সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা”

“আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা”

“হে ইস্রায়েল, শোনো, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা।”—দ্বিতীয়. ৬:৪, NW.

গান সংখ্যা: ১, 

১, ২. (ক) দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ পদের কথাগুলো কেন সুপরিচিত? (খ) কেন মোশি সেই কথাগুলো বলেছিলেন?

শত শত বছর ধরে, যিহুদি লোকেরা এক বিশেষ প্রার্থনার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ পদের কথাগুলো ব্যবহার করেছিল। এই প্রার্থনার নাম হল শেমা আর এই শব্দটা ইব্রীয় ভাষায় সেই পদের প্রথম শব্দ। অনেক যিহুদি ঈশ্বরের প্রতি তাদের একাগ্র ভক্তি প্রকাশ করার জন্য প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এই প্রার্থনা করত।

এই কথাগুলো মোশি ইস্রায়েল জাতির উদ্দেশে শেষ যে-বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেই বক্তৃতার অংশ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৩ সালে সেই জাতি মোয়াব দেশে এসে পৌঁছেছিল এবং যর্দন নদী পার হয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশ জয় করার জন্য প্রস্তুত ছিল। (দ্বিতীয়. ৬:১) মোশি ৪০ বছর ধরে সেই লোকেদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আর তিনি চেয়েছিলেন, তাদের সামনে যে-কঠিন পরিস্থিতি আসতে যাচ্ছে, তারা যেন সেটার মুখোমুখি হওয়ার জন্য সাহসী হয়। ইস্রায়েল জাতিকে তাদের ঈশ্বর যিহোবার উপর নির্ভর করতে হতো এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হতো। তাই, মোশির শেষ কথাগুলো তাদেরকে ঠিক সেটাই করতে উৎসাহিত করেছিল। যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া দশ আজ্ঞা ও অন্যান্য আইন সম্বন্ধে উল্লেখ করার পর, মোশি লোকেদের দৃঢ়ভাবে সেই বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যা আমরা দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪, ৫ পদ থেকে পড়তে পারি। (পড়ুন।)

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

ইস্রায়েলীয়রা জানত, তাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন “একমাত্র যিহোবা।” বিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা একজন ঈশ্বরেরই উপাসনা করত, যিনি তাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর ছিলেন। তা হলে, কেন মোশি তাদের এটা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন “একমাত্র যিহোবা”? এই সত্য এবং আমাদের ঈশ্বরকে সমস্ত মন, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দিয়ে ভালোবাসার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে? এ ছাড়া, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪, ৫ পদের কথাগুলো কীভাবে বর্তমানে আমাদের প্রতি প্রযোজ্য?

আমাদের ঈশ্বর হলেন “একমাত্র যিহোবা”

৪, ৫. (ক) “একমাত্র” শব্দের একটা অর্থ কী? (খ) কীভাবে যিহোবা জাতিগণের দেব-দেবীর চেয়ে আলাদা?

অদ্বিতীয়। “একমাত্র যিহোবা” এই অভিব্যক্তির “একমাত্র” শব্দের একটা অর্থ হল যিহোবা হলেন অদ্বিতীয় অর্থাৎ তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। কেন মোশি এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন? মনে হয়, মোশি এই কথাগুলো বলার সময় ত্রিত্বের মিথ্যা মতবাদ নিয়ে আলোচনা করছিলেন না। যিহোবা হলেন স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা এবং নিখিলবিশ্বের শাসক। তিনি হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর এবং তাঁর তুল্য আর কোনো ঈশ্বর নেই। (২ শমূ. ৭:২২) তাই, মোশির কথাগুলো ইস্রায়েলীয়দের এটা মনে করিয়ে দিয়েছিল, তাদের শুধুমাত্র যিহোবারই উপাসনা করা উচিত। তারা যেন তাদের আশেপাশের লোকেদের অনুকরণ না করে, যারা অনেক মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করত। সেই লোকেরা এমনটা বিশ্বাস করত, তাদের দেব-দেবীরা প্রকৃতির একেকটা অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে।

