ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করা—আনন্দ করার এক কারণ
“আর তাঁহার সঙ্গে কার্য্য করিতে করিতে আমরা নিবেদনও করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ করিও না।” —২ করি. ৬:১.
গান সংখ্যা: ২৮, ১০
১. যদিও যিহোবা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু তিনি অন্যদের কী করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?
যিহোবা হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর অসীম প্রজ্ঞা ও শক্তি রয়েছে। তিনি যখন ইয়োবকে এই বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, তখন ইয়োব তাঁকে বলেছিলেন: “আমি জানি, তুমি সকলই করিতে পার; কোন সঙ্কল্প সাধন তোমার অসাধ্য নয়।” (ইয়োব ৪২:২) যিহোবা যা-কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তা তিনি অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু, নিজের উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য তাঁর সঙ্গে অন্যদেরকে কাজ করতে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তিনি প্রেম প্রকাশ করেন।
২. যিহোবা যিশুকে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন?
২ ঈশ্বর প্রথমে তাঁর পুত্র যিশুকে সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর, যিহোবা তাঁর পুত্রকে সুযোগ দিয়েছিলেন, যেন তিনি অন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করায় তাঁকে সাহায্য করেন। (যোহন ১:১-৩, ১৮) যিশু সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তাঁহাতেই সকলই সৃষ্ট হইয়াছে; স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যে কিছু আছে, সিংহাসন হউক, কি প্রভুত্ব হউক, কি আধিপত্য হউক, কি কর্ত্তৃত্ব হউক, সকলই তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত সৃষ্ট হইয়াছে।” (কল. ১:১৫-১৭) তাই যিহোবা শুধু তাঁর পুত্রকে এক গুরুত্বপূর্ণ কাজই দেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এই বিষয়ে অন্যদের জানিয়েছেন। এটা কতই-না সম্মানের এক বিষয়!
৩. যিহোবা আদমকে কী করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং কেন?
৩ এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর সঙ্গে কাজ করার জন্য মানুষকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি আদমকে সুযোগ দিয়েছিলেন, যেন আদম পশুপাখির নাম রাখেন। (আদি. ২:১৯, ২০) আদম এই কাজ করে কত আনন্দ পেতেন, তা একটু কল্পনা করুন! তিনি বিভিন্ন পশুপাখির বৈশিষ্ট্য গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করেছিলেন আর এরপর প্রতিটা প্রাণীর জন্য একেকটা নাম বাছাই করেছিলেন। যিহোবা যেহেতু সমস্ত পশুপাখি সৃষ্টি করেছিলেন, তাই তিনি নিজেই সেগুলোর নাম দিতে পারতেন। কিন্তু, আদমকে পশুপাখির নাম রাখার জন্য সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবা আদমকে দেখিয়েছিলেন, তিনি তাকে কতটা ভালোবাসেন। এ ছাড়া, ঈশ্বর পুরো পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করার দায়িত্ব আদমকে দিয়েছিলেন। (আদি. ১:২৭, ২৮) তবে একটা সময়ে, আদম ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর ফল স্বরূপ নিজের ও তার বংশধরদের জন্য অনেক কষ্ট নিয়ে এসেছিলেন।—আদি. ৩:১৭-১৯, ২৩.
৪. ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য অন্যেরা কীভাবে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিল?
