সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন উপাসনার জন্য আমাদের একত্রে মিলিত হওয়া উচিত?

কেন উপাসনার জন্য আমাদের একত্রে মিলিত হওয়া উচিত?

‘তাহারা সহভাগিতায় [‘একত্র হওয়ায়,’ ইজি-টু-রিড ভারশন] নিবিষ্ট থাকিল।’—প্রেরিত ২:৪২.

গান সংখ্যা: ২০, ৩৪

১-৩. (ক) কীভাবে খ্রিস্টানরা প্রকাশ করেছে, তারা একত্রে মিলিত হওয়ার জন্য উৎসুক? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

ক্যারিনার বয়স যখন ১৭ বছর, তখন তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং অনেক দূরের একটা শ্রমশিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে, ক্যারিনাকেও তাদের ঘর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত সাইবেরিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তিনি একটা খামারে কাজ করতেন এবং তার সঙ্গে একজন দাসীর মতো আচরণ করা হতো। মাঝে মাঝে, তাকে যথেষ্ট গরম কাপড় ছাড়াই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘরের বাইরে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। তা সত্ত্বেও, ক্যারিনা এবং অন্য একজন বোন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেভাবেই হোক তারা এই খামার থেকে বের হবেন এবং মণ্ডলীর একটা সভাতে যাবেন।

ক্যারিনা বলেছিলেন: “আমরা সন্ধ্যা বেলা আমাদের কাজের এলাকা থেকে বের হয়ে হেঁটে হেঁটে ২৫ কিলোমিটার (১৫ মাইল) দূরের একটা রেলস্টেশনে গিয়েছিলাম। রাত দুটোর সময় ট্রেন ছেড়ে গিয়েছিল। আমরা ছয় ঘণ্টা ট্রেনে যাত্রা করার পর, আরও দশ কিলোমিটার (ছয় মাইল) পথ হেঁটে সভাস্থলে পৌঁছেছিলাম।” সেই যাত্রা সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন বলে ক্যারিনা খুব খুশি হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “সভাতে আমরা প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করেছিলাম এবং রাজ্যের গান গেয়েছিলাম। এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য অনেক উৎসাহজনক ছিল এবং আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছিল।” তিন দিন পর এই বোনেরা খামারে ফিরে গিয়েছিলেন, কিন্তু তারা যে তিন দিন খামারে ছিলেন না, তা খামারের মালিক লক্ষও করেননি।

যিহোবার লোকেরা সবসময় একে অন্যের সঙ্গে একত্রে মিলিত হতে চায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য এবং তাঁর সম্বন্ধে জানার জন্য একত্রে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে উৎসুক ছিল। (প্রেরিত ২:৪২) আপনিও নিশ্চয়ই সভাতে যেতে চান। তবে আপনার পক্ষে হয়তো নিয়মিতভাবে সভাতে যাওয়া কঠিন বলে মনে হতে পারে, যেমনটা আমাদের সমস্ত ভাই-বোনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। আপনাকে হয়তো অনেক সময় ধরে কাজ করতে হয় কিংবা অনেক কিছু করতে হয় অথবা আপনি হয়তো সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন। তা হলে, কী আমাদের সভাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? [১] কীভাবে আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রদের ও অন্যদের নিয়মিতভাবে সভাতে আসার জন্য উৎসাহিত করতে পারি? এই প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করা হবে, কেন সভাতে যোগ দেওয়া (১) আমাদের জন্য মঙ্গলজনক, (২) অন্যদের সাহায্য করে এবং (৩) যিহোবাকে খুশি করে। [২]

সভাগুলো আমাদের জন্য মঙ্গলজনক

৪. একত্রে মিলিত হওয়া কীভাবে আমাদের যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করে?

