সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার কি আধ্যাত্মিক উন্নতি করা প্রয়োজন?

আপনার কি আধ্যাত্মিক উন্নতি করা প্রয়োজন?

“তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক।”—১ তীম. ৪:১৩.

গান সংখ্যা: ৪৫, ৪২

১, ২. (ক) যিশাইয় ৬০:২২ পদের কথাগুলো কীভাবে এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে? (খ) যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশে এখন কী প্রয়োজন?

“যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে।” (যিশা. ৬০:২২) এই কথাগুলো এখন এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে। কীভাবে তা বলা যায়? ২০১৫ সালে ৮২,২০,১০৫ জন যিহোবার সাক্ষি সারা পৃথিবীতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে রত ছিল! ঈশ্বর তাঁর লোকেদের এই বৃদ্ধি সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।” তাই, আমাদের প্রত্যেককে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি করে কাজ করতে হবে। সুসমাচার প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি এখন আমাদের যথাসাধ্য করছি? অনেক ভাই ও বোন ইতিমধ্যে নিয়মিত অথবা সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ প্রচার কাজে সাহায্য করার জন্য অন্য জায়গায় গিয়েছে, আবার অন্যেরা কিংডম হল নির্মাণের কাজে কঠোর পরিশ্রম করছে।

প্রতি বছর প্রায় ২,০০০টা করে নতুন মণ্ডলী গঠিত হচ্ছে। এই মণ্ডলীগুলোতে সেবা করার জন্য প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের প্রয়োজন। তাই, হাজার হাজার পরিচারক দাসকে প্রাচীন হওয়ার জন্য এবং হাজার হাজার ভাইকে পরিচারক দাস হওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। স্পষ্টতই, ‘প্রভুর কার্য্যে উপচিয়া পড়িবার’ যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে আর এই সুযোগ শুধু ভাইদের নয় বরং বোনদেরও রয়েছে।—১ করি. ১৫:৫৮.

আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য কীসের প্রয়োজন?

৩, ৪. আধ্যাত্মিক উন্নতি বলতে আপনি কী বোঝেন?

প্রথম তীমথিয় ৩:১ পদ পড়ুন। প্রেরিত পৌল সেই ভাইদের প্রশংসা করেছিলেন, যারা অধ্যক্ষপদের জন্য “আকাঙ্ক্ষী” ছিলেন। একজন ব্যক্তি যদি দূরের কোনো জিনিস ধরতে চান, তা হলে তাকে প্রচেষ্টা করতে এবং দরকার হলে হাত বাড়াতে হবে। এখন কল্পনা করুন, একজন ভাই পরিচারক দাস হওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে চান। তিনি উপলব্ধি করেন, সত্য খ্রিস্টান হিসেবে বিভিন্ন গুণ দেখানোর ক্ষেত্রে তাকে আরও উন্নতি করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। এরপর তিনি যখন একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করতে শুরু করেন, তখন তিনি একজন অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য প্রচেষ্টা করতে থাকেন।

কিছু ভাই-বোন তাদের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করে থাকেন, যাতে তারা আরও বেশি করে যিহোবার কাজ করতে পারেন। এই কাজের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, অগ্রগামীর কাজ, বেথেল সেবা কিংবা কিংডম হল নির্মাণের কাজ। আসুন আমরা দেখি, বাইবেল কীভাবে আমাদের সবাইকে উন্নতি করে চলার জন্য সাহায্য করতে পারে।

আধ্যাত্মিক উন্নতি করে চলুন

৫. যুবক-যুবতীরা ঈশ্বরের রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন কাজ করার জন্য কীভাবে তাদের শক্তিকে ব্যবহার করতে পারে?

