন কিন্তু অন্যদের সামনে তাদের প্রতি প্রেমময় ও যত্নশীল আচরণ করার ভান করেন, তখন তা কতই-না দুঃখজনক হয়। এই ধরনের লোকেরা অন্যান্য মানুষকে প্রতারিত করতে পারে ঠিকই কিন্তু আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, তারা যিহোবাকে প্রতারিত করতে পারে না। বাইবেল বলে, তাঁর কাছে “সকলই নগ্ন ও অনাবৃত।”—ইব্রীয় ৪:১৩.

১১. অননিয় ও সাফীরার মন্দ উদাহরণ আমাদের কী শেখায়? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ বাইবেলে এক খ্রিস্টান দম্পতির মন্দ উদাহরণ রয়েছে, যাদেরকে শয়তান ঈশ্বরের কাছে মিথ্যা কথা বলতে প্ররোচিত করেছিল। অননিয় ও সাফীরা প্রেরিতদের প্রতারিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তারা তাদের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছিলেন এবং সেই টাকার কিছু অংশ প্রেরিতদের দিয়েছিলেন। অননিয় ও সাফীরা মণ্ডলীর অন্যদের অভিভূত করতে চেয়েছিলেন আর তাই, তারা প্রেরিতদের বলেছিলেন যে, তারা সেই সম্পত্তির সমস্ত টাকাই দান করেছেন। কিন্তু যিহোবা জানতেন যে, তারা মিথ্যা কথা বলছেন আর তাই, তিনি তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ৫:১-১০.

১২. যে-সমস্ত লোক বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা কথা বলে এবং অনুতপ্ত হয় না, তাদের প্রতি কী ঘটবে আর কেন?

১২ যিহোবা সেই লোকেদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন, যারা মিথ্যা কথা বলে? যে-সমস্ত লোক বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা কথা বলে এবং অনুতপ্ত হয় না, তাদেরকে শয়তানের মতোই ‘অগ্নির হ্রদে’ নিক্ষেপ করা হবে। অন্যভাবে বললে, তাদের চিরতরে ধ্বংস করা হবে। (প্রকা. ২০:১০; ২১:৮; গীত. ৫:৬) কেন? কারণ যিহোবা এইরকম মিথ্যাবাদীদের সেইসমস্ত অন্যান্য লোকের মতো একই দৃষ্টিতে দেখেন, যারা ‘কুক্কুরগণের’ মতো আচরণ করে অর্থাৎ যাদের কাজগুলো ঈশ্বরের চোখে ঘৃণার্হ।—প্রকা. ২২:১৫.

১৩. যিহোবা সম্বন্ধে আমরা কী জানি এবং সেটা আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?

১৩ আমরা জানি, যিহোবা “মনুষ্য নহেন যে মিথ্যা বলিবেন” এবং “মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য।” (গণনা. ২৩:১৯; ইব্রীয় ৬:১৮) ‘মিথ্যাবাদী জিহ্বা সদাপ্রভুর ঘৃণিত।’ (হিতো. ৬:১৬, ১৭) আমরা যদি তাঁকে খুশি করতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই সত্য কথা বলতে হবে। তাই, আমরা ‘এক জন অন্য জনের কাছে মিথ্যা কথা কহি না।’—কল. ৩:৯.

আমরা ‘সত্য বলি’

১৪. (ক) কী সত্য খ্রিস্টানদের মিথ্যা ধর্মের সদস্যদের চেয়ে ভিন্ন করে তোলে? (খ) লূক ৬:৪৫ পদে পাওয়া নীতিটা ব্যাখ্যা করুন।

১৪ সত্য খ্রিস্টানরা একটা কোন উপায়ে মিথ্যা ধর্মের সদস্যদের চেয়ে ভিন্ন? আমরা ‘সত্য বলি।’ (পড়ুন, সখরিয় ৮:১৬, ১৭.) পৌল বলেছিলেন: আমরা ‘সত্যের বাক্য’ দ্বারা “ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া . . . আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি।” (২ করি. ৬:৪, ৭) আর যিশু বলেছিলেন যে, লোকেরা “হৃদয়ের উপচয় হইতে” কথা বলে। (লূক ৬:৪৫) এর অর্থ হল একজন সৎ ব্যক্তি সত্য কথা বলবেন। তিনি অপরিচিত লোকেদের, সহকর্মীদের, বন্ধুদের ও প্রিয়জনদের কাছে সত্য কথা বলবেন। এখন আসুন, আমরা এই ক্ষেত্রে কয়েকটা উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি যে, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা সমস্ত বিষয়ে সৎ হওয়ার চেষ্টা করছি।

আপনি কি এই যুবতী বোনের জীবনে কোনো সমস্যা লক্ষ করতে পারছেন? (১৫, ১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. (ক) কেন দ্বৈত জীবনযাপন করা খারাপ? (খ) কী অল্পবয়সিদের সঙ্গীসাথিদের চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারে? (পাদটীকা দেখুন।)