সভাগুলো আমাদের শিক্ষা প্রদান করে। প্রতিটা সভা আমাদেরকে যিহোবা সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অধিকাংশ মণ্ডলীতে, প্রায় দু-বছর আগে মণ্ডলীর বাইবেল অধ্যয়ন-এর সময় যিহোবার নিকটবর্তী হোন বই অধ্যয়ন করা হয়েছে। যিহোবার গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করার সময় এবং যিহোবা সম্বন্ধে আপনার ভাই-বোনদের কাছ থেকে তাদের অনুভূতি শোনার সময় আপনি কেমন অনুভব করেছিলেন? নিশ্চিতভাবেই আপনি যিহোবাকে আরও বেশি ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া, সভাগুলোতে আমরা বিভিন্ন বক্তৃতা এবং নমুনার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে এবং বাইবেল পাঠ মনোযোগ দিয়ে শোনার মাধ্যমে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আরও বেশি শিখতে পারি। (নহি. ৮:৮) উদাহরণ স্বরূপ, প্রতি সপ্তাহে আপনি নিজে বাইবেল পাঠের বিষয়বস্তু প্রস্তুত করার সময় এবং অন্যদের কাছ থেকে বাইবেল পাঠের মূল বিষয়গুলো শোনার সময়, আপনি যে-আধ্যাত্মিক রত্নগুলো খুঁজে পান সেই বিষয়ে চিন্তা করুন!

৫. কীভাবে সভাগুলো বাইবেল থেকে আপনি যা শিখেছেন, তা কাজে লাগাতে এবং আপনার প্রচার কাজে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে?

সভাগুলো আমাদেরকে বাইবেল থেকে আমরা যা শিখি, তা জীবনে কাজে লাগাতে সাহায্য করে। (১ থিষল. ৪:৯, ১০) উদাহরণ স্বরূপ, আপনি কি এমন কোনো প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে যোগ দিয়েছিলেন, যা আপনাকে যিহোবার সেবায় আরও বেশি কিছু করার জন্য ইচ্ছুক হতে, আপনার প্রার্থনার গুণগত মান উন্নত করতে অথবা কোনো ভাই কিংবা বোনকে ক্ষমা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল? এ ছাড়া, সপ্তাহের মাঝামাঝি যে-সভা হয়, সেখান থেকে আমরা শিখতে পারি, কীভাবে সুসমাচার প্রচার করতে হয় এবং কীভাবে আমরা অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি।—মথি ২৮:১৯, ২০.

৬. কীভাবে সভাগুলো আমাদের উৎসাহিত করে এবং দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে?

সভাগুলো আমাদের উৎসাহিত করে। শয়তানের জগৎ আমাদের বিশ্বাস দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ছাড়া, শয়তানের জগতের কারণে আমরা চাপগ্রস্ত ও নিরুৎসাহিত বোধ করতে পারি। কিন্তু, আমাদের সভাগুলো আমাদেরকে যিহোবার সেবা করে চলার জন্য উৎসাহিত করে এবং শক্তি প্রদান করে। (পড়ুন, প্রেরিত ১৫:৩০-৩২.) আমরা সভাগুলোতে প্রায়ই বাইবেলের সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে আলোচনা করি, যেগুলো পরিপূর্ণ হয়েছে। এটা আমাদের এই বিষয়ে আরও বেশি নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, ভবিষ্যতের বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোও পরিপূর্ণ হবে। এ ছাড়া, সভাতে আমাদের ভাই-বোনেরা যখন বক্তৃতা দেয়, মন্তব্য করে এবং হৃদয় থেকে যিহোবার প্রশংসায় গান গায়, তখনও আমরা উৎসাহিত হই। (১ করি. ১৪:২৬) আর আমরা যখন সভার আগে ও পরে ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা সতেজতা লাভ করি কারণ এখানে আমাদের এমন অনেক বন্ধু আছে, যারা আমাদের জন্য চিন্তা করে।—১ করি. ১৬:১৭, ১৮.

৭. কেন আমাদের সভাগুলোতে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ?