উদাহরণ স্বরূপ, মিশরীয়রা সূর্য দেবতা রা, আকাশ দেবী নুট, স্থল দেবতা গেব, নীলনদের দেবতা হাপি ও সেইসঙ্গে অনেক পশুপাখির উপাসনা করত। যিহোবা যখন দশ আঘাত এনেছিলেন, তখন তিনি দেখিয়েছিলেন, তিনি এসব মিথ্যা দেব-দেবীর চেয়ে মহান। কনানীয়দের প্রধান দেবতা ছিল বাল। সেই মিথ্যা দেবতা সম্বন্ধে কনানীয়দের এই বিশ্বাস ছিল, সে জীবনের অস্তিত্ব নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া, তাকে আকাশ, বৃষ্টি ও ঝড়ের দেবতা বলেও মনে করা হতো। অনেক জায়গায় লোকেরা সুরক্ষার জন্য বালের উপর নির্ভর করেছিল। (গণনা. ২৫:৩) কিন্তু, ইস্রায়েলীয়দের মনে রাখতে হয়েছিল, তাদের ঈশ্বরই হলেন “সত্য ঈশ্বর,” যিনি অদ্বিতীয়। তিনি হলেন “একমাত্র যিহোবা।”—যির. ১০:১০; দ্বিতীয়. ৪:৩৫, ৩৯.

৬, ৭. “একমাত্র” শব্দের আরেকটা অর্থ কী আর কীভাবে যিহোবা নিজেকে “একমাত্র যিহোবা” হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন?

অপরিবর্তনশীল ও অনুগত। “একমাত্র যিহোবা” এই অভিব্যক্তির “একমাত্র” শব্দের আরেকটা অর্থ হল, তাঁর উদ্দেশ্য ও কাজ সবসময় নির্ভরযোগ্য। যিহোবা ঈশ্বর হলেন পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য। তিনি সবসময় বিশ্বস্ত, অপরিবর্তনশীল, অনুগত এবং সত্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তার বংশধরেরা প্রতিজ্ঞাত দেশে বাস করবে। আর সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য যিহোবা বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ করেছিলেন। সেই প্রতিজ্ঞা করার চার-শো ত্রিশ বছর পরও যিহোবার উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়নি।—আদি. ১২:১, ২, ৭; যাত্রা. ১২:৪০, ৪১.

এই ঘটনার শত শত বছর পর, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের তাঁর সাক্ষি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন: “আমিই তিনি; আমার পূর্ব্বে কোন ঈশ্বর নির্ম্মিত হয় নাই, এবং আমার পরেও হইবে না।” এ ছাড়া, যিহোবার উদ্দেশ্য যে কখনো পরিবর্তন হয় না, সেই বিষয়টাও তিনি এই কথা বলার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন: ‘এই দিবস হইতে [“প্রথম থেকে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] আমিই তিনি।’ (যিশা. ৪৩:১০, ১৩; ৪৪:৬; ৪৮:১২) অপরিবর্তনশীল ও সবসময় অনুগত এমন একজন ঈশ্বরের সেবা করতে পারা ইস্রায়েলীয়দের জন্য কী এক বিশেষ সুযোগই-না ছিল! বর্তমানে আমাদেরও সেই বিশেষ সুযোগ রয়েছে।—মালাখি ৩:৬; যাকোব ১:১৭.

৮, ৯. (ক) যিহোবা তাঁর উপাসকদের কাছ থেকে কী চান? (খ) কীভাবে যিশু মোশির কথার অর্থের উপর জোর দিয়েছিলেন?

মোশি ইস্রায়েলীয়দের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি যিহোবার প্রেম ও যত্ন কখনো পরিবর্তন হবে না। এর প্রতিদানে, যিহোবা চেয়েছিলেন যেন তারা তাঁকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করে এবং তাদের সমস্ত মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালোবাসে। আর অল্পবয়সিরাও যাতে একমাত্র যিহোবার উপাসনা করে, সেইজন্য বাবা-মায়েদেরকে প্রতিটা সুযোগে তাদের সন্তানদের যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে হতো।—দ্বিতীয়. ৬:৬-৯.

যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য কখনো পরিবর্তন করেন না আর তাই তাঁর সত্য উপাসকদের কাছ থেকে তিনি যা চান, সেগুলোও কখনো পরিবর্তন হবে না। আমরা যদি আমাদের উপাসনার মাধ্যমে যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তা হলে তাঁকে আমাদের একাগ্র ভক্তি প্রদান করতে হবে এবং আমাদের সমস্ত মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালোবাসতে হবে। যিশু বলেছিলেন, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা। (পড়ুন, মার্ক ১২:২৮-৩১.) আসুন আমরা এখন দেখি, কীভাবে আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা এই বিশ্বাস প্রকাশ করতে পারি, “আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা।”

যিহোবাকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করুন

১০, ১১. (ক) কোন অর্থে আমরা যিহোবাকে একাগ্র উপাসনা প্রদান করি? (খ) কীভাবে কয়েক জন ইব্রীয় যুবক বাবিলে থাকার সময় যিহোবার প্রতি তাদের একাগ্র ভক্তি দেখিয়েছিলেন?

১০ যিহোবা হলেন আমাদের একমাত্র ঈশ্বর। তাই আমরা যখন শুধুমাত্র তাঁকে উপাসনা করি, তখন আমরা তাঁকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করি। আমরা অন্য কোনো দেব-দেবীর উপাসনা করতে পারি না অথবা যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনার মধ্যে কোনো মিথ্যা ধারণা কিংবা অভ্যাস যুক্ত করতে পারি না। তিনি এমন একজন ঈশ্বর নন, যিনি কেবল অন্য দেব-দেবীর চেয়ে ঊর্ধ্বে বা তাদের চেয়ে আরও শক্তিশালী। তিনি হলেন সত্য ঈশ্বর। আমাদের শুধুমাত্র যিহোবাকেই উপাসনা করতে হবে।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

১১ দানিয়েল বইয়ে আমরা কয়েক জন ইব্রীয় যুবক অর্থাৎ দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয় সম্বন্ধে পড়ি। যিহোবার উপাসকদের জন্য অশুচি এমন খাদ্য গ্রহণ না করার মাধ্যমে তারা যিহোবার প্রতি একাগ্র ভক্তি দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া, দানিয়েলের তিন বন্ধু একটা মূর্তি অর্থাৎ নবূখদ্‌নিৎসরের স্বর্ণের প্রতিমার সামনে নত হতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা যিহোবাকে প্রথম স্থানে রেখেছিলেন। তারা তাঁর প্রতি পুরোপুরি অনুগত ছিলেন।—দানি. ১:১–৩:৩০.

১২. যিহোবাকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করার জন্য আমাদের কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে?

১২ যিহোবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখতে হবে। আমরা যদি তাঁকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করতে চাই, তা হলে আমাদের এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাঁর স্থানে অন্যান্য বিষয় চলে না আসে। অন্য বিষয়গুলো কী হতে পারে? দশ আজ্ঞার মধ্যে যিহোবা বলেছিলেন, তাঁর লোকেরা অন্য কোনো দেব-দেবীর উপাসনা করবে না। তারা কোনো ধরনের প্রতিমাপূজায় রত হবে না। (দ্বিতীয়. ৫:৬-১০) বর্তমানে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিমাপূজা রয়েছে আর এগুলোর মধ্যে কিছু যে আসলেই প্রতিমাপূজা, তা হয়তো সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু যিহোবা যা চেয়েছিলেন, সেটা পরিবর্তন হয়নি। তিনি এখনও “একমাত্র যিহোবা।” আসুন আমরা দেখি, কীভাবে আমরা বর্তমানে প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলতে পারি।

১৩. কোন বিষয়টা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে?