৪ পরবর্তী সময়ে, ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে কাজ করার জন্য অন্য ব্যক্তিদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নোহ একটা জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন, যে-জাহাজ জলপ্লাবনের সময় তার ও তার পরিবারের জীবন রক্ষা করেছিল। মোশি ইস্রায়েল জাতিকে মিশর থেকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিলেন। যিহোশূয় ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শলোমন যিরূশালেমে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। মরিয়ম যিশুর মা হয়েছিলেন। এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা ও সেইসঙ্গে অন্য অনেকে যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিল।
৫. আমরা কোন কাজে অংশ নিতে পারি আর যিহোবার কি আমাদেরকে এই কাজে জড়িত করার প্রয়োজন ছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৫ বর্তমানে, যিহোবা তাঁর রাজ্যকে সমর্থন করার জন্য আমাদের সকলকে যথাসাধ্য করার আমন্ত্রণ জানান। আমরা বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বরের সেবা করতে পারি। আর আমরা সকলে যদিও একই উপায়ে তাঁর সেবা করতে পারি না, তবে আমরা সকলে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে পারি। এই কাজ যিহোবা নিজে করতে পারতেন। তিনি স্বর্গ থেকে সরাসরি পৃথিবীর লোকেদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। যিশু বলেছিলেন, যিহোবা এমনকী পাথরের মাধ্যমে তাঁর রাজ্যের রাজা সম্বন্ধে অন্যদের জানাতে পারেন। (লূক ১৯:৩৭-৪০) কিন্তু, যিহোবা আমাদের তাঁর “সহকার্য্যকারী” হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। (১ করি. ৩:৯) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আর তাঁহার সঙ্গে কার্য্য করিতে করিতে আমরা নিবেদনও করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ করিও না।” (২ করি. ৬:১) ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ লাভ করা খুবই সম্মানের এক ব্যাপার। আসুন এখন আমরা দেখি, কেন এটা আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে।
ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করে আমরা আনন্দিত হই
৬. ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র তাঁর পিতার পাশে থেকে কাজ করার অনুভূতি সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করেছিলেন?
৬ যিহোবার দাসেরা তাঁর সঙ্গে কাজ করে সবসময়ই আনন্দিত হয়েছে। পৃথিবীতে আসার আগে, ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র বলেছিলেন: “সদাপ্রভু নিজ পথের আরম্ভে আমাকে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, . . . আমি তাঁহার কাছে কার্য্যকারী ছিলাম; আমি দিন দিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহলাদ করিতাম।” (হিতো. ৮:২২, ৩০) যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে কাজ করার সময় আনন্দিত ছিলেন কারণ যিশু অনেক কিছু সম্পাদন করেছিলেন আর তিনি জানতেন, যিহোবা তাঁকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমাদের বিষয়ে কী বলা যায়?
৭. কেন প্রচার কাজ আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে?
৭ যিশু বলেছিলেন, কোনো কিছু পেলে এবং কোনো প্রেরিত ২০:৩৫) আমরা যখন সত্য পেয়েছিলাম, তখন আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু অন্যদের সত্য জানানোর মাধ্যমেও কেন আমরা আনন্দিত হই? কারণ তারা যখন বাইবেলের শিক্ষা বুঝতে পারে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করে, তখন তাদেরকে আমরা সত্যিকারের আনন্দ লাভ করতে দেখি। তাদেরকে নিজেদের চিন্তাভাবনা ও জীবনধারা পরিবর্তন করতে দেখে আমরা রোমাঞ্চিত হই। আমরা করতে পারি এমন কাজের মধ্যে প্রচার কাজ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক কাজ। যারা ঈশ্বরের বন্ধু হয়, এই কাজ তাদের জন্য চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ এনে দিতে পারে।—২ করি. ৫:২০.
কিছু দান করলে, আমরা আনন্দিত হই। (৮. যিহোবার সঙ্গে কাজ করার আনন্দ সম্বন্ধে কেউ কেউ কী বলেছে?