যুবক-যুবতীরা সাধারণত সুস্থসবল থাকে বলে যিহোবার সেবায় আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২০:২৯.) কিছু যুবক-যুবতী বেথেলে বিভিন্ন বইপত্র ও বাইবেল ছাপানোর এবং বাঁধানোর কাজে সাহায্য করে থাকেন। আবার অনেকে কিংডম হল নির্মাণ অথবা সেগুলো মেরামত করার কাজে সাহায্য করেন। কেউ কেউ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় স্বেচ্ছায় সাহায্য করে থাকেন। আর অনেক অগ্রগামী যুবক-যুবতী সুসমাচার প্রচার করার জন্য নতুন একটা ভাষা শেখেন অথবা অন্য জায়গায় যান।

৬-৮. (ক) কীভাবে একজন যুবক ভাই যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল? (খ) কীভাবে আমরা ‘আস্বাদন করিয়া দেখিতে’ পারি, “সদাপ্রভু মঙ্গলময়”?

আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি আর তাই তাঁকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিতে চাই। তা সত্ত্বেও, আমাদের অনুভূতি হয়তো অ্যারোন নামে একজন ভাইয়ের মতো হতে পারে। আগে তার অনুভূতি কেমন ছিল? যদিও তিনি আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরকে সেবা করতে চাইতেন, তবে তিনি আনন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অ্যারোন ছোটোবেলা থেকেই সভায় যোগ দিতেন এবং পরিচর্যায় যেতেন, কিন্তু তিনি বলেন, “সভাগুলো ও ক্ষেত্রের পরিচর্যা আমার কাছে একঘেয়ে বলে মনে হতো।” তাই, তিনি কী করেন?

অ্যারোন নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়ার, সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এবং সভাগুলোতে মন্তব্য করার প্রচেষ্টা করেন। এ ছাড়া, তিনি আরও বেশি করে প্রার্থনা করতে শুরু করেন। এই সমস্ত কিছু তাকে আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে সাহায্য করে। তিনি যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারেন এবং তাঁকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে শুরু করেন। এর ফলে, অ্যারোন আনন্দ খুঁজে পান। তিনি অগ্রগামীর কাজ করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অন্যদের সাহায্য করেন এবং অন্য দেশে গিয়ে প্রচার করেন। বর্তমানে তিনি একজন প্রাচীন এবং বেথেলে সেবা করছেন। এখন তার অনুভূতি কেমন? অ্যারোন বলেন: “আমি ‘আস্বাদন করে দেখেছি যিহোবা মঙ্গলময়।’ তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেছেন বলে আমি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ এবং আমি আরও বেশি করে তাঁর কাজ করতে চাই আর এটা আমার জন্য আরও আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।”

গীতরচক বলেন: “আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়।” তিনি আরও বলেন: “যাহারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে, তাহাদের কোন মঙ্গলের অভাব হয় না।” (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:৮-১০.) হ্যাঁ, আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিই, তখন আমরা প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পাই কারণ আমরা জানি যিহোবা এতে খুশি হন। আর আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের যত্ন নেবেন।

হাল ছেড়ে দেবেন না

৯, ১০. “অপেক্ষা” করার মনোভাব বজায় রাখা কেন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

আমরা সবাই হয়তো যিহোবাকে আরও বেশি করে সেবা করতে চাই। কিন্তু, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও আমরা যদি মণ্ডলীতে কোনো সুযোগ লাভ না করি অথবা আমাদের পরিস্থিতিরও কোনো পরিবর্তন না হয়, তা হলে? সেই সময় আমাদের হয়তো ধৈর্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। (মীখা ৭:৭) আর যিহোবা যদি আমাদের পরিস্থিতির পরিবর্তন না-ও করেন, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি সবসময় আমাদের সাহায্য করবেন। অব্রাহামের উদাহরণ থেকে ধৈর্য ধরার বিষয়ে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। যিহোবা তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার এক পুত্রসন্তান হবে। কিন্তু, ইস্‌হাকের জন্মের আগে পর্যন্ত তাকে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সেই সময়টাতে অব্রাহাম ধৈর্য বজায় রেখেছিলেন এবং তিনি কখনো যিহোবার প্রতি তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি।—আদি. ১৫:৩, ৪; ২১:৫; ইব্রীয় ৬:১২-১৫.