সভাগুলোতে আমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করি। যিশু মণ্ডলীকে পরিচালনা করার জন্য এই পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেন। আসলে, তিনি আমাদের বলেছিলেন, “আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন,” তা যেন আমরা ‘শুনি।’ (প্রকা. ২:৭) পবিত্র আত্মা আমাদেরকে প্রলোভন প্রতিরোধ করার এবং সাহসের সঙ্গে প্রচার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। আর এটা আমাদের উত্তম সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করতে পারে। এই কারণেই আমরা সভাগুলোতে আসার জন্য এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার জন্য যথাসাধ্য করি।

সভাতে আমরা অন্যদের সাহায্য করি

৮. আমরা যখন সভাতে যাই, মন্তব্য করি এবং গান গাই, তখন এটা কীভাবে আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করে? (এ ছাড়া, “তার মন সবসময় ভালো হয়ে যায়” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

আমরা যে আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি, সভাগুলোতে তা দেখানোর সুযোগ রয়েছে। আমাদের মণ্ডলীর অনেকে কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) পরস্পরকে উৎসাহিত করার জন্য একত্রে মিলিত হয়ে আমরা দেখাতে পারি, আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কথা চিন্তা করি। আমরা যখন সভাগুলোতে উপস্থিত হই, তখন আমাদের ভাই-বোনেরা এটা বুঝতে পারে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকতে চাই, তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই এবং তাদের জন্য চিন্তা করি। এ ছাড়া, সভাগুলোতে আমরা যখন মন্তব্য করি ও হৃদয় থেকে গান গাই, তখন আমরা তাদের উৎসাহিত করি।—কল. ৩:১৬.

৯, ১০. (ক) ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলিত হওয়া যে-কারণে গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝার ক্ষেত্রে যোহন ১০:১৬ পদে উল্লেখিত যিশুর কথাগুলো কীভাবে আমাদের সাহায্য করে, তা ব্যাখ্যা করুন। (খ) আমরা যখন নিয়মিতভাবে সভায় উপস্থিত থাকি, তখন কীভাবে আমরা এমন কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারি, যার পরিবার তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে?

আমরা যখন সভাগুলোতে যাই, তখন আমরা মণ্ডলীর ভাই-বোনদের একতাবদ্ধ থাকতে সাহায্য করি। (পড়ুন, যোহন ১০:১৬.) যিশু নিজেকে একজন মেষপালকের সঙ্গে এবং তাঁর অনুসারীদের মেষপালের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এই বিষয়টা চিন্তা করুন: পাঁচটা মেষের মধ্যে দুটো মেষ যদি পাহাড়ের উপর থাকে, দুটো মেষ যদি উপত্যকায় থাকে এবং আরেকটা মেষ অন্য কোথাও থাকে, তা হলে সেগুলোকে কি একটা পাল বলা যাবে? না, কারণ মেষের একটা পাল সাধারণত একসঙ্গে থাকে এবং মেষপালককে অনুসরণ করে। একইভাবে, আমরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের আলাদা রাখি, তা হলে আমরা মেষপালককে অনুসরণ করতে পারব না। “এক পাল” হওয়ার জন্য এবং ‘এক পালককে’ অনুসরণ করার জন্য আমাদের একত্রিত হতে হবে।

১০ সভাগুলো আমাদেরকে এক প্রেমময় পরিবার হিসেবে একতাবদ্ধ থাকতে সাহায্য করে। (গীত. ১৩৩:১) মণ্ডলীতে এমন ভাই-বোনেরা রয়েছে, যাদেরকে তাদের পরিবার, যেমন তাদের বাবা-মা, ভাই অথবা বোন প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু যিশু তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি তাদের একটা পরিবার দেবেন, যে-পরিবার তাদের ভালোবাসবে এবং তাদের যত্ন নেবে। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) আপনি যদি নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগ দেন, তা হলে আপনি হয়তো মণ্ডলীতে কারো কারো জন্য বাবা, মা, ভাই অথবা বোন হয়ে উঠতে পারবেন। আমরা যখন এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা সমস্ত সভাতে উপস্থিত থাকার জন্য যথাসাধ্য করতে চাইব।

আমরা যিহোবাকে খুশি করি

১১. সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা কীভাবে যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য বিষয় প্রদান করতে পারি?

১১ সভাগুলোতে, আমরা যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য বিষয় প্রদান করে থাকি। তিনি যেহেতু আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তাই তাঁকে আমাদের ধন্যবাদ, সমাদর ও প্রশংসা প্রদান করা উচিত। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৭:১২.) আমরা তা করতে পারি, যখন আমরা সভাগুলোতে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তাঁর উদ্দেশ্যে গান করি এবং তাঁর সম্বন্ধে কথা বলি। প্রতি সপ্তাহে যিহোবার প্রশংসা করার কত চমৎকার সুযোগই-না আমাদের রয়েছে!