৮ আমরা যখন অন্যদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করি, তখন আমরা এটা জানি, আমরা যিহোবাকে খুশি করছি এবং তাঁর সেবা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে তিনি মূল্য দেন। এটাও আমাদের আনন্দিত করে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.) মার্কো ইতালিতে থাকেন। তিনি বলেন: “আমি যিহোবার জন্য যথাসাধ্য করছি, এমন কোনো ব্যক্তির জন্য করছি না, যিনি শীঘ্র তা ভুলে যাবেন। এই বিষয়টা জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই।” একইভাবে ফ্রাঙ্কো, যিনি ইতালিতে সেবা করেন, তিনি বলেন: “যিহোবা তাঁর বাক্য এবং তাঁর আধ্যাত্মিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং তাঁর জন্য আমরা যা-কিছু করি, সেই সমস্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ, এমনকী আমাদের কাছে যদি সেই প্রচেষ্টা তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না-ও হয়। তাই, ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করা আমাকে আনন্দ এবং জীবনের অর্থ প্রদান করে।”
ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করে আমরা তাঁর এবং অন্যদের নিকটবর্তী হই
৯. যিহোবা ও যিশুর মধ্যে কেমন সম্পর্ক রয়েছে এবং কেন?
৯ আমরা যাদের ভালোবাসি, তাদের সঙ্গে আমরা যখন কাজ করি, তখন আমরা তাদের নিকটবর্তী হই। আমরা তাদের ব্যক্তিত্ব এবং গুণাবলি সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানতে পারি। এ ছাড়া, আমরা তাদের লক্ষ্য এবং কীভাবে তারা সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, তা জানতে পারি। যিশু যিহোবার সঙ্গে সম্ভবত কোটি কোটি বছর ধরে কাজ করেছিলেন। পরস্পরের প্রতি তাদের প্রেম ও স্নেহ এতটাই দৃঢ় হয়ে উঠেছিল যে, কোনো কিছুই তাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারেনি। তাদের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করার সময় যিশু বলেছিলেন: “আমি ও পিতা, আমরা এক।” (যোহন ১০:৩০) তারা সত্যিই একতাবদ্ধ ছিলেন এবং একসঙ্গে কাজ করার সময় পরস্পরকে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছিলেন।
১০. কেন প্রচার করা আমাদেরকে ঈশ্বর ও অন্যদের নিকটবর্তী করে?
১০ যিশু যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন, যেন যিহোবা তাঁর শিষ্যদের সুরক্ষা করেন। কেন? তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক।” (যোহন ১৭:১১) আমরা যখন ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি এবং প্রচার কাজে অংশ নিই, তখন আমরা তাঁর চমৎকার গুণাবলি সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। আমরা জানতে পারি, কেন তাঁর উপর নির্ভর করা এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করা বিজ্ঞতার কাজ। আর আমরা যখন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হই, তখন তিনিও আমাদের নিকটবর্তী হন। (পড়ুন, যাকোব ৪:৮.) এ ছাড়া, আমরা ভাই-বোনদেরও নিকটবর্তী হই কারণ আমাদের সকলের একইরকম সমস্যা ও আনন্দের অভিজ্ঞতা আর সেইসঙ্গে একই লক্ষ্য রয়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করি, একসঙ্গে আনন্দ করি এবং একসঙ্গে সমস্যা সহ্য করি। ব্রিটেনে বসবাসরত অক্টাভিয়া বলেন: “যিহোবার সঙ্গে কাজ করার ফলে আমি অন্যদের নিকটবর্তী হয়েছি।” এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এখন তার বন্ধুত্বের ভিত্তি হচ্ছে, “একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।” নিশ্চিতভাবেই, আমরাও একইরকম অনুভব করি। আমরা যখন দেখি, আমাদের ভাই-বোনেরা যিহোবাকে খুশি করার জন্য প্রচেষ্টা করছে, তখন আমরা তাদের নিকটবর্তী হই।
১১. কেন আমরা নতুন জগতে যিহোবার ও আমাদের ভাই-বোনদের আরও নিকটবর্তী হব?