১০ এটা ঠিক যে, অপেক্ষা করা সবসময় সহজ নয়। (হিতো. ১৩:১২) কিন্তু, আমরা যদি আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করতেই থাকি ও হতাশায় ডুবে থাকি, তা হলে আমরা একেবারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব। সেই সময়টাতে বরং আমরা এমন গুণাবলি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি, যেগুলো মণ্ডলীর বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন।

১১. কোন ধরনের গুণ গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে আর কেন সেগুলো গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ?

১১ বিভিন্ন গুণ গড়ে তুলুন। বাইবেল পড়ার ও যা পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা প্রজ্ঞা, বোধগম্যতা, উত্তম বিচারবুদ্ধি, জ্ঞান ও চিন্তা করার ক্ষমতা লাভ করতে পারব এবং সেইসঙ্গে সংযমী হতে শিখব। আসলে, মণ্ডলীর যত্ন নেওয়ার জন্য ভাইদের এই ধরনের গুণ গড়ে তোলা প্রয়োজন। (হিতো. ১:১-৪; তীত ১:৭-৯) বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা বুঝতে পারি। বাইবেল থেকে আমরা যা শিখি, তা প্রতিদিন কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে খুশি করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা শিখতে পারব কীভাবে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করতে হয়, কীভাবে টাকাপয়সা ব্যবহার করতে হয় এবং কীভাবে সঠিক আমোদপ্রমোদ ও পোশাক-আশাক বাছাই করতে হয়।

১২. মণ্ডলীর সদস্যরা কীভাবে নিজেদের নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণ করতে পারেন?

১২ যেকোনো কার্যভারই পালন করার জন্য যথাসাধ্য করার মাধ্যমে নিজেকে নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণ করুন। ঈশ্বরের লোকেরা যখন মন্দির পুনর্নির্মাণ করছিল, তখন বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার জন্য নহিমিয়ের কিছু লোকের প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি এমন ব্যক্তিদের বেছে নিয়েছিলেন, যাদের সুনাম ছিল। তিনি জানতেন, ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালোবাসা রয়েছে আর তাই যে-কাজই দেওয়া হোক না কেন, তা পালন করার জন্য তারা যথাসাধ্য করবে। (নহি. ৭:২; ১৩:১২, ১৩) বর্তমানেও, যারা বিশ্বস্ত এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য করে, তারা নিজেদের জন্য সুনাম গড়ে তোলে আর এর ফলে তাদেরকে হয়তো আরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। (১ করি. ৪:২) তাই, আমরা ভাই অথবা বোন, যে-ই হই না কেন, যেকোনো কার্যভার পালন করার জন্য সবসময় আমাদের যথাসাধ্য করা উচিত।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:২৫.

১৩. অন্যেরা যদি আপনার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?

১৩ যিহোবার উপর নির্ভর করুন। অন্যেরা যদি আপনার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? আপনি হয়তো তাদেরকে আপনার অনুভূতির কথা জানাতে পারেন। কিন্তু, আপনি যদি বার বার নিজেকে সঠিক বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তা হলে পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপই হবে। এই ব্যাপারে যোষেফের উদাহরণ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। তার ভাইয়েরা তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছিলেন। লোকেরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছিল আর তাকে বিনা কারণে কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল। কিন্তু, যোষেফ যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। তিনি যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন এবং বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। (গীত. ১০৫:১৯) সেই কঠিন সময়গুলোতে তিনি এমন অনেক উত্তম গুণ গড়ে তুলেছিলেন, যেগুলো তাকে পরবর্তী সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল। (আদি. ৪১:৩৭-৪৪; ৪৫:৪-৮) অন্যেরা যদি আপনার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তা হলে যিহোবার কাছে প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনাকে শান্তভাব বজায় রাখতে এবং সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলতে সাহায্য করবেন।—পড়ুন, ১ পিতর ৫:১০.