১৩ কলসীয় ৩:৫ (পড়ুন) পদে, আমরা এমন কিছু বিষয় সম্বন্ধে পড়ি, যেগুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। আমরা এই পদ থেকে বুঝতে পারি, লোভ প্রতিমাপূজার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কীভাবে? যখন আমাদের মধ্যে কোনো কিছু পাওয়ার, যেমন টাকাপয়সা অথবা বিলাসদ্রব্য পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে, তখন সেই আকাঙ্ক্ষা আমাদের জীবনকে এক শক্তিশালী দেবতার মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কলসীয় ৩:৫ পদে উল্লেখিত সমস্ত ধরনের পাপ লোভের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর এই লোভ হল এক ধরনের প্রতিমাপূজা। তাই, আমাদের মধ্যে যদি এই ধরনের কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা হলে আমরা হয়তো ঈশ্বরের চেয়ে সেগুলোকে বেশি ভালোবাসতে শুরু করতে পারি। তখন যিহোবা আমাদের কাছে “একমাত্র যিহোবা” হিসেবে থাকবেন না। আমরা নিশ্চয়ই কখনো তা চাইব না।

১৪. প্রেরিত যোহন কোন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন?

১৪ প্রেরিত যোহন একইরকম বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি সতর্ক করেছিলেন, কেউ যদি জগতের কোনো কিছু অর্থাৎ “মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প” ভালোবাসে, তা হলে “পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই।” (১ যোহন ২:১৫, ১৬) তাই, আমরা জগৎকে ভালোবাসি কি না, তা দেখার জন্য আমাদের নিয়মিতভাবে নিজেদের পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষা করার সময় আমরা হয়তো দেখতে পারি, আমরা এই জগতের বিনোদন, ব্যক্তি, পোশাক-আশাকের ধরন অথবা সাজগোজের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছি। অথবা উচ্চশিক্ষা লাভের চেষ্টা করার মাধ্যমে আমরা হয়তো “মহৎ মহৎ বিষয়” অর্জন করার চেষ্টা করতে পারি। (যির. ৪৫:৪, ৫) নতুন জগৎ খুব কাছেই। তাই, আমাদের মোশির বলা জোরালো কথাগুলো মনে রাখতে হবে! “আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা,” এই কথাগুলোর অর্থ যদি আমরা বুঝতে পারি ও তা সত্যিই বিশ্বাস করি, তা হলে আমরা তাঁকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করব এবং তিনি যেভাবে চান, সেভাবে তাঁর উপাসনা করব।—ইব্রীয় ১২:২৮, ২৯.

খ্রিস্টীয় একতা বজায় রাখুন

১৫. কেন পৌল খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তাদের ঈশ্বর হলেন “একমাত্র যিহোবা”?

১৫ “একমাত্র যিহোবা” এই অভিব্যক্তি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, যিহোবা চান যেন তাঁর দাসেরা একতাবদ্ধ হয় এবং তাদের জীবনে একই উদ্দেশ্য থাকে। প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যিহুদি, গ্রিক, রোমীয় ও অন্যান্য জাতির ব্যক্তিরা ছিল। তাদের পটভূমি, রীতিনীতি ও পছন্দ আলাদা ছিল। এই কারণে, কারো কারো পক্ষে উপাসনার নতুন পদ্ধতি মেনে নেওয়া অথবা তাদের পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করা কঠিন ছিল। তাই, পৌল তাদের মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, খ্রিস্টানদের একজন ঈশ্বর আছেন আর তিনি হলেন যিহোবা।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৮:৫, ৬.

১৬, ১৭. (ক) কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের দিনে পরিপূর্ণ হচ্ছে আর এর ফল কী হয়েছে? (খ) কোন বিষয়গুলো আমাদের একতা নষ্ট করে দিতে পারে?

