সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টীয় বিয়েকে যেভাবে সফল করে তোলা যায়

খ্রিস্টীয় বিয়েকে যেভাবে সফল করে তোলা যায়

‘তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] করে।’—ইফি. ৫:৩৩.

গান সংখ্যা: ৩৬, 

১. যদিও বিয়ের শুরুটা সাধারণত বেশ আনন্দের হয়, কিন্তু বিবাহিত ব্যক্তিদের কোন অভিজ্ঞতা হবে বলে তারা জানে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বিয়ের দিন একজন বর যখন প্রথম বার তার সুন্দরী কনেকে দেখেন, তখন তাদের দু-জনেরই আনন্দের কোনো সীমা থাকে না। ডেটিং অর্থাৎ বিয়ের আগে মেলামেশা করার সময় তারা দু-জন দু-জনকে এতটাই ভালোবেসেছিলেন যে, তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলেন আর এভাবে তারা পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন। আর বিয়ের পর, তারা যখন একসঙ্গে তাদের জীবন শুরু করবেন, তখন একতাবদ্ধ থাকার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরিবর্তন করতে হবে। বিয়ের প্রবর্তক যিহোবা চান, যেন প্রত্যেক দম্পতি এক সুখী ও সফল বিবাহিত জীবন উপভোগ করে আর তাই তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলে বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছেন। (হিতো. ১৮:২২) তা সত্ত্বেও, বাইবেল আমাদের জানায়, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এমন দু-জন অসিদ্ধ মানুষের মধ্যে সমস্যা হবে বা তাদের “দৈহিক ক্লেশ ঘটিবে।” (১ করি. ৭:২৮) কীভাবে দম্পতিরা এই ধরনের সমস্যা কমাতে পারে? আর কীভাবে খ্রিস্টানরা এক বিয়েকে সফল করে তুলতে পারে?

২. বিবাহসাথিদের কোন কোন ধরনের প্রেম দেখানো উচিত?

বাইবেল শিক্ষা দেয়, প্রেম হল এক গুরুত্বপূর্ণ গুণ। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রেম রয়েছে, যেগুলো বিবাহিত দম্পতিদের দেখাতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, তাদের কোমল স্নেহ (গ্রিক, ফিলিও) ও সেইসঙ্গে রোমান্টিক প্রেম (এরস) দেখাতে হবে। আর তাদের যদি সন্তান হয়, তা হলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রেম (স্টরগি) আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু, নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রেম (আগাপে) একটা বিয়েকে সত্যিকার অর্থে সফল করে তোলে। প্রেরিত পৌল এই প্রেম সম্বন্ধেই বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে সম্মান করে।”—ইফি. ৫:৩৩.

বিবাহসাথিদের দায়িত্ব সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করা

৩. একটা বিয়েতে প্রেমের বন্ধন কতটা দৃঢ় হওয়া উচিত?

পৌল লিখেছিলেন: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফি. ৫:২৫) যিশু যেমন তাঁর শিষ্যদের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন, তেমনই বর্তমানে খ্রিস্টানরা পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখানোর মাধ্যমে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করে। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১৫:১২, ১৩.) একজন খ্রিস্টান স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পরকে এতটাই ভালোবাসা উচিত, যেন তারা পরস্পরের জন্য মৃত্যুকেও বরণ করে নিতে রাজি থাকে। কিন্তু, বিয়েতে যখন গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, তখন বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করতে পারে, তাদের প্রেমের বন্ধন যথেষ্ট দৃঢ় নয়। কী তাদের সাহায্য করতে পারে? নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রেম তাদের সাহায্য করতে পারে, যা “সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে।” এই প্রেম “কখনও শেষ হয় না।” (১ করি. ১৩:৭, ৮) বিবাহিত দম্পতিকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তারা একটা অঙ্গীকার করেছেন। তারা পরস্পরকে ভালোবাসার এবং পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রতিজ্ঞা করেছেন। এই বিষয়টা মনে রাখলে, খ্রিস্টান দম্পতিরা যেকোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য যিহোবার সাহায্য চাইতে এবং একসঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে।

৪, ৫. (ক) পরিবারের মস্তক হিসেবে একজন স্বামীর কী দায়িত্ব রয়েছে? (খ) মস্তকপদের ব্যবস্থাকে একজন স্ত্রীর কীভাবে দেখা উচিত? (গ) এক বিবাহিত দম্পতিকে কোন পরিবর্তন করতে হবে?