পরিচর্যার ক্ষেত্রে উন্নতি করে চলুন

১৪, ১৫. (ক) আমরা যেভাবে প্রচার করি, সেই ব্যাপারে কেন আমাদের ‘সবসময় মনোযোগ দিতে’ হবে? (খ) পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে আপনি কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা এবং “ আপনি কি অন্য কোনো উপায়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন?” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

১৪ পৌল তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তিনি শাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নতি করে চলেন। পৌল বলেছিলেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও [“সবসময় মনোযোগ দাও,” NW]।” (১ তীম. ৪:১৩, ১৬) তীমথিয় ইতিমধ্যে একজন অভিজ্ঞ প্রচারক ছিলেন। তা হলে, কেন তার উন্নতি করার প্রয়োজন ছিল? তীমথিয় জানতেন, লোকেরা ও তাদের পরিস্থিতি দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। তিনি চেয়েছিলেন যেন লোকেরা তার কথা শোনে আর তাই শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তাকে উন্নতি করে চলতে এবং শিক্ষাদানের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমানেও, প্রচার করার সময় আমাদের তা-ই করা উচিত।

১৫ কোনো কোনো জায়গায় ঘরে ঘরে প্রচার করার সময় আমরা অনেক লোককে ঘরে পাই না। আবার অন্যান্য জায়গায় লোকেরা হয়তো ঘরে থাকে, কিন্তু বিল্ডিংয়ে ঢোকার অনুমতি থাকে না বলে তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে পারি না। আপনার এলাকায়ও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে আপনি কি অন্য কোনো উপায়ে লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দিতে পারেন?

১৬. কীভাবে কার্যকরী উপায়ে জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান করা যেতে পারে?

১৬ জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান করা হল এমন এক পদ্ধতি, যেটা অনেক ভাই-বোন উপভোগ করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, লোকেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তারা ট্রেন স্টেশনে, বাস স্ট্যান্ডে, মার্কেটে এবং পার্কে যায়। একজন সাক্ষি উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করার মাধ্যমে কারো সঙ্গে হয়তো সংবাদপত্রের কোনো ঘটনা নিয়ে, তার সন্তানের প্রশংসা করে, অথবা তার কাজ সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে কথা শুরু করতে পারেন। সেই ব্যক্তিকে যদি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রহী বলে মনে হয়, তা হলে প্রকাশক হয়তো বাইবেল থেকে কোনো বিষয় তুলে ধরে সেই ব্যাপারে তার মতামত জিজ্ঞেস করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, লোকেরা বাইবেল সম্বন্ধে আরও জানতে চায়।

১৭, ১৮. (ক) জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান করার ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে আরও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন? (খ) পরিচর্যায় রত থাকার সময়, যিহোবার প্রশংসা করার বিষয়ে দায়ূদের মতো মনোভাব রাখাকে কেন আপনি মুল্যবান বলে মনে করেন?

১৭ রাস্তায় কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা শুরু করা আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত এডি নামে একজন অগ্রগামী ভাইয়ের ক্ষেত্রেও এটা সত্য ছিল। কিন্তু, একটা বিষয় তাকে আরও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন: “লোকেরা সাধারণত যে-ধরনের আপত্তি জানিয়ে থাকে এবং মতামত তুলে ধরে, সেগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার জন্য আমি ও আমার স্ত্রী পারিবারিক উপাসনার সময় গবেষণা করে থাকি। এ ছাড়া, এই ব্যাপারে আমরা অন্যান্য ভাই-বোনের কাছেও পরামর্শ চাই।” এখন ভাই এডি জনসাধারণ্যে প্রচার করা উপভোগ করেন।