১৫ তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তা হলে তুমি হয়তো চাও যে, তোমার সমবয়সিরা তোমাকে গ্রহণ করুক। তবে, এই আকাঙ্ক্ষার কারণেই কোনো কোনো অল্পবয়সি দ্বৈত জীবনযাপন করছে। তারা তাদের পরিবার ও মণ্ডলীর সঙ্গে থাকার সময়ে নৈতিকভাবে শুদ্ধ হওয়ার ভান করে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অথবা যিহোবার সেবা করে না এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকার সময়ে একেবারে ভিন্ন আচরণ করে। তারা হয়তো খারাপ ভাষা ব্যবহার করে, অমার্জিত পোশাক পরে, এমন গান শোনে যেটার কথাগুলো অশুচি, মাতাল হয়, ড্রাগ নেয়, গোপনে ডেটিং করে অথবা অন্যান্য মন্দ কাজ করে। তারা তাদের বাবা-মায়ের, মণ্ডলীর ভাই-বোনদের ও সেইসঙ্গে যিহোবার কাছে মিথ্যা কথা বলে। (গীত. ২৬:৪, ৫) কিন্তু, আমরা যখন যিহোবাকে সম্মান করার দাবি করি আর তারপর, তাঁর দৃষ্টিতে ঘৃণার্হ কাজগুলো করি, তখন তিনি সেটা বুঝতে পারেন। (মার্ক ৭:৬) এর চেয়ে বরং এই প্রবাদবাক্য অনুযায়ী কাজ করা কতই-না উত্তম: “তোমার মন পাপীদের প্রতি ঈর্ষা না করুক, কিন্তু তুমি সমস্ত দিন সদাপ্রভুর ভয়ে থাক।”—হিতো. ২৩:১৭. *

১৬. কীভাবে আমাদের পূর্ণসময়ের সেবার জন্য আবেদনপত্রে উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া উচিত?

১৬ আপনি যদি একজন নিয়মিত অগ্রগামী হতে চান অথবা বিশেষ পূর্ণসময়ের সেবা শুরু করতে চান, যেমন হতে পারে বেথেলে, তা হলে আপনাকে একটা আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আপনি সৎভাবে আপনার স্বাস্থ্য, আমোদপ্রমোদের ধরন ও নৈতিকতার বিষয়ে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন। (ইব্রীয় ১৩:১৮) কিন্তু, আপনি যদি এমন কোনো কাজ করে থাকেন, যেটা যিহোবার দৃষ্টিতে ঘৃণার্হ অথবা যেটার কারণে আপনি বিবেকের দংশন অনুভব করছেন আর আপনি সেই বিষয়ে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলে না থাকেন, তা হলে? তাদের কাছে সাহায্য চান যেন আপনি এক শুচি সংবেদ বা বিবেক নিয়ে যিহোবার সেবা করতে পারেন।—রোমীয় ৯:১; গালা. ৬:১.

১৭. তাড়নাকারীরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তখন আমাদের কী করা উচিত?

১৭ আপনার এলাকায় আমাদের কাজ যদি নিষিদ্ধ থাকে এবং কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে গ্রেপ্তার করে আর আপনার ভাই-বোনদের সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তা হলে আপনার কী করা উচিত? আপনি যা-কিছু জানেন, সেই সমস্তই কি তাদের বলে দেওয়া উচিত? একজন রোমীয় দেশাধ্যক্ষ যখন যিশুকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন যিশু কী করেছিলেন? যিশু বাইবেলের এই নীতি কাজে লাগিয়েছিলেন, “নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল” আছে আর কোনো কোনো সময়ে তিনি কিছুই বলেননি! (উপ. ৩:১, ৭; মথি ২৭:১১-১৪) আমরাও যদি একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, তা হলে আমাদের বুদ্ধিমান বা বিচক্ষণ ও সতর্ক হতে হবে, যাতে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের বিপদে না ফেলি।—হিতো. ১০:১৯; ১১:১২.

কীভাবে আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কখন নীরব থাকতে হবে এবং কখন সম্পূর্ণ সত্য বলতে হবে? (১৭, ১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. প্রাচীনরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, তা হলে আমাদের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১৮ মণ্ডলীর কোনো ব্যক্তি যদি গুরুতর পাপ করে থাকেন আর আপনি যদি সেই বিষয়ে জানেন, তা হলে? প্রাচীনদের দায়িত্ব হল মণ্ডলীকে নৈতিকভাবে শুচি রাখা আর তাই, তারা হয়তো আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, আপনি সেই বিষয়ে কী জানেন। সেইসময়ে আপনি কী করবেন, বিশেষভাবে যদি সেই ব্যক্তি আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথবা আত্মীয় হয়ে থাকেন? বাইবেল বলে: “যে সত্যবাদী, সে ধর্ম্মের কথা কহে।” (হিতো. ১২:১৭; ২১:২৮) তাই, আপনার দায়িত্ব হল প্রাচীনদের কাছে কোনোরকম তথ্য গোপন না করে সম্পূর্ণ সত্য জানানো। প্রাচীনদের সেই তথ্য জানার অধিকার রয়েছে, যাতে তারা যিহোবার সঙ্গে সেই ব্যক্তির সম্পর্ক পুনরায় ঠিক করার জন্য সর্বোত্তম উপায় খুঁজে পেতে পারেন।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.

১৯. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৯ দায়ূদ প্রার্থনায় যিহোবাকে বলেছিলেন: “তুমি আন্তরিক সত্যে প্রীত।” (গীত. ৫১:৬) দায়ূদ জানতেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা এই যে, আমরা আন্তরিকভাবে অর্থাৎ হৃদয় থেকে কেমন। সত্য খ্রিস্টানরা সবসময় ‘আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলে।’ আমরা যে মিথ্যা ধর্মের সদস্যদের থেকে ভিন্ন, সেটা দেখানোর আরেকটা উপায় হল বাইবেল থেকে সত্য শেখানো। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যায় এমনটা করতে পারি।

^ অনু. 15 তরুণ-তরুণীদের ১০ প্রশ্নের উত্তর ব্রোশারের প্রশ্ন ৬ “কীভাবে আমি সঙ্গীসাথিদের চাপকে প্রতিরোধ করতে পারি?” এবং যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ২ (ইংরেজি) বইয়ের ১৬ অধ্যায় “দ্বৈত জীবনযাপন—কেই-বা জানতে পারবে?” দেখো।