সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের বিভিন্ন আইন ও নীতির দ্বারা আপনার বিবেককে প্রশিক্ষিত হতে দিন

ঈশ্বরের বিভিন্ন আইন ও নীতির দ্বারা আপনার বিবেককে প্রশিক্ষিত হতে দিন

“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।”—গীত. ১১৯:৯৭.

গান সংখ্যা: ২৯, ১১

১. এমন একটা বিষয় কী, যেটা আমাদের পশুদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে তোলে?

যিহোবা মানুষকে এক বিশেষ উপহার দিয়েছেন। সেটা হল আমাদের বিবেক। এটা এমন একটা বিষয়, যেটা আমাদের পশুদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে তোলে। কীভাবে আমরা জানি যে, আদম ও হবার বিবেক ছিল? আমরা এটা জানি কারণ তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার পর তাঁর কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়েছিলেন। তাদের বিবেক তাদের দংশন করেছিল।

২. কীভাবে আমাদের বিবেক একটা কম্পাসের মতো? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আমাদের বিবেক হল কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, তা বোঝার এক অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা, যেটা আমাদের জীবনে চলার পথে নির্দেশিত করতে পারে। একজন ব্যক্তির বিবেক যদি সুপ্রশিক্ষিত না হয়, তা হলে তিনি এমন একটা জাহাজের মতো হবেন, যেটাকে নির্দেশিত করার কম্পাসটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। বাতাস ও সমুদ্রের স্রোত সেই জাহাজটাকে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু, একটা কম্পাস যদি ভালোভাবে কাজ করে, তা হলে সেটা জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জাহাজটাকে ঠিক পথে রাখতে সাহায্য করবে। একইভাবে, আমরা যদি আমাদের বিবেককে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করি, তা হলে সেটা আমাদের ভালোভাবে নির্দেশিত করতে পারে।

৩. আমরা যদি আমাদের বিবেককে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত না করি, তা হলে কী হতে পারে?

আমাদের সংবেদ বা বিবেক যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত না হয়, তা হলে সেটা আমাদের মন্দ কাজ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করবে না। (১ তীম. ৪:১, ২) এটা এমনকী আমাদের “মন্দকে ভাল” হিসেবে দেখার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। (যিশা. ৫:২০) যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “সময় আসিতেছে, যখন যে কেহ তোমাদিগকে বধ করে, সে মনে করিবে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে উপাসনা-বলি উৎসর্গ করিলাম।” (যোহন ১৬:২) যারা শিষ্য স্তিফানকে হত্যা করেছিল, তারাও ঠিক এইরকমই চিন্তা করেছিল। (প্রেরিত ৬:৮, ১২; ৭:৫৪-৬০) ইতিহাসজুড়ে, অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি মানুষকে হত্যা করার মতো বিভিন্ন জঘন্য অপরাধ করে দাবি করেছে যে, তারা ঈশ্বরের জন্যই সেগুলো করেছে। কিন্তু, বাস্তব বিষয়টা হল তারা যা করেছে, সেটা ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে। (যাত্রা. ২০:১৩) এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের বিবেক তাদের সঠিকভাবে নির্দেশিত করেনি!

৪. কীভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, আমাদের বিবেক সঠিকভাবে কাজ করছে?

তাই, কীভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, আমাদের বিবেক সঠিকভাবে কাজ করছে? বাইবেলে প্রাপ্ত আইন ও নীতিগুলো “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।” (২ তীম. ৩:১৬) আমাদের অবশ্যই নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে, এটির কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে এবং এটিকে আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। এভাবে আমরা আরও বেশি করে যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে শিখব। এমনটা করলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের বিবেক আমাদের সঠিকভাবে নির্দেশিত করবে। এখন আসুন আমরা আলোচনা করি যে, কীভাবে আমরা আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করার জন্য যিহোবার বিভিন্ন আইন ও নীতিকে ব্যবহার করতে পারি।

ঈশ্বরের বিভিন্ন আইনের দ্বারা নিজেকে প্রশিক্ষিত হতে দিন

৫, ৬. কীভাবে ঈশ্বরের আইনগুলো আমাদের সাহায্য করে?