১২. সভাতে উপস্থিত থাকার বিষয়ে যিহোবার আদেশের প্রতি আমরা যখন বাধ্য হই, তখন তিনি কেমন অনুভব করেন?

১২ যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন আর আমাদের তাঁর বাধ্য থাকা উচিত। তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা সবসময় একত্রে মিলিত হই, বিশেষভাবে এই সময়ে, যখন শেষ খুবই নিকটে। তাই, আমরা যখন সেই আদেশের বাধ্য হই, তখন যিহোবা খুশি হন। (১ যোহন ৩:২২) আমরা যে সত্যিই সভাতে উপস্থিত হতে চাই, তা তিনি লক্ষ করেন এবং সেখানে থাকার জন্য আমরা যে-সমস্ত প্রচেষ্টা করি, তা তিনি উপলব্ধি করেন।—ইব্রীয় ৬:১০.

১৩, ১৪. কীভাবে আমরা সভাগুলোতে যিহোবা ও যিশুর নিকটবর্তী হই?

১৩ আমরা যখন সভাগুলোতে যাই, তখন আমরা যিহোবাকে দেখাই, আমরা তাঁর ও তাঁর পুত্রের আরও নিকটবর্তী হতে চাই। সভাগুলোতে আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং আমাদের কী করা উচিত ও কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত, সেই বিষয়ে যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করি। (যিশা. ৩০:২০, ২১) এমনকী যিহোবার উপাসনা করে না এমন কোনো কোনো ব্যক্তি যখন সভাগুলোতে আসে, তখন তারা এটা বুঝতে পারে, ঈশ্বর আমাদের পরিচালনা দিচ্ছেন। (১ করি. ১৪:২৩-২৫) যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদের সভাগুলোতে নির্দেশনা দেন আর আমরা সেখানে যা-কিছু শিখি, সেগুলো তাঁর কাছ থেকেই আসে। তাই, আমরা যখন সভাগুলোতে যাই, তখন আমরা যিহোবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তিনি যে আমাদের কতটা ভালোবাসেন তা অনুভব করি এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হই।

১৪ মণ্ডলীর মস্তক যিশু বলেছিলেন: “যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি।” (মথি ১৮:২০) এ ছাড়া, বাইবেল বলে, যিশু মণ্ডলীর “মধ্যে গমনাগমন করেন।” (প্রকা. ১:২০–২:১) স্পষ্টতই, যিহোবা এবং যিশু আমাদের সঙ্গে আছেন আর সভাগুলোতে আমাদের শক্তিশালী করছেন। যিহোবা যখন দেখতে পান, আপনি তাঁর ও তাঁর পুত্রের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করছেন, তখন তিনি কেমন অনুভব করেন বলে আপনি মনে করেন?

১৫. সভাতে যাওয়ার মাধ্যমে আমরা কীভাবে ঈশ্বরকে দেখাই যে, আমরা তাঁর বাধ্য থাকতে চাই?

১৫ সভাগুলোতে উপস্থিত থাকার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে দেখাই, আমরা তাঁর বাধ্য থাকতে চাই। যিহোবা আমাদেরকে তাঁর কথা মতো চলার জন্য জোর করেন না। (যিশা. ৪৩:২৩) তাই, আমরা যখন সভাগুলোতে উপস্থিত থাকার বিষয়ে তাঁর আদেশের বাধ্য হওয়া বেছে নিই, তখন আমরা প্রকাশ করি, আমরা তাঁকে ভালোবাসি আর আমরা এই বিশ্বাসও প্রকাশ করি, আমাদের কী করা উচিত, তা বলার অধিকার তাঁর রয়েছে। (রোমীয় ৬:১৭) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের নিয়োগকর্তা যদি আমাদের কাছ থেকে আরও বেশি কাজ আশা করেন আর এর ফলে আমাদের জন্য নিয়মিতভাবে সভাতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তা হলে আমরা কী করব? অন্যদিকে, সরকার হয়তো বলতে পারে, যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য কেউ যদি সভাতে যায়, তা হলে তাকে জরিমানা দিতে হবে, জেলে যেতে হবে অথবা আরও কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। কিংবা কখনো কখনো আমরা হয়তো সভাতে যাওয়ার পরিবর্তে অন্য কিছু করা বেছে নিতে পারি। এই ধরনের প্রত্যেকটা পরিস্থিতিতে আমরা কী করব, সেই বিষয়ে নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। (প্রেরিত ৫:২৯) প্রতি বার আমরা যখন যিহোবার বাধ্য হওয়া বেছে নিই, তখন আমরা তাঁকে খুশি করি।—হিতো. ২৭:১১.