পৌল প্রত্যেক বিবাহসাথির দায়িত্ব সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক।” (ইফি. ৫:২২, ২৩) এর অর্থ এই নয়, একজন স্বামী তার স্ত্রীর চেয়ে আরও ভালো অবস্থানে আছেন। যিহোবা একজন স্ত্রীর মূল্যবান ভূমিকা সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি।” (আদি. ২:১৮) একজন স্বামী যাতে পরিবারের উত্তম মস্তক হয়ে ওঠেন, সেইজন্য একজন স্ত্রী তাকে সাহায্য করবেন। আর একজন স্বামীকে যিশুর প্রেমের উদাহরণ অনুকরণ করতে হবে, যিনি হলেন “মণ্ডলীর মস্তক।” একজন স্বামী যখন তা করেন, তখন তার স্ত্রী নিরাপদ বোধ করেন এবং তার পক্ষে স্বামীকে সম্মান ও সমর্থন করা আরও সহজ হয়।

ফ্রেড নামে একজন ভাইয়ের স্ত্রী ক্যাথি স্বীকার করেন: “একজন অবিবাহিত বোন হিসেবে, আমি স্বাধীন ও স্বাবলম্বী ছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর, আমার স্বামীর উপর নির্ভর করতে শেখার জন্য আমাকে নিজের মনোভাব পরিবর্তন করতে হয়েছিল। যদিও তা করা সবসময় সহজ ছিল না, তবে যিহোবার উপায়ে বিভিন্ন বিষয় করার মাধ্যমে আমরা এক দম্পতি হিসেবে পরস্পরের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম।” [১] ফ্রেড বলেন: “সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টা আমার জন্য কখনোই সহজ ছিল না। বিয়ের পর, দু-জন ব্যক্তির কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু, প্রার্থনায় যিহোবার নির্দেশনা খোঁজার মাধ্যমে এবং আমার স্ত্রীর মতামত শোনার মাধ্যমে তা দিন দিন আরও সহজ হয়ে উঠছে। আমার মনে হয়, আমরা সত্যিই একটা দল হিসেবে কাজ করছি!”

৬. কোনো বিয়েতে সমস্যা দেখা দিলে প্রেম কীভাবে “সিদ্ধির যোগবন্ধন” হিসেবে কাজ করে?

দম্পতিরা যদি ‘পরস্পর সহনশীল হয়, এবং পরস্পর ক্ষমা করে,’ তা হলে একটা বিয়ে সফল হতে পারে। তারা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই উভয় সাথিই ভুলত্রুটি করবে। তারা যখন কোনো ভুল করে, তখন তাদের নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার, ক্ষমাশীল হওয়ার এবং বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রেম দেখানোর সুযোগ থাকে। এই প্রেম হল “সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কল. ৩:১৩, ১৪) বিবাহসাথিরা ধৈর্যশীল হওয়ার মাধ্যমে, মধুর ভাব বা দয়া দেখানোর মাধ্যমে ও সেইসঙ্গে “অপকার গণনা” না করার মাধ্যমে এই ধরনের প্রেম দেখাতে পারে। (১ করি. ১৩:৪, ৫) কোনো মতপার্থক্য দেখা দিলে দম্পতিদের যত শীঘ্র সম্ভব—দিন শেষ হওয়ার আগেই—তা সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত। (ইফি. ৪:২৬, ২৭) “তোমাকে আঘাত দিয়েছি বলে আমি দুঃখিত” এই কথাগুলো বলার জন্য নম্রতা ও সাহস প্রয়োজন, তবে তা বলা সমস্যা সমাধান করতে এবং বিবাহসাথিদেরকে পরস্পরের আরও ঘনিষ্ঠ হতে সাহায্য করে।

যখন কোমল আচরণ দেখানো অত্যন্ত প্রয়োজন

৭, ৮. (ক) বিবাহবন্ধনের মধ্যে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে বাইবেলে কোন পরামর্শ রয়েছে? (খ) কেন বিবাহসাথিদের কোমল আচরণ করতে হবে?