আমরা যদি চাই যে, ঈশ্বরের আইনগুলো আমাদের সাহায্য করুক, তা হলে আমাদের কেবলমাত্র সেগুলো পড়ার অথবা সেগুলো জানার চেয়ে অবশ্যই আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের সেগুলোকে ভালোবাসতে ও সম্মান করতে হবে। বাইবেল আমাদের বলে: “মন্দকে ঘৃণা কর ও উত্তমকে ভালবাস।” (আমোষ ৫:১৫) কিন্তু, কীভাবে আমরা এমনটা করতে পারি? আমাদের বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখা শিখতে হবে। এটাকে এভাবে চিন্তা করুন। কল্পনা করুন, আপনি ভালো করে ঘুমাতে পারছেন না আর তাই, আপনার ডাক্তার আপনাকে আরও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার, আরও বেশি শরীরচর্চা করার এবং আপনার জীবনধারায় অন্যান্য রদবদল করার নির্দেশনা দেন। আপনি তার নির্দেশনা মেনে চলেন আর এতে আপনি উপকৃত হন! আপনি সেই ডাক্তারের নির্দেশনা সম্বন্ধে কেমন অনুভব করবেন?

একইভাবে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের পাপের দুঃখজনক পরিণতি থেকে সুরক্ষিত রাখার ও আমাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য বিভিন্ন আইন দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমাদের মিথ্যে কথা বলা, অন্যদের ঠকানো, চুরি করা, অনৈতিক কাজ করা, দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজ করা অথবা মন্দদূতদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো কিছুতে জড়িত হওয়া উচিত নয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯; প্রকা. ২১:৮) আমরা যখন যিহোবার বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আসা উত্তম ফলগুলো লাভ করি, তখন তাঁর প্রতি ও তাঁর বিভিন্ন আইনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

৭. কীভাবে বাইবেলের বিবরণগুলো আমাদের সাহায্য করে?

কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, তা জানার জন্য আমাদের যে ঈশ্বরের আইনগুলো লঙ্ঘন করার দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করতে হবে, এমন নয়। আমরা প্রাচীন কালের ব্যক্তিদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। এই উদাহরণগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা আছে। হিতোপদেশ ১:৫ পদ বলে: “জ্ঞানবান শুনিবে ও পাণ্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে।” এই পাণ্ডিত্য বা নির্দেশনা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে আর তাই, এটা হল সর্বোত্তম নির্দেশনা! উদাহরণ স্বরূপ চিন্তা করুন, দায়ূদ যিহোবার অবাধ্য হওয়ার ও বৎশেবার সঙ্গে অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার পর কতটা কষ্টভোগ করেছিলেন। (২ শমূ. ১২:৭-১৪) আপনি যখন সেই বিবরণটা পড়েন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কীভাবে দায়ূদ এই সমস্যাগুলো এড়াতে পারতেন? দায়ূদের মতো একইরকম পরিস্থিতিতে পড়লে আমি কী করব? আমাকে যদি অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়, তা হলে আমি কি দায়ূদের মতো হব, না কি যোষেফের মতো হব?’ (আদি. ৩৯:১১-১৫) আমরা যদি পাপের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করি, তা হলে আমরা আরও বেশি করে ‘মন্দকে ঘৃণা করিব।’

৮, ৯. (ক) আমাদের বিবেক আমাদের কী করতে সাহায্য করে? (খ) কীভাবে আমাদের বিবেক যিহোবার বিভিন্ন নীতির সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে?