সবসময় আপনার ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্রে মিলিত হোন

১৬, ১৭. (ক) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে সভাগুলো যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা আমরা কীভাবে জানি? (খ) খ্রিস্টীয় সভাগুলোর প্রতি ভাই জর্জ গানগাসের কেমন অনুভূতি ছিল?

১৬ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন একত্রে মিলিত হওয়ার পর থেকে, খ্রিস্টানরা যিহোবার উপাসনা করার জন্য নিয়মিতভাবে মিলিত হতো। তারা ‘প্রেরিতদের শিক্ষায় ও একত্র হওয়ায় নিবিষ্ট থাকিল।’ (প্রেরিত ২:৪২) আর এর পরে রোমীয় সরকার ও যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও তারা একত্রে মিলিত হওয়া বন্ধ করেনি। যদিও তা করা সহজ ছিল না, কিন্তু তার পরও তারা মিলিত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করেছিল।

১৭ বর্তমানেও যিহোবার দাসেরা সভাগুলোর জন্য অনেক কৃতজ্ঞ এবং তারা সেখানে যেতে পেরে আনন্দিত। জর্জ গানগাস, যিনি ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, তিনি বলেন: “আমার কাছে, ভাইদের সঙ্গে মিলিত হওয়া হল জীবনের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ও উৎসাহের এক উৎস। সম্ভব হলে, আমি কিংডম হলে সকলের আগে আসতে এবং একেবারে শেষে বের হতে ভালোবাসি। আমি যখন ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমি অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করি। আমি যখন তাদের সঙ্গে থাকি, তখন আমার মনে হয়, আমি ঘরে আমার পরিবারের সঙ্গে এক আধ্যাত্মিক পরমদেশে রয়েছি।” তিনি আরও বলেন: “আমি যেন সবসময় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারি, এটাই আমার একান্ত ইচ্ছা।”

১৮. আমাদের সভাগুলো সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন আর আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৮ আপনিও কি যিহোবার উপাসনার বিষয়ে একইরকম অনুভব করেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে সভাগুলোতে আপনার ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করে চলুন, এমনকী তা করা যদি কঠিন বলেও মনে হয়। তা করার মাধ্যমে যিহোবাকে দেখান যে, আপনিও রাজা দায়ূদের মতো অনুভব করেন, যিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমি ভালবাসি তোমার নিবাসগৃহ।”—গীত. ২৬:৮.

^ [১] (৩ অনুচ্ছেদ) আমাদের কোনো কোনো ভাই-বোন নিয়মিতভাবে সভাতে যেতে পারে না কারণ তাদের পরিস্থিতি হয়তো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। উদাহরণ স্বরূপ, তারা হয়তো অনেক অসুস্থ থাকতে পারে। কিন্তু, তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারে, যিহোবা তাদের পরিস্থিতি বোঝেন এবং তাঁকে উপাসনা করার জন্য তারা যে যথাসাধ্য করেন, তা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। প্রাচীনরা হয়তো এই ধরনের ব্যক্তিদের জন্য টেলিফোনে সভা শোনার ব্যবস্থা করে অথবা তাদের জন্য সভার বিষয়বস্তু রেকর্ড করে সাহায্য করতে পারেন।

^ [২] (৩ অনুচ্ছেদ) “সভাতে যোগ দেওয়ার বিভিন্ন কারণ” শিরোনামের বাক্স দেখুন।