১১ ঈশ্বর ও আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা এখন দৃঢ় আর নতুন জগতে তা আরও দৃঢ় হবে। ভবিষ্যতে আমরা যে-সমস্ত রোমাঞ্চকর কাজ করব, সেই সম্বন্ধে একটু চিন্তা করে দেখুন! আমরা পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের স্বাগত জানাব এবং যিহোবা সম্বন্ধে তাদের শিক্ষা দেব। এ ছাড়া, আমরা পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করার জন্য কাজ করব। একসঙ্গে কাজ করা এবং খ্রিস্টের শাসনের অধীনে ধীরে ধীরে সিদ্ধতায় পৌঁছানো খুবই আনন্দদায়ক হবে। সকল মানুষ পরস্পরের ও সেইসঙ্গে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হবে, যিনি নিশ্চিতভাবেই “সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ” করবেন।—গীত. ১৪৫:১৬.
ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করে আমরা সুরক্ষা লাভ করি
১২. কীভাবে প্রচার কাজ হচ্ছে এক সুরক্ষা?
১২ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে রক্ষা করা প্রয়োজন। আমরা শয়তানের জগতে বাস করি এবং আমরা অসিদ্ধ। তাই, আমরা সহজেই এই জগতের মতো চিন্তাভাবনা ও কাজ করা শুরু করতে পারি। এটা এমন এক নদীতে সাঁতার কাটার মতো, যে-নদীর স্রোত আমাদেরকে নিজেদের ইচ্ছার বিপরীত দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই, সেই স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার জন্য আমাদের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে, শয়তানের জগতের দ্বারা প্ররোচিত হওয়া এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কীভাবে প্রচার কাজ আমাদের সুরক্ষা করতে পারে? আমরা যখন যিহোবা ও বাইবেল সম্বন্ধে কথা বলি, তখন আমরা বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে এমন বিষয়ের উপর নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তম বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি। (ফিলি. ৪:৮) প্রচার কাজ আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে কারণ এই কাজ ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা ও প্রেমময় মানগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এ ছাড়া, এই কাজ আমাদের সেইসমস্ত গুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে, যে-গুণগুলো শয়তান ও তার জগৎ থেকে নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য আমাদের প্রয়োজন।—পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১৪-১৭.
১৩. প্রচার কাজ সম্বন্ধে অস্ট্রেলিয়ার একজন সাক্ষি কেমন অনুভব করেন?
১৩ আমরা যখন প্রচার, অধ্যয়ন ও মণ্ডলীর অন্য সদস্যদের জন্য কিছু করায় ব্যস্ত থাকি, তখন আমরা নিজেদের সুরক্ষা করি কারণ তখন আমাদের হাতে নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার সময় থাকে না। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী জোয়েল বলেন: “প্রচার কাজ আমাকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে না যেতে সাহায্য করে। এটা আমাকে লোকেদের বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সেইসঙ্গে নিজের জীবনে বাইবেলের নীতি কাজে লাগিয়ে আমি যে-সমস্ত উপকার লাভ করেছি, সেই বিষয়ে মনে করিয়ে দেয়। প্রচার কাজ আমাকে নম্র থাকার বিষয়ে চেষ্টা করতে সাহায্য করে; এটা আমাকে যিহোবার উপর ও আমার ভাই-বোনদের উপর নির্ভর করার সুযোগ করে দেয়।”
১৪. কেন প্রচার কাজ করে চলা প্রকাশ করে, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে?