১৬ বর্তমানের খ্রিস্টীয় মণ্ডলী সম্বন্ধে কী বলা যায়? ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন, “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে,” সমস্ত জাতি থেকে লোকেরা যিহোবার উপাসনা করতে আসবে। তারা বলবে: “তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।” (যিশা. ২:২, ৩) বর্তমানে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখে আমরা আনন্দিত! আমাদের ভাই-বোনেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে, তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং তাদের সংস্কৃতি আলাদা। কিন্তু আমরা একতাবদ্ধভাবে যিহোবার উপাসনা করে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে যেহেতু বৈচিত্র্য রয়েছে, তাই মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

১৭ উদাহরণ স্বরূপ, ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা ভাই-বোনদের সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন? তাদের ভাষা, পোশাক-আশাক, আচার-ব্যবহার ও খাবারদাবার হয়তো আপনার চেয়ে অনেক আলাদা। আপনি কি তাদের এড়িয়ে চলেন এবং মূলত সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটান, যাদের সঙ্গে আপনার কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে? আপনার এলাকার সেই প্রাচীনদের সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন, যারা বয়সে আপনার চেয়ে ছোটো অথবা যারা ভিন্ন জাতি বা সংস্কৃতি থেকে এসেছেন? আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা হয়তো সেইসমস্ত পার্থক্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি এবং আমাদের একতা নষ্ট করতে পারি।

আপনি কি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একতা বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছেন? (১৬-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮, ১৯. (ক) ইফিষীয় ৪:১-৩ পদে কোন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে? (খ) মণ্ডলীকে একতাবদ্ধ থাকতে সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৮ কীভাবে আমরা এই ধরনের পার্থক্য এড়িয়ে চলতে পারি? পৌল ইফিষে বসবাসরত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে ব্যাবহারিক পরামর্শ দিয়েছিলেন, যে-সমৃদ্ধ নগরে বিভিন্ন পটভূমির লোকেরা ছিল। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:১-৩.) পৌল বিভিন্ন গুণ, যেমন নম্রতা, মৃদুতা, দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য এবং প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। এই গুণাবলি হচ্ছে দৃঢ় স্তম্ভের মতো, যেগুলোর উপর ভিত্তি করে একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। তবে, একটা বাড়ি উত্তম অবস্থায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করাও প্রয়োজন। পৌল চেয়েছিলেন, যেন ইফিষের খ্রিস্টানরা “আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে” কঠোর প্রচেষ্টা করে।

১৯ মণ্ডলীকে একতাবদ্ধ রাখার জন্য আমাদের সবাইকে যথাসাধ্য করতে হবে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? প্রথমত, আমাদের সেইসমস্ত গুণ গড়ে তুলতে ও দেখাতে হবে, যেগুলো সম্বন্ধে পৌল উল্লেখ করেছিলেন: নম্রতা, মৃদুতা, ধৈর্য এবং প্রেম। দ্বিতীয়ত, আমাদের ‘শান্তির যোগবন্ধন’ দৃঢ় করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে আমাদের একতায় ছোট্ট একটা ফাটলের মতো; তাই, ভুল বোঝাবুঝি মিটমাট করার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে, যেন আমরা নিজেদের মধ্যে শান্তি ও একতা বজায় রাখতে পারি।

২০. “আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা,” এই কথাগুলোর অর্থ যে আমরা বুঝি, তা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি?

২০ “আমাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন একমাত্র যিহোবা।” কতই-না জোরালো এক উক্তি! এই বিষয়টা মনে রাখার ফলে, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ ও তা জয় করার সময় বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি লাভ করেছিল। সেই কথাগুলো বর্তমানে আমাদেরও শক্তিশালী করতে পারে, যাতে আমরা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়ে আসন্ন পরমদেশ গড়ে তোলায় অবদান রাখতে পারি। আসুন, আমরা ক্রমাগত যিহোবাকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করি। তা করার জন্য, আমাদের সমস্ত মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালোবাসতে হবে ও তাঁর সেবা করতে হবে এবং আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি ও একতা বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি এই বিষয়গুলো করে চলি, তা হলে যিশু আমাদের মেষ হিসেবে বিচার করবেন এবং আমরা তাঁর এই কথাগুলো সত্য হতে দেখব: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।”—মথি ২৫:৩৪.