বাইবেলে এমন উত্তম পরামর্শ রয়েছে, যেগুলো দম্পতিদেরকে বিবাহবন্ধনের মধ্যে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সাহায্য করে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৩-৫.) একজন স্বামী ও স্ত্রীর জন্য পরস্পরের অনুভূতি ও চাহিদা বিবেচনা করা অপরিহার্য। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে কোমল আচরণ না করেন, তা হলে স্ত্রীর পক্ষে যৌন সম্পর্ক উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর “জ্ঞানপূর্ব্বক” আচরণ করা উচিত। (১ পিতর ৩:৭) কখনো জোর করে অথবা প্রাপ্য হিসেবে দাবি করে যৌন সম্পর্ক করা উচিত নয়, বরং এই আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিকভাবেই আসা উচিত। এক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষরা নারীদের চেয়ে দ্রুত সাড়া দিতে পারে। কিন্তু এই সময়টা, আবেগগতভাবে স্বামী-স্ত্রী দু-জনের জন্যই উপযুক্ত হতে হবে।

একজন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রেম প্রকাশের উপায় ও সীমা সম্বন্ধে বাইবেলে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম দেওয়া নেই। কিন্তু বাইবেলে এই ধরনের প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করা আছে। (পরম. ১:২; ২:৬) খ্রিস্টান বিবাহিত সাথিদের পরস্পরের সঙ্গে কোমল আচরণ করা উচিত।

৯. বিবাহসাথি ছাড়া অন্য কারো প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষাপোষণ করা কেন গ্রহণযোগ্য নয়?

ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের প্রেম যদি দৃঢ় হয়, তা হলে আমরা কাউকে অথবা কোনো কিছুকে আমাদের বিয়ের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে দেব না। কেউ কেউ পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার মাধ্যমে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ককে দুর্বল করে ফেলেছে অথবা ভেঙে ফেলেছে। পর্নোগ্রাফির প্রতি যেকোনো আকর্ষণ কিংবা অন্য যেকোনো ধরনের অনুপযুক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের এমন যেকোনো কিছু করা এড়িয়ে চলতে হবে, যার ফলে মনে হতে পারে, আমরা আমাদের বিবাহসাথি নয় এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের ভান করছি। কারণ তা করা নির্দয় আচরণ হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঈশ্বর আমাদের সমস্ত চিন্তাভাবনা ও কাজ সম্বন্ধে জানেন। এই বিষয়টা মনে রাখা, তাঁকে খুশি করার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করতে এবং আমাদের সাথির প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করবে।—পড়ুন, মথি ৫:২৭, ২৮; ইব্রীয় ৪:১৩.

কোনো বিয়েতে যখন সমস্যা দেখা দেয়

১০, ১১. (ক) বিবাহবিচ্ছেদ করা কতটা সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে? (খ) পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেল কী বলে? (গ) কোন বিষয়টা একজন বিবাহসাথিকে দ্রুত পৃথক না হতে সাহায্য করবে?

১০ গুরুতর সমস্যাগুলো সমাধান করা না হলে, কোনো কোনো দম্পতি হয়তো পৃথক থাকার অথবা বিবাহবিচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কোনো কোনো দেশে, ৫০ শতাংশেরও বেশি দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ করে ফেলে। অবশ্য, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সাধারণত এই প্রবণতা দেখা যায় না। কিন্তু, দিন দিন আরও বেশি খ্রিস্টান দম্পতি গুরুতর বৈবাহিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