১৮ আমরা যখন আমাদের পরিচর্যা উপভোগ করব এবং সুসমাচার সম্বন্ধে লোকেদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে উন্নতি করব, তখন অন্যেরা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি লক্ষ করবে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১৫.) আর আমরা হয়তো একজন ব্যক্তিকে এমনকী যিহোবার দাস হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারব। দায়ূদ বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বসময়ে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব; তাঁহার প্রশংসা নিরন্তর আমার মুখে থাকিবে। আমার প্রাণ সদাপ্রভুরই শ্লাঘা করিবে; তাহা শুনিয়া নম্রগণ আনন্দিত হইবে।”—গীত. ৩৪:১, ২.

আধ্যাত্মিক উন্নতি করার মাধ্যমে যিহোবার প্রশংসা করে চলুন

১৯. কেন যিহোবার একজন অনুগত দাসের আনন্দিত হওয়া উচিত, এমনকী সেই সময়ও যখন তার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকে?

১৯ দায়ূদ আরও বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার সমস্ত পদার্থ তোমার প্রশংসা করে, এবং তোমার সাধুগণ [“অনুগত ব্যক্তিরা,” NW] তোমার ধন্যবাদ করে। তাহারা তোমার রাজ্যের গৌরব বর্ণনা করে, তোমার পরাক্রমের কথা বলে, যেন মনুষ্য-সন্তানগণকে জানাইতে পারে তাঁহার পরাক্রমের কার্য্য সকল, এবং তাঁহার রাজ্যের প্রতাপের গৌরব।” (গীত. ১৪৫:১০-১২) যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর প্রতি অনুগত, তারা সকলে অন্যদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে বলার জন্য এক দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে। কিন্তু, অসুস্থতা অথবা বার্ধক্যের কারণে আপনি যদি ঘরে ঘরে প্রচারে বেশি যেতে না পারেন, তা হলে? সবসময় মনে রাখবেন, যখনই আপনি আপনার আশেপাশের লোকেদের কাছে, যেমন নার্স অথবা ডাক্তারের কাছে যিহোবা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেন, আপনি তাঁর প্রশংসা করেন। এমনকী বিশ্বাসের কারণে জেলে থাকলেও আপনি অন্যদের কাছে যিহোবা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পারেন আর এটা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে। (হিতো. ২৭:১১) এ ছাড়া, পরিবারের অন্যান্য সদস্য যিহোবাকে সেবা না করা সত্ত্বেও আপনি যখন তাঁর সেবা করেন, তখন তিনি আনন্দিত হন। (১ পিতর ৩:১-৪) তাই, এমনকী কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনি যিহোবার প্রশংসা করতে, তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে পারেন।

২০, ২১. যিহোবার সংগঠনে যদি আপনাকে আরও বেশি কাজ দেওয়া হয়, তা হলে কীভাবে আপনি অন্যদের জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারেন?

২০ আপনি যদি ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হন এবং তাঁকে সেবা করার জন্য যথাসাধ্য করেন, তা হলে নিশ্চিতভাবেই তিনি আপনাকে আশীর্বাদ করবেন। আপনার তালিকায় অথবা জীবনধারায় কিছুটা রদবদল করার মাধ্যমে আপনি হয়তো লোকেদেরকে ঈশ্বরের চমৎকার প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে জানানোর আরও সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া, আপনি হয়তো আপনার ভাই-বোনদের আরও বেশি করে সাহায্য করতে পারবেন। আর ভাই-বোনেরা যখন মণ্ডলীতে আপনার কঠোর পরিশ্রম লক্ষ করবে, তখন আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পাবে!

২১ আমরা যত দিন ধরেই যিহোবার সেবা করি না কেন, আমরা সকলেই ক্রমাগত তাঁর নিকটবর্তী হতে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে পারি। পরবর্তী অধ্যয়ন প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আমরা অন্যদেরকে আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য সাহায্য করতে পারি।