আমরা সেই বিষয়গুলো থেকে অনেক দূরে থাকি, যেগুলোকে ঈশ্বর ঘৃণা করেন। কিন্তু, আমরা যদি এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়ে যাই, যেটার বিষয়ে বাইবেলে কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? কীভাবে আমরা জানব যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? আমরা যদি বাইবেলের দ্বারা নিজেদের বিবেককে আগে থেকে প্রশিক্ষিত হতে দিই, তা হলে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেব।

যেহেতু যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, তাই তিনি আমাদের বিভিন্ন নীতি দিয়েছেন, যেগুলো আমাদের বিবেককে নির্দেশিত করতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।” (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আমরা যখন বাইবেলের বিভিন্ন নীতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি এবং সেগুলোকে আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করতে দিই, তখন আমরা আমাদের বিবেককে সংশোধিত করতে ও সঠিক পথে আনতে পারি। আর স্বাভাবিকভাবেই এটা আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করে।

ঈশ্বরের বিভিন্ন নীতির দ্বারা নিজেকে নির্দেশিত হতে দিন

১০. নীতি বলতে কী বোঝায় আর কীভাবে যিশু শিক্ষা দেওয়ার সময়ে বিভিন্ন নীতি ব্যবহার করেছিলেন?

১০ নীতি হল এক মৌলিক সত্য, যেটা আমাদের চিন্তাভাবনাকে নির্দেশিত করে অর্থাৎ আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যিহোবার নীতিগুলো সম্বন্ধে জানা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, তিনি কীভাবে চিন্তা করেন এবং কেন তিনি নির্দিষ্ট কিছু আইন দেন। যিশু বিভিন্ন নীতি ব্যবহার করে তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন যে, মানুষকে তাদের মনোভাব ও কাজের কারণে পরিণতি ভোগ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি শিখিয়েছিলেন যে, রাগ দৌরাত্ম্যের দিকে এবং অনৈতিক চিন্তাভাবনা ব্যভিচারের দিকে পরিচালিত করতে পারে। (মথি ৫:২১, ২২, ২৭, ২৮) আমরা যখন যিহোবার বিভিন্ন নীতির দ্বারা নিজেদের নির্দেশিত হতে দিই, তখন আমাদের বিবেক সুপ্রশিক্ষিত হয় এবং আমরা এমন বাছাইগুলো করি, যেগুলো ঈশ্বরের নামের সম্মান নিয়ে আসে।—১ করি. ১০:৩১.

একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান অন্যদের বিবেকের প্রতি সম্মান দেখান (১১, ১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. কীভাবে একজন ব্যক্তির বিবেক অন্য ব্যক্তির চেয়ে ভিন্ন হতে পারে?

১১ খ্রিস্টানরা বাইবেল ব্যবহার করে তাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করার পরও নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন উপসংহারে পৌঁছাতে পারে। এর একটা উদাহরণ হতে পারে যে, আমরা মদ্যপান করব কি না। বাইবেল এমনটা বলে না, মদ্যপান করা ভুল কিন্তু এটি আমাদের সতর্ক করে যে, আমাদের অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান করা অথবা মাতাল হওয়া উচিত নয়। (হিতো. ২০:১; ১ তীম. ৩:৮) এর মানে কি এই যে, একজন খ্রিস্টান যতক্ষণ পর্যন্ত অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান করছেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে অন্য আর কিছু নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই? না। এমনকী তার নিজের বিবেক যদি তাকে মদ্যপান করার অনুমতি দেয়, তারপরও তাকে অন্যদের বিবেকের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

১২. কীভাবে রোমীয় ১৪:২১ পদ অন্যদের বিবেকের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানোর জন্য সাহায্য করতে পারে?