১৪ এ ছাড়া, প্রচার কাজ আমাদের এই বিষয়ে আরও আস্থা প্রদান করে, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে। উদাহরণ স্বরূপ: মনে করুন, আপনার চাকরি হচ্ছে আপনার এলাকার লোকেদের কাছে রুটি বিতরণ করা। এই কাজের জন্য আপনি কোনো বেতন পান না বরং যে-খরচ হয়, তা আপনাকেই বহন করতে হয়। এ ছাড়া, অধিকাংশ লোক সেই রুটি চায় না আর কেউ কেউ এমনকী তাদের কাছে আপনি রুটি নিয়ে যান বলে আপনাকে ঘৃণা করে। আপনি কত সময় ধরে
এই চাকরি করে যেতে পারবেন? আপনি খুব শীঘ্র নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন এবং সম্ভবত সেই চাকরি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু, আমাদের মধ্যে অনেকে বছরের পর বছর ধরে প্রচার কাজ করে যাচ্ছে, যদিও এর জন্য আমাদের সময় ও টাকাপয়সা ব্যয় করতে হয় আর এমনকী লোকেরা আমাদের উপহাস করে অথবা আমাদের সঙ্গে রাগান্বিত হয়। এটা প্রমাণ করে, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের সাহায্য করছে।ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করে আমরা তাঁর এবং অন্যদের প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করি
১৫. মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
১৫ কীভাবে প্রচার কাজ মানবজাতির জন্য যিহোবার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকবে আর আদমের পাপের কারণে ঈশ্বরের সেই উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়নি। (যিশা. ৫৫:১১) আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করার জন্য ঈশ্বর একটা ব্যবস্থা করেছিলেন। কীভাবে? যিশু পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং নিজের জীবন বলি দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর বলিদান থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ঈশ্বরের বাধ্য হতে হবে। তাই, যিশু লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে কী চান। আর তিনি তাঁর শিষ্যদের একই কাজ করার আদেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে আমরা যখন প্রচার করি ও অন্যদেরকে ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠতে সাহায্য করি, তখন মানুষকে পাপ ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের প্রেমময় ব্যবস্থার মধ্যে আমরা সরাসরি তাঁর সঙ্গে কাজ করি।
১৬. আমাদের প্রচার কাজ কীভাবে ঈশ্বরের সর্বমহৎ আজ্ঞাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
১৬ আমরা যখন অন্যদেরকে অনন্তজীবন লাভ করার উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করি, তখন আমরা দেখাই আমরা তাদের ও সেইসঙ্গে যিহোবাকে ভালোবাসি। তাঁর “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীম. ২:৪) একজন ফরীশী যখন যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কোনটা সর্বমহৎ আজ্ঞা, তখন যিশু বলেছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা। আর দ্বিতীয়টী ইহার তুল্য; ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’” (মথি ২২:৩৭-৩৯) সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে আমরা এই আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হই।—পড়ুন, প্রেরিত ১০:৪২.
১৭. সুসমাচার প্রচার করার বিশেষ সুযোগ সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?
১৭ আমরা কতই-না আশীর্বাদ লাভ করেছি! যিহোবা আমাদের এমন এক কাজ দিয়েছেন, যে-কাজ আমাদের আনন্দিত করে, আমাদেরকে তাঁর এবং আমাদের ভাই-বোনদের নিকটবর্তী করে এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে রক্ষা করে। এ ছাড়া, এই কাজ ঈশ্বর ও অন্যদের প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করার সুযোগ দেয়। বিশ্বব্যাপী যিহোবার লক্ষ লক্ষ দাস রয়েছে আর তারা সকলে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছে। কিন্তু, আমরা যুবক অথবা বৃদ্ধ, ধনী অথবা গরিব, দুর্বল অথবা সবল, যা-ই হই না কেন, আমরা অন্যদের কাছে নিজেদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জানানোর জন্য যথাসাধ্য করি। আমরাও ফ্রান্সের শুন্তেলের মতো অনুভব করি, যিনি বলেন: “নিখিলবিশ্বের সর্বশক্তিমান ব্যক্তি, সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা, সুখী ঈশ্বর আমাকে বলেন, ‘যাও! কথা বলো! আমার জন্য নিজের হৃদয় থেকে কথা বলো। আমি তোমাকে আমার শক্তি, আমার বাক্য বাইবেল, স্বর্গ থেকে সমর্থন, পৃথিবী থেকে সঙ্গী, ক্রমাগত প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত সময়ে সঠিক নির্দেশনা দেব।’ যিহোবা আমাদের যা করতে বলেন তা করা এবং আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করা কতই-না বিশেষ সুযোগ!”