১১ বাইবেল এই নির্দেশনা প্রদান করে: “স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে চলিয়া না যাউক—যদি চলিয়া যায়, তবে সে অবিবাহিতা থাকুক, কিম্বা স্বামীর সহিত সম্মিলিতা হউক—আর স্বামীও স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করুক।” (১ করি. ৭:১০, ১১) কোনো কোনো দম্পতি মনে করে, তাদের সমস্যা এতটাই গুরুতর যে, তাদের পৃথক থাকতে হবে। কিন্তু, পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত কতটা গুরুতর বিষয়, তা যিশু তুলে ধরেছিলেন। তিনি আদিতে বলা ঈশ্বরের কথা পুনরাবৃত্তি করার পর এই কথাগুলো যুক্ত করেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৩-৬; আদি. ২:২৪) তাই যিহোবা চান, স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে থাকবে। (১ করি. ৭:৩৯) আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে, আমাদের কাজের জন্য আমরা যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য। এই বিষয়টা মনে রাখা, যেকোনো সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠার আগেই তা সমাধান করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে।

১২. একজন বিবাহসাথি হয়তো কোন কারণে পৃথক থাকার কথা চিন্তা করতে শুরু করেন?

১২ কোনো কোনো দম্পতি কেন গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়? কারো কারো ক্ষেত্রে, তারা বৈবাহিক সুখের যে-স্বপ্ন দেখেছিল, তা বাস্তবে পরিপূর্ণ হয় না আর তাই তারা হতাশ অথবা রাগান্বিত হয়ে পড়ে। প্রায় ক্ষেত্রেই, লোকেরা যে-পরিবেশে বড়ো হয় অথবা যেভাবে আবেগঅনুভূতি প্রকাশ করে, তাতে ভিন্নতা থাকার কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সমস্যা অথবা টাকাপয়সা খরচ করার ব্যাপারে কিংবা সন্তান মানুষ করার ব্যাপারে মতবিরোধও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এটা খুবই প্রশংসনীয় যে, অধিকাংশ খ্রিস্টান দম্পতি তাদের সমস্যা সমাধান করতে সমর্থ হয় কারণ তারা ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে নেয়।

১৩. যুক্তিসংগত কোন কারণগুলোর জন্য পৃথক থাকা যেতে পারে?

১৩ কোনো দম্পতির পৃথক থাকার পিছনে হয়তো যুক্তিসংগত কারণ থাকতে পারে। কোনো কোনো খ্রিস্টান, কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিকে পৃথক থাকার কারণ হিসেবে বিবেচনা করেছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে ভরণ-পোষণ না করা, চরম শারীরিক নির্যাতন করা এবং একজন খ্রিস্টানের আধ্যাত্মিক জীবন চরম ঝুঁকির মুখে পড়া। যখন গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, তখন বিবাহসাথিদের উচিত প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চাওয়া। এই ব্যক্তিরা অনেক অভিজ্ঞ আর তারা কোনো দম্পতিকে তাদের জীবনে ঈশ্বরের পরামর্শ প্রয়োগ করার জন্য সাহায্য করতে পারে। আর বিবাহসাথিরা যখন যিহোবার কাছে তাঁর পবিত্র আত্মা চায়, তখন এই পবিত্র আত্মা তাদেরকে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাতে এবং খ্রিস্টীয় গুণাবলি দেখাতে সাহায্য করতে পারে।—গালা. ৫:২২, ২৩. [২]

১৪. যে-খ্রিস্টানরা এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে, যারা যিহোবার উপাসক নন, তাদের উদ্দেশে বাইবেল কী বলে?

১৪ বাইবেল দেখায়, এমনকী বিবাহসাথিদের মধ্যে একজন যদি যিহোবার উপাসনা না-ও করেন, তবুও সেই দম্পতির একসঙ্গে থাকার পিছনে উপযুক্ত কারণ রয়েছে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:১২-১৪.) যে-সাথি যিহোবার উপাসক নন, তিনি ঈশ্বরের একজন দাসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ আছেন বলে ‘পবিত্রীকৃত হইয়াছেন।’ সেই দম্পতির অল্পবয়সি সন্তানরাও “পবিত্র” বলে বিবেচিত হয় আর তারা ঈশ্বরের সুরক্ষার অধীনে থাকে। পৌল খ্রিস্টান সাথিদের উৎসাহিত করেছিলেন: “হে নারি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্বামীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? অথবা হে স্বামী, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে কি না?” (১ করি. ৭:১৬) এমন অনেক উত্তম উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো তুলে ধরে, খ্রিস্টান স্বামী-স্ত্রীরা তাদের সাথিকে যিহোবার দাস হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

১৫, ১৬. (ক) যে-সমস্ত খ্রিস্টান স্ত্রীর স্বামীরা ঈশ্বরের দাস নয়, সেই স্ত্রীদের বাইবেল কোন পরামর্শ দেয়? (খ) কোনো ‘অবিশ্বাসী যদি চলিয়া যাওয়ার’ সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে খ্রিস্টান সাথির অবস্থান কী হবে?