১২ পৌল এই কথাগুলো লেখার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, অন্যদের বিবেকের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে: “মাংস ভক্ষণ বা দ্রাক্ষারস পান, অথবা যে কিছুতে তোমার ভ্রাতা ব্যাঘাত কি বিঘ্ন পায়, কি দুর্ব্বল হয়, এমন কিছুই না করা ভাল।” (রোমীয় ১৪:২১) তাই, যদিও আমাদের মদ্যপান করার অধিকার রয়েছে, কিন্তু আমরা যদি বুঝি যে, মদ্যপান করা অন্য কোনো খ্রিস্টানের বিবেককে আঘাত দেবে, তা হলে আমরা আমাদের সেই অধিকার ত্যাগ করতে ইচ্ছুক হব। হতে পারে, সত্য শেখার আগে একজন ভাই মদ্যপানের প্রতি আসক্ত ছিলেন আর তাই, তিনি একেবারেই মদ্যপান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা এমন কিছুই করতে চাইব না, যেটা তাকে তার পুরোনো অভ্যাসের দিকে ফিরে যেতে পরিচালিত করবে। (১ করি. ৬:৯, ১০) আমরা যদি আমাদের বাড়িতে সেই ভাইকে নিমন্ত্রণ করি, তা হলে তিনি মদ্যপান করার বিষয়ে ‘না’ বলা সত্ত্বেও, আমরা কি তাকে তা করার জন্য জোরাজুরি করার চেষ্টা করব? অবশ্যই না!

১৩. কীভাবে তীমথিয় অন্যদের সুসমাচার গ্রহণ করতে সাহায্য করার জন্য তাদের বিবেকের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন?

১৩ তীমথিয় যখন একজন যুবক ছিলেন, তখন তিনি ত্বকচ্ছেদ করতে রাজি হয়েছিলেন, এমনকী যদিও তা করা অনেক কষ্টকর ছিল। তিনি জানতেন, এই ত্বকচ্ছেদ করার বিষয়টা সেই যিহুদিদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যাদের কাছে তিনি প্রচার করতে যাচ্ছিলেন। পৌলের মতো তীমথিয়ও কাউকে অসন্তুষ্ট করতে চাননি। (প্রেরিত ১৬:৩; ১ করি. ৯:১৯-২৩) আপনিও কি অন্যদের সাহায্য করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে কিছু ত্যাগ করতে ইচ্ছুক?

‘পরিপক্বতার চেষ্টায় অগ্রসর হোন’

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে আমরা পরিপক্ব হয়ে উঠি? (খ) পরিপক্ব খ্রিস্টানরা অন্যদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে?

১৪ আমাদের সকলের ‘খ্রীষ্ট-বিষয়ক আদিম কথা পশ্চাৎ ফেলিয়া সিদ্ধির [“পরিপক্বতার,” NW] চেষ্টায় অগ্রসর হওয়ার’ বিষয়ে ইচ্ছুক হওয়া উচিত। (ইব্রীয় ৬:১) আমরা অনেক বছর ধরে সত্যে আছি বলেই যে পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে যাই, এমন নয়। পরিপক্ব হয়ে ওঠার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। আমাদের জ্ঞান ও বোধগম্যতাকে বৃদ্ধি করে চলতে হবে। তা করার জন্য আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়তে হবে। (গীত. ১:১-৩) আপনি যখন প্রতিদিন বাইবেল পড়বেন, তখন আপনি যিহোবার বিভিন্ন আইন ও নীতিকে আরও ভালোভাবে বুঝবেন।

১৫ খ্রিস্টানদের দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনটা কী? প্রেমের আইন। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) প্রেমকে “রাজকীয় ব্যবস্থা” ও “ব্যবস্থার পূর্ণসাধন” বলা হয়েছে। (যাকোব ২:৮; রোমীয় ১৩:১০) প্রেম যে এত গুরুত্বপূর্ণ, তা জেনে আমরা অবাক হই না কারণ বাইবেল বলে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) ঈশ্বরের কাছে প্রেম কেবল একটা অনুভূতির চেয়ে আরও বেশি কিছু। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে তাঁর প্রেমের প্রমাণ দেন। যোহন লিখেছিলেন: “আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি।” (১ যোহন ৪:৯) আমরা যখন যিহোবা, যিশু, আমাদের ভাই-বোন ও অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাই, তখন আমরা নিজেদের পরিপক্ব খ্রিস্টান হিসেবে প্রমাণ করি।—মথি ২২:৩৭-৩৯.