১৫ প্রেরিত পিতর খ্রিস্টান স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদের বশীভূত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তাহাদের সভয় [“সম্মানজনক,” ইজি-টু-রিড ভারশন] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।’ স্বামীকে সত্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য, একজন স্ত্রী হয়তো সবসময় নিজের বিশ্বাস নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে বরং ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা’ দেখাতে পারেন কারণ “তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।”—১ পিতর ৩:১-৪.

১৬ ন-সাক্ষি কোনো বিবাহসাথি যদি পৃথক থাকা বেছে নেন, তা হলে? বাইবেল বলে: “অবিশ্বাসী যদি চলিয়া যায়, চলিয়া যাউক; এমন স্থলে সেই ভ্রাতা কি সেই ভগিনী দাসত্বে বদ্ধ নহে, কিন্তু ঈশ্বর আমাদিগকে শান্তিতেই আহ্বান করিয়াছেন।” (১ করি. ৭:১৫) পৃথক থাকার ফলে হয়তো যদিও কিছুটা শান্তি আসতে পারে, কিন্তু বাইবেল অনুযায়ী এক্ষেত্রে খ্রিস্টান সাথি পুনরায় বিয়ে করার জন্য স্বাধীন নন। তবে, তিনি যে তার সাথিকে তার সঙ্গে থাকার জন্য জোরাজুরি করবেন, এমন নয়। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, সেই ন-সাক্ষি সাথি হয়তো তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর ভবিষ্যতে, সেই ন-সাক্ষি সাথি হয়তো যিহোবার একজন দাস হয়ে উঠতে পারেন।

বিয়েতে প্রথমে কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে?

আমরা যখন যিহোবার উপাসনার প্রতি মনোযোগ দিই, তখন আমরা আরও সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারি (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. খ্রিস্টান বিবাহিত দম্পতিদের প্রথমে কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে?

১৭ আমরা ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ বাস করছি। (২ তীম. ৩:১-৫) তাই, যিহোবার সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের সুরক্ষা লাভ করা প্রয়োজন। পৌল লিখেছিলেন: “সময় সঙ্কুচিত, এখন হইতে যাহাদের স্ত্রী আছে, তাহারা এমন চলুক, যেন তাহাদের স্ত্রী নাই; . . . আর যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না।” (১ করি. ৭:২৯-৩১) পৌল এটা বোঝাতে চাননি, বিবাহিত দম্পতিদের তাদের সাথিকে উপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমরা যেহেতু শেষকালে বাস করছি, তাই যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।—মথি ৬:৩৩.

১৮. কীভাবে এক সুখী ও সফল বিবাহিত জীবন উপভোগ করা সম্ভব?

১৮ এই কঠিন সময়ে আমরা দেখতে পাই, অনেক বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তা হলে, এক সুখী ও সফল বিবাহিত জীবন উপভোগ করা কি সম্ভব? হ্যাঁ তা সম্ভব, যদি আমরা যিহোবা ও তাঁর লোকেদের নিকটবর্তী থাকি, বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাই এবং যিহোবার পবিত্র আত্মার নির্দেশনা গ্রহণ করি। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন,” সেই ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাই।—মার্ক ১০:৯.

^ [১] (৫ অনুচ্ছেদ) কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ [২] (১৩ অনুচ্ছেদ) “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের ২৫১-২৫৩ পৃষ্ঠায় দেওয়া পরিশিষ্টের “বিবাহবিচ্ছেদ ও পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি” শিরোনামের বিষয়বস্তু দেখুন।