আমরা যখন বাইবেলের বিভিন্ন নীতি নিয়ে যুক্তি করি, তখন আমাদের বিবেক আরও নির্ভরযোগ্য এক নির্দেশক হয়ে ওঠে (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. আমরা যখন ধীরে ধীরে পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠি, তখন কেন আমরা বিভিন্ন নীতিকে আরও বেশি মূল্যবান হিসেবে দেখি?

১৬ আমরা যখন ধীরে ধীরে পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠি, তখন আমরা বিভিন্ন নীতিকে আরও বেশি মূল্যবান হিসেবে দেখি। আইনগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো পরিস্থিতির প্রতি প্রযোজ্য হয় কিন্তু নীতিগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রতি প্রযোজ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ, একটি ছোটো সন্তান বোঝে না যে, মন্দ লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কতটা বিপদজনক আর তাই, তাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তার বাবা-মাকে বিভিন্ন আইন তৈরি করতে হয়। (১ করি. ১৫:৩৩) কিন্তু, সেই সন্তান যখন ধীরে ধীরে পরিপক্ব হয়ে ওঠে, তখন সে বাইবেলের নীতিগুলো নিয়ে যুক্তি করতে শেখে। সেই নীতিগুলো তাকে উত্তম বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে সাহায্য করবে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:১১; ১৪:২০.) আমরা বাইবেলের নীতিগুলো নিয়ে যতবেশি যুক্তি করি, আমাদের বিবেক ততবেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। আর আমরা আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, কোনো এক পরিস্থিতিতে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান।

১৭. কেন আমরা বলতে পারি যে, বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই রয়েছে?

১৭ যিহোবাকে খুশি করে, এমন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই রয়েছে। আমরা বাইবেলের মধ্যে বিভিন্ন আইন ও নীতি খুঁজে পাই, যেগুলো আমাদের ‘পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হইতে’ সাহায্য করে। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) বাইবেলের বিভিন্ন নীতি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, প্রভু যিহোবা কীভাবে চিন্তা করেন। কিন্তু, সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। (ইফি. ৫:১৭) সাহায্যের জন্য আমাদের কাছে ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স, যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা, ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি, ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি JW লাইব্রেরি আ্যপ রয়েছে। আমরা যখন এই হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করি, তখন আমরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অধ্যয়ন থেকে উপকার লাভ করি।

বাইবেলের দ্বারা প্রশিক্ষিত বিবেক অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে

১৮. আমরা যখন আমাদের জীবনে যিহোবার বিভিন্ন আইন ও নীতি কাজে লাগাই, তখন কী হয়?

১৮ আমরা যখন যিহোবার বিভিন্ন আইন ও নীতি কাজে লাগাই, তখন আমাদের জীবন কতই-না উন্নত হয়! গীতসংহিতা ১১৯:৯৭-১০০ পদ বলে: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়। তোমার আজ্ঞা সকল আমাকে শত্রুগণ অপেক্ষা জ্ঞানবান করে; কারণ সেই সকল চিরকাল আমার। আমার সমস্ত গুরু অপেক্ষা আমি জ্ঞানবান, কেননা আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ ধ্যান করি। প্রাচীন লোক হইতেও আমি বুদ্ধিমান, কারণ আমি তোমার নিদেশ সকল পালন করিয়াছি।” আমরা যখন ঈশ্বরের ব্যবস্থা বা আইন ও নীতিগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় বের করে নেব, তখন আমরা আরও বেশি প্রজ্ঞা ও বোধগম্যতার সঙ্গে কাজ করব। আর আমরা যখন আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করার জন্য তাঁর আইন ও নীতিগুলো ব্যবহার করব, তখন আমরা “খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্য্যন্ত” পৌঁছাতে পারব।—ইফি. ৪:১৩.